এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বেঁচে আছিঃ প্রেমে-অপ্রেমে

    ranjan roy
    অন্যান্য | ০১ অক্টোবর ২০১৪ | ২১৮৪১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সে | 203.108.233.65 | ১৩ নভেম্বর ২০১৪ ১২:৪১650909
  • তারপর?
  • ঐশিক | 213.200.33.67 | ১৩ নভেম্বর ২০১৪ ১২:৫৫650910
  • রঞ্জনদা ভালো লাগাটা জানানো হয়ে ওঠে নি এত দিনে, কিন্তু প্রতিটা পর্ব মন দিয়ে পড়ি
  • ranjan roy | 132.176.3.122 | ১৩ নভেম্বর ২০১৪ ১৬:৩৮650911
  • ৫)
    আজ বোধহয় সুর্য পশ্চিম দিকে উঠেছে। ভরদুপুরে সমীরদা এল জনা আটেক সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে। ঘরে ঢুকল বেশ উঁচু গলায় কথা বলতে আর হাসতে হাসতে। আগের চাপাচুপি ব্যাপারটা আরও কমে গেছে মনে হচ্ছে। ব্যাপারখানা কী?
    -- শোন, সবাই আজকে এখানে খাবে, দুবেলা । দুপুরে আলু-পেঁয়াজ কেটে মুসুরি ডালের খিচুড়ি চড়িয়ে দাও।আর রাত্তিরে বুনো শুয়োরের মাংস আর লংকার আচার।
    আমি ফাঁপরে পড়ে যাই। অতগুলো মুখে তুলে দেবার মত চাল-ডাল-তেল? ঘরে যা আছে তাতে কুলোবে না।
    ও আমার মুখের চেহারা দেখে মনের কথা পড়ে ফেলেছে।
    --- আরে অত ভেব না।কমরেডরা আমাদের অবস্থা বোঝে। তাই দেখ, চাল-ডাল-তেল-নুন আচার সব নিয়ে এসেছে।আর বড়কা কমরেড বয়ে এনেছে বরার মাংস। আজ ফিস্টি!
    এক এক করে আটজন ভেতরে ঢোকে। বড়কা লাজুক মুখে কাপড়ে পেঁচানো ছোটোমত একট মরা শুয়োরছানা কাঁধ থেকে নামায়।
    আর তিনজনের কাঁধের ঝোলা থেকে বেরোয় চাল-ডাল- চিনি-নুন-তেল এই সব।
    ওরা সব নামিয়ে রেখে ধপ করে মাটিতে বসে পরে। তারপর কাঁধের গামছা দিয়ে কপালের ঘাম মোছে। আমি ততক্ষণে সবার জন্যে খাওয়ার জলের ঘটি নিয়ে আসি। আর পেছনের দাওয়ায় একবালতি জল রেখে দেই হাত-মুখ ধোয়ার জন্যে। তারপর চায়ের জল চড়াই।
    এদিকে বড়কা কমরেড নিজেই কুয়ো থেকে জল এনে কেটে ধুয়ে মাংস পরিষ্কার করা শুরু করেছে। একটা বড় ছুরি ধরে প্রায় সার্জনের মত অভ্যস্ত হাতে কচকচিয়ে কাটছে মৃত শুয়োরছানার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। দেখা যাচ্ছে শিরা-পেশি- সাদা সাদা চর্বির থাক ও মাংসের লালচে রং।
    আমার গা গুলিয়ে ওঠে, তবু নড়তে পারি না। কেমন ঘোর লেগে গেছে।
    চটকা ভাঙে সমীরদার কথায়।
    --- লতা , এদিকে এস। তোমাকে বেশি কিছু করতে হবে না। শুধু দুপুরের খিচুড়িটা আর সারা দিনে কয়েকবার চা'। ব্যস্‌। রাত্তিরের মাংস ব্ড়কা কমরেড রাঁধবে --ওদের সাঁওতালি কায়দায়।
    আজ দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর সবাই একটু ভাতঘুম দেবে। তারপর বিকেলের চায়ের পর শুরু হবে আমাদের মিটিং। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলবে সারারাত। তুমি ঘুমিয়ে নিও।
    --- ব্যাপারটা কী? এখানে মিটিং কেন? আমাদের ঘরে? যদি কিছু হয়ে যায়?
    --- কী হবে? এই এলাকা এখন একরকম আমাদের দখলে। কোন বিপদ নেই। তাই গোটা জোনাল কমিটি আজ এখানে মিট করছে। আগামী পার্টি কংগ্রেসের আগে পরিস্থিতির একটা বাস্তবসম্মত মূল্যায়ন দরকার।
    এখান থেকে দশ কিমি দুরের পাঁচ-পাঁচটা গাঁ কাল মিছিল করে মহকুমা সদরে গিয়ে বিডিও অফিসে খোলাখুলি জানিয়ে দিয়েছে যে দু'মাস পরের বিধানসভা নির্বাচনে ওরা ভোট দেবে না। হ্যাঁ, যদি এই দুমাসে ওদের বাসরাস্তা থেকে গাঁয়ের ভেতর অব্দি রাস্তাটা পাকা হয়ে যায় আর প্রত্যেক মহল্লায় একটা করে টিউকল বসে তবে তারা ভেবে দেখতে পারে।
    বিডিও সাহেব ঘেমে নেয়ে অস্থির। সব দাবি এককথায় মেনে নিয়েছেন। উনি আজই সব রেকমেন্ড করে জেলা সদর সিউড়ি আর কোলকাতায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে আরও দশ গাঁ এইরকম মিছিল নিয়ে যাবে।
  • ranjan roy | 132.176.3.122 | ১৩ নভেম্বর ২০১৪ ১৮:২৭650912
  • চা দিতে গেলে ও সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়।
    --ইনি আমাদের সেন্ট্রাল কমিটি মেম্বার, সেই সত্তরের দিন গুলোতে শ্র্রীকাকুলামে ভেমপাটাপু সত্যনারয়ণ, আদিভাতলু কৈলাসম ও থামাডা গণপতির সঙ্গে থেকে আন্দোলন গড়ে ছিলেন।
    আমি এর মাথামুন্ডু কিছুই বুঝলাম না। শুধু দেখলাম চারকে দুই দিয়ে ভাগ করা কায়দায় সাদা লুঙ্গি আর হাতা গোটানো ফুলসার্ট গায়ে পাকাচুল পাকা গোঁফ , রোদেপোড়া কালো চেহারা। আমাকে হাত জোড় করে বললেন--নমস্কারম্‌ কমরেড আক্কা।
    আমি হকচকিয়ে যাই। কমরেড দিদি! পাল্টা হাত তুলে কপালে ঠেকাই।তেমনি আরও জনা দুই, একজন বিহার-ঝারখন্ডের আর একজন পাতলা আওয়াজের কমবয়সী হাসিমুখ-উড়িষ্যার।
    জনাদুই ছোকরা মত। আর শুয়োরের মাংস সাফ করায় ব্যস্ত বড়কা কমরেডকে তো ভাল করে চিনি।
    কিন্তু চিনি তো আরও একজনকে! না, জর্দাখাওয়া কালো দাঁতে মিচকি হাসি আর আমার শরীরে ঘুরে বেড়ানো লোভী চোখ! ভুল হবার নয়। এও কমরেড! চমকালেও চেপে যাই।
    --- কমরেড নারায়ণ । মিদনাপুরের। কিন্তু কোলকাতায় আন্ডারগ্রাউন্ড সংগঠনের অভিজ্ঞতা আছে।।
    --- বৌদি, আমি রান্না করতে পারি। আপনাকে চালডাল খিচুড়ি রাঁধতে সাহায্য করব, সব হয়ে যাবে। চিন্তা করবেন না।
    -- থাক, ওসব আমি দেখে নেব।আপনি কাঁকর বেছে দিন, তাহলেই হবে।
    আমার গলার স্বর কি একটু রুক্ষ্ম হয়ে গেছে? সবাই চোখ তুলে তাকাল। আমি কি মাঝবয়সি লোকটিকে একটু বেশি বললাম! ও কিন্তু হাসিমুখে কাঁকর বাছতে লেগে গেল।

    সন্ধ্যের পর এদের মিটিং শুরু হয়ে গেল। কিন্তু শুরুর আগে একটু যেন উদ্বোধনী সংগীতের মত শুনলাম। সমীরদা নীচু ভারি গলায় বলল-- কমরেড সত্যম সত্তরের শহীদ সুব্বারাও পাণিগ্রাহীর অমর গীত গেয়ে শোনাবেন।
    পাকাচুলের সত্যম উঠে দাঁড়ালেন। চশমার কাঁচ মুছে নীচু গলায় শুরু করলেনঃ

    "কমুনিস্ত লম্‌বিম্বু কাস্তে জীভলম,
    আওন্না আদন্না আদে ইস্তলম্‌।"
    উনি সোজা হয়ে খানিকটা ছাতের দিকে চোখ তুলে গাইছেন। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কিন্তু ওঁর আবেগ আস্তে আস্তে আমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে।
    প্রথম অন্তরার পর আর উনি গাইতে পারলেন না। একটু পাশ ফিরে জামার হাতায় কাঁচ মুছতে লাগলেন।
    কিন্তু সমীরদা, নারায়ণ ও আরো দুয়েকজন গানটা ধরে নিয়েছেঃ
    "হাত দিয়ে বল সূর্যের আলো ঠেকাতে-- পারে কি কেউ?
    আমাদের ধরে ঠেকানো কি যায়--- জনজোয়ারের ঢেউ!
    জনতাকে নিয়ে চলেছি এগিয়ে--লক্ষ্য করিব জয়,
    সমাজেরে মোরা ভাঙিয়া গড়িব-- নির্মম নির্ভয়।

    "কমুনিস্ত লম্‌বিম্বু কাস্তে জীভলম,
    আওন্না আদন্না আদে ইস্তলম্‌।"

    গান কখন থেমে গেছে। এবার বয়স্ক সত্যম গলা খাঁকারি দিয়ে মিটিং শুরু করালেন। দরজার বাইরে একটা গাছের ছায়ায় একজন অল্পবয়সী আর বড়কা কমরেড পাহারায় রয়েছে।

    প্রথমে নীচু আওয়াজে প্রায় উদারায় শুরু হওয়া মিটিং কখন যে মুদারা ছাড়িয়ে তারসপ্তকে পৌঁছে যায় বলা মুশকিল। এদের একটু প্যাসিভ ভয়েসে আর ইনডাইরেক্ট ন্যারেশনে কথা বলার ভঙ্গিতে আমার কুলকুলিয়ে হাসি পায়।

    শেষ রাত আমার ঘুম ভেঙে গেছে। আমি তো দশটা বাজতেই দুপুরের বাড়তি খিচুড়ি খেয়ে শুয়ে পরেছিলা
  • ranjan roy | 132.176.3.122 | ১৩ নভেম্বর ২০১৪ ১৮:৫২650913
  • আমি তো রাত দশটা বাজতেই দুপুরের বাড়তি খিচুড়ি খেয়ে এককোণে শুয়ে পড়েছিলাম।
    এখন উঠে দেখি সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে যে যেখানে পারে শুয়ে পড়েছে। কারো কারো নাক ডাকছে। কেউ কেউ চোখের উপর গামছা চাপা দিয়েছে। গোটা ঘর প্রায় অন্ধকার। কোনার দিকে একটা টেমি জ্বলছে।
    বৈশাখের ভোর। বাইরে অন্ধকার একটু পাতলা হ্হয়ে এসেছে। আমি হাই তুলি, জল খাই।তারপর উনুন থেকে খুঁচিয়ে চাই বের করে একজায়গায় করে এঁটোকাঁটা তুলি। পেছনের ছাইগাদায় ফেলে বাসন মাজতে ব্সব।
    বাইরে বেরোতেই দেখি মোরগ ডাকছে। কিন্তু একটা না অনেকগুলো, একের পর এক। আমার চোখে তখনো ঘুমের ঘোর। যাকগে, মরুক গে। এঁটোকাঁটা ছাইটাই ফেলে ভাবি আর একটু পরে লোটা নিয়ে ক্ষেতের দিকে যাব। এরা ওঠার আগেই সেরে টেরে আসব।
    কিন্তু এটা কি! কচুপাতা গুলো এগিয়ে আসছে কেন? বোধহয় চোখের ভুল, গতরাতের ক্লান্তি।
    কিন্তু না, আনেকগুলো কচুপাতা বাড়ির পেছন দিকের পুকুর পাড়ের দিক থেকে সরসর করে দ্রুত এগিয়ে আসছে যেন?
    কিছুই বুঝতে পারছি না।
    সোজা ঘরের ভেতরে গিয়ে সমীরদাকে ডেকে তুলি।
    -- এই, শুনছ, ভোর হয়ে গেছে। উঠে পড়। তুমি উঠলে তবে তো আমি মাঠের দিকে যাব। আরে ওঠ।এই, ওঠ বলছি।
    সমীরদা চোখ কচলায়। কি হয়েছে?
    -- হবে আবার কি? কচুর পাতা বুকে হেঁটে আসছে। দেখবে এস!
    সমীরদা লাফিয়ে ওঠে। ঘুমটুম গায়েব।
    -- কই?
    তারপর পেছনের আঙিনায় এসে বাইরের দিকে তাকিয়েই লাফিয়ে ওঠে-- কি সর্বনাশ!
    ও দৌড়ে গিয়ে সবাইকে ডেকে তোলে-- কমরেড্স্‌! পুলিশ! পুলিশ হামলা করেছে।
    মুহুর্তের মধ্যে ধুতি-লুঙ্গি-প্যান্ট-চশমা সব হাওয়া ।
    কচুপাতা মাথায় বিশাল পুলিশবাহিনী বুকে হেঁটে পৌঁছে গেছে আমাদের আঙিনায়, ঘিরে ফেলেছে গোটা বাড়ি। অধিকাংশের হাতে বন্দুক। ঘরের মাঝখানে লুঙ্গি পরে খালিগায়ে সমীরদা, আমি ওকে জড়িয়ে ধরে থরথর করে কাঁপতে থাকি।
  • সে | 203.108.233.65 | ১৩ নভেম্বর ২০১৪ ২১:৪৫650914
  • বাপ্রে!
  • Lama | 126.193.136.210 | ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ১৯:১৫650915
  • রঞ্জনদা?
  • ranjan roy | 132.176.215.77 | ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০০650916
  • জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পাকা রাস্তা ধরে পুলিশের কালো গাড়ি ছুটে চলেছে। ড্রাইভারের পাশে একজন সশস্ত্র পুলিশ। পেছনের জাল লাগানো বড় জায়গাটাতে সামনা সামনি দুটো লম্বা গদি আটা বেঞ্চি মত, তাতে বসে অন্ততঃ ছ'জন পুলিশ, মাস্কেটধারী। ওদের মধ্যে চশমা পরা একজনের হাতে একটা বেঁটে মত বন্দুক। তার সামনের নলীর গায়ে আর একটা ফুটো ফুটো লোহার কেসিং গোছের লাগানো।
    বন্দী বলতে শুধু দুজন ,আমি আর সমীরদা।
    আমাদের হাতে হাতকড়া আর কোমরে দড়ি, সেটা ধরা আছে একজন পুলিশের হাতে।

    আমাদের কপাল খারাপ! এত বড় পুলিশবাহিনী ! বিরাট আয়োজন! কিন্ত এত কষ্ট করে যত্নে বিছানো জাল ছিঁড়ে সব রাঘব বোয়াল রুই কাতলারা নাকি পালিয়েছে! তাই ইন্টেলিজেন্স অফিসারের সমস্ত রাগ পড়ল আমাদের দুজনের উপরে। ঘরের আনাচে কানাচে গরুখোঁজা করেও কাউকে না পাওয়ায় সেই ভদ্রলোক দুজন সেপাইকে বলল -- এই মাগীটাকে এর থেকে আলাদা কর।
    দুজন সেপাই এসে আমার হাত ধরে টানতেই সমীরদা বলল-- অফিসার! এর কি কোন দরকার আছে? অপনি আমার স্টেটমেন্ট নিন।
    অফিসার ভদ্রলোক এগিয়ে এসে সপাটে একটা চড় কষালো। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল-- একটা ফালতু কথা বলবি না! বিপ্লব মারাচ্ছিস! ওসব তোর পেছনে ভরে দেব!
    যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দে! সত্যম কোথায়? ও বলবি না? শহীদ হবি? দাঁড়া!
    কি রে মাগি! তুই বলে দে! তোদের নেতা কোথায়? সত্যম? বড়কা? নারায়ণ? আর পটনায়েক?
    আমার মুখ দিয়ে কথা সরে না।
    -- ও কিছুই জানিস না? এদের সঙ্গে রাত্তিরে শুয়েছিস আর এখন কোথায় জানিস না? এই প্রহ্লাদ সিং? এদিকে এস। এর কাপড় খুলে দাও।
    আমার মুখ থেকে একটা চাপা আর্তনাদ বেরিয়ে আসে। সমীরদার দিকে তাকাই। কিন্তু সেখান থেকে কোন ভরসা পাই না,
    ও কেমন বোবা জন্তুর মত আমার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিল।
    প্রহ্লাদ সিং বলে সাজোয়ান সেপাইটা এগিয়ে এল। কিন্তু আমার গায়ে হাত দিল না।
    বলল-- মাতাজি, হম কুছ নহীঁ করেঙ্গে! যো যো মালুম হ্যায় সব কিছু বাতা দীজিয়ে, ব্যস্‌ আপকী ছুট্টি!
    আমি মনে মনে ভগবানকে ডাকতে থাকি। এমন সময় পেছন থেকে একটা খুব জোরে বাড়ি, কোমরে; তার পর পিঠে, ও ঘাড়ে। আমি মুখ থুবড়ে পড়ে যাই।
    তারপর কিছু মনে নেই।
    এখন হুঁশ ফিরতে টের পাই, হাতে হাতকড়া, কোমরে দড়ি। আর গায়ে খুব ব্যথা। গাড়িটা মাঝে মাঝে লাফিয়ে উঠছে, রাস্তা খারাপ। আর ব্যথা টের পাচ্ছি। কোমরে, ঘাড়ের পেছনে, পিঠে।
    আরও টের পাই যে ঠাকুর আমার মুখ রেখেছেন। কেউ আমার কাপড় খুলে নেয় নি, গায়ে হাত দেয় নি।
    অল্প দূরে শুয়ে আছে সমীরদা। গাড়ির মধ্যের অন্ধকার ও রোদ্দুরের আলোছায়ার খেলা। ও হাল্কা করে পাশ ফেরার চেষ্টা করছে। না, এখন কথা বলা ঠিক হবে না।

    এখন ক'টা বাজে? গাড়ির বডি ও ছাত তেতে উঠেছে। মানে দুপুর গড়িয়ে গেছে। কতক্ষণ দৌড়ুচ্ছে গাড়িটা? আর কতক্ষণ এমনি করে যাবে ? কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমাদের?
    আমার কী হবে? সমীরদার কি ফাঁসি হবে?
  • সে | 203.108.233.65 | ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৩৩650917
  • পড়ছি।
  • ranjan roy | 132.176.215.77 | ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৪১650919
  • এইসময় খিদে চাগিয়ে উঠল। আর বড্ড গা গোলাচ্ছে। কিন্তু তার চেয়ে বেশি চাপ তলপেটে। কতক্ষণ ছোট বাইরে যাই নি। সেই ভোরবেলাতেই তো পুলিশ এল।
    কথাটা কাকে বলব ? সমীরদাকে? ও তো আমার মতই দু`বেঞ্চির ফাঁকে খালি জায়গাটায় মাটিতে পড়ে আছে।
    কিন্তু গলা শুকিয়ে কাঠ। আর পারছি না। উঠে বসার চেষ্টা করতেই দড়িতে টান পড়ল। অমনি দুটো পুলিশ খেঁকিয়ে উঠে আমার মা -মাসি উদ্ধার করল।
    আমি ইশারা করে দেখলাম -- জল খাব, বাইরে যাব।
    ওরা পাল্টা দিল-- আর আধঘন্টায় গন্তব্য স্থলে পৌঁছে যাব। এসব আদিখ্যেতা তখন দেখা যাবে।
    আমার প্রায় কাপড়ে চোপড়ে হয়ে যায় আর কি!
    করুণ মুখে হাতকড়ি লাগানো জোড়া হাতে অনুনয়ের ভঙ্গি করলাম। কোন লাভ হল না।
    হটাৎ একজন ঝারখন্ডি পুলিশ নাক চেপে প্রায় লাফিয়ে উঠল।
    --- এ, এ বিরজু! জলদি সাহাবকো বোলকে গাড়ি রুকুয়া দে। ইয়ে বেশরম আওরত পাদ রহী হ্যায়! গাড়ি কে অন্দর গন্দা কর ডালেগী। তক্ষুণি আর একজন ওয়াকি টকিতে খড়মড় করে কিসব বলতে লাগল। হটাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে কালো গাড়ি বা ডগ্গা থেমে গেল।
    আমরা নীচে নামলাম।
    আমার হাত কড়া খুলে দেওয়া হল। কিন্তু কয়েকজন পুলিশ আমাকে ঘিরে জঙ্গলের দিকে নিয়ে গেল। এক্জন প্লাস্টিকের জলের বোতল ধরিয়ে দিয়ে একটা ঝোপের দিকে ইশারা করে বলল সব সেরে নিতে। ওরা একটু দূরে ঝোপটাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে রইল।
    সব শেষ হলে টের পেলাম যে সমীরদা ও একই ট্রিটমেন্ট পেয়েছে। আরও দেখতে পেলাম যে আসলে আমাদের গাড়ির সামনে একটা জীপ ও পেছনে আরও দু'গাড়ি পুলিশ চলছিল।
    কিন্তু আমাদের কাফিলা আর রওনা হচ্ছে না। দু'জন অফিসার সিগ্রেট খেতে খেতে কিসব আলোচনা করছেন।
    জঙ্গলের ভেতরে একটা সোঁদা গন্ধ। একটু ঘাম ঘাম ভাব। আমার পাশের শাল গাছের গোড়ায় একটা বিরাট উইয়ের ঢিবি। তার পাশে একটা গর্তের থেকে সাদামত সাপের খোলস বেরিয়ে আছে।
  • ranjan roy | 132.176.223.47 | ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ১১:৩৫650920
  • ওদের আলোচনা শেষ হল। দুজন ওয়াকি টকিতে কি সব বলছে। কিচ্ছু বুঝছি না। শুধু একটা শব্দ বার বার কানে ধাক্কা মারছে-- রজার!
    এর কি মানে কে জানে!
    তবে বেশিরভাগ গাড়ি আমরা যেদিক থেকে এসেছিলাম সেদিকে রওনা হয়ে গেল। আমাদের দুজনকে একটা ছোট জীপে ঠেসে তুলে দিল। কোমরের দড়ি খুলে দিয়েছে। হাতকড়া বাঁধা অবস্থাতেই একটু পায়চারি করে হাঁটু আর পায়ের জাম ছাড়িয়ে নিয়েছি।কিন্তু পিঠ আর কোমরের ব্যথা কিছুতেই কমছে না।
    দুজনকে জীপে তুলে বসতে দিয়েছে।
    জীপে ওঠার সময় সমীরদা ফিস ফিস করে বলল-- মন দিয়ে শোন লতা। তোমার আর আমার এই হয়ত শেষ দেখা। এরা মনে হচ্ছে এনকাউন্টার করতে চাইছে। দড়ি খুলে দিয়েছে, এরপর জঙ্গলের মধ্য হাতকড়ি খুলে দিয়ে চলে যেতে বলবে। কিন্তু ভুলেও জীপ থেকে নেমো না। ওরা বললেও না। যা হওয়ার গাড়ির মধ্যেই হোক।
    ক্ষিদেয় ক্লান্তিতে আমার চোখ বুঁজে এসেছে। তাহলে এই শেষ। আজকেই শেষ।
    গলা শুকিয়ে এসেছে। ভগবানকে ডাকতেও ইচ্ছে করছেনা। আমার কী দোষ? কী করেছি যে আমাকে চলে যেতে হবে? কার কি ক্ষতি করেছি? বাপ-মায়ের অমতে বিয়ে? আমি তো চাই নি! ওরাই তো আমার কোন কথা না শুনে মেরেধরে ঘর থেকে বের করে দিল।
    আর সমীরদা! কেন এইসব ঝামেলায় জড়াল? শুধু নিজে নয়, আমাকেও!
    মেয়ে হয়ে জন্মেছি বলেই কি সবাই মিলে আমাকে নিয়ে ফুটবল খেলবে!
    আর ভাবতে পারছি না, যা হবার তাড়াতাড়ি হয়ে যাক। মাথার মধ্যে কেমন একটা বোদা ভাব।
    এর মধ্যেও কখন যেন ঘুমিয়ে পড়লাম।
  • de | 24.97.33.199 | ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ১২:৩০650921
  • দম বন্ধ করে বসে আছি!
  • aranya | 78.38.243.218 | ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ১২:৫১650922
  • 'সেই সত্তরের দিন গুলোতে শ্র্রীকাকুলামে ভেমপাটাপু সত্যনারয়ণ, ..' -আমি ভেবেছিলাম রঞ্জন-দা সত্তর দশকের কথাই লিখছেন। তা নয়
  • ranjan roy | 132.176.223.47 | ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ১৪:২৭650923
  • অরণ্য,
    না না। এটা আসলে আশির দশকের শেষের দিকের গল্প। মেয়েটির কথায় ও হাড়কাটা গলি পর্বে সমীরের কথায় সময়ের উল্লেখ আছে।
    মানে যখন আদি নকশাল আন্দোলনের জোয়ার প্রায় পনের বছর আগে থেমে গেছে। আন্দোলন দলে-উপদলে-মতভেদে শতধা বিভক্ত, চীনে লিন পিয়াওয়ের মৃত্যু, মাও স্থবির, শেষের দিন গুনছেন। চিয়াং চিনরা জেলে। গ্লাসনস্ত-পেরেস্ত্রইকা দরজায় কড়া নাড়ছে। আজকের মাওবাদী আন্দোলন শুরু হয় নি।
    ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা ইতিহাসের মৃত্যুঘন্টা (!)বাজিয়ে দিয়েছেন। হান্টিঁটনের সভ্যতার সংঘর্ষ থিওরি নিয়ে কথা শুরু হয়েছে।
    তখনও পরের প্রজন্মের কিছু স্বপ্নদেখা ছেলে আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়েছে, নতুন করে গড়ে তোলার কথা ভেবেছে।
    কিন্তু এই গল্পে সেসব গৌণ।
    এখানে চেষ্টা করেছি ঘটনাচক্রে জড়িয়ে পড়া একটি মেয়ের চোখ দিয়ে একটা বিকল্প ন্যারেশনের , মুখ্যতঃ নারী-পুরুষ সম্পর্কের , জেন্ডার ইস্যুর। আন্দোলন এখানে পটভূমি মাত্র। ,
  • সে | 188.83.87.102 | ১৬ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০৭650924
  • পড়ছি।
  • aranya | 78.38.243.218 | ১৬ নভেম্বর ২০১৪ ০২:০৬650925
  • আচ্ছা, সময়টা মিস করে গেছি।
    অসাধারণ লিখছেন, বলাই বাহুল্য
  • sm | 233.223.134.52 | ১৭ নভেম্বর ২০১৪ ১৩:৪৯650926
  • ভালো লিখ্ছেন রন্জন বাবু।\
  • Buddha | 233.176.252.46 | ১৭ নভেম্বর ২০১৪ ১৬:১২650927
  • পড়ে ভালো লাগলো
  • সে | 203.108.233.65 | ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ০০:১০650928
  • কই রঞ্জনদা, লিখুন।
  • ranjan roy | 132.176.249.230 | ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ১০:৪৬650931
  • সিউড়ি সি জে এম আদালত।
    সিনেমার বাইরে কোর্ট-কাচারি কখনো দেখিনি। একেবারেই মিলছে না। শুধু একটাই মিল। হাকিম বসে আছেন একটু উঁচুতে কালো কাঠের বেড়া দেওয়া একটা পাটাতনের উপর।
    সামনের টেবিলে লালশালুতে বাঁধা একগাদা ফাইলপত্তর। ডানদিকে একটা লোক নীচুগলায় ফিস ফিস করে হুজুরের কানে কিছু বলে চলে গেল। বাঁদিকে ধুতি আর শার্ট পরা একজন অল্পবয়েসি ঘটর ঘটর করে কিছু একটা টাইপ করে চলেছে, করেই চলেছে।
    হুজুরের মাথার ওপরে একটা লম্বা রড থেকে ঝোলা বাবা আদমের জমানার সিলিং ফ্যান ক্যাঁচর ম্যাচর শব্দ করে ঘুরছে।
    হুজুরের পাটাতনের থেকে নীচে বড় হলঘরের গোড়াতেই দুটো কাঠগড়া। একটা ডানদিকে , অন্যটা বাঁদিকে। খানিক্ক্ষণ দেখে বুঝলাম যে একটা আসামীদের জন্যে , অন্যটা ফরিয়াদীদের বা সাক্ষীদের।
    আমাকে আর সমীরদাকে হাতকড়া লাগিয়ে কাঠগড়া থেকে সামান্য দূরে মাটিতে বসিয়ে রাখা হয়েছে। দুজনেরই কোমর পেঁচিয়ে এক-একটা মজবুত দড়ি যার আগা ধরা আছে একজন পুলিশ কনস্টেবলের হাতে। আমারটা ধরে আছে একজন মহিলা পুলিশ।তিনজন সশস্ত্র পুলিশ আমাদের পাহারা দিচ্ছে।
    আমি মাঝে মাঝে সমীরদাকে দেখছি। চুলে ধূলো, প্যান্টের গায়ে কাদা শুকিয়ে আছে। মুখটা ফোলা ফোলা, কপালের ওপর একটা আঁব গজিয়েছে। ভালই ঠ্যাঙানি খেয়েছে মনে হয়।তবে ঠোঁটের কষে বা চেহারায় কোন রক্তের দাগ নেই।
    হাকিম একবার যেন চোখ তুলে আমাদের দেখলেন। তারপর ফাইলের দিকে তাকিয়ে পাশের লোকটিকে কিছু বললেন।সে কিছু ইশারা করল।
    বুঝলাম, এবার আমাদের পালা।
    তখন আদালতের ইউনিফর্ম পরা চাপরাশী দরজার লাগোয়া বারন্দার দিকে গিয়ে বিকট চেঁচিয়ে উঠলঃ
    " হারাধন, গোবর্ধন, রহিম, ফুল্লরা-আ-আ-আ!
    আমি চমকে উঠলাম।
    পুলিশ প্রায় ঠেলাঠেলি করে জনাচারেক লুঙ্গি, ধুতি পরা ছেলেছোকরা আর মাথায় চুড়ো করে বাঁধা নাকে নাকচাবি এক মাঝবয়সী মহিলাকে কাঠগড়ায় তুলল।
    একজন বয়ষ্ক ভদ্রলোক, বোধহয় সরকারি উকিল, ঘ্যানঘেনে গলায় বলে যেতে লাগলেন যে আসামীরা কোন গাঁয়ের, ক্ষেতের ফসল কাটা নিয়ে কোন পরিবারের সঙ্গে ঝগড়া চলছিল, তাই এরা তিনদিন আগে শত্তুরতা করে অন্য পরিবারটির দুজনকে লাঠি আর কাস্তে দিয়ে মেরেছে। কেউ মরেনি, কিন্তু সেই দুজন গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে। এরা গাঁ ছেড়ে পালিয়ে গেছল। কাল রাত্তিরে ধরা পরেছে।
  • সে | 203.108.233.65 | ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ১২:২২650932
  • আরিব্বাস!
  • ranjan roy | 132.176.186.116 | ১৯ নভেম্বর ২০১৪ ০৭:৪০650933
  • ওদের মামলা নিয়ে দুই উকিলের তর্ক, হাকিমের জেরা, কেস ডায়েরি নিয়ে পুলিশকে মৃদু ধমক-- এইসব শুনতে শুনতে কখন অন্যমনস্ক হয়ে গেছি।
    মাথায় ঘুরছে গত দুদিনের পুলিশি টানাহ্যাঁচড়ার অভিজ্ঞতা।
    না, ঠাকুর আমার কথা শুনেছেন। এনকাউন্টার হয় নি।সেদিন সন্ধ্যের মুখে আমাদের শহরের বাইরে একটা ছোটমত থানায় নিয়ে তুলল। খেতে দিল শক্তমত তিনটে রুটি, ডাল আর ছেঁচকি। ও হ্যাঁ, একবার চা ও দিয়েছিল। থানা ছোটমত হলে কি হবে, পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। জীপ আসছে যাচ্ছে।
    ওরা আমাদের অনেক করে জেরা করল। আলাদা আলাদা, আবার একসঙ্গে বসিয়ে। আমি বোবা হয়ে ছিলাম।বারবার জিজ্ঞেস করছিল সত্যম ও কার্তিক কখন আমাদের বাড়ি থেকে গেছে? কোথায় যেতে পারে? ওদের গোপন ডেরা কোথায়? অস্ত্র-শস্ত্র কোত্থেকে আসে? কে ট্রেনিং দেয়? ভোট বয়কটের পর আর কী কী করার প্ল্যান? এইসব সাত সতেরো।
    আমি অবাক! সমীরদারা যে কী করছে তার খানিকটা আন্দাজ এই প্রথম পেলাম।
    সমীরদা প্রথম থেকেই এঁড়ে ছিল। একই কথা বলছিল।
    যেমন,আমাদের দল হিংসায় বিশ্বাস করে না। আমরা গণ আন্দোলনে বিশ্বাস করি। কোন পুলিশকে মারার বা সরকারি আমলাদের মারার কোন প্ল্যান নেই। এসব বাজে কথা।
    আমরা মাওপন্থী-লিনপন্থী ওসব কিছুই না।
  • ranjan roy | 132.176.186.116 | ১৯ নভেম্বর ২০১৪ ০৮:০৭650934
  • আমাদের দল জনগণের সেবা করে।
    সরকারের ডেলিভারি সিস্টেমে অনেক কিছুই গাঁয়ের প্রান্তিক মানুষজনের কাছে পৌঁছয় না। শহরেই ফুরিয়ে যায়।
    তাই আমরা সেসব ডকুমেন্টেড করে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। আসলে আমরা এই ভাবে সরকরের পরিপূরক হয়ে উঠি।
    -- হ্যাঁ,আমার মেডিক্যাল প্র্যকটিস করার লাইসেন্স নেই। কিন্তু আমি তো অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা করি না। আকুপাংচার করি।
    না, আমি নিজেকে হাতুড়ে ডাক্তার মনে করি না। আমি কোলকাতার কাছে শ্রমজীবী হাসপাতালে রেজিস্টার্ড ডাক্তারদের কাছে আকুপাংচার শিখেছি, সার্টিফিকেট আছে।
    না, আজ অব্দি আমার হাতে কারো মৃত্যু হয় নি।কঠিন অসুখ হলে আমি সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলি।
    হ্যাঁ, রাস্তাঘাট-পানীয় জল না পেলে নির্বাচন বয়কটের হুমকি হয়ত একটু বাড়াবাড়ি! কিন্তু এ'ছাড়া ওদের কি উপায় ছিল?
    না, এসব আমার দেওয়া বুদ্ধি নয়। এই ডিসিশন ওরা নিজেরাই নিয়েছিল।
    না, আমি সত্যম ও কার্তিক নামে কাউকেই চিনি না। যেসব জামাকাপড় পাওয়া গেছে ওগুলো আমারই। নানা সময় নানা পেশেন্টের দেওয়া উপহার।
    না, আমি বোম বানাতে বা গুলি চালাতে জানি না। ওসব কখনো চোখেই দেখি নি। বলছি তো, আমি অস্ত্রে নয়, গণ আন্দোলনে বিশ্বাস করি।
    হ্যাঁ, বড়কা সাঁওতালকে আমি চিনি। ও আমার অনুগত। ওকে আমি একটু একটু করে প্রশিক্ষিত হেল্থ ওয়ার্কার বানাচ্ছি।
    হ্যাঁ, সেদিন আমাদের বাড়িতে শুয়োরের মাংস ওই রেঁধেছিল। খাওয়া দাওয়ার পরে ওর গাঁয়ে ফিরে গেছল।
    কী বলছেন? ওর গাঁয়ে ফেরেনি? তাহলে হয়ত কোন বন্ধুর বা আত্মীয়ের বাড়ি গেছে?
    কার বাড়ি গেছে? তা আমি কী করে জানব?
    এসবের পর যা হওয়ার তাই হল। আমি মুখ ঘুরিয়ে বসেছিলাম। কিন্তু বেশিক্ষণ এই যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় নি। একজন মহিলা পুলিশ অফিসার, কাঁধে দুটো তারা লাগানো, আর দুজন মোটাসোটা মেয়ে কনস্টেবল আমাকে অন্য একটা ছোট ঘরে নিয়ে গেল।
  • সে | 203.108.233.65 | ১৯ নভেম্বর ২০১৪ ১১:৪৬650935
  • ভয়ঙ্কর
  • ranjan roy | 132.176.6.164 | ১৯ নভেম্বর ২০১৪ ১৬:৫৬650936
  • ঘরটা একটু ছোট। একটা ছোট টেবিল আর চেয়ার। একটা মাত্র বাল্ব। হলদেটে আলো ছড়াচ্ছে। টেবিলে একটা ঢাকনা দেওয়া জলের গেলাস, আর কিছু নেই।
    না, আরও কিছু আছে। চোখ সয়ে গেলে দেখতে পেলাম একপাশের দেয়ালে একটা লোহার জাল দেয়া দরজা। পেছনে অন্ধকার। দরজার ওপরে দেয়ালে কালো রং দিয়ে লেখা "মহিলা বন্দীগৃহ"।
    -- হ্যাঁ, ওহি তুমহারা রাত্রি নিবাস, তেরি রৈন বসেরা। ভোজন তো মিল গয়া; পানি পিয়েগি?
    আমি মাথা নাড়ি।
    -- ঠিক হ্যায়, বইঠো। আভি কাম কী বাত হোগী।
    আমি এদিক ওদিক তাকাই। কোথায় বসব? চেয়ার তো একটাই। সেদিকে এগোতেই ওরা হেসে ওঠে। আমি মাটিতে বসতে যাই। ওরা আবার হেসে ওঠে।
    -- হাঁ, হাঁ, রানীজি -- চেয়ার পে হী বৈঠিয়ে। ও গানা শুনি হ্যায়? " তু রূপ কী রানী, ম্যয়ঁ চোরোঁ কী রাজা!"
    আমি ভ্যাবাচাকা হয়ে চেয়ারে বসতে যাই , কিন্তু পেছন থেকে একজন মহিলা কনস্টেবল ক্ষিপ্র হাতে চেয়ারটা সরিয়ে দেয়। আমি সোজা চিৎপাৎ। বেশ লাগে , শুধু কোমরে আর পিঠে নয়, পেটের ভেতর থেকে একটা চোরা ব্যথা চাগিয়ে উঠছে।
    এরা কী চায়?
    অবাঙ্গালী অফিসারটির চোখের কোণায় সূর্মাটানা। বেশ লম্বা। আমি মাটিতে, ও আমার পাশে এসে দাঁড়ায়।
    শোলে সিনেমার নকল করে বলে-- কিতনে আদমী থে?
    মানে? আমি বুঝতে পারি না, কী বলব!
    একজন মহিলা পুলিশ এসে আমার চুল টেনে ধরে -- বল না মাগি! আরে কাল রাত্তিরে কতজনের সঙ্গে শুয়েছিলি সেটাই ম্যাডাম জনতে চাইছেন!
    মাগি? এই শব্দটা শুনলে আমার মাথায় আগুন ধরে যায়। পুরুষেরা এই একটি শব্দে কতটা তাচ্ছিল্য আর অপমান ছুঁড়ে দিতে পারে তা শুধু মেয়েরাই বোঝে।
    লম্বা অফিসার ওকে সরে যেতে বলেন। তারপর আমার মাথায় হাত বোলাতে থাকেন। হিন্দিতে ঘুমপাড়ানি গানের মত বলতে থাকেন।
    ---- লেগেছে না? সত্যি, এই সেপাইগুলো অশিক্ষিত। এদের খালি চোর--ডাকাত --গুন্ডা-বদমাইশ নিয়ে কারবার। একেবারে ক্যাওড়া স্বভাব। তোমার মত ভাল ঘরের মেয়েছেলের সঙ্গে কথা বলার তমিজ নেই। রাত্তিরে শোয়ার কথাটা ঠিক বলেনি। যত অশিক্ষিতের দল।
    আচ্ছা, তুমি শুধু এইটুকু বল যে কাল রাত্তিরে কয়জনের জন্যে রান্না করেছিলে? তুমি এত ভাল দেখতে, তো রান্না তো ভালই কর নিশ্চয়। সত্যম , কার্তিক , নারায়ণের দল খুব চেটেপুটে খেয়েছে।
    আচ্ছা, কার্তিক তোমাকে কী বলে ডাকে? বৌদি না ভৌজাই?
    আচ্ছা। এতগুলো লোকের রান্না ,আবার বাসন ধোয়া ! তোমার পিঠ ব্যথা করেনি?
    সত্যমের তো চোখ অপারেশন হয়েছিল, এখন বইটই পড়তে পারে? বিনা চ্শমায়?
    -- না, না! চশমা লাগে।

    এ আমি কী বলে ফেললাম! আমার কি মাথা খারাপ হল? কিন্তু একবার মুখ খুললে থামা যায় না।
    -- না, বাসনপত্তর তো নারায়ণ ধুয়ে দিয়েছিল। মাংস রেঁধেছিল বড়কা কমরেড। আমি শুধু দুপুরের খিচুড়ি আর মিটিংয়ের মাঝে মাঝে চা!

    একী! আমার মুখ দিয়ে এসব কথা কে বলিয়ে নিচ্ছে? এতে তো সমীরদার ক্ষতি হতে পারে।
    অফিসারের চোখের চাউনি আরও তীক্ষ্ণ হয়,কিন্তু মুখ হাসতে থাকে।
    --- তাহলে শান্তিরানী! তুমি স্বীকার করছ যে কাল তোমার বাড়িতে মিটিং হয়েছিল। তুমি খিচুড়ি রেঁধে ছিলে। আর সেই বৈঠকে সত্যম, নারায়ণ, ছিল। হল?
    আর কে কে ছিল? ক'জন? কী কী প্ল্যান হল?

    আমি এবার মুখে কুলুপ আঁটি। যা হবার হয়ে গেছে। আর আমি কিছু বলছি না। একটা কথাও না।
    সেই মাঝবয়সী মুটকি খেঁকিয়ে ওঠে।
    -- আরে মাগী, বলেই ফেল কাল রাত্তিরে কয়্জন শুয়েছিল? ওদিকে তোর নাগরকে কম্বল ধোলাই দিচ্ছে মুখ বেঁধে। তুই মুখ খুললে তোর নাগর বেঁচে যাবে। দূর! মাগীর ঠ্যাকার দেখ, বড্ড ন্যাকা!

    আবার মাগী! আমার ভেতরে ভেতরে কিছু একটা হতে থাকে। ধীরে ধীরে লতাকে ঠেলে সরিয়ে সামনে এগিয়ে আসে শান্তি। সেই দশবছরের শান্তি। যে মেয়েটা দাদাকে মার খেতে দেখে একটা বয়সে বড় ছেলেকে ছাতার বাঁট দিয়ে মেরে পাট পাট করে দিয়েছিল।
  • সে | 203.108.233.65 | ১৯ নভেম্বর ২০১৪ ১৭:০২650937
  • পড়ছি।
  • de | 24.139.119.171 | ১৯ নভেম্বর ২০১৪ ১৭:১৪650938
  • আম্মো!
  • ranjan roy | 132.176.6.164 | ১৯ নভেম্বর ২০১৪ ২০:১৭650939
  • -- আরে হারামজাদীর মুখের চেহারা দেখ! ভ্স্ম করে ফেলবে নাকি?
    শোন, ভালয় ভালয় বলে দে সত্যম আর তার শাগরেদরা কোন গর্তে লুকিয়ে আছে। তোর দুপায়ের ফাঁকে?
    -- দূর মাগী! এই রুলটা ঢুকিয়ে দেব? মজা দেখবি?

    আচমকা শান্তি দাঁড়িয়ে পড়ে। ছুঁড়ে ফেলে দেয় ওর স্কুলের ভারি ব্যাগ। ছাতার বাঁট শক্ত করে ধরে চোখে চোখ রাখে। ওর দাদাকে ওরা মারছে! একটা হেস্তনেস্ত হয়ে যাক।
    ভেতর থেকে পিত্তবমির মত উঠে আসতে থাকে যত মাইনিং শহরের বস্তিতে শেখা গালাগাল গুলো।
    -- অ্যাই! মাগী বলছিস কাকে রে! শালী মুটকি! তোর মা মাগী, তোর ঠাকুমা মাগী, তোর মেয়ে মাগী! আমি হারামজাদী! তু হ্যায় হরাম কা পয়দা! শুয়ার অউর গাধী কী পয়দা! শালী কুতিয়া! রুল ডালেগী! করকে দেখ! ম্যাঁয় তেরি চুতর সে ডালকর তেরি মুঁহ সে নিকাল নহীঁ লিয়া তো একবাপ কা পয়দা নহীঁ হুঁ।
    আমার শরীরের সমস্ত ব্যথা চলে গেছে। সমস্ত ভয় কেটে গেছে। অনেক ভয়ে ভয়ে থেকেছি, আর নয়। কত ভয়? মার খাওয়ার ভয়, খেতে না পাওয়ার ভয়, ইজ্জত হারানোর ভয়, সমীরদাকে হারানোর ভয়! এখন কোন ভয় নেই। আমি পেরেছি, ব্যস্‌।

    ওর এই দুঃসাহসে গোটা ঘর থমকে গেছে। নিজেদের মধ্যে চোখ চাওয়াচাওয়ি করছে। কয়েক মুহুর্ত। নিজের আনন্দে মশগুল শান্তিলতা ওদের চোখের ইশারা দেখতে পায় না।
    পেছন থেকে একটা প্রচন্ড আঘাতে ও মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। জ্ঞান হারানোর আগে টের পায় ওই মুটকি মেয়েপুলিশ ওর পেটের ওপর চেপে বসে চুলের মুঠি ধরে মাটিতে মাথা ঠুকে দিচ্ছে।
    হ্যাঁ, জ্ঞান হারিয়ে ফেলায় টের পাইনি আমার দু'পায়ের ভেতর থেকে একটা গাঢ় রক্তের ধারা দ্রুত মেজেতে ছড়িয়ে পড়ছে। সেই অবস্থায় আমাকে পুলিশ প্রহরায় হাসপাতালে পাঠানো হয়। ডাক্তার পুলিশ অফিসারকে খুব বকাবকি করেন। আমার নাকি মিস্‌ক্যারেজ হয়েছে!
    কী করে হল? সমীরদার ওষুধ কাজ করে নি? কখনো আমরা অসতর্ক ছিলাম কি? অবশ্যি দু'মাস হল বন্ধ হয়েছিল, সমীরদাকে জানাই নি। আসলে তেমন গুরুত্ব দিইনি।নিশ্চিন্ত ছিলাম। ও'রম এক- আধবার হয়েই থাকে।

    বহুমাস পরে ছত্তিশগড়ে সমীরদা পুরনো দিনের কথা ভাবতে ভাবতে ইমোশনাল হয়ে বলেছিল -- লতা, বিপ্লবের আগুনরাঙা দিনগুলোতে তোমার সন্তানের জন্ম নিতে না পারাটা বেশ প্রতীকের মত। যতদিন আমরা এই নোংরা পৃথিবীকে আমাদের সন্তানের বাসযোগ্য করে তুলতে না পারি ততদিন ওদের না আনাই ভাল।
    এই গানটা শোনঃ
    " অহল্যা মা, তোমার সন্তান জনম নিল না।
    ঘরে ঘরে সেই সন্তানের প্রসব যন্ত্রণা"।

    কিন্তু আমি সান্ত্বনা পাইনি। আমার মন ভর্রে উঠেছিল এক তেতো অনুভূতিতে। না, পুরুষেরা আমাদের বোঝে না। না অহল্যা মাকে, না প্রসব যন্ত্রণাকে।
    আর সমীরদাও একজন পুরুষ।
  • ranjan roy | 132.176.6.164 | ১৯ নভেম্বর ২০১৪ ২৩:৩৫650940
  • -- সমীর ডাক্তার! শান্তিলতা-আ-আ-আ!
    চমকে উঠি এবং তত্ক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে পড়ি। আমাদের নাম ডাকছে পেশকার! বুকের ভেতরে ধুকধুকি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি।একজনের ইশারায় পুলিশের ইনস্পেক্টর আমাকেও কাঠগড়ায় ঢুকিয়ে দিল। সমীরদা আগে থেকেই ওখানে।
    হাকিমের পাশ থেকে কেউ জোরে জোরে বলে সরকার বাহাদুর বনাম সমীর ডাক্তার, শান্তিলতা, সত্যম, নারায়ণ, কার্তিক ও অন্যেরা।
    হাকিম কোনদিকে না তাকিয়ে বলেন -- আসামীরা হাজির?
    --হুজুর শুধু দুজন, সমীর ডাক্তার ও শান্তিলতা। বাকি সব ফেরার। এখনো ধরা পড়েনি।
    হাকিমের ইশারায় একজন জোরে জোরে পড়ে শোনায়-- তোমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হল তোমরা সত্যম আদি কয়েকজন রাষ্ট্রবিরোধী নিষিদ্ধ নকশালপন্থী সংগঠনের সদস্যের সঙ্গে মিলে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্যে এই এলাকার লোকজনকে উত্তেজিত করছ; গোপন সন্ত্রাসবাদী সংগঠন তৈরি করেছ,; অবৈধ ভাবে হাতিয়ার সংগ্রহ, অস্ত্রচালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া ইত্যাদি কাজে লিপ্ত রয়েছ। সেই উদ্দেশ্য তোমরা অমুক অমুক গাঁয়ের লোকজনকে নির্বাচন বয়কট করার জন্যে চাপ দিয়েছ। তোমাদের আস্তানা থেকে অমুক তারিখে তল্লাসী চালিয়ে পাইপগান, ছুরি, পিকরিক অ্যাসিড ও নিষিদ্ধ নকশালপন্থী সাহিত্য বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
    উপরোক্ত ভিত্তিতে তোমাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহ, হিংসার জন্যে জনতাকে প্ররোচিত করা, ফেরার লোকজনকে আশ্রয় দেওয়া, বেআইনী অস্ত্র সংগ্রহ , নিষিদ্ধ সাহিত্য রাখা ইত্যাদি অপরাধের প্রথম দৃষ্টিতে প্রমাণ পাওয়ায় ভারতীয় দন্ডসংহিতার অমুক অমুক ধারা ও ভারতীয় অস্ত্র আইনের অমুক অমুক ধারায় মামলা রুজু করা হইয়াছে।
    তোমরা কি তোমাদের বিরুদ্ধে আনা এইসব অভিযোগ স্বীকার করছ? আমি কী বলব বুঝতে না পেরে চুপ মেরে যাই।
    হাকিম আমাদের দিকে কড়া চোখে তাকান।
    -- বল, তোমরা দোষী না নির্দোষ?
    --- হুজুর, নির্দোষ।
    সমীরদা বলে ওঠে।
    হাকিম যেন এইরকম জবাব শুনেই অভ্যস্ত। বুঝদারের মত মাথা নেড়ে বলেন।
    -- সরকার পক্ষের থেকে কে আছেন?
    একজন আধবুড়ো কালো কোট কফে ধরা গলায় বলে ওঠে-- আমি, ইয়োর অনার!
    -- বেশ, আপনি তৈরি?
    -- হ্যাঁ, ইয়োর অনার!
    --- আসামী পক্ষের থেকে কে ?
    সব চুপচাপ।
    হাকিম সোজা সমীরদার দিকে তাকান?
    --- তোমাদের উকিল কই?
    -- নেই হুজুর! আমাদের তিনদিন আগে শেষরাতে ধরে এনে তিনদিন ধরে টর্চার করেছে, হুজুর! ফলে আমার স্ত্রীর গর্ভপাত হয়ে গেছে। উকিল নেওয়ার সুযোগ কোথায়? এখানে আমাদের কেউ নেই, কাউকে চিনি না।
    -- ঠিক আছে। এসব কথা শপথ নিয়ে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলবেন, তখন দেখব।
    পাবলিক প্রসিকিউটর! আপনি এখানকার লিগাল এইড প্যানেলের থেকে কোন উকিল আসামীদের জন্যে নিযুক্ত করুন। তারপর নিয়মিত শুনানি হবে। দুদিনের জন্যে মামলা মুলতুবি থাকবে। পরের কেস।
    -- না হুজুর!
    সমীরদা চেঁচিয়ে উঠেছে। সবাই অবাক ।
    -- কী ব্যাপার?
    হাকিম বেশ বিরক্ত।
    -- আমরা উকিল নেব না হুজুর!
    --- মানে?
    --- আমরা কোন পেশাদার অপরাধী নই। গরীবের সাহায্য করি। জ্ঞানতঃ কোন অপারাধ করিনি। পুলিশ মিথ্যে মামলা সাজিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি যে সত্যিটা বললে আপনার আদালতে ন্যায় বিচার পাব। তাই আমাদের ডিফেন্স আমরাই। কোন উকিল লাগবে না।
    আজকেই শুনানি শুরু হোক হুজুর। নইলে এই সুযোগে পুলিশ লক আপে রেখে আমাদের , বিশেষ করে আমার স্ত্রীর ওপর আরও অত্যাচার করবে। তাই আমরা চাইছি মামলা আজকেই শুরু হোক।
  • সিকি | ১৯ নভেম্বর ২০১৪ ২৩:৩৯650942
  • মনেপ্রাণে প্রার্থনা করছি, মামলা আজকেই শুরু হোক। হোক।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন