এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  ছেঁড়াকাঁথা

  •  ছেঁয়াবাজীর ছলনা  - ২২

    লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ছেঁড়াকাঁথা | ২৯ জুলাই ২০২৪ | ৫৩৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • অষ্টম শ্রেণীর ক্লাস শুরু হতে হতেই দুজন নতুন বন্ধু পেয়ে গেলাম, আমাদের পাড়ায় দুজন নতুন মেয়ে এসে  গতবছর থেকে ভর্তি হয়েছে আমাদের স্কুলে। গায়ত্রী আর মনস্বিতা, গাতু আর মনাই। গাতু এসেছে বাংলাদেশ থেকে, ওর বাবা মা এখনও ওখানেই থাকেন, মেয়ে বড় হয়েছে, সেখানে দূরের স্কুলে গিয়ে পড়া অসুবিধের তাই ও এখানে মামাবাড়ীতে থেকে পড়বে। রাণুকাকু জয়ীকাকীমা ওর মামা-মামী। জয়ীকাকীমাকে পাড়ার বয়স্ক লোকজন বেশ অপছন্দ করেন ‘ঝি চাকরদের মাথায় তোলার জন্য’। মুন্নি, বেবী আর ওদের মা পাড়ার বারোটা পরিবারের ঘরমোছা, বাসন মাজা, কাপড়কাচা সামলায়। সেই বেবী মুন্নিকে জয়ীকাকীমা লেখাপড়া শেখায়, সেলাই শেখায়, টেডি বেয়ার বানানো শেখায় আর এই শেখানোর সময় বেবী মুন্নি কাকীমার খাটেই কাকীমার দুপাশে বসে। কাকীমার ছেলে গুড্ডুর সাথে তিনজনে একসাথে খেলে, এটা আবার পর্দাতোলা জানলা দিয়ে দিব্বি দেখাও যায়। সেইসব দেখে পল্টুকাকুর মা, শম্ভুর জ্যেঠি, পিঙ্কির ঠাকুমা এসে দিদার ঘরে বসে গজগজ করে। দিদা, বড়মাইমা, মা’ও যোগ দেয় তাতে। তো, গাতু এসে অষ্টম শ্রেণীতেই ভর্তি হয়েছিল আগের বছর, এইবারে নাইনে উঠে গেছে। সকালে তৈরী হয়ে আমি গাতুদের বারান্দার সামনে গিয়ে ডাক দিই, বেশীরভাগ দিন গাতু তৈরী হয়ে বসে থাকে, মনাই এলে আমরা রওনা দিই।

    মনাই এসেছে আসাম থেকে, ক্লাস সেভেন অবধি সেখানেই পড়াশুনো, তারপর ওর পিসেমশাই চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর ওরা এখানে চলে এসেছে। মনাই নাইনে উঠতে পারে নি, আমাদের সাথে ক্লাস এইটেই পড়ে। মনাই ভারী লম্বা, আমাদের থেকে অনেকটা উঁচু মাথায়, রোগা পাতলা, মুখটা খুব মিষ্টি। গাতুও বেশ ভাল দেখতে, তবে একটু গোলগালমত আর অত লম্বাও নয়। বাইরে থেকে এসেছে বলেই হয়ত এরা দুজনেই খুব পরিপাটী হয়ে স্কুলে যায়। বালিকা শিক্ষা সদনে তো সাধারণত অত  পরিপাটী হয়ে কেউ যায় না। আমরা তিনজনে হেঁটে হেঁটে মেটেপুকুর অবধি পৌঁছলে অনেকদিনই মিতালী চৈতালী আর শীলা বল, ছবি বল আমাদের সঙ্গে চলে। মস্ত একটা দল হয়ে আমরা গল্প করতে করতে, রাস্তায় পড়ে থাকা  খালি ডাবের খোলা পা দিয়ে ঠেলতে ঠেলতে ভাগাড় পেরিয়ে স্কুলে যাই। স্কুলের বাড়ী তৈরী হয় নি, হওয়ার কোনও উদ্যোগও কোথাও দেখি বা শুনি না। রীমার দিদি মিতাদি গতবারে মাধ্যমিক পাশ করেছে প্রথম ডিভিশানে। ১১ বছর বাদে এই স্কুল থেকে একজন প্রথম ডিভিশান পেল, দিদিমণিরা রীমাকে রোজ পইপই করে বলেন ও যেন দিদির মত হয়। তবে এইবছর আরও অনেক ভাল রেজাল্ট হওয়ার সম্ভাবনা, তিনজন দিদিমণির মেয়ে এবারে পরীক্ষা দেবে।

    সুচন্দ্রাদি, হাইস্কুলের জীবনবিজ্ঞানের পদ্মাদিদিমণির মেয়ে, শ্রীপর্ণাদি, হাইস্কুলের প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের শৈলদিদিমণির মেয়ে আর রুণাদি, মেয়েদের প্রাইমারি সেকশানের অনুরেখাদির মেয়ে। সেই পঞ্চম শ্রেণী থেকে এরা যথাক্রমে প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়ে চলেছে।   মা’র কাছে শুনি সুচন্দ্রাদি নাকি খুবই ভাল পড়াশোনায়, হাইস্কুলের দিদিমণিরা নাকি তটস্থ হয়ে থাকেন ওর প্রশ্নের ভয়ে। খুব অবাক লাগে, দিদিমণিরা তো প্রশ্ন শুনলে হয় উত্তর বুঝিয়ে দেন্, নয়ত রেগে যান। তাহলে? চৈতালী বলে পদ্মাদিদিমণিকে নাকি সবাই একটু ভয় পায়, অথচ উনি কাউকে মারেন নি, কোনওদিন, বকেনও না। এমনকি অমন যে মণীষাদি তিনিও নাকি পদ্মাদিকে সমীহ করে চলেন। আরও জানতে পারি পদ্মাদি নাকি বটানিতে  প্রথম শ্রেণীতে প্রথম আর তাইজন্য গোপালবাবু ওঁকে খুব  ভালবাসেন, এখনকার সেক্রেটারি দর্শনবাবুও। এতদিন মা বকে মেরেও যেটা বোঝাতে পারে নি, সেইটা এবারে ঝট করে বুঝে যাই, পরীক্ষার ভালফলই হচ্ছে সেই যাদুদন্ড যা সব্বাইকে চুপ করিয়ে দেয়। সমীহ আদায় করে নেয়।  শ্রীপর্ণাদি খুব ভাল আবৃত্তি করে,খেলাধুলোতেও দুই তিনটে প্রাইজ পায় প্রতিবছর।আগের বছরের বার্ষিক পুরস্কারবিতরণী অনুষ্ঠানে শ্রীপর্ণাদির ‘আফ্রিকা’ আবৃত্তি শুনে বই থেকে খুঁজে মুখস্ত করে ফেলেছি কবিতাটা। ছাদে গিয়ে চুপি চুপি শ্রীপর্ণাদির মতে করে আবৃত্তি করি।   

    এদিকে পাড়ার রমণীদাদু মারা গেছেন, রমণীদিদা সকালবেলা ওদের জানলা দিয়ে রুটি ছিঁড়ে ছিঁড়ে ফেলেন আর পাড়ার কুকুরগুলো মারামারি করে খায়। মা আমাদের দুজনকে পই পই করে শেখায় দাদু যেন রমণীদাদুর খবর জানতে না পারে। স্কুলে যাওয়ার আগে মনাই  রমণীদাদুদের বাড়ীর উল্টোদিকে প্রবোধদাদুদের বাড়ীর গা লাগোয়া টাইমকল থেকে বালতি করে জল ভরে নিয়ে যায় রূপুর সাথে। রূপু নাকি ওর 'বেস্ট ফ্রেন্ড'।  স্কুলে যাওয়ার সময় মনাই গল্প করে ডানকুনিতে ওর ‘বেস্ট ফ্রেন্ড' ছিল পাপু, তার সাথেই সব গল্প করত ও। আসামে ওর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল নীতি, ওরা একসাথে স্কুলে যেত, আসত, অনেক অনেক গল্প করত। আমাকে জিগ্যেস করে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে? আমি উল্টে জিগ্যেস করি ইংরিজি করে বলিস কেন রে? তাতে লজ্জা পেয়ে চুপ করে যায় মনাই। ওর গল্প শুনতে শুনতে মনে হয় ইশ একজন প্রিয়বন্ধু না থাকলে তো জীবনই বৃথা। এদিকে আমার তো একজনও প্রিয়বন্ধু নেই, খুব ইচ্ছে করে ওকে আমার প্রিয়বন্ধু হতে বলতে। কিন্তু দূর তাই কি বলা যায়? ভারী লজ্জা করবে তো। গাতু খালি মুচকি মুচকি হাসে, কিছু বলে না, আমি জানি গাতুর প্রিয়বন্ধু হল টোটোন। টোটোন অবশ্য হিন্দু গার্লসে পড়ে, আগে ছোটদির সাথে স্কুলে যেত। বুড়ীর্-মা মাসি নিয়ে যেত ওদের। এখন একা একা যায়।  

    রূপুরা চারবোন, বীরেন শা'য়ের বাড়ী ভাড়া থাকে। বীরেন শা'য়ের বাড়ীটা বেশ মজার, একটা উঠোনমত জায়গার চারদিকে অনেকগুলো ঘর, সবগুলো ঘরে আলাদা আলাদা পরিবার। দোতলায় বীরেন শা'য়েরা থাকে। বীরেন শা'কে পাড়ার ছোট ব্ড়্ সবাই পুরো নামধরেই বলে, কাউকে কক্ষণো জেঠু, কাকু, দাদা বলতে শুনি নি।  বীরেন শা নাকি মাতাল, রোজ সন্ধ্যেবেলা কোথায় যেন মদ খেতে যায়।  আমরা সবাই জানি মদ খাওয়া মানুষরা খুব খারাপ লোক হয়। বীরেন শা'কে দেখতেও বেশ মজাদার; মাঝারি উচ্চতার লোকটির আগে আগে চলে তাঁর মস্ত ভুঁড়ি। আর দেখেই বোঝা যায় সে ভুঁড়ি একদম শক্ত সলিড ভুঁড়ি, খোঁচা দিলেও এতটুকু টসকাবে না। দুপুর বারোটা নাগাদ বীরেন শা একটা গামছা পরে আরেকটা গামছা কাঁধে নিয়ে হিউম পাইপের পুকুরে চান করতে যান, আধঘন্টা বাদে একটা ভেজা গামছা পরনে ও অপরটা মাথায় বেঁধে ফিরে আসেন। ওঁদের বাড়ীতে কোনওরকম জলের ব্যবস্থা নেই, ফলে বাড়ীওয়ালা ও ভাড়াটেদের সকলেই রাস্তার কলে স্নান সারেন ও পানীয় জল ভরে নিয়ে যান। পাশের বাড়ীর মুখার্জীদাদুর ভাষায় এই বীরেন শায়ের গুষ্ঠির লাইগ্যা কুনও কল থেইক্যা একফোঁটা জল পাওনের কুনও আশা নাই, হ্যারায় কলডিরে অ্যাক্কেরে জুইড়্যা থাহে।

    মুখার্জীদাদুও সাংঘাতিক মোটা আর তেমনি মোটা মুখার্জীদিদা। ওঁরা দুজনে একসাথে কোথাও গেলে রিকশায় ওঠার সময় ভারী মজা হয়, দুজনে কিছুতেই একসঙ্গে রিকশার খোলে আঁটে না, একজন বসে গেলে অন্যজন আর বসতে পারে না। এদিকে ওঁরা দুটো আলাদা রিকশায়ও যাবেন না, দুজনে মিলে বারবার এগিয়ে পিছিয়ে অনেক কসরৎ করে শেষে কোনমতে ফিট করে গেলেই কমলকাকু রিকশাওয়ালাকে তাগাদা দেয় এগোনর জন্য। কমলকাকু, শ্যামলকাকুরা পাড়ার সমস্ত ব্যপারে সবচেয়ে আগে থাকে। সেই গতবছর যখন মিঠু বুম্বার জেঠিমা মাঝে মাঝেই চীৎকার করে কাঁদত আর ওদের বাড়ী থেকে ভীষণ জোরে মারধোরের আওয়াজ ভেসে আসত; অমনি সবাই বাড়ীর সামনে বেরিয়ে উঁকিঝুঁকি মারত আর চিন্তিত মুখে আলাপ অলোচনা করত, তখন একদিন কমলকাকু, শ্যামলকাকু, সুকুমারদারা গিয়ে ওদের গেট খুলে জোর করে ভেতরে ঢুকে পড়েছিল। ওরা দেখে বুম্বার জ্যাঠা বুম্বার জেঠিকে একটা বেল্ট দিয়ে সমানে মারছে। এদিকে বুম্বার মা রান্নাঘরে রান্না করছে, মিঠু পড়ার বই নিয়ে বসে আছে। কমলকাকুরা তারপর বুম্বার জেঠিকে ছাড়িয়ে দেয় ওর জ্যাঠার হাত থেকে, ওর জ্যাঠা চীৎকার করে গালি দিতেই কমলকাকু আরো জোরে চীৎকার করে গালি দেয় আর শ্যামলকাকু চুপচাপ গিয়ে ওর জ্যাঠার হাতটা মুচড়ে ধরে। আর কিছু বলতে হয় নি, ওর জ্যাঠা ঘরে ঢুকে যেতে যেতে জেঠিকে বাড়ী ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বলে।

    কমলকাকু গর্জন করে বলে উনি কোত্থাও যাবেন না, আর একটাও এদিক ওদিক হলে রেললাইনের পাশের পুকুরে আপনাকে পাওয়া যাবে এই বলে গেলাম। এরপরে পাড়ায় মিটিং হয় সব বড়দের নিয়ে। জ্ঞানদাদু, তারাপদজেঠু, বড়মামা এরা খুব আপত্তি করছিল এরকম ‘পরের বাড়ীর ঝামেলা' ঘাড়ে নেবার জন্য, কিন্তু কাজলকাকু, বাবলাকাকু, অরূপদা, সুকুমারদারা কমলকাকুদের সাথে ঘুরে ঘুরে সবাইকে বুঝিয়ে জড়ো করে। মিঠুর জেঠির নাকি বাপের বাড়ীতে তেমন কেউ নেই, অথচ মিঠুর জ্যাঠা, বাবারা খালি ওনাকে বাড়ী থেকে বের হয়ে যেতে বলে আর উনি যান না বলে মারে। পাড়ায় সবাই মিলে ব্যবস্থা করে দেয় মিঠুর জেঠি আলাদা রান্না করবে, আলাদা একটা অংশে থাকবে, ওঁর খরচ ওর জ্যাঠাই দেবেন। সেইমত ওদের বাড়ীর মাঝখান দিয়ে পাঁচিল ওঠে, বড় গেটটা আলাদা আলাদা ছোট দুটো গেট হয়ে যায়। ওর জ্যাঠা মিঠুদের ঘরেই খেতেন, তবে ওদের বাড়ী থেকে আর কোনোদিন কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায় নি। বেশ কিছু বছর পরে একদিন ওর জ্যাঠা আবার একজনকে বিয়ে করে আনলেন আর পুরানো জেঠি কোথায় যেন চলে গেলেন। আর আসেন নি কোনোদিন। শেষপর্যন্ত একলা নিঃসহায় মানুষটি কোথাও একটা যাওয়ার জায়গা করতে পেরেছিলেন, নাকি এমনিই নিরুদ্দেশের পথে ভেসে গেছিলেন, কে জানে! 

    আমাদের বাড়ীর বাঁ দিকে ইঁটবাঁধানো সরু গলি আর গলির পাশেই  মস্ত মাঠ, মস্ত মানে মস্ত লম্বা, চওড়া তেমন নয়। মাঠের পরেই বড়সড় কাঁচা নর্দমা আর তারপরেই শুরু হয়ে গেছে কালীতলা কলোনী। বাংলাদেশ থেকে আসা নিম্নবিত্ত ও বিত্তহীন উদ্বাস্তুদের ডেরা। আমি যখন থেকে দেখছি তখন তো কাঁচা পাকা ছোট বড় সব বাড়ী। কিন্তু মা বলে মা’রা যখন প্রথম এখানে বাড়ী করে আসে ১৯৫৬ সালে, তখন নাকি সব ‘ঢোল' ছিল। ৫০ ফুট লম্বা লম্বা টানা হলঘরের মত ছিল সারিসারি মাথায় অর্ধবৃত্তাকৃতি ছাউনি, ঢোলের আকৃতির একটানা ঘর। তাতেই প্ল্যাস্টিক শিট বা কাপড় টাঙিয়ে আলাদা আলাদা পরিবারের বসবাসের ব্যবস্থা। কোনো এক পরিত্যক্ত মিলিটারি ক্যাম্প উদ্বাস্তুরা এসে দখল করে থাকতে শুরু করে। ‘কালীতলা কলোনী' নামটা তাদেরই দেওয়া, তবে লোকের মুখে মুখে ‘ক্যাম্প' শব্দই অধিক পরিচিত। ১৯৭৫-৭৬'এ ঢোলের উপস্থিতি প্রায় নেই বললেই চলে, শুধু অরবিন্দ বিদ্যাপীঠের কাছে একটা দুটো তখনও আছে। বাদবাকী যে যেমন পেরেছে, যতটা পেরেছে জমি নিয়ে বাগানসহ বাড়ী তুলে নিয়েছে। জমিজায়গার বিলিবন্টন নিয়ে কোনও ঝগড়া মারপিটের কথা কেউ শোনে নি। ছিন্নমূল মানুষগুলি নিজেরাই তৈরী করেছিলেন ‘উদ্বাস্তু সহায়ক সমিতি'। তাদেরই তত্ত্বাবধানে নাকি সমস্ত বিলিবন্টন নির্বিঘ্নে হয়ে গেছে। কিন্তু জমি বাড়ীর মালিকানা তখনও সরকারের, কোনও ব্যক্তি নিজের নামে তা নথিভুক্ত করতে পারেন না।

    আমাদের পাড়ায় এই ক্যাম্প সম্পর্কে একধরণের ভীতি ও তাচ্ছিল্য ছিল। ক্লাস ফোর পর্যন্ত যখন আমি বিকেলবেলা মাঠে খেলতে যেতাম, তখনও ক্যাম্পের কোনও বাড়ীর মেয়েরা খেলতে এলে বাড়ী থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে যেতে হত। বিভিন্ন সময় পাড়ায় বিভিন্ন আলোচনায় ‘ক্যাম্পের ছ্যারা তো অমনিই হইব' বা ‘ক্যাম্পের ছেমড়িগুলান বড় কাইজ্যা করে' জাতীয় বাক্য বড় অবহেলায় উচ্চারিত হত। ক্যাম্পের ভেতরে সরু সরু মাটির রাস্তা আর অল্প দূরে দূরেই বড়সড় গভীর পুকুর, অজস্র গাছপালায় ঘেরা বাড়ীগুলি --- যেন কোন্নগরের মধ্যে আরেক অজানা গ্রাম, বাইরের কোন্নগরের শহরতলীপনা যাকে স্পর্শও করে না। ক্যাম্পের ভেতর দিয়ে দিয়ে শর্টকাটে চটকল কিম্বা বিশালাক্ষীতলা পর্যন্ত চলে যাওয়া যেত, তবে আমাদের যাওয়া মানা ছিল। আমাদের পাশের মাঠের পরে ক্যাম্পের শুরুতে প্রথম বাড়ীটাই ছিল গাঙ্গুলীবাড়ী, মালুদের বাড়ী। মালুরা চারবোন যেমনি ফর্সা তেমনি সুন্দরী আর তেমনি বিচ্ছিরি গানের গলা। রোজ সন্ধ্যে হলেই মালু আর টুলু বেসুরে গলা সাধতে শুরু করত। আশ্চর্য্য এই যে টানা আট বছর ওদের একইরকম বেসুরে সা-রে-গা-মা সাধতে আর ‘এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিল দ্বার' গাইতে শুনেছি, একদিনও একটুও অন্যরকম হল না। ওরা দুইবোন একসাথেই গলা সাধত। বুড়ি-বসন্তি খেলায় মালুকে হারানো এক্কেবারে অসম্ভব, যেমন জোরে ছুটতে পারে, তেমনি প্রচন্ড দম।  

    দাদু আসলে রাস্তার কোণায় বাড়ী বানিয়েছিল, তাই আমাদের বাড়ীর সামনেও রাস্তা, তবে এটা পিচের, আর তারপরেই কাজলকাকু বাবলাকাকুদের বাড়ী। ওদের বাবা জ্ঞানদাদু আর জ্ঞানদিদা বছরের বেশীরভাগ সময় শান্তিনিকেতনে থাকেন, মাঝেমধ্যে এখানে আসেন। কাজলকাকু বিয়ের পর এসে উঠোনের জঙ্গল পরিস্কার করে এই বাড়ীটায় থাকতে শুরু করে। জ্ঞানদাদু এসে প্রায় সব বাড়ীতেই ঘুরে ঘুরে খুব আক্ষেপ করে বলে গেছিলেন কাজলকাকু নাকি ‘পার্টির মেয়ে' বিয়ে করেছে, সে একে পার্টিকরা মেয়ে তায় নাকি ব্রাহ্মণ! এই পাপ তাঁরা কী করে খন্ডাবেন ভেবে পান না, পার্টিই নাকি বাবলাকাকু, কাজলকাকুর মাথা খেয়েছে। কাজলকাকু অনেকদিন আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিলেন, এখন ডানকুনির স্কুলে চাকরি পেয়েছেন। রুমাকাকীমা এতদিন চাকরি করতেন বিয়ের পর ছেড়ে দিয়েছেন। সারা দুপুর ক্যাম্পের বাড়ী বাড়ী ঘুরে সবার খবর নেন, কেউ অসুস্থ পড়ে থাকলে যতটা পারেন কাজকর্ম করে দিয়ে আসেন। এছাড়াও এর পোস্টাপিসের ফর্ম, তার ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা এইসব করে বেড়ান। রুমাকাকীমাদের পরের বাড়ীটাই গাতুদের। গাতুর মামী, জয়ীকাকীমার সাথে রুমাকাকীমার খুব ভাব। এদিকে আমাদের কোনাকুনি  রুমাকাকীমাদের পাশেও সরু ইঁটের গলির পরেই একটা ছোট্ট মাঠ আর মাঠের পাশেই বাবুদের বাড়ী।

    ঐ মাঠটাও নাকি বাবুদেরই জমি। বাবুর বাবা সুশীল গুহ  তাঁর নিঃসন্তান বিধবা পিসীর জমিবাড়ী সব পেয়েছেন, দিদারা বলে জোর করে সই করিয়ে নিয়েছেন। বাবুর সম্পর্কে এই  পিসীদিদাকে আমরা পাড়াশুদ্ধ সব ছোটরা কেন যেন ‘সুনীতিপিসী' বলে ডাকতাম, আর মা মামী, কাকীরা সবাই 'সুনীতিদি' বলে ডাকত। কালচে মলিন  থানপরা সুনীতিপিসী যতদিন হাঁটতে পারতেন হেঁটে হেঁটে রমণীদিদার বাড়ী যেতেন বিকেলবেলা আবার সন্ধ্যের আগে আগেই ফিরে আসতেন। শীতের রোদে ওদের ন্যাড়াছাদে বসে রোদ পোয়াতেন পিঠময় কালোসাদা চুল ছড়িয়ে। নিয়মিত খাওয়াটুকু জুটত, তবে অসুখবিসুখে চিকিৎসার বালাই ছিল না।  বাবুর মা লম্বাচওড়া চেহারার গীতাজেঠি, খুব একটা সংসারী মানুষ ছিলেন না। জয়ীকাকীমা কিম্বা রুমাকাকীমার বারান্দায় গিয়ে গল্প করতেন বেশীরভাগ সময় আর সুশীল গুহর নেশা ছিল তাসখেলা। অফিস থেকে বাড়ী ফেরার সময় মাঠ থেকেই 'ও-ও কাজো-ও-ও-ল' বলে চীৎকার করতে করতে ঢুকতেন, যাতে ওঁর হাতমুখ ধোওয়া হতে হতেই কাজলকাকু তাসখেলার জন্য পৌঁছে যান। সুনীতিপিসী পড়ে গিয়ে  একদিক অবশ হয়ে যাওয়ার পরেও ইনি ডাক্তার ডাকতে বা চিকিৎসা করাতে রাজী হন নি। একলা নিঃসহায় এই মানুষটি কিছুদিন গুয়েমুতে এক হয়ে পড়ে থেকে অবশেষে মরে গিয়ে রেহাই পান।

    অষ্টমশ্রেণীতে সবচেয়ে বড় সমস্যা শুরু হল অঙ্ক নিয়ে। সপ্তম পর্যন্ত পাটীগণিত নিজে নিজেই পারতাম। পঞ্চম আর ষষ্ঠশ্রেণীতে দাদু যা শিখিয়েছিল তাতেই হয়ে যেত। খুব সামান্য কিছু কখনও হয়ত দাদুকে জিগ্যেস করতাম, সেও নিজে তো জানিই একবার দাদুকে বলে নেওয়া। বীজগণিত শুরু হয়েছিল সপ্তম শ্রেণীতে, সে শুরুর দিকে অসুবিধে হলেও মোটামুটি পেরে গেছি। দাদু বীজগণিত দেখাতে চাইত না, আর হাফ ইয়ার্লির আগেই ছোটমামার বিয়ের দিনে দাদু সেই যে পড়ে গেল, আর তো কোন অঙ্কই দেখাতে পারল না। কিন্তু এখন তো বীজগণিত বেশ কঠিন লাগে, এমনকি পাটীগণিতেও মাঝে মাঝেই আটকে যাই। অঞ্জলীদি কতগুলো বাড়ীর কাজ দিয়ে রাখেন, না করে নিয়ে গেলে খুব বকেন তো বটেই, মা'কে বলেও দেন। মা ভাবে আমি মন দিয়ে করার চেষ্টা করি না, কখনও ঠাঁই ঠাঁই করে দুটো থাপ্পড় দেয়, কখনও আমার দ্বারা যে কিস্যু হবে না সেটুকু বলে নিজের কপালের দোষ দেয়। একদিন ভয়ে ভয়ে বড়মামার কাছে নিয়ে গেলাম অঙ্কের বই আর খাতা। বড়মামা খানিকক্ষণ দেখে করেও দিল অঙ্কটা, খানিকটা বুঝিয়েও দিল। তাতে বাকী অধ্যায়টা নিজে নিজেই করে ফেলতে পারলাম। সেই থেকে মাঝে মাঝেই অঙ্ক নিয়ে যেতে লাগলাম বড়মামার কাছে।  

    বড়মামাকে এমনিতে আমার একটু ভয় ভয় লাগে, খুব একটা বেশী কথা বলে না। কোনোকারণে বড়মামার ভুরুদুটো প্রায় সবসময়ই অল্প কুঁচকে থাকে। বড়্মামা ওঠে খুব ভোরে, প্রায় দিদার সঙ্গে সঙ্গেই। সাড়ে ছটা থেকে সাতটার মধ্যে বেরিয়ে যায়, হেঁটে হেঁটে আটটার আগেই পৌঁছে যায় রিষড়ার অ্যালকালি। অ্যালকালির ভোঁ আমাদের বাড়ী থেকে শোনা যায় না, বেশ অনেকটা দূর। বেলা দশটা নাগাদ টিফিনওলা, একটা রোগা ছেলে সাইকেলের দুইদিকে অনেকগুলো টিফিন ক্যারিয়ার ঝুলিয়ে এসে দাঁড়ায়। বড়মাইমা কিম্বা দিদা গিয়ে একটা ভাত, ডাল, মাছের ঝোল ভরা হিন্ডালিয়ামের তিনথাক টিফিন ক্যারিয়ার দেয় তাকে, সে শোঁও করে সাইকেল বেঁকিয়ে চলে যায়। একটা দেড়টা নাগাদ এসে খালি টিফিনকারিটা ফেরত দিয়ে যায়। কোনও একটা বাড়ীর  টিফিনকারি থাকে ওর কাছে, যার মাঝখানের আর ওপরের বাটিদুটো টোল খাওয়া, ওপরের বাটিটার টোলের পাশে কালো কালো দানা দানা মত, দেখে কেমন বিশ্রী লাগে। আরেকটা টিফিনকারি আছে তামার তৈরী বোধহয়, টাট, কোশাকুশির মত ঝলমল করে। বাটিগুলো একটু ছোট, ফলে পুরো টিফিনকারিটাই অন্যগুলোর থেকে কম লম্বা। আমার খুব পছন্দ ওটা, যতক্ষণ টিফিনওলা অপেক্ষা করে, আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখি।

    খুব লোভ হয় অমনি একটা টিফিনকারির, কিন্তু আমার স্কুলে তো অতবড় টিফিনকারির কোনও দরকারই নেই। মনে মনে ঠিক করে ফেলি বড় হয়ে যখন চাকরি করব, তখন ঠিক অমনি তামার তৈরী একটা তিনথাক টিফিনকারি আমি কিনব। আরেকটা টিফিনকারি আছে তুঁতে রঙের, এটাও খুব ঝকঝকে, ভাল করে খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যায় এটা হিন্ডালিয়ামের ওপরে তুঁতে রঙ করা, ঢাকনির জোড়ার কাছে রঙ অল্প অল্প ফেটে সাদাটে হিন্ডালিয়াম বেরিয়ে আছে। টিফিনওলার চুল কপালের ওপরে বারান্দার মত ঝুলে থাকে আর দুপাশে কানঢাকা, দিদা খুব বিরক্ত হয়ে বলে ‘লক্কাপায়রার লাহান ছ্যামড়া'। এদিকে বড়মামার মাথায় মস্ত চকচকে ফরসা টাক, পেছনে একদম ঘাড়ের কাছে দুই ইঞ্চি চওড়া একটা বর্ডারের মত কিছু চুল এইকান থেকে ঐকান অবধি। বড়মামার চকচকে টাক আর টিফিনওলার লটপটে চুল পাশাপাশি ভেবেই আমার খিলখিলিয়ে হাসি পায়। অন্য মামাদের তুলনায় বড়মামা বেশ বেঁটেও, বড়মামীমা বলে ‘হাইডে বেঁটে’। বিকেলবেলা পাঁচটা নাগাদ ঘেমেটেমে একশা হয়ে আবার পুরো রাস্তাটা হেঁটে হেঁটে ফিরে আসে বড়মামা। ডানদিকের পোস্তায় বসে জুতো খোলে, তারপর জুতোটা দুবার ঠুকে ঠুকে তলা থেকে সব ধুলোকাদা ঝেড়ে ভুরু কুঁচকে বিরক্তমুখে ভেতরে ঢুকে সোজা দোতলায় পুবের ঘরে চলে যায়।  

    মাসে একদিন ছুটির পর বাড়ী না এসে সোজা বড়বাজার চলে যায়। সারামাসের ডাল আর মশলা বড়বাজার থেকে আনে। বড়বাজারে নাকি দাম অনেক কম আর জিনিষ বেশী ভাল। বাংলাদেশ থেকে সবাই চলে আসার পর একটু থিতু হয়ে বসতেই খরচ কমানোর চেষ্টায় বড়বাজারে থেকে জিনিষ আনা শুরু করেছিল বড়মামা। এখন আর চাল, আটা, ময়দা, চিড়ে, মুড়ি, বাতাসা এসব আনা হয় না, কিন্তু দিদা আর বড়মামীমার হাজার বারণ, অনুরোধেও ডাল আর মশলা আনা বাদ দেয় নি। সবচেয়ে আশ্চর্য্য হল, বড়মামা নাকি হাওড়া থেকে নেমে হেঁটেই বড়বাজার যায়, মালপত্র নিয়ে ফেরেও হেঁটে। শুধু শ্যামবাজার বা গড়িয়াহাটের মত দূরে কোথাও যেতে হলে তবেই হাওড়া থেকে বাসে ওঠে বড়মামা। বড়মাইমা বলে বড়মামা  ‘শিশুবয়স' থেকে চাকরি করছে, সেই সবাই যখন বাংলাদেশ থেকে চলে এল, তখন বড়, মেজ, সেজ তিনমামাই কলকাতায় মেসে থেকে পড়াশোনা করছিল। দাদু তো এসে তক্ষুণি কোনও কাজ পায় নি, বাঙাল বলে, উদ্বাস্তু বলে অনেক অফিসে দাদুর কথা নকল করে ভেঙচে না বলে দিত, কেউ কেউ জিগ্যেস করত দাদু কিশোরগঞ্জে কী করত। ব্যাঙ্কের ম্যানেজার শুনলে কেউ মুখ ভেটকে, কেউ বা মুচকি হেসে বলে দিত ‘হ্যাঁ হ্যাঁ আপনারা তো সবাই হয় জমিদার, নয় ম্যানেজার’। অথচ দাদুর কাছে ব্যাঙ্কের কাজের প্রশংসাপত্র ছিল। সেসব কেউ উল্টেও দেখত না।   

    তখন মুখার্জীদাদুরা বিশালাক্ষী সড়কে দাদুদের পাশের বাড়ীতে থাকত। মুখার্জীদাদু অ্যালকালিতে একটা চাকরি পায়, কেমিকেল ল্যাবে আরেকজনকে ঢোকাতেও পারবে, তবে বয়স ২০র মধ্যে হতে হবে। প্রি-ইউনিভার্সিটি পাশ করে বড়মামা তখন বিজ্ঞান নিয়ে প্রথম বর্ষ,পড়া ছেড়ে চাকরিতে ঢোকে। আরো কয়েকমাস পরে দাদুও অ্যালকালির স্টোরে চাকরি পেয়েছিল, তবে বেশীদিন করে নি, অরবিন্দ বিদ্যাপীঠে প্রধানশিক্ষকের চাকরি পেয়ে মাইনে কম দেখেও অ্যালকালি ছেড়ে দেয় দাদু। অনেক পরে সিটি কলেজে রাত্রের কোর্সে বি-কম পড়ে গ্র্যাজুয়েট হয় বড়মামা, ততদিনে মেজমামা, সেজমামা দুজনেই পাশটাশ করে গেছে। সেই বড়মামার শিশুবয়স থেকে চাকরি করা, কে জানে, সেই জন্যই হয়ত সবসময় ভুরু অল্প কুঁচকে থাকে! অফিসের পরে বড়বাজার ছাড়াও আরো একটা জায়গায় বড়মামা যেত মাঝে মাঝে, আলিপুরে এক উকীলের অফিসে। বাবা মারা যাওয়ার কিছু মাস আগে দক্ষিণ কলকাতায় একটা জমি কিনেছিল। মারা যাওয়ার পর মা’র কাছে জানতে পেরে মামারা সেটা বিক্রীর চেষ্টা করে। তখন জানা যায় নতুন রাস্তা বানাবার জন্য সরকার ঐ জমিটা নিয়ে নিয়েছে, চেষ্টা করলে কিছু ক্ষতিপুরণ পাওয়া যেতে পারে। এখন ভাবলে অবাক লাগে যে সরকারি নোটিশ বা ওরকম কিছু আমাদের ভবানীপুরের বাড়িতে আসেই নি।

    তা তখন বড়মামা খুঁজেপেতে বাবার অফিসের আরো দুই তিনজন, যাদের ঐ একই অঞ্চলের জমিও সরকার নিয়ে নিয়েছে, তাদের সাথে যোগাযোগ করে। সেই সুত্রেই এই উকীলবাবুর সাথে যোগাযোগ। ইনি মাঝেমধ্যে পোস্টকার্ডে মা'র নামে চিঠি পাঠান ওঁর অফিসে দেখা করতে বলে। বড়মামা তখন যায়। উকীলবাবুর বলে দেওয়া বয়ানে মা দরখাস্ত লিখে চলচ্চিত্রমের পাশের টাইপবাবুর কাছ থেকে টাইপ করিয়ে আনে,  আরো কিসব যেন  কাগজপত্র হাতে লিখে  কপি করে নেয়, তারপর কপিগুলো হাইস্কুলের বড়দি প্রমীলাদিকে দিয়ে অ্যাটেস্ট করিয়ে আনে। আমাদের পাড়ার গেজেটেড অফিসার ছিলেন ননীজেঠু। রিটায়ার করার আগে ননীজেঠুকে দিয়েই করানো যেত, দূরে যেতে হত না। এখন অ্যাটেস্ট করানোর জন্য একদিন দেরী হয়। তারপর বড়মামা আবার যায় ঐ দরখাস্ত আর অ্যাটেস্টেড কপি নিয়ে। কখনও কখনও আরো একবার যেতে হয় আরো কোনও কাগজের কপি নিয়ে বা দরখাস্ত একটু পাল্টে নিয়ে। মোটামুটি চিঠি আসার এক সপ্তাহের মধ্যে দুই তিনবার যাওয়া হয়। আলিপুর গেলে ফিরতে অনেক রাত হয়, সাড়ে ন'টা দশটা বেজে যায়। বড়মামা বাইরে কোথাও কিচ্ছু খায় না, বড়মাইমা বারবার বারান্দা ঘর করতে থাকে। দিদা খুব রাগ করে ‘এমন প্যাডে বাণ দিয়া উকীলের পিসনে ঘুরনের কামডা কি? আস্তে ধীরে যা হইব, হইব।’

    মা’ও বারবার জানলা দিয়ে দেখে রাস্তার দিকে। আমাদের ঘর থেকে সামনের গলিটা বেশ কিছুদূর সেইই শুভ্রাদের বাড়ী অবধি দেখা যায়। আমাদের ঘরের ওপরের ঘরটাই বড়মামাদের পুবের ঘর। দোতলার জানলা দিয়ে আরেকটু দূর পর্যন্ত সেই বুড়ো টোটোনদের বাড়ী ছাড়িয়ে দেখা যায়। বড়মাইমা নীচে এসে ফ্রীজ থেকে শরবতের গ্লাস বের করে নিলেই বোঝা যায় বড়মামাকে আসতে দেখা গেছে। একটা লম্বা কাঁসার গ্লাসের একদম নীচের দিকে অল্প ঠান্ডা জলে চিনি গুলে রাত আটটা নাগাদ ভিজিয়ে রেখেছে  বড়মাইমা। এখন বের করে কলসীর জল ভরে গ্লাস ভর্তি করে, অল্প নুন আর একফালি পাতিলেবু চিপে মেশায়, স্টীলের চামচ দিয়ে নাড়ে ঠিঠিনিন ঠিঠিনিন করে। তারপর দোতলায় বড়মামার ঘরে বিছানার পাশের ছোট্ট টেবিলে কাঁসার ছোট্ট গেলাস ঢাকনি ঢেকে রেখে আসে। বড়মামা কালো বা নেভি ব্লু নরুণপাড়ের ধবধবে সাদা লুঙ্গী পরে বসে হাতপাখা দিয়ে হাওয়া খেতে খেতে আস্তে আস্তে শরবত খায়। অন্ধকার ঘরে একটা জিরো পাওয়ারের সবুজ আলো জ্বলে। বড়মামাও দাদুর মত ইলেকট্রিক পাখা চালায় না খুব একটা, নাকি শীত লাগে। গরম লাগলে হাতপাখা নাড়ে, খুব গরমে হাঁসফাঁস হলে তবেই ফ্যান, তাও বেশীরভাগ সময় বড়মাইমাই চালায়| 

    মেজমাইমা কোন্নগরে এলে জিগ্যেস করে ‘হ্যাঁরে দিদি, দাদা এখনও ফ্যান চালায় না?' বড়মাইমা বিরক্তমুখে বলে ‘নাঃ| এই এক মানুষ সেই একইভাবে চলল সারাটাজীবন, না একটা রিকশা নেবে স্টেশান থেকে আসার সময়, না বাস ধরবে বড়বাজার যেতে আসতে, কারো কথাই কানে নেয় না তোর দাদা।‘ মেজমাইমা অমনি বলবে ‘একটাই তো মেয়ে, এখনও অত কিপটামির কি আছে!' বড়মাইমা বলবে ‘সেই কথা বোঝায় কে?' মা এক আধবার বলে এদেশে আসার প্রথমদিকের অসহায় অবস্থার কথা, প্রচন্ড দুশ্চিন্তা, বলে বড়মামার মনে সেই দিনগুলোর নিরাপত্তাহীনতা গেঁথে গেছে, তাই হয়ত পারে না। কোনো কোনোদিন সবাই মেনে নেয়। কোনোদিন আবার বড়মাইমা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ‘সেই শিশুবয়স থেকে চাকরি করছে... এখনও দায়িত্বের হাত থেকে মুক্তি নেই কোথায় আলিপুর কোথায় কি করে শরীরটা দিনদিন খারাপ হচ্ছে।‘ দিদাও খুব রেগে ওঠে বড়মামার বেয়াক্কেলপনায়, মা আস্তে আস্তে বলে ‘আমি কতবার বারণ করসি ঐ উকীলের পিসনে দৌড়াইতে।‘ দিদা আরো রেগে ওঠে, সমানে গজগজ করতে থাকে। যেবার উকীলবাবুর চিঠি এলে দুবার যেতে হয় সেবার দুই তিন সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়ী থমথমে হয়ে থাকে। যেবার একবার গেলেই হয়ে যায়, সেবারে খুব কিছু হয় টয় না, এমনকি মাঝেমাঝে যখন উকীলবাবু তিনশো কিম্বা সাড়ে তিনশো টাকা দেন সরকার থেকে পাওয়া গেছে বলে, সেবার সকলেই একটু খুশী খুশীই থাকে।

    গরমের ছুটি হতে তখনও দিন কুড়িমত বাকী, অঞ্জলীদি একসাথে অনেকগুলো অঙ্ক দিয়ে দিলেন হোম ওয়ার্কে, আর সেগুলো প্রায় সবকটা হয়ে গেলেও একটা পাটীগণিতের অঙ্ক আর কিছুতেই পারছি না। যা বুঝলাম তেমনভাবে করে কিছুতেই উত্তর মিলছে না। সেইভাবেই পরেরদিন ক্লাসে নিয়ে গেলাম, অঞ্জলীদি সেদিন ওটা বোর্ডে করে দিলেন না, বললেন 'আরেকবার চেষ্টা কর, না পারলে কাল বলে দেব।' আমাকে বললেন ‘তুমি তো এর চেয়ে কঠিন অঙ্ক আগে করেছ, এটা কী হল? মন কোথায় থাকে?' রীমাকে বললেন ‘কি দিদি বুঝি করে দেয় নি?' বাড়ীতে এসেও সে অঙ্ক আর কিছুতেই উত্তর মেলে না, এদিকে আগেরদিন চিঠি এসেছে, বড়মামা তাই আজ আবার যাবে আলিপুরে। তারমানে আসতে আসতে সেই রাতে খাওয়ার সময় হয়ে যাবে, তাহলে অঙ্ক দেখাব কখন? এদিকে মা’দের সময়ে  নাকি সপ্তম শ্রেণী থেকেই অঙ্ক বাদ দিয়ে দেওয়া যেত চাইলে, আর মা নাকি অঙ্ককে খুব ভয় পেত বলে ওটাই সবার আগে বাদ দিয়েছিল। মেজমামা, সেজমামা এখনও মাঝে মাঝে মা’কে ক্ষেপায় জেদ করে অত আগে অঙ্ক ছেড়ে দেওয়ার জন্য। ওদিকে আজকে সন্ধ্যে থেকেই লোডশেডিং। হ্যারিকেনের সামনে বই নিয়ে বসে থাকতে থাকতে আমি ভাবতে থাকি মা যদি অঙ্ক ছেড়ে না দিত তাহলে তো আজকে অন্তত জিগ্যেস করতে পারতাম।

    বড়মামা ফেরে সাড়ে নটা নাগাদ, আলোও আসে তক্ষুণি। একটু বাদে আমি আস্তে আস্তে গিয়ে বড়মামাকে বলি একটা অঙ্ক কাল থেকে হচ্ছে না। বড়মামা খেঁকিয়ে ওঠে ‘কাল আনিস নি কেন?' নাঃ হল না অঙ্কটা। আমি দরজা ছেড়ে পিছাতে শুরু করতেই কি ভেবে আবার বলে ‘যা নিয়ে আয়্।' তাড়াতাড়ি পেছনে করা হাত সামনে আনি, অঙ্ক বই, খাতা আর সোনালী ক্লিপওলা ছাইরঙা আর্টেক্স কলম। বড়মামা হাত বাড়িয়ে টেবিলল্যাম্প জ্বালায়। কি আশ্চর্য্য! প্রথমবারে বড়মামার উত্তরটাও আমার মতই হয়। বড়মামা সমানে কিসব হিসেব করে আর ভুরু আরো বেশী করে কুঁচকে যেতে থাকে, মুখে ভীষণ দুর্গন্ধ। বড়মামা কথা বললেই আমার নাক চেপে ধরতে ইচ্ছে করে, কিন্তু করি না। আমি ভাবি দাঁত মাজে নি নাকি! তখন তো জানতাম না অনেকক্ষণ খালিপেটে থাকলেও মুখে অমন দুর্গন্ধ হয়। তারপর অনেকক্ষণ ভেবে, বেশ কিছু কাটাকুটি করে শেষে আরেকরকম করে অঙ্কটার উত্তর বইয়ের সাথে মেলে। কিন্তু আমি ঠিক করে বুঝি না এইটা কী করে হল। কিছু জিগ্যেস করতে আর সাহস হয় না। এর মধ্যে বড়মাইমা দুবার এসে বলে গেছে খেয়ে এসে বসতে, বড়মামা কান করে নি। যাগ্গে কাল অন্তত স্কুলে তো আর বকা বা ব্যঙ্গ সহ্য করতে হবে না।

    সিঁড়ি দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে নীচে নেমে আমাদের ঘরের দিকে যেতে নিতেই দিদা ডাকে ভাঁড়ারঘরের ফাঁক থেকে। ভাঁড়ারঘরে পা দিতে না দিতেই দিদা হিসহিসিয়ে ওঠে কেন গেছি আমি? অত কিসের বিদ্যেধরী যে এত রাতে এত খেটে মানুষটা আসার পরেও তাকে বিশ্রাম করতে না দিয়ে আমাকে সেই সময় যেতেই হল! আমি বলার চেষ্টা করি অঙ্কটা কাল থেকে হচ্ছে না, স্কুলে আজ করে নিয়ে যেতে বলেছে। দিদা আরো জ্বলে ওঠে ‘ফ্যালের মইধ্যে ফাস্ট হইয়া তুই সাপের পাঁচ পা দ্যাখছস! কি হইসে একদিন অঙ্ক কইর‍্যা না নিয়া গেলে, অই তো ধুচুনির নম্বর। ধিঙ্গি মাইয়া নিজে কইরতে না পারলে ব্যাঞ্চের উফরে খাড়ইবি।' আরো কিসব বলে, বলতেই থাকে। আমি আর কিচ্ছু শুনতে পাই না। মাথায় ঘুরতে থাকে ‘ফ্যালের মইধ্যে ফাস্ট', ‘ফেলের মধ্যে ফার্স্ট’। খুব আবছা মনে হয় আমাকে যদি হিন্দু গার্লসে ভর্তি হতে দিত ওরা, তাহলে তো ‘ফেলের মধ্যে’ বলতে পারত না।  খুব ইচ্ছে করে কাউকে এমন একটা কিছু বলতে যাতে সে বেশ দুঃখ পেয়ে ভেউভেউ করে কাঁদে ... তাহলে মনে হয় একটু ভাল্লাগবে আমার।
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ২৯ জুলাই ২০২৪ | ৫৩৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • NRO | 165.124.84.35 | ২৯ জুলাই ২০২৪ ১৮:২৯535516
  • লেখাটা আমার বেশ ভালো লেগেছে। এই রকম unpretentious জীবন  কাহিনী লেখা আমার চিরকালই ভালো লাগে। পরে আস্তে আস্তে আগের পর্বগুলো পড়বো |
  • kk | 172.58.244.82 | ২৯ জুলাই ২০২৪ ২০:০৪535520
  • "unpretentious" টা খুব ঠিক বিশেষণ। একটা কথা আমার জানতে ইচ্ছে করে -- এত ডিটেল লেখা মনে হয় যেন কালকের ঘটনা বর্ণনা করছো, তো একেকটা পর্ব কি একটানেই বসে লেখো? না অনেকদিন ধরে একটু একটু করে লিখতে হয়? জোড়গুলো বোঝা যায়না তো একদমই।
  • স্বাতী রায় | 117.194.34.207 | ২৯ জুলাই ২০২৪ ২০:০৯535521
  • শেষ লাইনটা  - সত্যি এমন মনে হত ? 
  • পাপাঙ্গুল | ২৯ জুলাই ২০২৪ ২২:২৫535525
  • আগে এই যে বড় ছেলে বা মেয়েকে পুরো পরিবারের , ভাই বোনদের দায়িত্ত্ব নিতে হত সেটা যে এখন আর নিতে হয় না এই ব্যাপারটা সমাজে একটা গুরুত্ত্বপূর্ণ বদল এনেছে।
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২৯ জুলাই ২০২৪ ২২:২৬535526
  • এ এক আশ্চর্য সিরিজ। নিজের যাপিত সেই সময়ের এমন অনুপুঙ্খ প্রতিচ্ছবি এমন আপাত উদাসীন বর্ণনায় বলে যাওয়া একই সাথে পরম মমতার আর বিষণ্ণতার ছোট ছোট তুলির আঁচড় - অপূর্ব।
     
    "এতদিন মা বকে মেরেও যেটা বোঝাতে পারে নি, সেইটা এবারে ঝট করে বুঝে যাই, পরীক্ষার ভালফলই হচ্ছে সেই যাদুদন্ড যা সব্বাইকে চুপ করিয়ে দেয়। সমীহ আদায় করে নেয়।" - একদম।
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ২৯ জুলাই ২০২৪ ২২:৪৪535528
  • বড্ড বুকে এসে লাগল যেন শেষটা। সত্যি মাঝে মাঝে খুব দুঃখ লাগলে ওরকম বলতে ইচ্ছে হয় বটে। মনে মনে বলে দিই রেগেমেগে। 
     
    এই টানা নির্বিকার বর্ণনাটার একটা আলাদা ব্যাপার আছে, পুরো একটা ছবি ফুটে উঠছে, কোনো পক্ষপাত নেই, সময়কে ধরে রাখা।
  • Aditi Dasgupta | ২৯ জুলাই ২০২৪ ২২:৫২535530
  • চাপের শৃঙ্খল। হায় শিশু!
     
  • | ২৯ জুলাই ২০২৪ ২৩:৩৮535531
  • স্বাতী, 
    হ্যাঁ একদম সত্যি। আমি বেশ পাজী টাইপের তো, এরকম  সব মনে টনে হত। মনে মনে গালিগালাজও করআম। আগের একটা পর্বে আছে বাথরুমে ঢুকে দিদাকে গালি দিয়েছিলাম। laugh
     
    কেকে, 
    আমার সবই প্রায় ছবির মত মনে থাকে।  এবারে সিজনস লিখতে শুরু করে দেখলাম মানুষগুলো যে ইতিহাসের শক্ত মার খেয়ে এসেছে সেটা ছাপিয়ে তাদের প্রতি  আমার ব্যক্তিগত ধারণা প্রাধান্য পেয়ে যাচ্ছে, তিক্ততা এসে যাচ্ছে। কিন্তু সেটা তো তাদের প্রতি অন্যায় হয়ে যায় তাই না? তখন আমি কিছুটা ব্যক্তিগত স্মৃতির কবল থেকে মুক্তি পেতেই এই ভাগাড়পাড়া স্কুলের অংশটুকু লিলহতে শুরু করি।  গুরুতেই আছে সে লেখা। স্বাতী যোষিতা আগে পড়েওছে(ন) সে লেখা। ত্তো তখন  এক সপ্তাহ কি একমাস একটু একটু করে লিখে মোটামুটি একটা পর্বের সাইজ হয়েছে মনে হলে পোস্ট করতাম।  তো সে লেখায় কোন প্যারা হয়ত ৩০-৪০ লাইনের আবার কোনটা ১০-১৫.। এখন এই অংশের ওই গন্ডগোল ঠিক করছি। টুকটাক যা মনে পড়ছে জুড়ছিও। 
     
    এদিকে জীবনেরও বেশিরভাগ অংশ তো প্রায় কাটিয়েই ফেললাম। এখন তাই একেবারে শুরুতে যবে থেকে মনে পড়ে পুরোটা লিখে রাখছি।  আমার মত যদি কেউ অমন বেকায়দায় থাকে সে হয়ত পুরোটা পড়লে একটু জোর পাবে যে না নিজের মনের জোর থাকলে গা ঝাড়া দিয়ে দাঁড়ানো যায়। 
     
    লহমাদা,
    ওই কেকে'কে যা বললাম সেই আর কি।  ব্যক্তিগত স্মৃতির কবলমুক্ত হয়ে ঝাড়া হাত পা হয়ে এগোন আর কি। 
     
    পাপাঙ্গুল,
    হ্যাঁ সন্তানসংখ্যা এক বা দুইয়ে আসার এটা বড় প্লাস পয়েন্ট। 
     
    রমিত,
    আমিও দিব্বি মনে মনে বলতাম। ওইদিন সামনা সামনিই কাউকে বলতে ইচ্ছে হয়েছিল। 
     
    অদিতি 
    শিশুটা বহুত বজ্জাতও ছিল।  cheeky
     
  • | ২৯ জুলাই ২০২৪ ২৩:৪০535532
  • *অংশটুকু লিখতে 
  • Aditi Dasgupta | ০১ আগস্ট ২০২৪ ১০:৪৪535593
  • শিশুরা বজ্জাত হয়না। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন