জানলার কাঁচ ঝাপসা হয়ে আছে। অঝোরধারায় বৃষ্টি চলছে গত রাত থেকে। সন্ধ্যার একটু পর থেকেই ঝিপঝিপিয়ে শুরু হয়েছিল। রাত বাড়তেই বৃষ্টিও বাড়তে থাকল, সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। গরম ধোঁওয়া ওঠা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বসলাম রোজকার মতোই জানলার পাশের বেতের চেয়ারটায়। পৌষ মাসের শেষের দিক। ঠাণ্ডা ছিলই। বৃষ্টিতে আরোও জাঁকিয়ে বসেছে ঠাণ্ডা। মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকতে হয়েছে ঠাণ্ডায়। গরম চায়ে চুমুক দিতেই প্রাণ জুড়িয়ে গেল যেন। ... ...
লাজবন্তী মালতীমায়ের কাঁধে বাঁ হাত রেখে, মা যেমন সমবেদনায় মেয়ের ঘনিষ্ঠ হয় সেভাবেই, ডানহাতে মালতীমায়ের চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে আবার গলা নামিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “কী হয়েছে, রে, কানছিস কেন?” মালতীমা লাজুক হেসে সব কথাই মনে হল বললেন, আমি শুনতে পেলাম না, কিন্তু লাজবন্তী মাঝেমাঝেই আমার দিকে যেভাবে তাকাচ্ছিলেন, তার থেকেই বুঝতে পারলাম, আমার কথার পিঠে যা সব কথা হয়েছে, সে সবই রিপোর্ট হল লাজবন্তীর কাছে। ... ...
এখনো চোখের পাতায় মেঘ জমে। স্মৃতিনীর। / সারেঙ্গিতে তখন নিষাদ বেয়ে গান্ধার, আলতো মীড়, / আলতামিরা রঙের অনুভূতি, ক্যান্ডি ফ্লস দুঃখ- / বিচ্ছেদবেদনা; মৃত্যুপরোয়ানা ভালোই তো লেখো।
ধাঁধা, বেশ ইন্টারেস্টিং ব্যাপার। যেটা বলতে চাওয়া হচ্ছে সেটা বলা নেই। বুঝে নিতে হবে চার লাইনে বোঝানো অন্তর্নিহিত অর্থ। ছোটো বড় সকলের প্রিয় বিষয় ধাঁধা। সম্পত্তির হিসেব রয়েছে ধাঁধায়, গুপ্তধনের খোঁজ রয়েছে ধাঁধায়। তারই মানে খুঁজতে হবে। আমাদের জীবনেরও রয়েছে পদে পদে ধাঁধা ।
ও পদ্ম সামনে যুদ্ধ, যাস কোথা সাইকেলে যোগানন্দ ছেড়ে দিয়ে পিরীতি অখিলে?
নিরুপমা বাইরে বেরিয়ে এসে গভীর স্নেহে সিক্ত কটি শীর্ণ আঙুল দিয়ে শুভর হাতটা ধরে স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ হাতে যদি পাঁচ মিনিট সময় থাকে একটু ভেতরে এস বাবা।’স্পন্দন লজ্জায় মরে গিয়ে বলল, ‘এ কি বলছেন .... নিশ্চয়ই .... নিশ্চয়ই ....সময়টা কোন ব্যাপার না।’ নিরুপমা শুভকে ট্র্যাক শ্যুট পরা দেখে বললেন, ‘তুমি বুঝি খেল ? ‘— ‘ হ্যাঁ ওই ... রেসে দৌড়াই। স্যার আমাকে শেখান ।’ ... ...
স্মৃতিচারণা:-
সে এক দিন ছিল মশাই যখন লোকে করোনা লুকিয়ে রাখতো। হয়েছে জানতে পারলে পুলিশ এসে বাড়ির সামনে বাঁশ দিয়ে যেতো, পাড়া প্রতিবেশী অচ্ছুৎ করে দিতো। সেই সব বর্বর দিন শেষ হয়ে গেছে। এখন সবাই ফেসবুকে 'আম্মো পজিটিভ' বলে স্টেটাস দেয়, গলা ছেড়ে 'জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ' গায়।
একজন স্কুল পড়ুয়াকে যদি এদেশের কয়েকজন বিজ্ঞানীর নাম বলতে বলা হয় তাহলে সে প্রফুল্লচন্দ্র রায়, জগদীশচন্দ্র বসু, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, রামন, ভাবা এরকম অনেক নাম সে বলে দেবে। কিন্তু যদি একজন নারী বিজ্ঞানীর নাম জিজ্ঞেস করা হয়, মাত্র একজন, তাহলে নিশ্চিতভাবে বলা যায় সে একজনেরও নাম বলতে পারবে না। সাধারণ জ্ঞানচর্চায় কেন এত অবহেলা? কেন স্বীকৃতি দিতে এত অনীহা? ... ...
মোহিনীবাবুর চুরাশি বছর বয়স হল। তার স্ত্রীর বয়স উনআশি।দুজনেরই শরীর বাতে পঙ্গু । তাছাড়া বয়সজনিত হাজারো আদিব্যধি শরীর জুড়ে বসে আছে। তাদের একটা ছেলে, একটা মেয়ে ছিল। দুজনই আর নেই। একজন ক্যানসারে গেছে, একজন পথ দুর্ঘটনায় নীলরতন সরকার হসপিটালে। সন্তানশোকের ছুঁচ এখন আর অহোরাত্র ফোটে না। তবে প্রায়শই নীরব দুপুরে বা গহন রাত্রে উথলে ওঠে দু:খসাগর। আছড়ে পড়ে বুকের তটে। বুড়োবুড়ির এ সংসারে বোধহয় আর কেউ নেই। থাকলেও তারা সম্পর্ক এড়িয়েই চলে। তারা বুদ্ধিমান লোক। কে নেবে এসব দ মেরে যাওয়া জবুথবু বুড়োবুড়ির ঝক্কি। যাতায়াত করলেই তো ঘাড়ে এসে পড়বে এসব উটকো হ্যাপা। অনাদৃত অবহেলিত থাকতে থাকতে মোহিনীমোহনবাবু এবং তার ... ...
সানি ডিসুজা অফিসিয়াল প্রোটোকল মেনে তাৎক্ষণিক কোন সিদ্ধান্ত দিলেন না। দিল্লীতে ফিরে কমিটিতে আলোচনার পর নির্বাচনের ব্যাপারে নিয়মমাফিক সিদ্ধান্ত জানাবেন। সাধারণ বুদ্ধি বলে, প্রাথমিক স্কোয়াডে শুভর নির্বাচনে কোন দ্বিমত থাকার কথা নয়। তারপর সামনের অলিম্পিকের জন্য তাদের ক্যাম্পিং এবং ট্রেনিং সেশান চলবে। ডিসুজা এবং সুরিন্দর পরের দিন সকালের ফ্লাইটে ফিরে গেল। ... ...
সুজয় জানলার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বাবার দিকে তাকালো। বাবা ডাকছেন তাকে। বাবা অসুস্থ, সারাদিন প্রায় শুয়েই থাকেন, দুয়েকটা কথা বলেন অসংলগ্ন। এখন একটা পেন চাইছেন সুজয়ের কাছে । সুজয় একটা পেন আর কাগজ ধরল বাবার সামনে। বাবা, ভবতারিণী হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক, অনেক কষ্ট করে যেটা লিখলেন কাগজে সেটা পড়ে সুজয় একটু থমকে গেলো ‘হু উইল টেক কেয়ার অব মি আফটার মাই ডেথ?’ ... ...
শীতকাল মানেই কি শুধু কমলালেবু আর মাঙ্কিটুপি ?? না, হল না.... শীতের সকালে করাইশুঁটির কচুরি আর আলুরদমের পর যে জিনিসটা আমাদের রসনা তৃপ্তি করে আসছে তা হল "মোয়া" ।এই মোয়া হল এক অদ্ভুদ জিনিস
সেই আদিযুগে আমার গাল চেটে চেটে দিয়েছিলো কালো বেড়ালটা তারপর থেকে লালাময় সেই অস্তিত্বরক্ষার জন্য লড়ে যাচ্ছি।
সূর্য সেন নাকি স্বামী বিবেকানন্দ
“আমার শেষ বাণী-আদর্শ ও একতা।”জেল থেকে এ কথা বলেছিলেন সূর্য সেন। আমি কোনো বীর সন্ন্যাসীর বীরত্বের কথা শুনিনি। কিন্তু বীর শহীদের বীরত্বের ইতিহাস পড়েছি। যাঁদের নিয়ে গান বা কবিতার সংখ্যা খুবই কম! বীর শহীদের বীরত্ব সংবাদে দেখেছি। শহীদ হলেন ফাদার স্ট্যানিস্লাস স্বামী। এই তো কয়েক মাস আগে পর্যন্ত— কতজন কৃষক শহীদ হয়েছেন তার কোনো হিসেব রেখেছেন কেউ? ... ...
শুভর জীবন কিন্তু শুভ এবং মঙ্গলময় রাস্তায় হাঁটেনি। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে সে তার মাকে দেখেনি। রাজমিস্ত্রির যোগাড়ের কাজ করতে গিয়ে মারা গেছে একটা নির্মিয়মান বাড়ির তিনতলা থেকে পড়ে গিয়ে। শুভর তখন দু বছর বয়স। তখন মাকে খুঁজত। তারপর ধীরে ধীরে মায়ের মুখ আবছা হতে হতে মিলিয়ে গেল কোথায়। বাবা দেবেশ নস্কর পেশায় ভ্যানচালক। মধ্যমগ্রামের অনেক ভিতরে ধানখেতের ধারে শুভদের গ্রাম। ... ...
সর্পদেরা কিলবিল করে ওঠে মাথা থেকে ঘাড় বেয়ে নেমে আসে
পর্ব ২ জয়িতা কফি হাউসে ঢুকল যখন তখন বেলা তিনটে। তনিমাকে পইপই করে বলল আসতে, তার নাকি আজ দাদা বউদির সাথে সিনেমা যাবার কথা। নতুন ইংরেজি সিনেমা এসেছে মিনার্ভাতে। মেয়েটা সিনেমার পোকা। সারাক্ষণ ওই সব ভাবছে। চলতে ফিরতে সিনেমার হিরোইনদের মতো হাব ভাব। অনেকবার মনের সুপ্ত বাসনা জয়িতার কাছে বলে ফেলেছে যে সে সুযোগ পেলে সিনেমাতে অভিনয় করবে। তনিমা এমনিতে দেখতে বেশ ভালো। চেহারাতে একটা চটক আছে। অনেকের মধ্যে নজরে পড়ার মতো। কথাবার্তাও বেশ কায়দা করেই বলে। জয়িতা অবশ্য সিনেমা জগতের বাজে দিকগুলো নিয়ে তনিমাকে সাবধান করেছে। কে শোনে কার কথা। তবু জয়িতার প্রাণের বন্ধু বলতে তনিমা। কিন্তু আজ একটু অভিমানই ... ...