এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বেঁচে আছিঃ প্রেমে-অপ্রেমে

    ranjan roy
    অন্যান্য | ০১ অক্টোবর ২০১৪ | ২১৮৩৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ranjan roy | 132.176.6.164 | ২০ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০৯650943
  • মাঝবয়সী হাকিম চশমার কাঁচ মুছে সমীরদার দিকে আর একবার দেখলেন। আদালতে অদ্ভূত সন্নাটা!
    --বেশ! আইনতঃ এতে কোন অসুবিধে নেই। আর ভবিষ্যতে মামলা চলাকালীন যদি কখনও দরকার পরে তবে উকিল চাইতে পারেন।
    তারপর উনি ভারিক্কি ভাব দেখিয়ে সরকারি উকিলের দিকে তাকিয়ে বললেন-- ইউ মে প্রসীড!
    সমীরদা বলল-- আমাকে কিছু সাদা কাগজ ও একটি কলম দিতে আজ্ঞা হোক হুজুর।
    হাকিম ভুরু কোঁচকালেন, কিন্তু ওঁর ইশারায় পেশকার এসে সমীরদাকে একটা ডট পেন ও এক দিস্তে কাগজ ধরিয়ে দিল।
    সরকারি উকিলের সহকারীর হাতে একতাড়া ফাইল ও কিছু বই পাশের টেবিলে রাখা, তাতে কিছু কিছু চিট মত লাগানো।
    উকিল আধ ঘন্টা ধরে একসুরে একের পর এক ঘটনার কথা বলতে লাগলেন ও সহকারী ওঁকে ইশারা পেতেই বিভিন্ন কাগজ ও চোতা ধরিয়ে দিতে লাগল। তারপর ও একজন পুলিশ অফিসারকে সাক্ষী হিসেবে কাঠগড়ায় তুলে সেদিন আমাদের গ্রেফতারের ব্যাপারে কিসব প্রশ্ন করতে লাগল যার আদ্দেক কথাই বুঝতে পারছিলাম না। সমীরদা গম্ভীর মুখে কাগজে নোট নিচ্ছিল।
    সেই পুলিশ অফিসার কাঠ্গড়া থেকে নামার আগে হাকিম সমীরদাকে জিজ্ঞেস করলেন--এনি কোশ্চেন?
    সমীরদা দুদিকে মাথা নাড়ল।
    এর পরে থানার অফিসার কাঠগড়ায় উঠে আমাদের কবে , কখন, কী অব্স্থায় থানাতে সুপূর্দ করা হয়েছিল তার ব্যাপারে বললেন, অ্যারেস্ট মেমো দেখালেন ও সাক্ষীদের নামধাম বললেন।
    এবারও সমীরদা কোন ক্রস এগজামিনেশন করতে রাজি হল না।
    আমার কেমন অস্বস্তি হচ্ছিল। সব তো আমাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। এইসময় সমীরদা চুপ করে থাকলে সরকারপক্ষের সব অভিযোগ প্রকারান্তরে স্বীকার করে নেওয়া হল কি না! মায় বে- আইনী অস্ত্র রাখার মিথ্যেটুকু?
    সমীরদার শুরুটা বেশ নাটকীয় হয়েছিল; বেশ সিনেমা সিনেমা! কিন্তু সিনেমায় তো এমন হয় না! আমার ভয় ভয় করছিল। ও উকিল না চেয়ে কোন ভুল করল নাতো?
    হাকিমও একটু অবাক হয়ে ওকে সতর্ক করলেন।
    -- আপনি চাইলে এখনো শুনানি মুলতুবি রেখে উকিল লাগাতে পারেন।
    ---না হুজুর! আমি তো তৈরি হওয়ার সুযোগ পাইনি। তাই মামলাটা আগে বুঝে নিচ্ছি। ওদের মূল সাক্ষীদের বয়ান শোনার পর আমি কাউকে কাউক এ জেরা করার জন্যে আবার ডাকতে চাই!
    -- আবেদন মঞ্জুর!
  • সে | 188.83.87.102 | ২০ নভেম্বর ২০১৪ ০০:১৮650944
  • মার্ভেলোসো!
  • ranjan roy | 132.176.6.164 | ২০ নভেম্বর ২০১৪ ০৭:২৮650945
  • এরপর সরকারী উকিল আর একজন সাক্ষীকে কাঠগড়ায় তুলল। সে আমাদের ওই গ্রাম মাধবপুরেরই বাসিন্দা। সে নাকি সেদিন ভোরবেলায় আমাদের বাড়ি থেকে পুলিশ যখন অস্ত্রশস্ত্র বাজেয়াপ্ত করে তখন হাজির ছিল।
    তাকে দেখে আমি চমকে উঠলাম আর সমীরদাও নড়ে চড়ে বসল।
    না, সিনেমার মত এখানে সাক্ষীকে লালকাপড়ে মোড়া গীতা হাতে নিয়ে সত্যি বলার শপথ নিতে হয় নি।
    শুধু ওর কাঠগড়ার পাশে দাঁড়িয়ে পেশকার বলতে লাগল-- বলুন, আমি ঈশ্বরের নামে শপথ করিয়া বলিতেছি, যাহা বলিব সত্য বলিব; সত্য বই মিথ্যা বলিব না।
    সাক্ষী শিবরাম মাহাতো মাথা হেলিয়ে হ্যাঁ বলল।
    আমার কেমন ছোটবেলায় পাশের বাড়িতে শ্রাদ্ধের সময় পুরুতঠাকুরের মন্ত্র পড়ার কথা মনে হল।
    লোকটা একবারও আমাদের দিকে চোখে চোখ রেখে তাকাচ্ছিল না। সরকারী উকিলের প্রশ্নের উত্তরে জানাল যে হ্যাঁ, আমাদের চেনে।সমীরডাক্তার দেশি পদ্ধতিতে ডাক্তারি করে। বাড়িতে নানারকম লোক আসে।
    গত সপ্তাহে গ্রামের লোকজনকে নিয়ে উগ্র মিছিল করে বিডিও অফিসে গেছল এমন কথা ও গাঁয়ের লোকের কাছে শুনেছে। গ্রেফতারের আগের দিন রাত্তিরে ওই বাড়িতে বেশ কয়েক্জন সন্দেহ্জনক বাইরের লোক এসেছিল।
    হ্যাঁ, অস্ত্রশস্ত্র বাজেয়াপ্ত করার পুলিশের সিজার লিস্টে ও স্বেচ্ছায় দস্তখত করেছে, পুলিশ কোন চাপ দেয় নি।
    শিবরামের পালা শেষ হলে ও কাঠগড়া থেকে নেমে যাচ্ছিল। কিন্তু হাকিম কিছু বলার আগেই সমীরদা উঠে দাঁড়িয়েছে।
    ---- ইয়োর অনার, আপনার পারমিশন পেলে আমি এই সাক্ষীকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই।
    -- পারমিশন গ্রান্টেড, করুন!
    --- কিন্তু ইয়োর অনার, ও দাঁড়িয়ে আছে আমার থেকে অনেক দূরে হলের আরেক মাথায়। আর আমি এখন আসামী হিসেবে প্রশ্ন করব না। বরং অভিযুক্ত সমীর ডাক্তার ও শান্তিলতার ডিফেন্স কাউন্সিল হিসেবে সরকারী সাক্ষীকে ক্রস-এগজামিনেশন করব। কাজেই আমাকে আসামীর কাঠগড়ার বাইরে এসে সাক্ষীর কাঠগড়ার কাছে যেতে অনুমতি দেওয়া হোক।
    আদালতে চাপা গুঞ্জন শুরু হয়ে গেল। দুটো জিনিস খেয়াল করলাম। এই এজলাসে লোকজন অনেক বেড়ে গেছে। প্রচুর লোকজন চিড়িয়াখানায় বাঘ দেখার মত আমাকে ও সমীরদাকে দেখছে আর ফিসফাস করছে। আর সমীরদা হাকিমকে হুজুর না বলে ইয়োর অনার বলছে; কেমন কঠিন কঠিন সেন্টেন্স বলছে।
  • ranjan roy | 132.176.6.164 | ২০ নভেম্বর ২০১৪ ০৭:৫২650946
  • এদিকে বয়স্ক সরকারী উকিল লাফিয়ে উঠেছেন।
    --অবজেকশন! আমরা ইতিমধ্যেই পুলিশের সাক্ষ্য ও বিভিন্ন এগজিবিটের মাধ্যমে মহামান্য আদালতকে দেখিয়েছি যে এই সমীরডাক্তার একজন ডেঞ্জারাস ক্রিমিন্যাল। ওকে এই গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর কাছে ঘেঁষতে দেওয়া উচিত হবে না।
    সমীরদার চোয়াল কি একটু শক্ত হল?
    --- ইয়োর অনার! আইনের চোখে সরকারী উকিল ও ডিফেন্সের উকিল --দুজনেই সমান, দুজনেই অফিসার অফ দ্য কোর্ট। দুজনেরই কর্তব্য মহামান্য আদালতকে সত্য উদ্ঘাটনে সাহায্য করা। এ'ব্যাপারে একজন বেশি সুবিধে পেতে পারে না। আর আমি নিরস্ত্র, অসুস্থ। চারদিকে এত সশস্ত্র পুলিশ; আমাকে এত ভয় পাওয়ার কি আছে?
    --- অবজেক্শন ওভাররুলড্‌!
    আদালতে চাপা উত্তেজনা। সমীরদা কাঠগড়া থেকে বেরিয়ে সাক্ষীর দিকে এগিয়ে চলেছে। পুলিশেরা বেশি নড়েনি। কিন্তু সতর্ক চোখে তাকিয়ে আছে। এজলাসে লোকজনের ও বেশ কিছু উকিলের ভিড় বেড়ে গেছে।
    আমার কেমন মনে হল যে সমীরদা বেশ ড্রামা করতে ভালবাসে। ওর এইসব আন্দোলনে জড়িয়ে পড়া, আমাকে ঝোঁকের মাথায় বিয়ে করে ঘরবাড়ি ছেড়ে দেওয়া, এখানে এই অজ পাড়াগাঁয়ে ডাক্তারি করা সব কিছুর মধ্যেই কেমন নাটক নাটক ভাব। লোকটা কি জীবনে সব সময় উত্তেজনা খোঁজে? নিজেকে হিরো ভাবে? সারাক্ষণ দর্শকের হাততালি কুড়োতে চায়?
    তাহলে যেদিন জীবনে কল-শো পাবে না, স্টেজ পাবে না সেদিন কী হবে? ওর যা হবার তা হবে, কিন্তু আমার কী হবে?
    দূর ছাই! কী সব ভাবছি। ওসব যখন হবে তখন দেখা যাবে, জরুর নিপট লেঙ্গে!
    এখন আমার অমিতাভ বচ্চন দাঁড়িয়ে রয়েছে সাক্ষীর সামনে, মুখে মুচকি মুচকি হাসি। সবাই কি হয় কি হয় করে ওকে দেখছে, আমিও দেখতে থাকি।
  • potke | 126.202.117.147 | ২০ নভেম্বর ২০১৪ ০৯:৩২650947
  • এই সময় থামতে হল, ও রায়্মশায়!!
  • de | 69.185.236.53 | ২০ নভেম্বর ২০১৪ ১০:১৩650948
  • উঃ!!
  • সে | 188.83.87.102 | ২০ নভেম্বর ২০১৪ ১৩:২৩650949
  • নাটক জমে গেছে
  • মোহর | ২০ নভেম্বর ২০১৪ ১৪:২৫650950
  • তাপ্পর??
  • ranjan roy | 132.176.214.244 | ২০ নভেম্বর ২০১৪ ১৬:০৭650951
  • -- আচ্ছা, শিবরামবাবু, আপনি তো আমাকে চেনেন ? তাই না!
    শিবরাম মাহাতো সম্মতিসূচক মাথা হেলায়।
    --- আপনি আমাকে কীভাবে চিনলেন? পুলিশ শিখিয়ে দিয়েছে?
    -- অবজেক্শন!
    -- সে কি! ডিফেন্স তো লিডিং কোশ্চেন করতেই পারে।
    --ওভাররুলড্‌; সাক্ষী জবাব দিন।
    -- না, পুলিশ শিখিয়ে দেয় নি। আমরা একই গাঁয়ে থাকি। সবাই জানে যে সমীরবাবু দেশি টোটকা, ছুঁচ চিকিৎসা করেন।
    -- আপনি কখনো আমার কাছে ছুঁচ চিকিৎসা করিয়েছেন? না, আমি ওসবে বিশ্বাস করি না।
    --- আচ্ছা, আপনি আমাকে প্রথম কখন দেখেছেন?
    --অবজেক্শন! এসব প্রশ্ন করে মহামান্য আদালতের সময় নষ্ট করা হচ্ছে। একই গাঁয়ে নিবাস। সেখানে কেউ কি করে মনে রাখবে কবে কাউকে কখন প্রথম দেখেছিল?
    -- সাসটেইন্ড! আপনি অন্য প্রশ্ন করুন।
    -- আচ্ছা, আপনার সঙ্গে কখনো আলাপ হয়েছিল?
    --- অবজেক্শন! একই গ্রাউন্ডে। তিনদিন আগে তল্লাসীর সময় অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া র ঘটনার সঙ্গে এর কি সম্পর্ক?
    --- সাসটেইন্ড! আপনি অন্য প্রশ্ন করুন।
    -- ইয়োর অনার! এটা অন্য প্রশ্ন। সাক্ষী বলছে আমাকে চেনে? কিন্তু কতটা চেনে? তাই জিজ্ঞেস করেছি কখনো আলাপ হয়েছিল কি না? এর উত্তর "হ্যাঁ" বা "না" হবে। আমি তো আলাপের দিনক্ষণ-তারিখ জানতে চাই নি।
    -- অবজেকশন সাসটেইন্ড! আপনি অন্য প্রশ্ন করুন।
    ---- বেশ, শিবরামবাবু , আপনি কখনো আমার বাড়িতে এসেছিলেন?

    সাক্ষী অস্বস্তিতে পড়ে যায়। চোখ সরিয়ে সরকারী উকিলের দিকে তাকায়।
    --- আরে এদিকে দেখুন, আমার দিকে।এবার বলুন, কখনো আমার বাড়ি এসেছিলেন?
    --- মনে পড়ছে না।
    -- মনে করতে পারছেন না? বেশ, ধরিয়ে দিচ্ছি। গত দুমাসের মধ্যে কখনো আমার বাড়িতে এসেছিলেন?
    সাক্ষী চুপ, আবার সরকারী উকিলকে দেখে।
    --- শুনুন শিবরামবাবু, আপনি আদালতে শপথ নিয়েছেন সত্যি কথা বলবেন বলে। হুজুরের সামনে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মিথ্যে কথা বললে জেল হতে পারে।
    সরকারী উকিল বেশ উত্তেজিত।
    -- অবজেকশন ইয়োর অনার! আসামী বামাল সুদ্ধু পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। ওর কোন ডিফেন্স নেই। তাই আমার সাক্ষীকে ধমকাচ্ছে। মহামান্য আদালত এসব অ্যালাউ করতে পারেন না।
    --- না, ইয়োর অনার। আসামী সমীর ডাক্তার সাক্ষীকে একটাও প্রশ্ন করেনি। ওকে প্রশ্ন করছে আসামীর ডিফেন্স কাউন্সিল। আর সাক্ষীকে আদৌ ধমকানো হয় নি। মহামান্য আদালত দেখতেই পাচ্ছেন যে সাক্ষী জবাব দিচ্ছে না, সত্যি কথা বলছে না। তাই ওকে শুধু এর আইনী পরিণাম কী তা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
    --- অবজেকশন ওভাররুলড্‌। সাক্ষী ঠিক ঠিক জবাব দিন।
    --- হ্যাঁ বোধহয় একবার গিয়েছিলাম।
    -- শুধু একবার? দু'বার নয়?। ভেবে বলুন।
    --- না, না। দু'বার নয়, শুধু একবারই গিয়েছিলাম।
    -- মাত্র একবার য্খন , তখন তো নিশ্চয়ই মনে আছে, কখন গিয়েছিলেন, কেন গিয়েছিলেন?
    -- না না, অত সব মনে নেই। অনেকদিন আগের ব্যাপার তো?
    --- কতদিন আগের? একবছর? দেড় বছর?
    --- হতে পারে।
    -- কী করে হবে? আমি আপনাদের গাঁয়ে এসেছিই মাত্র দশ মাস আগে।
    -- তাহলে তার পরে হবে।
    -- ছ'মাস হবে?
    -- হতে পারে।
  • ranjan roy | 132.176.214.244 | ২০ নভেম্বর ২০১৪ ১৬:৪৬650953
  • --- চার মাস আগে?
    --- হতে পারে।
    -- সাতদিন আগে?
    --না, না। এত কাছাকাছি না, আরও আগে।
    -- দু'মাস আগে?
    -- ওইরকমই হবে; ওই দু'-আড়াই মাস।
    -- কেন এসেছিলেন?
    সাক্ষী চুপ।
    -- আরে মাত্র দু'তিন মাস আগে আমার বাড়ি এসেছিলেন , তাও মনে করতে পারছেন না কেন এসেছিলেন? আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি।
    সাক্ষী চুপ।
    --- অস্ত্র বেচতে? যদি বলি আপনিই সেই মিসিং লিংক যাকে পুলিশ খুঁজে বেড়াচ্ছে? যে গোপনে উগ্রপন্থীদের হাতিয়ার সরবরাহ করে বলে পুলিশের কাছে খবর আছে?
    -- না, না! আমি এসেছিলাম ওষুধ নিতে।
    -- আপনাকে আমার বাড়িতে আসতে কে কে দেখেছে? কে কে জানে যে আপনি আমার বাড়িতে ওষুধ নিতে এসেছিলেন?
    -- কেউ জানে না। শুধু আপনি ও আপনার স্ত্রী; উনি তখন বাড়িতে ছিলেন।
    -- এই তো বেশ মনে পড়েছে দেখছি। তাহলে এটাও বলে ফেলুন যে কখন এসেছিলেন। দুপুরে আমি সাধারণত; ভিন গাঁয়ে রোগী দেখতে যাই।তাহলে হয় সকালে নয় রাত্তিরে এসেছিলেন। কখন?
    -- সকালে।
    -- কিন্তু আমার কাছে ওষুধ নিতে কেন এসেছিলেন?
    -- অবজেক্শন! এই প্রশ্নের কোন মাথামুন্ডু নেই। মূল ঘটনার সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই। আগেই বলেছি এটা প্রপার ডিফেন্স হচ্ছে না। খালি আজে বাজে কথা বলে সময় নষ্ট। রোগী ডাক্তারের কাছে কেন ওষুধ নিতে যায়? সেরে উঠতে।
    হাকিম এবার সমীরদার দিকে বিরক্ত মুখে জিগ্যেস করলেন-- আপনি কী চাইছেন বলুন তো? এসব প্রশ্নের সঙ্গে মূল ঘটনার কী সম্পর্ক?
    --- সম্পর্ক আছে ইয়োর অনার! আমার জেরার প্রথম দিকে সাক্ষী বললেন যে উনি ছুঁচ চিকিৎসায় বিশ্বাস করেন না, তাই উনি কখনো আমার কাছে চিকিৎসা করান নি।
    অথচ এখন উনি বলছেন যে উনি নাকি মাস দু'আড়াই আগে আমার বাড়িতে সাতসকালে কাউকে না জানিয়ে চুপিচুপি ওষুধ নিতে এসেছিলেন! কেন? এই গোপনীয়তার কারণ কী?
    --- অবজেক্শন ইয়োর অনার! কারণ যাই হোক তার সঙ্গে ডাক্তারের বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধারের কী সম্পর্ক? আর কোয়াক ডাক্তার সমীরবাবু ভুলে গেছেন যে পেশেন্ট ও ডাক্তারের মধ্যে একটা গোপনীয়তার বন্ধন থাকে, ঠিক আমাদের উকিল ও মক্কেলের সম্পর্কের মতন।
    ---অবজেকশন সাসটেইন্ড্‌। আপনি অন্য প্রশ্ন করুন।
    --- সম্পার্ক আছে, ইয়োর অনার! আমি সাক্ষীর বায়াস দেখাতে চাইছি। দেখাতে চাইছি যে উনি নিরপেক্ষ উইটনেস ন'ন। আমার বিরুদ্ধে সাক্ষী দেবার ব্যাপারে ওনার অন্য ম্যালাফায়েড মোটিভ আছে।
    --- অবজেক্শন সাস্টেইনড্‌! আপনাকে এইজাতীয় প্রশ্ন করার আগে বায়াস এর প্রপার ফাউন্ডেশন দেখাতে হবে, তারপর। আপাততঃ আমি এই প্রশ্ন অ্যালাউ করছি না।
    আপনি অন্য প্রশ্ন করুন।
  • মোহর | ২০ নভেম্বর ২০১৪ ২০:২১650954
  • ৪ ঘন্টা হতে চলল :(
  • ranjan roy | 132.176.214.244 | ২০ নভেম্বর ২০১৪ ২০:৩১650955
  • সমীরদার হিরোমার্কা কনফিডেন্স উপে গেছে। চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে কিছু ভাবছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম, অবশ্যি এই গরমে ঘামছি আমরা সবাই। হাকিম ও মাঝে মাঝে রুমাল বের করছেন।
    আমার জল তেষ্টা পাচ্ছে, কিন্তু কাকে বলি? নাঃ, এর চেয়ে উকিল নিলেই বোধ্হয় ভাল ছিল।
    এই সুযোগে সরকারি উকিল বলে উঠলঃ ইয়োর অনার, মনে হচ্ছে আমার সাক্ষীর ক্রস এগজামিনেশন পুরো হয়ে গেছে। যদি আর কোন প্রশ্ন না থাকে তবে ওকে যেতে দেওয়া হোক।
    শিবরাম মাহাতো তাড়াহুড়ো করে কাঠগড়া থেকে বেরোতে যাবে এমন সময় সমীরদা বলে উঠল -- আপনি মাধবপুর গাঁয়ের কোন পাড়ায় থাকেন শিবরামবাবু? মাহাতো পাড়ায়?
    --- না, আমি মালোপাড়ার দিকে থাকি।
    --- মালোপাড়া? মানে আমাদের বাড়ির লাগোয়া পাড়া?
    -- না, না, আপনি ভুল করছেন। ওটা মালিপাড়া। আপনাদেরটা হল কাহারপাড়া। আমার বাড়ি মালোপাড়ায়, গাঁয়ের একেবারে অন্য প্রান্তে। বাসরাস্তার দিকে।
    --তাই? তবে তো বেশ দূর! হেঁটে আসতে কতক্ষণ লাগে?
    -- সে আপুনার মিনিট কুড়ি বটেক!
    --- ও! আমি ভেবেছিলাম বেশ কাছে হবে। হয়ত আপনার বাড়ি থেকে আমাদের বাড়ি দেখা যায়।
    --- বল্লাম তো, বেশ দূর, মিনিট কুড়ি বটেক!
    এবার সরকারী উকিল বেশ বিরক্ত।
    -- দেখুন ইয়োর অনার! তখন থেকে মহামান্য আদালতের সময় নষ্ট করা হচ্ছে।
  • সে | 188.83.87.102 | ২০ নভেম্বর ২০১৪ ২২:০১650956
  • দুর্দান্ত হচ্ছে!
  • ranjan roy | 132.176.214.244 | ২০ নভেম্বর ২০১৪ ২২:১৯650957
  • --- না ইয়োর অনার! আমার মনে হয় প্রপার ফাউন্ডেশন হ্যাজ বিন লেইড্‌।
    ---হাউ?
    -- আমার বাড়িতে সাত সকালে রেইড হল, গ্রেফতার হল। কিছু সো-কল্ড্‌ ইন্ক্রিমিনেটিং কাগজপত্র, মেটেরিয়ল সীজ করা হল। তার আই-উইটনেস কে হবে? স্বাভাবিক ভাবেই পাড়াপড়শীরা? কিন্তু এখানে আই-উইটনেস কে?তিন-তিনটে পাড়া ছাড়িয়ে বিশ মিনিট হাঁটাপথের দুরত্বের কোন বাড়ি থেকে আসা এক ব্যক্তি! পুলিশ আশপাশের বাড়ি থেকে কেন কোন সাক্ষী পেল না? ওই ব্যক্তি, যাঁর বাড়ি বাসরাস্তার দিকে , তিনি রেইডের সময় এই এত ভেতরের পাড়ায় কী করছিলেন?
    সরকারি উকিল এগিয়ে এলেন।
    --আমার মনে হয় একটা ছোট পয়েন্টকে অযথা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ইয়োর অনার! আসলে গাঁয়ের লোক পুলিশি ঝামেলা এড়িয়ে চলে, সহজে সাক্ষী হতে চায় না। শিবরামবাবু রাজি হলেন তাই।
    --এজ্যাক্টলি ইয়োর অনার! আমারও সেই কথা। পুলিশ কি করে জানল যে বিশ মিনিট হাঁটা দূরত্বে থাকেন জনৈক শিবরামবাবু, যিনি গাঁয়ের লোক হয়েও পুলিশের সাক্ষী হতে অনায়াসে রাজি হয়ে যাবেন? পুলিশ ক'জন পাড়াপড়শিকে জিগ্যেস করেছিল?
    --- সকাল বেলা লোকজনকে বিরক্ত করলে বদনাম হত!
    -- সীজার লিস্টে লেখা সময়টা দেখুন ইয়োর অনার! সকাল দশটা বেজে সতের মিনিট! বৈশাখ মাসে বেলা দশটায় গাঁয়ের লোক ঘর থেকে বেরোয় না?
    আমার মনে হয় এবার আমি সাক্ষীকে পুরনো প্রশ্নটা করতে পারি। আমি মহামান্য আদালতকে দেখাতে চাই কেন এই সাক্ষী আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে সাক্ষ্য দিতে চায়!
    -- পারমিশন গ্রান্টেড; প্রশ্ন করুন।

    -- শিবরামবাবু, আপনি আগেও বলেছেন যে আপনার ছুঁচ চিকিৎসায় বিশ্বাস নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও আপনি মাস দুয়েক আগে সাত সকালে কাউকে না জানিয়ে আমার ঘরে এসেছিলেন। না, অস্ত্র বিক্রির জন্যে নয়। চিজিৎসার জন্যে। ওষুধ নিতে।
    কি, ঠিক বলছি তো?
    সাক্ষী মাথা হেলিয়ে সায় দেয়।
    --- এভাবে ওষুধ নিতে আসার একটাই মানে আপনার অসুখটা এমনই যে লোকজানাজানি হলে বদনাম হবে, তাই না?
    সাক্ষী চুপ, অসহায় ভাবে সরকারী উকিলের দিকে তাকায়।
    --- এ'ধরণের অসুখ বেশি নয়। হয়ত কুষ্ঠ, নয় যৌনরোগ। তাঅ শিবরামবাবু , আপনি কিসের ওষুধ চাইতে এসেছিলেন? আপনার কী হয়েছে আদালতকে বলুন।
    --- অবজেক্শন ইয়োর অনার! এভাবে সাক্ষীকে অপমান করা কোন--
    -- অবজেক্শন ওভাররুলড্‌! জবাব দিন।
    --- আমার কোন অসুখ ছিল না। আমি এসেছিলাম অন্যের জন্যে ওষুধ নিতে।
    এবার হাকিম নিজে সামনে ঝুঁকে জিগ্যেস করলেন-- কার জন্যে? কী অসুখ? স্পষ্ট করে বলুন।
    সাক্ষী কোন জবাব দেয় না। মাথা নীচু করে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকে।
    সমীরদা হাকিমের দিকে তাকায়।
    --ইয়োর অনার! উনি কিছুই বলবেন না। তাই আমি বলছি-- সাক্ষী সাতসকালে আমার বাড়ি এসেছিলেন গোপনে গর্ভপাতের ওষুধ নিতে। অনেক টাকার টোপ দিয়েছিলেন।
    কার জন্যে সেটা জানা দরকারী নয়। জানা দরকার যে আমি ওনাকে ঘর থেকে বের করে দিই। তখন উনি আমাকে আমার স্ত্রীর সামনে নোংরা কথা বলে দেখে নেবার হুমকি দিয়ে চলে যান। আমি ভুল বললে সাক্ষী শুধরে দেবেন।
    সাক্ষী মাথা তোলে না।
    --- আমার আর কোন প্রশ্ন নেই। ইনি যেতে পারেন।
  • সে | 188.83.87.102 | ২০ নভেম্বর ২০১৪ ২২:৩০650958
  • চাবুক!
  • ranjan roy | 132.176.214.244 | ২০ নভেম্বর ২০১৪ ২২:৫৩650959
  • এরপর হাচ্কিম লাঞ্চের জন্যে আধঘন্টা ব্রেক দিলেন। কিন্তু ইতিমধ্যে আদালতের আবহাওয়া পাল্টে গেছে। সেটা পুলিশের দলও বুঝতে পেরেছে। তাই আমাদের হাতকড়া খুলে দিয়ে ডাল-ভাত-কুমড়োর ছক্কা খেতে দিল।
    সমীরদা ফিসফিস করে বলল --লতা, কোন স্টেটমেন্ট দিয়েছ বলে স্বীকার করবে না। আমি তোমাকে কাঠগড়ায় তুলে জিগ্যেস করব, তোমার যা যা হয়েছে তা অকপটে বলবে।

    আবার শুনানি শুরু হল। সমীরদা আমার কথা তুলে ডাক্তারের রিপোর্ট ও ডাক্তারকে সাক্ষী হিসেবে ডাকার অনুমতি চাইল। সমস্ত সাক্ষীদের লিস্ট চাইল।
    এবার সরকারী উকিল কড়া আপত্তি জানালেন।
    -- ইয়োর অনার! এগুলো মূল মামলার বিষয়। চার্জ ফ্রেমের সময় আসামীদের দেওয়ার নিয়ম। এখন এই শুনানির একটাই উদ্দেশ্য যে প্রাইমা ফেসি প্রমাণের ভিত্তিতে দুজন সন্দেহভাজন নারী-পুরুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এমন মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে এরা ভারত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সিডিশনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তদন্তের সুবিধার জন্যে এদের চোদ্দদিন পুলিশ কাস্টডিতে রাখার অনুমতি চাইছি।
    সমীরদার বক্তব্য ছিল যে প্রসিকিউশন এমন কোন প্রমাণ বা সাক্ষ্য পেশ করতে পারেনি যাতে সিডিশন ও ষড়যন্ত্র প্রমাণ হয়। অভিযুক্ত শান্তিলতাকে মেরে ধরে জোর করে সাদা কাগজে সই করানো হয়েছে। ওর গর্ভপাত হয়েছে।
    ডাক্তারকে না ডাকলেও মেডিক্যাল রিপোর্টে যে ধরণের আঘাতের কথা বলা হয়েছে তাতে মারপিটের প্রমান রয়েছে।
    কাজেই মাননীয় আদালত বন্দীদের মুক্তি দিন। ওরা আদালতকে সাহায্য করতে নিয়মিত থানায় হাজিরা দিতে রাজি আছে।
    হাকিম বললেন যে যদিও এই প্রাথমিক স্তরে নিশ্চিত ভাবে সিডিশন বা ষড়যন্ত্রের কোন প্রমাণ প্রসিকিউশন দিতে পারেনি, তবু লোকজনকে ক্ষেপানো বা গোলমাল পাকানোর সম্ভাবনা কে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
    তাই ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। কিন্তু আসামীদের প্রতি ব্যক্তি দশহাজার টাকার জামিনে ছাড়া যেতে পারে। তবে তদন্তের জন্যে থানার সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে।
    সমীরদা জামিনদার পাওয়া সম্ভব নয় জানালে হাকিম বললেন-- ঠিক আছে। ততদিন জেল কাস্টডি দেওয়া হল। পি সি তে রাখার আবেদন খারিজ। তবে পুলিশ তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের জেলে গিয়ে জেরা করতে পারবে। মহিলাকে জেরা করার সময় একজন মহিলা ম্যাজিস্ট্রেত উপস্থিত থাকতে হবে। আর প্রত্যেক শুনানির সময় আদালতে বন্দীদের মেডিক্যাল রিপোর্ট পেশ করতে
    হবে।
    জেলে বন্দীদের আত্মীয়স্বজন এবং উকিলের সঙ্গে দেখা করতে দিতে হবে।
    আমাদের পুলিশের গাড়িতে করে ডিস্ত্রিক্ট জেল নিয়ে যাওয়া হল। সেখানে গিয়ে আমার জেনানা ওয়ার্ড, সমীরদর মেল ওয়ার্ড। যাবার আগে সমীরদা আমার হাত ধরে ফিসফিস করে বলল-- এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করিনি লতা।
    বেশি ভেবো না, পনেরদিনের মধ্যে জামিন পেয়ে বেরিয়ে যাব।

    ( দ্বিতীয় অধ্যায় শেষ, চলবে)
  • সে | 188.83.87.102 | ২১ নভেম্বর ২০১৪ ০০:১৪650960
  • অসাধারন।
    পরের অধ্যায়ের অপেক্ষায় রইলাম।
  • de | 69.185.236.51 | ২১ নভেম্বর ২০১৪ ১০:৪৮650961
  • খুব ভালো হচ্ছে!
  • ঐশিক | 132.181.132.130 | ২১ নভেম্বর ২০১৪ ১৪:১৪650962
  • দুরন্ত দুর্ধর্ষ ভাবে লিখছেন রঞ্জনদা, খুবই ভালো লাগছে
  • সিকি | ২১ নভেম্বর ২০১৪ ১৭:৩৭650964
  • কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখি, এদিকে রঞ্জনদা, ওদিকে সে। টানটান ক্লিফহ্যাঙ্গারে ঝুলছি জাস্ট।
  • mohor | 11.39.1.191 | ২১ নভেম্বর ২০১৪ ১৮:১৬650965
  • ufff
  • kiki | 125.124.41.34 | ২১ নভেম্বর ২০১৪ ১৮:২৭650966
  • রঞ্জনদা,
    বেশ হচ্ছে টান টান হয়ে রয়েছি। কিন্তু কাঁচুমাচু করে(আপনি বলেই সাহস করছি) বলি, প্রথমে মেয়েটা বলছিলো তার কথা, কিন্তু মাঝে মাঝেই রঞ্জনদা বলে ফেলছে, মেয়েটার কথাই শুধু শুনবো।
  • ranjan roy | 132.176.214.244 | ২১ নভেম্বর ২০১৪ ২২:৫৭650967
  • কিকি,
    কোন সংকোচ কোর না। দাদা বলেছ, বাত খতম।
    আমি খেয়াল রাখবো।
  • kiki | 125.124.41.34 | ২২ নভেম্বর ২০১৪ ০৯:০৯650968
  • ঃ)
  • AS | 125.187.44.230 | ২২ নভেম্বর ২০১৪ ১৯:০৮650969
  • উফ্ফ আর কতক্ষ ণ অপেক্ষা করতে হবে?
  • ranjan roy | 132.176.186.196 | ২২ নভেম্বর ২০১৪ ১৯:২৪650970
  • আর একদিন। বাড়িতে কোলকাতা থেকে আমার অনুজপ্রতিম নী পা (নেরুদার মূল থেকে অনুবাদক )বিকাশ গণচৌধুরী এসেছে।
  • মোহর | ২২ নভেম্বর ২০১৪ ২৩:০৫650971
  • ওহ, বিকাশ-দাকে বলে দেবেন তো পিলিজ যে সেদিন ওর তোলা কিছু ছবি হেব্বিস হয়েছিল, মানে ভাটের মাক্কালীতে :)
  • ranjan roy | 132.176.193.89 | ২৩ নভেম্বর ২০১৪ ১০:১১650972
  • মোহর,
    বলিয়া দিলাম, শুনিয়া বিকাশদা দন্ত-কেলাসিত করিয়া শার্টের কলার tulilঃ))))
  • ranjan roy | 132.176.193.89 | ২৩ নভেম্বর ২০১৪ ২৩:৩৩650973
  • তৃতীয় অধ্যায়
    ==========
    (১)
    কোলকাতা থেকে ডাকগাড়ি করে মুম্বাই যাওয়ার পথে সকাল সাতটা নাগাদ যে বড় জংশন স্টেশনে নেমে চা খাবেন তার নাম বিলাসপুর। এই স্টেশনের রিটায়ারিং রুমে দোতলায় রবীন্দ্রনাথ রাত কাটিয়ে ছিলেন। "ফাঁকি" বলে একটা কবিতায় নাকি লিখেছেন।এখন স্টেশনে একটা শ্বেতপাথরের ফলকে ক'টি লাইন লিখে দেয়ালে লাগানো আছে।
    এসব অনেক পরে জেনেছি। এও জেনেছি যে ওই কবিতায় নাকি উনি বিলাসপুর স্টেশনেই নিজের বৌকে মিথ্যে কথা বলে পরে বৌয়ের অকালমৃত্যুতে হা-হুতাশ করার গল্প আছে।
    উনি অনেক উঁচু ডালে বসে থাকা মানুষ। আমি হাত বাড়িয়ে নাগাল পাওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবি নে। কিন্তু মনে হয় সমস্ত বিবাহিত পুরুষই কি একসময় নিজের বিয়েটা কে ফাঁকি বা ধোঁকা ভাবে? বিয়ে নামের দিল্লির লাড্ডুটা খেয়ে নিয়ে তারপর পস্তায়?
    সমীরদার ব্যবহারে কখনও কখনও এরকমই সন্দেহ হয়।
    যাকগে মরুকগে! কেন যে এইসব আশকথা-পাঁশকথা ভেবে সময় নষ্ট করি। রবিঠাকুর রবিঠাকুর! সমীরদা সমীরদা! উনি আমার মাথায় থাকুন, আর ও আমার চোখের সামনে।
    আমি সাধারণ মেয়েমানুষ। এর বেশি কি চাইতে পারি!
    তবু বলব ঠাকুর আমার প্রার্থনা শুনেছেন। আমি এখন না-বিইয়েই কানাইয়ের মা! একটু খোলসা করে বলি।
    চেয়েছি নার্স হতে, সেই ছোটবেলা থেকে। বাবা পড়ালো না, ঘর থেকে বের করে দিল। অনেক ভূগেছি। কিন্তু আজ আমি নার্স।
    ভুল বুঝবেন না। কোন কোর্স করি নি, কোন সার্টিফিকেট নেই। কিন্তু দেওরীখুর্দ বলে একটি গাঁয়ের ডাক্তারখানায় আমি নার্স। সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যে ছ'টা অব্দি ডিউটি। কোন কোন দিন কাজের চাপে আটটাও বাজে।
    যদি বিশ্বাস না হয় গিয়ে দেখে আসুন। কোলকাতা থেকে মুম্বাইগামী ট্রেন বিলাসপুর স্টেশনে ঢোকার আগে যে লেভেল ক্রসিং টি পড়ে তার পাশের গাঁয়ের নাম লাল খাদান। সেখান থেকে শুরু ইন্দ্রপুরী বস্তি, স্থানীয় মজদূরদের। কাছেই বিড়লার কোন জামাইয়ের কারখানা , অনেকদিন ধরে লক আউট চলছে, কবে খুলবে কেউ জানেনা। এই জায়গাটা হল বিলাসপুরের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটের লেজের দিক। বেশ কিছু ছোটখাট কারখানা টিমটিমিয়ে চলছে। কম্যুনিস্টদের ইউনিয়ন অফিসে তালা, কখনও সখনও খোলে।কিন্তু লালপতাকা পত পত করে ওড়ে।
    সেখানেই টালির ছাদওয়ালা দুটো ঘর। ভেতরে চূণকাম করা দেওয়াল। চেয়ার টেবিল, দুটো বেঞ্চি। একপাশে রোগীদের পরীক্ষা করার জন্যে উঁচু বেড সাদাকাপড়ে ঢাকা, বালিশ ও রবারক্লথ পাতা। একটা সবুজ পর্দা দিয়ে আড়াল করা। আর একদিকে একটা ওয়াশ বেসিন, ওষুধের আলমারি , রোগীদের স্যালাইন ও গ্লুকোজ লাগানোর স্ট্যান্ড।
    সাইনবোর্ডে বড় বড় করে লেখা "জনতা দাওয়াখানা", তার নীচে একটু ছোট হরফে ' ডঃ কুমার", আর এম পি । রেজিস্ট্রেশন নাম্বারঃ ১৭৬৪/ ৮৬। তারও নীচে একটু বড় হরফে "হম সেবা করতে হ্যাঁয়, ঈশ্বর চাঙ্গা করতে হ্যাঁয়।
    রোগী বলতে মজদূর বস্তির ও আশপাশের গাঁয়ের লোকজন,। এরা আশে নানান রকমের সমস্যা নিয়ে। সবচেয়ে বেশি হল জ্বর ও পেটখারাপ; কখনও সখনও আমাশা। কোন কোন মাসে জন্ডিস। এদিকে জল অত্যন্ত খারাপ। খোলা নালা নর্দমা।
    অপুষ্টিতে ভোগা বাচ্চাদের কৃমি, ফোঁড়া ও খোস-পাঁচড়া। মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক, সাদা ডিসচার্জ। পুরুষদের যৌনরোগ, লিভারের অসুখ, মারামারি করে মাথায় হাতে পায়ে চোট ইত্যদি।
    এইখানে আমি নার্স। সাদা ফ্রক, এপ্রন, মাথায় সাদা ক্যাপ মত। পায়ে হাঁটু অব্দি সাদা মোজা ও কেডস্‌।
    আমি ব্লাডপ্রেশারের যন্ত্র দিয়ে প্রেশার মাপি, কাটা-ছেঁড়া-ঘায়ে পরিষ্কার করে মলম লাগিয়ে সুন্দর করে বেঁধে দিই। ইনজেক্শন দিতে জানি, অবশ্য ইন্ট্রামাসকুলার, ইন্ট্রাভেনাস ডাক্তারবাবু নিজের হাতে দেন।
    তাই বলছি আমি না-বিইয়েই কানাইয়ের মা। নাই বা গেলাম কোন নার্সিং স্কুলে, নাই বা পেলাম কোন সার্টিফিকেট। কিন্তু আশপাশের দশটা গাঁয়ে জিগ্যেস করুন আমার নাম? সবাই বলবে -- লতা সিস্টার । আর কি চাই? ভগবান কে রাজ মেঁ দের হ্যায়, অন্ধের নহীঁ।
    ঈশ্বরের রাজত্বে দেরী হয়, অবিচার হয় না।
  • সে | 188.83.87.102 | ২৪ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৪২650975
  • দারুন হচ্ছে
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন