আসাম অনেক দূর। যাই নি কখনো … আসানসোল গেছি। ইমাম সাহেবের রক্ত বুকে চামড়া গুটিয়ে ইউরিয়া মাখাতে দেখেছি। এখন শুনছি ইউরিয়া ভালো না। ঝাল খুব। ফেনা ওঠে বেশি। কাজ করার ইচ্ছে কমে তাতে। তা ভালো। আমি আবার কম বুঝি। কেউ বলে মাস্টার বয়স বাড়ছে, কেউ আবার আড়ালে আবডালে গান্ডু। তা বলুক। আমি চোখে কালা, কানে কাফের। পারফেক্ট কম্বিনেশন। ... ...
সকাল সাড়ে দশটা বাজতে চলল। শরতের ঝলমলে আকাশ।বাতাসে যেন পুজো পুজো গন্ধ। রিপন স্ট্রীটে ফর্টি টু বাই সি বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে দুলাল সরকার। বহু পুরনো তিনতলা বাড়ি। বাড়ির সামনের দিকের লালচে রঙ ফ্যাকাসে গোলাপী হয়ে গেছে। দু এক জায়গায় প্লাস্টার খসা ক্ষতচিহ্ন। বোঝা যাচ্ছে অনেকদিন হাত পড়েনি বাড়ির মেরামতিতে। এখানে সব গায়ে গায়ে বাড়ি। পুরণো কলকাতার পুরণো বাড়ি। পুরণো পাড়া, পুরণো মানুষ। দুলাল দরজার পাশে কলিং বেলে চাপ দিল। ঘরের দরজার বাইরে দাঁড়াতেই সূর্যকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় স্যার বললেন, ‘ আরে এস এস .... কলকাতায় কি এখনই এলে ? ‘একতলার ঘরে একটা সিঙ্গল কাউচে বসে আছেন সূর্যকান্তবাবু । একপাশে সোফায় ... ...
অজিত রায় আর নেই। আপামর পাঠক সমাজ, অজিত রায়ের লেখা কখনও উদযাপন করেনি। মৃত্যুতে ক্ষণিক শোকপ্রকাশ দেখেছি। সমাজমাধ্যমের পাতায়। তারপর সে পাতা উল্টে গেছে। বদলে গেছে পৃষ্ঠাসংখ্যা, ক্যালেন্ডারের তারিখ। বইমেলা আসছে, কিন্তু একশটি পুস্তকালোচনায় অজিত রায়ের কথা আর নজরে পড়েনা। না পড়ারই কথা। ভূত আর তান্ত্রিক ছেয়ে আছে বাজারে। অজিত রায়দের সেখানে প্রবেশাধিকার নেই।বাংলা ভাষার অন্যরকম গদ্যলেখকদের এই এক ট্র্যাজেডি। তাঁরা দাঁতে দাঁত চেপে লিখে যান, তারপর চুপচাপ মরে যান। কপাল ভালো থাকলে সব দাঁত-টাত পড়ে, চুল-টুল উঠে যাবার পর এক আধটা পুরষ্কার পান। সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় পেয়েছিলেন, এমন একটা বইয়ের জন্য, যা কস্মিনকালেও তাঁর শ্রেষ্ঠ লেখালিখির মধ্যে পড়েনা। উৎপল কুমার ... ...
রেললাইনটাকে একটা সাপের মত লাগে রুকসানার। এখান দিয়ে সোজা গিয়ে কোশখানিক দূরে কেমন বেঁকে গাছপালার আড়লে ঢুকে গেছে। রোজই দেখে আর রোজই এই কথা মনে হয় ওর। সাপের মতই রেলগাড়িও ছোবল মারে সুযোগ পেলেই – তাহমিনার ভাইটাকে গত বছরেই খেল। কখন হুট করে ট্রেন চলে আসে বোঝা দায়। তাই লাইনের একেবারে ধারে না বসে একটু সরে বসে ও – ঝোপঝাড়ের আড়ালে। প্রত্যেক ট্রেনেই কিছু লোক থাকে যারা এই ভোরের সময়টা হাঁ করে জানলা দিয়ে তাকিয়ে থাকে - নির্লজ্জের মত। মনে মনে খিস্তি দেয় রুকসানা – যেন একটা কী দেখার জিনিষ। পোড়ারমুখো নিখাউন্তির দল সব।আজও ঝোপের ধারে এসে বসতে যাবে, হঠাৎ ... ...
ঘরের ছেলেমৌসুমী ঘোষ দাসকাজের মেয়ে মালতী আজ না বলে কয়ে ডুব মেরেছে, তাই রুনার আজ সকাল থেকেই মাথা গরম। রাজ্যের কাজ এখন ওকে একা হাতেই সামলাতে হচ্ছে। রুনার মুখের হাসি উধাও, বিরক্তিতে ভ্রু দুটো কুঁচকে আছে।এরই মধ্যে আবার মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। দিনুবাবু মানে রুনার শ্বশুর মশায় আজ সকালে হাওয়াই চপ্পল পরে বাথরুমে গিয়ে স্লিপ করে পরে গেছেন। সে এক কেলেঙ্কারি কাণ্ড! ঈশ্বরের কৃপায় তেমন সাংঘাতিক কোন চোট না লাগলেও পা টা ফুলে আছে। ... ...
ঠিক ১১ টা বাজলেই শব্দটা ছাদের দিকে থেকে আসে। কখনো কখনো ধুপ ধুপ, কেউ যেনো হাঁটছে। আবার কখনো দেওয়ালে খস খস শব্দ। কোনো কোনো দিন জানালার কাঁচে খুট খুট শব্দ। প্রথম প্রথম ছাদে কেউ মদ বিয়ার খাচ্ছে ভেবে রাকেশ ইগনোর করে যেত। কিন্তু কয়েকদিন ছাড়া ছাড়া একই ঘটনা। রাকেশ জানলা খুলে জোরে চেঁচালো- ছাদে কে রে? রোজ রোজ পুরো টাউনশিপ এর মধ্যে আমাদের ছাদটাই পাও পার্টি করার জন্য। সব চুপ.. কারো কোনো সাড়া নেই। - কী হলো কে ছাদে? আর কোনো আওয়াজ হলো না। ... ...
অন্ধ্র আর উড়িষ্যার উপকূলে নাকি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। দীঘার সমুদ্রে বড় বড় ঢেউ উঠছে কাল রাত থেকে। এখানে ঝিরঝির করে বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে সারাক্ষণ। সকাল নটা বাজে। কিন্তু এটা সকাল না সন্ধে বোঝা ভার । আকাশ বিষাদে আচ্ছন্ন ।মেদুর আঁধার ছাওয়া পথঘাট । নিখিল সকাল থেকে ঘরে বসে আছে। পাঁচটা সিগারেট খেয়ে ফেলেছে এর মধ্যে। আজ একবার অফিসে যেতে হবে। ফোন খুলে দিয়েছে কাঁথিতে এসে। কাল রাত্রে মৃদুলার ফোন এসেছিল। থানার ও সি বিপ্লব দত্ত নাকি কাল তাদের বাড়ি এসেছিল।ঐশীর সঙ্গে কিসব কথা বলে গেছে। কারা নাকি অরিত্রকে রাস্তায় তাড়া করেছিল। পুলিশের বাইক সেখানে এসে পড়ায় নাকি গা ঢাকা দিয়েছে। ... ...
"অন্ধকার জমিয়া জমিয়া ভূত হয়" সেই কোনকালে পড়া। আর এখনকার পরিপার্শ্বে যে অখন্ড অন্ধকার জমাট বেঁধে আছে তাতো ভূত নয় বরং রীতিমত বর্তমান এবং ভবিষ্যতেও।আলোর উৎসব, শক্তি পূজা, দীপান্বিতা কত নাম দিয়েছি। কালী পূজা করালবদনা দেবীর করাল গহ্বরে সমগ্র কালকে টেনে নিচ্ছেন তিনি। কালকে নিজের মধ্যে আত্মসাৎ করে তিনি কালী। শিবের ওপর অর্থাৎ মঙ্গলের ওপর নিজেকে ধারণ করলেন। ... ...
পর্ব ৩ রেজিস্ট্রি অফিস থেকে বেরতে জয়িতাদের সন্ধ্যে হয়ে গেলো। জয়িতার একটা হাত অর্ণবের মুঠোতে ধরা। জয়িতা যে এখনও ঠিক স্বাভাবিক হতে পারেনি সেটা বোধহয় অর্ণব বুঝতে পেরেছিল।জয়িতা একটা লাল বেনারাসি পড়েছে। হালকা কিছু গয়না। অর্ণব পাজামা পাঞ্জাবি। তনিমাই জোর করে পড়িয়েছে। গলার মালাটা খুলে হাতে নিয়েছে জয়িতা। অর্ণব নির্বিকার। মালা তার গলাতেই শোভা পাচ্ছে।এম এ ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে গতসপ্তাহে। অর্ণব আগেই প্রস্তাব দিয়েছিল। জয়িতাই এড়িয়ে যাচ্ছিল। বাবা মা কে কিছুই জানানো হয় নি। ... ...
অমিতাভর ফোন কিন্তু আজকে আর বেজে উঠল না। দিগ্বলয়ে সূর্যাস্তের শোভা দেখতে দেখতে একাকী বসে থাকতে থাকতে অমিতাভর মনে হল সেও তো মনীষাকে একটা কল দিতে পারে। এতে দোষের কি আছে। মনীষা পাল তো মানসিকভাবে ভীষণভাবে ভেঙে পড়ার মুহুর্তে তাকে অনেকটাই মানসিক শক্তি জুগিয়েছিল সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। সে অকারণেই নিজের মনের কাছে জবাবদিহি করতে লাগল যে, কৃতজ্ঞতা হিসেবেও তার অন্তত একটা ফোন করার কর্ত্তব্য থেকেই যায়। শুভঙ্কর পালের সঙ্গে তো সে কোন মাখামাখি করতে যাচ্ছে না। তাছাড়া তার কোম্পানিতে ভিআর এস হয়ে যাবার পর মনীষা তাকে কি ধরণের সাহায্য করতে পারে সেটাও জানা দরকার। এইভাবে গভীর অন্তর্মুখী অমিতাভ ... ...
শরীর....... সর্বশক্তিমান শরীর। বেশ্যার ঘরে যা দেখে নাক সিঁটকে বলেন পাপ কাদা, নর্দমার নোংরা ....আগ মার্কা গঙ্গাজলে ধোয়া কত তুলসীপাতা বচন। অথচ যুগযুগান্ত ধরে আকন্ঠ আদিম তেষ্টায় সেই নোংরা জলই তো গিলে আসছে মানুষ। আচ্ছা স্পষ্ট করে বলুন দেখি - নোংরা কাকে বলে? আর পাঁচটা বিকিকিনি এর মতোই তো পয়সার বদলে শরীর - সোজাসাপটা হিসেব। কই মুদির দোকানের হিসেব মেলানোটাকে তো নোংরা মানে করেন না ? ... ...
Remember remember the Fifth of November, The Gunpowder Treason and Plot, I know of no reasonWhy the Gunpowder Treason Should ever be forgot. V for Vendetta ছবির এই বিখ্যাত উক্তি নিশ্চয় মনে আছে। কি ছিল এই গান পাউডার প্লট?
জানকী আজ জেনেশুনে লক্ষ্মণরেখা পারসোনার হরিণ স্বপ্ন বুঝি পূর্ণ হবে তার!বাল্মিকি গেছে চলে,রত্মাকর কে ফেলেঅশোক বনে পুত্তলিকা; রাবন চৌকিদার!!
খোয়াইয়ের ধারে একটা পাথরের ওপর বসে রইল নিখিল। এখনও কেউ এসে হাজির হয়নি এখানে। নিতল অম্বরতলে ঝুরো পাতাপত্রের সঙ্গে হাওয়ার ফিসফিস কানাকানি। দিনভর চলে অস্থির বাতাসের অবিরাম খেলা । নির্জন নীরব পরিপার্শ্ব। নিখিলের মনে হল সে অনন্তকাল ধরে বসে থাকে এখানে। এই রকম জনহীন শব্দহীন বনভূমিতে সে কাঁথি, বারাসাত, অনিন্দিতা, মৃদুলা, ঐশী .... তিলোত্তমা লজ, এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের দপ্তর ..... জীবনের জ্বলন্ত অঙ্গারগুলো ভুলে এখানে বসে থাকে । নিখিল দাস খোয়াইয়ের এই উদাস বিবাগী পরিবেশে প্রায় এক ঘন্টা ধরে বসে রইল। এই নিরালা বাতাস বেশিক্ষণ বজায় রইল না। একটা বড় মারুতি সুজুকি ভ্যান ঘ্যাঁসস্ করে ওপাশে রাস্তার ওপর দাঁড়াল। নানা বয়সের ... ...
রাজকার্য যে মূল্যহীন ব্যাপার-স্যাপার, এমন কথা লিখেছিলেন দারাশিকো, জাহানারার জ্যেষ্ঠভ্রাতা, আর এক সুফি শিষ্য। সংক্ষেপে--- '' সলতনত্ সহল অসত্ খুদ রা আশনাই ফকর কুন / কতরহ্ ই না দরিয়া তওয়ানদ শুদ চুরা গওহর শওয়াদ" --- রাজত্ব তো সহজ বস্তু বরং ফকিরি শেখো ভাই জলবিন্দু সাগর জানুক মুকুতা হয়ে লাভটি নাই !আর এঁদেরই পূর্বপুরুষ, বাবর, তুর্কি ভাষায় লেখা তাঁরই এক কবিতায় বলেছেন--- অলীক ... ...
সব রাজ্যে ই কমবেশি খুলে গেল স্কুল কলেজ, বাজার দোকান, হোটেল সিনেমা হল। কিং কর্তব্য অতঃপরম? বড় বাবু, ছোট বাবু সবাই বলছেন মুখোশ পরে থাকুন। কিন্তু ওমিক্রন খুব একটা মুখোশ টুখোশ মানেনা। অনেক কে হারালাম আমরা, বেশিরভাগ কো মরবিড। তাহলে উপায়? ডাক্তার বাবু বলছেন ঃমুখোশ পরুন। প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান। এরোবিক ব্যায়াম করুন রোজ। পুষ্টিকর খাবার খেতে থাকুন। অকারণ বাইরে ভীড়ে যাবেন না। বুস্টার ডোজ ভ্যাক্সিন লাগান। মা ভৈঃ। ... ...
বুধবার পড়ন্ত বেলায় মনীষা পাল হৈ হৈ করে এসে পড়ল তিলোত্তমা লজে। হোটেলে খাওয়ার দাওয়ার পাট চুকে গেছে ততক্ষণে। সুরেশ, ননীরা তাস খেলতে বসেছে চৌকির ওপর। দুলাল কাউন্টারে বসে হিসেব মেলাচ্ছে।এই সময়ে মনীষা পাল এক গাল হেসে সেখানে আবির্ভূত হল।অপ্রত্যাশিতভাবে ওকে দেখে দুলাল বলল, ‘ আরে .... বৌদি ! কি ব্যাপার ? খাবেন তো ? এ..ই ননী.... ‘— ‘ না না .... খাব না । আমি ভাত খেয়েই বেরিয়েছি। .... রুম নেব না। রাত্রেই ফিরে যাব । ‘— ‘ ও আচ্ছা .... এখানে বসুন তা’লে। চা খাবেন তো ? ‘— ‘ না এখন না । পরে খাব। ‘— ‘ ঠিক ... ...
পরশ পাথরে হয়তো সোনা হবে - বসন্ত কি আর কোকিল খুঁজে পাবে! সপ্তসুর কে অনাথ করে গেলে সব তার ছিঁড়ে বীণাপাণি'র কোলে।
#মাফলার আমার বরাবরই অপছন্দের...সেবারও সরস্বতী পুজো ছিল । সেবারও বৃষ্টি ছিল ...দুটোই তো অপশন ছিল । হয় মাফলার নয় হনুমান টুপি । বি এম আই সাতেরও নিচে , ওজন বত্রিশ । হনুমান টুপিতে হনু হবার চান্স বিরাট , তাই অগত্যা মাফলার । ওদিকে তখন লেডিবার্ড নতুন মডেল । ডিপ লাল । শুনলাম ওটাকে চেরি রেড বলে । সালা অশিক্ষিত আমি ।মন রাঙলো । শরীরেও ...লাকি আলী তখন জাস্ট লঞ্চ ।- ' না তুম জানো না হম '...মা বুনে দিয়েছিল মাফলার । মোটা উলের । কালো রঙের । কালো বরাবরই প্রিয় আমার । নীচে ঝালর ছিল । গলায় নিলেই গলায় চুলকানি , না ... ...
মনীষা আবার বলল, ‘ চিনতে পারছেন তো ? লজে আপনার উল্টোদিকের ঘরে আমরা ছিলাম। আমার ছেলে বান্টি ....’এই ফোনটা অমিতাভর কাছে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত । সে বলে, ‘ হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি, বলুন .... ‘— ‘না.... মানে, আমরা চলে যাওয়ার সময় আপনার সঙ্গে দেখা হল না তো .... তাই .... ‘— ‘ ও আচ্ছা , আপনারা কি এখন মেচেদায় ?’ অমিতাভ বেশ বিব্রত বোধ করতে থাকে। কি বলবে ভেবে পায় না।— ‘ হ্যাঁ মেচেদায়। আবার কবে দেখা হবে কে জানে। লজে বেশ ভাল লাগছিল। আপনার কথা খুব মনে পড়ছে। দেখি এর মধ্যে সময় পেলে একবার কাঁথিতে যাওয়ার ইচ্ছে আছে । ‘অমিতাভ দায়সারা ... ...