এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বেঁচে আছিঃ প্রেমে-অপ্রেমে

    ranjan roy
    অন্যান্য | ০১ অক্টোবর ২০১৪ | ২২০৭৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Atoz | 161.141.84.164 | ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ০৪:২১651052
  • আরে বিপ্লব টিপ্লব কই? এতো পেরেম্পীরিতদোজবরতেজবর কত্তে কত্তেই বেলা গেল!!!
    লজিকও খুব কম! আরে মিশন স্কুলেই যদি মেয়েকে পড়াবে, তবে পড়াশোনা কত্তে না দিয়ে ঘরের দাসীবৃত্তি করানো কেন? তাইলে তো সরকারী পাঠশালের গোয়ালে ছেড়ে দিলেই পারতো! সেই যখন চোদ্দো বছরেই গলায় হারের দড়ি দিয়ে বিয়ে দিয়ে দেবে?
    নাহ, লজিক খাটছে না। কোথাও একটা লুপহোল থেকে যাচ্ছে।
    আর, সৎমা বলে কোথাও উল্লেখ ও তো দেখছি মা টির। অথচ ব্যবহার দেখে তো মনে হচ্ছে শয়তান টাইপের সৎমা। আর বাপ তো আরো এককাঠি উপরে।
    বাপটা দোজবরে বলে উল্লেখ দেখছি, তাহলে এই মেয়ে আগের পক্ষের কি? অত্যাচারী মা টি সৎমাই তো তাইলে শেষমেষ?
  • ranjan roy | 24.97.128.129 | ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ০৪:৩৫651063
  • ৪)
    না, সমীরদা পরের দিনও ফিরল না। সকাল ৯ টা নাগাদ তেলেগু রবি আমার কাপড়ের থলিটা নিয়ে বলল--চল। দুটো পাড়া পেরিয়ে এলাম আরেক সমর্থকের বাড়ি। সেখানে ভেতরের ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে ও বলল আমি বা সমীর না আসা অব্দি বাড়ির বাইরে যেও না।
    এ বাড়িতে কেউ কোন প্রশ্ন করল না। একটা চৌকি পেলাম শুতে, আর দড়ি টাঙিয়ে কাপড় মেললাম। কিন্তু ওদের বাথরুম-পায়খানা বড্ড অপরিষ্কার। গা গুলিয়ে ওঠে, চৌবাচ্চায় ছ্যাতলা ধরা। আর সবার খাওয়ার পর এঁটো বাসন ডাঁই করে কুয়োর পাড়ে রেখে বাড়ির মহিলা আমাকে ইশারা করলেন। আমি মেজে ফেললাম। তিনদিন ছিলাম। চেষ্টা করেছি মানিয়ে নিতে, কারো বোঝা না হতে। দ্বিতীয় দিন থেকে নিজে থেকেই ঘর ঝাঁট দেওয়া ও ন্যাতা দিয়ে মোছা করে দিয়েছি। কুয়োর থেকে বালতি বালতি জল টেনে তুলেছি।
    চারদিনের দিন রবি এসে আরেকটা বাড়ি নিয়ে গেল। সেখানে দেখি সমীরদা বসে আছে। আমি কেঁদে ফেললাম। ও খালি হাত ধরল। তারপর অন্য দিকে তাকিয়ে বলল-- তৈরি হয়ে নাও। জেলা সদরে যেতে হবে। সেখানে আর্য সমাজের মন্দিরে বিয়ে। সব ব্যব্স্থা হয়ে গেছে।
    বেশ বুঝতে পারলাম যে অন্য কমরেডদের সামনে লজ্জা পাচ্ছে। ওদের মধ্যে সবচেয়ে বড় যে তার বয়েস বাইশের বেশি নয়। আর কারো বিয়ে হয় নি।
    বাসে করে যেতে যেতে ও জানাল যে আমার ঘটনা নিয়ে কাল এই ছোট্ট শহরের বাঙালী সমাজে একটা বৈঠক মত হয়ে গেছে। সবাই বলেছে-- সেনদা, এটা ভাল করলেন না। মেয়েকে ঘরে ফিরিয়ে নিন।
    বাবা নাকি বলেছে- ও নিজের ইচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে, একটা অপদার্থ বাউন্ডুলে কে বিয়ে করবে বলে। আমাদের মুখে চুনকালি লেপে দিয়েছে। ওকে জোর করে ফিরিয়ে এন্ব নাকি?
    সেই বৈঠকে সমীরের বাবা-মাও ছিল। তাঁরাও বলেছেন যে ওই মেয়ে আমার ছেলেকে তুক করেছে। এখন ছেলেটা পড়াশুনো ছেড়ে ফ্যা-ফ্যা করে ঘুরে বেড়াবে , নয়তো সংসারের ঘানি টানতে মুটে-মজদুরি করবে। ওই ছেলের সঙ্গে তাঁরাও সম্পর্ক রাখবেন না। আর অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেবৌ ঘরে তুলে শেষে কি পুলিশের হাঙ্গামায় পড়বেন?
    তাই বিয়ের পর সমীরকে পার্টির শেলটারেই যেতে হবে।
    আমার সব স্বপ্ন ধূলোয় মিশে গেল!
    নতুন বৌ হয়ে যাব শ্বশুরবাড়িতে, অন্ততঃ একটা বেনারসী! শ্বাশুড়ি আমাকে বরণ করে কপালে চুমো খেয়ে ঘরে তুলবেন। সমীরের ছোটভাই আমার সমবয়সী দেওর হবে। ওর দিদি আমার বড় ননদ, ওর ছোট দুই বোন আমার মেজ ও ছোট ননদ। আমাকে শিখিয়ে পড়িয়ে নেবে। আর শ্বশুর? শুনেছি দেবতুল্য লোক। ট্রেড ইউনিয়ন করেন। এখানকার লোকজন বেশ মান্যিগণ্যি করে।
    এসব কিছুই হবে না? এ আবার কিরকম বিয়ে? আমি কি খুব বেশি কিছু চেয়েছি? কেন ভগবান আমার জন্যেই এত নির্দয়?
    আর্য সমাজের মন্দিরে ঢোকার আগে সমীরদা বলল-- শোন, তোমার বয়স আমি আঠেরো বছর ছ'মাস লিখিয়েছি। জিগ্যেস করলে তাই বলবে, মনে থাকে যেন।
    হেঠাকুর! আবার সেই বয়সের জন্যে মিথ্যে বলা। সেবার তো পাত্রপক্ষ আমার মিথ্যে ধরে ফেলেছিল। এদের রেজিস্ট্রার কি পারবে না?
    --- ভয় পেও না। আমার কমরেডরা সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। কোন সমস্যা হবে না।
    সমস্যা সত্যি হয় নি। ভদ্রলোক খাতার থেকে চোখ না তুলে জিগ্যেস করলেন-- আপনার বয়েস আঠেরো বছর ছ'মাস তো?
    আমার গলায় স্বর ফোটেনি। শুধু ঘাড় হেলিয়েই কাজ সারলাম।
  • ranjan roy | 24.97.128.129 | ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ০৪:৪৫651074
  • @A2Z,
    এটাই বিপ্লব। বোমা-গুলি-নানচাকু শুধু ঘটনা।
    ওই মা আজও জীবিত, দুমাস আগেও ওঁর হাতের রান্না খেয়েছি ঘটনাক্রমে। আজ উনি অশক্ত, আমার থেকে মাত্র দুবছরের বড়। কিন্তু একটি হারামীর হাতবাক্স, আজও। মেয়েটি ওঁর নিজের মেয়ে। পরের মেয়েটি আত্মহত্যা করে, সে অন্য গল্প।
    আর লজিক? সবকিছু আপনার-আমার লজিকে চললে তো আমরা সবাই ক্লোন হতাম বা লাইফ অতি প্রেডিক্টেবল হয়ে যেত।
    এই বয়সে যা বু্ঝছি লাইফ চলে ফাজ্জি-লজিকেঃ))))।
    তাই তো মেয়েটির গল্প বলা।
    আগেই বলেছি, এটা আদৌ কোন আন্দোলনের দলিল নয়, বরং ব্যক্তিমানুষের যন্ত্রণার গল্প।

    আন্দোলনের গল্প তো কিছুটা অসমাপ্ত "অথ নকশাল বধ কথা"য় লিখেছিলাম। লোকে বোর হচ্ছে মনে হওয়ায় বন্ধ করে দিয়েছি।
  • Atoz | 161.141.84.164 | ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ০৪:৫০651085
  • খুব সাবধানে খাবেন, হাতবাক্সের রান্না কিনা! ঃ-)
  • Atoz | 161.141.84.164 | ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ০৪:৫২651096
  • পরের মেয়েটি মানে? এনার দ্বিতীয় কন্যা? নাকি আগের পক্ষের মেয়েটি মানে সতীনের কন্যাটি?
  • ranjan roy | 24.97.128.129 | ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ০৫:১৫651107
  • কোলকাতা ! কোলকাতা! হাওড়া ব্রীজ! সিনেমায় দেখেছি, বইয়ে ছবি দেখেছি। এখন ট্রেনের জানলা দিয়ে দেখছি।
    সমীরের পার্টি ওকে হোলটাইমার হিসেবে কোলকাতায় পাঠিয়েছে। কিন্তু ট্রেন থেকে নেমে কি ভীড়, মাছির মত থিক থিক করছে মানুষ। এদিক ওদিক দেখছি, পেছন থেকে সরে যান, সরে যান বলে চেঁচামেচি, দুজন কুলি মালবোঝাই ঠেলামত কিছু নিয়ে আসছে। ও আমার হাত ধরে টেনে সরিয়ে বিরক্ত গলায় বলল-- হাঁ করে তাকিয়ে না থেকে এগিয়ে চল। হাত ছাড়লে হারিয়ে যাবে। অনেকটা হেঁটে মাছের চালানের বাক্সের আঁশটে গন্ধ এড়িয়ে বেরোলাম। বললাম-- বাথরুম যাব।
    খিঁচিয়ে উঠল,-- ট্রেনে সেরে নিতে পার নি? এখন বড় ঘড়িটার নীচে আমার কমরেড দাঁড়িয়ে আছে, যদি চলে যায়?
    অগত্যা ঘড়ির নীচে দাঁড়ালাম। তলপেট ফেটে যাচ্ছে, মুম্বাই মেলের জেনারেল কম্পার্টমেন্ট, দাঁড়িয়ে সুটকেসের ওপর বসে তবে তো হাওড়ায় এলাম। ওখানে বাথরুমের সামনে গিজগিজে ভিড় ঠেলে ঢোকে কার সাধ্য? আর বিড়ির ধোঁয়া!
    মেয়েদের সমস্যা ও কিছুই বোঝে না। বললে বলবে-- অত নাক সিঁটকিয়ো না। মেহনতী জনগণ বিড়িই খায়।
    একটা পাঞ্জাবী পরা হাল্কা দাড়িওলা ছেলে এগিয়ে এল।-- কমরে্ড রমেন?
    সমীরদা একগাল হেসে হাত বাড়িয়ে দিল। --হ্যাঁ, আমি রমেন, আর এ হল--।
    --বুঝেছি। চলুন, আগে চা খাওয়া যাক।
    চা! আমার তো এখন তখন অবস্থা। ছোট বড় দুটোই।
    বিব্রত সমীর ওরফে রমেন সেই ছেলেটিকে কিছু বলতেই সে সপ্রতিভ ভাবে বলল-- চলুন বৌদি। আপনাকে লেডিজ টয়লেট দেখিয়ে দিচ্ছি।
    বাথরুমে বসে শরীর হাল্কা হলে আমার কুলকুলিয়ে হাসি পেল। দুটো জিনিস বুঝলাম।
    এক, সমীর জানত না লেডিজ টয়লেট কোথায়, তাই বাবুর অত রাগ-রাগ। সমীরদাকে আর ভয় করছে না।
    দুই, এইসব দলে সবার আলাদা আলাদা কোড নাম থাকে, তাই সমীরদা হল রমেন। কেমন যেন গোয়ালঘরে নতুন গাই এলে মার তেল-সিঁদুরের ফোঁটা লাগিয়ে নতুন নাম রাখার মত। হি-হি।
    তারপর চ-সিঙাড়া খেয়ে আমরা বাসে উঠে মৌলালি বলে একটা মোড়ে নামলাম। সেখান থেকে হেঁটে একটা সরু গলিতে ঢুকলাম। দুদিকে নীচু নীচু ঘর। ভর দুপুর বেলায় বেশ কিছু মেয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা মারছে, দাঁত ক্যালাচ্ছে। কিন্তু অত সাজগোজ কেন? বড্ড চোখে লাগে। কোলকাতায় সবাই অমন সাজে নাকি? একটা নোনধরা বটের শিকড় বেরনো দেয়ালে টিনের প্লেট লাগানো, ইংরেজিতে লেখা-- প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রীট।
  • ranjan roy | 24.97.128.129 | ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ০৫:২১651118
  • AtoZ,
    আজ উনি করুণার পাত্র, চোখের ছানি কাটানো হল, কানে যন্তর লাগানো হল। আর "হাতবাক্স" রা আমাকে পছন্দ করে, মহা আতাক্যালানে ভাবে !
    আগের পক্ষের ইস্যু ছিল না। এর ছোটবোন অল্প বয়সেই আত্মহত্যা করে, একটু মানসিক ভাবে অপরিপক্ক ছিল, খানিকটা জড়বুদ্ধি। কিন্তু ভয়ানক পরিণতি কাম্য ছিল না। হাতবাক্স তার জন্যে অনেকটা দায়ী। সে অন্য গল্প।
  • Atoz | 161.141.84.164 | ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ০৫:৪২651129
  • কিছু যদি মনে না করেন রঞ্জন, একটা কথা বলি। এই যে গপ্পোটা লিখছেন এরকম গপ্পো আসলে হাজারে বিজারে। শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা। সেই কৎবেলের সৎমা থেকে আরম্ভ করে সিন্ডারেলা পার হয়ে আজকের হেমারমা শ্যামা-সব একই রকম। পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়ে রাজপুত্তুর এসে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে-এই আশায় তাদের সব সাজগোজ নাচগান লক্ষ্মী হয়ে ঘরকন্না শেখা। একটা মেয়েও আত্মশক্তিতে উদ্ধুদ্ধ হবার কোনো সীনেই থাকে না, নিজস্ব উত্তরণের কোনো সুরই নেই, কি রূপকথায় কি গপ্পোকথায়।

    কিন্তু ঐ ছোটো মেয়ের গপ্পোটাই আসলে নতুন রকম হতো।
  • ranjan roy | 24.97.128.129 | ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ০৮:২২651140
  • মনে করা না করার কোন গপ্পোই নেই।
    কিন্তু মেয়েটা তো আদৈ লক্ষ্মী বা সিন্ডারেলা নয়। ও তো নার্স হতে চাইত। আদৌ বিয়ে করার রোমান্টিক স্বপ্ন দেখেনি, বিপ্লব-তিপ্লব ভাবেইনি। শুধুমাত্র পরিস্থিতির স্বীকার।

    কিছু মেয়ে নকশাল আন্দোলনে স্বপ্ন দেখে বা রোমান্টিকতায় আ্ছন্ন হয়ে সামিল হয়েছিল। এ তো তাও নয়। একটা ছোট্ট মফঃস্বল শহরে নাবালিক অবস্থায় না বুঝে বিবাহিত জীবনে এল, কিছু বোঝার আগেই বিপ্লব-বিপ্লব খেলায় জড়িয়ে জীবনের আদ্দেকটা পার করে দিল।

    ধ্যাৎ, কি যা তা বকছি। আমার গল্প লেখার কথা। গল্পের মানেবই নয়। আপনার যা তা চর্বিত চর্বণ লাগতেই পারে, যত বাজে লেখা হবে তত বেশি পাঠকের আপনার মত লাগবে। নিরুপায়। এবং দুঃখিত।
  • | ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ০৮:৪৯651152
  • রঞ্জনদা,

    একটা কথা বলি। লেখার মাঝখানে কক্ষণো জাস্টিফিকেশান দিতে যাবেন না। আপনি যখনই কিছু লিখে ৫ পাবলিকের সামনে ফেলছেন তখনই সেটা 'প্রকাশ্য' কিছু। তাতে যে যা খুশী বলতে পারে, চাট্টি গালি দিতে পারে আবার 'ঋদ্ধ হলাম' বা 'আলোয় আলোয় চোখ ভরে গেল' টাইপ কিছুও বলতে পারে। আপনি লিখে যান আপনার মত। মন্তব্যগুলো পড়ে কিছু প্রকাশভঙ্গী বদলানোর ইচ্ছা হলে বদলান। যদি মনে হয় মন্তব্যগুলো খুব ডিস্টার্ব করছে তাহলে এখনের মত স্ক্রোল করে গিয়ে শেষ করে একবারে পড়ে দেখুন।
    কিন্তু নিজের মত লিখে যান।
  • নীঃপাঃ | 183.3.44.106 | ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ০৯:৫৬651163
  • সব কিছুতেই বিপ্লব থাকতে হবে নাকি ? না হলে বুঝি গল্প হয় না? মশায়ের এত লজিক লাগলে অ্যাসেম্বলিতে কোড লিখুন বরং , গল্প পড়ার দরকার কি ঃ)

    "দ" কে অক্ষরে অক্ষরে "ক" দিলাম।

    রঞ্জনদা, এই লেখাটা অসাধারণ লাগছে, বিশেষ করে বর্ণনা ও বুনোট। এবং আমার বিশ্বাস আমার মতন ল্যালা পাব্লিকদের একই রকম ভালো লাগছে, তাই হাত চালিয়ে লিখে যান একদম নিজের মতন করে, কাউকে কোন জাস্টিফিকেশান দেওয়ার দরকার নেই।
  • kiki | 125.124.41.34 | ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ১০:২৭651174
  • রঞ্জনদা,
    খুব মন দিয়ে পড়ছি। সময় পেলেই লিখে ফেলুন। আতোজ ছোট্ট মেয়ে। আমাদের মতন বয়সে আসলে বুঝবে জীবন টা ওরকম হিসেব মেনে চলে না। তবে এও সত্যি মেয়েদের কেবল ভালো হতে বলে পরনির্ভর আর নিজেদের সুবিধের একটা মেশিন করে তোলা হয়,(এখন ও সম্পুর্ন স্বনির্ভর, মনে ও ক্ষমতায় , অন্তত আমাদের দেশে এমন সংখ্যক মেয়ের সংখ্যা বেশ বেশ কম) আতোজের জ্বালার জায়গাটাও বুঝি। বড়ই ন্যায্য জ্বালা।
  • সে | 203.108.233.65 | ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ১৩:১৪651185
  • ও রঞ্জনদা, লিখুন না।
  • ranjan roy | 24.97.11.105 | ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ১৭:৪৫651196
  • দ আমার চল্লিশ বছর বাদে বাংলা লেখার দ্বিতীয় গুরু। আমি আবার স্মরণ করলাম।ঃ))
    আর A2Z এর ফীলিং কে রেসপে্ক্ট।
    লেখা শেষের আগে কোন কমেন্ট করব না, মাক্কালী!!
    এখন অফিসে। পাপী পেট। রাত ৯টায় লিখব।
  • Atoz | 161.141.84.164 | ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ২৩:৩৭651207
  • শুধু তাই না কিকি, দেখবে চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রেও খুব অদ্ভুত বোকা বোকা আর ন্যাকা ন্যাকা দেখানো হয় মেয়েদের। ইচ্ছাকৃত কিনা কে জানে।
    আর দুঃখকে গ্লোরিফাই করা-সেই জনমদুখিনী সীতা ইমেজ টাইপ-চলছে চলছে চলছে।
    যেন আগে থেকেই ঠিক করে রাখা এই ন্যাকা আর বোকাগুলো লুজার লুজার লুজার, জন্ম থেকেই এরা লুজার হবার জন্যই তৈরী ।
    অথচ বাস্তবতা কিন্তু অন্য কথা বলে, মরিয়ম মীর্জাখানিরা কিন্তু ঠিক বেরিয়ে আসে ঝড় ভেদ করে, মেরি কুরীরা যুদ্ধ ভেদ করে বেরিয়ে আসে- কিন্তু গপ্পে সেই এক ন্যাকাসুন্দরী বোকাসুন্দরী ইমেজ দেখায়।
    চার যুগের জনাদুখিনী গো ও ও ও সীতা গো ও ও ও।
    অসহ্য।
  • sswarnendu | 198.154.74.31 | ১০ অক্টোবর ২০১৪ ০২:২৩651208
  • না ইয়ে মানে...
    গল্পের নায়িকা আর মরিয়ম মীর্জাখানি কিমবা মেরি কুরীদের অর্থনৈতিক অবস্থা বোধহয় ঠিক এক নয়।
  • Atoz | 161.141.84.120 | ১০ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০৫651209
  • ভুলে যাবেন্না, এই মেয়ের বাপ সুপারভাইজার আর মেয়েটাকে পড়াতো মিশনারি স্কুলে। টাকার জন্য কিছু আটকাচ্ছিল বলে তো খুব একটা মনে হলো না যদি না কিছু মিস করে থাকি।
    আর এফ ওয়াই আই, মেরী কুরীরা খুব ধনী ছিলেন বলে মনে হয় না, এক পর্যায়ে মেরীকে পরের বাড়ীতে বাচ্চাদের দেখাশোনার কাজ নিয়ে নিজের দিদির পড়ার খরচ যোগাড় করতে হয়েছিল। প্রায় পরিচারিকার পর্যায়ে কাজ করতে হয়েছিল। পরে দিদি ডাক্তারি পাশ করে বোনকে নিজের কাছে নিয়ে গিয়ে পরবর্তী পড়াশোনার ব্যব্স্থা করেছিলেন। এইরকম পরিকল্পনা করেই বোনেরা কাজ করেছিলেন। এত রকম প্রতিকূলতা উত্তীর্ণ হয়ে তবে মেরী এগোতে পারলেন। ফুলে ঢাকা পথ তো নয় দুনিয়া।
  • sswarnendu | 198.154.74.31 | ১০ অক্টোবর ২০১৪ ০৫:২৪651210
  • ফুলে ঢাকা পথ বলতে কিন্তু সত্যিই বলতে চাইনি... বিশ্বাস করুন, আমি অঙ্কের ছাত্র ... অন্তত মরিয়ম মীর্জাখানির পথ ফুলে ঢাকা কেউ বললে ব্যাপার হাতাহাতি অবধি গড়াতে পারে....
    "টাকার জন্য কিছু আটকাচ্ছিল বলে তো খুব একটা মনে হলো না যদি না কিছু মিস করে থাকি।"--নাহ, এতে আপনি কিছুই মিস করেন নি। আমি আসলে শুধু টাকার কথা বলতেও চাইনি.... socio-cultural এর বাংলা লিখতে ল্যাদের ফলে এ বিপত্তি.... মানে মোদ্দা কথায় গল্পের নায়িকার চরিত্র চিত্রণ খুব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত লাগেনি, বরং কিছুটা স্বাভাবিকই লেগেছে....ওয়ারেন বাফেট আছে বলে কি কেউ গরিব ছেলের গল্প লেখেনা?
  • Atoz | 161.141.84.120 | ১০ অক্টোবর ২০১৪ ০৫:৪০651211
  • ঐভাবে লুজার লুজার লুজার -ঐভাবে ন্যাকামি বোকামি দেখানো এইটাতেই আপত্তি।
    ছেলেদের ক্ষেত্রে দেখবেন ন্যাকামি প্রোমোট করা হয় না, নেগেটিভ অনেক কিছু দেখানো হয়, শয়তানি দেখানো হয় নিষ্ঠুরতা দেখানো হয়, কিন্তু ঐ যে জনমদুখিনী দেখিয়ে সাফার করাকে গ্লোরিফাই করা, এটা ছেলেদের ক্ষেত্রে দেখায় না। বরং দেখায় প্রতিকূলতা পার হয়ে লড়ে কীভাবে সেই সাফারিং থেকে সে বেরোলো জয়ী হলো। এমনকি জয়ী যদি সে নাও হয় অন্যভাবে বৃহত্তর মহত্তর কিছু করে দেখানো হয়।
    কিন্তু মেয়েদের চরিত্র নিয়ে লিখতে বসলে ঐ গ্যাদগ্যাদে ন্যাকামো আর বোকামো আর পরিশেষে লুজার হওয়া-এই ক্লিশে প্লট থেকে আর বেরোতে পারে না। ঐ বর আসবে এখুনি নিয়ে যাবে তখুনি র নানা ভার্সন।
    এই অপমানেই আপত্তি।
    একটা ছেলেকে ঐখানে দাঁড় করান, বৌ আসবে এখুনি নিয়ে যাবে তখুনি করে ছড়া বলুন, ঐভাবে তাকে অপেক্ষায় রাখুন কবে উদ্ধারকর্ত্রী এসে ঘোড়ায় তুলে নিয়ে যাবে-তবে বুঝতে পারবেন আপত্তিটা কোনখানে।
  • Atoz | 161.141.84.120 | ১০ অক্টোবর ২০১৪ ০৬:২৪651213
  • এই তো একজন লোক এই সাইটেই সেদিন কইলেন তিনি এক বিজ্ঞাপণ দেখে খুব চটে রেগে ক্ষেপে বোম হয়ে গিয়েছিলেন। পাত্রী চাই কলামে এক ছেলে বিজ্ঞাপণ দিয়েছিল যে, সে গরীবের ছেলে। বড়োলোকের প্রতিবন্ধী(কানা খোঁড়া বোবা কালা ) মেয়েকে বিয়ে করতে চায় ও ঘরজামাই হতে চায়।
    ভাবুন, প্রায় প্রতিটি স্বাভিমান ওয়ালা পুরুষ এতে রেগে ক্ষেপে যাবেনই।
    এবারে উল্টে ভেবে দেখুন এই জিনিসটাই উল্টো জেন্ডারের ক্ষেত্রে কীভাবে নির্বিকারে নেন। বর আসবে এখুনি নিয়ে যাবে তখুনি। ঘর-বৌ করে উদ্ধার করবে।
  • jhiki | 233.255.230.230 | ১০ অক্টোবর ২০১৪ ০৭:৪৫651214
  • এতজ অসাধারণ!

    তবে ন্যাকা-বোকা মেয়েরা শুধু গল্পের চরিত্রই না, বাস্তবেও এদেরকে দেখা যায়। প্রিন্স চার্মিং-কে বিয়ে করা আর বিয়ের পর সেই প্রিন্স চার্মিং-এর হাতে নিজের সবকিছু (চুল কতটা লম্বা থাকবে সেই সিদ্ধান্তও) ছেড়ে দিয়ে পরম গৌরবে সেগুলোর প্রচার করা মেয়ে একটু চোখকান খোলা রাখলেই দেখতে পাবে।

    যদিও রঞ্জনদার লেখনীর জন্য গল্পটা পড়তে খুবই ভালো লাগছে ঃ)
  • Atoz | 161.141.84.120 | ১০ অক্টোবর ২০১৪ ০৭:৪৯651215
  • ঝিকি,
    সূক্ষ্মভাবে ও স্থূলভাবে সেটাই যে চতুর্দিকে প্রোমোট করা হচ্ছে।
    মানুষ তো শেখে চারপাশ থেকেই, পরিবেশ থেকে, পাশের মানুষদের থেকে, সমাজ থেকে- সেই হিসাবে নিজেকে চেপে বেঁকিয়ে দুমড়ে অথবা খুলেমেলে মানিয়ে নেয়।
  • jhiki | 233.255.230.230 | ১০ অক্টোবর ২০১৪ ০৮:১০651216
  • এতজ, তোমার এই কথাটা পুরোপুরি মানতে পারলামনা, তবে রঞ্জনদার টই নষ্ট করে এখানে আর তর্ক করব না... এমনিতেও এ তর্কের শেষ নেই, সেই পিটিদা-বুজী-মিডিয়া-ছাগল জনগণ ধরণের গোল গোল তর্ক হবে ঃ)
  • Atoz | 161.141.84.164 | ১০ অক্টোবর ২০১৪ ০৮:১১651217
  • ঠিক বলেছ। এই তর্ক আসলে একবার শুরু হলে একেবারে সেই শামাপোকা কেস দাঁড়াবে। ঃ-)
  • ranjan roy | 24.97.28.253 | ১০ অক্টোবর ২০১৪ ০৮:৪৩651218
  • দু'পা পাথুরে সিঁড়ি মাড়িয়ে উঠে কাঠের ফ্রেমে টিনের দরজা। বাইরে ও ভেতরে এক একটা করে ছিটকিনি ও শেকল। একচিলতে ঘর। অনেক উঁচুতে একটা ঘুলঘুলি। পেছনে আর একটা দরজা , খুললেই নোংরা জলের নালিতে পা পড়তে পারে। একটু ডিঙিয়ে পা ফেলতে হয়।
    জানলা নেই, আলো-বাতাস যা আসার ওই ঘুলঘুলি দিয়েই আসে। এর মধ্যেই কাগজ পেতে আমাদের একটা সুটকেস ও ব্যাগ। দেয়ালের পেরেক থেকে ঝোলে মাকালী, দূর্গা ও নানান ক্যালেন্ডার থেকে কাটা ছবি।
    সমীরদাকে বলি-- আমায় একটা মা-সরস্বতীর ছবি এনে দেবে ?
    ও অবাক হয়ে আমাকে দেখে , কিছু বলে না।
    একটা হলদে বাল্ব, যতটুকু আলো দেয়। যতদূর মনে আছে সময়টা ১৯৮৬র আশপাশ। মাঝে মধ্যেই আলো চলে যেত।
    কাপড় চোপড় ধুতে সেই নালি ডিঙিয়ে ওপাশে একফালি শান বাঁধানো জায়গা, পাশে একটা আধ বোজা কুয়ো। কিন্তু কর্পোরেশনের নল আছে, ট্যাপ নেই। যখন জল আসে তখন আশপাশের ঘরের থেকে মেয়েরা এসে জল ধরে নিয়ে যায়।
    কাপড়চোপড় ঘরের মধ্যেই মেলে দিই।
    এর মধ্যেই জনতা স্টোভে রান্না করি ছোট হাঁড়িতে চাল ডাল ফুটিয়ে নেই। সাদা এনামেলের থালায় খাই। চা হয় না। ঘরের ভাড়া মাসে চল্লিশ টাকা।
    এইরকম সারি সারি গায়ে লাগা অনেকগুলো ঘর।
    বেশির ভাগ ঘরে শুধু মেয়েছেলে। সবাই পেছনের নালির পাশে চান করি, কাপড় ধুই আর হ্যাঁ, দশটা ঘরের জন্যে বরাদ্দ একটা পায়খানা। আমি ও সমীরদা সাতসকালেই সেসব সেরে নিই।
    এখানেই সেই পাতলা দাড়ির কমরেড আমাদের রেখে চলে গেল।
    মাসখানেক কাটল একই রকম বাঁধা রুটিনে। সকাল বেলায় পাড়াটা অস্বাভাবিক শান্ত থাকে। আমরা কথা বলি। আমি রান্না করি। চাল-কয়েক দানা ডাল আর দুটুকরো আলু। খাওয়ার সময় লংকা ও একটুকরো পেঁয়াজ।
    ও গ্রোগ্রাসে খায়, আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি। ও চলে যায়। পার্টির কাজে। বারবার সাবধান করে যায়-- অচেনা লোক ডাকলে সাড়া দেবে না। দরজা একদম খুলবে না।
    ও চলে গেলে আমি খেতে বসি, পেট ভরে না। হাঁড়ি চেটে চেটে সাফ করে ফেলি। তারপর ওর কথাগুলো ভাবতে থাকি। কত কথা বলে!
    কিছুই বুঝতে পারি না। তিন-চারটে দাঁতভাঙা শব্দ বার বার ঘুরে ফিরে আসে--- বুর্জোয়া, ক্যাপিটালিস্ট, প্রোলেতারিয়েত, সাম্রাজ্যবাদ।
    ঘুম এসে যায় এই গরমেও। আবার ঘুম ভাঙে বেলা চড়লে। তখন জেগে উঠেছে এই পাড়া। রাস্তায় অনেক রকম শব্দ, রিকশাওলার ঠুন-ঠুন, ঠেলাওলার তফাৎ যাও, মাছ-দুধ-তরকারিওলার হাঁকডাক।
    আর ঘরের পেছনে নালির পাশে জল ভরতে কাপড় ধুতে ব্যস্ত মেয়েদের চেঁচামেচি, হি-হি হাসি, গালাগালি।
    প্রথম সপ্তাহে ওরা পেছনের দরজা দিয়ে এসে আলাপ করার চেষ্টা করেছিল; আমি এড়িয়ে গেছি, সমীরদা মানা করেছে।
    দরজা বন্ধ করতে করতে শুনলাম একজন বলছে -- এঃ ঠ্যাকার আছে। আর একজন কেউ বলছে
    -- ভালো রে ভালো করে গেলাম কেলোর মার কাচে,
    কেলোর মা বলল আমার ছেলের সঙ্গে আচে।
    --- বেশি বলিস না রে! ভালো ঘরের মেয়ে, দুক্কু পাবে।
    -- যা যা! সব জানা আচে। তাহলে এই হাড়কাটা গলিতে মরতে এসেছে কেন? দুদিন দেখ, সব বুঝতে পারবি। বলি কি-
    অতই তোর বুদ্ধি হলে,
    আজ ক্যানো তোর ক্যাঁতা বগলে?
    রাত্তিরে সমীরদা ফিরলে বলি-- এই জায়গাটার কি বিচ্ছিরি নাম! হাড়কাটা গলি! অন্য পাড়ায় বাড়ি দেখ।
    ও গম্ভীর হয়ে যায়। এসব কোথায় শুনলে? আমি আজকের ঘটনাটা বললাম। ও বলল -- একটু ধৈর্য্য ধর, সব হবে।
    বললাম- এত দেরি কর কেন? সন্ধ্যের মধ্যে বাড়ি ফিরতে পার না? সারাদিন এই একচিলতে ঘরে হাঁপিয়ে উঠি। তোমার অফিস কে একটু বুঝিয়ে বলতে পার না?
    -- আরে বাবা! আমি দশটা-পাঁচটা চাকরি করি না। বিপ্লবী পার্টি করি। আমাদের ঘড়ি ধরে কাজ হয় না। তারপর খেতে খেতে অনেক কথা বলে।
    আমি বুঝতে পারিনা সাম্রাজ্যবাদ বলার সময় ও অত দাঁত চেপে মুখ শক্ত করে বলে কেন!
    সাম্রাজ্য তো খারাপ কিছু নয়! আমিও ইতিহাসে পড়েছি। সম্রাট অশোক, সম্রাট আকবর।
    একদিন সে কথা বলায় ও কেমন ক্ষেপে গেল। তারপর গলার স্বর নামিয়ে বলল-- তুমি কিছুই বোঝ নি। এই সাম্রাজ্য আলাদা। আস্তে আস্তে বুঝবে।
    এঃ, নিজে সব বোঝে! ঘোড়ার ডিম। মেয়েদের শরীর তো কিছুই বোঝে না। আস্তে আস্তে বোঝাই, বলি--অন্ধের হস্তীদর্শন!
    রাগতে গিয়েও হেসে ফেলে।
  • ranjan roy | 24.97.113.1 | ১০ অক্টোবর ২০১৪ ১৭:১৯651219
  • একদিন রাতের বেলা। এপাড়ায় রাত সবচেয়ে জীবন্ত। অনেক রাত অব্দি লোকজনের আসাযাওয়া, কথাবার্তা, ঝগড়া, গানের কলি -- এসব আমাকে জাগিয়ে রাখে।
    সে রাত্তিরে সমীরদা তখনো ফেরে নি। কে বা কারা আমাদের টিনের দরজায় দিচ্ছে, খুলতে বলছে।পাশের ঘরে জোরে ট্রানজিস্টার বাজছিল, তাই শুনতে দেরি হল।
    গিয়ে বললাম--- চলে যান, আমার স্বামী বাড়ি নেই।
    উল্টে জড়ানো গলায় হাসি আর টিটকিরি-- তাই তো এসেছি। জেনেই এসেছি। লাইনে এসে ঘোমটার তলায় খ্যামটা! ওতে ভুলছিনে।
    আমার ভয়ে হাত-পা কাঁপছে, কোন রকমে সাহস করে বললাম-- ভুল বাড়িতে এসেছেন, যান, চলে যান বলছি।
    -- আরে বলছি তো, ঠিক খবর নিয়েই এসেছি। বিন্দেদূতী ঠিকই খবর দিয়েছে। আমাকে মওকা দিয়ে দেখ সুন্দরী, আমি খুব খারাপ সোয়ামী হব না।
    দরজায় ধাক্কা বেড়ে গেল, যেন ভেঙে ফেলবে।
    আমি পেছনের দরজা খুলে ছিটকে বাইরে কুয়োর পাড়ে গিয়ে চেঁচাতে লাগলাম।
    -- কে আছেন, বাঁচান! উটকো লোক দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকছে।
    কতবার চেঁচিয়ে ছিলাম মনে নেই।
    ট্রানজিস্টার বন্ধ হল। আস্তে আস্তে জনাপাঁচেক মেয়ে বেরিয়ে এল। আর এল একটা কালোমত শিড়িঙ্গেপানা ঢ্যাঙা লোক।
    বয়স্ক মোটামত মহিলাটি ইশারা করতেই লোকটা সামনে রাস্তাঅর দিকে গেল।
    উনি বললেন-- কোন ভয় নেই। তোমার সোয়ামী কখন আসবে? এ পাড়া তোমাদের মত লোকেদের জন্যে নয়। কিছু খেয়েছ?
    এভাবেই পরিচয় হল রাণীদিদি, কমলা, যুথিকা আর বাসন্তীর সঙ্গে।
    একবছর ছিলাম ওই গলিতে।
    সেদিন অনেক রাত্তিরে ফিললা সমীর। শ্রান্ত ক্লান্ত , চেহারায় কেউ কালি ঢেলে দিয়েছে।
    আমি শুধু কাঁদছিলাম, কিছু বলতে পারছিলাম না। আস্তে আস্তে সব বললাম। ওর মুখের রঙ আরো বেগুনি হল। খেতে পারল না। ভাত নাড়াচাড়া করে উঠে গেল। মাঝরাতে দেখছি উঠে উঠে জল খাচ্ছে, আর এপাশ-ওপাশ করছে।
  • সিকি | ১০ অক্টোবর ২০১৪ ১৭:৩৮651220
  • রঞ্জনদাকে জাস্ট একটা অনুরোধ, কারও কোনও মন্তব্যে নজর না দিয়ে প্লিজ এক নিশ্বাসে লেখাটা শেষ করো। বসে আছি পড়ব বলে।

    আমার মন্তব্যেরও উত্তর দেবার দরকার নেই। প্লিজ লেখো।
  • ranjan roy | 24.97.113.1 | ১০ অক্টোবর ২০১৪ ১৭:৫৮651221
  • ৫)
    পরের দিন সমীর ঘর থেকে বেরল না। চাল বাড়ন্ত ছিল। একটু বেলায় গিয়ে এক কিলো খুদ, পতাকা মার্কা হলুদ রঙের চায়ের প্যকেট আর চিনি নিয়ে এল। বলল-- কমরেডরা আসবে।
    আমি বললাম-- আমাকে এখানে কেন তুলেছ?
    -- ডি-ক্লাস হতে। খেটে খাওয়া শোষিত মানুষের সঙ্গী হতে। আমরা পেটি বুর্জোয়া পরিবার থেকে এসেছি। ওদের জীবনের শরিক হতে হবে। তবে আমাদের পেটিবুর্জোয়া সংস্কার যাবে।
    শোন -- কিষাণের জীবনের শরিক যে জন,
    কর্মে ও কথায় সত্য আত্মীয়তা করেছে অর্জন,
    যে আছে মাটির কাছাকাছি--।
    আমি থামিয়ে দিই-- সুন্দর সুন্দর কথা, বুঝিনি, কিন্তু শুনতে ভালো লাগছে। কে বলেছে?
    --- রবি ঠাকুর।
    -- কী বলছ! উনি কি কখনো এসব নোংরা জায়গায় থেকেছেন?
    -- ধেত্তেরি! উনি কি বিপ্লবী ছিলেন? বিপ্লব করেছেন?
    --- উনি করেন নি? তো আমরাই বা খামোকা বিপ্লব করতে যাব কেন?
    -- তুমি বিপ্লব চাও না?
    -- সে তো হয়ে গেছে। গান্ধীজি, ভগত সিং, সুভাষ বোস, নেহেরু করে গেছেন।
    -- আরে বোকা! ও তো দেশ স্বাধীন করা! ও কোন বিপ্লব নয়। আর দেশ আজও সত্যিকারের স্বাধীন হয় নি।
    -- ও বিপ্লব নয়? তাহলে বিপ্লব কী?
    -- এই যে চারদিকে নোংরমি, এই যে মেয়েদের অমানবিক জীবন , এদের এই হাল কেন?
    --- আগের জন্মে পাপ করেছিল বলে।
    -- উঃ, শোন। আগের জন্ম-টন্ম কিছু নয়। আসলে হাতে গোণা কিছু লোক ব্যাপক জনগণের পরিশ্রমের ফসল লুঠ করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে। তাই চারদিকে এত গরীবি।
    বিপ্লব মানে ওদের থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়ে গরীবের রাজ কায়েম করা-- যাতে সবাই সুখে থাকতে পারে। এ বিরাট কর্মযজ্ঞ, অনেক প্রাণের আহুতি চাই, বুঝলে। তুমি এতে আমার সঙ্গী হবে না?
    -- কেন হব ন! এত ভাল কাজ। তোমরা অনেক ভাল কাজ করছ ।
    ওর চেহারায় হাজার ওয়াটের আলো জ্বলে উঠল।
    -- কিন্তু ভাল কাজ করতে তোমাদের এত লুকিয়ে থাকতে হয় কেন? ভালো কাজ করা কত সম্মনের।
    ওর মুখে ছায়া ঘনালো।
    -- শোন, সব আস্তে আস্তে বুঝবে। কমরেডদের আসার সময় হয়ে এসেছে। তুমি একটু চা বানিয়ে দিও। তারপর একটু সরে গিয়ে বোসো।
    বললেই সরে যাওয়া যায় নাকি? ঘরে জায়গা কতটুকু?
    কমরেডরা এল একটু পরেই। সেই হালকা দাড়িওলা ঝোলাঅ কাঁধে ছেলেটি আর একজন টেকো বয়স্ক লোক। ওরা এসেই বিড়ি ধরাল। আমি সমীরের দিকে অনুনয়ের চোখে তাকালাম। সমীর মুখ ফিরিয়ে নিল। ওরা কথা বলতে বলতে সমীরকেও একটা বিড়ি এগিয়ে দিল।
    আমার রাগ হল।
    তাই চা দেওয়ার সময় যখন ছেলেটি জিগ্যেস করল--- কেমন আছেন বৌদি?
    আমি আর থাকতে পারলাম না।
    --- যেমন আপনি রেখেছেন। কী বাড়িই না খুঁজে দিয়েছেন বৌদিকে, এখানে মানুষ থাকতে পারে?
    অপ্রস্তুত ছেলেটি কিছু বলার আগেই টেকো কমরেড বলে উঠল-- কমরেদ রমেন, আপনাদের পারিবারিক গল্পগাছা মিটিংয়ের পরেও হতে পারে। আর নতুন বৌমা, খেটেখাওয়া গরীব মানুষেরা প্রাসাদে থাকে না।

    সমীরদা কিছু বলল না।
    আমার রাগের চোটে কান্না পেল। এবার আমি ঘরের পেছনের কুয়োতলায় গিয়ে দাঁড়ালাম।
  • asmita | 162.79.255.200 | ১০ অক্টোবর ২০১৪ ২২:৩০651222
  • লেখাটা পড়ে একটা কবিতার লাইনই মনে পড়ছে - "আপনি বলুন মার্ক্স/ মেয়েরা কি বিপ্লবের সেবাদাসী হবে?"

    খুব ভাল লাগছে পড়তে।
  • S M | 123.21.69.108 | ১০ অক্টোবর ২০১৪ ২৩:১৯651224
  • চলিয়ে জান রন্জন বাবু,
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন