এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বেঁচে আছিঃ প্রেমে-অপ্রেমে

    ranjan roy
    অন্যান্য | ০১ অক্টোবর ২০১৪ | ২১৮৩৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ranjan roy | 24.99.230.221 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০৮651043
  • সিকি,
    একদম ঠিক। ওটা টাইপো, হবে " না ভেবে থাকি"।
  • aranya | 83.197.98.233 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:২৭651044
  • এটা পুরুষতন্ত্রের গালে থাপ্পড় হচ্ছে কি করে? পুরুষতন্ত্র তো বলে সতী নারীর স্বামী বিনা অন্য কাউকে মনে স্থান দেওয়া উচিত না, পতিচিন্তা, পতিসেবা ইত্যাদিই স্ত্রী-র পরম কর্তব্য, অন্য পুরুষের কথা ভাবাও পাপ।
    সীতা তো পুরুষ তন্ত্র বর্ণিত সেই 'আদর্শ পত্নী'-র রোলই প্লে করেছেন।
  • - | 109.133.152.163 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৩৩651045
  • চূড়ান্ত ভালোবাসা আর চূড়ান্ত ঘৃণায় পার্থক্য তো নেই তেমন @ অরন্য! আপনি যেটাকে চুম্বনের দংশন মনে করছেন রঞ্জনবাবু হয়ত সেটাকেই ক্রোধের কামড় বলে দেখতে/দেখাতে চাইছেন।
    সে যাই হোক, গপ্পটা চলুক।
  • 4z | 208.231.20.20 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:০২651046
  • বলি কি এই গল্প ছেড়ে সীতার পাতাল প্রবেশ নিয়ে আলোচনা শুরু করলে সীতা যে হিন্দ্রলিনী রূপ ধরে পাতাল থেকে উঠে আসবে! তাই গল্পটাকে আগে বাড়ালে হয় না?
  • ranjan roy | 24.99.230.221 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৫০651047
  • পৃথিবীটা বোধ্হয় গোল। ভূগোল বইয়ে কমলালেবুর মত বা অমনই কিছু একটা বলেছে বটে,সেটা ওদের ব্যাপার। তবে আমার পৃথিবী নিশ্চয়ই গোল, নইলে সেই জর্দাখাওয়া কালচে দাঁতের মাঝবয়সী কমরেড নারায়ণ ছত্তিশগড়ের এই শহরে উদয় হলেন কেমন করে!
    কিন্তু এ সেই ধূর্ত শেয়াল গোছের লোকটাও বটে, আবার নাও বটে!
    কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে।
    দু-একদিনে বুঝলাম।
    বীরভূমের সেই পুলিশের রেইড ও কোনরকমে নেতৃস্থানীয় লোকজনের বেঁচে যাওয়ায় দলের মধ্যে ভারসাম্য পালটে গেছে। বীরভূমের সংগঠন গেছে ভেঙে। তার সঙ্গে ভেঙে গেছে সমীরদার আত্মবিশ্বাস।
    ওর ডাক্তার সেজে ওখানে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে সংগঠন ও কালচারাল স্কোয়াড গড়ে তোলায় দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে ওর ইমেজ ও সম্মান খুব বেড়ে গিয়েছিল। একইভাবে ওই সব ঘটনার জন্যে ওকেই দোষী ঠাওরানো হয়েছে। ওর চিন্তা নাকি হঠকারী, অবেগে ভেসে বেড়ানো, বাস্তবের সঙ্গে নাকি কোন যোগ থাকে না।
    আর জেল থেকে আমাদের জামিন করিয়ে বের করে আনার ব্যাপারে নারায়ণের সক্রিয় ভূমিকা ও বীরভূমের ভাঙা সংগঠন গড়ে তোলার জন্যে এগিয়ে এসে দায়িত্ব নেওয়া -- এইসব মিলে কমরেড নারায়ণের এখন তুঙ্গে বৃহস্পতি। ফলে ওর হাবভাব পাল্টে গেছে। বেশ একটা হোমরা চোমরা ভঙ্গি।
    ও এখন আর সমীরদাকে জিগ্যেস করে না, আদেশ দেয়।
    কিন্তু একটা জিনিস আগের মতই রয়ে গেছে --- আমার দিকে একই ভাবে তাকায়। তবে আগের মত চোরা চোখে নয়, বেশ খোলাখুলি।
    আমি ওকে চিনতে ভুল করি নি। সিংহচর্মে ঢাকা শেয়াল নয়, শেয়ালের মুখোশ পরে থাকা হায়না একটি। সতর্ক হই; হায়নার চোয়ালে যে জোর খুব, স্কুলে বায়োলজির মিস ্‌ বলেছিলেন।
    কিন্তু সমীরদা? কেমন যেন হেরে যাওয়া কালচে চেহারা। বিশেষ করে যে দিন কমরেড নারায়ণ আসে। ওরা কি যে সব কথা বলে কে জানে!
    কানে আসে-- গুপ্ত ও ওপেন সংগঠন! রণনীতি-রণকৌশল! মুখ্য দ্বন্দ্ব ও প্রধান দ্বন্দ্ব, বিশ্ব-বিপ্লবের ভরকেন্দ্র, টেকনিক্যাল কোর।
    চুলোয় যাক! আজকাল অসহ্য হয়ে উঠেছে।
    বিশেষ করে নারায়ণ যখন হুকুমের সুরে চা বানাতে বলে।
    একদিন রাত্তিরে শোয়ার সময় সমীরদাকে বলি-- ওই কমরেডটিকে আমার ভাল মনে হয় না। ওকে আমাদের ঘরে আসতে বারণ কর।
    --- তা হয় না, লতা। ও এখন আমার ওপরের সারির নেতা। দল আমাকে ওর নির্দেশ মেনে চলতে বলেছে।
  • ranjan roy | 24.99.100.138 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৫ ২৩:১১651048
  • -- কী আশ্চর্য! আমার ঘরে কাকে ঢুকতে দেব, কাকে বসতে দেব-- সেটাও পার্টি ঠিক করে দেবে?
    -- ভুল বুঝেছ। এই বাড়ি তোমার আমার নয়। এটা পার্টির শেলটার। বাড়িটা তুমি-আমি ঠিক করিনি, করেছে আমাদের দলের লোক। পার্টির নির্দেশে। ভুলে যেও না-- তোমার ডাক্তার কুমারের দেহাতি ডিসপেন্সারিতে নার্সের কাজ, সেটাও পার্টি ঠিক করে দিয়েছে। কাজেই এ বাড়িতে কারা আসবে কারা আসবে না-- সেটাও পার্টি ঠিক করবে, তুমি আমি না।
    --- কিন্তু ওই নারায়ণের ব্যবহার আমার ভাল লাগে না। আর কারও ব্যাপারে তো বলছি না। আচ্ছা, পার্টির নির্দেশেই সই, মানিকদাও তো এসেছিলেন। শুধু আসা নয়, মাসের পর মাস থেকেছেন। কই, কখনও তো আমার কোন অস্বস্তি হয় নি। তুমি একটু পার্টিতে কথাটা তোল না!

    সমীরদা খানিকক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বিড়ি ধরিয়ে গলগল করে ধোঁয়া ছেড়ে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে বলল-- আমাদের কথা তুলতে হবে না, কথা আগেই উঠেছে। পার্টিতে আলোচনা হয়েছে যে তুমি মানিকদার সঙ্গে একটু বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলে।
    তাই আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা মানিকদা কমন প্রিকশন না মেনে তোমার কথা শুনে শনিচরিন বাঈয়ের ওখানে গিয়ে চেঁচামেচি শুরু করেছিলেন।
    এতে পুলিশ আসলে বিপদ হতে পারত, শুধু ওনার নিজের না, দলেরও। এই নিরাপদ শেল্টারটি ভেঙে যেত।

    আমার ভেতরে ভেতরে কিছু একটা ভাঙতে থাকে। সমীরদার ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাগলের মত চুমু খেতে থাকি আর বিড়বির করতে থাকি।
    -- এখান থেকে চল, চলে যাই। এদের থেকে দূরে চলে যাই। কিছু ভেব না। যা কাজ শিখেছি তাতে ছোট শহরে নার্সের কাজ জুটে যাবে। তুমি টিউশন করবে। আমাদের একটা শান্তির সংসার হবে। এদের থেকে দুরে চল। কেউ তোমাকে খুঁজে পাবে না।
    শোন, আমার কথা একতু শোন। এতদিন তোমার কথা মেনে চলেছি। তোমার সাথে সব জায়গায় গেছি। এই একবার আমার কথা শোন। শুনে দেখ, আখেরে আমাদের সবার ভাল হবে।
    সমীরদা প্রথমেবাধা দেয়, নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে।
    --- আরে কি করছ কি! এই লতা! লতা? কী হল? হল কি তোমার?
    ধীরে ধীরে ওর প্রতিরোধ হার মানে।
    অন্ধকারে আমি বিজয়ীর হাসি হাসছি। তারপর অনেক দিন বাদে নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
  • ranjan roy | 24.99.130.70 | ০৭ জানুয়ারি ২০১৫ ২৩:৩৫651049
  • ৭)
    না, এদের ব্যাপার-স্যাপার বোঝা আমার সাধ্যের বাইরে। আর আমি আদার ব্যাপারী, জাহাজের খোঁজে দরকার কি!
    তবে সেদিনের পর থেকে ও অনেক বেশি সময় দিচ্ছে আমাকে। নানান রকম রান্নার ফরমাশ করছে। একদিন কোত্থেকে এক ঝোলা সাদা সাদা কিসব নিয়ে এসে বলল--আজকে মাংসের মত করে রান্না কর। এগুলো প্যায়রা-পুঁটু, মুরগীর মাংসের মত খেতে।
    --- ধ্যাৎ, আমি চিনি। এগুলো মাশরুম, ব্যাঙের ছাতা। বাবা কোনদিন খেতে দিতেন না। বলতেন অনেক সময় বিষাক্ত হয়, খেয়ে ফুড পয়জন হতে পারে। এগুলো ফেলে দাও। নোলা একটু কম কর।
    -- আরে কি যা তা বলছ! একেবারে পদিপিসীদের মত! আসলে তোমার জন্যে তো কিছুই করতে পারিনি লতা। কিন্তু তোমার শরীর ভেঙে যাচ্ছে। শরীরে একটু প্রোটিন দরকার। তাইএগুলো আমাদের এক গাঁয়ের কমরেড দিয়েছে। ওর বাড়ির খড়ের গাদায় হয়েছে। ভয় নেই, ও আর আমি খেয়ে এনেছি।
    অগত্যা রাঁধতেই হল। মানছি, খেতে একেবারে মুরগীর মাংসের মত। আগে কোনদিন খাওয়াদাওয়া নিয়ে কোন কথা বলতে শুনিনি। আমি বললেও এড়িয়ে গেছে। যেন যে দেশের এক-তৃতীয়াংশ লোক আধপেটা খেয়ে টিঁকে থাকে সেখানে জিভের স্বাদের কথা বলা পাপ!

    কিন্তু শুধু পেটের খিদে আর জিভের স্বাদ নয়, সমীরদার অন্য খিদেও যে বেশ বেড়ে গেছে। আমি একটু অবাক। এই লোকটাকে কি আমি চিনি? এর সঙ্গেই কি বছর তিনেক জীবন কাটিয়েছি!
    আরও কিছু পরিবর্তন! যে লোকটা পুলিশের মার খেয়েও কাঁদে নি তার আজকাল বড় সহজে চোখে জল আসে!
    কখনো আমাকে কাছে ডেকে দুহাত দিয়ে ধরে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
    -- কী দেখছ অমন করে?
    -- কিছু না, এমনিই।
    -- এমনি এমনি কিছু ঘটে না। তোমার মতলব্টা কী বলত?
    -- লতা, একটা কথা। আমাকে ভুল বুঝো না।
    --- মানে?
    -- আমি না সত্যিই তোমাকে ভালবাসি।
    --- সে আর নতুন কথা কি?
    -- না, আগের থেকেও বেশি।
    --- কবে থেকে? ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে রাখব।
    ---- যেদিন তুমি শনিচরিন বাঈকে বাঁচাতে ভিড়ের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলে, সেদিন থেকে।
    ----সে কী, এ তো ভূতের মুখে রামনাম! আরে তোমার পার্টি তো এ নিয়ে আমার বিরুদ্ধে প্রায় ফতোয়া জারি করেছিল।
    ----- করুক গে'। আমি চাই তুমি যেমন আছ, তেমনি থাক।
  • SM | 130.57.177.235 | ০৮ জানুয়ারি ২০১৫ ২০:২১651050
  • রঞ্জন বাবু ভিসন ভালো লাগছে।
  • ranjan roy | 113.240.99.126 | ১০ জানুয়ারি ২০১৫ ২৩:০৬651051
  • সেদিন আবার কমরেড নারায়ণ এলেন।

    সমীরদা নেই। তাকে গত সপ্তাহেই ১৫ দিনের জন্য আবার মহারাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবার যাওয়ার সময় ওর চেহারায় কোন উৎসাহ ছিল না। একটা এয়ার ব্যাগে জামাকাপড় আর বই গুছিয়ে নিতে নিতে বারবার অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছিল।
    আমি বল্লাম-- ছাড়ো তো! একটা ব্যাগও ঠিক করে গোছাতে পার না। খালি কথাবার্তায় পন্ডিতি!
    -- শোন লতা! যাই ঘটুক আমার উপরে বিশ্বাস রেখো। আমি জ্ঞানতঃ কোন অন্যায় কাজ করি নি, কাউকে ঠকাই নি।
    --এসব কি বলছ? কে তোমাকে অবিশ্বাস করছে?
    -- না, তবু বলছি , বলা তো যায় না। আগামী দিনে কি হবে , কে জানে!
    আমার খটকা লাগল। সমীরদা কি কিছু লুকোচ্ছে? যাক গে, এখন ট্রেন ধরার সময়; কিছু না বলাই ভাল। ফিরে আসলে দেখা যাবে।

    লোকটাকে দেখেই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। আমি শুকনো স্বরে বললাম -- ও তো বাড়ি নেই। বাইরে গেছে। আসতে আরো দিন দশেক।
    ও হাসল।
    -- সেসব আমি জানি। আমিই তো ওকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে ওখানে পাঠিয়েছি। বাকি খবরটা দেওয়া আমারই কর্তব্য। তাই এসেছি।

    বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠল।
    -- কী হয়েছে সমীরদার? ভালো আছে তো?
    --- না না, ভালো আছে। কিন্তু ফিরতে দিন দশেক নয়, প্রায় একমাস হবে। সেই খবরটা দিতে এলাম।
    -- সে কি? কেন? গিয়েছিল তো পনেরদিনের জন্যে।
    -- আরে ম্যাডামজী! ইঁহা সবকো কাম করনা পড়তা হ্যায়। খুন-পসীনা এক করনা পড়তা হ্যায়। কাম পুরা নহীঁ হুয়া তো ওহাঁ রুককর পুরা করকে আনা পড়েগা না?
    -- আপনি কি বলতে চাইছেন? কমরেড সমীর আপনাদের দেওয়া কাজ পুরো করতে পারেন নি?
    -- তবে আর বলছি কি! শুধু পুরো করে নি তাই নয়, এখন এর বেশি সম্ভব নয় বলে বাড়ি আসতে চাইছে। তুমি কি যে জাদু করেছ ম্যাডাম,তা তুমিই জান। আমাদের একসময়ের পোড়খাওয়া মিলিট্যান্ট কমরেড , পার্টির হোলটাইমার সমীর আজকাল বেশি সময় বাড়িতে কাটাতেই চাইছে।
    --- এসব আমাকে বলছেন কেন? আপনাদের পার্টির ব্যাপার-স্যাপার আমি কি জানি? সমীর আসলে ওকেই বলবেন।
    বলে আমি দরজা বন্ধ করতে যাচ্ছিলাম, নারায়ণ এসে আমার হাতটা ধরে ফেলে। আমি হতবাক।
    -- শোন লতা ম্যাডাম।আমার কথা শেষ হয় নি। দরজা বন্ধ করবে না। তোমার এই ঘর, এই নার্সের চাকরি--সব পার্টির দেওয়া তা তো নিশ্চয়ই জান। আর তুমি আমার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিচ্ছ?
    আমি পুরো এক মিনিট নারায়ণের দিকে তাএকিয়ে রইলাম। ও চোখ নামিয়ে নিল না।
    এখন দুপুর বেলা। রাস্তায় লোকজন নেই।
    -- আসুন, কমরেড। ভেতরে আসুন।
    নারায়ণ ভেতরে এসে মেজেতে গোটানো বিছানার পাশে সতরঞ্চিতে বসে পড়ে।
    আমার ব্যাপারটা ভাল লাগে না। সেটা আমার চেহারায় স্পষ্ট করি।ও যেন দেখেও দেখে না।
  • ranjan roy | 113.240.99.126 | ১১ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৩০651053
  • ও একবার চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারদিকে তাকিয়ে দেখে। ঠিক যেন কবাড্ডি খেলার মাঠে আমার কোটে অ্যাটাকে আসার আগে বিপক্ষের কেউ দম নিচ্ছে। আমিও দম সেধে তৈরি। দেখি, কতটা ভেতরে আসতে পারে, তার পর যেন ফিরতে না পারে তার ব্যব্স্থা করব।
    আমি এখন সেই খনি শহরের স্কুলের হয়ে কবাড্ডিতে ডিস্ট্রিক্ট প্লেয়ার, ক্লাস নাইনের শান্তিলতা সেন। আমাকে মেরে কেউ নিজের কোটে নিরাপদে ফিরে যাক দেখি।
    টাচ লাইন ছোঁয়ার আগেই দম ফুরিয়ে যাবে।

    রেফারির নিঃশব্দ হুইসল বেজেছে, খেলা শুরু হল।

    কে প্রথমে দান দেবে? ওই দিক।
    --বলছিলাম কি, এক দিক দিয়ে দেখলে আজকের যা অবস্থা তার জন্যে তুমিই দায়ী।
    -- মানে? আমি কী করেছি?
    -- কর নি? তোমার জন্যে আমাদের একের পর এক কমরেডরা বিভ্রান্ত হচ্ছে। আগে কমরেড মানিক, এখন কমরেড সমীর। তারপর কমরেড ওমপ্রকাশের বিরুদ্ধে তুমি সন্দেহের বশে আজেবাজে প্রচার করেছ, ফলে এখানে আমাদের সংগঠনের ক্ষতি হয়েছে।

    ও আমাকে পেছোতে বাধ্য করছে, ক্রমাগত এগিয়ে আসছে।

    --- মানিকদার কী হয়েছে? উনি এখন কোথায়?
    -- যেখানেই থাকুন তা নিয়ে আমাদের কোন মাথাব্যথা নেই। উনি এখন পার্টির বাইরে।

    ইস্‌, একটুর জন্যে বেঁচে গেছি। ও আচমকা পা চালিয়ে ছিল, তৈরি ছিলাম না। ছিটকে গিয়ে কোটের ভেতরই পা হড়কে পড়ে গেছি। কিন্তু ছুঁতে পারে নি।

    - হ্যাঁ, পার্টিবিরোধী কাজের জন্যে ওকে এক্সপেল করা হয়েছে। ও তোমার সঙ্গে শনিচরিন বাঈয়ের ঝামেলায় জড়িয়ে পরার জন্যে এতটুকু অনুতপ্ত নয়। বরং তোমার জন্যে গর্বিত। আর তোমার প্রতি দুর্বলতা লুকোয় নি।
    এইবার আমি ওকে ঘেরাও করতে থাকি।
    -- বাজে কথা। উনি আমার দাদার মত। উনি এসব বলেছেন--বিশ্বাস করি না। ওঁকে আমার সামনে নিয়ে আসুন, নহী তো পিঠ পিছে বুরাই করনা চুগলিবাজি--ইয়ে সব কায়রতা হ্যায়।

    ও তৈরি ছিল না।পিছিয়ে যায়।
    -- তুমি কি আমাকে কায়র বা কাপুরুষ বললে?
    ওর চোখ জ্বলে উঠেছে। এবার আমি একটু ভয় পাই।
    -- না, আপনাকে বলি নি। কিন্তু পেছনে কথা বলা যে ঠিক নয়, তা তো মানবেন!
    -- কি করব? মানিককে তো আর আনা সম্ভব নয়। ওর মধ্যবিত্ত পেটিবুর্জোয়া মানসিকতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। পার্টির ডিসিপ্লিন মানতে চাইছে না।
    ও হাওয়ায় একটা ছোবল মেরে নিজের কোটে ফিরে গেছে।
    এবার আমার দান।
    সোজা ওর কোটে গিয়ে অন্ধের মত পা চালাই।
    -- আপনার একটা কথাও বিশ্বাস করি না।
    -- বেশ, করতে হবে না। কিন্তু সমীরকে তো কর। ওকেই জিজ্ঞেস করে নিও। মানিকের শো-কজ নিয়ে বৈঠকে সমীর হাজির ছিল। ইন ফ্যাক্ট, তোমার সম্বন্ধে মানিকের কী ফিলিং --এই প্রশ্নটা সমীরই করে ছিল।

    শেষে সমীরদা?
    আমি ধরাশায়ী। এই আচমকা আক্রমণের কোন জবাব আমার কাছে নেই। আমাকে ধরে নারায়ণ নিজের কোটে আছড়ে ফেলেছে দম শেষ। প্রথম গেম হেরে গে্ছি।

    এবার দ্বিতীয় গেম। কোট বদলেছি।

    আমি দম নিয়ে সতর্ক পায়ে এগোই।
    -- দেখুন কমরেড, সমীরদা আসলে অবশ্যই জিজ্ঞেস করব। সে পরের কথা। কিন্তু মানিকদা যদি কিছু বলেও থাকে তো আমার কি করার আছে? এসব আমি শুনবোই কেন?
    ও আমাকে ধরতে পারে নি। নিজের কোটে ফিরে এসেছি। অক্ষত।

    এবার ওর দান।
    --- তুমি কী শুনতে চাও, বল। তাই শোনাব।
    ও হাসে।
    -- সমীরদা আর আমি স্বামী-স্ত্রী। আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে কোন কথা আপনার সঙ্গে আলোচনা করব না।
    --- বিপ্লবীদের কোনকিছুই ব্যক্তিগত নয়; না সম্পত্তি, না সম্পর্ক।তোমার প্রভাবে যদি আমাদের কমরেড সমীরকে খোয়াতে হয় তবে সেটা ব্যক্তিগত থাকে না,পার্টিগত চিন্তার বিষয় হয়ে পড়ে।
    আবার আকস্মিক হামলা। কোন মতে আউট হতে হতে বেঁচে গেছি

    --- সমীরদা কে নিয়ে ওভাবে কথা বলছেন কেন? আপনারা ওর কেন ক্ষতি করতে চান?
    -- আরে এতেই ভয় পেয়ে গেলে লতারানী? আমরা বাঘ-ভালুক নই। কিন্তু আমাদের একটই প্রোগ্রাম বিপ্লব। তার স্বার্থে যে কোন স্টেপ নেওয়া যায়। কিন্তু আমরা ডাকাতের বা খুনীর দল নই, অকারণ হিংসায় বিশ্বাস করি না। তবে ও যে ভাবে চলছে তাকে ওকেও মানিকের পথ ধরতে হবে। ও আজকাল অথরিটিকে প্রশ্ন করা শুরু করেছে। এগুলো ব্যক্তিবাদের লক্ষণ, পেটিবুর্জোয়া লিবেরালিজম। লেনিনিজম নয়।

    ও বুঝতে পেরেছে আমার দম ফুরিয়ে এসেছে। তাই ওর সাহস বেড়ে গেছে। চাউনি বদলে গেছে। গলার স্বরে একটা অচেনা ঘড়ঘড়ে ভাব। কিন্তু ও একদম তাড়াহুড়ো করছে না। ওকে এখন একটা পোকা ধরা টিকটিকির মত লাগছে।

    আমি আউট হওয়ার আগে দুর্বল চেষ্টা করি বাঁচবার।
    --- কিছু প্রশ্ন করলেই পুরনো কমরেডকে সরিয়ে দেবেন?
    ---- ঠিক তাই। কাজ না করে ফালতু প্রশ্ন!
    কমরেড মাও বলেছেন-- বিপ্লব কোন শিল্প বা সুচীকর্ম নয়, এটা এত ভদ্র এত নম্র হতেই পারে না। এ হল এমন একটা কাজ যাতে একটি শ্রেণী নির্মমভাবে আর একটি শ্রেণীকে নির্মূল করে ক্ষমতা দখল করে।
    -- ঠিক আছে। কমরেড সমীরকে ফিরে আসতে দিন। আমি বুঝিয়ে বলব আপনার কথ।আ। তারপর উনি যা ভাল বোঝেন।
    আমি দরজার দিকে এগোই।
    কিন্তু ও নড়ে না। একগাল হাসে।
    -- তুমি বোঝালে ঠিক বুঝবে।চাইলে কি না পার! মানিক তোমার কথায় পার্টি-ডিসিপ্লিন ভেঙে তোমার সাথে গিয়ে নন-পলিটিক্যাল ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ল। সমীর আজকাল বিপ্লবে ভায়োলেন্সের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন করছে--সব তোমার মোহিনী শক্তি। দেখ না, আমিও অন্য কাজ ভুলে তোমার সঙ্গে কতক্ষণ ধরে কথা বলছি।

    আমি আমার কোটের ভেতরে এককোণে একহাঁটু মাটিতে রেখে সতর্ক চোখে ওর আক্রমণের প্রতীক্ষা করি। ওর দুর্বল জায়গাটা মাপার চেষ্টা করি। ও বুঝতে পারে। সম্ভবতঃ আমার চোখ দেখে।
    -- লতা, এক গ্লাস জল এনে দেবে?
    আমি ভাবি ম্যাচ ড্র।

    পেছন ফিরে উনুনের কাছে গিয়ে জলের কুঁজো থেকে জল গড়িয়ে দিতে যাব, শাড়িতে টান পড়ল।
    পেছন ফিরে দেখার আগেই নারায়ণের শক্ত দুজোড়া হাত আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। ওর লালাসিক্ত মুখ আমার ঠোঁট খুঁজে বেড়াচ্ছে। প্রাণপণে ছাড়াতে চেষ্টা করি। ও সমানে বিড়বিড় করে যাচ্ছে।
    -- লতা, শোন লতা। না কোর না। সমীরাকে ছেড়ে দাও। ও তোমার যোগ্য নয়। ওকে কিচ্ছু বোঝাতে হবে না। ওর টিকিট কাটা হয়ে গেছে। ও ফিরে এলেই এক্সপেল করা হবে। আমার সঙ্গে এড়ে যাবে।থাকো। সব পাবে। এর চেয়ে ভাল ঘর। নার্সের মাইনেও বেড়ে যাবে। আমাদের সন্তান হবে। সমীর তো নপুংসক।

    মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে। কোন রকমে হাত ছাড়িয়ে কোনার থেকে তরকারি কাটার হাঁসিয়া তুলে নেই।
    --- হারামী! কমীনে! শুয়র কে অউলাদ! ফাড় কে রাখ দুংগী, শালে!

    কেলা শেষ। জিতে গেছি। ও পালিয়েছে। আমার বিছানার পাশে পড়ে আছে ওর ঝোলা ব্যাগ, তাতে কিছু কগজপত্র। আমার জয়ের সার্টিফিকেট।
  • | ১১ জানুয়ারি ২০১৫ ১১:০৬651054
  • ইয়েসসস
  • ranjan roy | 24.97.183.231 | ১৬ জানুয়ারি ২০১৫ ১১:৫৫651055
  • ৮)
    আজকাল আমার কেমন অস্থির অস্থির লাগে। সব কিছু কি কেউ আগে থেকে ঠিক করেছে? আমার চারদিকে চুণের দাগ দিয়ে একটা দাগ দিয়ে দিয়েছে? নাঃ, খালিপিলি দাগ বল্লে কিছুই বোঝানো যায় না। ঠিক যেন অ্যানুয়াল স্পোর্টসের সময় স্কুলের মাঠে একশ' মিটার ট্র্যাক।
    তুমি যে জায়গা থেকে দৌড়তে শুরু করবে সেখানেই ফিরে আসতে হবে, সে একশ' মিটার বা চারশ' -আটশ' যাই হোক। তফাৎটা খালি ক'বার পাক খাবে তাই নিয়ে।
    আমার জীবনে এই ট্র্যাক কে ঠিক করে দিয়েছে? তাকে কি বলব? নিয়তি? ভগবান?
    অবশ্যি সমীরদা বলে ভগবান-টগবান কিছু হয় না, যেমন ভূত বলে কিছু হয় না। এইসব কুসংস্কার নাকি বুর্জোয়াদের তৈরি, খেটে খাওয়া মানুষদের বোকা বানিয়ে শোষণ করবার স্বার্থে, লোকের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে। ধর্ম নাকি জনগণের আফিম!
    কে জানে।আজকাল মাথায় এইসব ভাবনা পাক খায়।
    কারণ, আমি এবার একটু একটু ভয় পাচ্ছি। তাই সমীরদাকে সেদিনের নারয়ণের ঘটনাটা বলি নি। যদি সমীরদাকে পার্টি থেকে বের করে দেয়? তাহলে এই শহর ছাড়তে হবে, নার্সের চাকরি ছাড়তে হবে।
    আবার অনিশ্চিত রোজাগারের জীবন। সেই যে কোলকাতায় আলিমুদ্দিনের পেছনে চামড়ার কারখানায় হাড়ভাঙা খাটুনি, রাত্তিরে চাল-গম সাফ করা! হয়তো অমনই কিছু করতে হবে।
    আর সাহস হয় না। আজকাল শরীরাটাও কেমন আইঢাই করে।
    তাই সমীরদাকে বলিনি। ও যে বড্ড সংবেদনশীল। আত্মসম্মান বাঁচাতে ও নিজেই তখন দল ছেড়ে দেবে। কিন্তু ও যে পার্টি ছেড়ে থাকার কথা ভাবতে পারে না।সেবারই দেখেছি, যখন পার্টি আবার ফেরত নিল, সেকি খুশি! চেহারাই বদলে গেল।
    আমার দাদা একবার অ্যানুয়াল পরীক্ষায় ফেল করেছিল। ওর খারাপ লাগছিল যে পুরনো বন্ধুরা সব উঁচু ক্লাসে পড়বে। যাহোক, দাদাকে সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা দিতে বলা হল। দাদা পাশ করে গেল। তখন চেহারায় ওইরকম আনন্দ!
  • AS | 125.187.57.202 | ১৬ জানুয়ারি ২০১৫ ১২:০৭651056
  • খুব ভালো লাগছে
  • ranjan roy | 24.97.183.231 | ১৬ জানুয়ারি ২০১৫ ১২:৫৩651057
  • তবু ভেতরে ভেতরে একটা ভয়।
    ওই ছুঁচো নারায়ণ যে বলেছিল-- ফিরে আসলেই কমরেড সমীরকে দল থেকে বের করে দেবে!
    এখন আমি যদি কিছু না বলি তাহলে নারায়ণও বোধহয় সামলে চলবে। ও বোধহয় আমাকে ভুল বুঝেছিল। সহজ শিকার!
    কিন্তু এখন আমাকে ভয় পাচ্ছে।
    তাহলে বোধ্হয় মাসোহারা বন্ধ করে দেওয়া, ফের নিয়ে নেওয়া-- এই চক্রটা এবার বন্ধ হবে।
    উঁহু, বন্ধ সহজে হবার নয়, হয়ত ট্র্যাকের সাইজটা বেড়ে যাবে। তাই বা কম কি! একটু দম নেওয়ার ফুরসত তো পাব। উঃ , মাথাটা যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে।

    তা, আমার ক্যালকুলেশন মনে হয় লেগে গেল। নারায়ণটা শেয়ালের মত ভীতু। সমীরদাকে কিছু করে নি, শুধু আবার মহারাষ্ট্রে পনের দিনের জন্যে পাঠিয়ে দিয়েছে।
    আমি জিজ্ঞেস করলাম-- শুধু শুধু তোমাকেই বারবার পাঠাচ্ছে? ওখানে কে আছে? ধরা পড়লে কী হবে? কে জামিন করাবে?
    সমীরদা চুপ।
    --- তোমাকে কিসের শাস্তি দিচ্ছে? তোমার অপরাধ? চুপ করে থাকলে চলবে না। আমায় বলতেই হবে। নইলে আমি তোমাদের সেন্ট্রাল কমিটি অব্দি যাবো। কথা বলবো।
    --- লতা, তুমি আর এসবের মধ্যে এস না। আসলে এই বুর্জোয়া সমাজের মধ্যেই তো আমরা বেঁচে থাকি। মধ্যবিত্ত কমরেডরা এই সব ভ্যালুজ নিয়েই তো আসেন। আমিও তো ব্যতিক্রম নই।
    -- কী সব ভ্যালুজ?
    সমীরদা এবার হেসে ফেলে।
    -- ওই মুনি-ঋষিরা যা বলে গেছেন। কাম-ক্রোধ-লোভ-মোহ-মদ-মাৎসর্য। সবাই ষড়রিপুর অধীন। ডি-ক্লাসড- হওয়া কি সোজা? সময় লাগে।
    আমি চমকে উঠি।
    -- এসব কি বলছ? আমি জানতে চাই তুমি পার্টির কী ক্ষতি করেছ যে ওই নারায়ণ হতচ্ছাড়া তোমাকে ডাংগুলি খেলার মত খাটান খাটাচ্ছে?
    --- দেখ, সামনে ওরা মানে সর্বোচ্চ নেতৃত্ব আমাকে দায়ি করছে বীরভূমের ওখানে দলের বিপর্যয়ের জন্যে। আমার কাজকম্মোকে অতিবাদী ঝোঁক বলছে।
    কিন্তু আসল কারণ হচ্ছে তোমাকে নিয়ে নারায়ণের ঈর্ষা।
    --- মানে? তু-তুমি কী জান?
    সমীরদা হাসে; দুঃখের হাসি।
    -- লতা তুমি না বললেও আমি জানি, নারায়ণ নিজে আমাকে বলেছে। তিনদিন আগে বাড়িফেরার পথে ও আমাকে ওর শেল্টারে নিয়ে যায়। সেখানে আমার কাছে মাপ চায়। বলে ওর ভুল হয়ে গেছে, অন্যায় করে ফেলেছে, এবারের মত ওকে মাপ করে দেওয়া হোক। আমার হাত দুটো ধরে অনুনয় করে যেন আমি তোমাকে কিছু না বলি। তোমার কোন দোষ নেই।

    আমি অবাক।
    সমীরদা বলতে থাকে,-- ও সব খুলে বলেছে। বলল যে সেদিন আমার অবর্তমানে ও বাড়িতে এসে তোমার সঙ্গে অনেকক্ষণ গল্প করছিল। তুমি খুব ভাল মেয়ে। কিন্তু তোমার হাসি, চাউনি ওকে অবশ করে ফেলেছিল। , ওর হুঁশ ছিল না ও কি করছে! একজন কমরেডের অবর্তমানে তার স্ত্রীর দুর্বলতার সুযোগ নেওয়া কত বড় অপরাধ।
    ওকে ক্ষমা করে দেওয়া হোক। কারণ নারায়ণও রক্তমাংসের মানুষ। আর তোমার মোহক আবেদন এমন অব্যর্থ যে যেকোন পুরুষ ঘায়েল হয়ে যেতে পারে। মানিকদার মত সিনিয়র পোড়খাওয়া কমরেডও--। আমাদের সমস্যাটা শ্রেণী-দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বিচার করতে হবে।

    --- মিথ্যে কথা! সব মিথ্যে। উস হারামী কে অউলাদ, উল্লু কা পট্ঠা ক্যা বোলা? কমরেডের স্ত্রীর দুর্বলতার সুযোগ নেওয়া? শালে, কমীনে! উস কী --!
    শোন, ভাল করে শুনে নাও। কমরেডের স্ত্রীর, মানে আমার কোন দুর্বলতা ছিল না। ওই ভয় দেখাচ্ছিল যে তোমাকে এক্সপেল করে দেওয়া হবে। তোমার সঙ্গে থাকলে আমার কোন ভবিষ্যত নেই। ওর সঙ্গে গেলে আমার দিন ফিরে যাবে।
    সমীরদা কেমন একরকম করে তাকিয়ে থাকে।
    -- আর বাকিটাও শুনে নাও। আমি তরকারি কাটা ছুরি নিয়ে ওকে তাড়া করেছিলাম। শেয়ালের মত পড়িমরি করে পালিয়েছিল। এসব কিছুই বলে নি?
  • ranjan roy | 24.97.183.231 | ১৬ জানুয়ারি ২০১৫ ১৩:১৫651058
  • সমীরদা, আমার দিকে অমন ভাবে তাকিয়ে আছ কেন? তোমার কি ধারণা আমি মিথ্যে কথা বলছি?
    --- লতা, তুমি কি বলছ তাতে কিস্যু আসে যায় না। আসল কথা আগেই বলেছি-- আমি তোমাকে ভালবাসি। পাগলের মত। তুমি মিথ্যে বললেও তাতে কোন ফারাক হবে না। তাই তোমার কথা সত্যি কি না তা নিয়ে আমি মাথা ঘামাচ্ছি না।
    অবাক বিস্ময়ে কেঁদে ফেলি।
    -- কী বলছ, সমীরদা! আমি কেন মিথ্যে কথা বলতে যাব?
    -- লতা, সেদিনের ঘটনার পর তুমি পার্টিতে কমপ্লেন কর নি; কেন?
    --- কী আশ্চর্য! আমি কেন করব? আমি তো পার্টির মেম্বার নই? ওরা আমার কথা শুনবে ,কি পোড়খাওয়া কমরেড নারায়ণের?
    -- বেশ, আমি তো পার্টির মেম্বার। আমি ফিরে এলে তোমার তো তক্ষুণি আমাকে বলার কথা? আমার কাছে লুকিয়ে ছিলে কেন? আমার ওপর ভরসা কমে গেছে?
    --- সত্যি কথা বলছি, সমীরদা। ও ভয় দেখিয়েছিল। তোমাকে নাকি আমার জন্যে এক্সপেল করার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। তাহলে আবার সেই নতুন আশ্রয়, নতুন জীবিকা খোঁজা। তুমি তো কিছু করবে না; খালি বই পড়বে, নোটস্‌ লিখবে। আমাকেই কাজ ধরতে বেরোতে হবে। আজকাল শরীরটাও ভাল যাচ্ছে না। সাহস চলে গেছে। আমি আর পেরে উঠছি না।

    সমীরদা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে , মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আমি ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ি। মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকি, কাঁদতেই থাকি।
    অনেকাক্ষণ পরে ও বলেঃ তোমাকে অবিশ্বাস করার কোন কারণ নেই, লতা। নারায়ণ বহুদিন আগে থেকেই আমাকে ওর কমপিটিটর ভাবত। বীরভূমের সময় থেকেই। আমাদের জামিন করিয়েছিল এও যেমন সত্যি। তেমনি আমাকে সরিয়ে পার্টিতে ক্ষমতায় ওপরে উঠতে চায় তাও সত্যি।
    তুমি আমাকে ছেড়ে ওর কাছে গেলে আমি মানসিক ভাবে ভেঙে পাড়তাম। লড়াই করা ছেড়ে দিতাম। আর তোমার প্রতি ওর লোভ রয়েছে বটে। কিন্তু কিছুদিন পরে ও তোমাকেও ছেড়ে দিত। কারণ নইলে পার্টিতে বদনাম হত, তাতে ক্ষমতা হারাতো।
  • ranjan roy | 24.97.183.231 | ১৬ জানুয়ারি ২০১৫ ১৩:৫৩651059
  • -- কী ডেঞ্জারাস লোক!
    -- তুমি এখনো ওকে চিনতে পার নি, লতা। তুমি ঘটনাটা চেপে গেছ, কাউকে কিছু বল নি। আজ আমি কথাটা তোলায় বললে। কিন্তু ও নিজে সেই দিনই পার্টি-নেতৃত্বকে জানিয়ে দেয়, অবশ্যই ওর নিজের ভার্সন।
    আজ আমি যদি বলি-- কে বিশ্বাস করবে? বলবে--মহারাষ্ট্রে না গিয়ে বউয়ের আঁচল ধরে থাকতে চাই, তাই এসব আজে বাজে বাহানা!
    --- ও কী করে বুঝল যে আমি কাউকে বলব ন?
    -- ও জানে , মেয়েরা সাধারণতঃ এই সব ঘটনা চেপে যায়। ছোটবেলা থেকেই ওদের চেপে যেতে শেখানো হয়, ভয়। বদনামের ভয়। নিজের , পরিবারের। তাই কাকার আদর, মামার আদর, জামাইবাবুর আদর চলতেই থাকে। কখনো কখনো গর্ভবতী হওয়া অব্দি গড়ায়। তখন মেরে ফেলা হয়।
    আমি শিউরে উঠি।
    --- কাকে?
    -- বেশির ভাগ সময় বাচ্চাটাকে। কোন কোন সময় বাচ্চাশুদ্ধু বাচ্চার মাকে
    --- এখন কী করবে ভাবছ?
    -- আমি আর কী করব? যা করার পার্টি করবে।
    --- পার্টি বলছে-তোমাকে ছেড়ে দিতে। বিপ্লবের পথে তুমি স্পীড-ব্রেকার। প্রথমে মাণিকদা, পরে ওমপ্রকাশ, তারপরে কমরেড নারায়ণ। আর আমি তো অকর্মণ্য হয়েই গেছি।
    --- তুমি কী ভাবছ?
    --- তোমাকে নিয়ে চলে যাব, কিন্তু একটু সময় চাই। জায়গা খুঁজছি।
    -- সে কি ! ডিসিশন নিয়ে ফেলেছ? পার্টি ছেড়ে দেবে? আমার জন্যে?
    -- হ্যাঁ, আগের ভুল করব না। নারায়ণের মত লোকেরা যেখানে মাথায় বসে থাকবে সেরকম পার্টিতে আমি কাজ করতে পারব না। আর তুমি ও আমি এখন আগের মত অসহায় নই, কিছু একটা করে দু'বেলা দু'মুঠো ভাতের জোগাড় ঠিক করে নেব।
    --- কোথায় যাবে ঠিক করলে?
    -- এখনো পাকাপাকি ভাবে কিছু ঠিক করি নি। তবে যদি মাথার ওপর থেকে ছাদ চলে যায়, তাহলে অল্পদিনের জন্যে আমার বাড়িতে গিয়েও কিছুদিন থাকতে হতে পারে।
    আমার মুখ শুকিয়ে যায়। শ্বশুর-শ্বাশুড়ির ঘর করা? যে শ্বশুর-শ্বাশুড়ি আমাদের বিয়েকে স্বীকার করেন নি? সমীরদা যে বাড়িতে বিয়ের পর নিয়ে তুলতে সাহস করে নি?যাঁদের চেহারাও দেখি নি। দেখেছি, একই শহরে বাবাদের কলীগ হিসেবে। শ্বাশুড়ির জন্যে আমার বাবা হোমিওপ্যাথি ওষুধ দিত। কিন্তু এখন তাঁদের চেহারা বদলে যাবে না?
    আমি যে ওঁদের সোনার চাঁদ ছেলের কানে ফুসমন্তর দিয়ে ওহুসলে নিয়ে গেছি।
  • ranjan roy | 24.97.183.231 | ১৬ জানুয়ারি ২০১৫ ১৪:১৪651060
  • আমার চেহারায় পরিবর্তন ওর চোখ এড়ায় না।

    -- আরে, এত ঘাবড়ে গেলে চলে? আমরা কিছুদিন বাড়ি গিয়ে থাকব, ট্যাকটিক্যালি।
    তার মধ্যে আমি জায়গা খুঁজে নেব। তারপর দুজনেই সেখানে চলে যাব। গিয়ে আবার নতুন করে সব শুরু করব। তুমি খালি ডঃ কুমারের কাছ থেকে একটা একসপিরিয়েন্স সার্টিফিকেট জোগাড় করে নিও।
    কি? কিছুদিন মুখ বুঁজে মানিয়ে নিতে পারবে না?দেখবে আমার মা খুব খারাপ লোক নয়।
    --- কেই বা খারাপ লোক! আমার বাবা-মা? পাড়ায় গিয়ে খোঁজ কর--সবাই সেনদার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কী ভাল ওষুধ দেয়!
    সবাই ভাল, শুধু আমিই খারাপ।
    -- এই দেখ, তুমি জবরদস্তি কথাটা অন্য দিকে নিয়ে যাচ্ছ! আমি কি তাই বলেছি? তবে?
    -- নাঃ; তুমি আমাকে ছেড়েই দাও। তাহলেই সব দিক রক্ষা হবে। তোমাকেও পার্টি ছাড়তে হবে না।
    সমীরদার চোখে দুষ্টু হাসি।
    --- কমরেড লতা! কমিউনিস্ট আদর্শে প্রত্যেকের নিজস্ব জীবনসাথী খুঁজে নেওয়ার অধিকার আছে। আবার ভালবাসা মরে গেলেও কারো সঙ্গে সারাজীবন জবরদস্তি প্রেমহীন জীবন কাটাতে হবে--এমনও নয়। তাই আঅপনি যদি আজ আমাকে ছেড়ে অন্য কোন কমরেড--!
    -- একদম ফালতু কথা বলবে না!
    রাগে সারা শরীর চিড়বিড় করে জ্বলে। দাঁতে-নখে ঝাঁপিয়ে পড়ি ।

    ঘুম ভাঙে সন্ধ্যে হলে। খেয়াল হয়, ভোর বেলা সমীরদা ট্রেন ধরবে, যাবে মহারাষ্ট্রের গড়চিরৌলিতে। ওর জামাকাপড় গুছিয়ে দিতে হবে।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৮651061
  • পড়ছি।
  • সিকি | 135.19.34.86 | ১৯ জানুয়ারি ২০১৫ ১০:৪৬651062
  • অপেক্ষাগুলো সার্থক হচ্ছে মনে হয়।
  • ranjan roy | 24.97.186.32 | ২০ জানুয়ারি ২০১৫ ০৮:৩১651064
  • ৯)
    আজকে একটা গাঁয়ে যেতে হয়ে্ছিল। প্রায় চার কিলোমিটার দূরে। ডঃ কুমার পাঠিয়েছিলেন। আমাদের পুরনো পেশেন্ট ফ্যামিলি। ওর বৌয়ের দু'মাস চলছে। ফলিক অ্যাসিডের ক্যাপসুল দিয়ে আসতে হবে আর প্রেশার চেক করে সকাল-বিকেল পায়চারি, জলের বালতি না তোলা আর এখন স্বামীর কোন কোন আবদার না মানা উচিত,-সেসব নিয়ে কিছু মেয়েলি পরামর্শ দিয়ে আসা --এই হল কাজ।
    কিন্তু ফেরার সময় সাইকেল পাংচার হয়ে গেল। আর দু'কিলোমিটারের মধ্য কোন মেরামতের দোকান নেই। ভাবলাম, সুক্ষ্ম পাংচার হলে চিন্তা নেই। কোন বাড়ি থেকে পাম্প করিয়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাব। বাড়ি পৌঁছে গেলে বাকিটা পরে দেখা যাবে।
    বৃথা চেষ্টা। টোটকাটা কোন কাজে লাগল না। মনে হয় বড়সড় পেরেক ঢুকে আছে। অগত্যা একটি চেনা বাড়িতে সাইকেল গচ্ছিত রেখে হাঁটতে শুরু করলাম। রোদ্দূর বেশ চড়া, বড় রাস্তা ধরে হাঁটছি। যদি কোন গাড়ি বা মোটরসাইকেলে লিফ্ট পেয়ে যাই।
    ঘামে জামাকাপড় ভিজে লেপ্টে গেছে। ভর দুপুরে গাড়ি ঘোড়া কিছুই বিশেষ চোখে পড়ছে না। তবে প্রায় মেরে এনেছি। ব্যস্‌, আর দেড় কিলোমিটার মত। কিন্তু তেষ্টায় ছাতি ফেটে যাচ্ছে। একটা চায়ের দোকানও খোলা নেই, নইলে দু'টাকায় এক গেলাস চা খেয়ে নিতাম।
    একঘেয়েমি কাটাতে একটা পুরনো খেলা শুরু করি।
    দেখি তো, গন্তব্য পথটি কত লম্বা, মানে কিতনে কদম দূর? গোণা শুরু। কীভাবে গুনব? কেন, এক পা বাম, এক পা ডান মিলে এক। এগিয়ে চলি---দুই, তিন, চার - - - বাইশ,তেইশ, - - - সাতাশি--- একানব্বই,- - - তিনশ'সতের, তিনশ' আঠার।
    আচ্ছা, আজকে বেগুনপোড়া করলে কেমন হয়? বেগুনদুটো আছে না শেষ হয়ে গেছে। নাঃ, বেগুন এখন ছ'টাকা কিলো। পরশু সমীরদা ফিরে আসবে। তখন ওকে বেগুনপোড়া দিয়ে রুটি দেব'খন। নিজের নোলা একটু সামলে রাখি।
    আরে? স্টেপ গোনার কী হল? ধ্যেৎ , খেই হারিয়ে ফেলেছি। আবার গুনতে শুরু করা যাক।
    এ--এক, দু--উ-উই।
    উঃ! গা ঘেঁষে একটা মোটরবাইক বেরিয়ে গেল। তাতে সওয়ার তিনটে ছেলে , বয়সে আমার থেকে এমন কিছু বেশি নয়। একটু আগে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। না, ঠিক দাঁড়ায় নি। খুব ধীরগতিতে ছোট ছোট পাক খাচ্ছে।
    -- ধূপ মে নিকলা না করোঁ রূপ কী রাণী, গোরা অঙ্গ কালা না পড় জায়েঁ।
    কী বেসুরো গান! তার সঙ্গে অঙ্গভঙ্গী।
    -- আরে কা দেখতস ও! আ জা মেরি গাড়ি মেঁ বইঠ জা! আ জা ছমিয়া!
    চারদিক খাঁ খাঁ করছে, একটা লোকও দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু এই ফক্কড় ফচকে তিনটে কে ভয় পাওয়ার কোন কারণ দেখছি না।, কষে তিনটে থাপ্পড়! ব্যস্‌।
    তাই বললাম-- চপ্পল খানা হ্যায় ক্যা? ছমিয়া হোগী তেরি মাঁ!
    -- আরে বাপ রে! ইয়ে তো ঝাঁসী কী রানী!
    এবার কোরাস শুরু হলঃ " খুব লড়ি মর্দানী ওহ তো ঝাঁসীওয়ালী রানী থী"।
    নাঃ, ব্ড্ড মাথায় চড়ে যাচ্ছে। এদিক ওদিক থেকে একটা আধলা ইঁট তুলে নিলাম।
    -- আ জা! খৌরাহা কুতিয়া কে অউলাদ! আ না!
    ( আয় রে ঘেয়ো কুত্তির বাচ্চা, এগিয়ে আয়!)
    কাজ হল। ওরা বাইক ঘুরিয়ে উল্টো দিকে ফিরে গেল।
    মেজাজটা খিঁচড়ে গেল।।
    আর বেশি বাকি নেই। পাঁচশ মিটারের মত, প্রথমে পড়বে সমীরদাদের ইউনিয়ন অফিস। সেখানে গিয়ে অন্ততঃ তিন গ্লাস জল খাব। তারপর ডঃ কুমারের চেম্বার। দেরি দেখে উনি নিশ্চয়ই চিন্তা করছেন।
    কিন্তু বাইক সওয়ার ছোঁড়াগুলো কখন যে ফিরে এসেছে খেয়াল করিনি। সরে যাওয়ার টাইম পেলাম না। গা ঘেঁষে ফুল স্পীডে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সবচেয়ে পেছনে বসা ছেলেটা বাঁ-পা বাড়িয়ে আমার গায়ে ছুঁইয়ে দিয়েছে। আর গতি-জাড্যের নিয়ম মেনে ধূলোর মধ্যে ছিটকে পড়েছে আমার শরীর। মাথাটা আছড়ে পরেছে শক্ত মাটিতে। চোখের সামনে একটা কালো পর্দা।
  • ranjan roy | 24.96.36.212 | ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ ১০:৪৯651065
  • সরকারি হাসপাতালের ফিমেল ওয়ার্ডে ১১ নম্বর বেড। মাথার কাছে একটা ছোট টুলে একটা বোতল, কিছু কাগজ আর কয়েক পাতা ওষুধ। চোখ খুলে একটু অবাক। এখানে কে আনল?
    সেই টিভির সিনেমার মত আমি কোথায়? আমার কী হয়েছে-- জিজ্ঞেস করি না। একটা কারণ --বিলাসপুরের এই রেলওয়ে হাসপাতালটি আমার পরিচিত। ডঃ কুমারের নার্স হিসেবে বেশ কয়েকবার পেশেন্ট নিয়ে এখানে এসেছি।
    আর দ্বিতীয় কারণটি হল আমার সব মনে পড়ে গেছে। হ্যাঁ, আমি ঝাঁ -ঝাঁ রোদ্দুরে বেশ খানিকটা পথ হাঁটছিলাম। জল তেষ্টা পেয়েছিল আর কয়েকটা বাঁদর ছেলে বাইকে করে যেতে যেতে আমাকে বিরক্ত করছিল। আচ্ছা, পাশ ঘেঁষে বেরিয়ে যেতে যেতে আমাকে ধাক্কা দেয়, আমি সম্ভবতঃ ছিটকে পড়ে যাই। মাথায় একটু ব্যথা, কিন্তু বেশ আসল ব্যথা তলপেটে কোমরের নীচে। একটু নড়েচড়ে বুঝলাম-- ক্যাথিটার লাগানো রয়েছে। কেন? আর পেটের দিকে কি ব্যথা, কি ব্যথা! কেন?
    সমীরদা কোথায়? ডঃ কুমার? কোন চেনা মুখ নেই কেন? নার্স? ডাক্তার? কানে আসে হলের আরেক মাথায় কেউ চেঁচিয়ে কাউকে কিছু নির্দেশ দিচ্ছে। এ নার্স না হয়ে যায় না! কিন্তু ডাকব কি করে? গলা শুকিয়ে কাঠ, স্বর ফুটছে না।
    পাশের বেডে একজন বুড়ো , ধুঁকছে। স্যালাইন চড়ানো হয়েছে। পাশে কয়েকটি ছেলে , দুজন ওই বেডেই বসে,দুজন দাঁড়িয়ে।গ্রামের ছেলেপুলে মনে হয়। কি হয়েছে বুড়োর? নিজের কথা ভুলে পাশের বেডের পেশেন্টকে দেখতে থাকি। ওর বুকটা হাপরের মত উঠছে পড়ছে। ছেলেগুলোর চেহারায় টেনশন।নিজেদের মধ্যে কিছু বলাবলি করে। বুঝতে পারি। সিস্টার ওদের বলে গেছে বোতলের দিকে নজর রাখতে। বোতলের জলে মেশানো তাগদ কী দাওয়াই ফুরিয়ে গেলেই যেন নার্সকে ডেকে আনা হয়।
    আস্তে আস্তে টিপ টিপ করে ড্রিপ চলছে। একনজরে বুঝতে পারি যে অন্ততঃ আধঘন্টা লাগবে ওই বোতল খালি হতে। তার মানে ততক্ষণ কোন সিস্টার আমার বেডের কাছে আসবে না! হে ভগবান!
    আমার কী হয়েছে? কিসকো পুঁছু? কৌন বতায়েগী?
    পাশের বেড থেকে একটা ঘড় ঘড় শব্দ ওঠে। একটা দমকা কাশি। আরে! এখন যে শ্বাস দুনি লয়ে চলছে! আমার দুবছর ধরে নার্সগিরি করা চোখ চিনতে ভুল করে না।
    আমি অস্ফুট স্বরে ছেলেগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেষ্টা করি। খাটের গায়ে হাত ঠুকে শব্দ করি। নড়াচড়া করতে চেষ্টা করি। খুব একটা লাভ হয় না। একটা ছেলের অলস অন্যমনষ্ক দৃষ্টি আমার মুখের ওপর দিয়ে ঘুরে যায়।
    আমি হতাশ। এবার গোঙানির মত শব্দ করি। ছেলেটা আবার তাকায়। নিরুপায় হয়ে চোখ মারি। ছেলেটা চমকে ওঠে। ওর মুখে একটা চাপা হাসির ভাব।
    ও ঝটিতি দেখে নেয় ওর সঙ্গীর কেউ দেখছে কি না। তারপর নিশ্চিত হয়ে আস্তে আস্তে আমার বেডের দিকে এগিয়ে আসে। মুখে প্রশ্রয়ের হাসি। আমি ওকে মাথা নীচু করতে বলি। তারপর বলি-- জলদি নার্স কো বুলাও; তুমহারা বুজুর্গ কা হালত ঠিক নহীঁ।
    নার্স আসে, একনজর দেখে। তারপর মাথা নেড়ে ডাক্তার ডাকতে চলে যায়। ছেলেগুলো বেডের চারপাশে ঘিরে দাঁড়িয়ে কাঁদো কাঁদো মুখে বলতে থাকে-- ও দাদা! ও দাদাজি, দেখ, হম লোগ সব আ গয়ে। আঁখে খোলো দাদা।
    আচ্ছা, ইনি ছেলেগুলোর ঠাকুর্দা।
    হটাৎ বুড়োর শ্বাস নড়াচড়া সব বন্ধ হয়ে যায়। চোখটা আধখোলা, মুখটা বড় সড় হাঁ। হয়ত মুখ দিয়ে হাওয়া টানবার অন্তিম চেষ্টা।
    ইতিমধ্যে ডাক্তার আসে। চোখের পাতা টেনে পেন্সিল টর্চের আলো ফেলে বলে-- গন। উনি চলে গেছেন। সিস্টারকে বলে তিনঘন্টা পরে পেশেন্টের কাগজপত্তর আমার কাছে নিয়ে আসবে।
    বুড়োর নাতিরা ওর বুকের ওপর লুটিয়ে ডাক ছেড়ে কাঁদে। আরো দুজন এসেছে। হয়ত ছেলে। ওরা বিমর্ষ মুখে চুপ করে এদিক ওদিক তাঅকায়। আশপাশের বেড থেকে রোগীরা এক মরবিড কৌতুহলে উঠে বসে এদিকে তাকিয়ে থাকে।
    মিনিট কুড়ি পরে নার্স এসে নাতিদের জানায়-- বেড খালি করে দিতে হবে। লাইনে আরও রোগি আছে। বডি নীচে নিয়ে যেতে হবে। হতভম্ব ছেলের দল আরও আধঘন্টা টাইম চাঅয়। কিন্তু দশ মিনিটের বেশি মঞ্জুর হয় না। বেড খালি হয়ে যায়।
    এবার নার্সের চোখ পড়ে আমার দিকে। চার্ট দেখে। আমার মাথায় হাত রাখে। আরেক জন নার্সকে ডেকে আনে। তারপর আমার জন্যেও একটা বোতলে কিছু ওষুধ ঔশ করে খাটের গায়ের হুকে লাগিয়ে হাতে আগে থেকে লাগানো নিডলটায় জুড়ে দেয়।
    আস্তে আস্তে আমি জানতে পারি যে কিছু ইউনিয়নের লোক এসে আমাকে ভর্তি করে গেছে। আমার অ্যাবর্শন হয়েছে। আমি নাকি দুমাসের প্রেগন্যান্ট ছিলাম।
    আমার মাথা ঘুরে ওঠে। কোন ভুল হয় নি তো? কীকরে এমন হতে পারে? আর অপারেশনের জন্যে অনুমতি পত্রে কে সাইন করেছে?
    -- কেন ? তোমার স্বামী, ওম্প্রকাশ। বিকেলে আসবে ।
    আমি ঘোরের মধ্যে চলে যাই।
  • সে | 188.83.87.102 | ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ ১২:২২651066
  • থ্রীলার!
  • ranjan roy | 24.96.36.212 | ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ ১৪:৪২651067
  • হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিয়েছে তিনদিন আগে। কিন্তু এখনও শরীর বেশ দুর্বল।সমীরদা মহারাষ্ট্র থেকে ফিরে এসেছে।
    হ্যাঁ, সেদিন বিকেলে হাসপাতালে কমরেড ওমপ্রকাশ ও আরও কয়েকজন কমরেড এসেছিল। কিনে দিয়েছিল মুসম্বি আর কিছু ওষুধ। কয়েকটা ওষুধ ডঃ কুমার নিজের ফ্রি স্যাম্পল থেকে দিয়েছিলেন। উনিও ওদের সঙ্গে এসে একটু বসে তাড়াতাড়ি চলে গিয়েছিলেন।
    উনি বললেন-- কি বলব বল! সেদিন বেলা তিনটে হবে।দেখি শ্রমিক ইউনিয়নের ক'জন তোমাকে একটা খাটিয়ায় শুইয়ে নিয়ে এল। অচেতন। ভয় পেয়ে গেছলাম। প্রাথমিক পরীক্ষার পর বুঝলাম ইমপ্যাক্টে মিসক্যারেজ হয়ে গেছে।
    ওরা নাকি তোমাকে দেখতে পায় ।রাস্তার ধারে অজ্ঞান অবস্থায় পড়েছিল। প্রথমে ভেবেছিল হিট এন্ড রান কেস। তারপর একজন তোমাকে চিনতে পারে। নাকের কাছে হাত দিয়ে বুঝল সিস্টার দিদি বেঁচে আছে।
    আমি দেখে বুঝলাম তোমাকে বাঁচিয়ে তোলা আমার এলেমে কুলোবে না। তাছাড়া আমার এই কাম-চালাউ হাসপাতালে দরকারি ইকুপমেন্ট ও অন্য পরিষেবা নেই। তাই ধরম-হাসপাতালে নিয়ে যেতে রিট্ন রেকমেন্ডেশন লিখে দিলাম। নইলে ওদের পুলিশে টানাটানি করত, হাসপাতালে ডাক্তাররা এড়িয়ে যেত। তোমার সময়মত চিকিৎসা হল না।
    এই কমরেড ওমপ্রকাশের বড় মন। সার্জারির কাগজে স্বামীর জায়গায় দস্তখত করে দিল।
    আমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওর দিকে তাকালাম। ও কাঁচুমাচু হয়ে বলল-- কি করব সিস্টার। আর কোন উপায় ছিল না। সরকারি ডাক্তার বললেন যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশন করতে হবে। স্বামীকে খবর দাও। তা কমরেডরা ইউনিয়ন অফিসে এসে বলল। এদিকে কমরেড সমীরের ফিরতে দেরি। কখন পৌঁছবে কোন ঠিক নেই।
    তাই আমিই সইটা মেরে দিলাম।
    জানি, কমরেড সমীর ভুল বুঝবেন না। আর আপনিও পুরনো ঝগড়া ভুলে যান। গুস্‌সা থুক দীজিয়ে, বহন!

    কমরেড সমীর ভুল বোঝে নি। কিন্তু আমি কি করে পুরনো সব কথা ভুলে যাব? ও যে শনিচরিন বাঈকে ডাইনি বলে মাথা ছেঁচে দিয়েছিল --সেই দৃশ্য কি কখনও ভোলা যায়? ও একটা খুনি! ওর দেওয়া জীবন? ভগবান!
    কেন আমার সঙ্গেই এমন হয়? কেন এমন সময়ে সমীরদা থাকে না! কেন আমার প্রাণ বাঁচাতে ওমপ্রকাশই এগিয়ে আসে?
    নাঃ, এই শহর, এই ইউনিয়নের আশ্রয় ছাড়তে হবে। এই সব কমরেড ওমপ্রকাশ, কমরেড নারায়ণ-- এদের ত্রিসীমানায় আসতে না হয়। এদের ছায়াও মাড়াতে না হয়।
    সমীরদাকে খুলে বলি।
    এই প্রথম সমীরদা আমার কথা চুপচাপ শোনে। একটাও পাল্টা তর্ক দেয় না। কথার মাঝখানে বিড়ি ধরায় না। চোখ সরিয়ে এদিক ওদিক তাকায় না।
    আমার বলা শেষ হলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ছাদের দিকে তাকায়, তারপর চোখে চোখ রেখে বলে --আমাকে ১৫ দিন সময় দাও, ব্যস্‌!
    উঠো মুসাফির, বাঁধো গাঁঠরিয়া।
    ডঃ কুমারকে সব বুঝিয়ে বলি। উনি এককথায় এক্সপিরিয়েন্স সার্টিফিকেট লিখে দিলেন।মাথায় হাত রেখে বিড়বিড় করে কি সব মন্তর পড়লেন। বললেন-- আরো নার্স পাবো। আজকাল গাঁয়ের মেয়েরাও নার্সের কাজ করতে চায়। কিন্তু তোমার মত রোগীর সেবা করতে কাউকে-- জানি না।
  • ranjan roy | 24.96.36.212 | ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ ১৬:৪১651068
  • চতুর্থ অধ্যায়
    =========
    (১)
    -- আপনি বিয়ে করেন নি মানিকদা?
    মানিকদা হেসে নিভে যাওয় বিড়িটা আবার কায়দা করে ধরাতে লাগলেন। উত্তর দিলেন না।
    ---- এড়িয়ে গেলে চলবে না, দাদা! আপনি তো কমিউনিস্ট , আরও কি কি সব বলেন --বলশেভিক! তা বলশেভিকরা নাকি সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় পায় না?
    -- পায় না ই তো!
    -- তাহলে বলে ফেলুন। আর আমি তো আপনার শ্রেণীশত্রু নই। কি বলেন! আপনার আমার সমীরদার যাই কথাকাটি ঝগড়াঝাঁটি হোক, সে তো এক পরিবারের মধ্যে। এক ছাতের নিচে থাকলে কখনও কখ্নও ভুল বোঝাবুঝি হবেই। আপনারা কি যেন বলেন?-- হ্যাঁ, মনে পড়েছে-- নন-অ্যান্টাগোনাস্টিক কন্ট্রাডিকসন, জনগণের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব না এমনি কি যেন?
    --- ঠিকই বলেছ। বেশ পড়াশুনো করছ দেখছি! আচ্ছা, বলো দেখি এই টার্মটি প্রথম কে ব্যবহার করেছিলেন?
    -- বলব, কিন্তু এক শর্তে। যদি ঠিক উত্তর দিতে পারি তো আপনাকে আপনার বিয়ের গল্প বলতে হবে। অবশ্যি নিক নেম দিয়ে বলবেন। সিকিউরিটি কম্প্রোমাইজ করতে বলছি না। কি, রাজি?
    -বেশ।
    -- মাও জে -দং! কি ঠিক বলেছি না? এবার আপনার পালা।
    মানিক্দা বিষণ্ণ হেসে অল্প মাথা নাড়ালেন।
    -- তাহলে বিয়ে হয়েছিল?
    -- হ্যাঁ।
    -- সম্বন্ধ করে?
    --না।
    -- তিনি এখন কোথায়?
  • সে | 188.83.87.102 | ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ ১৮:৩১651069
  • রঞ্জনদা দেখছি ফুল ফর্মে প্রত্যাবর্তন করেছেন।
  • ranjan roy | 24.99.191.214 | ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ ২২:৩৪651070
  • --- ওর বাড়িতে।
    -- মানে? ওই বাড়ি আপনার বাড়ি নয়?
    -- না।
    -- সরি! আমার বোধহয় জিজ্ঞেস করা উচিত হয় নি। কিছু মনে করবেন না।
    আমার গলার স্বর উদারার কোমল ধৈবতে নামে।

    মানিকদা যেন আমার কথা ঠিক শুনতে পান নি। দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে তাকিয়ে আছেন ঝুলন্ত হলদেটে বালবের দিকে। একদৃষ্টে।
    -- আমরা একই কলেজে পড়তাম। বামপন্থী ছাত্র ইউনিয়নে দুজনেই সক্রিয়। আমি আস্তে আস্তে এই ইউনিয়নের একটি বিক্ষুব্দ অংশের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লাম। সেসব ছিল এক ঝোড়ো দিন। তখন সরকারী বামেরা আমাদের বলত অতিবিপ্লবী।
    কলেজের দেয়ালে পাড়ায় পোস্টার পড়তঃ
    " সি আই এ তৈরি করে প্রতিবিপ্লবী,
    ভারতে তাদের রূপ অতিবিপ্লবী"।
    আমি একদিন দুষ্টুমি করে তার নীচে লিখে দিলামঃ
    " বিশ্ব জুড়ে এদের নেতা হচ্ছে লালচীন,
    বিপ্লব করতে হলে আগে এদের কবর দিন"।
    সাধারণ ছেলেমেয়েরা বেশ মজা পেল। কিন্তু ওদের পোস্টারের গায়ে গায়ে লিখে ওদের বক্তব্যকে বিকৃত করেছি বলে আমাকে বেধড়ক ঠ্যাঙানো হল।
    ও এসে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল, রোজ বাড়ি এসে দেখে যেত। আমার মা ওকে স্নেহের চোখে দেখতে লাগলেন। দুজনেই পাশ করলাম। দুজনেই চাকরি পেলাম। ও এল আই সিতে, আমি ব্যাংকে।
    স্বাভাবিক ভাবেই বিয়ে হল, আলাদা এক রুমের ফ্ল্যাট ভাড়া নিলাম গল্ফ গ্রীনে। বেশ সুখী গৃহকোণ, শোভে গ্রামাফোন কেস।
    কিন্তু আস্তে আস্তে বুঝতে পারছিলাম যে আমার মধ্যে একটা পরিবর্তন আসছে। আমি বাঁধা চাকরি বাঁধা জীবনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছিলাম। বৌকে বললাম-- চাকরি ছাড়ব। ফুলটাইম রাজনীতি করব।ও বলল-- ভেবে দেখ। টাকাপয়সার জন্যে বলছি না। আমি একাই সংসার টানতে রাজি। কিন্তু এই বিপ্লব-বিপ্লব রাজনীতিতে কেমন বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি বলি কি, আরও একটু দেখ। আমরা তোমার পার্টির কাগজপত্র লিটারেচার নেব; না হয় সিম্প্যাথাইজার হয়ে থাকব।
    আমাদের চেনা অনেকেই তো--।
    আমি ত্থামিয়ে দিই।
    -- অনেকে কী করেছে তাতে আমার কি? লালাবাবুর গল্প মনে আছে তো? বেলা যে যায়! আমি সেই ডাক শুনেছি। আর ঘরে থাকবো না।
  • ranjan roy | 24.99.191.214 | ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ ২২:৫৬651071
  • চাকরি ছাড়লাম বটে, কিন্তু কোলকাতা ছাড়তে পারলাম না। দলকে বললাম-- আরবান গেরিলা স্কোয়াড গড়ার কাজ দেওয়া হোক। এক্ষুণি গ্রামে যাওয়ার অসুবিধে আছে।
    অসুবিধে আর কিছুই নয়, আমাদের একটি সন্তান হয়েছে। ও চাইত ছেলে, আমি মেয়ে। ও খুশি হল। আমরা ইতিমধ্যে আলাদা হয়ে গেলাম। ভালভাবে, কোন ঝগড়াঝাঁটি অভিযোগ না করে। হ্যান্ডশেক করে। আমার আর ওর জীবনের স্বপ্ন যে আলাদা!
    কিন্তু বন্ধুত্ব রয়েই গেল। ও জানত ওর সব দরকারে আমি আছি। এদিকে ও খুব খুঁতখুঁতে। বিছানাটা টানটান হওয়া চাই, মশারিটা পাক্কা আয়তক্ষেত্র।
    কিন্তু ব্যাংকে যেতে হলে, গ্যাসের বুকিং করতে হলে বা ইনকাম ট্যাক্সের হিসেব-- সব আমার ঘাড়ে। যখন চাইত, ডেকে পাঠাত। অসংকোচে।
    কিন্তু তখন কোলকাতা শহর টগবগ করে ফুটছে। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ধুলোয় লুটোচ্ছে। উনি নাকি সিপাহী বিদ্রোহের সময় ইংরেজদের সমর্থন করেছিলেন। মেট্রোপলিটান স্কুলে বৃটিশ সৈন্যদের থাকতে দিয়েছিলেন।
    রবীন্দ্রনাথ নাকি শিলাইদহের অত্যাচারী জমিদার! যখন 'দুই বিঘা জমি' কবিতা লিখছেন তখন নাকি পাবনায় ওঁর জমিদারিতে কৃষক বিদ্রোহ দমন করা হচ্ছে। কাজেই লাইব্রেরিতে পুড়ছে ওঁর রচনাবলী। গান্ধী তো সশস্ত্র বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে অনেক কিছু করেছিলেন। উনি তো বড়লোক ধনীদের গরীবের ট্রাস্টি ভাবতেন। শ্রেণী সমঝোতার তত্ত্ব আওড়াতেন। চরকা চালিয়ে ম্যাঞ্চেষ্টারের কাপড়ের মিলগুলোর সুবিধে করে দিয়েছিলেন। তো তাঁরও তিলতর্পণ হয়ে গেল।
    এদিকে চারু মজুমদার ঘোষণা করেছেন যে সত্তরের দশক, মুক্তির দশক। আবার এক বছরের মধ্যেই নাকি বাংলার সমতল দিয়ে গণমুক্তি ফৌজ মার্চ করে যাবে।
    আমাদের আর পায় কে!
    ফলে এমন কিছু ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়লাম যে কোলকাতা ছেড়ে গ্রামে গা ঢাকা দিতে হল।
    একদশক পেরিয়ে ঝড় থেমে গেলে ওর সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। দেখলাম সময়ের সঙ্গে অনেক কিছু বদলে গেছে। শুধু ওর নয়, আমারও। আমাদের মধ্যে আর কোন কিছু কমন নেই। ব্যস্‌। গল্প শেষ।
  • ranjan roy | 24.99.191.214 | ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৪০651072
  • খানিকক্ষণ থম মেরে থাকি। তারপর জিভ চুলকোয়।
    -- দাদা! তারপর তো দশ বছর হয়ে গেল। এরপর আর কখনো ঘর করার কথা ভাবেন নি? অবশ্য আমাদের এই এলোমেলো জীবনে এসব ভাবা!
    মানিকদা কেমন একটা বিচিত্র আওয়াজ করলেন। তারপর গা ঝাড়া দিয়ে বললেন -- রাত হয়েছে, শোয়ার আগে এককাপ লাল চা হতে পারে? তাহলে একটা মজার গল্প শোনাতে পারি। নইলে শুয়ে পড়াই ভাল। কাল তোমাকে আবার ডিউটি যেতে হবে।
    আমি গল্পের নেশায় জল চড়িয়ে দিয়ে এসে গ্যাঁট হয়ে বসি।
    -- আপনি যে বললেন গল্প শেষ?
    -- শেষই তো! এখন যা শোনাবো তা প্রবন্ধ।
    -- মানে?
    -- দেখ, আমাদের এই সমাজ বদলানোর জন্যে পথে নামা, এই গোপন জীবনযাপন-- এসব তন্ত্রসাধনার থেকে কম নয়। এই সাধনপথের গুঢ় তত্ত্ব গুরু শিষ্যকে কানে কানে বলে দেন। তাও সময় বুঝে, শিষ্য কেমন আধার সেটা বুঝে। সব কিছু সবার জন্যে নয়। অধিকারী ভেদ আছে।
    -- কি যে সব কঠিন কঠিন কথা বলছেন, বুঝতে পারছি না। ইয়ে ক্যায়সা পহেলী হ্যায়?
    -- ধৈর্য্য ধর। তুমি যে পথে নেমেছ তাতে এইসব গোপন কথা তোমাকে জানতেই হত। আজ নয় কাল! সমীরই হয় তো বলত। কিন্তু এই ভৈরবীচক্রে তুমি হলে সমীরের সাধনসঙ্গিনী। তাই কান ফুঁকবার গুরু কোন তৃতীয়ব্যক্তি হলেই ভাল হয়। হয়ত নিয়তি আমাকে আজ এই দায়িত্ব দিয়েছে।
    আমার কেমন ভয় ভয় করতে থাকে। সেটা কাটাতে হালকা চালে বলি-- মানিকদা, আজ থাক না! গুরুমন্ত্র না হয় আরেকদিন তিথি দেখে স্নান করে শুদ্ধবস্ত্রে আপনাকে প্রণাম করে তারপর নেব।

    মানিকদার মুখ গম্ভীর। উনি কি আমার গোপন ভয়ের আভাস পেয়েছেন? কিন্তু বলার সময় গলায় হালকা ঠাট্টার সুর।
    --- না, আজকেই সেই শুভ মুহূর্ত।চায়ের জল ফুটে গেল বোধ্হয়। নিয়ে এস। তাই দিয়ে আমাদের আচমন হবে। আর রবীন্দ্রনাথ পড় নি?
    'যখনি চিত্ত জেগেছে তখনি প্রভাত'?
  • সে | 188.83.87.102 | ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৯651073
  • রঞ্জনদা পুরো নভেল নামাচ্ছেন।
  • ranjan roy | 24.96.56.94 | ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০৬:৩০651075
  • আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। দুটো গেলাসে চা ঢেলে চুপচাপ সামনে ধরে দিই, তারপর বসে পড়ি।
    --- তোমার অন্ধকারে ছোঁড়া ঢিল লক্ষ্যভেদ করেছে।
    -- মানে?
    --- হ্যাঁ, আমার আরেকবার বিয়ে হয়েছিল। আন্ডারগ্রাউন্ড লাইফে।
    --- হয়েছিল?
    -- হ্যাঁ, হয়েছিল। সম্বন্ধ করে।
    আমি হতবাক। কীই বলতে পারি?
    -- আন্ডারগ্রাউন্ড লাইফে সম্বন্ধ করে বিয়ে? কেমন অদ্ভূত শোনাচ্ছে না?
    মানিকদা হেসে উঠলেন। এত রাত্তিরে হাসিটা কেমন খাপছাড়া লাগল। মানিকদার কাছেও।
    -- সরি! অদ্ভূত তো বটেই। কিন্তু এই ধরণের তান্ত্রিকসাধনায় সেটাই তো স্বাভাবিক। প্রথম বিয়েটা আমরা নিজেরাই ঠিক করেছিলাম-- তা তো বলেছি। দ্বিতীয় বিয়েটা গোপন ডেরায় চুপিসাড়ে হল, সম্বন্ধ করে।
    --- এমন অনিশ্চিত জীবনে বিয়ে! তা সম্বন্ধটা কে আনল শুনি?
    --স্বাভাবিক জীবনে সম্বন্ধ কে আনে?
    -- কে আবার! দু'পক্ষের বাপ-মা, পরিবার।
    --- ওরা কী দেখে বিয়ে ঠিক করে?
    -- কী আবার! পরিবারের সম্মান, পাত্রপাত্রীর মধ্যে মিল হবে কি না, কেমন মানাবে-- এইসব।
    --- ঠিক তাই। আচ্ছা, ধর ছেলে বা মেয়ে যদি বলে এখন আমরা বিয়ের কথা ভাবছি না তখন বাপ-মা কী বলে ?
    আমি এই খেলাটায় মজা পেয়ে গেছি। বললাম-- বলে অনেক কিছু।
    --- যেমন?
    বাঃ! উনিও বেশ মজা পাচ্ছেন দেখছি।
    -- যেমন, তোমরা অনেকদূর এগিয়ে গেছ। এখন বিয়ে না করলে সমাজে মুখ দেখাতে পারবো না। পরিবারের বদনাম হবে। বা, এখন বিয়ে না দিলে পরে আমাদের অনেক চাপ আছে। এই রকম কিছু।
    -- রাইট! এই আন্ডারগ্রাউন্ড জীবনেও যারা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এল তারাও এইসব যুক্তি দিয়ে চাপ বাড়ালো; এখন বিয়ে না করলে পরে অসুবিধে আছে। যত বলি আমরা এখন বিয়ের কথা ভাবছি না, কেউ শোনে না। ওদের বদনাম হবে। অন্যদের সামনে ইমেজ খারাপ হবে।
    --- তারা কারা?
    -- আমাদের আন্ডারগ্রাউন্ড জীবনের বাবা-মা।বুঝতে পারছ না? আমাদের বিপ্লবী পার্টি! হ্যাঁ গো, ওই জীবনে পার্টিই আমাদের বাবা-মা, পার্টিই আমাদের পরিবার।
    --- কিন্তু এর মধ্যে পরিবারের মানসম্মান, লোকজনের সামনে মুখ্হাসানো এই গল্পগুলোকে কী ভাবে ফিট করবেন?
    মানিকদার মুখটা কেমন দেখাচ্ছে।
    -- লতা ,তুমি কি ভাবছ আমি এসব বানিয়ে বানিয়ে বলছি? শোন। মেয়ে কমরেডটির বয়েস আমার থেকে অন্ততঃ দশ বছর কম। অনেক বড় ঘরের মেয়ে। শুধু সাহসী বললে কম বলা হবে, বরং দু;সাহসী। আমার অ্যাকশন স্কোয়াডে দু'জন খসে গেল। এক্জন বোমা ফেটে, আর একজন গুন্ডার ছুরিতে।
    এলাকা বদলাতে হল। স্কোয়াড নতুন করে গড়লাম। হায়ার কমিটি থেকে ওই মেয়েটিকে আমার স্কোয়াডে পাঠানো হল। ওরও এলাকা বদলানোর দরকার ছিল। প্রথম থেকেই আমাদের ফ্রিকোয়েন্সি ম্যাচ করে গেল। বুদ্ধিমান মেয়ে । চমৎকার ব্যক্তিত্ব। নির্বিচারে আদেশ মানার বান্দা ছিল না। খুব তর্ক করত। অন্যেরা বিরক্ত হত। আমি যে অনেক সিনিয়র! অনেক অভিজ্ঞতা। কিন্তু আমার এটাই ভাল লাগত। আমি যে কমরেড খুঁজি, সাবর্ডিনেট না।
    সেইসব উথালপাথাল দিনে আমাদের দুজনকে পার্টির নির্দেশে পর পর তিনটে গোপন ডেরায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে থাকতে হল। সেই হল কাল।
    কিছুদিন পরে পার্টির উপরের মহল থেকে নির্দেশ এল -- বিয়ে করতে হবে। আমরা দুজনেই অবাক। আমাদের প্রটেস্ট শোনা হল না। নইলে পার্টির বদনাম হবে। স্বেচ্ছাচারিতা বাড়বে। নতুন ছেলেমেয়েরা বিপ্লবের পথ ছেড়ে বিপথগামী হবে।
    --- শেষে আপনারা মেনে নিলেন?
    -- উপায় ছিল না। ইউনিট মিটিং ডেকে নেতৃস্থানীয় কমরেডের উপস্থিতিতে সবাই বলল-- এ হল পার্টির ম্যান্ডেট। তখন এই ম্যান্ডেট কথাটা খুব চলত। বলা হল-- বিপ্লবের সময় ব্যক্তিগত আবেগের কোন স্থান নেই। বিপ্লবের স্বার্থে বিয়ে করতে হবে।
    প্যারাডক্স দেখ, আমরা বলতাম --কমিউনিস্টরা নারী-পুরুষ সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরিবারের অনুশাসন ঠিকুজি-কুষ্ঠি-লগ্ন এসব মানে না। স্বাধীন ব্যক্তিগত ডিসিশনকে সম্মান করে। অথচ আন্ডারগ্রাউন্ড লাইফে এসবই ফিরে এল, নতুন মোড়কে। বাবা-মা , পরিবারের জায়গায় পার্টি। আর কি কড়া! প্রায় খাপ পঞ্চায়েতের মত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন