এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বেঁচে আছিঃ প্রেমে-অপ্রেমে

    ranjan roy
    অন্যান্য | ০১ অক্টোবর ২০১৪ | ২১৮৪৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ranjan roy | 132.176.193.89 | ২৪ নভেম্বর ২০১৪ ০৯:৪৮650976
  • তবে এর জন্যে আমি মনে মনে হাতজোড় করেছি সমীরদার দলের লোকজনকে। ওরাই ডাক্তার কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছে। ওরাই আমাদের থাকার জন্যে মহমদ গাঁয়ে একটাএককামরার টালির বাড়ি ঠিক করে দিয়েছে, মাসে তিরিশ টাকা ভাড়ায়। হ্যাঁ, এই ঘরে একটা বালব জ্বলে, কোন বিল দিতে হয় না।
    আসলে আশির দশকের মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন সিং তখন গরীবগুর্বো প্রান্তিক মানুষদের জন্যে একটা স্কীম শুরু করেছিলেন-- এক বাত্তি কনেকশন! অর্থাৎ গরীব মানুষেরা ওদের ঘরে তার টেনে একটা বাল্ব জ্বালাতে পারবে, বিনে পয়সায়। ওদের খরচা যোগাবে সরকার, মানে মধ্যপ্রদেশ বিদ্যুত মন্ডল ।
    কিন্তু ওই যে বলে-- খেতে পেলে শুতে চায়! লোকে একটা তার টেনে তার থেকে আরও তার টানে, হিটার জ্বেলে রান্না করে, টেপ বাজায়,রেডিও বাজায়। কিছু বললে বলে-- সরকার কা মাল, দরিয়া মে ডাল।
    সমীরদা এসবের ব্যাপারে একদম গোঁড়া। ও ঘরের মাঝখানে ছাত থেকে একটা লম্বা তার ঝুলিয়ে একটাই বাল্ব রেখেছে। হিটার না, রান্না হয় কাঠকয়লার গুঁড়ো দিয়ে। তার জন্যে একরকম লোহার পাত দিয়ে তৈরি উনুন পাওয়া যায়, বলা হয় রেলউনুন। আসলে স্টেশনের কাছে পাওয়া যায়, খুব শস্তায়। কিন্তু এর ঝামেলা খুব। বাসনকোসন একেবারে ভুসোকালি মাখা হয়ে যায়। ফলে সাফ করতে প্রাণ বেরিয়ে যায়।
    তবে পাড়ার অন্য বৌদের থেকে একটা কায়দা শিখে নিয়েছি। এলুমিনিয়ামের ভাতের হাঁড়ি আর লোহার কড়াইয়ের নীচে কাদা লেপে দিয়ে তবে উনুনে চড়াই, তাতে কাঠকয়লার কালি সব ওই মাটিতে লেগে যায়, বাসনগুলো বাঁচে। আমার মেহনতও একটু কম হয়।
    কিন্তু পাড়াটা ভাল নয়, ক্রিমিনালদের আড্ডা। এই খানে গতবছর সমীরদাদের ট্রেড ইউনিয়নের বড় অর্গানাইজার কমরেড পরসরাম ওর ঘরের সামনে খুন হয়ে গেল। কারখানায় কারখানায় ঘুরে ঘুরে মজদুরদের নিয়ে মিটিং করে বাড়ি ফিরছিল।
    তখন শীতের সন্ধ্যে, বস্তির ঘরে ঘরে উনুনে আঁচ পড়েছে। তার নীল ধোঁয়া আর কুয়াশা মিলে এক অদ্ভুত ভূতুড়ে আবহাওয়া। বড় রাস্তার বাতিগুলো সবে জ্বলে উঠেছে।
    পরসরাম বড় রাস্তা ছেড়ে ঘাসের মধ্যে দিয়ে পায়ে চলা পথ ধরল। আর চল্লিশ কদম। ওই তো ওর ঘর। এখন বাড়ি গিয়ে হাত-পা ধুয়ে বৌয়ের হাতের আদা দিয়ে তৈরি চা খেতে হবে। ব্যস্‌, তা হলেই গায়ের ব্যথা গায়েব।
    এইসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে পরসরাম খেয়াল করেনি যে এই পায়ে চলা পথে দু'পা এগোতেই ওপাশের চায়ের দোকান থেকে জনাছয়েক লোক ওর পেছন পেছন আসছে।
    একবার পেছন ফিরে তাকাতেই ওর বুকের মধ্যে দমাস দমাস করে হাতুড়ির শব্দ। ছ'টা লোক। আলোয়ান দিয়ে মুখ ঢাকা। দ্রুত পায়ে ওর পেছন পেছন আসছে। দূরত্ব অনেকটা কমিয়ে ফেলেছে।
    ইস্‌, আগে কেন খেয়াল করেনি? কেন এত অসতর্ক হল? কারখানা এরিয়া থেকে বাড়ির কাছে বড়রাস্তা অব্দি দু'কিলোমিটার পথ সতর্ক চোখে পেরিয়েছে। সঙ্গে পাঁচজন লড়াকু কমরেড। কিন্তু বাড়ির কাছে বড়রাস্তা অব্দি এসে ওদের ছেড়ে দিল।
    -- আরে, ইয়ে তো অপনা ঘর অপনা মুহল্লা হ্যায়। কুছ নহীঁ হোগা। ইতনা ডর ডরকে জীনা ভী কোঈ জীনা হ্যায়?
    এখন আর ভাবার সময় নেই। পরসরাম দৌড়তে শুরু করল। ওরাও সঙ্গে সঙ্গে লম্বা লম্বা পায়ে দৌড়তে লাগল। এখন আর কোন ঢাকাঢুকি নেই। ওদের হাতে লম্বা তলোয়ার, রড, ভালা বা সড়কি গোছের। কিন্তু সবার মুখ মাফলার দিয়ে বাঁধা, মানে এরা দরসরামের চেনা লোকজন।
    ব্যস্‌, আর দশ পনের কদম। দরজা খুলে ঘরে ঢুকতে পারলেই ও বেঁচে যাবে। দরজা বন্ধ করে শেকল তুলে দিয়ে খাটের তলা থেকে বের করে নেবে একটা রামদা' আর লোহার রড। তারপর এই ক'টাকে ঠেকাতে ও একাই এক্শ'।
    ও ছত্তিশগড়ী শান্তশিষ্ট ভালোমানুষ নয়। উত্তরপ্রদেশের মামখোর গাঁয়ের। ওখানে ঘরে ঘরে হাতিয়ার মজুত থাকে । ওর হাতে রামদা আর বৌয়ের হাতে লোহার রড। কোন্‌ শালা দরজা ভেঙে ঢুকবে! প্রথম যে ঢুকবে তার গর্দান এক কোপে নেমে যাবে। এটা যারা এসেছে তারাও নিশ্চয় জানে। চেঁচামেচিতে পাড়ার লোকজনও বেরিয়ে আসবে।ফলে ওরা ফিরে যাবে।
    আর পাঁচ কদম। দরসরামের ভয় কেটে গেছে। ও এখান থেকেই চেঁচাতে লাগল।
    --- এ রামপ্যারী! রামপ্যারী! জলদি দরোয়াজা খোল্‌ । রামদা অউর কট্টা নিকাল। উসমে পাঁচ গোলী হ্যায়। চলা দে দুশমনোঁ কে সীনে মেঁ! ভুন দেঙ্গে শালোঁ কো! ইন্‌ মাদার--!
    কিন্তু দরজায় যে শেকলতোলা ! তার মানে ঘরে কেউ নেই? বৌ গেছে পুকুরে?
    আচমকা এই পরিস্থিতি পরসরামকে অব্শ করে দিল। নিরুপায় পরসরাম পালানোর কোন জায়গা না পেয়ে নিজের ঘরের বন্ধ দরজায় আছড়ে পড়ল।
    -- দরোয়াজা খোল্‌ রামপ্যারী! ইন শালোঁ নে হমেঁ মার ডালেঙ্গে !
    তখনই পেছন থেকে মাথায় প্রথম ঘা প্ড়ল।
    নিজের ঘরের দরজায় পরসরাম শহীদ হয়ে গেল।
    ওই চৌমাথায় গজিয়ে উঠল একটা ছোট শহীদ স্তম্ভ আর একটা লাঠির মাথায় কাঠের তক্তিতে লেখা হল " শহীদ পরসরাম চৌক"।
  • সে | 203.108.233.65 | ২৪ নভেম্বর ২০১৪ ১৩:০৩650977
  • বাবাগো!
  • ranjan roy | 132.176.178.216 | ২৪ নভেম্বর ২০১৪ ১৫:৩৩650978
  • সেখানে প্রতিবছর সমীরদা জনাকয়েক সাথী নিয়ে স্মরণ সভা করে। মাইক হাতে বলে যে শ্রমিকের স্বার্থরক্ষায় অতন্দ্র প্রহরী কমরেড পরসরাম শহীদের মৃত্যু বরণ করেছেন। ওঁর অক্লান্ত পরিশ্রম করে তথ্য দিয়ে মালিকদের বাড়তি মুনাফা, ব্যালান্স শীটে প্রফিট কম করে দেখানো, শ্রমিকদের প্রাপ্য বোনাস ও স্বাস্থ্যবীমার পয়সা মেরে দেওয়া ইত্যাদি কালাপাহাড়ি আচরণকে নগ্ন করে দেওয়া মালিকপক্ষ ভাল ভাবে নিতে পারেনি। ট্রাইব্যুনালেও মালিকদের পরাজয়ের প্রধান স্থপতি পরসরাম।
    এঁর মরণ হিমালয়ের থেকেও ভারী। বর্তমান ব্যবস্থায় পরসরামের বিধবা ন্যায় বিচার পেলেন না। খুনীদের একজনও ধরা পড়ে নি। কেউ নাকি চিনতে পারেনি। তবে জনগণ একদিন এর বিচার করবে।
    শুনতে ভাল লাগে। কিন্তু জনগন কবে বিচার করবে কে জানে! আপাততঃ এইটুকু জানি যে সমীরদারা চাঁদা তুলে ওর স্ত্রীকে দশহাজার টাকা দিয়েছিল।
    তবে ওর স্মরণসভায় ভীড় কমছে, দেখতে পাচ্ছি।
    তো সেই মহমদ গাঁয়ে আমরা থাকি। একটু ভয় ভয় করে বৈকি!
    সেই বীরভূমের পুলিশ হাজত আর জেল ভুলিনি।
    সমীরদা যদিও বলেছিল যে আমরা পনেরো দিনের মধ্যে জামিন পেয়ে যাব। কিন্তু আসলে লেগে গিয়েছিল পাক্কা দুটি মাস।
    ওদের পার্টিই সমর্থদের মধ্যে থেকে জামিনদার যোগাড় করেছিল। আর জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর আমরা ওর পার্টির নির্দেশেই বীরভূম ছেড়ে ঝারখন্ড পেরিয়ে ছত্তিশগড়ের বিলাসপুর শহরের দশ কিলোমিটার দূরে ঘাঁটি গেড়েছি।
    আর ভগবান মুখ তুলে চেয়েছেন তাই আমি রেজিস্টার্ড মেডিক্যাল প্র্যাক্টিশনার( আর এম পি) ডঃ কুমারের নার্স! লোকটি ভদ্রলোক।
    কিন্তু ভগবান বোধহয় এক কানে শোনেন, অন্যটা হয়ত খারাপ। তাই দ্বিতীয় ইচ্ছেটা ঘেঁটে দিলেন। সমীরদা চোখের সামনে রইল না। দল ওকে মহারাষ্ট্রের গোন্ডিয়া না গড়চিরৌলি কোথায় পাঠিয়েছে। আমি একা।
  • সে | 203.108.233.65 | ২৪ নভেম্বর ২০১৪ ২২:২৮650979
  • তারপর?
  • um | 122.79.39.111 | ২৬ নভেম্বর ২০১৪ ২২:৩৪650980
  • এটাও কি বাকিগুলোর মত হয়ে গেল ?
  • সে | 188.83.87.102 | ২৭ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৩২650981
  • রঞ্জনদা আ আ আ....
  • de | 24.139.119.171 | ২৭ নভেম্বর ২০১৪ ১৩:৫৫650982
  • কোথায় গেলেন?
  • সিকি | ২৭ নভেম্বর ২০১৪ ১৪:২৩650983
  • এই পরসরমই কি শঙ্কর গুহনিয়োগী?
  • Ranjan Roy | ২৮ নভেম্বর ২০১৪ ০০:২০650984
  • ১) দিল্লি থেকে কোলকাতায় ৫ মাস পরে, বাড়িঘর সাফসাফাই এবং ল্যাদ! তারপর অফিসের হটাৎ কিছু কাজ।
    কাল থেকে শুরু!!!

    ২) সিকি,
    না, নামটা অন্য। বিলাসপুরে।
    শংকর গুহ নিয়োগী অনেক বড় নেতা। উনি ভিলাইয়ে ঘুমন্ত অব্স্থায় জানলা দিয়ে আসা আততায়ীর গুলির শিকার হয়েছিলেন।
  • asmitaa | 162.79.255.200 | ০১ ডিসেম্বর ২০১৪ ২২:৫৭650986
  • কাল তো চলে গেল বেশ কটা - গল্প কই?
  • Ranjan Roy | ০২ ডিসেম্বর ২০১৪ ১১:০৯650987
  • বিচ্ছিরি ফোঁড়া হয়ে বসতেই পারছিলাম না। শুয়ে শুয়েই পেপার পড়ছিলাম। No Sudoku! ।
    ৩৬ গড়ের টিকিট ও ক্যানসেল করেছি।
    আমি আজকে একটু চেষ্টা করব।
  • সে | 188.83.87.102 | ০২ ডিসেম্বর ২০১৪ ১২:১৪650988
  • সাগ্রহে অপেক্ষা করছি।
  • সে | 188.83.87.102 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৪:৩৩650989
  • হারিয়ে যাবে, তুলে রাখলাম।
  • Ranjan Roy | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ২৩:০৯650990
  • ২)
    সারাদিন কাজের মধ্যে ডুবে থাকি। সমীরদা তো দলের নির্দেশে মহারাষ্ট্রের গড়চিরৌলি না অমনই নামের কোথায় চলে গেছে।আমি একা আছি সেই একবাতি- জ্বলা ঘরে।
    হ্যাঁ, দলের লোকজন মাঝে মাঝে কিছু বাজার করে দিয়ে যায়। নিয়মমাফিক জিগ্যেস করে যায় --কিছু লাগবে কি না! ধীরে ধীরে এই টাকা দিয়ে যাওয়া আর খোঁজখবর নেওয়াটা খানিকটা অনিয়মিত হয়ে যায়।
    তাতে আমার অবশ্য কিছু এসে যায় না। কারণ ডাঃ কুমারের নার্সগিরি করে মাসে যে ২৫০/- জোটে তাতে ঘরভাড়া ৩৫ টাকা আর পার্টি লেভি ২৫ টাকা দিয়ে হাতে থাকে যে ১৮০/- তা আমার জন্যে যথেষ্ট। তবে তোরঙ্গের ভেতরে কাপড়চোপড়ের নীচে দশ-বিশটাকা করে জমাতে শুরু করি।
    চেয়েছিলাম ব্যাংকে রেকারিং গোছের কিছু করব, যেমন মাকে দেখতাম আমাদের খনিশহরের ব্যাংকে ও পোস্ট অফিসে করতে। কিন্তু সমীরদা ভয় দেখিয়ে দিয়েছে। বলেছে আমাদের মত বিপ্লবীদের জীবনে কোন স্থায়ী আস্তানার স্বপ্ন দেখতে নেই। তাই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের স্বপ্ন না দেখাই ভাল।
    সেদিন খুব কেঁদেছিলাম। বুঝে গেছ্লাম আমার আর এ'জীবনে পাঁচটা চেনা মেয়ের মত ঘরকন্না করা হবে না।
    তবে আর একটা উৎপাত শুরু হয়েছে। মাঝে মাঝেই সেই কমরেড নারায়ণ কিছু কমরেডকে জুটিয়ে আনে, বলে--বৌদি এরা অমুক জায়গা থেকে এসেছে। এবেলা আপনার এখেনে খাবে।
    আমি খাওয়ানোর ব্যাপারে না করতে পারি না। তারপর ওর দলের লোক। আমাদের জামিন করিয়েছিল। ডাক্তারের কাছে নার্সের চাকরি এদের জন্যেই পেয়েছি। আমার স্বপ্নপূরণ হয়েছে। আমি সারাজীবন ওদের গোলামি করতে রাজি।
    কিন্তু কখনো কখনো ওদের চান করার ব্যব্স্থাও করতে হয়। অনেকে ঘরের পেছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাথরুম করে। কেউ কেউ ঘরের মধ্যে থুতু ফেলে। জলের গেলাসে মুখ লাগিয়ে খায়। ভাত খেয়ে খাওয়ার থালাতেই এঁটো গেলাসের জল দিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নেয়। কেউ কেউ কুলকুচো করে।
    আমি বোঝাই, স্বাস্থ্যের দোহাই দিই। ওরা লজ্জা লজ্জা মুখ করে হাসে। কিন্তু সেই যে বলে না-- স্বভাব যায় না ম'লে, ইজ্জত যায় না ধূলে!
    আর এরা সব গাঁ-গঞ্জের খেটে খাওয়া লোকজন। এদের সঙ্গে আমাদের খাওয়ার হিসেব মেলেনা। এদের একেকজন অনায়াসে চোদ্দ-পনেরটা রুটি সাবড়ে দিয়েও একটু আশায় আশায় থাকে। আমার দিকে তাকায়।
    আর সেই বোবা চোখের চাউনিতে ঘায়েল হয়ে আমি আবার রুটি বেলতে ও সেঁকতে থাকি। আমার ঘাড় ও পিঠ ব্যথায় টনটনিয়ে ওঠে।
    কখনও কখনও আটা ফুরিয়ে গেলে তবে নিষ্কৃতি পাই।
  • সে | 188.83.87.102 | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০৪650991
  • পড়ছি
  • kiki | 125.124.41.34 | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৩:৫৯650992
  • পড়ছি রঞ্জনদা।
  • Ranjan Roy | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ২৩:৪৬650993
  • ফিরে এসেছে সমীরদা। এবার কিছু একটা হয়েছে। কারণ ঘর থেকে বিশেষ বেরোচ্ছে না। অনেকটা সময় বিছানায় শুয়ে বসে কাটায়। একবারও শ্রমিক মহল্লায় গিয়ে বৈঠক করছে না। কেমন যেন শ্রান্ত ক্লান্ত ভাব।বইপত্তর শুয়ে শুয়েই পড়ে।লোটা নিয়ে ভোর বেলায় মাঠে যাওয়া ছাড়া বিশেষ নড়াচড়া নেই।
    এই সমীরদাকে কি আমি চিনি? আমার ভয় ভয় করে।
    আস্তে আস্তে বুঝতে পারি। কোমরে ও পিঠে কালসিটে। ভালরকম চোট খেয়েছে। প্রথমে বলে মোটর সাইকেল থেকে রাত্তিরে পড়ে গিয়েছিল। বলে ডাক্তার দেখিয়েছে, সেই মহারাষ্ট্রের গড়চিরৌলিতে। প্রেকক্রিপ্শন কোথায়? হারিয়ে গেছে।
    আমি ডাক্তার কুমারকে অনুরোধ করে ঘরে আনি, সমীরদাকে দেখাই। উনি দেখে টেখে গম্ভীর মুখে মাথা নাড়েন, এক্স-রে করাতে বলেন। ও রাজি হয় না, বলে এক্স-রে হয়েছে--কিছু ধরা পড়ে নি।
    ডাক্তার কিছু ওষুধ ও মলম লিখে দিয়ে যান। সেগুলো ডক্টর'স স্যাম্পল থেকে জোগাড় হয়ে যায়। আমি দিনে তিনবার মালিশ করে দিই।
    তারপর একদিন চেপে ধরি-- সত্যি কথা বল। কী হয়েছে? কোথায় মার খেয়েছ? কারা?
    আস্তে আস্তে গোটা ব্যাপারটা বুঝে নিই।
    সমীরদারা গিয়েছিল পার্টির নির্দেশে টাকা জোগাড় করতে, ডাকাতি করে। হ্যাঁ, আমি এটাকে ডাকাতিই বলব। ওদের দল থেকে অবশ্য এর একটা গালভরা নাম দেওয়া হয়েছে--- জনগণের লুন্ঠিত টাকা জনগণকে ফিরিয়ে দেওয়া।
    এই প্রোগ্রামের বাস্তব প্রয়োগ করতে ওরা গিয়েছিল দুটো আলাদা জায়গায়।
    একটা মদের দোকান আর একটা ছোটখাট ব্যাংক।
    মদের দোকানের লফড়া সহজেই মিটে গেছল।
    তখন সন্ধ্যের আলো জ্বলবে জ্বলবে করছে, হাইওয়ের পাশে একটা মাঠের ধারে সরকারি লাইসেন্স প্রাপ্ত দিশি মদের আড্ডায় মাহোল রঙীন। কাঠের গোটা দশেক টেবিলে বসে শের ছাপ/হিরণ ছাপ বোতল শেষ করছে প্রায় জনা পঁচিশেক খদ্দের। অধিকাংশই মালবাহী ট্রাকের ড্রাইভার ও খালাসী। কিছু ছোকরা ওদের পরিবেশন করছে। এর সাথে এনে দিচ্ছে বাদাম ভাজা, ছোলা ভাজা ও কয়লার উনুনে ঝলসানো ছোট ছোট মুরগীর মাংসের টুকরো। এছাড়া কেউ কেউ বড় কাঁচের গেলাসে গরম চায়ে চুমুক দিচ্ছে। মালিকের ক্যাশবাক্সে কাঁচা টাকার ঝনৎ ঝনৎ আর পাশে একটা ট্রানজিস্টরে -- হুস্ন কা লাখো রঙ, কৌন সা দেখোগে?
  • সে | 188.83.87.102 | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০৭650994
  • হ্যাঁ তারপর?
  • Ranjan Roy | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৩০650995
  • এমন সময় একটা মোটর সাইকেল থেকে নামল ওরা তিনমূর্তি।
    তিনজনেরই পরণে জিন্স, গায়ে হাফহাতা সোয়েটার। কেউ ওদের দিকে খেয়াল করে তাকানোর আগেই ওরা মুখে বেঁধে নিয়েছে কালো রুমাল।
    ---- কোঈ নহীঁ হিলেগা! সব অপনে অপনে জগহ পে রহো। হম রুপিয়া লেকর চলে জায়েঙ্গে, ব্যস্‌!
    দরজা আটকে দাঁড়িয়েছে একজন -- তার হাতে একটি মাউজার গোছের যন্ত্র। ভেতরে দুজনের একজন ম্যানেজারের গদির কাছে পৌঁছে গিয়ে ক্যাশবাক্সে হাত দেয়, কিন্তু তাতে তালা!

    ঘটনার আকস্মিকতায় চমকে গিয়েছে সবাই।
    কেউ কেউ ফিসফিস করছে--ডাকু! ডাকু!
    --- খামোশ! আওয়াজ করোগে তো ভুন দেঙ্গে। এ শেঠ ! তিজৌড়ি কা চাবি নিকাল!
    মোটা শেঠজি বা ম্যানেজারকে যেন ঘুমের মধ্যে বোবায় ধরেছে। ও কোন রকমে হাত নেড়ে অসর্মথতা জাহির করে।
    এবার কী করা? সময় চলে যাচ্ছে যে!
    তিনজনেরই বুক ঢিপ ঢিপ করছে। দুজনের এটাই প্রথম কাজ। দরজার কাছে পাহারায় যে ছেলেটা, তার এটা দ্বিতীয় অভিজ্ঞ্তা।
    সমীরদাই এগিয়ে যায়। গিয়ে শেঠের গালে একটা ঠাঁটিয়ে চড় মারে। হাঁউমাউ করে চেঁচিয়ে উঠে লোকটা মাটিতে পড়ে যায়। দ্বিতীয় জন ওর পৈতেয় বাঁধা চাবিটা দেখতে পেয়ে হাতের ছুরির এক টানে ওটা বের করে নেয় আর চাবি লাগিয়ে ক্যাশবাক্স খুলে ফেলে।
    এই সব চেঁচামেচিতে পাঁচনম্বর টেবিলে মদে চুর সর্দারজির নেশা হরিণ হয়ে যায়। হটাৎ সে -- বাহে গুরু দী খালসা! বাহে গুরু দী ফতে! বলে চেঁচিয়ে উঠে কোমর থেকে কিরপান খুলে সেটা ঘোরাতে ঘোরাতে তেড়ে আসে।
    এ কী আপদ! এরকম তো হওয়ার কথা নয়!
    দ্বিতীয়জন ততক্ষণে ক্যাশবাক্সের কয়েক হাজার টাকা একটা ছোটমত থলিতে ভরে মোটরাবাইকের ডিকিতে ভরে ফেলছে। মোটরবাইক স্টার্ট হচ্ছে।
    ডাকাতেরা পালাচ্ছে বুঝতে পেরে সর্দারজী সমীরদার দিকে কিরপান উঁচিয়ে পকড়ো-পকড়ো করে তাড়া করে।
    সমীরদা পিছু হঠে বাইকে ওঠার চেষ্টা করছে এমন সময় পিঠে একটা প্রচন্ড বাড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ে যায়। একটা বেয়ারা একটা খেঁটে বাঁশ দিয়ে কষিয়েছে এক মোক্ষম ঘা। ওর সঙ্গে এসে দাঁড়িয়ে আরো দুজন। ওরা মুহুর্তের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে সমীরদাকে ধানকোটা-চালকোটা করতে থাকে।
    এবার দ্বিতীয়জন একটা লোহার রড নিয়ে ওই ছোকরাগুলোর মাঅথা লক্ষ্য করে দমাদ্দম চালায়। কিন্তু সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছে মুক্ত কিরপান সর্দারজী। তবে নেশায় টলোমলো --সেটাই রক্ষা! হাতের ওপর লাগসই বাড়ি খেয়ে ও কিরপাণ ফেলে ব্যথায় কঁকিয়ে ওথে আর ডাকুদের সঙ্গে সম্ভব অসম্ভব শারীরিক সম্পর্কের ব্যাখ্যান শুরু করে দেয়।
    কিন্তু অবস্থা ক্রমশঃ খারাপের দিকে যাচ্ছিল। আরো অনেক খালাসী ও দারুভাট্টির কর্মচারিরা সাহস ফিরে পেয়ে ডাকাতদের সঙ্গে একহাত পঙ্গা নিতে তৈরি হচ্ছিল।
    বেগতিক দেখে যার দুনম্বর অভিজ্ঞতা সে বাইক বন্ধ করে মাউজার থেকে শূন্যে দু'বার গুলি ছুঁড়ল।
    ব্যস-, ময়দান ফাঁকা।
    ওরা সমীরদাকে তুলে নিয়ে মোটরবাইকে তিনজনের মাঝখানে বসিয়ে ধুলোর ঝড় তুলল। রাত্তিরে ঠেকে বসে গোণা হল-- বাইশ হাজার দু'শ সাঁইতিরিশ টাকা!!
    কম্যান্ডার খুশি।
    কিন্তু ঠিক হল দুমাসের জন্যে এই তিনজন অন্য এলাকায় চলে যাবে, ফিরবে হাওয়া ঠান্ডা হলে।
    ব্যাংকের অপারেশন কিন্তু অত সহজে হল না।
  • Ranjan Roy | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৯:৪৬650997
  • অন্য এলাকা। ছোট ব্যাংকের ছোট শাখা। এরা ঝারি করে দেখে নিয়েছে যে কোন সাইরেন বসানো নেই। সবচেয়ে কাছের পুলিশ স্টেশনটি অন্ততঃ চার কিলোমিটার দূরে।
    মদের দোকানের অভিজ্ঞতার পর এদের আত্মবিশ্বাস বেশ বেড়ে গিয়েছে। এরা দেখে নিয়েছে যে লাঞ্চের একঘন্টা পরের খানিকক্ষণ বেশ খালি খালি থাকে, বিশেষ করে বুধবারে।
    যথারীতি ওরা ব্যাংকে ঢুকে পড়ল। সেই সময় কোন চৌকিদার নেই। একজন দরজায় মাউজার হাতে পাহারায়। বাকি দুজনের মধ্যে একজন গিয়ে সোজা ক্যাশ কাউন্টারে । ভেতরের দিক দিয়ে ঢুকে পড়্ল ক্যাশিয়ারের কেবিনে। রোজকার অভ্যেসে সে পেছনের ছোট দরজাটা ভেজিয়ে রেখেছিল, ভেতর থেকে ছিটকিনি দেয় নি।তার হাতের দেশি কাট্টার নল মাথায় ঠেকাতেই ক্যাশিয়ার ছেলেটি সুবোধ বালকের মত ড্রয়ারে যা ছিল সব একটা থলিতে ভরে দিয়ে দিল। কমরেড ডাকাত সেটা নিয়ে বাইরে এসে ক্যাশিয়ারকে ওর পিঁজরায় বন্ধ করে দিয়ে সমীরদাকে সাহায্য করতে ম্যানেজারের কেবিনের দিকে গেল।সিন্দুকের যে চাবিটি ক্যাশিয়ারের কাছে থাকে তা আপাততঃ দ্বিতীয় কমরেডের হাতের মুঠোয়।
    এদিকে ম্যানেজারের কেবিনে নাটক জমে উঠেছে। সমীরদা ঢুকে প্রথমেই একটি রামপুরি না কানপুরি কি যেন, তাই দিয়ে টেলিফোনের তার কেটে দিয়েছিল। তারপর ম্যানজারকে চাবি নিয়ে সিন্দুক খুলতে বলতেই মাঝবয়সী ভদ্রলোক হাঁউমাউ করে চেঁচিয়ে উঠে সিন্দুকটিকে প্রাণপনে আঁকড়ে ধরলেন।
    ---- ডাকুজি, মুঝকো আপ মার ডালিয়ে, গোলি চালাইয়ে, পর ম্যাঁয় চাবি নহীঁ দুঙ্গা। ইয়ে মেরি ব্যাংক হ্যাঁয়।
    এই ব্যাপারটা একেবারে স্ক্রিপ্টের বাইরে!
    এইসব পেটিবুর্জোয়া ম্যানেজাররা তো মাইনে করা ভাড়াটে লোকজন,শোষক শ্রেণীর মার্সেনারি সোলজার। এদের তো ব্যাংকের জন্যে আলাদা কোন ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট থাকার কথা নয়। দেখ, আতাক্যালানে লোকটা ভয়ে চোখ বুঁজে ফেলেছে,তবু চেঁচাচ্ছে 'আমার ব্যাংক, আমার ব্যাংক' করে।
    শালা! তোর বাপের ব্যাংক! ন্যাকামি দেখ। এটাকে কী বলা যায়? ফলস্‌ কনশাসনেস?
    দ্বিতীয় কমরেড কালবিলম্ব না করে ওর মাথায় কাট্টার ধাতব নল দিয়ে এক ঘা কষিয়ে দেয়। ম্যানেজার অচৈতন্য হয়ে লুটিয়ে পড়ে। একটা রক্তের ধারা আস্তে আস্তে ওর মাথার পাশ থেকে
  • Ranjan Roy | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ২০:২৬650998
  • গড়িয়ে আসে।
    রক্ত দেখে দ্বিতীয় কমরেডের হাঁটু কেঁপে ওঠে। ওর মুখ থেকে ইংরেজি বেরিয়ে পড়ে--লেট আস গো! নো মোর!
    সমীরদা বিরক্ত চোখে ওর দিকে দেখে, তারপর অচৈতন্য ম্যানেজারের পকেট থেকে চাবি বার করার চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু অত মোটা ভদ্রলোকের ভারি শরীরটা উল্টে দেওয়া সোজা কথা নয়। উল্টে হাতে রক্ত লেগে যায়।
    এদিকে আর একটা ব্যাপার হয়ে গিয়েছে। ব্যাংকের চাপরাশি সেই সময় বাইরে বিড়ি ফুঁকতে গিয়েছিল। সে ঢোকার মুখে মাউজার হাতে দাঁড়ানো কমরেডকে ও রাস্তার ওপর ভয়াক্রান্ত কিছু গ্রাহককে দেখে ব্যাপারটা দ্রুত এঁচে নেয়।
    সে কিছু ছেলে-ছোকরাদের জড়ো করে চেঁচাতে শুরু করে-- ডাকু! ডাকু! আরে ব্যাংক মেঁ ডাকা পড় রহা হ্যায়। কোঈ পোলিস কো বুলাও।
    আর দেরি করা যায় না। ক্যাশিয়ারের দেওয়া থলে নিয়ে এরা মোটর বাইকে চড়ে বসে। কিন্তু চাপরাশি ছেলেটার সঙ্গীরা মোটর বাইকের পেছন পেছন তাড়া করে যায়, ঢিল ছোঁড়ে।
    ঠেকে এসে গুণে দেখা গেল মাত্র বারোহাজার দু'শো বত্তিরিশ। মন্দের ভাল আর কি!
    কিন্তু ব্যাংকের ফ্লোরে বয়ে চলা রক্তের ধারা সমীরদাকে তাড়া করে। এখানে এসেও রোজ খবরের কাগজে তন্ন তন্ন করে খোঁজে মহারাষ্ট্রের চান্দা জেলায় কোন ব্যাংক-ডাকাতির খবর, কোন অফিসারের আহত বা হাসপাতালে মৃত্যুর খবর।
    না, অমন কোন খবর নেই।
    কিন্তু মন মানে না। আসলে এই ছত্তিশগড়ের খবরের কাগজে ভিন রাজ্যের অত দূরের ছোট শহরের খবর কদাচিৎ বেরোয়।
    সমীরদা অপেক্ষা করে-- যদি কমরেডরা কোন খবর পাঠায়।আসলে আশংকায় থাকে।
    আমার বুক ফেটে যায়।
    -- শোন, এই দলটল ছাড়। এসব কি করাচ্ছে তোমাকে দিয়ে! গেছিলে বিপ্লবী হতে, হয়েছ ডাকাত। এরপর ওই ম্যানেজারটা মারা গেলে হবে খুনি। সেদিন নিজেকে মাপ করতে পারবে?
  • Ranjan Roy | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ২০:৩৭650999
  • -- এক্দম ফালতু কথা বলবে না! ডাকাত? খুনি? তুমি কি বোঝ এসবের? যা খুশি বললেই হল!
    স্প্রিং ভাঙা পুতুলের মত লাফিয়ে উঠেছে ও।
    আমি বুঝি , কোথায় লেগেছে। ওর মনের ভেতরের আশংকা আমার মুখে শুনে ও এখন বেসামাল। আমার হয়ত চুপ করে যাওয়া উচিত ছিল। ওকে একলা একলা ভাবার সময় দেওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু কি যে হয়! সব বুঝেও বুঝি নে, থামতে পারি নে। আমিও তো মানুষ।
    -- ও, সত্যি কথা বললেই গায়ে লাগে? আমি কিছুই বুঝি না আর তুমি সব বোঝো, তাই আজ এই হাল।চেঁচামেচি না করে আমায় বোঝাও দেখি-- কোন কথাটা ভুল বলেছি? কেন ডাকাতি করতে গেছলে? শোনো, যে মেয়েটা পাকেচক্রে তোমার সঙ্গে নিজের জীবন জড়িয়েছে তার কথাটা একটু শোনো। তাতে তোমার বিপ্লব একবছর পিছিয়ে যাবে না।
    -- কী কথা?
    -- মোদ্দা ক্থাটা হল- নিজের স্বভাবের বিরুদ্ধে কোন কাজ করতে নেই। ফল ভাল হয় না। ডাকাত নও, তবে ডাকাতি করতে গেছ কেন?
  • Ranjan Roy | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ২২:৪০651000
  • সমীরদা তার মাস্টারি মোডে ফিরে আসে।
    -- শোন, এই অন্যায় ব্যবস্থার বিরোধিতা করতে গেলে তোমাকে ওদের তৈরি আইন ভাঙতেই হবে, এর কোন বিকল্প নেই।
    যখন আইনটাই অন্যায় ব্যব্স্থার ওপর তৈরি, তখন সেই আইন না মানাটাই ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করা। আমি নই, রোমাঁ রোলাঁর মত মনীষী বলেছেন।
    -- খালি বড় বড় কথা। আইন অমান্য আন্দোলন কর গিয়ে, কে বারণ করছে? কিন্তু ডাকাতি?
    -- এই রাষ্ট্র ব্যব্স্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। বিপ্লবী সৈন্যবাহিনী গড়ে তুলতে হবে, পিপলস্‌ লিবারেশন আর্মি। ওদের মাইনে দিতে হবে, জামাকাপড়, খাবার আর আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র। কাজেই টাকা চাই। তাই কেড়ে নিতে হবে, ওদের কোষাগার অস্ত্রাগার লুঠ করতে হবে।
    অমন হাঁ করে তাকিয়ে আছ কেন? স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় স্বদেশী ডাকাতদের কথা পড় নি? ওরা জমিদারদের বাড়ি ডাকাতি করত না? অনুশীলন দল? যুগান্তর? চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের কথা পড় নি? পড়বে কি করে? তোমাদের ক্রিশ্চান মিশনারী স্কুল। ওরা তো ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীদের ভালবাসতে শেখায়! আহা, যীশু আমাদের কত প্রেম করিলেন। যত্তসব!
    -- কিন্তু তোমরা তো ওদের ফলোয়ার নও। দেশ তো স্বাধীন। কম্যুনিস্টরাও ডাকাতি করে? লেনিন স্তালিন এইসব পছন্দ করতেন?
    --- তোমাকে একটা বই দেব। এম মন্তিস্লাভস্কির লেখা-- "বসন্তের দূত রুক"। লেনিনের একসময়ের ডানহাত , ওনার টেকনিক্যাল কোরের লোক এন বাউমানের জীবনী। উনি ১৯০৫ এর ব্যর্থ বিপ্লবের সময় ব্ল্যাক হান্ড্রেড গুন্ডাদের হাতে নিহত হন। আন্ডারগ্রাউন্ড অবস্থায় "ইসক্রা" পত্রিকা বের করার দায়িত্বে ছিলেন। পড়লেই বুঝবে কেন বিপ্লবীদের একটা সময়ে ডাকাতি করতে হয়। খালি জনগণের চাঁদায় বিপ্লব হয় না।
    -- কিন্তু ওই ম্যানেজারটা যদি মারা যায়? পারবে সহ্য করতে?
    --- শোন। আমার ছোটবেলায় কোলকাতায় মামাবাড়িতে দু'বছর ছিলাম। সেখানে আমার মেজমামা, পুরনো দিনের কম্যুনিস্ট। বলতে গেলে কম্যুনিজমের স্বপ্ন যে কী তার খানিকটা আভাস আমি তাঁর কাছ থেকেই পেয়েছিলাম।
    উনি একটা গল্প বলেছিলেন।
    ১৯৫৭ তে কেরালায় প্রথম কম্যুনিস্ট সরকার গড়ে ওঠে,বিপুল জনপ্রিয়তা। ইন্দিরা গান্ধী তখন কংগ্রেসের সভাপতি। উনি যে কি লেভেলের শ্রুড তা তখনই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এজেন্ট প্রোভোকেচার দিয়ে রাজনৈতিক দাঙ্গা খুনোখুনি করিয়ে উনি রাষ্ট্রপতির শাসন লাগিয়ে দিলেন।
    তখন আমার মামাবাড়ির পাড়ায় একটি সেলুনে চুল কাটতে এল একজন নতুন নাপিত, ত্থেংকাপ্পন। আসলে কেরল থেকে পালিয়ে আসা অ্যাকশন স্কোয়াডের লোক। মামাই শেলটার দিয়ে ওকে কাজে লাগিয়েছিলেন। ওর বিরুদ্ধে এগারোজনকে মার্ডার করার চার্জ ছিল। তিন বছর পরে ও দেশে ফিরে যায়, ধরা পড়ে। দু'বছর জেল খেটে প্রমাণের অভাবে মুক্তি পায়।
    মামাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম--- এগারোটা মার্ডার! ও রাতে ঘুমোয় কি করে?
    মামা বলেছিলেন-- ও তো ইডিওলজির মার, মনে দাগ কাটে না, বুকে লাগে না। কোন ব্যক্তিস্বার্থে তো মারে নি!
  • সে | 188.83.87.102 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ২৩:১৭651001
  • হুম্‌।
  • de | 24.139.119.172 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ১২:৪৮651002
  • কি আর্গুমেন্ট!!
  • kiki | 125.124.41.34 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৫:৩১651003
  • এদের এই অবস্থা হলে আর জেহাদী বাচ্চা ছেলেগুলোর দোষ কি! সেই একই ব্রেন ওয়াশ কেস...............এ ভাবেই ভাবে। ঃ(
  • ঐশিক | 24.140.33.186 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৮:৩৪651004
  • ঐদিকে সে দি এদিকে রঞ্জনদা দারুন যুগলবন্দী চলছে
  • ranjan roy | 24.99.37.87 | ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৮:৩৬651005
  • -- কী হল, হাসছ যে?
    --- হাসি পাচ্ছে, তাই!
    ---- এটা কোন কথা হল?
    -- কেন হবে না? আচ্ছা, এটা জান তো--
    'হাসতে হাসতে আসছি আমি, আসছে দাদা আসছে ভাই;
    হাসছি কেন কেউ জানে না, পাচ্ছে হাসি হাসছি তাই!'
    সমীরদার চোয়াল শক্ত হয়। চোখ সরু করে আমার দিকে তাকায়।
    --- কথা ঘোরাবে না। আমার কথায় হাসি পায় কেন?
    আর পারি না, খিলখিলিয়ে হেসে উঠি। বেমক্কা দমকা হাসির তোড়ে আমার আঁচল লুটিয়ে পড়ে, খোঁপা খুলে যায়।
    সমীরদা ভয়ানক রেগে যাচ্ছে, দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু কি করব? কখনো কখনো এমন বেয়াড়া হাসি পায়!
    সমীরদা এগিয়ে এসে আমার হাতের কলাই চেপে ধরে।
    -- একি ছাড়! আমার ব্যথা লাগছে।
    --- ছাড়ব না, আগে বল আমার কোন কথায় এত হাসি পাচ্ছে।
    -- বলি? রাগ করবে না তো?
    -- বাজে কথা ছাড়, বল।
    --- আমাদের মধ্যপ্রদেশের চম্বল এলাকায় এক ভয়ানক ডাকু ছিল, নাম মোহর সিং। একবার একজন সাংবাদিক তার ইন্টারভিউ নেন। সত্যি বলছি,"নই দুনিয়া" তে বেরিয়েছিল।
    -- তো?
    --- ওকে সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিল, আপনি ক'টা মানুষ মেরেছেন। মোহর সিং কী বলল জান?
    --কী বলল?
    -- আপনি য্খন খেতে বসেন তখন কি গুনে গুনে রুটি খান?
    আর পারলাম না। এবার হাসির তোড়ে মাটিতে গড়াগড়ি।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:১৬651006
  • :-)))))))))))))))
  • ranjan roy | 24.97.202.163 | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৮:৩৬651008
  • সমীরদা অবাক চোখে তাকায়।
    --এর সঙ্গে আমার কথার কি সম্পর্ক?
    -- রাগ কর না। তোমার সেই অ্যাক্শন স্কোয়াডের নাপিত কমরেড আর ডাকাত মোহর সিং, দুজনের কাছেই মানুষ খুনের সংখ্যাটা কোন ব্যাপার নয়, ওই ইডিওলজির মার!
    ---ডাকাতের আবার ইডিওলজি! কী যা তা বকছ?
    -- ভেবে দেখ; সেই ডাকাত আর আলেকজেন্ডারের গল্প। হরে দরে একই।

    সাতদিন আমার সঙ্গে কথা বন্ধ।

    সাতদিন পরে কথা বলতে বাধ্য হল। কেন? না, সঙ্গে জুটিয়ে এনেছে আরেকজন লোককে। বাঙালী, চোখে চশমা, বছর চল্লিশ হবে।
    -- মানিকদা। এখন ক'দিন আমাদের সঙ্গে থাকবেন। লোকজন জিগ্যেস করলে বলবে নবদ্বীপ থেকে এসেছে তোমাকে দেখতে, তোমার দাদা।

    মানিকদার ব্যবহারে কোন সংকোচ নেই। কথাবার্তায় কোন গায়েপড়া ভাব নেই। কিন্তু চোখে একটা দুষ্টু হাসি, খানিকটা বাচ্চা ছেলেদের মত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন