এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বেঁচে আছিঃ প্রেমে-অপ্রেমে

    ranjan roy
    অন্যান্য | ০১ অক্টোবর ২০১৪ | ২১৮৪২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সে | 188.83.87.102 | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৮:২৯651109
  • সবসময় প্রেগন্যান্ট হলেও মেয়েরা জানতে পারে না। আমার বন্ধু একটি মেয়েরও এমন হয়েছিলো, একাধিকবার। তার অবশ্য টিউবাল প্রেগন্যান্সি। (সরি, আবার বিপথগামী কচ্ছি, হাইজ্যাক্‌, ইঃ)
  • ranjan roy | 24.99.208.209 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৭:৩৩651110
  • ৩)
    যা বলছিলাম, আর থাকা গেল না শ্বশুরবাড়িতে। তাই এই ছোটখাট রেলশহরে এসে আস্তানা গাড়তে হল। পোর্টার খোলির পাশে।
    রওনা হওয়ার আগের দিন বিকেলে শ্বশুরমশাই এসে আমার হাতে গোটা কয়েক নম্বরি নোট গুঁজে দিয়েছিলেন। আমি না-না করলেও শোনেন নি।
    বলেছিলেন কাউকে না বলতে-- সমীরদা কে নয়, শাশুড়িকেও নয়।
    তখন বাড়ি ফাঁকা। শাশুড়ি দোকানে গেছেন, সমীরদা নিজের কোন কাজে।
    -- তা কি করে হয় বাবা?
    -- আমার একটা কথা রাখ বউমা, আর কোনদিন কিছু বলব না। ছেলেটা বড্ড জেদি, কিন্তু দুনিয়াদারির কিছুই বোঝে নি। শুধু একটা ঘোরের মধ্যে চলছে।
    কী জান বৌমা, ওর বয়সে আমিও খানিকটা অমনই ছিলাম। রবীন্দ্রনাথের দুরাশা বলে একটা গল্প আছে, পড়েছ? ও তোমরা তো আবার বাংলা পড়তে শেখ নি!
    শোন, সিপাহী বিদ্রোহের সময় ব্রাহ্মণ বিদ্রোহী রতনলাল মৃত্যুর সম্ভাবনাতেও বিধর্মী যবনকন্যার মেয়ের হাতের ছোঁয়া জল খায় নি। নায়িকা মুগ্ধ, প্রেমে পড়ল , ভাবল ওকেও ব্রাহ্মণ হয়ে ওই বিদ্রোহীর প্রেমের যোগ্য হয়ে উঠতে হবে। অনেক শাস্ত্র পড়ল, আচার-বিচার বদলালো। শেষে গল্পের শেষে বৃদ্ধ বয়সে আবিষ্কার করল যে ওই ব্রাহ্মণ আচার-বিচার নেহাৎ সংস্কার মাত্র। পরাজিত রতনলাল দার্জিলিং এর ভুটিয়া বস্তিতে দিব্যি নাতিনাতনী নিয়ে সুখে আছে।
    কিন্তু নায়িকা আজ কী করবে? ও তো একটা ঘোরের মধ্যে ঘুরে ঘুরে গোটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছে!
    তোমাদেরও বিপ্লন-বিপ্লব খেলার ঘোর একদিন কাটবে, কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
    যাকগে, এই টাকাটা রাখ।নতুন জায়গায় কাজে দেবে। ওর তো কোন হুঁশ নেই।
    আমি পায়ের ধূলো নিলাম। উনি একটু অপ্রস্তুত, মাথায় হাত ছুঁইয়ে তাড়াতাড়ি নিজের ঘরে ফিরে গেলেন।

    টাকাটা প্রথম দিন থেকেই কাজে এল।
    ওই জবরদখল জমিতে মাসিক ৪০ টাকায় ঝোপড়ি ভাড়া নিতেও আমাদের ১০০ টাকা সেলামি বা সিকিউরিটি দিতে হল। সমীরদার কিন্তু-কিন্তু ভাব দেখে আমিই বের করে দিলাম।
    এবার বিপন্ন ভাব কেটে গিয়ে বাবুর মুখে স্বস্তির হাসি।
    রাত্তিরে আদর করতে করতে বলল-- তখন খুব ইজ্জত বাঁচিয়ে দিয়েছ, লতা! পেলে কোথায়?
    --- একটু জমানো ছিল, হাতের পাঁচ আর কি!
    সমীরদা কতটুকু বিশ্বাস করল তা অন্ধকারে বোঝা গেল না। শুধু ওর শ্বাসের আওয়াজ ভারি হচ্ছিল। তেমনই ধরা গলায় বলল-- তোমার কথাই রইল লতা! এখানে তুমি আমি মিলে আবার নতুন করে শুরু করব।

    কাছাকাছি একটা মালগাড়ির শান্টিং এর আওয়াজে আর কিছু শোনা গেল না।
  • ranjan roy | 24.99.208.209 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৯:৫৩651111
  • সেই যে স্কুলে পড়েছিলাম সিসিফাসের গল্প--- পাহাড়ের মাথায় সারাদিন ধরে ঠেলে তোলা পাথর দিনের শেষে গড়িয়ে পড়ে! আমাদের জীবন যেন তাই। চামড়ার কারখানা আর কাঁকর বাছার কাজ করে কোলকাতার হাড়কাটা গলিতে পেট চালানো, তার পরে বীরভূমের গাঁয়ে পার্টির মাসোহারা আর সমীরদার আকুপাংচার করে আয়ের দৌলতে পেট পুরে ডাল-ভাত খাওয়া আর রাত্তিরে গভীর ঘুমে তলিয়ে যাওয়া-- ভেবেছিলাম এই ভাবেই কাটবে বাকি দিন। কোথায় কি!
    কপালে ছিল হাজতবাস আর পুলিশের মারে গর্ভপাত।
    কিন্তু তারপরেই ঠাকুর মুখ তুলে চাইলেন-- হলাম নার্সদিদি, বিলাসপুর শহরের উপকন্ঠে, মজদূর মহল্লায়। এত সুখ সইল না। দ্বিতীয় গর্ভপাত, কমরেড নারায়ণের শকুনি নজর।
    কয়দিন শ্বশুরবাড়ির যত
  • ranjan roy | 24.99.208.209 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২০:২১651112
  • কয়দিন শ্বশুরবাড়ির যত্ন-আত্তি, তারপর এই শহরে। আবার শেষ থেকে শুরু। আবার পাথর ঠেলতে শুরু করা। কোথায় যেন ভেতরে ভেতরে একটা ক্লান্তি এসেছে। সারা জীবন শুধু ছেঁড়া কাপড় আর চাদর রিফু করেই কেটে যাবে?
    তবে আমি এখানে আসার আগে আমার ছোটবেলার সেই সিস্টার রোজালিনের নামে একটা চিঠি লিখে অনুরোধ করে এসেছিলাম -- যদি স্কুলের ম্যানেজমেন্ট কেরালায় পাঠিয়ে দেন।
    এখানে নার্সের কাজ জোগাড় করতে পারলাম না। ছোট শহর। দুটোই হাসপাতাল, একটা সরকারি আর একটা রেলের। বেশির ভাগ লোক সেগুলোতেই যায়। আর এখানে মাত্র দুটো প্রাইভেট চেম্বার, তাতে নার্স আছে। শহরে এখনও কোন নার্সিং হোম শুরু হয় নি।
    কিন্তু না খেয়ে নেই।দুটো বাড়িতে বাচ্চা পড়ানোর কাজ পেয়েছি। ছোট বাচ্চা। তাতে আটশ' টাকা মত মাসে হয়।
  • ranjan roy | 24.96.106.255 | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৫:৩২651113
  • সমীরদা চেষ্টা করছে কিছু করার, এখনও হয় নি। হবে, নিশ্চয়ই হবে।
    মাস দুই কেটে গেল। আরও একটা বাড়িতে টিউশন পেয়ে গেলাম। সেখানেও দুটি বাচ্চা, দেবে পাঁচশ' টাকা। সপ্তাহে ছ'দিন যেতে হবে। কিন্তু বাড়িটা শহরের আর এক পাড়ায়, বেশ দূর।
    একটু অদ্ভূত বাড়ি। আগের দুটো আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবার। তবে এই বাড়িটি রেলস্টেশন এলাকার ডন মৃত্যুঞ্জয় সিংয়ের। রেলএলাকার যত সাইকেল স্ট্যান্ড, তার ঠিকেদার। শুনেছি স্টেশনের বাইরে ও ভেতরে যে কটি চায়-কফি-পান-সিগ্রেটের এবং নিউজপেপারের কিওস্ক চলছে--সবগুলোর আসল মালিক হল ও। এছাড়াও ওর অল্পবয়সী ছেলেদের নেট ওয়ার্কে কোলকাতা থেকে আনানো প্যানসোনিক টেপ রেকর্ডার, ক্যামেরা, সোনি ক্যাসেট, ব্লু-ফিল্ম এনে বিক্কিরি করা হয়।
    কয় বছরের এই এলাকার সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে সরিয়ে ও এখন রেলপাড়ার বেতাজ বাদশা।
    সেই বাড়িতে যাবো বাচ্চা পড়াতে! সমীরদার মন খুঁত খুঁত করে।
    -- লতা, না গেলেই নয়?
    -- আরে, মরতা , ক্যা নহীঁ করতা? চিন্তা কর না। আরো দুয়েকটা জুটে গেলে এটা ছেড়ে দেব।
    বুক ঢিপ ঢিপ মন নিয়ে পড়াতে গেলাম। বিশাল দোতলা বাড়ি। মাঝখানে একটা ঘেরা মত চাতাল। সেটাকে ঘিরে আয়তক্ষেত্রের মত ঘর আর ঘর। যেন কোন ধর্মশালা। আর সদর দিয়ে ঢুকেই বজরঙ্গবলীর ছোট মন্দির মত।
    বাবু মৃত্যুঞ্জয় সিং কে দেখে আমার গলা শুকিয়ে গেল।সাদা ধুতি , রঙীন শার্ট, বিশাল চোয়াল, পাকানো গোঁফ আর কপালে ফোঁটা ভদ্রলোকটিকে আগে কোথাও দেখেছি কি?
    উনি হাতজোড় করে কপালে ঠেকালেন। সদ্য স্নান করে পূজে সেরে এসেছেন। কালো চেহারায় কপালের শ্বেতচন্দনের ফোঁটা কেমন ছাইয়ের মত লাগছে।
    -- নমস্তে বহিনজি!
  • de | 24.139.119.172 | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৬:০৫651114
  • কি ভালো হচ্ছে লেখাটা! অনেকদিন পর একটানা পড়লাম!
  • সিকি | 125.249.13.82 | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৬:০৬651115
  • রঞ্জনদা, আরেকটু হোক আজ।
  • Nina | 83.193.157.237 | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৭:৫৩651116
  • রনজনভাউ
    মুঠো ফোনে নামটা ঠিক করে লেখা গেলনাঃ-(
    একটানা পড়ে গেলাম দারুণ! হাত চালাকে ভইয়া
  • ranjan roy | 24.99.183.32 | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১১:৪১651117
  • উনি গোঁফের ফাঁকে হাসলেন। ধবধবে সাদা পেপসোডেন্ট দাঁত।
    আরে, এতক্ষণে বুঝতে পেরেছি। মানে, ওনাকে আগে দেখিনি বটে আবার দেখেছিও। আসলে উনি "শোলে" সিনেমার সাম্ভা'র মত দেখতে; কী মিল ! কী মিল!
    -- বহেনজি! আপনি এখানে নিশ্চিন্তে পড়াতে আসবেন। আমার দুটো বাচ্চা। ওদের শুধু ইংরেজি আর অংক নয়, খানিক আদবকায়দাও শেখাবেন। আমি তো বিহারের লোহারডাগার গাঁ থেকে এসেছি। বজরঙ্গবলীর কৃপায় দুটো করে খাচ্ছি। ওদের অন্য ধরণের জীবন হবে, তার উপযুক্ত করে তুলতে আপনার মত বঙ্গালী লিখিপড়ি মহিলার থেকে সহবত শিখলে ভাল হবে।

    আমার পড়ানো শুরু হল। ছেলেগুলো আদৌ বাঁদর নয়। কোন অসুবিধে হচ্ছিল না। এছাড়া ওনার স্ত্রী নিজে হাতে করে নিয়ে আসতেন কিছু ফল, বোঁদে দিয়ে মাখা মুড়ি আর চা।
    আরও সুবিধে করে দিলেন। নামমাত্র ভাড়ায় সাইকেল দেওয়া হল সমীরদাকে যাতে ও আমাকে শহরের রেলের পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় পোঁছে দিতে পারে। আমার ভাল লাগে। সমীরদা এই নিয়ে ব্যস্ত, আমাকে টিউশনে সাপোর্ট দিতে এনগেজড্‌।
    আমি নিশ্চিন্ত; ওকে কুকুরের লেজ সিধে করতে না লাগিয়ে দিলে কালই গিয়ে রেলওয়ে হামাল মানে কুলিদের বা রিক্শাওয়ালাদের ইউনিয়ন বালাতে লেগে যা্বে। না বাবা, ঢের হয়েছে। আমি ওসব " বোল মজুরে- হল্লা বোল! লালকিল্লে পর হল্লা বোল!" থেকে দুরে থাকতে চাই। পুলিশের তাড়া থেকে গা বাঁচিয়ে চলতে চাই। ঢের হয়েছে।
    নতুন করে জীবন শুরু করতে হবে। করছি তো! প্রথমে খড়কুটো দিয়েই ঘর বাঁধার চেষ্টা করব। এই পোর্টার খোলিতেই। শুরুতে ঝোপড় পট্টিই না হয় হল। তাতে কি!
    তবে কয়েক সপ্তাহ যেতে না যেতেই বুঝলাম সমীরদা ভেতরে ভেতরে ছটফট করছে। হাজার হোক পুরুষ তো! ওর কোন স্বতন্ত্র জীবন নেই, খালি বৌকে ঘর থেকে টিউশনির জায়গায় পৌঁছে দেওয়া আর পড়ানো হলে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা! ব্যস্‌ এইটুকু?
    খেতে বসে মুচকি হেসে বলল-- তাহলে? লতা তুমি একজন শোফার পেয়ে গেলে?
    আমিও হাসি-- সাইকেল চালালে শোফার? তুমি পারো বটে!
    -- আরে ম্যাডাম! আজ সাইকেল কাল স্কুটার পরশু মারুতি। বিজনেসম্যানের বাড়িতে পড়াতে পড়াতে বিজনেসের নানান ট্যাকটিক্স শিখে ফেলবে। তারপর আর তোমাকে পায় কে! এইভাবে একদিন আমাকে ভুলে যাবে,
    আমার মেজাজ খিঁচড়ে যায়।
    --- একদম বাজে কথা বলবে না। বল তো কাল থেকে না করে দিচ্ছি। তারপর খ্যাঁটের ব্যবস্থা তুমিই করবে বলে দিচ্ছি।
    -- রাগ কর না লতা! তুমি এমন রেগে গেলে আমি কোথায় যাই! আসলে ওই লোকটা রেলওয়ে এলাকার ডন; স্মাগলিং , গুন্ডাগর্দি সবেতেই আছে। তাই ওর থেকে দূরে থাকাই ভাল।
    -- কি যে বল! সে তো আমি বলেই দিয়েছি-- আরো দু'একটা অন্য টিউশনি পেলেই--।
    সমীরদা চিন্তিত মুখে মাথা নাড়ে।
  • সে | 188.83.87.102 | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৩:২০651119
  • পড়ে ফেলেছি। তারপর?
  • Nina | 83.193.157.237 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:১৭651120
  • তারপর----
  • ঐশিক | 24.140.33.186 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১২:৩৫651121
  • রঞ্জন বাবু কালে কালে মেগা সিরিয়ালের ইসক্রিপ্ট রাইটার হবেন ই হবেন :)
  • de | 24.139.119.171 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৩:৩৮651122
  • এটা থেকেই মেগা সিরিয়াল বানানো যায় - টিআর্পি যা হাই!
  • sm | 130.59.178.207 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২০:২৩651123
  • Rন্জন বাবু মেগা সেরিআল তা ভালো বোলেছেন।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:১৯651124
  • রঞ্জনদা,
    তাড়াতাড়ি আসুন, নইলে টই হাইজ্যাক হয়ে যাবে কিন্তু!
  • ranjan roy | 113.242.197.192 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২৩:১২651125
  • ৪)
    একজন বন্ধু জুটে গেছে! আমার থেকে বছর পাঁচেকের বড় হবে। আমার ছাত্রদুটোর মা,--মানে ডনের বউ।
    গড়ন একটু মোটার দিকে, মুখে একটু হাসির ছোঁয়া। শাড়িটা বাঁদিক দিয়ে ঘুরিয়ে সিধে পল্লু করে পড়েছেন, তাতে চাবির গোছা। গলায় মঙ্গলসূত্রের দানাগুলো সোনার। হাতে নানা রঙের কাঁচের চুড়ি , শাড়ির রঙের সঙ্গে ম্যাচিং করে পরা। খালি পায়ে মাহুর বা আলতা লাগানো, বুড়ো আঙুলের পরেরটায় রূপোর বিছিয়া, কানে নাকে দুল ও নাকছাবি। আমি ওর সামনে সংকোচ করে বেশি কথা বলতাম না।
    কিন্তু শ্রীমতী র‌্যামপিয়ারি জৌজে মৃত্যুঞ্জয় সিং, উমর ২৭, প্রাইমারি পাস, সাকিন দক্ষিণ বিহারের পলামু জিলার নৌচন্দ্রিপুর গাঁও-- আমাকে বড়বোনের স্নেহ ও আদরে আপন করে নিলেন।
    আমি এক ঘন্টার জায়গায় দুঘন্টা করে পড়াতে লাগলাম। কিন্তু অতক্ষণ ছোটবাচ্চা বসতে পারে নাকি? তাই শেষ আধ ঘ্ন্টা কাটতো বাচ্চার মার সঙ্গে নানান গল্প করে আর ঘন দুধের সঙ্গে কলা আর গুড় দিয়ে চিঁড়ে বা মুড়ি খেয়ে, পেট ভরে যেত।
    আর অসাধারণ গল্প বলার ক্ষমতা ছিল এই বড়দিদিটির। কিছু কিছু অবশ্য একটু গেঁয়ো , ওই যাকে বলে নন-ভেজ গোছের। কিন্তু আমার এই বন্ধুনী-দিদিটি কিন্তু কেচ্ছা শোনাত, অথচ কারো কুৎসা করত না।
    তা কি করে হয়? সেটা ওর গল্প বলার ভঙ্গিতে ফুটে ওঠে। ওর সব গল্পের পেছনে বয়ে যায় এক অনাবিল হাসির ফল্গু ধারা। বিনা কোন পক্ষপাত ও গল্প বলে যায়। বাদ যায় না ওর সোয়ামী বা শ্বশুরজিও। ভাগ্যিস শাসু-মা আকাশে তারা হয়ে গিয়ে রক্ষা পেয়েছেন।
    আমরা জানতে পারি যে দশবছর আগে ওঁর পতিদেবতা এক দর্জিকে বেধড়ক মার মারেন, তখনও উনি পুরোদস্তুর ডন হয়ে ওঠেন নি।
    পুলিশকে উনি যা জবানবন্দী দেন তার সাম এন্ড সাবস্ট্যান্স হল এই ছোকরা দর্জি বড় বড় কথা বলে, কোন কাজ জানে না। ভিন গাঁ থেকে এসে ওনার কাছে করবদ্ধ প্রার্থনা করে জমির জন্যে,---একটুকরো টিনের কিয়স্ক বানিয়ে টেলরিং শপ খুলবে।
    উনি রেলের জমিতে জায়গা জোগাড় করে দেন, বদলে দর্জি ব্যাটা একবছর বিনে পয়সায় ওনার জামাকাপড় বানিয়ে দেবে বলে কসম খায় আর বলে-- সেবা করনে কে লিয়ে এক মওকা তো দীজিয়ে!
    উনি টেরিকটের এক পিস নিয়ে এসে ওকে পায়জামা বানিয়ে দিতে বললেন। দর্জি দস্তুর মত মাপজোক করে তিনদিন বাদে যে জিনিস ডেলিভারি দিল তা দেখে তো সবার চক্ষু চড়ক গাছ।
    উনি তক্ষুণি প্যাকেট নিয়ে রাগে গনগন করতে করতে

    ওর কাছে শুনতাম বিলাসপুরের চোর-পুরুতঠাকুর চৌবেজির গল্প। চাটাপাড়া নিবাসী প্রবীণ চৌবের খুব নামডাক, উনি অন্নপ্রাশন- বিয়ে-নামকরণ--উপনয়ন-শ্রাদ্ধ সবকিছুর মন্ত্র জানেন।অনেক শাস্তর পড়েছেন। কিন্তু হাতসাফাইয়ে ততধিক খ্যাতি।
  • ranjan roy | 113.242.197.192 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২৩:১২651126
  • ৪)
    একজন বন্ধু জুটে গেছে! আমার থেকে বছর পাঁচেকের বড় হবে। আমার ছাত্রদুটোর মা,--মানে ডনের বউ।
    গড়ন একটু মোটার দিকে, মুখে একটু হাসির ছোঁয়া। শাড়িটা বাঁদিক দিয়ে ঘুরিয়ে সিধে পল্লু করে পড়েছেন, তাতে চাবির গোছা। গলায় মঙ্গলসূত্রের দানাগুলো সোনার। হাতে নানা রঙের কাঁচের চুড়ি , শাড়ির রঙের সঙ্গে ম্যাচিং করে পরা। খালি পায়ে মাহুর বা আলতা লাগানো, বুড়ো আঙুলের পরেরটায় রূপোর বিছিয়া, কানে নাকে দুল ও নাকছাবি। আমি ওর সামনে সংকোচ করে বেশি কথা বলতাম না।
    কিন্তু শ্রীমতী র‌্যামপিয়ারি জৌজে মৃত্যুঞ্জয় সিং, উমর ২৭, প্রাইমারি পাস, সাকিন দক্ষিণ বিহারের পলামু জিলার নৌচন্দ্রিপুর গাঁও-- আমাকে বড়বোনের স্নেহ ও আদরে আপন করে নিলেন।
    আমি এক ঘন্টার জায়গায় দুঘন্টা করে পড়াতে লাগলাম। কিন্তু অতক্ষণ ছোটবাচ্চা বসতে পারে নাকি? তাই শেষ আধ ঘ্ন্টা কাটতো বাচ্চার মার সঙ্গে নানান গল্প করে আর ঘন দুধের সঙ্গে কলা আর গুড় দিয়ে চিঁড়ে বা মুড়ি খেয়ে, পেট ভরে যেত।
    আর অসাধারণ গল্প বলার ক্ষমতা ছিল এই বড়দিদিটির। কিছু কিছু অবশ্য একটু গেঁয়ো , ওই যাকে বলে নন-ভেজ গোছের। কিন্তু আমার এই বন্ধুনী-দিদিটি কিন্তু কেচ্ছা শোনাত, অথচ কারো কুৎসা করত না।
    তা কি করে হয়? সেটা ওর গল্প বলার ভঙ্গিতে ফুটে ওঠে। ওর সব গল্পের পেছনে বয়ে যায় এক অনাবিল হাসির ফল্গু ধারা। বিনা কোন পক্ষপাত ও গল্প বলে যায়। বাদ যায় না ওর সোয়ামী বা শ্বশুরজিও। ভাগ্যিস শাসু-মা আকাশে তারা হয়ে গিয়ে রক্ষা পেয়েছেন।
    আমরা জানতে পারি যে দশবছর আগে ওঁর পতিদেবতা এক দর্জিকে বেধড়ক মার মারেন, তখনও উনি পুরোদস্তুর ডন হয়ে ওঠেন নি।
    পুলিশকে উনি যা জবানবন্দী দেন তার সাম এন্ড সাবস্ট্যান্স হল এই ছোকরা দর্জি বড় বড় কথা বলে, কোন কাজ জানে না। ভিন গাঁ থেকে এসে ওনার কাছে করবদ্ধ প্রার্থনা করে জমির জন্যে,---একটুকরো টিনের কিয়স্ক বানিয়ে টেলরিং শপ খুলবে।
    উনি রেলের জমিতে জায়গা জোগাড় করে দেন, বদলে দর্জি ব্যাটা একবছর বিনে পয়সায় ওনার জামাকাপড় বানিয়ে দেবে বলে কসম খায় আর বলে-- সেবা করনে কে লিয়ে এক মওকা তো দীজিয়ে!
    উনি টেরিকটের এক পিস নিয়ে এসে ওকে পায়জামা বানিয়ে দিতে বললেন। দর্জি দস্তুর মত মাপজোক করে তিনদিন বাদে যে জিনিস ডেলিভারি দিল তা দেখে তো সবার চক্ষু চড়ক গাছ।
    উনি তক্ষুণি প্যাকেট নিয়ে রাগে গনগন করতে করতে

    ওর কাছে শুনতাম বিলাসপুরের চোর-পুরুতঠাকুর চৌবেজির গল্প। চাটাপাড়া নিবাসী প্রবীণ চৌবের খুব নামডাক, উনি অন্নপ্রাশন- বিয়ে-নামকরণ--উপনয়ন-শ্রাদ্ধ সবকিছুর মন্ত্র জানেন।অনেক শাস্তর পড়েছেন। কিন্তু হাতসাফাইয়ে ততধিক খ্যাতি।
  • ranjan roy | 113.242.197.192 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২৩:৩৬651127
  • উনি তক্ষুণি প্যাকেট নিয়ে রাগে গনগন করতে করতে দর্জির দোকানে গিয়ে মুখের উপর ছুঁড়ে দিয়ে বললেন-- ই কেইসন দিল্লাগি বা? তোহর বাপ কে জমিন মা --?
    রাগে মুখ দিয়ে কথা সরছে না, বেরিয়ে আসছে অশ্রাব্য গালাগালির তোড়।
    সবাই ব্যাপার কি জিগ্যেস করায় উনি পাজামাটি খুলে দেখালেন দুপায়ের ফাঁকে "হাই"য়ের জায়গাটায় একটা ঝোলামত কাটিং দেখা যাচ্ছে। ঠিক যেমন দুগ্ধবতী ছাগলের বাঁটের তলায় থাকে।
    -- আবে হরামখোর, ভিখমঙ্গে ? কা শোচে হস্‌? হমার হাইড্রোসিল কী বিমারি হ্যায়?
    হতভম্ব দর্জি মাথা নেড়ে অস্ফুটে জানাল যে ও ওইরকম কিছুই ভেবেছিল।
    ব্যস্‌, সমবেত পাব্লিকের হো-হো হাসিতে ওনার চড়াৎ করে রাগ চড়ে গেল। দর্জিকে এরপর রেল-হাসপাতালে ভর্তি করতে হল।

    ওর কাছে শুনতাম বিলাসপুরের চোর-পুরুতঠাকুর চৌবেজির গল্প। চাটাপাড়া নিবাসী প্রবীণ চৌবের খুব নামডাক, উনি অন্নপ্রাশন- বিয়ে-নামকরণ--উপনয়ন-শ্রাদ্ধ সবকিছুর মন্ত্র জানেন।অনেক শাস্তর পড়েছেন। কিন্তু হাতসাফাইয়ে ততধিক খ্যাতি। বিয়েবাড়িতে উনি থাকলে বরের জেব, শ্বশুরের পার্স, শালীর গলার বিছে হার -- কিছু না কিছু হাপিস হবেই। তাই উনি কোন কাজকম্মের বাড়িতে ঢুকলেই চারদিকে সামাল সামাল রব উঠত।
    বাড়ির সবাই ওকে চোখে চোখে রাখত, কাছছাড়া করতে চাইত না। কিন্তু উনি জাত আর্টিস্ট। রেলপাড়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট লোকো ড্রাইভার সুকালুরামের মেয়ের বিয়ে। পুরুতমশাই মন্ত্র পড়ছেন। এর মধ্যে হটাৎ বরের পরিত্রাহি চিৎকার।
    ওর পাকিট সে পার্স গায়েব! ওতে তো শয্যাতুলুনির টাকা, বাসরঘরে বেসুরো গান গেয়ে শালিদের কানমলা খেয়ে ফি দেবার টাকা-- সব রাখা ছিল!
    হুলুস্থুল বেঁধে গেল। পারস্পরিক আরোপ-প্রত্যারোপ-গালিগালাজ হয়ে হাতাহাতির উপক্রম! বর ছাঁদনাতলা থেকে উঠে যায় আর কি!
    কিন্তু লাঠি-সোঁটা-সাইকেলের চেন হাতে ডন মৃত্যুঞ্জয়ের বাহিনী মড়ওয়া থুড়ি মন্ডপ ঘিরে ফেলেছে।
    বেশ থমথমে ভাব। টান টান উত্তেজনা।
    ডন শান্ত; হাতজোড় করে অনুরোধ করলেন--বিয়েটা সম্পন্ন হয়ে যাক; মানিব্যাগ ঠিকই পাওয়া যাবে, ডনের বচন। নইলে--!
    বিয়ে শেষ হলে পরে পুরুতমশায় চৌবেজি দক্ষিণা না নিয়েই কেটে পড়বেন কি না ভাবছিলেন। এমন সময় ডন তাঁকে নিয়ে পাশের ছোটঘরে গিয়ে একটানে ধুতি খুলে দিলেন।
    শেষে সব ভালয় ভালয় মিটে গেল। পুরুত নগদ বিদায় নিয়ে খেয়ে দিয়ে ছাঁদা বেঁধে বাড়ি গেলেন,
  • সে | 188.83.87.102 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৩৩651128
  • :-))))
  • ranjan roy | 113.240.99.39 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২২:১৭651130
  • আমাদের দিকে একটা চালু কথা আছে- 'মুল্লা কে দৌড় মসজিদ তক্‌'। আর দিদিমা বলত-- ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভানে।
    তেমনি সমীরদার হাল।
    ওই সব মার্ক্স-লেনিন-মাও-সাম্রাজ্যবাদ- বিপ্লব গোছের জুমলা না কপচালে সমীরদার পেট ফুলে যায়। কয়েকমাস ধরে একটা নিরীহ গোবেচারা জীবন! রাত্তিরে জেগে থাকে, বই পড়ে, কিছু ছাইপাঁশ লেখে। বিছানায় এপাশ ওপাশ করে। যেন সধবা মহিলা কিছুদিন ধরে নিরিমিষ খেতে বাধ্য হচ্ছে!
    আমি খুশি,-- ওইসব নারায়ণের মত অলুক্ষুণে লোকেদের চক্কর থেকে বেরিয়ে আসা গেছে।
    আমি কষ্ট পাচ্ছি-- সমীরদার অবস্থা দেখে। না, ওকে আমার সাইকেল চালক হিসেবে দিন কাটাতে দেখতে চাই না।
    তাই যখন আজ বিকেলবেলায় আমাদের ঝোপড়ির নিচু দরজা দিয়ে মাথা নিচু করে একজন লম্বামত লোক সমীরদার পেছন পেছন ঢুকল --আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।
    হলদে বাল্বের ছায়া ছায়া আলোয় যা দেখলাম-- ইস্তিরি করা সাদা জামাপ্যান্ট, ফুলহাতা শার্টের বোতামটা বেশ বাহারি। পালিশ করা কালো শু। লজ্জা লজ্জা মুখ করে আমাকে নমস্কার করল।এ কে?
    সমীরদা এখন একগাল হাসি।
    --লতা, এ হল বাসু, আমাদের বাসব। টালিগঞ্জের কমরেড। এখানে রেলে কাজ করে।মালগাড়ির গার্ড। জান, এ প্রথম জীবনে হুগলি জেলার কুরিয়ার ছিল! কমরেড সুশীতলের ব্যক্তিগত সহায়ক ছিল। পরে মহাদেব মুখার্জির সঙ্গেও কাজ করেছে।

    হায় ভগবান! এক গঞ্জেরি দুসরে গঞ্জেরি কো ঢুঁঢ় নিকালা!!
  • সে | 188.83.87.102 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২৩:২৬651131
  • দারুণ ইডিয়ম তো!
  • সে | 188.83.87.102 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৫:৩৫651132
  • হাইজ্যাকিং আগতপ্রায়।
  • de | 69.185.236.54 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৫:৫২651133
  • রঞ্জনদা কোথায় গেলেন?
  • Nina | 83.193.157.237 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৬:২২651134
  • ও রনজনভাউ কোথায় গেলেন-----
  • ranjan roy | 24.99.228.87 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২৩:৪৫651135
  • দুটো জিনিস আমাকে অস্বস্তিতে ফেলেছে।
    দুটোই ওই নবাগত কমরেড বাসুকে নিয়ে।
    উনি প্রায়ই আসেন, বিশেষ করে সন্ধ্যের দিকে। ব্যস্‌, সমীরদার চেহারা অমনি গার্ডেন-গার্ডেন হয়ে যায়।
    শুরু হয় "শহীদদের বলিদানের" চারণগীত।
    আমি এসবের কিছুই জানিনা বুঝিনা, কিন্তু উনি সব গল্পের শেষে আমার দিকে মাথা নেড়ে সায় চান। যেন ওস্তাদ সমের মাথায় এসে শ্রোতাদের বাহবা কুড়োতে চাইছে।
    কী যে করি!
    আমাদের ছত্তিশগড়ে গ্রাম বা ছোটশহরের দিকে সন্ধ্যেয় কোন কোন জায়গায় রামায়ণ পাঠের আসর বসে। সেখানে একজন একটি দোহা পাঠ করে তার টীকা করে। কিন্তু প্রত্যেক বাক্যের শেষে বাকিরা কেউ কেউ হুঁ-হাঁ করে সায় দিতে থাকে।
    আমি ছোটবেলায় হেসে ফেলেছিলাম আর বলেছিলাম যে পন্ডিতজি বোধহয় দেখতে চান যে এই একঘেয়ে পাঠ শুনতে শুনতে ওঁর শ্রোতারা ঘুমিয়ে পড়ে নি। মা আমার পিঠে পাখার বাঁট ভেঙেছিল।
    সে যাই হোক, ব্যাপারটা এরকম।
    ধরুন পাঠক এই দোঁহাটি পড়লঃ
    " প্রবেশি নগর কীজিয়ে সব কাজা,
    হৃদয়ে রাখি কোসলপতি রাজা'।"
    তারপর ও টিকা করতে লাগলঃ
    --যব যব হম কউনো নগরমে যাতে হ্যাঁয়,
    দোহারঃ হউ জি , যাতে হ্যায়,
    --- নগর মেঁ ঘুসনে কে বাদ কুছু কামধাম করতে হ্যায়,
    দোহারঃ করতে হ্যায়, করতে হ্যায়।
    --তব তব হম দিল মেঁ কোসলপতি রাজা কো সদা বইঠাকে রাখতে হ্যায়।
    দোহারঃ হউ জি, রাখতে হ্যায়।
    -- কোসলপতি রাজা কউন হবে?
    দোহারঃ কউন হবে জি?
    -- রামচন্দ্রজি। অউ কউন হবে?
    দোহারঃ হ হো , হহো। উনকে বিনা অউর কউন জি?
    -- সিয়াবলরামচন্দ্র কী?
    --জয়! হো গয়ে জি। অব নারিয়েল ফোড়, প্রসাদ বাঁটো। রাত হো গয়ে।

    এখনেও দেখছি তারই রকমফের।

    কমরেড বাসুঃআপনি তো সে সব জানেন না। ১৯৭০ এ দেবরঞ্জন, অমর শহীদ। অশোকনগরের। একা একটি মাউজার নিয়ে গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে এক প্লেটুন পুলিশ বাহিনীকে রুখে দিয়েছিল। "দেশব্রতী" পত্রিকায় তার বিস্তৃত বর্ণনা ছিল। একহাতে বুঝলেন --এক হাতে,।
    আর এই বুর্জোয়াদের পেটোয়া আনন্দবাজার লিখল--অশোকনগরে পুলিশের গুলিতে কুখ্যাত হাতকাটা দেবু নিহত।জঘন্য!
    কমরেড সমীরঃ এটাই তো স্বাভাবিক। দেখুন না, ভিয়েতনামের যুদ্ধের সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিসিংগারকে দেওয়া হল নোবেল "শান্তি" পুরষ্কার।
    আর দেখুন-রবার্ট ম্যাকনামারা। একটা ডাকাত। ভিয়েতনামের যুদ্ধে নাপাম ফেলেছে, হাওয়ায় আগুন লাগিয়েছে। মেয়েদের স্তন কেটে ফেলা হয়েছে। মার্কিন সাংবাদিক উইলফ্রেড বার্চেটের বইয়ে রিপোর্ট ও ছবি দেখেছি। একজন শ্রমিক কমরেড ন্‌গুয়েন ভ্যান ত্রোইকে টর্চার করে মারা হল।
    আর সেই ম্যাকনামার কি না যুদ্ধ থেকে ফিরে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হল!
    ওদের প্রচারে ভিলেনরা হিরো আর সত্যিকারের বীর ও দেশপ্রেমিক যোদ্ধারা ভিলেন।

    আমি ফুট কাটি-- ঠিক ঠিক। দেখ না, হিন্দি ফিল্মের ভিলেনরা তেলুগু-তামিল ফিল্মের হিরো। ওই সব রজনীকান্ত, নাগেশ্বর রাও বা রামা রাওয়ের দল। ভাঁটার মত চোখ আর কেলেকুষ্টি চেহারা।
    কমরেড বাসু হেসে ফেলে।
    সমীরদা প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে ধমক দেয়।
    -- যাও, আর একবার চা বানিয়ে আনো।
    বাসু একটু অপ্রস্তুত হয়, আমার দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে হাসে; আমার ভালো লাগে।
  • Nina | 83.193.157.237 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৯:০৯651136
  • রঞ্জনভাউ---জরা হাত চলাকে ------
  • ranjan roy | 113.242.199.145 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১১:০৮651137
  • তারপর শুরু হয় পঁচাত্তর না সাতাত্তরে কমলপুরে নকশালদের পার্টি কংগ্রেসের গল্প। তখন নতুন নেতা মহাদেব মুখার্জি।
    কমরেড বাসুর গল্পে উনিও একজন দাদা। মানে চারুদা, সরোজদা, সুশীতলদা, অসীমদা, সন্তোষদার পর উনি বোধহয় ছোড়দা, নাকি ন'দা!
    তা সেই গোপন পার্টি কংগ্রেসে মহাদেব মুখার্জির জোশীলা ভাষণের পর কমরেডদের জোশ আনতে মোষের মাংস রান্না করে খাওয়ানো হল। কেউ কেউ নাক সিঁটকিয়ে ছিলেন। মাংসগুলোর ফাইবার বেশ শক্ত আর মোটা। চিবুতে চিবুতে চোয়াল ব্যথা হয়ে যায়।
    কিন্তু ন'দা বললেন-- একজন গেরিলা সব রকম বিপরীত পরিস্থিতির মুখে অবিচল থাকে। চিংকাং পাহাড়ের ঘাঁটিতে আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতা, মেহনতী জনগণের প্রিয় চেয়ারম্যান মাও কী খেতেন কেউ ভেবেছ? ভেতরে বিপ্লবী আগুন থাকলে পাথরও হজম হয়ে যায়। বেশি কথা কি, কয়েক বছর আগেও প্রেসিডেন্সির সংস্পর্শে আসা ছাত্র-যুব কমরেডরা
    এর পর কেউ প্রতিবাদ করে? সব সোনামুখ করে খেল। নিশ্চয় হজম হয়েছিল।শীতকাল। ধানকাটার পর ন্যাড়া ক্ষেত, গাঁয়ের বাইরে।
    পরের দিন সকালে সেখানে দেখা গেল আলপনার ছড়াছড়ি।
    অনেকদিন পরে সমীরদা প্রাণখুলে হাসল।
    কিন্তু হাসির কথা কম হয়। ভদ্রলোক একেবারে রামগড়ুড়ের ছানা। আবার ছিঁচকাদুনে! শহীদদের কথা বলতে বলতে কেঁদে ভাসান।
    কী আপদ! আমার কান্না আসে না যে!
    উনি আবার ওদের হলদে হয়ে যাওয়া পত্রিকা থেকে সানগ্লাস চোখে স্মার্ট এক উঠতি বয়েসের ছেলের ছবি দেখান। ফ্যামিলি অ্যালবাম থেকে তুলে ছাপানো।
    ছবিতে হিরোর মত দেখতে ছেলেটি নাকি সাউথ সিঁথির অমর শহীদ শ্যাম। হবেও বা!
    তারপর কমরেড বাসু শোনাতে থাকেন কিভাবে উনি ওই এলাকায় টর্পেডো তারাপদ বলে কুখ্যাত পুলিশ অফিসারের ফাঁদে পড়ে গিয়েছিলেন!
    ওনার মাউজারের গুলি ফুরিয়ে এসেছে।ওদিকে তারাপদ দুটো পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে এগিয়ে আসছে। ওটা ছিল কানাগলি। পালানোর রাস্তা বন্ধ। কোন বাড়িতে ঢোকার উপায় নেই। গুলি চলতেই সব বাড়িগুলো দরজা-জানলা বন্ধ করে ঘরের ভেতরে দূর্গা নাম জপছে।
    সামনে একটা ঝাঁপফেলা চায়ের দোকানের আড়াল।সেটা পেরিয়ে তারপদরা এগিয়ে এলেই--।
    এমন সময় বিকট শব্দে দুটো পেটো ফাটল। সেপাই দুটো ছিটকে পড়েছে। তারাপদ পেছন ফিরে এঁকে বেঁকে দৌড়চ্ছে। কালীচরন ঘোষ লেন শুনশান হয়ে গেল। আমাদের গলিতে সন্নাটা।
    কিছুই মাথায় ঢুকছে না। বরাতজোরে বেঁচে গেছি!
    না, ভুল বুঝেছিলাম। পাশের বাড়ির ছাদ থেকে একমুখ হাসি নিয়ে টপকে নামল শ্যাম। আমাকে জড়িয়ে ধরল।
    গুলির আওয়াজে বাথরুমের ঘুলঘুলি দিয়ে ও উঁকি মেরে অবস্থাটা আন্দাজ করে নেয়। তারপর ছাদে গিয়ে পাশের বাড়ির টালির ছাদে গিয় চড়ে বুকে ক্রল করে বেশ কাছ থেকে পেটো চার্জ করে। লাল-সাদা মানে মোমছাল আর পটাশিয়াম ক্লোরেট দিয়ে বাঁধা, তাতে স্প্লিন্টার বলতে গ্রামাফোনের পুরনো পিন, পেরেক এইসব।
    আজ শ্যাম নেই, আমি বেঁচে আছি, রেলের চাকরি করছি। ওকে যে রোজ মনে পড়ে।
    এই বলে কমরেড বাসু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন।
    আমি আবার চা বানাতে উঠে গেলাম।
  • ranjan roy | 24.99.8.79 | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১২:৪০651138
  • ৫)
    এই ভাবে বাসুবাবুর গল্প থেকে কান্না , না কি কান্না থেকে গল্পের সিরিয়াল চলতে লাগল।
    সমীরদা উৎসাহী শ্রোতা, আমি নীরব।
    তবু এই সুযোগে কানে আসে নানান গল্প, কল্পকথা বা কাহিনী। কিছুদিন শুনতে শুনতেই বুঝে যাই এতে কিছুটা কল্পনার মিশেল আছে। একই গল্প যখন উনি পরের বার বলেন তখন ঘটনা পরম্পরা খানিক বদলে খানিক ঘেঁটে যায়।
    তবু শুনি। শুনতে ভাল লাগে। এক অজানা দেশের অজানা কালের গল্প। কিছুটা যেন রূপকথার আদল।
    বুঝলেন সমীর, তখন কোলকাতার শহরতলী মফঃস্বলের ছোট ছোট শহরে গৃহযুদ্ধের আবহাওয়া। সিপিএম ও এম-এল। রাস্তাঘাটে একে অপরকে দেখলেই পকেটে হাত চলে যাচ্ছে। শত্রুএলাকায় গিয়ে পড়লে প্রাণ নিয়ে ফেরা কঠিন। তাই পকেটে কিছু থাকুক , না থাকুক; ভক্কি দিয়ে গলিটা পেরোতে হলে পকেটে হাত যাবেই যাবে। বাকি গলিটা পেরোতে হবে বিপক্ষের চোখে চোখ রেখে।
    দোষ হয়ত দুপক্ষেরই ছিল। এমন কুরুপান্ডব না হলেই হয়ত ভালো হত। কিন্তু সিপিএম পুলিশের সাহায্য পেত। ফলে লড়াইয়ের ফেয়ার গ্রাউন্ড ছিল না। আমরা পুষিয়ে নিতাম আদর্শের প্রতি নিষ্ঠা ও বিশ্বাস থেকে।
    হুগলি জেলার কথা বলি। তখন দ্রোণাচার্য ঘোষ মারা গেছেন। অরবিন্দ জেলে। কেস চলছে। সম্ভবতঃ ফাঁসি হবে।
    আমার গুরু ওকে খুব ভালবাসত। বলল--মন খারাপ করিস না। অরবিন্দর কিছু হবে না। আমি গোটাকয়েক নামজাদা পুলিশ অফিসারকে দানা খাইয়ে পালছি। একেবারে হাতের মুঠোয়। ওরা জানে যে যেদিন অরবিন্দের প্রাণদন্ডের ঘোষণা হবে সেদিনই ওদেরও শেষ দিন। সোজা উড়িয়ে দেব।
    আরে, ঘাবড়াস কেন? পচাগলা সাম্রাজ্যবাদকে এত ভয়!
    সমীরদা উত্তেজিত।
    --সত্যি, ফিল্ডের কমরেডদের চেতনার স্তর আলাদা। বর্তমান যুগ হল ক্ষয়িষ্ণু সাম্রাজ্যবাদের ধ্বংসের আর সমাজতন্ত্রের সার্বিক বিজয়ের যুগ।
    হ্যাঁ, তখন লিন পিয়াও এরকম কিছু বলেছিলেন বটে।

    আমার পিত্তি জ্বলে যায়। সমীরদা কি কখনই কিছু নাম আর কোটেশন ছাড়া কথা বলতে পারে না?

    আরও শোন। চন্দ্ননগরের তেলেনিপাড়ার এক কমরেডকে রেল স্টেশনের ধারে সিপিএম এর অ্যাক্শন স্কোয়াড কেটে ফেলে চলে গেছে। ও মাটিতে পড়ে ছটফট করছে। খাবি খাচ্ছে। কোনরকমে বলছে--জল! জল!
    কে দেবে! লোকজন হুড়মুড়িয়ে পালিয়েছে, ভেন্ডার-টেন্ডার সবার ঝাঁপ বন্ধ। শেষে একটি ছেলে , ওর ছোটবেলার বন্ধু , দৌড়ে এল। কোনরকমে জল নিয়ে এসে ওর চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিল।
    ও হাত বাড়াল, চোখ খুলল। এবার বন্ধুকে চিনতে পারল। তারপর জল না খেয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল। বন্ধু যে সিপিএম!
    এমন সময় খবর পেয়ে নকশালদের স্কোয়াড পৌঁছে গেল। জল নিয় এল। ও জল খেল। একটু হাসার চেষ্টা করল। পারল না। মুঠো করে ডান হাতটা তুলল-ব্যস্‌। মুখের থেকে জল গড়িয়ে পড়ে গেল।

    বাসু আমাকে দেখছেন।
    জল যে আমার চোখ থেকেও গড়িয়ে পড়ছে।
    সমীরদার চোখ-মুখ জ্বলছে। আস্তে আস্তে বললঃ
    " বীরের এ রক্তস্রোত, মাতার এ অশ্রুধারা,
    এর যত মূল্য সে কি ধরার ধূলায় হবে হারা?
    স্বর্গ কি হবে না কেনা? বিশ্বের কান্ডারী,
    সে কি শুধিবে না ঋণ?
    রাত্রির তপস্যা, সে কি আনিবে না দিন?"
  • ranjan roy | 24.99.222.132 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১২:২৭651139
  • কিন্তু এই সেন্টিমেন্টে ভেজা গল্পমালা আস্তে আস্তে প্রচন্ড বোরিং লাগছিল। কিছুদিন পরে আমি কমরেড বাসু আসলেই কোন না কোন কাজের অজুহাতে এড়িয়ে যেতাম। দোকানে চলে যেতাম বা খানিকক্ষণ বাইরে ঘুরে আসতাম। গল্পগুলো ক্রমশঃ শুকনো ভাতের দলার মত গলায় আটকাতে লাগল।
    ওঁর বলার ভঙ্গিতে কিছু একটা ছিল যাতে মনে হত যে উনি একটু নুন-হলুদ মাখিয়ে পরিবেশন করছেন।
    আর মজার ব্যাপার হল, আমি হাজির থাকলেই ওনার এইসব গল্পের ঝাঁপি খুলে যেত। সমীরদা একদিন বলল-- উনি আসলেই তুমি কোথায় চলে যাও?
    আমার উত্তর শুনে একটু অন্যমনস্ক হয়ে তারপর বলল-- তুমি না থাকলে উনি কেমন মিইয়ে যান। গল্প তেমন জমে না।
    সমীরদাও কি ক্লান্ত হচ্ছে? আমার কথা নাই বললাম!
    কিন্তু সেদিন আমার সহ্যশক্তি জবাব দিল।
    -- বুঝলে, তোমরা তো সে সব দিন দেখনি! কত চমৎকার লোকজন এসেছিল আমাদের সঙ্গে। মেয়েরাও। ঘরদোর ছেড়ে। আবার অনেকে ঘর -সংসার করেও আমাদের সাপোর্ট করে গেছে। শেল্টার দিয়েছে, অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছে, খাবার জুগিয়েছে, টাকাপয়সা দিয়েছে। পুলিশের রেইডের আগাম খবর দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট লাইফ রিস্ক করে পৌঁছে দিয়েছে। কখনও কখনও ধরা পড়েছে, চরম অত্যাচার ফেস করেছে। সবই বিপ্লবের স্বার্থে।
    ফরাসডাঙার এক কমরেড শহীদ হলেন। তিনি ফিল্ডের কমরেড। বেশি লেখাপড়া জানতেন না। থিওরি কপচাতেন না। খেটে খাওয়া পরিবারের।
    তিনি শুধু বুঝেছিলেন যে আমাদের দল গরীবের স্বার্থে সংগ্রাম করছে। তাই যেদিন তাঁকে ধরল, টর্চার করল, কিন্তু কিস্যু জানতে পারল না।
    শেষে পুলিশের জিপের পেছনে বেঁধে কয়েক মাইল মেঠো রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে আবার থানায় ফিরিয়ে আনাঅ হল। লোকটার জামাকাপড় ছিঁড়ে ফর্দাফাই। প্রায় গোটা শরীরের ছাল ছাড়ানো হয়ে গেছে। মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হয় নি। শেষ মুহুর্ত পর্য্যন্ত দয়া চায় নি।

    আমি এবার উঠে পড়ি।
    -- আরে কোথায় চললেন কমরেড? শেষটা শুনে যান।
    -- এখনও শেষ বাকি আছে?
    --- আছে বৈকি। আপনার বিশেষ করে শোনা উচিত। আমদের বিপ্লবে মেয়েরাই হল আসল শক্তি। বিশেষ করে বাঙালী মেয়েরা। আনি ওই শহীদের স্ত্রীর কথা বলছি।
    --- ও, শহীদেরও বাঙালী-বিহারি আছে নাকি?
    --- হল কি, ওঁর স্ত্রী , গাঁয়ের মেয়ে, সিঁথির সিঁদূর মুছলেন না। প্রকাশ্যে বলতে লাগলেন -- আমার স্বামী মারা যায় নি তো। ও বেঁচে আছে। বেঁচে আছে দলের সমস্ত কমরেডদের মধ্যে। শহীদের আত্মা মরে না।
  • ranjan roy | 24.99.222.132 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১২:৪৫651141
  • -- শুনুন, বলতে বাধ্য হচ্ছি আপনার এই গল্পটি অত্যন্ত sick! আমি আর কিছু শুনতে রাজি নই। আপনি এখন বাড়ি যান। এখন কয়দিন না আসলেই ভাল।
    ওর চেহারা আস্তে আস্তে পাঁশুটে হয়ে গেল। একটাও কথা বললেন না। উঠে চলে গেলেন।

    দুপুর বেলা। আমার আর সমীরদার মধ্যে বিচ্ছিরি ঝগড়া হয়ে গেল। বহুদিন বাদে। যেন গুমোটের পর ঝড়বৃষ্টি।
    -- কমরেড বাসুকে অপমান করে তাড়িয়ে দিলে লতা! লোকটা একটু সেন্টিমেন্টাল। বেশি বকবক করে। পুরনো দিনের কথা উঠলে বেসামাল হয়ে পড়ে। কিন্তু লোকটা ভাল। আমাদের সাহায্য করতে চায়। আসলে পুরনো দিনের অনেক কমরেডই ওই রকম।
    --- বাজে কথা! মানিকদা ও'রকম ছিল না। উনিও তো কত পুরনো।
    সমীরদা খেপে গেল।
    -- ফালতু কথা বলবে না বলে দিচ্ছি! মানিকদাকে পার্টি এক্সপেল করেছে। ও রেনেগেড। ওকে কমরেড বলতে ঘেন্না করে।
    --- আর এই রেলের চাকুরে নতুন লোকটা খুব ভাল? বাড়িয়ে বাড়িয়ে যা তা গল্প বলে। আদ্দেক মনে হয় বানানো।আর ওই সব গাঁজাখুরি গল্প আমাকে শোনাতে চায় কেন?
    --- সব জিনিসের নোংরা মানে করতেই হবে? ও আমাদের অবস্থা দেখে র‌্যাশনপানি তুলতে টাকা দিয়েও সাহায্য করে। আর কেউ করত?
    --ওর টাকা ফেরত করে দাও। আমি আরও দু-একটা টিউশন খুঁজে নেব।ততদিন একবেলা ভাত খাব, কিন্তু ওকে আস্কারা দিতে পারব না।
    সমীরদা গুম হয়ে রইল। তবে ঠিক সময় আমাকে টিউশনের বাড়িতে সাইকেলে পৌঁছে দিল।
    কমরেড বাসুদা দিন সাতেক এলেন না।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন