এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  সিনেমা

  • গুপি গাইন বাঘা বাইন নিয়ে বাৎচিত

    Arnab913 লেখকের গ্রাহক হোন
    সিনেমা | ১৩ জুলাই ২০১৭ | ৪৭৩১০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dc | 160.107.215.27 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ১৮:৩৮367728
  • আর সেইসঙ্গে susan sontag এর 'এগেইনস্ট ইন্টারপ্রিটেশন ' এর কথাটাও মনে রাখা ভালো । নয় কি ?
  • dc | 160.107.215.27 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ১৮:৪১367729
  • T আপনাকে ধন্যবাদ । কিন্তু আশ্চর্য 'cm ' বিনির্মাণ তিনির্মান এর মতো কঠিন কঠিন বিষয় এতো পড়েন অথচ এই কয়েক পাতার পিডিএফ টা পরে উঠতে পারেননি ! সত্যি 'বড় হলেই সবাই কেমন হোঁৎকা ' হয়ে যায় ! ধন্য সুকুমার !
  • ইরেবাব্বা | 127.194.194.28 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ১৮:৪৫367730
  • একেবারেই একমত হচ্ছি না। একজন শিক্ষিত সচেতন মানুষ প্রকাশ্য জনসমাগমে দ্রিঘাঞ্চু বা গুংগা বললে উঠলেও তার উচ্চারণের রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। একজন বিশ্ববরেন্য নির্দেশকের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সিনেমার অন্তর্গত রাজনীতি নিয়ে কথা উঠবে না! যে সিনেমা ঘোষিতভাবে ওয়ার পলিটিক্সের? যিনি যুদ্ধের রাজনীতি নিয়ে কমেন্ট করছেন তিনি শ্রেণীবিভাজনের রাজনীতিকে কিভাবে ট্রীট করছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না? যিনি ভুতের নাচ দেখাবেন বলে ইন্টেনশনালি ভুতেদের ক্লাস তৈরি করছেন তিনি সেই ক্লাসগুলিকে দিয়ে পর্দায় ঠিক কী করাচ্ছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না? যা করাচ্ছেন তার পলিটিকাল কনোটেশন নিয়ে কথা হবে না? ইয়ার্কি?
  • cm | 127.247.100.50 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ১৮:৫৬367731
  • আমার মনে হয়েছে, যে যখনি ইন্টারপ্রিটেশনের প্রশ্ন আসে আমরা সাধারণত মনে মনে একধরণের ইউনিকনেস ধরে নিই। এটাই সব সমস্যার মূলে। ঐ অলিখিত এবং অনর্থক হাইপোথেসিস সরিয়ে ভাবলে সুবিধে হয়। একটা সিনেমার দশরকম মানে, দশরকম দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ নিয়ে চলতে অসুবিধে হয়না।

    যেমন মার্ক্সীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এর বিচার করতে বসলে কি সিনেমাটা ফেলে দিতে হবে? মার্ক্সিস্টরা নিশ্চয় ইতিহাসকে অস্বীকার করেন না। এই সিনেমাটা না হলে গল্পটা যে সময় লেখা সে সময়ের কিশোর মনের হদিশ এত সহজে পাওয়া যেত?
  • cm | 127.247.100.50 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ১৯:০০367732
  • আবার সেই ইম্প্লিসিট হাইপোথেসিস, আমার তেমন জোরালো ইন্টারনেট কানেকশন আছে কি করে বোঝা গেল? dcর থেকে এরকম প্রত্যাশা ছিলনা।
  • Dibyendu Singha Roy | ২৩ জুলাই ২০১৭ ১৯:০২367734
  • ছোটবেলায় পড়া অনেক গল্প পরে বড় হয়ে পড়ে আগের মতো লাগেনি। এমনকি অনেক বিখ্যাত শিশু সাহিত্য বড় বয়সে প্রথমবার পড়ে ম্যাড়মেড়ে লেগেছে । ঠিক এই ভয়েই গুগাবাবা দ্বিতীয়বার আর পড়িনি। শিশুসাহিত্যে ফ্যান্টাসির যে ব্যাপারগুলো থাকে শিশুমন বই পড়ে তা যেভাবে নিজের মনে রিক্রিয়েট করতে পারে বড় হয়ে তা করতে গেলে অনেক যুক্তি বুদ্ধি বাঁধা দেয়। শিশুসাহিত্য নিয়ে ভালো সিনেমার ক্ষেত্রে এই রিক্রিয়েটের ব্যাপারটা আসেনা। চোখের সামনে বিশ্বাসযোগ্য ভাবে পরিচালকরা তা তুলে ধরতে পারেন আর তা যত বিশ্বাসযোগ্য হয় সিনেমা ততই ভাল সিনেমা হিসাবে খ্যাতি পায় । গুগাবাবা সিরিজ ছোট ও বড় বয়সে বার দশেক দেখেছি প্রতিটা মুহূর্ত ভালো লেগেছে, অবাক হয়েছি । বড় বয়সে এসে ভেবেছি এইযে "যুদ্ধ করে করবি কি তা বল" অথবা " এরা যত বেশি পড়ে, তত বেশি জানে, তত কম মানে " , ভীষণ জটিল কিছু না ঢুকিয়ে কি সহজে এই তত্ব কথা বলে গেলেন সত্যজিৎ !
  • Dibyendu Singha Roy | ২৩ জুলাই ২০১৭ ১৯:০২367733
  • ছোটবেলায় পড়া অনেক গল্প পরে বড় হয়ে পড়ে আগের মতো লাগেনি। এমনকি অনেক বিখ্যাত শিশু সাহিত্য বড় বয়সে প্রথমবার পড়ে ম্যাড়মেড়ে লেগেছে । ঠিক এই ভয়েই গুগাবাবা দ্বিতীয়বার আর পড়িনি। শিশুসাহিত্যে ফ্যান্টাসির যে ব্যাপারগুলো থাকে শিশুমন বই পড়ে তা যেভাবে নিজের মনে রিক্রিয়েট করতে পারে বড় হয়ে তা করতে গেলে অনেক যুক্তি বুদ্ধি বাঁধা দেয়। শিশুসাহিত্য নিয়ে ভালো সিনেমার ক্ষেত্রে এই রিক্রিয়েটের ব্যাপারটা আসেনা। চোখের সামনে বিশ্বাসযোগ্য ভাবে পরিচালকরা তা তুলে ধরতে পারেন আর তা যত বিশ্বাসযোগ্য হয় সিনেমা ততই ভাল সিনেমা হিসাবে খ্যাতি পায় । গুগাবাবা সিরিজ ছোট ও বড় বয়সে বার দশেক দেখেছি প্রতিটা মুহূর্ত ভালো লেগেছে, অবাক হয়েছি । বড় বয়সে এসে ভেবেছি এইযে "যুদ্ধ করে করবি কি তা বল" অথবা " এরা যত বেশি পড়ে, তত বেশি জানে, তত কম মানে " , ভীষণ জটিল কিছু না ঢুকিয়ে কি সহজে এই তত্ব কথা বলে গেলেন সত্যজিৎ !
  • T | 131.6.68.127 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ১৯:০৪367735
  • কিন্তু 'যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই' এই ব্যাখ্যান তো রাজনীতি নয়, বা কমেন্টও নয়। রায়বাবু কমেন্ট তো কিছু করেননি এই সিনেমায়। শুধুমাত্র একটা চালচিত্র তুলে ধরেছেন। শ্রেণীবিভাজনের রাজনীতিকে 'ট্রিট' তো করেননি, শুধুমাত্র একটা মিনিমাম ডেস্ক্রিপশন দিয়েছেন। সে তো প্রাচীন সমাজ পটভূমিকায় থাকলে এমনিই গোদা ভাবে আসবে। ভূতের নাচের যে ক্লাস দেখিয়েছেন সে তো শুধুমাত্র আফটার লাইফ এক্সট্রাপোলেশন বিশেষ। তাছাড়া রাজা প্রজাকে প্যাঁদাচ্চে এইরমও কিছু নেই। ইন্টার্নাল কনফ্লিক্ট।

    এখন কনোটেশন নিয়ে কথা উঠতেই পারে, কিন্তু এই ক্ষেত্রে সেগুলো সবই সমালোচকের ইন্টারপ্রিটেশন হয়ে দাঁড়াবে। আমার মনে হয় শুরু থেকেই আলোচনাটা হচ্চিল গুগাবাবার পিছনে রায়বাবুর নিজস্ব চিন্তাভাবনা কে অ্যাড্রেস করে। উনি কি কি কাঠি করেছেন আর কি করেননি। এখন ওঁর জবানীতেই দেখা যাচ্চে যে উনি আদপেই সেরম কিছু ভাবেন নি। রুপকথা এঁকেছেন।

    আফ্রিকান মুখোশের পেছনেও অ্যাবস্ট্র্যাক্ট আইডিয়া পাওয়া যাবে। শিশুর আঁচড়েও। কিন্তু তাহলে রায়বাবুকে আলোচনা থেকে বাদ দিলেই ভালো হয় মনে হয়।
  • cm | 127.247.100.50 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ১৯:১১367736
  • "শ্রেণীবিভাজনের রাজনীতিকে 'ট্রিট' তো করেননি, শুধুমাত্র একটা মিনিমাম ডেস্ক্রিপশন দিয়েছেন। সে তো প্রাচীন সমাজ পটভূমিকায় থাকলে এমনিই গোদা ভাবে আসবে।" এই হচ্ছে মূল কথা। কাল থেকে একথাই বলার চেষ্টা করছি। সময়টা হিসেবে নিতে হবে। যে সময়ের গল্প অন্য রকম করলে বাজে কথা বলা হত।
  • test | 127.194.194.28 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ১৯:৪৯367738
  • T | 131.6.68.127 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ২০:১৬367739
  • লড়াই অনাচারের বিরুদ্ধে শিল্প সংস্কৃতির জয়, এ তো বকলমে যুদ্ধ নয় শান্তি চাইই হচ্ছে। খুব আলাদা কিছু তো দেখছি না। এ বক্তব্য তো খুব মোটাদাগের। হিডেন পলিটিক্যাল কিছু আছে কি?
  • T | 131.6.68.127 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ২০:২৬367740
  • যাই হোক, আমার যা মনে হয় লিখে দি,

    প্রাচীন রূপকথা দেখা যাক। হিংসেয় ছোটোরাণী বুক ফেটে মরে গেল। শিশুকে মাটিতে পুঁতে দিচ্ছে। সাপ গিলে ফেলছে। চূড়ান্ত ভায়োলেন্স। এবং একই সাথে ভীষণ রকম মোটাদাগের। মূল প্রবৃত্তিগুলি নিয়ে নানারকম ছবি। এ যেন প্যালেটে শুধুমাত্র কয়েকটি গাঢ় রঙ। তাই দিয়ে ছবি আঁকছে। এখন সে ছবির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণে অথবা তার ফর্ম ও কন্টেন্টের তাৎপর্য বুঝতে ন্যাচারেলি ছবির অন্য উপাদান অর্থাৎ তার টেক্সচারের কথাও আসবে। কিন্তু রূপকথা, বা ঠাকুরমার ঝুলি, বা বাঘ সংক্রান্ত গল্প ইত্যাদি যেহেতু প্রাইমারিলি শিশুমনকে নিয়ন্ত্রণ করতে তৈরী হয়েছিল, (যেকোনো সমাজেই ফেবলস গুলো প্রাথমিক স্ট্রাকচারাল মরালিটি ইত্যাদির জন্য নির্মিত হয় ) এবং সে উদ্দেশ্যেও সফল, সেজন্য টেক্সচারের প্রয়োজনীয়তাটা অতটা গড়ে ওঠেনি। উদাহরণ, আমরা বোকা বাঘের গল্প পড়ছি, বোকা চাষীর গল্প পড়ছি, কিন্তু চাষীর চরিত্রের কোনো গ্র্যানুলার দিক আমাদের কাছে নেই (প্রয়োজনীয়তাও নেই)। চাষীকে আমরা বোকা মাস্টার দিয়ে রিপ্লেস করে দিতে পারি। এ চরিত্রের উঁচু নীচু নেই। এইসব রুপকথাগুলো সমাজের যেখান থেকে উঠে এসেছে, শুধুমাত্র সেই অংশটুকুর একটা মিনিমাম ব্যাগেজ বহন করেছে। এটুকুই এদের সাধারণ চরিত্র।

    এইবার রায়বাবু যখন ছবি তৈরী করছেন, তখন টেক্সচারের দিকটি এইবার সামনে আসছে। ন্যারেটিভ কি ননলিনিয়ার করা হবে? নানান রকম কাট বা ফ্ল্যাশব্যাক ইত্যাদি? না। এই সিনেমার ফর্মকে তার কন্টেন্টের সাথে পা মিলিয়ে চলতে হবে। গুগাবাবা সাধারণ মানুষ। দৈবাৎ তারা ভূতের রাজার বর পেয়েছে। তাই স্টোরিটেলিং কেও সাধারণ হতে হবে। ক্যামেরার চিত্রগ্রহণকেও রাখতে হবে সহজ সরল। এবং এই অবস্থায় উপেন্দ্রকিশোরের স্টোরিলাইন হুবহু ফলো করলে সিনেমা বানানোর প্রয়োজনীয়তাই থাকে না। ফলে টেক্সচার আনতে হবে, এবং এইখানে রায়সাহেব এন্ট্রি নিচ্ছেন। ভূতের নাচ বাদদিয়ে শুধুমাত্র ভূতের রাজার আবির্ভাব এবং বরপ্রদান অবধি 'কাট' রাখুন। মাঝখানে গুপী বাঘার খুব হাস্যকর গেঁয়ো নাচগান জুড়ে দিন, যা কিনা তখনো অবধি গুপী বাঘার মজ্জাগত, ভূতের রাজা তৃপ্ত হচ্ছে এবং বর দিয়ে চলে যাচ্ছে এবং সমগ্র স্টোরিটেলিং এ কোথাও ফাঁক থেকে যাচ্ছে না। ফলে এইখানে ভূতের নাচ এবং অন্যান্য গানগুলোর ভূমিকা অপরিসীম। কারণ এগুলো পুরো টাইমলাইনের রেস্পেক্টে একটা টেক্সচার তৈরী করছে।

    একটা অপেরার মতো যেন। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে গানগুলো বা ভূতের নাচ কিন্তু একটা আপাত বিযুক্তি তৈরী করে। খুব পরিকল্পিতভাবে গানের কথাগুলো খুব স্পষ্ট, স্পেসিফিক, এবং গানগুলোর চারিত্রিক ভাব বেশ আদিম। গ্রামের হাটে বাজারে ঢোলক নিয়ে গাইয়েরা যখন গান গায়, একজন প্রথমে দুলাইন গেয়ে দেয়, তারপর বাজনাদার দুদন্ড বাজায়। কোনো কারিকুরি নেই। পরিকল্পিত ব্যবধান রয়েছে। গুগাবাবার গানগুলোও সেরকম, সহজ সরল ভাষা এবং গানের সঙ্গত। ওরে হাল্লা রাজার সেনা, তোরা যুদ্ধ করে করবি কি তা বল। গল্পের মূল স্টোরিলাইন থেকে দর্শককে বিযুক্ত করে, স্রোতে যেমন কাগজের নৌকো ভেসে একধার থেকে অন্য ধারে গিয়ে ঠেকে, সেরকমই গানগুলো বহন করে চলে। এইভাবেই রায়সাহেব একটা সামান্য রূপকথায় অসামান্য টেক্সচার তৈরী করেছেন। গল্পের উঁচুনীচু বোঝার জন্য ঐ গান এবং নাচ এইখানে এইজন্য এত গুরুত্বপূর্ণ।

    ভূতের এই নাচ, রায়বাবুর নিজুস্ব বক্তব্য অনুযায়ী, দক্ষিণী সঙ্গীত উপস্থাপনা থেকে অনুপ্রাণিত। চাররকম বাদ্য সহযোগ, যার কথা ডিসি আগে বলেছেন, এই ক্ষেত্রে উনি ব্যবহার করেছেন। এবং ভূতেদের শ্রেণী নির্ধারিত হয়েছে কিন্তু এই বাদ্যের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে। এইরকমই মনে হয়। যেকারণে চাষাভুষোর সাথে একই শ্রেণীতে আছে পেয়াদাও। যদিও এদের সামাজিক স্তরে বিন্যাস খুব নির্দিষ্ট ও আলাদা। আবার গ্রামের মোড়ল বা পুরোহিতের সাথে এসেছে পাদ্রী। অথচ প্রাচীন সমাজে এদের সম্পর্ক ঠিক আদায় কাঁচকলায় না হলেও দূরত্ব অবশ্যই ছিল। সাহেবভূতরা এসেছে অন্য শ্রেণীতে যদিও নীলকর সাহেবদের হিসেবমতে রাজা বা প্রভুস্থানীয়দের জোটেই একসাথে আসার কথা। ফলে শ্রেণী নির্ধারণের জন্য গ্রামীন সমাজকে পুরোপুরি প্রতিভূ করে নয়, খুব সম্ভবতঃ বাদ্যের কোরিওগ্রাফি বা ভিস্যুয়াল কন্ট্রাস্টের জন্য সিলেক্ট করা হয়েছে। ভূতের নাচকে একটা ট্যাক্টাইল ফিলিং দেওয়ার জন্য। যেকারণে প্রতিটি আলাদা আলাদা বাজনার যেমন জন্ম, চলন ও মৃত্যুর সেগমেন্ট রয়েছে সেইরমই শ্রেণীগুলোর মধ্যে রয়েছে শুরুয়াদ, কনফ্লিক্ট এবং শেষে মিলন। পুরোটাই করা হচ্ছে কিন্তু একটাই উদ্দেশ্য নিয়ে, সিনেমার স্টোরিলাইন থেকে দর্শককে আপাত বিযুক্ত করা। একটা রিদমিক ব্রেক যা কিনা টেক্সচার তৈরী করছে।

    এইসবই আর কি। গুগাবাবাকে শুধুমাত্র টেক্সট হিসেবে পড়লে রায়বাবুর সিনেমাটি বাদ্দিয়েও পড়া যায়, পলিটিক্যাল কনোটেশন হিসেবে নানারকম ব্যখ্যানও দেওয়া যেতে পারে, যা কিনা যেকোনো রূপকথার জন্যই সম্ভবতঃ প্রযোজ্য। সেখানে রায়বাবুর কোনো দোষগুণ (:)) বা পলিটিক্যাল মোটিভেশন আসছে না। গুগাবাবাকে সিনেমা হিসেবে পড়লে কিন্তু ঐ ফর্ম এবং টেক্সচারটুকুনকেই সত্যজিত বলে ধরতে হবে। এখন সেইটের কি আলাদা কনোটেশন হবে, এক পিওর মিউজিক্যাল ব্যাপার ছাড়া, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই।
  • ইরেবাব্বা | 127.194.194.28 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ২০:৩৭367741
  • এমনকি "কীভাবে গুপির গানে অপেরা বা ত্রুবাদুর ধরনের কমেন্ট (এই কমেন্ট আসলে ফিল্ম মেকারের) এসে যাচ্ছে " - সে নিয়ে সুধীর চক্রবর্তীর লেখাটায়ও বলা হয়েছে। "গুপির কমেন্ট (সত্যজিতেরও)" নিয়ে তিনি অনেক শব্দই খরচ করেছেন। স্রেফ লিরিক প্রসঙ্গেই এতখানি। বাকি সিনেম্যাটিক ট্রীটমেন্ট-এর ক্ষেত্রে স্রেফ ফ্যান্টাসি বলে এড়িয়ে গেলে চলবে?

    চালচিত্র তুলে ধরা কি রাজনীতি বিহীনভাবে সম্ভব? শ্রেণীবিভাজনের রাজনীতির মিনিমাম ডেসক্রিপশনও কি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সম্ভব? ডেসক্রিপশন এর সময়েই তো জিনিসটা ডেসক্রিপ্টরের ভার্সান হয়ে যাচ্ছে। দিলীপ কুমার বসুর 'ভূতের নাচ' লেখাটাতেও সত্যজিতের করা কটাক্ষকে তুলে ধরা আছে, অর্থাৎ তিনিও নির্দেশকের করা 'কটাক্ষ' ভিস্যুয়ালাইজ করছেন। বাইবেল ছুঁড়ে পাদ্রী মারছে পুরুতকে ... শ্রেণী সংগ্রাম নয়। শ্রেণীর অন্তর্কলহ"' এসব তাঁরও চোখে পড়ছে।

    আমি তো সমালোচকের জায়গা থেকেই দেখব। সেখান থেকেই পরিচালকের ত্রুটি বিচ্যুতি মুন্সীয়ানাকে জাজ করব। ৬৮-৬৯ এর উত্তাল সময়ে দাঁড়িয়ে নিছক ফ্যান্টাসি ডেপিক্ট করতে চাইলেও প্রশ্ন তুলব।
  • রে | 127.194.194.28 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ২০:৩৮367742
  • এটা ৮ঃ২৬ না পরেই লেখা।
  • কল্লোল | 116.51.240.31 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ২০:৪৫367743
  • ১) একজন রাজা তার মন্ত্রীর ষড়্যন্ত্রের শিকার হয়ে ক্রমাগত যুদ্ধ চাইছেন, অন্যদের রাজ্য গ্রাস করতে চাইছেন। এটি রূপকথা, কিন্তু এতে রাজনীতি নেই বল্লে করুণা হয়।
    ২) ভূতের রাজা বর দিয়ে আলোর খেলা দেখিয়ে বিদেয় নিলে বলার কিচ্ছু ছিলো না। তা নয়, ভূতের নাচ এলো, চাষী ভুত, পুরুৎ ভূত, সায়েব ভূত, বাইবেল ভূত, মায় মুসলমান ভূতও এলো। এগুলো ছোটদের মনোরঞ্জন, কিন্তু এতে রাজনীতি নেই বল্লে বড্ডো করুণা হয়।
    ৩) গুগাবাবা আর রক্তকরবীর তুলনা!!!!!!!!! ক্যাডায় করসে!!!!
    এবার আর করুণা হচ্ছে না। বিরক্ত লাগছে।
    আমি যেটা বলেছিলাম - রবীন্দ্রনাথ আর সত্যজিতের রাজনৈতিক দর্শনের সাযুজ্য নিয়ে। দুজনেই মনে করতেন খারাপদের মনের পরিবর্তন হবেই। তারাও ভালোদের সাথে যোগ দেবে। যেমনটা গুগাবাবায়, হীরকে ও রক্তকরবীতে হয়েছে একদম শেষে। এর সাথে তুলনা কোদ্দিয়ে এলো কে জানে!!!
    একটু মন দিয়ে পড়ে তক্কাতক্কি কল্লে ভালো হয়।
    সত্যজিতবাবু যা বিশ্বাস করতেন তাইই বলেছেন, এতে তার কোন "অপরাধ" হয় নি। কেউ কেউ তাঁর সাথে একমত, কেউ কেউ নয়। এই আর কি।
    তবে যারা একমত তারা অন্য টইতে যেসব মত প্রকাশ করেন, তাতে মনে হয় না তারাও ঐ মতে বিশ্বাস করেন।
  • T | 131.6.68.127 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ২০:৪৬367744
  • 'চালচিত্র' তুলে ধরা রাজনীতি বিহীনভাবে অবশ্যই সম্ভব। শ্রেণীবিভাজনের মিনিমাম ডেসক্রিপশনও সম্পূর্ণ রাজনৈতিক নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে করা সম্ভব। কারণ হল, সেইসমাজ বা চালচিত্রকেই তুলে ধরছেন যা ভীষণ রকম ভাঙাগড়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে না। উনি তো সত্তরের সমাজকে ডেপিক্ট করছেন না, করছেন তার একশো দেড়শো বছর আগের সমাজকে। ইংরেজের প্রাথমিক ইনফিল্ট্রেশনের পর আপাত সুস্থির বিভাজিত সমাজকে দেখাচ্ছেন। এ সমাজ তো খুব কিছু আলোড়নের মধ্যে দিয়ে তখনো যাচ্ছে না। আরো কিছু বছর পরে সেসব আসবে। ফলে রাজনীতি বিহীন ভাবে দেখানো ক্যানো যাবে না। প্রসঙ্গতঃ এইখানে বলে রাখি, কারও অ্যাফিলিয়েশন (পলিটিক্যালই ধরা যাক) যদি সমাজের বুর্জোয়াদের সাথে অ্যালাইন্ড হয় এবং দেড়শো বছর আগের সমাজে ক্ষীর খাওয়া লেয়ারের অবদানই আসল বলে সিনেমা তৈরী হয় তো সেটা প্রোপাগান্ডা হল, চালচিত্র তুলে ধরা হল কি। রায়বাবু তো আর অনিন্দিতা সর্বাধিকারী নন রে বাবা। :)
  • T | 131.6.68.127 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ২১:০৭367745
  • 'রাজনীতি' শব্দটা দেখা যাচ্ছে 'হরতাল' এর মতোই অবস্থা। বহু ব্যবহারে ক্লিশে তো হয়েইছে। উলটে হাবিজাবি সমস্ত কিছুর সাথেই অ্যাফিলিয়েটেড হয়ে যাচ্ছে। এবং ব্যাপার যেদিকে গড়াচ্চে তাতে ক্রমশঃ একটা নেগেটিভ অর্থ টেনে আনতে পারে সম্ভবতঃ। খবরের কাগজে যেমন স্থানীয় বিবাদকে লেখাই হয় 'বনাম অমুক দল' হিসেবে সেরকমই একটা সেন্সলেস ইউজ টের পাই। যেন সমস্ত কিছু ছাপিয়ে একটা ঈশ্বরের মতো উপস্থিতি। মুশকিল হচ্ছে আমাদের সময়ে এই গোদা ক্লাসিফিকেশনটি সামাজিক বৈরীতা ও বৈপরীত্যকে ইউনিফাই করতে যত বেশী ব্যবহৃত হয়েছে তার চেয়ে কম ব্যবহৃত হয়েছে ডিসেন্ট্রালাইজড ভাবে সমস্যাকে অ্যাড্রেস করতে। নমুনা দেখুন,

    "ভূতের রাজা বর দিয়ে আলোর খেলা দেখিয়ে বিদেয় নিলে বলার কিচ্ছু ছিলো না। তা নয়, ভূতের নাচ এলো, চাষী ভুত, পুরুৎ ভূত, সায়েব ভূত, বাইবেল ভূত, মায় মুসলমান ভূতও এলো। এগুলো ছোটদের মনোরঞ্জন, কিন্তু এতে রাজনীতি নেই বল্লে বড্ডো করুণা হয়।"

    সন্ত্রস্ত ভাবটি লক্ষ্যণীয়। চাষী পুরুত সায়েব বাইবেল মুসলমান, এত কিছু একসাথে যখন, তখন হে পিকক, মোটা একটি দাগ টানি। ফলে রাজনীতিও এলো। কিভাবে আসছে, কার হাত ধরেই বা আসছে, খোদায় মালুম কিন্তু আসছে। এত লোককে দেখতে পাচ্ছি যখন তখন সাধারণ কোনো স্তর বিন্যাস কি আর সত্তরের সামাজিক চেতনায় দেখতে পাব না? নিশ্চয় পাব। চাষী আর মুসলমান মিলে তো সায়েব আর পুরুতদের ক্যালায় নি। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে এ ওদের দিকে। তাছাড়া ফ্রেমে সাদাকালো বিভাজন ছিল, কিন্তু সে তো আর দেশভাগ নয়, ফলে করুণাবারি বর্ষিত হইতেছে। ছাতা দাও গো।
  • T | 131.6.68.127 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ২১:৩২367746
  • ৬৮-৬৯ এর সময়ে দাঁড়িয়ে কেউ যদি ফ্যান্টাসি ডেপিক্ট করতে চান তবে তাঁর নিজস্ব মিডিয়াম মারফত বক্তব্য রাখা বা না রাখাকে প্রশ্ন করা যেতে পারে, কিন্তু চয়েস বা স্বাধীনতাকে করা যায় কি? ক্যানো তিনি কলকাতা একাত্তর জাতীয় কিছু বানালেন না, বা সেই সময় সম্পর্কে উদাসীন থাকছেন এ প্রশ্ন নিশ্চয়ই কোনো ইন্টারভিউতে ওঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। সেইসবে কিছু হদিশ পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু কালোত্তীর্ণ সিনেমা বানানোর ইচ্ছেকেই বা নস্যাৎ কিভাবে করা যায়।
  • dc | 160.107.215.27 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ২২:০২367747
  • T আপনি বৃথা সময় নষ্ট করে চলেছেন , এনারা সেই কষ্টকল্পিত রাজনৈতিক মতবাদ এর ধ্বজা সবকিছুতেই পুঁতে দিয়ে তার আদ্যপান্ত শ্রাদ্ধ না করে সন্তুষ্টি লাভ করবেন না । দুঃখের বিষয় যিনি এই পিডিএফ শেয়ার করলেন তিনিও এর কিছুই হৃদয়ঙ্গম করেন নি ।
    ওখানে বারীন সাহা র একটি মন্তব্য আছে , যে ছবিটা বাংলাদেশে সকলেই উপভোগ করতে পারবেন একমাত্র মুশকিল ওই 'ইন্টেলেকচুয়াল' দের নিয়ে । অব্যর্থ ! সত্যজিৎ কে এই নিয়ে বলা হলে উনি নিজে বলছেন যে বাড়াবাড়ি হচ্ছে ! একটা 'যুদ্ধ বিরোধী' মেসেজ যদি গল্পটার খাতিরে থেকেই থাকে একটা ফ্যান্টাসিতে তাতে সেটা কিরকম ভয়ঙ্কর পলিটিকাল ফিল্ম হয়ে যায় সেটা বোধহয় স্রষ্টাও অনুধাবন না করতে পেরে কবরে এ পাশ ও পাশ করে চলেছেন ! আর কল্লোল বাবু 'গুগাবাবা' তে মূল যে খল চরিত্র অর্থাৎ 'হাল্লার মন্ত্রী' তার বোধহয় কোনো মনের পরিবর্তন দেখানো হয়নি ! এই অসঙ্গতি টা দোয়া করে শুধরে নেবেন !
  • dc | 160.107.215.27 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ২২:২৬367749
  • চার্লি চ্যাপলিন এর 'গ্রেট ডিকটেটর ' নিয়ে তো প্রশ্ন তোলেন না যে সেখানে কেন ক্লাস স্ট্রাগল নেই ? সেখানে কেন 'মার্ক্সিয়ান ডিয়ালেক্টিক্স' নেই ? সেও তো 'যুদ্ধ বিরোধী' 'আগ্রাসন বিরোধী ছবি ! এবং আরো বেশি করে পলিটিকাল স্যাটায়ার ! নাকি সত্যজিৎ বললেই বিপ্রতীপে যেহেতু মানসচক্ষে ঋত্বিক ভাসমান হয়ে ওঠে তাই অবধারিত এইসব বালখিল্যতা !
  • কল্লোল | 116.51.240.31 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ২২:৩৩367750
  • কেন সত্যজিত কলকাতা৭১ জাতীয় কিছু বানালেন না - এই প্রশ্নটাই অবান্তর। বা এর উত্তর হয় - কারন সত্যজিত মৃণাল সেন নন - তাই।
    যে কেউ তার মতানুযায়ী তাঁর শিল্প সৃষ্টি করবেন। সেটাই তো কাম্য। সত্যজিত সেটাই করেছেন, ঋত্বিক তাই করেছেন, মৃণাল তাইই করেছেন, তপন সিংহ, অগ্রদূত, তরুণ মজুমদার - সকলেই তাই করেছেন। সেটা বল্লে "অপরাধ" হচ্ছে কোথায়?
    সত্যজিত মার্কসবাদী নন। তার দর্শন রবীন্দ্রনুসারী। তিনি তাই দুষ্টের হৃদয় পরিবর্তন চান। হাল্লার রাজা, হীরকের রাজা তাইই করেছেন। রক্তকরবীর রাজাও তাই করেছেন।
    এই দর্শন আমার সাথে মেলে না। যাদের সাথে মেলে, তাদের আমি - কেন মেলে??? বলে হুড়োও দেই নি। বরং তারাই আমায় "মগজ ধোলাই", "কষ্টকল্পিত" বলে গাল পাড়ছেন। পাড়ুন। কিন্তু আমি যে আমার মতটি রাখলুম - সত্যজিত রবীন্দ্রনাথের মতোই শ্রেণী সমন্বয়ে বিশ্বাস রাখতেন - তাকে নস্যাৎ না করে খামোখা গাল পাড়ছেন কেন। আমি যদি সত্যজিত সম্পর্কে ভুল বলে থাকি, তবে তা কেন ভুল সেটা তো বলতে হবে নাকি!!
    আমার Date:23 Jul 2017 -- 08:45 PM পোস্টটিকে যুক্তি দিয়ে নাকচ করুন।
    গুগাবাবার গোটা গল্পের টেনশনটি আবর্তিত হচ্ছে দুই রাজাকে ঘিরেই। তাই তাদের পরিণতিই গুরুত্বপূর্ণ, অন্য পার্শ্বচরিত্রদের নয়।
  • dc | 160.107.215.27 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ২২:৪২367751
  • তাই ? তাহলে 'গুপি গাইন বাঘা বাইন ' নামটা পাল্টে ফেলে আপনি বরং ওটা ' শুন্ডি বনাম হাল্লা ' করে দিন !
  • কল্লোল | 116.51.240.31 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ২২:৪৪367752
  • চার্লি। সামান্য পড়াশুনা করতে হবে যে!! চার্লিতে রাজনীতি নেই!! এমন অসম্ভব কথা কে বল্লে?
    এট্টু বলবো? বলি? মন দিয়ে পড়বেন তো?

    লন্ডনের একেবারে নীচেরতলার থেকে উঠে আসা চার্লি আসছেন আমেরিকায়। লন্ডনের অখ্যাত সব থিয়েটার ও পাবগুলোয় মোটাদাগের মনোরঞ্জনী স্কিট করে দিনগুজার করা মানুষটি আসছেন নতুন দেশে, নতুন মাধ্যমে। আমেরিকায় তখন গণতন্ত্র ও ধনতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশ। ভদ্রলোকবিশ্বের অন্তঃসারশূণ্যতা দেখে এসেছেন চার্লি লন্ডনের অভিজাত সমাজে। সেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আমেরিকার মতো অবাধ নয়। রক্ষণশীল ব্রিটিশ সমাজ সমালোচনা নিতে অপারগ। আমেরিকায় এসে নতুন মাধ্যম সিনেমায় সেই ভদ্রলোকবিশ্বের দ্বিচারীতা, তার স্ববিরোধ বিদ্রুপের চাবুকে ফালাফালা করতে শুরু করলেন। ক্রমশঃ সাফল্য তার করতলগত। তুমুল জনপ্রিয়তা সঙ্গে নিয়ে নিজের ফিল্ম বানাতে শুরু করলেন। একের পর এক আসতে লাগলো কিড, গোল্ড রাশ, দ্য সার্কাস, সিটি লাইটস। হুল্লাট হাসির আড়ালে ফালাফালা করে ফেলছেন তথাকাথিত ভদ্র সমাজ। নিজেকে প্রতিস্থাপন করেছেন সামাজিক বৃত্তের বাইরে, ট্র্যাম্প, চালচুলোহীন ভবঘুরে। স্থায়ী বাসা নেই, স্থায়ী জীবিকাও নেই, এমনকি কেউ তাকে নাম ধরে ডাকে না। নামহীন এক অনস্তিত্ব। কান্ডো ঘাটিয়ে চলেন একের পর এক, আর উন্মোচিত হয়ে চলে ধনতন্ত্রের ফাঁপা মূল্যবোধ, তার ভুয়ো নৈতিকতার গরিমা। কিড-এ চার্লি যখন শিশুটিকে এগিয়ে দেন শার্সি ভাঙ্গতে আর তার একটু পরেই নিজে আসেন শার্সি সারানেওয়ালা হয়ে, আমরা হাসি। হাসতে হাসতে স্তম্ভিত হয়ে যাই যখন রাষ্ট্রের নজরদারীর সামনে সাদা মুখে অস্বীকার করেন তার পিছনে লুকোতে চাওয়া সেই শিশুটিকেই নিষ্ঠুর লাথিতে এবং নজরদারী সরে যেতেই বেমালুম কোলে তুলে নেন তাকেই। আবারও আমরা হাসি হাসি আর হাসতে থাকি। সেই সব হাসির ফোয়ারার মধ্যেই সুকৌশলী যাদুকরের মতো হাতসাফাই করে মগজে ঢুকিয়ে দেন ধনতন্ত্রের ন্যক্কারজনক যুক্তির বিপদ – চাহিদা না থাকে তো তা তৈরী করে নাও ছল করে। কাঁচ ভাঙ্গো, কাঁচ সারাও। আর বিপদে পড়লে অস্বীকার করো সম্পর্ক। বিপদ সরে গেলে আবার টেনে নাও তাকে বুকে। কোন অপরাধবোধ নেই, সবই জায়েজ। স্বার্থ, ব্যক্তি স্বার্থ একমাত্র সত্য এই হাসিখুশী সমাজে।
    পাল্টাচ্ছে আমেরিকা, রুজভেল্টের আমেরিকা। পাল্টাচ্ছে দুনিয়া। হিটলার হাত মেলাতে অস্বীকার করছেন বার্লিন অলিম্পিকে ১০০ মিটার দৌড়ে পদকজয়ী আফ্রো-আমেরিকান জেসি ওয়েন্সের সাথে। আর তিন বছর পরেই শুরু হয়ে যাবে তখন পর্যন্ত সৌরমন্ডলের তৃতীয় গ্রহে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে হীণ ঘটনা – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
    আর অপরিচয়ের আড়াল থেকে নয়, এবার খেটে খাওয়া শ্রমিকের ভুমিকায় তিনি – মডার্ণ টাইমস, সম্ভবতঃ আধুনিক পৃথিবীর শেষ মহাকাব্য। আর সেই সিনেমায় তৈরী হয় চলচ্চিত্র ইতিহাসের তিনটি অসাধারণ পতাকা মুহুর্তের একটি। চার্লির পাশ দিয়ে লোহার রড নিয়ে লরি চলে যায়। বিপদ সংকেত বোঝাতে লরির পিছন থেকে বেরিয়ে থাকা রডে লাগানো লাল কাপড়টি খসে পরে। স্বাভাবিক ভদ্রতায় চার্লি কাপড়টি তুলে নিয়ে দৌড়াতে থাকেন লরির পিছনে লাল কাপড়টি নাড়তে নাড়তে, চালকের দৃষ্টি আকর্ষনের নিমিত্ত। লরি মিলিয়ে যায়। পিছনে আসছিলো কমিউনিষ্টদের মিছিল, সামনে ছিলো রাষ্ট্রের পাহারাদারেরা। মাঝাখানে চার্লি লাল কাপড় হাতে। আতঙ্কিত রাষ্ট্রের চোখে চার্লি হয়ে ওঠেন জঙ্গী কমিউনিষ্ট নেতা। অথচ কোনদিনই কমিউনিষ্ট ছিলেন না তিনি। তবু আমেরিকা ছাড়তে হয় তাকে কমিউনিষ্ট সন্দেহে, চিরকাল ব্যক্তি স্বাতন্ত্রে, ব্যক্তি প্রতিবাদে বিশ্বাসী মানুষটিকে।
    তার অন্যন্য ব্যাঙ্গ দিয়ে ছিন্নভিন্ন করেন হিটলারকে, দ্য গ্রেট ডিক্টেটর। শেষ বক্তৃতায় ডিক্টেটর সাজা নাপিতাটি তার প্রেয়সীর উদ্দেশ্যে বলে ওঠে – আর এ যুদ্ধ নয় / আর এ ধ্বংস নয় নয় / আর নয় মায়েদের শিশুদের কান্না / রক্ত কি ধ্বংস কি যুদ্ধ / আর না আর না আর না। এসো হান্না, আমরা এক নতুন সকালের দিকে হেঁটে যাই..................। তাঁর অন্য সব সিনেমার মতো তিনি ও তাঁর প্রেয়সী হেঁটে চলে যান আলোর দিশায়।
    যুদ্ধ একসময় থামে। মানব সভ্যতার ক্ষতসমূহ তাদের ঘামুখ থেকে আরও আরও আরও পূঁজ ও পূতিগন্ধ ছড়ায়। পৃথিবীর অসুখ গভীরতর হতে থাকে। ব্যক্তির প্রতিবাদ আর কোন গুরুত্ব পায় না লগ্নিপূঁজির চতুর দুনিয়ায়। চার্লি তৈরী করেন মঁসিয়ে ভের্দু। খুনি সে। ব্যাঙ্কের চাকরী চলে যাবার পর সে ধনী বিধবা মহিলাদের বিয়ে করে। টাকা পয়সা হাতিয়ে তাদের খুন করে। ট্র্যাম্প হারিয়ে গেছে সেই কবে যুদ্ধ বিদ্ধস্ত পৃথিবীর কোন এক মলিন ট্রেঞ্চে। কাজ হারানো ব্যাঙ্ক কেরাণী আজ খুনি। তবু খুনের দায়ে অভিযুক্ত চার্লি ফেটে পড়েন, ফেটে পড়েন আগ্নেয়পাহাড়ের মতো।
    As for being a mass killer, does not the world encourage it? Is it not building weapons of destruction for the sole purpose of mass killing? Has it not blown unsuspecting women and little children to pieces? And done it very scientifically? As a mass killer, I am an amateur by comparison.
    তারপর এই প্রথম, শেষ দৃশ্যে চার্লি মিলিয়ে যান অন্ধকারে ফাঁসীকাঠের দিকে। মৃত্যু হয় ব্যক্তি স্বরের।

    কি করি ! মগজে এসব গোঁত্তা মারে অনবরত। আপনারা বলবেন ধোলাই হয়ে গেছে। বলুন। কি আর করা। শুধু ধন্যবাদ দিতে পারি এই প্রশংসার জন্য, আমার ধোলাই হবার মতো মগজ একটা আছে অন্ততঃ। ধন্যবাদ।
  • রে | 127.194.194.28 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ২২:৪৯367753
  • http://kuscholarworks.ku.edu/dspace/bitstream/1808/6006/1/Banerjee_ku_0099M_10685_DATA_1.pdf
    আর একটা পিডিএফ দিলাম। এটাও পড়বেন। দেব ব্যানার্জি। ২০০৯
    POWERFUL AND POWERLESS: POWER RELATIONS IN SATYAJIT RAY’S FILMS

    Submitted to the graduate degree program in Film and Media Studies and the Graduate Faculty of the University of Kansas in partial fulfillment of the requirements for the degree of Master’s of Arts
  • dc | 160.107.215.27 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ২২:৫৭367754
  • মুশকিল হচ্ছে সত্যজিৎ কলকাতা ৭১ না বানালেও ৭০ এর রাজনীতি নির্ভর ছবি বানিয়েছেন এবং সেগুলো পলিটিকাল ফিল্ম হিসেবে গণ্য ও সমালোচিত ! সিদ্ধার্থ সেখানে তার নিজের মতো প্রতিবাদ করেছে , একটা শ্রেণীর প্রতিভূ হিসেবেই তাকে দাঁড় করানো হয়েছে, সে নক্সাল দের দলে নাম লেখাইনি বলেই তার প্রতিবাদ টা নস্যাৎ হয়ে যায় না বা শ্রেণী সমন্বয়ের মতো সরলীকরণ করা যায়না । সোমনাথ এর বা শ্যামল এর যে bourgeoise দের সাথে আপোষ , অর্থাৎ দুটো ভিন্ন অর্থে হলেও (একটা career এ নিজেকে আরো সুপ্রিতিষ্ঠিত করতে এবং আরেকটা জীবনযুদ্ধে বেঁচে থাকার তাগিদে ) আদতে যে একই সমাজব্যবস্থায় মধ্যবিত্তের করুন পরিণতি তাকেই সরাসরি প্রতিষ্ঠা করা হয় ।সুতরাং আপনার বক্ত্যবে ভুল কি ঠিক সেগুলো এইসব ছবির প্রেক্ষিতে বিচার হতে পারে , কিন্তু গুগাবাবা ? ওটা কষ্টকল্পিতই !
  • রে | 127.194.194.28 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ২৩:০৭367755
  • প্রাসঙ্গিকতাটাও থাক থিসিসটার
    ... the Indian filmmaker, Satyajit Ray, has represented a wide range of social and political power relationships in his films and depicted experiences of injustice and oppression of the certain groups, like the economically and socially disadvantaged, at the hands of the economically and socially privileged groups. Ray’s motivation for directing the films that demonstrate power are discussed later in this chapter. Examples in point are two films directed by Ray. In the film Hirak Rajar Deshe (The Kingdom of Diamond, 1980) the king of Hirak is a thinly disguised version of the modern political tyrant. His diamonds mines are manned with forced labor. His peasants are poverty stricken and cruelly taxed. In another film, Goopy Gayen Bagha Bayen (Adventures of Goopy and Bagha, 1965) a cruel prime minister tries to use his military power to expand his country territories through war. I argue that in no other film of Ray's does one find the different roles and interpretations of power relationships between humans, through kingship, class, caste, religion, gender, technology, and knowledge, as apparent and creatively depicted as in these two films. In both of these films, economically and socially disadvantaged groups are depicted as particularly powerless against imperialism, violence, and exploitation. The following chapters of the thesis analyze how metaphors and symbolism in these two films construct and critique power relationships.
  • dc | 160.107.215.27 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ২৩:১৩367756
  • কল্লোলবাবু আপনি আমার বক্তব্য সঠিক বোঝেন নি বা চেষ্টা করেননি । এইসব monsieur verdoux প্রসঙ্গের অবতারণা করা অর্থহীন , যেমন আপনার সাথে এই নিয়ে কথা বলা !
  • dc | 160.107.215.27 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ২৩:১৬367757
  • http://kuscholarworks.ku.edu/dspace/bitstream/1808/6006/1/Banerjee_ku_
    0099M_10685_DATA_1.pdf
    আর একটা পিডিএফ দিলাম। এটাও পড়বেন। দেব ব্যানার্জি। ২০০৯
    POWERFUL AND POWERLESS: POWER RELATIONS IN SATYAJIT RAY’S FILMS
    উচ্চমানের গঞ্জিকা ! ওসব খেতে পারিনা , ঋত্বিকের ভাষায় 'লোম পুড়ে যাবে'!
  • T | 131.6.68.127 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ২৩:৩১367758
  • এহ বড্ড বাজে লিখেছে থিসিসটা। প্রতিপাদ্যই বা কি। ক্ষমতাবান এবং ক্ষমতাহীন একদলের ইন্টার অ্যাকশন? এই ট্রিভিয়াল জিনিসপত্তর নিয়ে থিসিস লেখারই বা কি আছে। এতো কমেন্ট্রি মতন হয়েছে আর বারে বারে ফুকো কি বলে গ্যাচেন। সেভেন্টিন্থ, এইটিন্থ এবং নাইন্টিন্থ সেঞ্চুরীর বাংলার ইতিহাস না পড়ে এইসব হয় নাকি। ধুস।
  • dc | 160.107.215.27 | ২৩ জুলাই ২০১৭ ২৩:৩৯367760
  • সেটা হতে পারে কিন্তু মূল শত্রু যে 'হাল্লার মন্ত্রী' সেটা অন্তত উনি চিহ্নিত করেছেন যেটা কল্লোলবাবু গত ৫০ বছরেও পারেননি !
    " In another film,
    Goopy Gayen Bagha Bayen (Adventures of Goopy and Bagha, 1965) a cruel prime minister tries
    to use his military power to expand his country territories through war. "
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন