পলাশ কয়েকদিন ধরে ভাবছে এবার কী লেখা যায়। এতদিন ধরে যা লিখলো, প্রায় অধিকাংশই নিজের স্মৃতির ভান্ডার উজাড় করে লেখা। পলাশ কিন্তু কোনো লেখক নয়, লেখে নিজের খুশিতে - আনন্দে - বিলিয়ে দিতে সবার মধ্যে। পলাশের স্মৃতি জুড়ে বসে আছে তার শৈশবের অমূল্য সম্পদ, যতই খরচা করে আবার যেন ভরে ওঠে। ভাবুলতা যখন আঁকড়ে ধরে পলাশকে - বারাসাতের বাগান বাড়ি, পুকুর, মণ্ডপ, গাছ-গাছালি আষ্টে-পিষ্টে জাপটিয়ে ধরে তাকে, কী করবে সে ! চোখ বুজলেই নিজেকে দেখতে পায় - মণ্ডপের সামনের প্রাঙ্গণে ক্রিকেট খেলছে শৈশবের পাড়ার বন্ধুদের সাথে, লিচু-জামরুল-টগর-ঝোপ-জঙ্গলের পিছনে খেলছে চোর-পুলিশ মশার কামড় সহ্য করে, ... ...
কাবুল থেকে ফিরেছেন এক বাঙালি ভদ্রলোক। ইশকুলে পড়াতেন। ফিরে আসার পর টিভিতে অনেক কিছু বলেছেন। এক কথায় যার মর্মার্থ হল তালিবান জমানা যতটা ভয়াবহ ভাবা হচ্ছে তা নয়। এ নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। হবারই কথা। কারণ আমরা কেউই কদাচ কাবুল যাইনি। আমাদের ভাই-বেরাদর-ছোটোমেসো-বড়পিসি কেউ আফগানিস্তানে থাকেনা। আমরা মূলত পরের মুখে ঝাল খাচ্ছি, আর দূর থেকে লিংক ছোঁড়াছুঁড়ি করে বিপ্লব কিংবা সলিডারিটি দেখাচ্ছি। আমি তো ব্যক্তিগতভাবে মুজতবা আলি বা সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর এই প্রথম একজন বঙ্গসন্তানের নাম শুনলাম যিনি আফগানিস্তান গেছেন। ফলে উত্তেজনা স্বাভাবিক। সমস্যা হচ্ছে, ভদ্রলোকের যে ভঙ্গীতে সমালোচনা হচ্ছে, সেটা নিয়ে। ওঁর বক্তব্যে কী আছে? উনি বলেছেন, উনি কাবুলে বিশেষ ... ...
আবাহনঅখিল রঞ্জন দেআবার এসেছে 'ওরা', মরুর শহরে;সজ্জিত করিবে আজি, শোণিত কেতনে!আছে যতো মানবতা, শহরে নগরে,সবি হবে মরিচিকা, শরমে মননে।বিলাপ করিছে যারা, বিশ্ব চরাচরে;ভাবিছ আপন তাঁরা! রক্ষিবে যতনে?বিকলাঙ্গ রাজা ওঁরা, অস্ত্র বেচে বাজারে।সভ্যতার আড়ালেতে, শোষিবে যতনে।।যতো আছে মতবাদ, ধর্মে ও বাণীতে,তোল-রব ছাড়ি-সব, অন্তর ধ্বনিতে।ওই দেখ "পঞ্জশির", বক্ষ দিয়ে লড়ে,তুমিও পারিবে তাহা, চেতনার জ্ঞানে।ঈশ্বর-আল্লাহ-যিশু, বসে একাসনে,ভাসাইবেন তরণী, বিশ্ব সংসারে।। ... ...
আমার জোৎস্না মনের ভ্রান্তি ঘোচাও অমাবস্যার শান্তি হয়ে!
সংস্থাটির সঙ্গে আমি ২০০৭-২০০৮ থেকে জড়িত। মূলতঃ শ্রীযুক্তা সুপ্রিয়া রায়চৌধুরীর নেতৃত্বে কয়েকজন মানুষ এই সংস্থার কাজ আরম্ভ করেন। মূলতঃ উত্তর পূর্ব কলকাতায় দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের পড়াশুনা করানো হয় ড্রপ আউট কমানোর লক্ষ্যে। এছাড়া ইঁটভাটা গুলিতে যে পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারগুলি আসেন তাঁদের ছেলেমেয়েদের পড়ানোর কাজ করা হয় সুযোগ পরিস্থিতি অনুমতি অনুযায়ী। এবছর লকডাউনের সময় যথাসাধ্য সাহায্য করা হয়েছে। ... ...
পরিশেষে এক তেজালো তালিবান আনানো সম্ভব হইল। ভুঁদু বলিল, দ্যাখো উহার লেজ নাই। গুঁটে বলিল শিং-ও নাই। কাকা বলিল, মেশিনগান আছে। বলিবামাত্র 'গান গান গান মেশিনগান' বলিয়া সংসারের সমস্ত তালিবান ও তালিবতী ফটফটাফট তালি পিটিয়া অস্থির। আমেরিকা, রাশিয়া, হংকং সকলেই জানে ইহাই দস্তুর। নিজ নিজ ডাবল, ট্রিপল ও মাল্টিপল এজেন্টসকল ফুরফুরা ফাইন খাটিতে পারিবে। মেশিনগান কে দেয়, পূর্ণিমা অমাবস্যায় এই প্রশ্ন উঠিলে বিনীত বাঙালীও জানে, গন্ধা হ্যায় পর ধান্দা হ্যায় ইয়ে। আগে কালাশনিকভ থাকিত। তাহা তো পাস্ট। এখন আর আলাদা করিয়া আঙ্কল স্যাম বা আঙ্কল যদুর দিকে আড়ে আড়ে কেহ চায় না। বৃহৎ বিষয়কর্মে মাল্টিন্যাশনাল অবধারিত। বস্তুতঃ ব্যবসাদারের ন্যায় সাম্যবাদী ... ...
বৃষ্টি পড়ছিল। সারা আকাশ মেঘে ঢাকা ঘন অন্ধকার। এই দিনটি কে যেন বলা যায় 'এ কোন সকাল রাতের চেয়ে অন্ধকার'। নগেন কাকা চা খাচ্ছিল। কোল মাইনসে চাকরি করতেন, অনেক দিন হল অবসর নিয়েছেন। এমন বৃষ্টি বাদলা দিনে নগেন কাকার গল্প খুব আমরা উপভোগ করতাম।
আম পাতা জোড়া জোড়া তৎকালে লোকে প্রেমকে লাইন বলিতো। আমাদিগকে বলা হইয়াছিলো, ইহা ভালো নয়। ভাবেসাবে আমরা বুঝিয়াছিলাম, লাইন একটি বখাটেপনা, সামাজিক অপরাধ বিশেষ। …এই ঢাকা তখন সেই ঢাকা ছিলো না। ফুলবাড়িয়াতে ছিলো রেল স্টেশন। রিকশাই ছিলো সর্বত্র জনপ্রিয় বাহন। ইপিআরটিসি’র লাল দোতলা বাস বিআরটিসি হইয়াছে মাত্র। বাবার হাত ধরিয়া সেই দোতলা বাসে চাপিয়া মিরপুর-ফুলবাড়িয়া ভ্রমন করিয়া জীবনকে মনে হইয়াছিলো সার্থক। রমনা পার্কের দোলনায় আবার কবে চড়িবো, সেই ভাবনায় ছোট্ট শিশু মন কতই না রঙিন স্বপ্ন আঁকিয়াছিলো। …কিন্তু ‘ছেলেধরা’ নামক আতঙ্কে আমাদের ঘরে বন্দি থাকিতে হইতো। গ্রাম হইতে আসা ‘কামলা’ অমুক ভাইয়ের হাত ধরিয়া ইস্কুল-বাসা-দোতলা বাসার ছাদ অবধি ছিলো আমাদের দৌরাত্ন।আমরা ... ...
বারাণসী বাঙালীর সংস্কৃতি আর মননের সাথে মিশে আছে। একে বাঙালীর দ্বিতীয় বাড়ি বললেও অত্যুক্তি হয় না। বারাণসী নামের সৃষ্টি হয়েছে বরুণা এবং অসি এই দুই নদীর সঙ্গম স্থলে অবস্থানের কারণে। আমাদের ভারতবর্ষের অনেক সাধক তাদের মুল্যবান জীবন এখানে অতিবাহিত করেছেন। যেমন ভাস্করচার্য্য, তৈলঙ্গস্বামী প্রমুখ। আমাদের বহুদিনের ইচ্ছা ছিল কাশী যাবার সেটা এবারে পূর্ণ হল। আমরা এলাম লখনৌ থেকে ট্রেনে। ট্রেন লেট করে করে বারাণসী পৌঁছল যখন, তখন সময় রাত ৯ঃ৩০। টুক করে একটা রিক্সা চেপে হোটেলে চেক ইন করলাম তার আধঘন্টার মধ্যেই। আমাদের বুকিং ছিলো "ইন্ডিয়া" তে। এটি একটি চার তারা হোটেল। বিদেশীদেরই ভিড় বেশী। ... ...
আজকে নয়, আজকে নয়, আবার যদি আসি বলবো সেদিন দেখতে দেখতে টোল পড়া সে হাসি; ফুলেরও নয় ধূপেরও নয় বারুদের সুগন্ধের মতো তোমায় ভালোবাসি!
আমার বন্ধু, এপারে চট্টগ্রামের ফটোসাংবাদিক দিদার আর নেই; ভাবতেই বুকের ভেতর শেল বিঁধে যায়!কিছুক্ষণ আগে তার মৃত্যু সংবাদ পেলাম! করোনাক্রান্তিতে যেন কত সহজ এই সব মহাপ্রস্থান! দিদারের পবিত্র মুখচ্ছবিতে এক লহমায় মনে পড়ছে কত শত স্মৃতি, কত হাসি গান, ফেনিল পানপাত্র, প্রাণের উচ্ছ্বাস! রাঙামাটির পাহাড়ে সেই ২০০০ সালে তিন বিদেশী অপহরনের সংবাদ আমরা মাসখানেক ধরে করেছি। এরপর তার সাথে অনেক নৈকট্য, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ও দৈনিক যুগন্তরে দুই দফায় তিনি আমার সহকর্মি ছিলেন, কতবার চট্টগ্রামে তার বাসায় আড্ডা জমিয়েছি! বড্ড অকালে তার এই চলে যাওয়া! কেন মেঘ আসে, হৃদয়ও আকাশে, তোমারে দেখিতে দেয় না ❤️ ... ...
এই সেই বাড়ি, যেখানে ডায়পার পরে রবীন্দ্রনাথ হামাগুড়ি দিয়ে বেড়িয়েছেন চত্বর থেকে চত্বরে। হাঁটু ছড়ে গেছে, ট্রাইসেপ টনটন করেছে, বেবি ফ্যাট ঝরে গেছে। কিন্তু কালো বলে কেউ তাঁকে কোলে তোলেনি। বড় হয়ে ক্ষোভে, দুঃখে, অভিমানে রবীন্দ্রনাথ বাড়ি ছেড়েছিলেন। খালি পায়ে হেঁটে চলে গিয়েছিলেন শিয়ালদহে, কাটিয়েছেন উদ্বাস্তু জীবন। তখন জায়গাটাকে শিলাইদহ বলা হত। বাংলার ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথই প্রথম উদ্বাস্তু। এক নম্বর প্লাটফর্মে বসে মনের সমস্ত ক্ষোভ উজাড় করে রবীন্দ্রনাথ লেখেন তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস গোরা। সেখানে তিনি দেখিয়েছেন, যে, ফরসা হলেই ছহী হিন্দু হওয়া যায়না। যতই পুজো কর, আচারবিচারের ভড়ং কর, শেষমেশ জানতে পারবে তুমি বিধর্মী। এখানেই তাঁর সঙ্গে দেখা হয় আরেক কালোপুরুষের ... ...
ঠিক কবে থেকে গান শুনতে শুরু করি খেয়াল নেই। যতদূর মনে পড়ছে সালটা হবে ১৯৮৩/৮৪। তখন ছোটকাকা বেলুড়ের বাড়িতে থেকে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে পড়ে। কাকার ছিল খুব গান শোনার নেশা। সকাল ছটায় চয়ন। ৬ঃ৩০ এ বর্ণালী। আমার তখন কতই বা বয়েস - ১০/১১। তখন থেকে আস্তে আস্তে পরিচিত হতে শুরু করলাম আমাদের এই সব অসাধারণ শিল্পীদের সাথে। তখন অবশ্য আমার পছন্দের তালিকায় এক নম্বরে ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ওনার ওমন ব্যারিটোন ভয়েসের জাদুতে আমি মুগ্ধ। কাকা কিন্তু মান্না দে-র ভক্ত। আমাদের খুনসুটি লেগেই থাকতো। কাকা বলতো ধর এই গানের আসরটা যদি একটা বিয়ে বাড়ির নেমতন্ন এর পদ সমুহের মতো হয়ঃ- তাহলে ... ...
সব মরণ নয় সমান। আফগানিস্তান নিয়ে দুনিয়া চিড়বিড়িয়ে অস্থির, ওদিকে শিশিরের শব্দের মতো চুপচাপ এসব প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চলতেই থাকে সৌদি টৌদিতে। ২০১৬ তেই সেখানে শুভ নববর্ষের সূচনা হয়েছিল একসঙ্গে জনা পঞ্চাশ লোকের গণজবাই দিয়ে। এদের মধ্যে জনা চারেককে মারা হয়েছিল গুলি করে, বাকিদের স্রেফ মুন্ডু কেটে খাল্লাস। খতমের লিস্টিতে এক দিকে যেমন রয়েছেন 'সন্ত্রাসবাদী'রা, অন্যদিকে আছেন জনপ্রিয় শিয়া নেতা আল-নিমর, যিনি আর কিছু না, স্রেফ সংখ্যালঘু শিয়াদের সমানাধিকার চেয়েছিলেন। না, তালিবানদের কাণ্ড না, রীতিমত সৌদি আদালতের নির্দেশেই এই মুন্ডু কাটার কারবার।আঁতকে ওঠার কিছু নেই, ও দেশে ক্ষতিকর লোকেদের ধরে প্রকাশ্যে মুন্ডু কেটে নেওয়াই দস্তুর। এই পবিত্র কাজের জন্য দেশের রাজধানীতে রয়েছে ... ...
কুড়ি কুড়ি বছরের পরে - ফের যদি দেখা পাই, কাবুল-কান্দাহারে
বিশ্বজুড়ে আজকাল যখন তখন কেউ না কেউ বক্তব্য রাখছেন। কাজের হোক, অকাজের হোক। কি আসে যায়! বড়, মেজ, সেজ, ন, ফুল, ছোট, আরোও ছোট, এমনকি কুট্টি সাইজের নেতারা তো বক্তব্য রাখেনই । চিরকাল তাই হয়ে আসছে। আজকাল মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে সকলেই মানে রাম, শ্যাম, যদু, মধু , আমার আপনার মতো সকলেই যারপরনাই সামাজিক হয়ে উঠেছেন। সকালে বড়দা বললেন তো তাঁর কথাকে সমর্থন বা প্রতিবাদ করে মধুবাবু বা বিবি একটা আধটা ফ্যাঁস বা ফোঁস করলেন। ব্যস্ হয়ে গেল। ফুলদিদি লাফালাফি করে মিডিয়ার পালে জোরালো হাওয়া ঠেলে দিলেন। ব্যস, মিডিয়াকে দেখে কে তখন? রমরমিয়ে বাড়ছে TRP। সোশ্যাল মিডিয়া সরগরম ওদিকে। ... ...
ঝাল মুড়ি আপনারা সবাই খেয়েছেন। পার্কে, রাস্তায়, চিড়িয়াখানা, খেলার মাঠে সকলেই বোধহয় ঝাল মুড়ি খেয়ে থাকবেন। বিকেলবেলার জলখাবারে সুন্দর করে মাখানো এক বাটি ঝালমুড়ি অনেকেরই জিভে জল এনে দেয়। ঝালমুড়ির কথা মনে হলে, মনে পরে যায় স্কুল ও কলেজ জীবনের কথা। স্কুল ও কলেজ জীবনে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে ঝালমুড়ি খাওয়ার মজাই আলাদা। ... ...
জানলা খোলা ছিল, দেবযানী চা খেতে বসেছিল, কিছু পুরানো স্মৃতি মনের কোনে উঁকি দিচ্ছিল। অমলের জন্যও চা এনেছিল। জানলা দিয়ে ভিজে হাওয়া উড়ে আসছিল।