এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বেঁচে আছিঃ প্রেমে-অপ্রেমে

    ranjan roy
    অন্যান্য | ০১ অক্টোবর ২০১৪ | ২২০৭৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ranjan roy | 132.176.251.208 | ০১ অক্টোবর ২০১৪ ২২:৪৮650818
  • [ ক'দিন আগে ভাটপাতায় কাজু ও এককের কিছু বার্তালাপ চোখে পড়ল। কাজু জানতে চাইছিলেন নক্শাল আন্দোলনের আলো-আঁধারির কথা। তখন থেকেই ভাবছি এইরকম গল্পগুলো লিখবো কি না!
    ভুল বুঝবেন না, এইসব গল্প দিয়ে কোন আন্দোলনের মূল্যায়ন হয় না, সে চেষ্টাও করছিনা। কিন্তু আমার কাছে লার্জ বা গ্র্যান্ড সিনারিওর চেয়ে ব্যক্তিমানুষের যন্ত্রণা-বোঝাপড়া-বাঁচার চেষ্টা বেশি গুরুত্ব পায়, বিশেষ করে এইবয়সে।
    কাহিনীটি ৯০% সত্যি; লেখার তাগিদে ১০% স্বাধীনতা নিয়েছি। নামধাম অবশ্যই বদলে দিয়েছি।
    এবার দূগ্গা বলে শুরু করছি।]
  • ranjan roy | 132.176.251.208 | ০১ অক্টোবর ২০১৪ ২৩:৩৬650929
  • (১)
    শান্তিলতা
    ------------
    একটা ছোট মাইনিং শহর। পাহাড় আর নদীর গা ঘেঁষে। কিছু কোয়ার্টার, ছোট বাজার আর মন্দির-মসজিদ-চার্চ। কিছু বাঙালী, মালয়ালী, বিহারি, পাঞ্জাবী আর স্থানীয় হিন্দিভাষী মিলে পঁচমিশেলি জনতা।
    ছোটখাট বাজার ,কোম্পানির হাসপাতাল আর মিশনারি স্কুল। এই নিয়েই বেড়ে উঠেছিল শহরটি। পড়তাম মিশনারি স্কুলটিতে।

    তখন বোধহয় ক্লাস ফাইভে উঠেছি। একটু দুরন্ত স্বভাব। দাদা যেমন শান্ত, আমি তেমনি ছটফটে, মারকুটে। স্কুল থেকে ফেরার পথে আমার বন্ধু শিবাঙ্গী বলল-- দৌড়ে যা! চার্চের পাশের খানাডোবার ধারে তোর দাদাকে রাজন বেধড়ক ঠ্যাঙাচ্ছে।

    বইয়ের ব্যাগ আর ছোট্ট ছাতা সামলে প্রাণপণে দৌড়ে গেলাম। ক্লাস নাইনে দু'বার ফেল করা রাজনকে গোটা স্কুল ভয় পায়। খুব গুন্ডা। বাবার টায়ার সারানোর দোকান। মালয়ালী। আমরা বলতাম-- মাওয়ালী! হিন্দি ফিল্ম দেখে কথাটা শিখেছিলাম।
    গিয়ে দেখি দাদাকে ডোবার মধ্যে ফেলে খুব মারছে। আর দাদা তো মারামারির ধারে কাছে নেই। শেষে দাদার ঘাড় ধরে ডোবার পচা জলে গুঁজে দেবার চেষ্টা করছে।
    মাথায় দপ করে আগুন জ্বললো। ব্যাগ মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে হাতের ছাতাটা বাগিয়ে ধরে লোহার টিপের দিকটা দিয়ে রাজনের পিঠে মাথায় দে মার ! দে মার!
    হতভম্ব রাজন কোনরকমে মাথা বাঁচিয়ে ছুটে পালাল। ওর গা থেকে রক্ত বেরোচ্ছিল।
    সন্ধ্যেবেলা রাজনের বাবা এল আমাদের বাড়ি, সঙ্গে জনা দুই পড়শি। বাবা আবার মাইনিং এ সুপারভাইজারের চাকরি ছাড়াও বাড়িতে লোকজনকে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দিত। তাই সন্ধ্যেতে লোকজনের আসাযাওয়া আমাদের সয়ে গেছ্ল। কিন্তু আজ অন্য ব্যাপার। খানিকক্ষণ গরমগরম কথাবার্তার পর বাবা আমাকে ডেকে পাঠাল।
    রাজনের বাবা আমাকে দেখে অবাক। এইটুকু পুঁচকে মেয়ে ওর গুন্ডা ছেলেকে ছাতা দিয়ে মেরে পাট পাট করে দিয়েছে! ছেলেকে টিটেনাস লাগাতে হয়েছে।
    আমি খানিকক্ষণ মাথা নীচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে হটাৎ বলে উঠলাম--আংকল, রাজন ভাইয়া আমার দাদাকে অমন করে জলে ডুবিয়ে মারছিল কেন? দাদা যদি মরে যেত? অমনি করলে আবার মারব।
    বলে নিজেই অবাক হয়ে গেলাম। এ আমি কী বললাম?
    বাবা আমায় ভেতরে পাঠিয়ে দিল। একটু পরে আংকলরা চলে গেলে ভেতরে এসে আমাকে বেল্টপেটা করল। --খুব বাড় বেড়েছিস? তোর জন্যে পাড়ায় মুখ দেখাতে লজ্জা করে। আজ থেকে তোর আওয়ারা ছেলেদের সঙ্গে মিশে রাস্তায় রাস্তায় খেলে বেড়ানো বন্ধ। খেলতে হয় তো মেয়েদের সঙ্গে উঠোনে এক্কাদোক্কা খেলবি। আর ঘরের কাজকম্মে মাকে সাহায্য করবি।
    পরের দিন মা আমাকে সুন্দর করে চুল বেঁধে দিয়ে বলল-- শোন খুকু, ছেলেদের সঙ্গে খেলা তো দূরের কথা, ছুঁতেও দিবি না।
    --- মানে?
    --- মানে আবার কি! ছেলেরা খেলার সময় বা নানান ছুতোনাতায় গায়ে হাত দিতে চায়। তুই কোথাও হাত দিতে দিবি না। ঘাড়ে কাঁধে কোথাও না।
    -- কেন?
    -- কেন কি রে হারামজাদি! খালি মুখে মুখে চোপা! শোন, ছেলেরা ছুঁয়ে দিলে পেটে বাচ্চা এসে যায়। আর বাচ্চা হলে বুঝতেই পারছিস , হাসপাতালে যেতে হয়। কি লজ্জার ব্যাপার।
    -- কেন?
    -- শোন, বিয়ে না হয়ে পেটে বাচ্চা এলে খুব অপমানের ব্যাপার হয়। অনেকে গলায় দড়ি দেয়, গায়ে আগুন দেয়। তুই কি তাই চাস?
    -- না মা! কক্ষণো না।
    এবার আমি ভ্যাঁক করে কেঁদে ফেলি।
    মার গলার স্বর নরম হয়।
    -- বুঝতে পেরেছিস তাহলে! ভাল হয় যদি এখন থেকে কোন ছেলের চোখে দিকে না তাকাস। পারতপক্ষে কথা না বলিস্‌।
    -- দাদার সঙ্গেও খেলব না? কথা বলব না?
    -- দূর বোকা! দাদা তো নিজেদের বাড়ির লোক। বাইরের কারো সঙ্গে না। দাদার বন্ধুদের সঙ্গে না। বুঝলি?
    আমি ঘাড় হেলাই।
  • ranjan roy | 132.176.251.208 | ০২ অক্টোবর ২০১৪ ০৬:৩১651040
  • এর ক'দিন পরে স্কুলে টিফিনের সময় বারান্দা দিয়ে যাচ্ছি, গোটাকয় ছেলে নিজেদের মধ্যে দৌড়োদৌড়ি মারামারি করতে করতে আমার পাশ দিয়ে যাবার সময় আমাকে ধাক্কা দিল আর আমি ছিটকে পড়লাম। উঠতে গিয়ে খেয়াল হল অন্ততঃ গোটা তিনেক ছেলে আমাকে ছুঁয়েছে,--
    মাথায় ঘাড়ে পিঠে ।
    তাহলে এবার পেটে বাচ্চা আসবে? ক'টা বাচ্চা? এতগুলো ছেলে!
    সিস্টার রোজলিন এসে হাত ধরে তুললেন--কাঁদছ কেন? চলো ডেটল-তুলো দিয়ে সাফ করে দিচ্ছি। ঠিক হয়ে যাবে।
    আমার কান্না থামে না।
    তখন সিস্টার সেই ছেলেদের ডেকে এনে আমাকে সরি বলতে বললেন।
    আমার কান্না থামে না।
    উনি গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন--মাই চাইল্ড, হোয়াট হ্যাপেন্ড্‌?
    -- সিস্টার, আমার পেটে বাচ্চা আসবে।
    ওনার চোখ রসগোল্লা হয়ে গেল।
    -- হোয়াট?
    আমি বললাম যে ছেলেরা আমাকে ছুঁয়েছে, এত জায়গায়। তবে তো হবেই।
    উনি চুপ করে আমাকে দেখলেন।
    -- এসব তোমায় কে বলেছে?
    -- আমার মা।
    উনি আমায় আদর করে স্টাফ রুমে নিয়ে গিয়ে টফি দিয়ে বললেন -- তোমার মা ভুল বলেছেন। এভাবে কখনো বাচ্চা হয় না। আর এত ছোটমেয়ের বাচ্চা হয় না। তাহলে তোমার দাদা ছুঁলেও হত। এবার কান্না বন্ধ করে ক্লাসে যাও।
    -- সত্যি বলছেন, সিস্টার? তাহলে আমাকে গায়ে কেরোসিন ঢালতে কি বিষ খেতে হবে না?
    --জেসাস্‌!এসব কিছু করতে হবে না, ক্লাসে যাও।
    দরকার হলে আমি তোমার মার সঙ্গে কথা বলব।

    বাড়িতে মা শুনে গালে দুই চড় দিয়ে বলল-- ওরা তো সন্নিসি! ওরা বাচ্চা হওয়ার কি জানে? আমি যা বলছি সেটাই ঠিক।
    আস্তে আস্তে আমার মনে বিশ্বাস জন্মাল যে মা ঠিক।
    তখন থেকে কোন ছেলের চোখের দিকে তাকাতাম না।
    বাইরের ঘরে চা দিতে হলে পর্দার আড়াল থেকে বলতাম--চা হয়ে গেছে। দাদা বা বাবা কেউ এসে নিয়ে যেত।
  • aranya | 154.160.130.16 | ০২ অক্টোবর ২০১৪ ০৮:৫২651151
  • পড়ছি, রঞ্জন-দা। ভাল লাগছে
  • ranjan roy | 132.176.251.103 | ০২ অক্টোবর ২০১৪ ১৩:২৪651212
  • (২)
    এইভাবেই কেটে গেল বছর চারেক।
    ততদিনে ক্লাস নাইনে উঠলেও নম্বর সেই ৫০-৫৫। কি করবো! পড়তে বসার ফুরসৎ নেই। মা বলে আগে ঘরের কাজ কর, সকালে উঠে কয়লা ভেঙে উনুন ধরাই। কুড়ুল দিয়ে কিছু কাঠও কেটে রাখি। ডালগুলো শুকনো না হলে ফুঁ দিতে দিতে চোখে জল আসে।
    তারপর গরুকে জাবনা দিই, দুধ দোয়াই। মা-বাবার জন্যে চা-জলখাবার করি। বাবাকে অফিসের খাবার করে টিফিন ক্যারিয়ারে ভরে স্নান করে আমি ও দাদা স্কুলের জন্যে তৈরি হই। স্কুল থেকে এসে আবার চা-জলখাবার , রাত্তিরের রান্নায় মাকে সাহায্য করা। তারপর বই নিয়ে বসলে একটু পরেই ঘুমে চোখ ঢুলু ঢুলু।
    মা সকালে দেরি করে ওঠে। আয়েস করে চা খায়। অনেকক্ষণ ধরে সাজুগুজু করে। কানে আসে পাশের কোয়ার্টারের কাকিমাদের টুকরো টাকরা কথা।
    --সেনদা তো বৌয়ের কথায় ওঠে বসে।
    -- দোজবরে বিয়ে দিয়েছে, বৃদ্ধস্য তরুণী ভার্য্যা!
    তারপর হো হো হি হি!
    সব কথার মানে বুঝতাম না। এইটুকু আন্দাজ করতাম যে ওরা আমার মা-বাবাকে নিয়ে কিসব আজে বাজে কথা বলছে। রাগে পিত্তি জলে যেত। মনে মনে ভাবতাম-- ওদের বাড়ি কক্খনো যাব না। সত্যনারায়ণের সিন্নি খেতে ডাকলেও না।
  • সে | 203.108.233.65 | ০২ অক্টোবর ২০১৪ ১৩:৩৩651223
  • তারপর?
  • ranjan roy | 132.176.233.200 | ০২ অক্টোবর ২০১৪ ২৩:২৬651234
  • সেইদিনটা কখনো ভুলবো না।
    তখন বাংলাদেশ থেকে আমার দিদিমা এসেছিল। মা রোজ দিদাকে নিয়ে কোথাও না কোথাও বেড়াতে যাচ্ছে। দুপুর বেলা, বাড়ি খালি
    মেয়েদের প্রতিমাসের ঝামেলাটা শুরু হয়ে গেছে। স্কুল যাইনি। মাথা দপদপ করছিল, শুয়েছিলাম। দরজার কড়া নড়ে উঠল। ব্যাজার মুখে দরজা খুলে অবাক।ধবধবে ফরসা, একমাথা কোঁকড়া চুল, বয়েসে আমার থেকে অন্ততঃ বছর দশেকের বড় হবে।
    --কাকু বাড়ি নেই?
    -- না, বাড়িতে এখন কেউ নেই। বিকেলে আসবেন।
    --- আমার নাম সমীর। আমার বাবার নাম বিশ্বনাথ বসু। তোমার বাবার বন্ধু। মার অম্বলের ব্যথাটা একটু বেড়েছে। কাকুর ওষুধে বেশ কাজ দেয়। তাই এসেছি।
    --- বললাম তো, বাড়িতে কেউ নেই। বিকেলে আসবেন।
    -- শোন, কী নাম তোমার? কোন ক্লাসে পড়? তিমিরের বোন বুঝি? আচ্ছা, কাকু আমাদের বাড়িতে আসেন। ওনাকে বোল বোসবৌদির ব্যথাটা বেড়েছে।
    এবার চোখের দিকে না তাকিয়ে পারলাম না। একজোড়া কালচে চোখ, সেই চোখ জোড়া আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।

    বিকেলে মা ফিরতেই সব বললাম।
    মার ভুরু বেঁকে গেল।
    --সমীর এসেছিল? বিশুবাবুর ছেলে? অ! তোর বাবার থেকে ওই সাবুদানা ওষুধ নিতে? ঘরে ডেকে বসতে বলিস নি তো?
    মনটা তেতো হয়ে গেল।

    কিন্তু তারপর থেকে দেখি সমীরদা একটু ঘন ঘন আমাদের বাড়িতে আসতে ;লাগল।
    আসত মায়ের জন্যে ওষুধ নিতে। কিন্তু ওষুধ পেলেও তক্ষুণি চলে যেত না। আমার দাদার সঙ্গে বাইরের ঘরে বসে গল্প করে এক কাপ চা খেয়ে তবে যেত। তবে আমি মায়ের কড়া শাসন মেনে চলতাম। কখনো সামনে গিয়ে চা দিতাম না। দাদা ভেতরে এসে নিয়ে যেত।
    কিন্তু সমীরদা আসলেই একজোড়া চোখ আমার পেছনে সেঁটে যেত। মায়ের।
    ও চলে গেলে মা বিড়বিড় করত।
    পড়াশুনা করে না, খালি বাউন্ডুলেপনা করে বেড়ায়। এ ছেলের কোন ভবিষ্যৎ নেই। বোসদা রিটায়ার করলে খাওয়াবে কে?
  • ranjan roy | 132.176.233.200 | ০২ অক্টোবর ২০১৪ ২৩:৩৫651245
  • সেবার সরস্বতী পূজোর আগের শনিবার। মিশনারী স্কুলের প্রাঙ্গণের বাইরে শামিয়ানা খাটিয়ে ঠাকুর বসবে। স্কুলের ফাদার রাজি হয়েছেন ছুটি দিতে। কিন্তু পূজোর ব্যব্স্থা করতে হবে চার্চ ও স্কুলের লাগোয়া কম্পাউন্ডের বাইরে।
    আমি নাচতে নাচতে বাড়ি ফিরলাম। পূজোর সন্ধ্যেবেলার ফাংশানে আমাকেও কোরাস গানের দলে নেওয়া হয়েছে। আমার নাকি গলায় সুর আছে। মিউজিকের স্যার বলেছেন।
    কিন্তু ঘরে ঢোকার মুখে চোখে পড়ল বাইরের ঘরে দুজন ভদ্রলোক ও একজন মহিলা বসে আছেন।
  • ranjan roy | 132.176.129.129 | ০৪ অক্টোবর ২০১৪ ০১:০৯651256
  • ভেতরের ঘরে যেতেই মা হিসহিস করে বলল-- মুখপুড়ি! ওদের সামনে ফ্রক পরে নাচতে নাচতে আসতে কে বলেছে? খালি ধিঙ্গিপনা? যা শড়ি পরে চুল আঁচড়ে নে। আমি বিনুনি করে দিচ্ছি।
    -- শাড়ি পরব কেন? সরস্বতী পূজো তো আসছে হপ্তায়।
    -- ফের তক্কো! শোন শাড়ি পরে মিষ্টির থালা হাতে করে ওঁদের সামনে যাবি।
    -- ওরা কারা?
    --ওঁরা তোকে দেখতে এয়েচেন। আর শোন খুকু, তোর বয়েস জিগ্যেস করলে বলবি উনিশ বছর।
    -- কেন?
    --- ফের বেয়াড়াপনা! আরে চোদ্দ বছর বললে বিয়ে হবে কি করে?
    মার কথা শুনে বেশ আনন্দ হল , কিন্তু একটু ভয় ভয় করতে লাগল। তবু কথামত শাড়ি পরে সামনে গিয়ে ঢিপ করে তিনজনকেই প্রণাম করলাম।
    বয়স্কা মহিলা আমার থুতনি তুলে ধরে চুক চুক শব্দ করে বললেন--ওমা, এত বাচ্চা মেয়ে! এর জন্যেই বলছিলেন মিসেস সেন?
    মা সঙ্গে সঙ্গে বলল-- না, না, মিসেস জোয়ারদার। ও একটু ছোট খাট দেখতে। ওর বয়স প্রায় কুড়ি। কি রে খুকু? ঠিক বলিচি?
    আমি চুপ।
    সেই মহিলা বললেন-- সে কি ? তবে তো এর শরীরে বাড় নেই। কি খুকু? বয়েস কত?
    -- উনিশ।
    -- আচ্ছা, কোন ক্লাসে পড়? ক্লাস নাইনে? উনিশ বছরে ক্লাস নাইন? তবে তো পড়াশুনোয় তেমন মাথা নেই।
    এবার বাবা ব্যাটিং করতে নামল।
    -- মেয়ে হল পরের আমানত। যত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে পারি সেই ভাল।তাই আমরা ওকে ঘরের কাজে বেশি মন দিতে বলেছি। ঘরগোছানো, গরুর দুধ দোয়ানো, রান্নাবান্না, ঘরের যাবতীয় কাজ ও বেশ গুছিয়ে করে। এমন মেয়ে যার ঘরে যাবে--!
    --- সে তো বুঝলাম। আমরাও তো ঘরে লক্ষ্মীশ্রী ফিরিয়ে আনবে এমনি মেয়েই চাই। কিন্তু বয়েসটা? আচ্ছা, খুকু, তোমার স্কুলের ব্যাগ আনো দিকি! দেখি কেমন পড়াশুনো করছ?
    বইয়ের ব্যাগ খুলে উনি পাকা হাতে আমার খাতাপত্র ঘেঁটে স্কুল ডায়েরি বের করে পাতা উল্টে চেঁচিয়ে বললেন-- কি ব্যাপার বলুন তো? স্কুলের রেকর্ডে তো চোদ্দ বছর তিন মাস। আপনারা কি শেষে আমাদের হাতে হাতকড়া পরাতে চান?
    -- স্কুলের রেকর্ডে ভুল আছে।
    বাবার মিনমিনে গলা।
    -- দেখুন, আমার ছেলের বয়েস হল আটাশ। এ মেয়ে তো আদ্দেক বয়েসি। অ্যাই খুকু! তোমার বাপ-মা তোমার বিয়ে দিতে চান। তুমি বিয়ে মানে বোঝ?
    -- হ্যাঁ!
    -- কী হয় বলত?
    ---- বিয়ে হলে সুন্দর সুন্দর শাড়ি পাওয়া যায়। খুব খাওয়াদাওয়া হয়। অনেক গিফট পাওয়া যায়। তারপর বরবউ--।
    -- হ্যাঁ হ্যাঁ, থামলে কেন? তারপর বরবউ কী করে?
    -- সেজেগুজে রোজ সিনেমা দেখতে যায়, লোকেদের বাড়ি খেতে যায়। বাড়ি সাজানো হয়।

    ওঁরা চলে গেলেন। আমি ঠ্যাঙানি খেলাম, আমার নাকি অত কথা বলা উচিত হয় নি, আমি যেন পরের বার কম কথা বলি আর স্কুলের খাতাপত্র না দেখাই।
    হ্যাঁ, মা-বাবা আমায় বিয়ে দিয়ে পার করতে উঠে পড়ে লাগল। একের পর এক সম্বন্ধ আসতে লাগল, সব বেশি বয়সের। কিন্তু সবাই আমায় ছোটখাট, আর নাবালিকা বলে বাতিল করে চলে গেল। আমি এখন বাতিলের দলে।
    এমনি করে কিছুদিন চলার পর এক সকালে সমীরদা এসে হাজির। বাবাকে সোজা বলল-- কাকু, আপনার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে। আমি আপনার মেয়ে খুকুকে বিয়ে করতে চাই। কাজেই আপনি আর ওর জন্য পাত্র দেখবেন না।
    বাবা তো অবাক।
    -- কেন? ওকে বিয়ে করতে চাও কেন?
    সমীরদা বেশ সপ্রতিভ।
    -- কেন আবার কি? ওকে কিছুদিন ধরে দেখছি। খুব পরিশ্রমী, সপ্রতিভ, ন্যাকা নয়। ও আমার বেশ মনে ধরেছে। আমি যেমন জীবন ভাবছি, তাতে ও মনে হয় ভাল জীবনসঙ্গী হবে।
    -- দেখ সমীর, তোমার বাবা আমার বন্ধু, সহকর্মী। তার জন্যে আমাকে তার ঘরে মেয়ে দিতে হবে এমন কোন খত লিখে দিয়েছি কি? তুমি মন দিয়ে কলেজের পড়া করছ না, নকশাল রাজনীতি কর, আজ নয় কাল পুলিশে ধরবে। তোমার হাতে মেয়েকে দেব? তুমি কোনদিন সরকারি চাকরি পাবে?
    -- কাকু, এখন নয়। আমি গ্র্যাজুয়েট হয়ে ঠিক কোন চাকরি খুঁজে নেব। তারপরেই ওকে নিয়ে যাব। ততদিন আপনি প্লীজ, আর কাউকে মেয়ে দেখাবেন না।
    -- তোমার পেট গরম হয়েছে। বাড়ি গিয়ে ডাবের জল খেয়ে শুয়ে পড়।
    -- একটা কথা বলি। আপনি আমার কথা সিরিয়াসলি নিচ্ছেন না কাকু। জানেন তো আমি নকশাল।যদি আমার কথা না রাখেন, তো আপনার বাড়ি একদিন বোম মেরে উড়িয়ে দেব।
  • ranjan roy | 132.176.213.16 | ০৪ অক্টোবর ২০১৪ ১৬:২৫650819
  • না, বাবা-মা সমীরদার কথা সিরিয়াসলি নেয় নি।
    ওকে ছোটবেলা থেকে দেখেছে যে। একটু বড় বড় কথা বলার অভ্যেস। কিন্তু ঠিক মারামারি করার ছেলে নয়।
    কিন্তু ওর কথায় রেগে গেল বাবা।
    -- সেদিনের ছোকরা! আমাদের বোসের ছেলে। ছোটবেলায় আমার ছেলেকে বলেছিল- তোর বাবা ফোরম্যান? তো আমার বাবা সিক্সম্যান।সে আজকে আমার ঘরে এসে বলল বোম মারবে! ভেবেছে কি? সাপের পাঁচ-পা দেখেছে? আজই সন্ধ্যেবেলা বোসদের বাড়ি যাচ্ছি। এদিকে আমার থেকে নিয়মিত ওষুধ নেয় আর তার ছেলে আমাকে ধমকি দিয়ে গেল। বলব ওর ছেলেকে সামলাতে ।হলছে?
    --- আগে নিজের মেয়েকে দেখ। নিঘ্ঘাৎ এই ওকে আসকারা দিয়েছে। নইলে ওর সাহস হয় কি করে!
    তারপরই মা আমার চুলের মুঠি ধরল।
    --অ্যাই মুখপুড়ি! সত্যি করে বল তোদের মধ্যে কী চলছে? কদ্দূর এগিয়েছিস? আমাদের মুখ পোড়াতে আর কি বাকি রেখেছিস?
    অনেকক্ষণ মার সহ্য করে শেষে ডুকরে কেঁদে উঠলাম-- কেন আমার কথা বিশ্বাস করছ না মা? সত্যি বলছি , আমি সমীরদার সঙ্গে কোনদিন কোন কথা বলিনি।
    ও এসে এসব তোমাদের কেন বলেছে? তা আমি কি করে জানব?
    মারতে মারতে মা হাঁপিয়ে উঠেছিল। মোটাসোটা মানুষ, দোক্তা দিয়ে পান খায় আর ব্লাডপ্রেসার আছে।
    শেষে হাতপাখার ডাঁটি ছুড়ে ফেলে দিয়ে বাবাকে বলল-- এ মেয়েকে আর ঘরে রাখা যাবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পার করার ব্যবস্থা কর।
    আমি পরের দিন অনেক ভাবলাম। তারপর স্কুল ফেরার পথে ক্লাবের ঠেকের কাছে গিয়ে সমীরদাকে ডেকে বললাম-- আপনার সঙ্গে কিছু কথা আছে।
    সমীরদা আর ওর বন্ধুরা বেশ অবাক হল। কেউ কেউ ঠোঁট টিপে হাসল। আমার মাথায় তখন আগুন জলছে। কে কি ভাবল তাতে আমার বয়েই গেছে। সোজা বললাম-- দাদা, আপনাকে কি আমি কিছু বলেছি?
    --মানে?
    -- এই আমার বিয়ে হওয়া নিয়ে? বা আপনাকে বলেছি যে আমাকে আমাকে বিয়ে করুন? সত্যি করে বলুন তো! সবার সামনেই বলুন।
    -- না তো!
    --তাহলে আপনার নাম করে আমাকে মা মারল কেন? আপনি কিছু উল্টোপাল্টা বলবেন আর তার জন্যে আমি ভুগব? কেন?
    ---- তোমাকে মেরেছে?
    -- হ্যাঁ, মেরেছে। উনুনের গরম শিক এনে হাতে ছ্যাঁকা দিয়েছে। দেখবেন? এই দেখুন। মেয়েদের কত ভুগতে হয় তা কি আপনারা কখনো বোঝেন? খালি ফালতু হিরোগিরি!
    --- তুমি বাড়ি যাও। আর মার খাবে না। আমি দেখছি।
  • সে | 188.83.87.102 | ০৫ অক্টোবর ২০১৪ ১৫:১১650830
  • জমে গেছে।
  • ranjan roy | 132.176.152.241 | ০৫ অক্টোবর ২০১৪ ১৬:৩৮650841
  • ( ৩)
    ভয়ে ভয়ে পা গুণে গুণে বাড়ি পৌঁছ্লাম।
    নাঃ, মা কিছু টের পায় নি, তবু আমার বুকের ভেতর ঢিপ ঢিপ করছিল। মা আর দিদা আয়েশ করে পানের বাটা সামনে রেখে পান সেজে খাচ্ছিল আর বাংলাদেশের গল্প করছিল। দুটো শব্দ বারবার শুনছিলাম-- সাতক্ষীরা আর খুলনা। দুটো মাছের নাম বারবার শোনা যাচ্ছিল-- কালবাউস আর মহাশোল। আরো কতগুলো রান্নার গল্প শুনছিলাম, রান্নার প্রণালী সমেত। যেমন, লাটি মাছের পুর, বাইল্যড়া মাছের ঝুরা আর শোলমাছের পুড়া। তারপর দিদা শুরু করল নলরাজার গল্প। আর দময়ন্তীর হাত থেকে কেমন করে পোড়া শোলমাছ পালিয়ে গেল সেই গল্প।
    দিদা খুব ভাল গল্প বলতে পারে। তারপর আমি মা আর দিদার জন্যে চায়ের জল চড়িয়ে চার চামচ চিনি ঢাললাম। কানে এল দিদা বলছে আমার নাতনি খুব সুখে থাকবে। গোয়ালভরা গাই। কুড়ি বিঘে ধানী ক্ষেত। মহাজনী কারবার। ষাট-সত্তরটা নারকোল গাছ। আগের পক্ষের ছেলেমেয়ে মাত্র দুটো। আর ওরা বেশ বাচ্চামত, বড়টা সবে দশে পা দিয়েছে। ভালই হবে। নাতনি আমাদের না বিইয়েই কানাইয়ের মা হবে।
    মা এবার নীচু গলায় কিছু বলল।
    দিদা ঝাঁঝিয়ে উঠল--- দোজবরে দোজবরে করিস না তো! তুই দোজবরে না? তাতে কি হইছে? মানুষটা ভালা। আগের পক্ষের বৌ মরছে দুধ জ্বাল দিতে গিয়ী কড়াই উল্টাইয়া। হেইডা ও ত বছর পাঁচেক হইসে। মানুষটা আর বিয়া করতে চায় না। কারো সিকে ফিরা তাকায় না। আমার দেওরের শ্বশুর বাড়ির পাল্টি ঘর।
    এইবার রাজি হইছে। আরে, বুইড়্যা মানুষের ভালবাসা জইম্যা ক্ষীর হয়। নাতনির কষ্ট হইব না, নাতনিরে পাগল পাগল কইর্বো না। কি কস খুকু?
    দিদা মায়ের সঙ্গে চোখে চোখে কিছু কথা বলে। মা আমাকে দেখে, তারপর মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
    আস্তে আস্তে মাথায় ঢোকে যে আমাকে বাংলাদেশে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
    কি যন্ত্রণা! আমি কিছুতেই বাংলাদেশে বউ হয়ে যাব না। শুনেছি ওটা মোচলমানের দেশ। এদিকের লোকজন বলে--- পাঠান লোগোঁ কা।
    ওখানে নাকি সবাইকে বোরখা পরতে হয়। ওরে বাবা! সেই কালচে কাপড়ে মাথা ঢাকা পোষাক!
    আমি যাব না, কিছুতেই না। যেতে হবে তো দিদা যাক গে! কিন্তু দিদিমা বুড়ি যে দুমাসের জন্যে ওদেশ থেকে বেড়াতে এসেছে, সে তো নড়ার নাম করছে না! তিনমাস হয়ে গেছে। আমাকে সঙ্গে করেই নাকি সেই সাতক্ষীরা না কি যেন, সেখানে নিয়ে যাবে।
    নাঃ, কিছু একটা করতেই হবে।
    ভাবলাম; দেখি যত গর্জে তত বর্ষে কি না!
  • সে | 203.108.233.65 | ০৬ অক্টোবর ২০১৪ ২০:৪৪650852
  • কই রঞ্জনদা লিখুন!
  • ranjan roy | 132.176.2.221 | ০৬ অক্টোবর ২০১৪ ২২:১৭650863
  • না, সে কথা রেখেছিল।
    সন্ধ্যের মুখে হাজির হল জনাদশেক ছেলে নিয়ে। ওদের মধ্যে তেলেগু রবি আমাদের পেছনের পাড়ার। আর চশমা পড়া অলকদা অফিসার পাড়ার। বাকিগুলো মুখচেনা।

    খানিকক্ষণ তর্কাতর্কি হওয়ার পর বাবা বলল-- এবার পুলিশ ডাকব। আমাদের বোসের ছেলে বলে এতক্ষণ সহ্য করেছি। কিন্তু এভাবে বাড়ি বয়ে দলবল নিয়ে আমাকে ধমকাবে এ আমি সহ্য করব না। ট্রেসপাসের দায়ে হাজতে যেতে চাও? নইলে মানে মানে কেটে পড়।
    সমীরদার গলার সুর নীচু হল।
    কিন্তু চশমা পড়া ছেলেটি কেটে কেটে বলল-- ডাকুন পুলিশ। আমরাও পুলিশকে বলব যে এই বাড়িতে কিশোরী মেয়ের ওপর অত্যাচার হচ্ছে সেই খবর পেয়ে আমরা এসেছি।
    --- আমার মেয়ে! আমি যা খুশি করব! বাবা হয়ে মেয়েকে শাসন করা যাবে না?
    -- না। বাবা হলেও যা খুশি করা যায় না। আর এর নাম শাসন? যদি আপনার মেয়ে জামা তুলে গরম লোহার ছ্যাঁকার দাগ দেখায় তবে কিন্তু বাবা-মা দুজনেরই হাজত বাস পাক্কা। ডাকুন পুলিশ।
    বাবার মুখে খানিকক্ষণ কথা সরল না।
    -- আমার মেয়ে তোমাদের পোড়া দাগ দেখিয়েছে? জামা খুলে? তলে তলে এত?
    শোন সমীর, এ মেয়েকে আমি ঘরে রাখব না। আমার আরও একটা ছোট মেয়ে আছে। বিগড়ে যাবে। তুমি একে বিয়ে করতে চাও? এককাপড়ে নিয়ে যাও। বাড়িতে বাপ-মার সঙ্গে কথা বলেছ? বলে ফেল। কিন্তু যদি ভেবে থাক যে মেয়ের বাপের থেকে কিছু আদায় করবে তবে সে গুড়ে বালি। আমি এই মেয়েকে একটা ফুটো পয়সাও দেব না। সেটা জেনেই বাপ-মার সঙ্গে কথা বল, রাজি করাও। আর বিয়ে করে বিদেয় হও।
    -- অন্ততঃ একমাস সময় দেবেন তো?
    -- এই মেয়ের জন্যে একমাস অনেক বেশি। পনের দিন। পনের দিনের বেশি নয়।
    ওরা চলে যেতেই আমি ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেললাম।
    -- বাবা, আমার বিয়ে দিও না। সমীরদার বাড়িতে আমাকে পাঠিও না। আমি নার্সিং নিয়ে বিএসসি পড়তে চাই। মা, তুমি একটু বল। আমি তোমাদের ছেড়ে যাব না।
  • ranjan roy | 132.176.2.221 | ০৬ অক্টোবর ২০১৪ ২২:৩৬650874
  • কান্নাকাটিতে চিঁড়ে ভিজল না।
    -- ন্যাকামি হচ্ছে? বিয়ের জন্যে ছোঁক ছোঁক করে এখন যত রাজ্যের ছেনালি?
    --- তুই যদি ওদের গা না দেখালে ওরা কি করে জানল তোর কোথায় পোড়া দাগ? তুই আমাদের মুখে চুণকালি দিয়েছিস। আর না।
    আমি চুপ করলাম।
    সমীরদারা আর আসে নি। কিন্তু মার খাই নি।

    তবে পনের নয়, চোদ্দদিনের দিন বিকেল থেকেই বকা শুরু হল।
    -- কই এল তোর বর? যত ফক্কড় ছেলে! ইল্লুতে স্বভাব। কাজকম্মো-পড়াশুনো সব জলাঞ্জলি দিয়ে দেশোদ্ধার করতে নেমেছে! কাকু, আপনার মেয়েকে আমি বিয়ে করতে চাই!
    এই সব টেনশনে সেদিনের রান্নাটা পুড়ে গেল। ভাত ও তলায় লেগে গেছ্ল। সেই দোষ দেখিয়ে দিল বাড়ি থেকে বের করে। কত করে বললাম- এই রাত্তিরে কোথায় যাব? কার কাছে থাকব? আমাকে অন্ততঃ তোমার গোয়াল ঘরে থাকতে দাও বাবা!

    রাস্তায় বেরিয়ে চোখের জলে সব ঝাপসা। ঘন্টাখানেক পাড়ার শেষে পাকুড় গাছটার নীচে বসেছিলাম। তারপর দু-একজন চেনালোক যেতে যেতে আমার দিকে তাকিয়ে দেখছে। চোখে প্রশ্ন। কেমন লজ্জা করতে লাগল।
    পেছনের বুনো রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে পেছনের পাড়ার তেলেগু রবির বাড়িতে গিয়ে কড়া নাড়লাম। ভাগ্যিস ও বাড়িতে ছিল। ও তো আমাকে দেখে অবাক। বললাম-সমীরদা কোথায়?
    -- কমরেড সমীর পার্টির কাজে বিলাসপুর গেছে। কাল ফিরবে। আজ রাতে আমাদের বাড়িতে থাক। সমীর আসুক।
    হাতে যেন চাঁদ পেলাম। কিন্তু বড্ড লজ্জা লজ্জা করছিল। রবিদা গিয়ে ওর বাবা-মার সঙ্গে তেলেগুতে কিসব বলল। ওরা বারবার আমার দিকে আঙুল দিখিয়ে কি সব জিগ্যেস করছিল।
    ওর মা এসে আমাকে বলল--হোমিও ডাক্তার সেনবাবুর মেয়ে? মানিয়ে থাকতে পার না? এই বয়সেই এত রাগ? বাবা-মার ওপর রাগ করে ঘর ছেড়ে আসা ভাল কথা নয়। কাল বাড়িতে ফিরে যেও।
    আমি সবার খাওয়াদাওয়ার পর এঁটো বাসন ধুতে যাচ্ছিলাম তো রবির মা আমার হাত থেকে বাস্ন কেড়ে নিয়ে বলল-- এসব করার দরকার নেই। আজ রাতটা থাকো, কাল ঘরে ফিরে যেয়ো, কেমন?
  • সে | 188.83.87.102 | ০৬ অক্টোবর ২০১৪ ২৩:১৯650885
  • চোখের সামনে যেন সমস্ত দেখতে পাচ্ছি।
  • সিকি | 131.241.127.1 | ০৭ অক্টোবর ২০১৪ ১৪:৩৯650896
  • মানুষ কেন এত নিষ্ঠুর হয়!

    রঞ্জনদা, লেখো। পড়ছি।
  • de | 69.185.236.54 | ০৭ অক্টোবর ২০১৪ ১৫:৫৬650907
  • এমনও সত্যি হয়? বাপ-মা এমন হয়?
  • kumu | 11.39.27.245 | ০৭ অক্টোবর ২০১৪ ১৭:৫৭650918
  • হয়।এর চেয়েও নিষ্ঠুর হয়ে থাকে।
  • সে | 203.108.233.65 | ০৭ অক্টোবর ২০১৪ ১৮:০২650930
  • আচ্ছা রঞ্জনদা, যদি বলি আর লিখবেন না, তবে কি সত্যিই লেখাটা থামিয়ে দেবেন?
    তা নিশ্চয় না, তাই না?
  • Ishani | 116.216.212.225 | ০৭ অক্টোবর ২০১৪ ১৮:২৯650941
  • বা: , ভালো লাগছে খুব | মেয়েটির কষ্ট নয় | গল্পের বুনোট |
  • Du | 24.99.231.164 | ০৭ অক্টোবর ২০১৪ ১৮:৩০650952
  • তার পর, রঞ্জনদা?
  • সে | 203.108.233.65 | ০৭ অক্টোবর ২০১৪ ১৮:৩৫650963
  • হ্যাঁ, গল্পের গতি ও বুনে চলা। এখন থামিয়ে দিলেও রঞ্জনদা থামতে পারবেন না।
  • Du | 230.225.0.38 | ০৮ অক্টোবর ২০১৪ ১১:০৫650974
  • সে গুড়ে বালি, সে। রঞ্জনদা আগেও অনেক লেখাই সবাইকে অপেক্ষায় রেখে আর লিখতে ভুলে গিয়েছেন ঃ(।
    আশা করি ভুল লিখিনি। আমি মাঝে মাঝে আসিনা তবে এতটা কি মিস করেছি?
  • ranjan roy | 24.97.150.128 | ০৮ অক্টোবর ২০১৪ ১৪:৫১650985
  • আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে এ লেখা মাঝখানে থামবে না। কারণ, অনেক দিন ধরেই ভাবছি এই মেয়েটির গল্পটা বলা দরকার। পুরুষেরা খুব গ্রেট সাজতে ভালোবাসে। ব্যক্তি মেয়েটির চাওয়া-পাওয়া গৌণ হয়ে যায়।
    বড় উদাহরণ-- গৌতম বুদ্ধ/যশোধরা। শ্রীচৈতন্য/বিষ্ণুপ্রিয়া। দ্রৌপদী/উর্মিলার কথা নাই তুললাম।
    ছোট উদাহরণ- বর্তমান গল্পের ছেলেটি, যে আজও ভাবে দেশের জন্যে/সমাজের জন্যে অনেক কিছু ( কেরিয়ার/টাকাপয়সা) ত্যাগ করেছে। আমি দ্বিমত পোষণ করি। আমি মনে করি ছেলেটি শুধু নিজের অহং পরিতৃপ্ত করছে সমাজ পরিবর্তনের নামে।
    তাই এই লেখা, নাম ধাম পাল্টে দিয়ে।
    দুদিন গ্যাপ-- দিল্লি থেকে ট্রেনে রায়পুর এলাম বলে। আজ রাত থেকে ফের শুরু। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
  • d | 24.97.189.149 | ০৮ অক্টোবর ২০১৪ ১৫:২৬650996
  • না না রঞ্জনদার অন্য ভাইদের থেকে রঞ্জনদার রেকর্ড সেদিক থেকে অনেক ভাল। রঞ্জনদা অনেক কটাই শেষ করেন একটু এদিক ওদিক করে।
  • kumu | 11.39.24.61 | ০৮ অক্টোবর ২০১৪ ১৫:৩৭651007
  • অ রঞ্জনদা দিল্লী আসবেন তো ?
  • ranjan roy | 24.97.25.54 | ০৮ অক্টোবর ২০১৪ ১৮:৪৩651018
  • কুমু,
    হ্যাঁ, হ্যাঁ, ১৭ তারিখ লুরু, ২৫ তারিখ লুরু থেকে দুরন্ত চড়ে ২৭ তারিখ সকালে দিল্লি।
    জানুয়ারি অব্দি দিল্লিতে আছি, মাক্কালী! তবে প্রতি মাসে একবার দিন দশেক ৩৬ গড়।
    পাপী পেট কা সওয়াল হ্যায়!!!ঃ)))
  • ম্যামি | 127.194.225.245 | ০৮ অক্টোবর ২০১৪ ১৯:৩২651029
  • ঝুলস্য ঝুল।
  • ranjan roy | 24.97.128.129 | ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৫৬651041
  • ম্যামি,
    লেখাটা? হতেই পারে। কিন্তু ফ্যাক্টগুলো ২৪ ক্যারেট খাঁটি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক প্রতিক্রিয়া দিন