এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  গান

  • আধুনিক বাংলা গানের কথা (২)

    pi
    গান | ২৮ এপ্রিল ২০১২ | ১২৫২৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • নচিভক্ত | 127.194.201.98 | ১৫ আগস্ট ২০১২ ১২:২২542566
  • নচিকেতার কিছু অ্যালবামের কভার / ইনলে কার্ড চাই। কারো কাছে থাকলে একটু স্ক্যান করতে পারবেন?
    ১) এই তিনজন (হিমিকা মুখোপাধ্যায় ও মধু মুখোপাধ্যায়ের সাথে) (HMV)
    ২) স্বপ্নের ফেরিওলা (HMV)
    ৩) বনলতা (অ্যাটলান্টিস মিউজিক)
    ৪) সমুদ্রসাক্ষী সিনেমার গানগুলো লাগবে।
    ৫) শুভ দাশগুপ্তের শ্রীচরণেষু নেতৃবৃন্দ নামক স্বকণ্ঠে স্বরচিত কবিতা ও না কবিতার লাইভ রেকর্ডিং অ্যালবামের কভারের স্ক্যান ও তার মধ্যে থেকে নচিকেতার একটি পীস "আর কতকাল" mp3 করে দিতে হবে।
    ৬) দুয়ে দুয়ে চার অ্যালবামের ইনলে কার্ডের স্ক্যান ও ঐ ক্যাসেটে শিখা বোসের গাওয়া "পায়ে পায়ে হেঁটে চলো" গানটার mp3 চাই।

    ঋজু কে পাওয়া যাবে কোনোভাবে? হয়তো সে এখন ঘুরতে গেছে কোথাও, তবু ...
  • শিবাংশু | 127.201.161.228 | ১৫ আগস্ট ২০১২ ১৪:৪৭542567
  • @কল্লোলদা, এই টইটাতে কখনও আসিনি।
    আজ একটু সময় পেলুম আর দেখি যে তুমি বহুদিন আগে আমার নামে একটা হুলিয়া এই টইতে বার করেছিলে।

    গান ভালো লাগা না লাগার বহু মানদন্ড হতে পারে। অত্যন্ত সাবজেক্টিভ ব্যাপার। তবে সুমনের মতো অতিস্বল্প 'প্রকৃত' সৃষ্টিশীল সময়কালের মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়া একজন শিল্পীর ( বড়োজোর সাত বছর) দ্বারা বাংলা গানের প্রচ্ছদ পাল্টে দেবার ক্ষমতা আমি রামপ্রসাদ সেনের আমল থেকেও যদি ধরি , কাউকে পাইনি। কেন পাইনি, আমার মতো করে যদি তার বিশ্লেষণ করতে বসি তবে হয়তো একটা আলাদা বই যাবে, টইয়ের আড্ডা থাকবে না। ওঁর লিরিক, যন্ত্রানুসঙ্গ, সুরের চলন, মাত্রাজ্ঞান, গভীরতা এবং সর্বোপরি উপস্থাপনা, অর্থাৎ শুধু কারিগরির দিক টুকু নয়, প্রসাদগুণেও ওঁর সমসাময়িক কেন, আগে পরের খুব কম শিল্পীই পাল্লা দিতে পারেন। ওঁর দুনিয়ার সব কিছু নিয়ে চটজলদি মন্তব্য করার ক্রমান্বয় বদ অভ্যেসটুকু উপেক্ষা করে যদি শুধু ওঁর গান নিয়েই ভাবা যায় তবে তা শ্রেয়তর হবে।

    আসলে কী জানো ব্যাপারটা হলো, এই গান নিয়ে লিখতে গেলে যেটা সতত মনে পড়ে, পৃথিবীর সর্বত্র তো কোটি কোটি রকম গান তৈরি হয়, কিন্তু যা টিকে থাকে তা শেষ পর্যন্ত দেখা যায় 'সঙ্গীত' হয়ে উঠেছিলো। যন্ত্রসঙ্গীতের কথা বাদ দিচ্ছি, কারণ এই আলোচনায় দেখছি যন্ত্রের উল্লেখ হচ্ছে শুধু সহায়ক সুরস্রোত হিসেবে। আর কন্ঠসঙ্গীতের ব্যাপারে সব চেয়ে প্রয়োজনীয় শর্ত হচ্ছে গলার সঠিক সুরসংস্থান। যে পর্দাটি ধরতে চাইছি সেটিকে ঠিকঠাক গলা থেকে বার করা। বাংলায় যাকে বলে ভয়েস ট্রেনিং। তোমার সঙ্গে অজয়বাবুর যোগাযোগ আছে তাই বলছি, ওঁদের ঘরানার সব থেকে জরুরি তালিম হচ্ছে এইটা। কিন্তু এই বিষয়ে বেশি মনোসংযোগ করতে গিয়ে অনেক সময় ওঁরা গানের স্পিরিটটাকে দ্বিতীয় সারিতে রাখেন, এর ফলে গোল লাইনের কাছে এসে কিরানা পার্টি মেরে বেরিয়ে যান। সবাই তো আর বড়ে গুলাম নন। আর বাংলা ব্যান্ড কোম্পানি প্রায় পুরোটাই 'স্পিরিট', সুরের তোয়াক্কা কেউ বিশেষ করেন না। কয়েকজন 'জনপ্রিয়' ব্যান্ডগায়ককে যখন খালি গলায় সামনে বসে গান গাইতে শুনেছি তখন এই সীমাবদ্ধতাটিকে অত্যন্ত প্রকট হয়ে উঠতে দেখেছি। ইক্যুয়ালাইজার, মিক্সার, বাসকন্ট্রোল, সর্বোপরি ধমাধম ধমাধম কৃষ্টির ঢাক ছাপিয়ে অধম শ্রোতাদের কান পর্যন্ত যা পৌঁছোয় তা নিয়ে বিশেষ আশাবাদী হওয়া যায়না।

    এতো কথা এই জন্য লিখছি যে গত শতকের শেষ থেকে বাংলা গানের সব থেকে জনপ্রিয় শিল্পীদের মধ্যে স্বল্প দুয়েকজন ছাড়া বাকিরা সুরসংস্থানে দুর্ভাগ্যজনকভাবে পিছিয়ে থাকেন। মোদ্দা কথা গলায় সঠিক সুর না থাকলে কিছুদিনের জন্য বাজার কাঁপানো যায় কিন্তু শ্রোতাকে মজানো যায়না। এখানে অঞ্জন দত্তের নাম এসেছে । আমার অভ্যেস অনুযায়ী ব্যক্তিগতভাবে ভালো না লাগলেও যখন কোনও গায়ক জনপ্রিয় হন, তখন তাঁর গান আমি বার বার শুনি, এই 'প্রিয়ত্ব' অর্জন করার কারণটাকে খুঁজতে। কিন্তু এখনও অঞ্জনের কোনও চার মিনিটের গানও আমি মনোসংযোগ দিয়ে শুনতে পারিনি। বেসিক সুরসংস্থান এতো মলিন যে চমকানো লিরিক দিয়ে তার গতি করা যায়না।

    শচীন কত্তা বলতেন যে সুরটা রিক্সাওয়ালাও গাইতে পারবে তাই জনপ্রিয় হবে। কিন্তু নিজে গানটা গাওয়াতেন রফি, কিশোর, মান্না, লতা, আশাকে দিয়ে, যাঁরা সুরসংস্থানের ঈশ্বর কোটীর মধ্যে পড়েন। এ ব্যাপারে কোনও আপোস নয়। তাই 'জনপ্রিয়' গান গাইতে গিয়ে যদি আমি জনতার গায়নক্ষমতার অনুকরন করি তবে 'প্রিয়তা' হয়তো আসে, 'গান' আসেনা। অঞ্জনের ক্ষমতা বহুমুখী, কিন্তু গায়ক হিসেবে....??

    সংখ্যার জনপ্রিয়তার দৌড়ে নচিকেতা সুমনের থেকে হয়তো বেশ এগিয়ে। কিন্তু লিরিকের ক্ষেত্রে নচিকেতা অতিনাটকীয়তাকে যেভাবে প্রশ্রয় দেন তাতে তাঁর 'গান' শুধু কানের কাছে নয়, চোখের কাছেও প্রগাঢ় আবেদন নিয়ে আসে। এটা 'গানে'র দুর্বলতা। ঐ মিউজিক ভিডিও টাইপ আর কী। ওঁর গানের মধ্যে 'মুম্বাই' এলিমেন্ট অনেক বেশি, তাই বেশি জনপ্রিয়। আমরা বন্ধুরা নিজেদের মধ্যে যেটাকে 'বেণীমাধব' ইফেক্ট বলে থাকি। কবি জয়ের নেমোসিস যেমন 'বেণীমাধব' তেমনিই নচিকেতার 'নীলাঞ্জনা' বা 'জগৎটা জুড়ে সোনাগাছি' জাতীয় প্রত্যয়। আর আমি নিজে জাত বিহারি হয়েও বলি নচিকেতার গানে বাংলা উচ্চারণ মুহম্মদ রফির থেকেও খারাপ। গত বছর বিশেক ধরে দেখি কলকাতার মূলস্রোতের নতুন প্রজন্মের শ্রোতাদের মধ্যে এই ভেজাল বাংলা উচ্চারণ বেশ আদর পায়। এটাকে কি মুম্বাই হ্যাংওভার বলা যায়। জানিনা। নচিকেতার স্বঘোষিত গুরু মদনমোহন যখন পঞ্জাবি গান গাইতেন তখন সেটা কিন্তু নিঁখুত পঞ্জাবি হতো। যদিও মদনমোহন বাল্যকাল থেকে দীর্ঘদিনের বিদেশপ্রবাসী পঞ্জাবি ছিলেন।

    শ্রোতা হিসেবে এতো দীর্ঘদিন ধরে কোনও ভৌগলিক, সাংস্কৃতিক, বৌধিক সীমারেখার কেয়ার না করে মন দিয়ে গান শুনে আসছি। সহস্র কেন লক্ষাধিক হবে হয়তো। এখন তাই গান নিয়ে বিতর্ক করতে মন চায়না। গান এখন একটা আশ্রয় হয়ে গেছে, শুধু অবসর বিনোদন নেই। এর মানে এই নয় যে আমি 'গান' বেশি বুঝতে শিখেছি, শুধু নিজের ভালো লাগা না লাগাটা সবিনয়ে জানানোর একটা নিমবিশ্বাস তৈরি হয়েছে কোথাও।

    যদিও এটা খোলাপাতা, তবু এই লেখাটা তোমাকেই লিখলাম। কারণ এ বিষয়ে তোমার অধিকারবোধে আমার বিশ্বাস আছে।
  • siki | 12.50.47.36 | ১৫ আগস্ট ২০১২ ১৫:৪৯542568
  • শিবাংশুদা,

    খুব ভালো লাগল লেখাটা পড়ে। স্পষ্ট, সঠিক, আড়ষ্টতাবিহীন বাংলা উচ্চারণ আজকের সময়ের লিডিং গায়ক, অভিনেতা, সকলের জিভ থেকেই চলে গেছে। আজকালকার কলকাতা শহরের ছেলেমেয়েরাও যে বাংলা বলে সেটা ঠিক সোজাসাপটা বাংলা নয়, মুম্বাইয়া বাংলা।

    নচির উচ্চারণের প্রকাশভঙ্গীটা ছিল রকের ভাষা। ক্রমশ আরোপিত করতে করতে ওটাই নচির সিগনেচার হয়ে যায়। বাকি সমস্ত বিষয়ে তোমার সাথে একমত।

    বইই হোক না, অসুবিধে কী? যদি সময় পাও, কিছু কিছু করে লিখতে শুরু করো। প্রত্যেক বছর বইমেলায় লোকজন আমাদের কাছে এসে "গানের বই" খোঁজ করেন, কিছু তো একটা দেওয়া উচিত তাঁদের।
  • কল্লোল | 125.242.182.249 | ১৫ আগস্ট ২০১২ ১৭:১১542569
  • শিবাংশু।
    আহা। তোমার হায়দ্রাবাদের বাসায় আড্ডার মেজাজ পেলাম।
    আমার তো একটি প্রকল্প বেশ চাপে আছে - তুমি আর ন্যাড়া আর গান। যদিও আশায় আছি, একদিন তুমি ব্যাঙ্গালোরে আসবে, আর আমি সেদিন তোমায় আর ন্যাড়াকে বসিয়ে আমি গানে ডুববো, ভাসবো, ডুববো।
  • bb | 127.195.182.197 | ১৫ আগস্ট ২০১২ ১৭:৫৯542570
  • শিবাংশুদা ভাল লাগল। মনে পড়ল গত শতকের শেষের দিকে সুমন একবার জামশেদপুরের বেঙ্গল ক্লাবে এসেছিলেন , সেই প্রোগ্রামের স্মৃতি আজও অমলিন। এত ভাল গলা, নতুন রকমের উপস্থাপনা (একাই গায়ক, বাদক সব) আর দর্শকের সঙ্গে একাত্ম হওয়া (একসঙ্গে পুরান সেই দিনের কথা গাওয়া) সব ভীষণ মন কেড়ে ছিল।
    আসলে সুমন মধ্যবিত্ত বাংলীর (যাদের হেমন্ত, মান্না পছন্দ) কাছে এক নতুনত্ব এনেছিলেন। নচিকেতার গানে ঐ যে রকের ভাষা ছিল ওটা যুবক সমাজকে খুব আলোড়িত করেছিল। যদিও তুলনা অনুচিত তবে সুমন বোধ্হয় সিনেমায় সত্যজিত, মৃণাল ধারার আর নচিকেতা তরুণ মজুমদার ধারার। দুজনেই নিজেদের জঁনরে দ্ক্ষতার চাপ রেখেছেন।
  • pi | 82.83.82.13 | ১৫ আগস্ট ২০১২ ১৮:০৭542571
  • ভাল লাগলো শিবাংশুদার লেখা। আমি অবশ্য আশা রাখছি শিগ্গিরি সামনাসাঅনি আড্ডার মেজাজে এসব শুনতে পাবো , গান সহ ঃ)

    এই 'মুম্বই এলিমেন্ট' এর কথাই সেদিন এখানে ঐ অপার বাংলার গানটা সম্বন্ধেও মনে হচ্ছিল।

    শিবাংশুদা, কিঞ্চিৎ বেসুরো আর দুর্বল/অতিনাটকীয় লিরিক, মুম্বই এলিমেন্টে ভরা গানের মধ্যে কোনটাকে প্রেফারেন্স দেবেন ?

    মানে, অঞ্জন , নচিকেতার মধ্যে ? ঃ)

    আর একটা প্রশ্ন, ঐ টিঁকে যাওয়া নিয়ে। মার্কেটিং বা অন্য ফ্যাক্টারও তো আছে। একটা গান সেভাবে আদৌ পৌঁছাতেই না পারা নিয়ে। মানে, যে রিচ সে ডিজার্ভ করে। সে যদি না 'টেঁকে', তার পিছনে ঐ নানা কারণে না পৌঁছানোর হাত ও তো আছে।
  • aka | 178.26.215.13 | ১৫ আগস্ট ২০১২ ১৮:২৪542572
  • সঠিক উচ্চারণের ব্যপারটা ঠিক মতন বুঝলাম না। সঠিক বাংলা উচ্চারণ বা সঠিক বাংলা ভাষা বললে ঠিক বুঝি না কোন উচ্চারণ বা ভাষাকে বোঝানো হচ্ছে। আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা বলে কলকাতা শহর, হুগলীর পশ্চিম প্রান্তের মফস্বল, হুগলীর পূর্ব প্রান্তের মফস্বল, আরও বেশি গ্রাম বা পাহাড়ে ভাষা ও উচ্চারণ আলাদা। নচিকেতার গান শুনে মনে হয় পাশের বাড়ির রকে আড্ডা মারা ছেলে গীটার নিয়ে গান গাইছে, গলাটা ভালো, অন্য আবেদন আছে ইত্যাদি। পাশের বাড়ির রকে আড্ডা মারা ছেলের মতন উচ্চারণ ভুল কেন?
  • nina | 22.149.39.84 | ১৫ আগস্ট ২০১২ ১৮:৪২542573
  • শিবাজি
    হোক হোক একটা বই হয়ে যাক--প্রথম কপিটা আমার উইথ য়োর সিগনেচার ঃ-)
    নচিকেতা তো আজকাল শুধু কথা বলে--মানে ওটাই ওর গান --মানে যা বঙ্গতে দেখি তাই বল্লাম আর কি! এক লাইন গান--দশ লাইন বকবক
  • siki | 96.98.43.85 | ১৫ আগস্ট ২০১২ ২১:০৬542574
  • সে প্রতুল কম বকবকান নাকি?

    আকা, তফাতটা অন্য জায়গায়। এখানে নয়, অন্যত্র লিখব।
  • dukhe | 127.194.252.160 | ১৫ আগস্ট ২০১২ ২১:৫১542576
  • নচিকেতা আর অঞ্জন দুটোই যাকে বলে - নাঃ থাক, লোকে রেগে যাবে ।
  • নচিভক্ত | 127.194.214.134 | ১৫ আগস্ট ২০১২ ২২:০৩542577
  • কেন, এখানে নয় কেন?
    নতুন বাংলা গান যে কজন করেছেন, রাঘবকে ছড়লে একমাত্র সুরে চলে নচিকেতা। একমাত্র প্রথাগত ক্লাসিকাল শেখা, গজলের অধিকারী। গানটা ঐ একজনই গেয়েছে, সুমন, মহীন, রঞ্জনপ্রসাদ, নগর ফিলোমেল, বেহালা চৌরাস্তা ইত্যাদি থেকে শুরু করে যে নতুন গানের ধারা, তাতে। নচির লিরিক খুব ভালো না, উচ্চারণে রবীন্দ্রভারতীর কল্কে পাবে না, গলা দিনে দিনে মাল খেতে খেতে খেতে খেতে খারাপ থেকে খারাপ হয়ে চলেছে । ইত্যাদি সব মেনে নিয়েও বলা যয়, গান, সম্পূর্ণ গান ঐ একজনই গাইতে পেরেছে, এদের সবার মধ্যে। একেবারে অধুনা রূপঙ্কর, শমীক, স্বাগত, প্রতীক, শঙ্খ, পল্লব, কামাল, ভূমি, উপল, অনিন্দ্য, শহর, থেকে রূপম অনুপম সবাইকে গুনে বললাম। সাঙ্গীতীক প্রাতিভা এদের সবার সবার চেয়ে নচিকেতার বেশি। গান জিনিসটা এদের সবার চেয়ে নচিকেতা ভালো গায়।

    (মেয়েদের গুনলাম না - লোপা, মৌসুমী, শ্রীরাধা, স্বাগতালক্ষ্মী)
  • nina | 22.149.39.84 | ১৫ আগস্ট ২০১২ ২২:৪১542578
  • নচি গায় ভাল--আলবাৎ ভাল গায়--কিন্তু গায়না তো আর শুধু কথা বলে ঃ-( --গানের এক লাইন তো কথার দশ--
  • siki | 96.98.43.85 | ১৬ আগস্ট ২০১২ ০০:৫১542579
  • ক্ষী আর কইব :)
  • শিবাংশু | 127.197.248.22 | ১৬ আগস্ট ২০১২ ০১:৩৪542580
  • প্রসঙ্গ যখন উঠলো-ই তখন যৎসামান্য সংযোজন করি।

    দুটি গান বেছে নিই। নচিকেতার 'জাগে জাগে রাত জাগে' এবং সুমনের ' সূর্যোদয়ের রাগে গান ধরে ভীমসেন জোশি'। এই দুটো গানেরই সুরের স্ট্রাকচার এক, সুরও প্রায় এক, যন্ত্রানুষঙ্গও ( সেই সরোদ আর কীবোর্ড)। যাঁরা দুটো গানই মন দিয়ে শুনেছেন ( ব্যক্তিগতভাবে আমি একাসনে বসে অন্তত দশবার পর পর গান দুটি শুনেছি,পার্থক্যটুকু বুঝতে) , তাঁরা যদি খুব দীক্ষিত শ্রোতাও না হন, তবু সুমন কোথায় জিতে যান সেটা বলার জন্য খুব পরিশ্রম করতে হয়না।

    প্রশ্নটি নিতান্ত সহজ, মানুষ কেন গানের কাছে আসে? গানের কাছে কী প্রত্যাশা থাকে শ্রোতার? উত্তরটিও খুব সহজ। সমস্ত সিদ্ধ শিল্পীর নিজস্ব ধরনের যাত্রা থাকে, আর থাকে তাঁর একান্ত আকাঙ্খা শ্রোতাকে নিজের সহযাত্রী করার। আর তন্নিষ্ঠ শ্রোতার থাকে , গানের অনন্ত ঝরনাতলায় সাঁঝের বেলায় গিয়ে বসার একটি আসন পাবার আকাঙ্খা।

    সুমন যখন গানটি শুরু করছেন, তিনি প্রথমেই আমাদের নিয়ে যাচ্ছেন একজন কিম্বদন্তীর কাছে, যাঁর নাম ভীমসেন জোশি আর আমরা বড়ো কিছু একটার স্বাদ পেতে প্রস্তুত হচ্ছি। তার পর তিনি ভীমসেনের বকলমে কোমল রেখাবের রূপ নিয়ে উতলা হয়ে পড়ছেন।যে শ্রোতা কোমল রেখাবের শাস্ত্রীয় বা অন্তর্লীন জাদু নিয়ে খুব একটা ওয়াকিফও নয়, সেও একটু এগিয়ে গিয়ে বুঝতে চাইছে এই কোমলটোমল ব্যাপারটা কী? তার পর জোগিয়ার হাত ধরে প্রবেশ করছেন নজরুল। ধীরে ধীরে শ্রোতারা বালিকাটির ফুল ছড়ানোর খেলায় অজান্তে মিলিত হয়ে যাচ্ছেন। সুমনের গলায় সুরের অনর্গলতা নিয়ে যদি সংশয় থাকে তবে বলি, তাঁর কণ্ঠ মূলত ব্যারিটোন। এই ধরনের কণ্ঠে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে রাগরূপ ফুটিয়ে তুলতে যে মোচড় আনতে হয়, তা সর্বদা আসেনা। উঁচু স্কেলে গেলে তীক্ষ্ণতা আসবে, কিন্তু মাধুর্যটা আসবে না। তাই সুমন সে প্রয়াস করেন না। তাঁর যেটা সম্পদ, মন্দ্র সপ্তকে কণ্ঠকে বশে রেখে খেলানোর কৌশল,সেটিকে পূর্ণমাত্রায় ব্যবহার করেন।

    অপরপক্ষে নচিকেতা তাঁর গানটি শুরু করার সময় আরোহটি হামিং করেন। যন্ত্রীকে প্রিলিউড বাজাবার অবসর দেন এবং প্রথম তিনটি শব্দ সুরে বলেন। ইতোমধ্যে শ্রোতার প্রত্যাশা তৈরি হচ্ছে ভোরের সুরে নিজেকে ধুয়ে নেবে। সমস্ত ভোরের রাগে মূলত কোমল বা অন্য রেখাবের যে জাদু শ্রোতাকে তৎক্ষণাৎ মুগ্ধ করে, যদি তার হাল হকিকৎ শ্রোতার জানা নাও থাকে তবু সে এটুকু অনুভব করে কুছ বাত বন রহি হ্যাঁয়। এই রকম একটা মোক্ষম সময়ে তিনি বলে ওঠেন তাঁর তানকারি আর সরগম করার ইচ্ছে জাগছে শ্রোতারা কী অনুমতি দেবেন? তিনি যে সুরের শাস্ত্রীয় তাৎপর্য সম্বন্ধে খুব উত্তম রূপে ওয়াকিফ সেটা জানিয়ে দেন।

    সম্ভবত খেয়ালের জাদুকর রজব আলি খান গাইবার সময় সরগম পাল্টা এসব করতেন না। তাঁকে প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, যখন বাড়িতে অতিথিকে দাওয়াত দেওয়া হয়, তখন কি ভোজনের সময় বিভিন্ন কাঁচা মাল,মশলা ইত্যাদি সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশন করা হয়? সরগম পাল্টা রিয়াজের অঙ্গ, আসরে গাওয়ার বস্তু নয়। তবু বহু সিদ্ধ শিল্পী গায়নের সময়, শ্রোতারা চায় বলে সরগম-পাল্টা প্রস্তুত করেন, কিন্তু সংযত মাত্রায়,পরিণত শৈলীতে। আর তাও নিখাদ খেয়াল পরিবেশনের সময়ই করা হয়। কিন্তু নচিকেতা একটা শুদ্ধ বাংলা কাব্যসঙ্গীত শোনাতে গিয়ে তাঁর ছাত্রজীবনে মশলাবাটার কুশলতার কথা শ্রোতার সঙ্গে বিনিময় করতে চান,কিছু অর্ধশিক্ষিত শ্রোতা বেশ হই হই করে স্বাগতও জানায়। কিন্তু গানটির অপমৃত্যু ঘটে।

    কণ্ঠ বা গায়নের তৈয়ারি খুব জরুরি শর্ত, কিন্তু মূল প্রশ্ন হচ্ছে গানটি শেষ পর্যন্ত গানটি কোথায় পৌঁছোলো। নচিকেতা মধ্য ও তার সপ্তকে বেশি স্বচ্ছন্দ, সেটা তাঁর প্রাথমিকভাবে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিক্ষার সূত্রে এসেছে। কিন্তু লিরিকের কথা যদি একেবারে ছেড়েও দিই, তবু কণ্ঠসম্পদকে যথাযথ সংযম ও পরিণতমনস্কতার সঙ্গে ব্যবহার করতে পারার প্রশ্নে নচিকেতা পিছিয়ে থাকেন।

    টিকে থাকার যে প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে দেখি আজকের টু মিনিট কালচারে দশবিশ বছর যে গায়ক টিকে যাচ্ছে সেই নিজেকে বেশ তালেবর ভাবে। হেমন্ত-মান্না ছেড়েই দিচ্ছি, পান্নালাল ভট্টাচার্য,অখিলবন্ধু ঘোষ, শচীন দেববর্মণ ষাট সত্তর বছর ধরে শ্রোতার কানে ও মননে আবেদন রাখছেন।এই সব শিল্পীর গান নিয়ে যখন আমাদের ছোটোবেলায় বাবা-মা উচ্ছ্বসিত হতেন, আমাদের বিস্ময় জাগতো। কী আছে এই সব প্যানপ্যানানি গানে? তার পরে যখন আমাদের একটু কান তৈরি হলো ঘন্টার পর ঘন্টা এঁদের গান শুনেছি,আমার মেয়েরা বিস্মিত হতো, বাবা কী শোনে সর্বক্ষণ? একদিন বসে তাদের বোঝাই, ওদের সময়ের কম্পোজার, ধরা যাক, শান্তনুর তৈরি গানে কীভাবে নিছক মেলোডিকে নানারকম নতুন ছাঁটের জামা পরিয়ে একের পর এক জেন-এক্সের হিট উঠে আসছে,তারা চমৎকৃত হয়।

    যে শিল্পীদের নাম করলুম সেরকম অনেক শিল্পী, কোনও রকম বাণিজ্যিক আতিশয্যের তোয়াক্কা না করেও 'টিকে' আছেন ও থাকবেন।

    শেষে অঞ্জন ও নচিকেতার মধ্যে তুলনা? বড্ডো শক্ত কাজ ভাই, আত্মসমর্পণ করছি। ঃ-)
  • bhabuk | 208.80.144.187 | ১৬ আগস্ট ২০১২ ০১:৪৯542581
  • আচ্ছা, 'জাগে জাগে রাত জাগে' - গান টি - সুমন এর গাওয়া না?


    নচিকেতা'র গাওয়া এক ই গান আছে নাকি?
  • siki | 96.98.43.85 | ১৬ আগস্ট ২০১২ ০২:৫২542582
  • শিবাংশুদা, নাজুক, নাজুক।

    নচিকেতার জাগে জাগে রাত জাগে অমি শুনি নি, তবে সুমনের জাগে জাগে রাত আর সূর্যোদয়ের রাগে দুটো গানই আমার শোনা, দুটো এক রাগের ওপর বেস করে নয়।
  • a x | 138.249.1.194 | ১৬ আগস্ট ২০১২ ০৭:২৯542583
  • নচিকেতা সুমনের যুগ্ম প্রোগ্র্যামে নচিকেতা ওটা গান, শিবাংশু বোধহয় সেই রেকর্ডিংএর কথা বলছেন। দুটোই শুনেছি। অশিক্ষিত শ্রোতা হিসেবে নচিকেতার রেন্ডিশনটা বেশি ভালো লাগে। রাগের আমেজ বেশি পাই। অনেকক্ষণ ধরে গানটা আমাকে ঘিরে ধরে ঘুরপাক খায়। সুমনেরটা বড় অল্প হইল মনে হয়। এই একটা গানেই নচিকেতাকে একেবারে অন্যরকম লাগে। মনে হয় গানটার ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

    আর নচিকেতা বলেন তিনি আলাপ করতে চান। তানকারি বা সরগম না। ইনফ্যাক্ট বলেন, আমার একটা বদ অভ্যেস আছে, গান গাইতে গিয়ে আলাপটা একটু বেশি করি। ভার্বাটিম মনে নেই, এরকম কিছু।
  • শিবাংশু | 127.197.244.219 | ১৬ আগস্ট ২০১২ ০৯:২৫542584
  • সিকি,
    ঠিক বলেছো। আমিও রাগের নাম নিইনি, শুধু সুরের কথা বলেছি। ভোরসকালের সুরে যতো রাগ রয়েছে, সবার মধ্যে বেশ কয়েকটি সমান্তরাল পর্দার ফ্রেজ রয়েছে। রাগের চরিত্র অনুযায়ী তারা শুধু জায়গা বদলায়, কিন্তু আমেজটা একই রকম থাকে।

    ax,

    আপনি ঠিক বলেছেন, ওটা লাইভ অনুষ্ঠানের রেকর্ডটির কথাই বলেছি। নচিকেতার এই গানটি আমি এই জন্যই বেছেছিলুম যে এর মোটামুটি বিশ্বাসযোগ্য পরিবেশনায় কিছু সেরিব্রাল এলিমেন্ট লাগে।

    এই 'আলাপ' ( তিনি সরগম-পাল্টা এখানে বলেননি, তা অন্য জায়গায় শোনা। তবে তাতে আমার বক্তব্যের বস্তুস্থিতি পাল্টাচ্ছে না) ব্যাপারটি নিয়েই আমার কথা বলা। এটা বাংলা গান বিচারের একটা অর্বাচীন লক্ষণ। যেমন অনেকে এখন রবিবাবুর গানকেও মূল রাগের সুরসংস্থান অনুযায়ী ভাগ করে গাইতে চান বা পৃথকভাবে তার বর্গীকরন করেন। প্রশ্ন হচ্ছে, গানটি 'হয়ে' উঠছে কি না তা নিয়ে চিন্তা করা , অথবা তার সুরের কাঠামো কোন রাগের আরোহ-অবরোহের সঙ্গে মিলছে তা নিয়ে ব্যস্ত থাকা। রবিবাবুর পর বাংলা কাব্যগীতিতে লিরিকের সম্মান সুরের উপরে চলে গেছে। কিন্তু 'গান' যেহেতু 'গাওয়া' হয়, আবৃত্তি করা হয়না, তাই সুরের প্রতি তন্নিষ্ঠ না থাকলে শেষ পর্যন্ত সৃষ্টি দাঁড়াবে না। এ একটা অত্যন্ত সূক্ষ্ম পরিমিতিবোধ ও সংযমের খেলা। তাই বাংলা গানটির মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যদি আমরা অপ্রয়োজনীয় ভাবে নিকটতম একটি রাগের আরোহ-অবরোহের বিস্তার করতে থাকি তবে তা বিড়ম্বনার সূচনা করে। যদি আমাকে সেই 'রাগ'টিকে জড়িয়ে ধরতে হয় তবে তার জন্য তো অঢেল মহীরূহদের জাগ্রত সৃষ্টিগুলি আমার শোনার অপেক্ষায় রয়েছে। নচিকেতা যখন শাস্ত্রীয় বা অন্তত উপ-শাস্ত্রীয় গান করবেন, তখন তিনি আলাপকারিতায় স্বাগত, কিন্তু কাব্যগীতির কাঠামোয় তার আতিশয্য অতিরিক্ত বোধ হয়। দাদু বলছেন, ' যেন আমার গানের শেষে, থামতে পারি সমে এসে...' এই সমে থামতে পারার ক্ষমতাই সব সৃষ্টির সাফল্যের প্রথম ও শেষ কথা।

    জানি বাংলাগানে বড়োমাপের শিল্পীদের আকালের দিনে নচিকেতার লোকপ্রিয়তা অনেক। তাঁর সাঙ্গীতিক কৌশলের মধ্যে খামতি বাকিদের থেকে অনেক কম। তাই তাঁর কাছে প্রত্যাশা বেশি থাকে। পরবর্তী প্রজন্মের শ্রোতাদের রুচি তৈরি করতে তাঁর দায়িত্বও তাই অন্যদের থেকে বেশি। কোনও জীবন্ত সংস্কৃতির জন্য সুরের স্রোত মানবশরীরে রক্তস্রোতের মতো জরুরি। তাই তার প্রতি সনিষ্ঠ থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। 'গান' শুধু জনমনোরঞ্জনের মাধ্যম নয়, তা মানুষের বৌদ্ধিক অস্তিত্বের অঙ্গ। এখানেই সুমনের জিত,এখানেই নচিকেতা প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও ম্লান হয়ে যান।
  • নচিভক্ত | 127.194.201.49 | ১৬ আগস্ট ২০১২ ০৯:৩৯542585
  • জাগে জাগে রাত সুমনের ইচ্ছে হল (১৯৯৩) অ্যালবামে আর রেখাবের রূপ (সূর্যোদয়ের রাগে গান ধরে ভীমসেন যোশী) সুমনের বসে আঁকো (১৯৯৩) অ্যালবামে ছিল দুটোই সুমনের গান। "

    জে ডি বিড়লা সভাঘরের একটা লাইভ রেকর্ডিং ডুয়াল ক্যাসেট অ্যালবাম HMV বের করে "এই প্রথম, এই সময়, এই গান, এই দুজন (১৯৯৭) যেখানে অন্যান্য নতুন গানের সাথে সুমনের কিছু গান নচিকেতা গায়, বা সুমনের সাথে ডুয়েটে, আর নচিকেতার কিছু গান সুমন গেয়েছিলেন। ৩২০ kbps এ এখানে আছে
    http://www.banglatorrents.com/showthread.php?30889 সমস্যা হল, ইনলে কার্ডে জাগে জাগে রাত - এর কথা ও সুর সুমনের জায়গায় নচিকেতা ছাপা হয়েছিল সম্ভবত। HMV ক্যালানেপণা। এইখান থেকে শিবাংশুদা গন্ডোগোল করেছেন মনে হয়।

    ওখানে সুমন যখন সময় থমকে দঁড়ায় গেয়েছে। সেটা অন্যরকম হলেও "যাঁরা দুটো গানই মন দিয়ে শুনেছেন তাঁরা যদি খুব দীক্ষিত শ্রোতাও না হন, তবু নচিকেতা কোথায় জিতে যান (এই বেশ ভালো আছি অ্যালবামে) সেটা বলার জন্য খুব পরিশ্রম করতে হয়না। ঃ-)

    এই প্রোগ্রামে নচি জাগে জাগে রাত করে সুমনকে পুরো ধ্বসিয়ে দিয়েছিলো। শ্রোতাদের উৎসাহেই শুধু নয়, ইচ্ছে হল অ্যালবামে সুমনের জাগে জাগে রাত আর নচিকেতার গাওয়া সুমনের জাগে জাগে রাত পাশাপাশি শুনলেই (একাসনে, দশবার না শুনলেও চলে) নচিকেতা কোথায় জিতে যান সেটা বলার জন্য খুব পরিশ্রম করতে হয়না।

    এরপর বেশি আলাপ করে রাগাশ্রয়ী গান করার একটা চেষ্টা সুমন করেন জাতিস্মর (১৯৯৭) অ্যালবামে (বুকের ভেতর বৃষ্টি পড়ে)। এত জালি হয়েছিল, আমার দেখা এক লাইভ প্রোগ্রামে এটা করার সময় শ্রোতারা এত উত্যক্ত হয়ে কমেন্ট পাস করেছিল যে সুমন বলতে বাধ্য হন, আমার পেছনে লেগে লাভ নেই, শাসক দলের তরফে বহুবার অমার পেছনে লাগা হয়েছে ইত্যাদি ... যা সেই সময়েরই ('৯৭-'৯৮) ঘটনা।
  • ন্যাড়া | 219.131.62.115 | ১৬ আগস্ট ২০১২ ০৯:৪৮542587
  • কিছু এলোমেলো ভাবনা -

    সুমনের উচ্চারণ স্পষ্ট, পরিস্কার। কিন্তু মান্য উচ্চারণের থেকে কিছু কিছু জায়গায় সরে যায়। এই মুহূর্তে মনে আসছে 'আজগে যে বেপরোয়া বিচ্চু'। কোথাও বা অল্পপ্রাণবর্ণ মহাপ্রাণ হয়ে যায়, 'বড্ড নীচুতে বাঁছা' ইত্যাদি। তবে এগুলো ব্যতিক্রম।

    সুমনের বাংলা খেয়াল গাওয়ার প্রচেষ্টাগুলো আমার কানে একেবারেই ভাল লাগে না। 'জাগে জাগে রাত' অথবা 'বুকের ভেতর বৃষ্টি পড়ে' - দুইই আমার কানে অক্ষম চেষ্টা লাগে। সুমনের গলার যে কাঠামো, স্বরপ্রয়োগের যে বৈশিষ্ট্য তাতে মীড়ের কাজ ভাল খেলে না। যার জন্যে খেয়াল জমে না। জমে না হিমাংশু দত্তর গানও। তাই সুমনের নিজের অধিকাংশ রচনাতেই স্ট্যাকেটো চলন। সুমনের গানের মধ্যের নাটকীয়তা, শব্দ ব্যবহারের অকস্মিকতা এই স্ট্যাকেটো চলনের সঙ্গে ভাল যায়। অল্প মীড়ের কাজ, যা গানের কথায় নাটকীয়তা আর সুরে নতুনত্ব আনতে সাহায্য করে, সেখানে সুমন খুব লাগসই। 'সূর্যোদয়ের রাগে' গানে সু-উ-র-যো অংশে যে মীড় লাগে, সেটা এর ভাল উদাহরণ। এই ধরণের প্রক্ষিপ্ত কাজে গলার সেরকম কমনীয়তা লাগে না, যে কমনীয়তা আমরা মান্না, সতীনাথ, অখিলবন্ধু থেকে হেমন্ত অব্দি পাই। সত্যি বলতে নচিকেতার গলার কমনীয়তা সুমনের থেকে বেশি। আমি দুজনেরই প্রাইম-টাইমের তুলনা করছি।

    সুমনের যেটা পাই, সেটা হল সুমন একটি কমপ্লিট প্যাকেজ। শুধু কমপ্লিটই নয়, সেরিব্রালও। সেখানে নচিকেতা মূলত পারফর্মার। গাইয়ে। এ ছাড়াও একটা ব্যাপার খেয়াল করলে দেখবেন সুমনের গান সাধারণতঃ অন্য গাইয়ের গলায় সেরকম খোলে না। ব্যতিক্রম আছে, কিন্তু সুমনের গান সুমনের গলাতেই সবথেকে ভাল। তার প্রধান কারণ সুমনের গান সেরিব্রাল। সুমনের গান ব্যক্তিগত। সুমনের গান নাটকীয়। সুমনের কম্পোজিশন সুমনের গায়কির বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগায়, স্বরপ্রেক্ষাপণের নাটকীয়তা, উচ্চারণে সূক্ষ্ণ পজের ব্যবহারকে কাজে লাগায়। সুমনের গানে বাংলা সাহিত্য ও গানের রেফারেন্স ছড়িয়ে থাকে। এরুডাইট ও সেরিব্রাল শ্রোতার কাছে সেখানে সুমন জিতে যান।
  • নচিভক্ত | 127.194.201.49 | ১৬ আগস্ট ২০১২ ০৯:৫২542588
  • রাগাশ্রয়ী নচিকেতার সৃষ্টি গানের প্রসঙ্গে আপনি আলোচনা করতে পারতেন, অন্য অ্যালবাম না শুনে থাকলে ওখানেই সাঁঝবেলার সুরে গানটা ছিল। যদি হঠাৎ আবার দেখা হয় দুজনে, পাতা ঝরা মরশুমে ছিল। একটা অন্যরকম লাইভ প্রোগ্রামে, খামোকা কিছু আলাপ করতে ইচ্ছে করলে সেটা দিয়ে তাঁর সৃষ্টি অন্যান্য রাগাশ্রয়ী গানের বিচার কীভাবে করছেন জানিনা। শ্রাবণ ঘনায়, এ মন ব্যাকুল যখন তখন, বিভাবরী জাগো, রাত ঘুমাল, হায় আমায় বলে দে অ্যাকচুয়ালি আমার কথা আমার গান অ্যালবাম টা আরো যত গান রাগ ভেঙে ভেঙে নচিকেতা বানিয়েছেন, গেয়েছেন, সুমন তার ৫০ শতাংশ ও করেননি। ক্লাসিকালে সুমনের চাপ আছে। এটা সুমন ও জানেন।

    আবার বলছি, রাঘব ছাড়া বাংলা নতুন গানের শিল্পীদের মধ্যে ক্লাসিকাল গাওয়ার অধিকার একমাত্র নচিকেতার ছিল ও আছে।
  • নচিভক্ত | 127.194.201.49 | ১৬ আগস্ট ২০১২ ০৯:৫৬542589
  • গাইয়ে, শুধু গাইয়ে হিসেবে বিচার করলে, সুমনের চেয়ে নচিকেতা কয়েক যোজন এগিয়ে। হারমোনিয়াম শিল্পী হিসেবে ধরলামই না। সমকালের ইতিহাসে কিংবদন্তী বললে কম বলা হবে।
  • কল্লোল | 230.226.209.2 | ১৬ আগস্ট ২০১২ ১০:১০542590
  • নচিভক্ত, সম্ভবতঃ শিবাংশুর কথাটা বুঝতে পারেন নি।
    কাব্যগীতিতে আলাপ/তান/পাল্টার জায়গা সেইভাবে নেই। করেছেন অনেকেই, মেহেদী হাসান, গুলাম আলি, একটু পরিমিতভাবে মানবেন্দ্র। এই অঙ্গগুলি কাব্যগীতিতে এসেছে মূলতঃ শ্রোতাদের সামনাসামনি অনুষ্ঠানে। রেকর্ড করা গানে তেমন নেই (ব্যাতিক্রম মান্নাবাবুর বেশ কিছু ফিল্মের গান - লাগা চুনরীমে দাগ জাতীয় গানে - যেখানে তান/সরগম এসেছে ফিল্মের প্রয়োজনে, তা সে যতোই বোকা বোকা প্রয়োগ হোক না কেন)। এগুলো গায়কেরা করে থাকেন অল্পশিক্ষিত শ্রোতারের বাহাবা পাওয়ার জন্য।
    নচিভক্তের শেষ পোস্টের ঐ লাইনটি এই ধারনার সাক্ষ্য দেয় - "এই প্রোগ্রামে নচি জাগে জাগে রাত করে সুমনকে পুরো ধ্বসিয়ে দিয়েছিলো।" গান কি কুস্তি বা ক্যারাটে নাকি, যে সহগায়ককে "ধ্বসিয়ে" দেবে!!
    শচীনকত্তা, অখিলবন্ধু বা মান্না দেকে এসবের ধার ধারতে হয় নি।
    শিবাংশু ওর শেষ পোস্টের শেষ লাইন কটিতে সার কথা বলেছে। "গান শুধু মনোরঞ্জনের মাধ্যম নয়, তা মানুষের বৌদ্ধিক অস্তিত্বের অঙ্গ।" ঠিক এখানেই সুমন নচিকেতার চেয়ে এগিয়ে থাকে। আর ঠিক এখানেই মহীন অন্যদের চেয়ে শত যোজন আগে চলে যায়।
  • b | 220.212.8.62 | ১৬ আগস্ট ২০১২ ১০:১৮542591
  • ন্যাড়াস্যারের একটা কথা মনে ধরলো, কিন্তু অনেকদিন ধরেই অদীক্ষিত শ্রোতা হিসেবে সাহস করে বলতে পারছিলাম না।। সুমনের গলায় নমনীয়তা/ইলাস্টিসিটি কম (এটাকেই কি জোয়ারী বলা হয়?)। তাই সুমনের রবীন্দ্রসংগীতের অ্যাপীলও আমার কাছে প্রায় শূন্য।
    উচ্চারণের কোনো স্ট্যান্ডার্ড বিধি নেই, তবে সুমনকে আমরা তো নগর কলকেতার আর্বান গাইয়ে হিশেবেই দেখেছি। সেখানে ' এক কাপ ছায়ে আমি তোমাকে চাই' বা 'বিশ্বকমল ফুটে ছরণ ছুম্বনে' একটু পীড়াদায়ক।
  • সিকি | 12.50.47.36 | ১৬ আগস্ট ২০১২ ১০:৩২542593
  • ** নচিকেতার গান, এর তাৎক্ষণিক রিঅ্যাকশন আছে ...
  • siki | 12.50.47.36 | ১৬ আগস্ট ২০১২ ১০:৩২542592
  • উচ্চারণের বলিষ্ঠতা ফোটাতে গিয়ে সুমনের এই অল্পপ্রাণ বর্ণদের ধরে ধরে মহাপ্রাণ করে দেবার প্রবণতার উদাহরণ খুব একটা কম নেই। এটা মূলত সুমনের ঐ সন্ধ্যার মেঘমালা অ্যালবাম বেরোবার সাথে সাথেই শুরু।

    এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই -- এখানে তেমন কানে লাগে নি, কিন্তু বি যেমন বললেন, বিশ্বকমল ফুটে ছরণ ছুম্বনে, কিংবা ঝখন এসেছিলে অন্ধকারে, এখানে বেশ কানে লাগে মহাপ্রাণের অসম প্রয়োগ। অথচ ঐ অ্যালবামেই, বঁধু মিছে রাগ কোরো না গানে এতটুকুও মহাপ্রাণের আধিক্য নেই। আবার তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা হয়ে যাচ্ছে থুমি সন্ধ্যার মেঘমালা।

    প্যাটার্ণটা লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, পরপর শব্দগুলোতে কিছু মহাপ্রাণ থাকলে আগের অল্পপ্রাণ বর্ণও মহাপ্রাণতা পেয়ে যাচ্ছে সুমনের উচ্চারণে। তো, গায়কীটা এতই অ্যাপিলিং যে এটা ওভারঅল গান হিসেবে যখন পরিবেশিত হয়, তখন কানে লাগে না।

    উচ্চারণজনিত দু একটা উদাহরণ আরও দেওয়া যায়। মান্না দে চিরদিনই "গেছে" -- যেটাকে আমরা কথ্য বাংলায় "গ্যাছে" বলে উচ্চারণ করি, উনি বলতেন শুদ্ধ "গেছে"। সে আমার ছোট বোন গানের শেষ স্ট্যান্‌জাতে "তার গান থেমে গেছে, নেই শ্রোতা আর" শুনে খট করে কানে লাগে এটা।

    নচিকেতার গান, এর তাৎঅণিক রিয়াকশন আছে, ঝট করে বুকে ধাক্কা মারে, কিন্তু, ফ্র্যাঙ্কলি, মননে ধাক্কা মারে না। খুবই প্রেডিক্টেবল চটকদারি কথা লাগে। ঠিক সেই গভীরতা পাই না যেটা সুমনের গানে পাই।

    সাধারণ তুলনা টানলে বলতে পারি, নচির গান হল জলসার গান। একদল শ্রোতার সাথে বসে মাথা নাড়া যায়, ভালো লাগানো যায়। কিন্তু সুমনের গান একলা নির্জন দুপুরে বসে শোনার গান। সহশ্রোতা কেউ না থাকলেও চলে। একলা একলা ডুএ যাওয়া যায়, ভেসে যাওয়া যায়। নচির গানে সেই ফীলিংটা পই না।
  • sosen | 111.63.144.212 | ১৬ আগস্ট ২০১২ ১০:৪০542594
  • নচিভক্ত কে বলি-
    বিভাবরী জাগো, শ্রাবণ ঘনায়, এ মন ব্যাকুল-এই গান গুলি নচিকেতা ভালই গেয়েছেন ও তৈরী করেছেন। তাতে লাইট ক্লাসিক্যাল এ ওনার যেটুকু দক্ষতা আছে তার পরিচয় আছে, কিন্তু ক্ল্যাসিক্যাল সঙ্গীতে তালিম থাকলেই যে তাঁকে দাপিয়ে বেড়ানো শিল্পী বলে ধরতে হবে এটা জাস্ট মানা যাচ্ছেনা। নচিকেতার পরিচয়, বা ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি নাগরিক কাব্য গায়ক হিসাবে, সেখানেই তার গান কে বিচার করা যুক্তিযুক্ত, এবং একমাত্র সেখানেই সুমনের সঙ্গে তার তুলনা আসে। কিন্তু এই তুলনার সেরকম কোনো মাথামুন্ডু নেই।সুমন সচেতন ভাবে নিজের গানে সুর খেলান না, ন্যাড়া যেটা বললেন "স্ট্যাকেটো চলন। " সেই একঘেয়ে খানিকটা আবৃত্তি গোছের চলনে গান গেয়ে বেরিয়ে যান-তার ফলে আমরা লিরিক খুব স্পষ্ট শুনতে পাই, গানগুলোর মগজের কাছে যে আবেদন আছে সেটা সেটল হওয়ার সময় পায়-সেটাই সুমনের প্যাকেজে জরুরি। এবার আমি দেখেছি ধরুন আমার মা -মাসি রা, বা একটু কম সাহিত্য শিল্পের সাথে পরিচয়, রেফারেন্স লিরিক থাকলে অতটা পছন্দ করেন না, তারা নচিকেতার গান সদা সর্বদা সুমনের চেয়ে বেশি পছন্দ করেন। মূল কারণ কিন্তু এটাই, যে নচিকেতার গানের কথায় একটা সোজা সাপ্টা গল্প থাকে, যেটা চেনা, বৃদ্ধাশ্রম বলুন, নীলাঞ্জনা বলুন, একটা মেঠো গল্প, যাকে মগজ ঘুরে হৃদয়ে পৌছতে হচ্ছেনা, সটান মনে হচ্ছে এটা আমার বাবা , আমার মা, কিংবা আমি ই। এই সব গানে স্বপ্ন নেই, লিরিক সহজ, তাই অনেকসময়েই সুরের চলনে ভ্যারাইটি আছে, প্রতিটা গান একরকম নয়। তো এটাই নচি র আইডেন্টিটি। এই গানগুলো গেয়েছেন বলেই আমরা নচির আধা ক্লাসিকাল গান গুলি পরে শুনতে চেয়েছি-দেখা যাক কেমন গান। কিছু ভালই উতরেছে, কিছু উতরোয় নি। কিন্তু না সুমন, না নচিকেতা আদত ক্লাসিকাল গায়ক, সেখানে ওই মাঠে দুজনকে খেলতে নামিয়ে চেঁচামেচি করা নেহাত বোকামি। যেখানে ওনাদের দক্ষতা অনস্বীকার্য্য, সেখানে ও টার্গেট অডিয়েন্স ধীরে ধীরে আলাদা হয়ে গেছে- নচিকেতার গান বারো চোদ্দ বছরে যে অনুভূতি জাগাত এখন আর তা জাগে না। কিন্তু সুমনের গান বয়েস বাড়ার সাথে সাথে আর একটু করে প্রিয় কথা বলেছে- নতুন করে, পরিণত মস্তিষ্কের কাছে তার আবেদন বেশি বলেই হয়ত।
  • sosen | 111.63.144.212 | ১৬ আগস্ট ২০১২ ১০:৪৯542595
  • দ্বিতীয়ত- যেটা বলা খুব জরুরি- এটা একটা ফালতু কথা যে বাংলা গানে আর কোনো ভালো গায়ক আসেন নি, নচিকেতা কিংবদন্তি এটসেট্রা। নচিকেতা শহুরে কাব্যগীতির একজন ভালো গায়ক যার লাইট ক্লাসিক্যালে কিছুটা দখল আছে(এটা ব্যাকগ্রাউন্দ ইনফো) , এবং বাংলা গানে আরবান লোকসঙ্গীতের এস্টাবলিশ মেন্টের সময়কালের ইতিহাস লিখতে গেলে ওনার নাম লেখা হবে। নচি-ভক্ত রা তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব তাঁকে দিতেই পারেন, কিন্তু সেটা নেহাত ই ভক্তের পূজা , ক্রিটিকের বোধ থেকে আদৌ তার উদ্ভব নয়। তাই এই যে আপনি বারংবার -ক্লাসিকাল গাওয়ার অধিকার নচিকেতার ই আছে- লিখছেন-ওটা বড় হাস্যকর শোনাচ্ছে।
  • a x | 138.249.1.202 | ১৬ আগস্ট ২০১২ ১১:৩২542596
  • শিবাংশু, কিন্তু আমার কাছে ঐ আলাপের জন্যই শব্দগুলো মানে পায়। রাত ধীরে ধীরে জাগছে, "ভোর হবে বলে" এই জায়গাটা সুমনও ঘুরে ফিরে গান, সুমনও সময় নিচ্ছেন। আমীর খানের ললিতের সাথে রংএর আভাস মেশাচ্ছেন সুমন শব্দে আর নচিকেতা আলাপে। আর আমি যে রেকর্ডিংটা শুনেছি সেখানে এই আলাপ বোধহয় আধ মিনিট মত, তার বেশি না। জাগে জাগে রাতকেই বার তিনেক গান। একবারও মনে হয়নি দেখানোর জন্য কিছু করছেন। ইনফ্যাক্ট এই পুরো প্রোগ্র্যামটাতে একটা দারুন ক্যামারডারি কাজ করে দুজনের মধ্যে।

    সুমনের প্রক্ষেপণ, উচ্চারণ এসব সরিয়ে এগুলো বলছি। অন্য যেকোনো গানে এগুলো ম্যাটার করে। কিন্তু সামহাউ এই গানে করেনা।
  • শিবাংশু | 127.197.233.101 | ১৬ আগস্ট ২০১২ ১১:৩৭542598
  • যেসব কথা লিখবো ভেবেছিলুম, কিন্তু এখনও আমার লেখা হয়ে ওঠেনি সেগুলি ন্যাড়া, কল্লোলদা, সিকি, sosen বিশদ বলে দিয়েছেন। নচিভক্ত নিশ্চয় সেগুলি পড়বেন। তবে গান ভালো লাগার যে আবেগ বা মনন তা মগজে গজাল মেরে আনা যায়না। সে তখনই 'সুখদা' যখন সে 'স্বয়মাগতা'।

    আমি সুমনকে শুধু তাঁর নিজস্ব গানের মানদন্ডেই মূল্যায়ণ করার পক্ষে। রবীন্দ্রসঙ্গীত বা হিমাংশু দত্তের গান তাঁর শখের ব্যাপার, সেখানে তাঁর কিছু প্রমাণ করার নেই। তাঁর 'হয়ে ওঠা গান' বইটি নিশ্চয় অনেকেরই পড়া আছে। এই 'হয়ে ওঠা' ব্যাপারটি আমার মনে হয় শুধু তাঁর নিজের গানের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তিনি জানিয়েছেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের কিছু তালিম তিনিও নিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর কণ্ঠ কৈশোর পেরিয়ে কঠিন হতে থাকে এবং নমনীয়তা হারায়। আমাদের চেনা গানে সঠিক সুরসংস্থান করতে গেলে কণ্ঠের নমনীয়তা অত্যন্ত জরুরি। তাই তিনি নিজের গানের মাঠটিই পাল্টে ফেলেন এবং গান পরিবেশনের সময় মূলত বিদেশি ছাঁচের স্ট্যাকাটো ধরনটি গ্রহণ করেন। এই পরীক্ষায় যে তিনি বেশ সফল হন, তার সাক্ষী ইতিহাস।
    তিরানব্বই সালে একটি অনুষ্ঠানের সূত্রে তিনি আমাদের শহরে এসেছিলেন। তখন তাঁর সূর্য মধ্যগগন যাত্রী। একটা সারা দিন তাঁর সঙ্গে নানা আড্ডা, আলোচনায় কেটেছিলো। তখন বলেছিলেন তিনি একজন একটি বিশেষ সময় কালের গায়ক। হয়তো পাঁচ বছর পরেই তাঁর গান আর কেউ শুনবেনা। আমরা তো চমৎকৃত। তখন তাঁকে আমরা সলিল চৌধুরির পর বাংলা গানের মসিহা হিসেবে ভাবতে শুরু করেছি, তাঁর মুখে এমন কথা? কিন্তু তিনি নিজের সীমাবদ্ধতা সম্বন্ধে যে কতোটা ওয়াকিফ ছিলেন তা এভাবেই প্রমাণ হয়ে যায়।

    শিল্পী হিসেবে নিজের এই মূল্যায়ণ তিনি আত্মমর্যাদার অঙ্গ হিসেবেই করেছিলেন হয়তো। কিন্তু প্রায় বিশ বছর কেটে যাবার পরেও তাঁর গান মানুষ শুনছে আর এই সব গান থেকে অন্তত পঞ্চাশ ষাটটি গান বাংলা গানের মাইল ফলক হিসেবে আরো অনেকদিন বেঁচে থাকবে।

    নচিকেতার সুর যোজনার বৈচিত্র্য নিয়ে আমার মতো ইতর লোকও অনেক কথা লিখে ফেলতে পারে। অকৃপণভাবে ভাংড়া থেকে গজল, রক থেকে রেগি, ভাটিয়ালি থেকে গোয়ান সুর, হির থেকে ব্লুজ, বৈঠকি থেকে বাউল, সবই তিনি ব্যবহার করেছেন তাঁর গানে। কিন্তু তার মধ্যে কটা শেষ পর্যন্ত 'গান' হয়ে উঠতে পেরেছে সেটাই জরুরি।

    আমাদের ছোটোবেলায় দেখতুম সত্যম্বর অপেরার একটি আসরে যতো উচ্ছ্বসিত দর্শকের ভিড় থাকে, বহুরূপীর সারা বছরেও ততো দর্শক জোটেনা। তাই এভাবে কে সফল আর কে বিফল, তা বিচার করতে যাওয়াটা মূঢ়তা।

    আবার দাদু, '... ভালো আমার লেগেছে যে , রইলো সেই কথাই...'।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন