এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বেঁচে আছিঃ প্রেমে-অপ্রেমে

    ranjan roy
    অন্যান্য | ০১ অক্টোবর ২০১৪ | ২২০৪৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ranjan roy | 24.99.83.71 | ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৫৩651258
  • ৬)
    এখন আমাদের দিনচর্যায় কি মিল! দুজনেই পান্তাভাত খেয়ে সকাল সকাল বেরিয়ে পরি। ও পার্টির কাজে, আমি চামড়ার কারখানায়। আমি ফিরি সন্ধ্যের মুখে, ও রাত্তিরে। কুয়োতলায় দাঁড়িয়ে দু'বালতি গায়ে ঢেলে ঘরে ঢুকি, ভাত চড়াই। রাত্তিরের রান্নাটাই আসল।
    শুয়ে শুয়ে দুজনেই নিজের নিজের গল্প শোনাই।কিন্তু ছ'টাকার মজদুরিতে সংসার চালানো বেশ কঠিন। কী করি?
    সমীরদাকে বললাম-- তুমিও কিছু করবে তো?
    ( এখনো সমীরদাই বলি, এমন অভ্যেস।শরীরের ছোঁয়াতেও বদলালো না।)
    ও অবাক হয়ে তাকাল। ওর সময় কোথায়? ও তো পরিশ্রম করছে। সংগঠন বাড়াচ্ছে , নতুন রিক্রুট করছে।পার্টি নিশ্চয়ই বুঝবে, আবার মাসোহারা দেয়া শুরু করবে। মাসে ১৫০ টাকা! হ্যাঁ, তাহলে অনেক ভালো হবে। ওর গায়ে হাত রাখি। ওর হাতও কথা বলে।
    কিন্তু মাঝে মধ্যেই ঘুমের ঢেউ গোটা শরীর দখল করে। সারাদিনের ধকল যাবে কোথায়। সে কি ঘুম! এই খুপরি ঘরে ঘেমো গরমেও ঘুমিয়ে পড়ি। ও নিজেও ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু সব দিন তো ঘুমোয় না।
    আমার কখনো ভাল লাগে, কখনো ক্লান্তিকর। ও কি বোঝে?
    ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখি, সেই পুরনো ঘটনাটা।
    আর্যসমাজের মন্দির থেকে রেজিস্ট্রি করে আসার পরের দিন। দিদিমাবুড়ি একজন লোকের হাত দিয়ে একটা শাড়ি আর মিষ্টির বাক্স পাঠিয়েছিল। তার মধ্যে একটা চিঠি ছিল তাতে দ্বিরাগমনে বাপের বাড়ি যাবার নেমন্তন্ন। নাত-জামাইকে অনুরোধ-- যেন সস্ত্রীক তে'রাত্তিরের জন্যে আসে। নিজে ব্যস্ত হলে শুধু নাতনিকে পাঠিয়ে দিক।
    আমার মনটা দুলে উঠেছিল। ওর চোখেও যেন খুশির ছোঁয়া। ও আর ওর বন্ধুরা নিজেদের কথাবার্তায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ভদ্রলোককে দুটো মিষ্টি আর জল খাইয়ে বিদেয় করতে গিয়ে দরজার চৌকাঠ পেরিয়েছি কি ও আমার হাত চেপে ধরল। উত্তেজিত গলায় ফিসফিস করে বলল-- শোনো! এখন যা বলব সেটা কাউকে বলবে না। দিদিমা খবর পাঠিয়েছেন যে একবার বাপের বাড়িতে এলে আর এখানে ফিরতে হবে না। এই চাল-চুলো-নেই ছোকরার সঙ্গে জীবন কাটাতে হবে না। দিদিমা তোমার জন্যে বাংলাদেশ থেকে ভাল সম্বন্ধ এনেছেন। তিনদিনের মধ্যে সেখানে যাবে বাবা-মার সঙ্গে।এই সমীর আর তার নকশাল বন্ধুগুলো তোমাকে ছুঁতেও পারবে না।ভয় পেও না। যেভাবে হোক দ্বিরাগমনের জন্যে ওকে রাজি করাও। আমরা তোমার ভাল চাই।
    --- আর আমার এই বিয়ে?
    --- ওটা তো পুতুলখেলা। এই বিয়ে কোন বিয়েই নয়। দিদিমা জানিয়েছেন যে তোমার বয়স কম, এই বিয়ে অসিদ্ধ। সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। তুমি একবার ওর খপ্পর থেকে বেরিয়ে তো এস!
    --- আপনি এখন যান, আমি ভেবে দেখব।
    --- ভাবার তো কিছু নেই। ওকে কতটুকু চেন? ওর কত মেয়েবন্ধু ছিল জান? আগে ওর সম্পর্ক ছিল কেরেস্তান পাড়ার রেজিনা বলে মেয়েটার সঙ্গে। ওর জন্যে পাগল ছিল। ওর বাবাকে তো চেন। তোমাদের স্কুলের ম্যাথ্স টিচার ফাদার জোসেফ। উনি হিন্দুর ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেবেন না। সমীর ক্রিশ্চান হলে আলাদা কথা। ঢ্যাঁটা ছেলেটা বলল কি ও কোন ধর্মে বিশ্বাস করে না। তো ফাদার জোসেফ ওকে ঘর থেকে বের করে দিলেন। এই তো গল্প। এখন তোমাকে ধরেছে।
    আমার মাথা ঘুরতে থাকে। কোনরকমে হাত নেড়ে লোকটাকে চলে যেতে বলি। ভেতরে এসে দরজাটা বন্ধ করে ঢক্ঢক করে জল খাই।
    সন্ধ্যেবেলা সমীরদাকে বলি যে ও বাড়িতে আর ফিরে যেতে চাই না। ভাঙা হাঁড়ি জোর করে জোড়া লাগানো যায় না। সমীরদা যেন একটু স্বস্তি পেল।
    কিন্তু এই স্বপ্নটা কেন মাঝেমাঝেই দেখি? সেখানে দিদিমার হাত লম্বা হয়ে যায়? চোখে চশমা, কিন্তু গোঁফ ! আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসে ছুঁচলো দাঁত, ভেসে ওঠে হাত-পায়ের বড় বড় লোম! আর আমি লিটল রেড রাইডিং হুড হয়ে পালাতে থাকি।
    ঘুম ভেঙে যায়। ঘুমে অচেতন সমীরদার হাত আমার বুকের ওপর ভারী হয়ে চেপে বসেছে। আস্তে করে হাতটা নামিয়ে দিয়ে পাশ ফিরে শুই, অনেকক্ষণ ঘুম আসে না।
  • ranjan roy | 24.99.83.71 | ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০৪:১১651259
  • কিন্তু সেই সুদিন আর এল না। পার্টি মাসোহারা চালু করল না। ও আজকাল একটু খিঁচিয়ে থাকে।
    এক রোববার সেই টেকো কমরেড এল। সেদিন আর চা দিতে হয় নি। ওদের আলোচনা বেশিক্ষণ চলেনি। কেউ বিড়ি ধরায় নি। সমীরদাও আমকে সরে যেতে বলেনি।
    আমি শুনছিলাম। দুটো কথা বারবার শুনছিলাম-- "অ্যাকশন " আর "জনগণ"।
    সমীরদা টেকোব্যাটাকে চার্জ করছিল-- আপনাদের এইসব প্রি-ম্যাচিওর অ্যাকশন আমার পরিশ্রম করে গড়ে তোলা ইউনিটগুলোর সর্বনাশ করছে। ওরা ওদের পাড়ায় ঢুকতে পারছে না। নতুন নতুন ছেলেগুলো ধরা পড়ছে। এখন জনগণ অ্যাকশনের রাজনীতি পছন্দ করছে না।
    টেকো সমীরদাকে চার্জ করছিল --জনগণের হয়ে কথা বলার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? জনগণ সব সময় বিপ্লবী রাজনীতি পছন্দ করে। আর অ্যাকশনই এখন বিপ্লবী রাজনীতির মুখ। আপনার মত ছেলে-ছোকরার দল আসলে পেটি-বুর্জোয়া লিব্যারাল। কাপুরুষ সংশোধনবাদীদের সাথে হাত মেলানোই আপনাদের নিয়তি।
    নিজের বউকে কমরেড করতে চান
  • ranjan roy | 24.99.83.71 | ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০৪:১২651260
  • ডিঃ ধুর! ঘুমচোখে শেষ লাইনটা ভুল টাইপ হয়েছে।
  • ranjan roy | 24.99.83.71 | ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০৪:৫০651261
  • নিজের বউকে কারখানায় রাজনীতি প্রচার করতে বলছেন না। একটা মজদুর ইউনিট গড়ে ওঠার সম্ভাবনা নষ্ট করে দিচ্ছেন। এত কমরেড নিজের জীবন বিপন্ন করে কাজ করছেন আর আপনি ফালতু নিজেদের পেটি সিকিউরিটি নিয়ে ভয় পাচ্ছেন।
    এই আলোচনার পর সমীরদা দুদিন ঘর থেকে বেরোল না। কিন্তু রোজ মোড়ের চায়ের দোকানে গিয়ে পত্রিকা পড়ত। দ্বিতীয় দিন দেখি একটা খবরের কাগজের দোমড়ানো পাতা নিয়ে এসে খুব মন দিয়ে কী দেখছে। আবার দেখি একটা কাগজের টুকরোতে কীসব টুকে রাখছে। আমি চায়ের কাপ সামনে রেখে উঁকি মারলাম। ও চমকে উঠে কাগজটা সরিয়ে নিল। তারপর লাজুক হেসে বলল-- চাকরির বিজ্ঞাপনের পাতা। মনে হয় দু'একটা যেন আমার জন্যে।
    খেয়াল করি, ওরকম লাজুক হাসলে ওকে খুব সুন্দর দেখায়।
    আমি অবাক।-- এই, তুমি চাকরি করবে?
    -- যদি পাই। হয় তো কিছুদিনের জন্যে। মনে হয় এই দলটায় আর থাকা যাবে না। কিছু একটা তো করতে হবে।
    সেদিন মাঝ- রাত্তিরে ঘুম ভেঙে গেল। আমার ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সমীরদা, যেন একটা রাগী বাঘ। আমাকে আঁচড়ে কামড়ে খুবলে ছিঁড়ে নিচ্ছে। কিন্তু কেন?
    ওকে বাধা দিই, এভাবে নয়, এভাবে নয়। কিন্তু ওর দুচোখ বন্ধ। কি এক অন্ধ আক্রোশে ঝড়ের মত আমাকে নাড়াচ্ছে আর বিড়বিড় করছে-- আর একটু কি সম্ভব ছিল না?-- আমি পার্টির জন্যে কি না করেছি-- ঘর ছেড়েছি, জান কবুল করেছি-- আর ওই সুপ্রকাশ-- শালা শুয়োরের বাচ্চা-- ওদের দেখে নেব-- জনগণ মাফ করবে না-- আমি রেনেগেড নই-- ইউ বাস্টার্ড--।
    আমি এই ঝড়ের সামনে অসহায়। ওর নখের আঁচড়ে আমার পিঠ জ্বলে যাচ্ছে। ঝড়ের তীব্রতা বাড়ে। আমার গলার কাছে একটা অদ্ভূত কষ্ট, একটা যন্ত্রণা দলা পাকিয়ে ওঠে। আমার চোখের পাতা ভিজে যায়। কার জন্যে? আমার, নাকি ওর জন্যে? বুঝতে পারি না। কিন্তু একটু একটু করে এই কষ্টটা ভালোলাগায় বদলে যাচ্ছে। -- অকূল গাঙে ভাসলাম আমি কূলের আশা ছাড়ি।
    ঝড় কেঁপে উঠে শান্ত হয়। ঝড় ঘুমন্ত কিন্তু গাঢ় গলায় বিড়বিড় করে-- রেজিনা, রেজিনা।
    অচেতন ঝড় আমার বুকের থেকে গড়িয়ে নামে, পাশ ফিরে শোয়
    আমি জেগে থাকি। আমার দুচোখ খটখটে শুকনো।
  • kiki | 125.124.41.34 | ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০৭:৩৭651262
  • ঃ(
  • সে | 203.108.233.65 | ২০ অক্টোবর ২০১৪ ১১:৪৫651263
  • জমে গেছে।
  • ranjan roy | 24.99.78.171 | ২১ অক্টোবর ২০১৪ ১৪:৩৬651264
  • না , সমীরদা চাকরি পেল না। যা পায়, তা ওর পছন্দ নয়। ওর কিছু খালি সময় চাই-- যাতে পুরনো চেনা কমরেডদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে, নতুন করে দল গড়তে পারে।
    ভাবে ট্যুইশন করবে, কিন্তু এ'পাড়ায় ভদ্রলোকের বাড়ির ছেলেমেয়ে আসবে না। লোকজনের বাড়ি বয়ে গিয়ে পড়িয়ে আসতে হবে। ওর মন সায় দেয় না। কি যে করি!
    ভাবি ,সন্ধ্যেয় যদি কিছু ফুরনের কাজ পাই। আমাকেই যে কিছু করতে হবে। দেখতে পাই ও যে ছটফট করছে! এই জানলাহীন খুপরি ঘরে ওর দমবন্ধ হয়ে আসছে। একটা অস্থির অস্থির ভাব। কেমন যেন টের পাই যে ও খাঁচার পাখি নয়, অনেক বড় আকাশের স্বপ্ন দেখা ঈগল। একদিন ও এখান থেকে বেরিয়ে যাবেই।
    ইতিমধ্যে কমলা, যুথিকা, বাসন্তীদের সঙ্গে বেশ ভাব হয়ে গেছে। ওরা দেখে সমীরদা আজকাল ঘরেই থাকে। ধরে নেয় আমার বরের চাকরি চলে গেছে। রোজ ছ'টাকায় ঘর চালানো কত কঠিন ওরাও বোঝে। মাঝে মাঝে ছোট্ট ছোট্ট দু'টুকরো মাছ আর একটু ঝোল বা আলু দিয়ে অল্প শাক-- পাঠিয়ে দেয়।
    সেদিন ছিল রোববার। আমার ছুটি। দুপুরে রানী দিয়ে গেছল অল্প মাছভাত।
    ও খেতে বসে অবাক চেঁচাতে লাগল-- এসব কোথায় পেলে? যাও, ফেরত দিয়ে এস। বেশ আত্মীয় পাতাচ্ছ আজকাল!
    আমার কান লাল হয়ে উঠল।
    -- শোন, মনটা ছোট করছ কেন? গরীব হলেই কি --!
    -- নিকুচি করেছে তোর ইয়ের! আমায় শেখাতে এসেছে?
    আমার কথা কেটে বিচ্ছিরি চেঁচিয়ে উঠেছে সমীরদা।
    সামনে মাছের বাটি রেখে উঠে গেলাম। কিন্তু যাব কোথায়? হাত ধুয়ে দেয়ালের দিকে মুখ করে শুয়ে থাকব?
    না, পারলাম না।
    -- এই মাছভাত যারা পাঠিয়েছে তারা আমার বন্ধু। আমি গতর খেটে খাই। ওরা গতর খাটিয়ে খায়। তোমার ঘেন্না লাগে? অপমান হয়? তুমি খেও না। আমি খাব।
    এত সব কথা বলে আমি চুপ মেরে গেলাম। ও বড় বড় চোখ করে আমাকে দেখল। তারপর দুম করে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল।
    এ আমি কী করলাম! ,মানুষটা এমনিই মরমে মরে আছে। ওকে কেন এসব শোনাতে গেলাম। কাল থেকে যে দুজনেরই কিছু পেটে পড়ে নি।
    আমার বুক ফেটে কান্না আসে। কিন্তু আমি ঝোল দিয়ে মেখে ভাতটা খেয়ে ফেলি। আজকাল বড্ড ক্ষিদে পায়। চোখ বেয়ে জল গড়ায় রাগে, অপমানে, ভালবাসায়। কিন্তু খেতে থাকি।
    তার পর কুঁজো তুলে ঢকঢক করে জল খাই। ভরদুপুরে বন্ধ ঘরে বড় তেষ্টা পায়। ওর জন্যে একটুকরো মাছ আর ভাত সরিয়ে রেখে শুয়ে পড়ি।
    কী করছে ও? নিঘ্ঘাৎ চায়ের দোকানে গেছে। কিন্তু পকেটে পয়সা নেই যে। তাহলে ধার করবে। করুক গে! চা খাক, ফুলুরি খাক। আমি রোজি থেকে ধার চুকিয়ে দেব।
  • ranjan roy | 24.99.78.171 | ২১ অক্টোবর ২০১৪ ১৫:০৯651265
  • কখন চোখ লেগে গেছল। শেকল নাড়ার শব্দে উঠে দরজা খুললাম। সমীরদা রোদে ঘুরে লালচে ঘেমো শরীর। ঢুকে কোন কথা না বলে থালা টেনে খেতে বসে গেল। আমি এক গেলাস জাল সামনে রাখলাম। ও কেমন চোর চোর মুখ করে আমাকে দেখল। তারপর মাথা নামিয়ে খেতে লাগল। আমি অন্যদিকে মুখ করে তালপাতার পাখার ডাঁটি দিয়ে ঘ্যাঁস ঘ্যাঁস করে পিঠের ঘামাচি মারতে লাগলাম।
    ও জল খেল। গলা খাঁকারি দিল। আমি কোন উচ্চবাচ্য করলাম না। ও একটা বই খুলে বসল। একটা ছোট মত লাল রঙা বই, তাতে আবার খবরের কাগজের মলাট দেওয়া।
    আমাকে একদিন বলেছিল-- এই ছোট্ট বইটাকে দুনিয়ার তাবড় তাবড় প্রতিক্রিয়াশীলরা ভয় পায়। দেখতে ছোট বলে একে তুচ্ছ কর না। এর অসীম শক্তি।
    -- কী লেখা আছে ওতে? রবি ঠাকুরের Where the mind is without fear এর চেয়েও ?
    --- দেত্তেরি রবি ঠাকুর! ওই ঘ্যানঘেনে একঘেয়ে গান! এতে আছে 'বন্দুকের নলই শক্তির উৎস'।
    আমি খিলখিলিয়ে হেসে উঠি।
    -- হাসছ কেন?
    -- বলছি। আচ্ছা, তোমার ওই লালবইয়ে পিস্তলের নলের শক্তি নিয়ে কিছু বলা নেই?
    --- মানে? পিস্তলের নল! কী যে বলছ।
    -- বলছি, তোমার তো বন্দুকের নল নেই, ছোট পিস্তল আছে। হ্যাঁ, তাকে ছোট বলে কেউ তাচ্ছিল্য করতে পারে না।
    ও টেনে একটা চড় মারতে যায়। আমি তৈরি ছিলাম। চট করে মাথা সরিয়ে নিই। ওর হাত ঘাড়ের পাশ দিয়ে গিয়ে দরজার ছিটকিনির লোহাটায় লাগে। ব্যথায় কঁকিয়ে ওঠে সমীর। আমি তাড়াতাড়ি একমগ জল এনে ওর হাত ডুবিয়ে ধরি। ওর গায়ে হাত বুলোতে বুলোতে বলি-- এত রেগে যাও কেন? বল, কিছু ভুল বলেছি?
    এবার ও ব্যথা ভুলে হেসে ওঠে। মুচকি মুচকি হাসি। হাসিতে দুষ্টুমির ছোঁয়া। এবার দুজনেই দুষ্টুমিতে মেতে উঠি।
    কিন্তু আজ সহজে ভাব করব না। আগে ও কথা বলুক। সব বিপ্লব দেখে নেব।
    পুরুষেরা আসলে মেয়েদের থেকে অনেক দুর্বল। ওদের বিপ্লব দু'জায়গায় হার মেনে যায়।
    আর ওদের হারাবার অনেক কিছু থাকে।
    মেয়েরা? ওদের জীবন শুরুই হয় হার মানার খেলার পাঠ নিতে নিতে। ওরা অনায়াসে ছেড়ে আসে আদ্দেক জীবন। তারপর ও অন্যদের জায়গা ছেড়ে দিতেই থাকে। কেন?
  • সে | 188.83.87.102 | ২১ অক্টোবর ২০১৪ ১৬:১৯651266
  • পায়ের ধুলো দিন রঞ্জনদা।
  • d | 24.97.107.201 | ২১ অক্টোবর ২০১৪ ১৬:২২650822
  • রঞ্জনদা,
    বাকী টইগুলো চুলোর দোয়ারে পাঠিয়ে এইটা লিখে শেষ করুন আগে।
  • d | 24.97.107.201 | ২১ অক্টোবর ২০১৪ ১৬:২২650821
  • রঞ্জনদা,
    বাকী টইগুলো চুলোর দোয়ারে পাঠিয়ে এইটা লিখে শেষ করুন আগে।
  • d | 24.97.107.201 | ২১ অক্টোবর ২০১৪ ১৬:২২650820
  • রঞ্জনদা,
    বাকী টইগুলো চোর দোয়ারে পাঠিয়ে এইটা লিখে শেষ করুন আগে।
  • Du | 230.225.0.38 | ২১ অক্টোবর ২০১৪ ১৬:৪৩650823
  • সে আর দ দুজনের বক্তব্যই দোহরালাম
  • সিকি | ২১ অক্টোবর ২০১৪ ১৮:২৯650824
  • ক।
  • সে | 203.108.233.65 | ২২ অক্টোবর ২০১৪ ১৯:৪৮650825
  • তুলে দিলাম
  • ranjan roy | 24.99.189.167 | ২২ অক্টোবর ২০১৪ ২৩:৪২650826
  • পরের দিন। সোমবার । সমীরদা আমার সঙ্গেই সকালে বেরিয়ে পড়ল। আলিমুদ্দিনের দিকে অন্য একটা গলিতে ঢোকার আগে বলে গেল ফিরতে দেরি হবে।
    চামড়ার কারখানায় আমার মেশিনে সেদিন নতুন একটা ডাই লাগানো হয়েছে। বুড়ো মিস্ত্রি সলিমুদ্দিন আজকে আসেনি। তার জায়গায় একজন অল্পবয়েসি ছেলে কাজল আমাকে সেটা ফিট করা নীচে কিভাবে চামড়ার বড় বড় পিসগুলো সেট করে পাঞ্চিং মেশিনটা কতটা টাইট করতে হবে তা দেখাতে লাগল।
    খানিকক্ষণ পরে আমার মনে ছেলেটা একটু বেশি বেশি বোঝাচ্ছে। আমাকে একেবারে হাতে ধরে ট্রায়াল দেওয়াচ্ছে। ওর হাত কি আমাকে একটু বেশিক্ষণ ছুঁয়ে থাকছে। একবার পাশ ফেরার সময় আমার পেছনে চট করে হাত বুলিয়ে দিল। আমি চমকে ঊঠলাম। ওর চেহারায় হাসির ছোঁয়া। আমি কটমট করে তাকালাম। ও একটু হকচকিয়ে গেল। কিন্তু একটা সময় ওর হাত একটু বেশি দুঃসাহসী হয়ে উঠলো।
    থাপ্পড় মারব কি?
    সেকেন্ডের এক-দশমাংশ সময়ে বুঝে গেলাম পারব না। তাহলে এই কাজ ছাড়তে হবে। তাহলে খাব কি? হাড়কাটা গলির খুপরি ঘরের ভাড়াই বা কি করে দেব?
    হাত সরিয়ে নিলাম মেশিন থেকে । সোজা গেলাম সুপারভাইজার শিউপূজনের কাছে। বললাম- আমি কাজল বলে ছেলেটার কাছে কাজ শিখব না। সলিমুদ্দিন চাচার কাছেই শিখব।
    শিউপূজন কিঞ্চিৎ বিস্মিত ও বিরক্ত।
    -- কারখানায় কাজ করতে গেলে একটু আধটু অমন হয়। এত ছোঁয়াছুঁয়ি নিয়ে বাতিক হলে ইস্কুলে গিয়ে বহিনজি হলেই হয়।
    সুনো লড়কি! আজ চাচা নহী আয়া, কাম তো বন্ধ নহী হো সকতা হ্যায় না? ফির!
    যাও উসীকে পাস হী জাও। হম উসকো ডাঁট দেঙ্গে। অ্যায়সা গুস্তাখি দুবারা নহী হোগা।
    কাজল উঁচুগ্রামে বলে-- দিদি ফালতু কথা বলছে। কাজ কিচ্ছু জানে না আবার দেখিয়ে দিলে নাক ফোলায়। এসব ছেলেদের কাজ। লজ্জাবতী লতাদের দিয়ে হয়? এদের সরিয়ে কোন জোয়ান ছেলেকে লাগান। থাকে হাড়কাটা গলিতে এদিকে ভাব যেন সতীসাবিত্তির।
    --- চুপ বে! চুপ হো জা, নহীঁ তো তেরা জবান খিঁচ লুঙ্গা।
    অ্যাসিডে ভরা চৌবাচ্চার পাশ থেকে লাফিয়ে এসে সামনে দাঁড়ায় মাঝবয়সী ইয়াসিন।
    হল্লা শুরু হয়। মেশিন বন্ধ করে মজদুরের গ্রুপটা ফ্লোরের মাঝখানে জমায়েত হয়।
    -- ক্যা হুয়া ইয়াসিনভাই?
    -- আবে দেখ না! ইস সালে কী গন্দী হরকত। ম্যাঁয় শুরু সে দেখা হুঁ।
    কাজল ঘাবড়ে যায়। শিউপূজন মাঝখানে পড়ে সবাইকে কাজ শুরু করতে বলে আর ওর কথায় ইয়াসিন আমাকে কাজ শেখাতে রাজি হয়ে যায়। কাজলকে পাঠানো হয় ইয়াসিনের জায়গায়।
    সন্ধ্যেয় ঘরে ফিরি খানিক তিতিবিরক্ত হয়ে। ছেলেটা কী বলল আমাকে? হাড়কাটা গলির সতীসাবিত্তির! সমীরদা আসলে বলতে হবে ও যে কাজে লাগিয়েছিল সেই কমরেডের সঙ্গে কথা বলুক।
    আচ্ছা, যদি চামড়ার কারখানার কাজটায় সমীরদা লেগে যায়? আর আমি অন্য ধরনের কাজে?
  • ranjan roy | 24.99.189.167 | ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০০:১৮650827
  • ধোয়া কাপড় গুছিয়ে নিয়ে কুয়োর পাড়ে দাঁড়িয়েছি কি বাসন্তী এসে বলল-- চল কচিবৌ, তোকে মুটকিমাসী ডাকছে।
    মুটকিমাসী আমাদের গলির বাড়িওয়ালি, আসল নাম আমার মত অনেকেই জানে না। বাসন্তীরা বলে মাসি নিজেও ভুলে গেছে।
    আর আমার কচিবৌ নামটা মাসিরই দেওয়া। আমিও কি একদিন নিজের শান্তিলতা নামটা ভুলে যাব?
    -- গা ধুয়ে আসছি বৌদি।
    -- আয়, বেশি দেরি করিস না।
    মাসির ঘরটা বড়। একটা বড় খাট, মিটসেফ, মারফি রেডিও , কালো কাঠের ছোট একটা টেবিল আর তিনটে চেয়ার। তবু যেন খালি খালি লাগে। মাসি রেডিওতে পল্লীমঙ্গল আসর শুনছিল। আমাকে বসতে বলল। আমি দাঁড়িয়েই রইলাম। মাসির ইশারায় বাসন্তী রেডিওটা বন্ধ করে দিল।
    -- শোন কচিবৌ, এরা বলছিল জামাইয়ের হাতে কাজ নেই আর তোমার একা গিয়ে মুচি-মুদ্দোফরাসদের সঙ্গে গা ঘষাঘষি করে কাজ করা পোষাচ্ছে না? অন্য কাজ খুঁজছ?
    -- হ্যাঁ, মাসি। দেবে?
    -- কেন দেব না বাছা! ভালঘরের মেয়ে আতান্তরে পড়েছ! এইসময় মাসি না দেখলে কে দেখবে? জামাইও কেমনধারা? তোমাকে ভাগিয়ে এনেছে , কিন্তু ভাতকাপড়ের জোগাড় নেই!
    আমার কানে কেউ গরম সীসে ঢেলে দিয়েছে।
    -- না মাসি, ভাগিয়ে আনে নি। আমরা মন্দিরে গিয়ে রেজিস্ট্রি করেছি।
    মাসি হেসে ফেলে।
    --শোন কচিবৌ। আমাকে শিখিও না। রেজিস্টিরি? আরে বাপ সম্প্রদান করেছিল? সাতপাক ঘুরেছ? সপ্তপদী হয়েছে? যজ্ঞি হয়েছে? জামাই আকাশে তারা দেখিয়েছে? শাঁখা-সিঁদুর কই? অষ্টমঙ্গলা হয়েছিল? আচ্ছা, ভাগিয়ে এনেছে বলব না বাছা। তোমার যখন আঁতে ঘা লাগে। বলব ইলোপ করেছিলে, এবার খুশি? কাজের কথায় এস।
    -- বলুন।
    -- তুমি সকালে বেরিয়ে যেমন কারখানায় যাচ্ছিলে, যাবে। সন্ধ্যেয় ঘরে এসে ঘন্টাখানিক গড়িয়ে নিয়ে বাসন্তীর ঘরে যাবে। সেখানে দু'ঘন্টা দু'তিনজন ভদ্দরলোকের সঙ্গে গল্প করে কাটাবে। ভাল রোজগার।
    আমার মাথা ঘুরতে থাকে।
    --- আরে, আগেই না করে বোস না। হালকা কাজ। বাকি বাসন্তী শিখিয়ে পড়িয়ে নেবে। শোন বৌ, তোমার ভালর জন্যেই বলছি।
    এখন জামাইকে বলার দরকার নেই। রোজ ছ'টাকা করে মাসে ১৮০ টাকা কামাও। এখন এক রাতে দু'ঘন্টা কাজ করে ২০০ টাকা পাবে। তার পঞ্চাশ টাকা আমার। আর ভদ্দরলোকদের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলে দু'কলি গান গেয়ে যদি মোটা বকশিস পাও তো সেটা তোমার। ভেবে দেখ। দু'মাস পরে কারখানার কাজ ছেড়ে দিও। শরীর আরাম পাবে। আরে মেয়েমানুষের গতর গেলে আর থাকে কী?
    দেখ, পেটে ভাত না জুটলে পিরীতও বেশি দিন বাঁচে না। বাসন্তীও তোমার মত ভালঘরের মেয়েছেলে। আগে না-না করত। এখন দেখ কেমন নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। ওর ভাতার ওর পায়ে পায়ে পোষা বেড়ালটার মত ঘোরে।
    এখন ঘরে যাও। কাল জানিও। বাসন্তী ওকে ঘর অব্দি এগিয়ে দে।
  • সে | 188.83.87.102 | ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০৪:৫৪650828
  • স্যালুট
  • | ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০৯:১৫650829
  • উফ!!
  • lcm | 118.91.116.131 | ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০৯:৫১650831
  • রঞ্জনদা কিন্তু কথা রাখছে, ডাইগ্রেস করছে না, পুরো ফোকাস্‌ড লেখা।
  • সিকি | ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ১৪:৩৭650832
  • কাঁপাকাঁপি লেখা এগোচ্ছে।
  • ranjan roy | 24.99.8.69 | ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ১০:৩১650833
  • ৭)
    সারারাত্তির এ'পাশ ও'পাশ। সমীরদাকে বলব বলব করেও বলিনি। একটাই সমাধান। এ'পাড়া ছেড়ে চলে যাওয়া। কিন্তু যাব কোথায়? কিসের জোরে?
    ভয় হল, ও বলবে বাসন্তীদের ঘরে যেও না। কিন্তু তা বললে হয়? এই দমবন্ধ জায়গায় ওরাই যে আমার এক চিলতে আকাশ। দুটো সহানুভূতির কথা ওদের মুখ থেকেই শুনতে পাই। সমীরদা নিজেই তো মাথার ঘায়ে কুকুর পাগল।
    শুধু ফাঁকা আহা-রে তো নয়, গতমাসেই যখন মাসিকের ব্যথায় প্রায় অজ্ঞান হবার অবস্থা তখন বাসন্তীরাই ডাক্তারখানা থেকে ওষুধ আনিয়ে দিয়েছিল। দামটা আমি হপ্তা পাওয়ার পর শোধ করেছিলাম।
    পরের দিন সন্ধ্যেবেলায় ঘরে ঢুকেছি কি বাসন্তী এসে হাজির । কোন কথা না বলে ওর পেছন পেছন মাসির ঘরে গিয়ে হাজির হলাম। মাসি তখন ঠাকুরকে সন্ধ্যেবাতি দিচ্ছে। ইশারায় বসতে বলল।
    তারপর এসে আমাকে আর বাসন্তীকে কপালে ফোঁটা দিয়ে হাতে দু'টুকরো ফল প্রসাদ দিল।
    কপালে ঠেকিয়ে খেতে খেতে মনে মনে বললাম-- ঠাকুর! শক্তি দাও। সাহস দাও। আর কিছু চাইব না। শুধু সাহস দাও।
    মাসি বলল না কিছু, শুধু আমার দিকে তাকাল। আমি চোখ নামাই নি, কিন্তু গলায় কথা ফুটল না। শুধু দু'দিকে মাথা নাড়লাম।
    মাসি ও মাথা নাড়াল, কিন্তু দু'দিকে নয়- ওপর-নীচে।
    -- বেশ! জোর করে কাউকে কিছু করানো আমার ধাতে নেই। গোবিন্দ জানেন। তবে এ'মাসের শেষে ঘর খালি করে দিবি। জামাইকে বলে দিস।
    আমার হাঁটুতে জোর চলে গেল। মনে হচ্ছে পড়ে যাব। ভয়ে মুখে কথা ফুটল।
    --- তোমার জামাই কিচ্ছু জানে না মাসি। দোহাই তোমার, ওকে কিছু বলতে পারব না।
  • ranjan roy | 24.99.8.69 | ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ১১:২৯650834
  • --- দেখ কচিবৌ! আমার কি কাউকে ঘরছাড়া করতে শখ হয়েছে? কিন্তু এখানে যারাই থাকে তারা ঘরভাড়া ছাড়াও কিছু উপরি কামাই আমার হাতে তুলে দেয়। তুই যখন পারবি না তখন আমাকে অন্য কাউকে বসাতে হবে।
    -- মাসি, তুমি এখানে সবার মায়ের মত। আমি তোমার লোকসান হোক তা চাইব না। আমাকে দু'তিন মাস সময় দাও। এর মধ্যে আমাকে অন্য কোন কাজ দাও, তোমার ঘর মোছার, কাপড় ধোয়ার কাজ হলেও চলবে। আর আগামী মাস থেকে আমার ঘরভাড়া দশটাকা বাড়িয়ে দাও। এখন চল্লিশ টাকা দিচ্ছি তখন পঞ্চাশ টাকা দেব।
    মাসি আমাকে পা থেকে মাথা পর্য্যন্ত দু'বার চোখ দিয়ে জরিপ করল। তারপর হেসে বলল-- হবে , হবে; তোর হবে কচিবৌ। ঘটে বুদ্ধি আছে।
    তবে একটা কথা বলি। কোন কাজই ছোট নয়। ধার কর্জ করে, ভিক্ষে করে বেঁচে থাকার চেয়ে খেটে খাওয়া ভাল তা তুই ভাল করে জানিস। আমাদের কাজ ছোট নয়। সারাদিন জ্বলে পুড়ে আসা লোকগুলোকে যদি দু'দন্ড শান্তি দেওয়া যায় তবে ভগোমান খুশি হন।
    আজ লোকে ঘেন্নায় মুখ ঘুরিয়ে যায়। আবার দেখ, দূগ্গোপূজোর সময় আমাদের দোরের মাটি মিশিয়ে পূজো না করলে মা পূজো নেন না।
    আগেকার দিনে থেটার-সিনেমা করতে কোন ভদ্রঘরের মেয়ে আসত না। আর আজ দেখ, পার্ট পাবার জন্যে লাইন লেগেছে।
    তোর বয়েস কম, দেখতেও ভাল। বোকা ব্যাটাছেলে গুলোকে নিংড়ে নিবি। পোস্টাপিসে পয়্সা জমাবি । তারপর আমার বয়সে পায়ের উপর পা তুলে গ্যাঁট হয়ে বসে আরাম করবি।
    বুদ্ধি ঠিকমত কাজে না লাগালে থেকেও কি লাভ! সেই যে বলে-- "এতই তোর বুদ্ধি হলে, আজ কেন তোর ক্যাঁতা বগলে?"
  • ranjan roy | 24.99.8.69 | ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ১২:০৫650835
  • আমাকে কি মাসি একটু প্রশ্রয়ের চোখে দেখছে!
    আরো সাহস করে বলি-- তাহলে আমাকে তোমার ঘরে কাজ করতে ডাকবে না? আমাকে বিশ্বাস হয় না।?
    খল খল করে হেসে উঠল আমাদের মাসি।
    -- মর ছুঁড়ি! বিশ্বেস -অবিশ্বেসের কি আছে? কিন্তু ওই কাজের জন্যে মাগিকে দিই তিরিশ টাকা। তুই আমাকে দিবি দশ টাকা।তোর কথা শুনলে ওই বাড়তি বাড়িভাড়া আমাকে দিয়ে হাতে পাবি মাত্র কুড়ি টাকা।তাও মাসের শেষে! তার চেয়ে আমার কথা শোন।তোর সব দুঃক্ষু ঘুচে যাবে। আছে একজন, সে তোর গা সোনায় মুড়ে দেবে। আমাকে কেউ আজ অবদি মুখের ওপর না করে নি।
    তাছাড়া যে মাগিটা আমার ঘরের কজ করে সে অনেক পুরনো। একরকম ঘরের লোকের মতন হয়ে গিয়েছে। ওকে খামোকা কেন তাড়িয়ে দেব?

    আমি কি আজ একটু বেশি দুঃসাহসী?।
    --- না মাসী। আমার বেশি টাকা চাইনে , সোনাদানা চাইনে। শুধু একটা কাজ চাই। হোক অল্প টাকার।
    মাসি হতাশ মুখে মাথা নেড়ে বাসন্তীকে বলল-- যা তো এক্ষুণি হীরাকে ডেকে নিয়ে আয়। বল মাসি ডাকছে।
    ----হীরা কোনটা ?
    -- দূর ছেনাল ! ওই যে দু'মাস আগে লতিকা মরে গেলে ওর খালি ঘরে যে মেড়োমাগীটা আছে রে! আর হ্যাঁ, ঘরে লোক নিয়ে থাকলে টুকিস না। এর পরে আসতে। শোন বৌ, একটা কাজ আছে বটে , কিন্তু খাটুনি বড্ড বেশি। মহাবীরের দোকানের জন্যে চাল-গম থেকে কাঁকর বেছে রাখতে হবে।রোজ ছ'কিলো চাল পরিষ্কার করলে তিন টাকা রোজি। তাহলে দাঁড়াল মাসে নব্বই টাকা,। দোকানদার হীরে মাগির দেশের, এখন এই কাজের জন্যে বিশ্বাসী মেয়েছেলে খুঁজছে। । তুই রাজি থাকলে বল। হীরে গিয়ে বললে হয়ে যাবে।
  • সে | 203.108.233.65 | ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ১২:৪৯650836
  • তারপর?
  • ranjan roy | 24.99.8.69 | ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ১৩:৪৫650837
  • কাজটা হয়ে গেল।
    এখান থেকে বড় রাস্তায় উঠে দুটো গলি পেরিয়ে মহাবীর আগরওয়ালের মুদি দোকান। সন্ধ্যেয় চামড়ার কারখানার থেকে ঘরে ফেরার পথে ওর দোকান থেকে ওজন করে ছ'কিলো গম বা ছ'কিলো চাল একটা ঝোলা করে দিয়ে দেয়। আমি টানতে টানতে ঘরে নিয়ে আসি। জিরিয়ে বসে কিছু খেয়ে কাঁকর বাছতে শুরু করি।
    চল্লিশ ওয়াটের বালবের হলদেটে টিমটিমে আলো। মাটিতে ঢেলে চোখ কুঁচকে বাছতে থাকি।কাঁকর ধানের খোসা এগুলো আলাদা করে একটা ছোট থলেতে ভরি। বাছার পর পরিষ্কার চাল-গম বড় থলিটায়।
    সকালে কারখানায় যাওয়ার সময় ওগুলো নিয়ে মুদি দোকানে জমা দিই। আগের দিন দেওয়ার সময় ওগুলো ওজন করে ছয় কিলো দিয়েছিল। পরের দিন ফেরত নেওয়ার সময় কাঁকরের থলে আর বড় থলে দুটো ওজন করে দেখে প্রায় ছয় কিলো হয়েছে কি না। ওদের ভয় থাকে আমি এর থেকে দু'মুঠো চাল সরিয়ে রেখেছি কি না!
    কাঁকর আর বাছা চালগম মিলে মোট ওজনের মজদুরি দেয়, ছ'কিলো তিন টাকা, অর্থাৎ কিলো প্রতি আট আনা হিসেবে। তবে রোজের পয়সা রোজ মিটিয়ে দেয়। সেটাই শান্তি।
    সকালে সমীরদা আমার সঙ্গেই বেরোয়। তখন ভারি থলেটা ওই বয়ে দোকান পর্য্যন্ত আসে। কিন্তু সন্ধ্যেয় ফেরার পথে আমি একা।সারাদিন কারখানায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেশিন চালিয়ে আবার সন্ধ্যের সময় ছ'কিলোর ব্যাগ টেনে পিঠ টন টন করে।
    ঘরের ভাড়া বেড়ে পঞ্চাশটাকা হয়েছে। দিতে পারছি এটাই শান্তি। মুটকি মাসি ওর চেনা লোকের থেকে রোজ এক পোয়া করে মোষের দুধ নিতে বলেছিল। আমার নাকি এখন রোজ দুধ খাওয়া দরকার।
    সমীরদা রাজি। আমি রাজি হই নি। আট টাকা করে কিলো। মানে রোজ দু'টাকা। তাহলে কাঁকর বেছে হাতে থাকবে কী? মাত্র একটাকা? দূর দূর!
  • সে | 203.108.233.65 | ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ১৩:৫৩650838
  • অচেনা জগৎ
  • ranjan roy | 24.99.96.246 | ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ১৭:৪৯650839
  • সমীরদা খুশি। মাসি, বাসন্তী, রানী ও হীরার যোগাযোগে আমরা টিঁকে আছি-- যেমনই হোক, খেয়ে পরে আছি, বেঁচে আছি।
    বলে -এরাও শ্রমিক; লুম্পেন প্রলেতারিয়েত। কিন্তু মধ্যবিত্ত পেটি বুর্জোয়াদের্ব থেকে কত ভাল। এদের মধ্যে মানবিক বৃত্তিগুলো সহজাত। এদের মুখ ও মুখোশে তফাৎ নেই।
    আমি চুপ করে থাকি। সহজে পয়সা কামানোর ব্যাপারে মাসির উপদেশগুলো আর ওকে শোনাইনি।
    কথা ঘোরাতে গিয়ে জিগ্যেস করি-- পেটি বুর্জোয়া কারা? আমাদের চেনাজানার মধ্যে কেউ?
    --হ্যাঁ, তোমার বাবা-মা।
    --- আর তোমার মা-বাবা?
    সমীরদা থতমত খায়। -- হ্যাঁ, ওরাও।
    কথা এগোয় না।
    রাণীর কোলে বাচ্চা এসেছে ক'মাস আগে। এখন রাত্তির আটটা-নটায় খদ্দের এলে বাচ্চাটাকে কাঁথা , দুধের বোতল সমেত আমাদের ঘরে শুইয়ে দিয়ে যায়। সমীরদা কিছু বলে না। খালি গায়ে লুঙি পরে একতাল কাগজ নিয়ে কিছু লিখতে থাকে।হিন্দিতে, বাংলাতে।
    কখনও কখনও বাচ্চাটা কঁকিয়ে উঠে তারস্বরে কাঁদে। ও লেখা ছেড়ে উঠে পড়ে। কাছে গিয়ে বাচ্চাটাকে দেখে। কাঁথা বদলায় পরম মমতায়।
    আমার খুব ভাল লাগে।
    ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে বলি-- তোমার ছোট বাচ্চা খুব ভাল লাগে?'
    -- ওরাই তো ভবিষ্যৎ। চেয়ারম্যান মাও বলেছেন," ভবিষ্যত তোমাদের হাতে। তোমরা হলে সকাল আটটা-নটার সূর্যের মত উজ্বল। দুনিয়াটা তোমাদের। দুনিয়া আমাদেরও। কিন্তু শেষ বিচারে দুনিয়াটা তোমাদের। তোমরা যদি দুনিয়াকে বদলে দিতে চাও, তবেই তা বদলাবে। আর তোমরা যদি নাই চাও, বেশ, তবে আর বদলাবে না।"
    -- ওনার কয়টি ছেলেমেয়ে?
    --- দাঁড়াও, গুনে দেখছি। প্রথম বৌ কাই-হুই। তার জনাদুই। দ্বিতীয় লং মার্চের বৌ। ওরও জনা দুই। তারপর কমরেড চিয়াং চিং। ওর এক বা দুই মেয়ে। ভাল মনে নেই।
    -- ও বাবা! তিন তিনটে বৌ। উনি আবার বিপ্লবী?
    --- বাজে বোকো না। প্রথম বৌ কাই হুইকে চিয়াং কাই শেকের সেনাপতি এক্সিকিউট করে। দ্বিতীয় বৌ দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের সঙ্গী। লং মার্চ পর্য্যন্ত সাথে ছিলেন।
    -- তারপর? পালিয়ে গেলেন? কেন?
    --- না, না। উনি পালিয়ে যান নি। চেয়ারম্যান ওঁকে তালাক দেন।
    -- কেন? উনি কী দোষ করেছিলেন?
    -- মানে সেভাবে দেখতে গেলে কোন , মানে তেমন কোন দোষ করেন নি। কিন্তু ওঁদের ভালবাসা মরে গিয়েছিল। বিপ্লবের শেষ দিকে উনি আর মওয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছিলেন না। সম্ভবতঃ ওনার তেমন আদর্শগত বিকাশ হয় নি।
    -- কী সব বলছ? স্বামী-স্ত্রী। স্ত্রী সন্তানের জন্ম দিয়েছে। ঘরদোর সামলেছে। শুধু তাই নয়, তোমাদের বিপ্লবের পথে লাইফ রিস্ক করে ওর সঙ্গে সঙ্গে হেঁটেছে বলছ। আর কী কী করলে তোমরা মহান পুরুষেরা খুশি হবে সমীরদা?
  • সে | 188.83.87.102 | ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ১৯:৩১650840
  • :-)
  • de | 130.62.212.177 | ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ২০:২৫650842
  • অপূর্ব!!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন