এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • নানা রঙের দিনগুলি — ১৫

    মানব মীরা দে লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৪ জুলাই ২০২৪ | ১৩৬ বার পঠিত


  • ১৯৮৩ সালে কেনা হয়েছিল টিভিটা—ভারত উর্বশী; বিশাল বড় বাক্স টিভি, সাদা-কালো। একটা বড় দু'কিলোর বাটখারার মত চ্যানেল বদলানোর নব আর চারটে পঁচিশ গ্রামের মত নব—ওপরের দুটোর ডানপাশেরটা সাউন্ড বাড়ানোর জন্য আর বাঁপাশেরটা অফ-অন্ নব, নিচের দুটোর ডানদিকেরটা  ব্রাইটনেস কন্ট্রোল নব, বাঁদিকের নবটার কাজ শ্রীকান্ত জানত না। আর সবার মাঝে ছিল চ্যানেল বদলানোর বড় নবটা—অবশ্য তখন চ্যানেল বলতে দুটোই ডিডি-ওয়ান আর ডিডি-টু বা ডিডি মেট্রো, পরের ডিডি মেট্রো বন্ধ হয়ে অনেকগুলো চ্যানেল সৃষ্টি হয় যেমন ডিডি স্পোর্টস, ডিডি নিউজ, ডিডি কিষান ইত্যাদি ইত্যাদি। আর চ্যানেল বদলে,  টিনের তৈরি অ্যান্টেনা ঘুরিয়ে বেঁকিয়ে ফ্রিকিয়্যুএন্সি মিলিয়ে মাঝে মাঝে বাংলাদেশ। এই হল শ্রীকান্তদের টিভি।

    বাংলাদেশের চ্যানেলটা ওর পছন্দের ছিল কারণ ওখানে রবিবার রবিবার করে সকালে 'স্পাইডারম্যান' সম্প্রচারিত হত। প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় বাংলা ও রবিবার সন্ধ্যায় হিন্দি সিনেমা দেখানো হত!—ছোট্ট করে বা অল্প করে নয় পুরো অস্ত একটা সিনেমা দেখা যেত। জ্ঞানদশায় শ্রীকান্ত অন্ততঃ তাই দেখেছে—বাবার মুখে শুনেছে তারও আগের একটা সিনেমা রোজ আধাঘন্টা করে ভেঙে ভেঙে দেখানো হত, তখনও হামলোগ শুরু হয় নি বা তাদের ঘরে টিভি আসেনি। সারা পাড়ার মধ্যে তিনটে মাত্র ঘরে টিভি ছিল এক, কেদারদাদের বাড়ি, দুই শ্রীকান্তদের ঘরে আর তিন ম্যানেজারদের বাড়ি। ম্যানেজারদের বাড়ি বলা হত কারণ তাদের বাড়ির বেশিরভাগ লোকই জুটমিলের ম্যানেজার ছিলেন। রবিবার আর শনিবার সারা সন্ধ্যা শ্রীকান্তদের ঘর ভরা থাকত কাকা-কাকিমা আর তাদের ছেলেপুলেদের ভিড়ে! মাঝে মাঝে পাশের বাড়ির কাকু-কাকিমারাও আসতেন। আর রবিবার তো আরো বেশি চাপ থাকত কারণ দুপুরে সাতদেশের সিনেমা হত—সেখানে বিভিন্ন রাজ্যের ভিন্ন ভিন্ন ভাষার সিনেমা দেখানো হত কখনও ওড়িয়া, কখনও তামিল, কখনও তেলেগু, কখনও বাংলা, কখনও অসমিয়া—তবে বেশি ভাগ সিনেমাই জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত বা সমান্তরাল হত, তাই রবিবার দুপুর থেকেই ভিড় জমানো শুরু হত। তাই রবিবার শ্রীকান্তদের দুপুরের খাবার খেতে খুব অসুবিধা হত, তাতে তার আত্মকেন্দ্রিক বাবা খুব বিরক্তিবোধ করতেন—আবার ভদ্রতার কারণে কিছু বলতে পারতেনও না! তবে শ্রীকান্তর ব্যাপারটা তেমন খারাপ লাগত না—বিশেষ করে রবিবারের সন্ধ্যাটা, সবাই মিলে মাঝে মাঝে মুড়ি-চপ খেত, বিরতির সময় সংবাদপাঠ যখন হত তখন কিঞ্চিৎ আড্ডাও হত। তবে এসবই বহু আগের কথা। শ্রীকান্ত তখন ক্লাস টু কি থ্রিতে পড়ত। এখন তো ঘরে ঘরে টিভি, রঙিন না হলেও অন্ততঃ সাদা-কালো প্রোটেবেল টিভি একটা করে সবার ঘরে আছেই—এখন তেমন আর আগের মত আবহাওয়া খারাপ হলে বা ঝড় হলে ছাদে গিয়ে অ্যান্টেনার সাথে কুস্তি করতে হয় না কোন টিভির ক্ষেত্রে, এখন তো প্রোটেবেল টিভিগুলোর মাথার ওপরই ছাতার মূলদন্ডের মত অ্যান্টেনা থাকে। তবে শ্রীকান্তদের টিভিটা এখন পুরোটা না'হলেও বেশি ভাগটাই খারাপ হয়ে গেছে।

    একেই বলে বোধহয় পরিস্থিতি! একটা সময় টিভি দেখতে যে শ্রীকান্তদের ঘর লোকজনে পরিপূর্ণ থাকত আজ কেউই আসে না তেমন! বেসরকারি চ্যানেল মার্কেটে এলেও কেবিল চ্যানেলের রমরমা তখনও তেমন ভাবে শুরু হয় নি।

    আগে চিত্রহার হত প্রতি বুধবার এখনও হয় কিন্তু শ্রীকান্ত সঠিক ভাবে জানে না, কারণ ওদের টিভিটা চললেও তাতে ছবি আসে না—এখন যা অবস্থা ওটিকে টিভি না বলে রেডিও বলাই শ্রেয়। তাই শ্রীকান্ত আর টিভি দেখেও না আর শোনেও না। তবু সংসারের বয়স্ক সদস্যর মত পরে আছে এক কোনে বহু দিনের সঙ্গী সে। আগে শ্রীকান্তর বাবা টিভি চালু করার আগে ও টিভি বন্ধ করে ছোট রুমাল বা তোয়ালে দিয়ে ভালো করে মুছে মুছে পরিস্কার করে তারপর সাটার বা টিভির দরজা বন্ধ করতেন—মঞ্চের দু'দিকে পর্দায় যেমন সরানো যায় তেমনি টিভির সাটারটা খোলা ও বন্ধ করা যেত। এখন আর সে অত যত্ন পায় না। শ্রীকান্ত টিভির থেকে দুটো গান খুব মুখস্থ ছিল—এক, 'একঠো চিরিয়া, অর একঠো চিরিয়া।' আর দুই, 'মিলে সুর মেরা তুমহারা..'
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন