এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  সিনেমা

  • গুপি গাইন বাঘা বাইন নিয়ে বাৎচিত

    Arnab913 লেখকের গ্রাহক হোন
    সিনেমা | ১৩ জুলাই ২০১৭ | ৪৭৩০৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • sinfaut | 52.106.125.2 | ২৬ জুলাই ২০১৭ ১০:৩৮367861
  • যাহ। আপনাকে কোথায় বললাম।
  • রে | 69.160.210.3 | ২৬ জুলাই ২০১৭ ১৬:৪৫367862
  • Wed, 14 May, 2014 10:53:33 AM http://www.natunbarta.com

    ষড়যন্ত্রীমশাই থেমে থাক!

    শাম্তনু চক্রবর্তী

    কানু কাইনের ছেলে গুপীনাথ ঘাড়ে গদার মতো তানপুরাখানা নিয়ে গাঁয়ের আলপথ ধরে হেঁটে আসতে আসতে যখন ফ্রিজ হয়ে গেল, তখনও অবধি পাবলিকের ঠিক জানকারি ছিল না, ব্যাপারটা কী হতে যাচ্ছে! সুকুমার রায়ের ছেলে, উপেন্দ্রকিশোরের নাতি সত্যজিৎ ততদিনে বাঙালি সংস্কৃতির আকাশে রীতিমতো তারকা-আইকন৷ তিনিও সেই সব হাতে গোনা বিরল বাঙালি জিনিয়াসদের একজন, যারা এই দুখিনী বাংলার পোড়া ২২ গজে ব্যাটিং করলেও, তাদের প্রতিভার ব্যাট-ঠিকরানো ছক্কার ঘায়ে অনেক রক্ষণশীল বিলিতি গুমোরের কাচ-ফাচ ভেঙে চৌচির হয়েছে৷ ততদিনে সত্যজিৎ তার ‘মাস্টারপিস’গুলোর অধিকাংশই বানিয়ে ফেলেছেন! কান, ভেনিস, কার্লোভিভ্যারি, বার্লিন-সহ দেশ-বিদেশের নানা পুরস্কার তার ভাড়াটে বাড়ির আলমারির তাকে উঠেছে৷ সেই সত্যজিৎ, ৫৫ বছর আগে তার ঠাকুরদার লেখা একটা আজগুবি গল্প থেকে আধা-রূপকথা গোছের কিছু একটা করেছেন, যা হোক তবু বংশের মুখ রেখে ছোটদের জন্য কিছু একটা করলেন– এরকম একটা মন নিয়েই বাঙালি সপরিবারে দেখতে গিয়েছিলেন ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’৷ সেই ৬৯ সালের মে মাসে৷

    বৈশাখ মাসের গরমের মতোই বাংলার রাজনীতির তাপমাত্রাও তখন ভয়ানক চড়া! ৬৬-র খাদ্য আন্দোলনে প্রফুল্ল সেন সরকার গুলি চালাল৷ তার প্রতিবাদে কলকাতার রাস্তায় মৌনমিছিলে হাঁটলেন সত্যজিৎ রায়ও৷ তারপর প্রথম যুক্তফ্রন্ট, নকশালবাড়িতে কৃষক হত্যা, কমিউনিস্ট পার্টিতে আবার ভাঙন, বাংলার মসনদে আর একবার প্রফুল্ল ঘোষ, বাতাসে বারুদের গন্ধ, রাজপথে তরুণ লাশ৷ সীমাম্তের ওপারে, তখনকার পূর্ব পাকিস্তানেও মিলিটারি জুন্টার মুখোমুখি বাংলাভাষী মানুষের স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হব হব করছে৷ এই অবস্হায় পশ্চিমবাংলার টালমাটাল রাজনীতির দরিয়ায় দ্বিতীয় দফায় দাঁড় বাইছে যুক্তফ্রন্ট সরকার৷ ক্ষণে ক্ষণে তরীখানি উল্টে যাওয়ার ঘোর অনিশ্চয়তা! এমনকি অনিশ্চয়তা, ভাঙন, স্বার্থের দলবাজি, ঠোকাঠুকি, সঙঘাত তখন টালিগঞ্জেও৷ একদল প্রযোজক-পরিবেশক-প্রদর্শকের বয়কটের চাপে সত্যজিৎদের মতো আর একদল একঘরে৷ এই সংরক্ষণ কমিটির চোখরাঙানিতে ভড়কে গিয়ে গুপী-বাঘা সিনেমা হল অবধি পৌঁছতে পারবে কিনা তাই নিয়েও টেনশন, টানাপোড়েন৷ যাই হোক, শেষ অবধি যুক্তফ্রন্ট সরকার, তাদের সমর্থক সিনেমা হলের শ্রমিক সংগঠন, এবং টালিগঞ্জের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কিছু মানুষজনের উদ্যোগ-আয়োজনে ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ মুক্তি পেল৷ আর ওই ফ্রিজ শট থেকে হাত-পা ঝেড়ে উঠে গুপী যখন ফের হাঁটতে শুরু করল, তখন গুপীর সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতেই বাংলা ছবি, ভারতের ছবি, গোটা পৃথিবীর ছবি, এমন একটা দুনিয়ায় ঢুকে পড়ে, সত্যজিতের আগে যার চাবি কেউ কখনও খুঁজে পাননি!

    মোরা বাংলাদেশের থেকে এলাম....৷

    জীবনের প্রথম ছবি থেকেই সত্যজিতের সিনেমায় অনেকবার বাংলার গ্রাম এসেছে৷ গ্রামের মাটির বাড়ি, খড়ের চাল, নকশি কাঁথা, পুন্যিপুকুর ব্রত, লক্ষ্মীর পট, সব এসেছে৷ বাংলার সেই গ্রাম, সেই গ্রামীণ বাঙালি মধ্যবিত্তের জীবন, তাদের কষ্ট-সুখ-প্রেম-কান্না, এসব বুঝতে ইউরোপ-আমেরিকার কখনও অসুবিধে হয়নি৷ গ্রাম্য ডোবায় জল-ফড়িংয়ের নাচে তারা লিরিক্যাল কবিতা খুঁজে পেয়েছেন৷ কিন্তু ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ নিয়ে সত্যজিৎ-ভক্ত পশ্চিমি মিডিয়ার অস্বস্তি-উসখুস চাপা থাকেনি৷ কারও মনে হয়েছে ছেলেভুলোনো বেকার পণ্ডশ্রমে সত্যজিৎ-প্রতিভার খামোকা অপচয় হল! কেউ ছবির টেকনিক্যাল-দীনতায় অধোবদন হয়েছেন৷ কেউ বলছেন, সত্যজিতের প্রতিটা ফ্রেমিং-এ যেভাবে টলটল করে কবিতা, এই রূপকথার রাজ্যে এসে, তা যেন বড্ডকেঠো, গদ্যময়! সব মিলিয়ে সত্যজিতের এই আচমকা ‘ছেলেমানুষি খামখেয়ালিপনা’য় পশ্চিম বেশ হতাশ৷ কেন এটা হল? যে ছবিটা নিয়ে ৪৫ বছর ধরেও বাঙালির আহ্লাদ আর আদিখ্যেতা ফুরোয় না, বরং দিনকে দিন আরও উপচে পড়ে– টানা ১০২ সপ্তাহ ধরে ২, ৫, ১০, ২৫, ৫০, ৭৫ বার দেখে-দেখেও আশ মেটে না– ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ক্ক-র আগে যে রেকর্ড আর কোনো বাংলা ছবি ভাঙতে পারে না– সত্যজিতের প্রিয় পশ্চিমি মিডিয়া সেই ছবিটা নিয়ে এতটা উদাসীন কী করে থাকতে পারে?

    তার কারণটা বোধহয় সত্যজিৎ নিজেই শুন্ডি রাজার দরবারে গানের জলসায় গুপীর লিরিকেই বলে দিয়েছেন ‘মোরা বাংলাদেশের থেকে এলাম’! এর আগে সত্যজিতের যে সব চরিত্র বাংলার গ্রাম থেকেই সরাসরি কান-ভেনিস-লন্ডন-প্যারিস-নিউ ইয়র্ক গেছে, তারা কেউ ঠিক গুপী-বাঘার মতো ‘সিধা-সাধা মাটির মানুষ’ ছিল না৷ তাদের কারও গ্রামের নাম আমলকী বা হরীতকী নয়! তারা কেউ ‘বটতলার বাবু’দের মতো পৈতেওয়ালা খাঁটি গ্রাম্য-এলিট বা ক্ষমতা ও মতলবের সুতো-নাচানো ভিলেজ-বসদের নিষ্ঠুর, হিংসুটে-বদমাইশির সামনাসামনি পড়েনি৷ তাদের কাউকে গ্রামের রাজা, জমিদার বা ফিউডাল-লর্ড ‘চেঁচাইছিলি কেনে’ বলে গাধার পিঠে চাপিয়ে, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে গাঁ থেকে দূর করে দেয়নি৷ শিক্ষিত, ব্রাহ্মণ, গ্রামীণ মধ্যবিত্ত হরিহর রায় অ্যান্ড ফ্যামিলির নিশ্চিন্দিপুর ছেড়ে স্বেচ্ছানির্বাসনের সঙ্গে পিছড়ে-বর্গের গেঁয়ো চাষা কানু কাইনের ছেলের গ্রাম থেকে নির্বাসিত হওয়ার কোনো তুলনাই চলে না৷

    স্বাধীনতার পরে এই বাংলার ইতিহাসের সবচেয়ে তুলকালাম সময়ে, যখন গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরার স্লোগান উঠছে– ঝকঝকে শহুরে এলিট পরিবারের ছেলেমেয়েরা বিপ্লবীয়ানার রোমান্টিক নেশায় কলকাতা ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছে– তখন গুগাবাবা-য় কী আশ্চর্য সারল্যে, ‘ছায়া সুনিবিড়, শাম্তির নীড়’ গ্রামবাংলা, চাষীবাসী গরিব বাংলা আধা-ফিউডাল সামাজিক পটে শ্রেণী-ভাগাভাগির চেহারাটা আঁকা হয়ে যায়৷ সেই সঙ্গে এই ছবিটাও পরিষ্কার হয়ে যায়, আধা-ফিউডাল এই গ্রাম-সমাজে ক্ষমতার পাল্লাটা কার দিকে ভারী, অম্ত্যজ কারা, আর শোষণের রূপটাই বা কী!

    সামম্ততন্ত্র থেকে উপনিবেশ অবধি বাঙালি-সমাজের এই ভাগ-যোগের চেহারাটা পরে আরও স্পষ্ট হয়েছে ভূতের নাচ-এর কোরিওগ্রাফিতে, তার কস্টিউম, মেকআপ আর ৪ রকম দক্ষিণী তালবাদ্য বা পারকাসন-এর নির্বাচনে৷ আমরা সে সবের মধ্যে ঢুকছি না৷ যে শোষণের প্রতিবাদ করে ৬৬-র খাদ্য আন্দোলন, ৬৭-র যুক্তফ্রন্ট বা তারও পরে নকশালবাড়ির ‘বসম্তের বজ্রনির্ঘোষ’, গুগাবাবা তারই রাজনৈতিক অ্যালিগরি, আমরা এরকম কিছুও বলছি না! আমরা শুধু ভাবছিলাম সত্যজিৎ এই ছবিতে কী এমন করলেন, যাতে তার গুণমুগ্ধ পশ্চিম ছবিটাকে বুঝতেই চাইল না! ভাবতে ভাবতেই আমাদের মনে হল, আসলে গুপী-বাঘার মতো গ্রাম্য বাঙালি যুবক পশ্চিম দুনিয়া আগে দেখেইনি৷ গ্রাম-মফস্বল থেকে আসা অপু কাব্যিক, রোমান্টিক, প্রকৃতিপ্রেমিক, কিন্তু কিছুতেই গ্রাম্য নয়৷ এমনকি যতটা বিশ্বপথিক, ততটা বাঙালিও নয়৷ এই জন্যেই ‘অপু’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ভীষণ ইচ্ছে থাকলেও সত্যজিৎ কিছুতেই তাকে গুপীর চরিত্রে নিতে চাননি৷ কারণ তার মনে হয়েছিল সৌমিত্রর নাগরিক-সফিস্টিকেশন গুপীর ওই হোঁচট-খাওয়া গ্রাম্য-ভ্যাবলা থতমত ভাবটাকে হয়ত ধরতে পারবে না! শুন্ডিদেশের রাজপ্রাসাদে ঘরের ভেতর ফোয়ারার জলে হাত ধুয়ে, কুলকুচি করে, সদ্য খাওয়া কলার খোসাটা ওই ফোয়ারার মধ্যেই ছুঁড়ে ফেলে গুপী-বাঘা যেমন বিন্দাস মুখ করে বেড়ায়, সত্যজিতের ছবির কোনো গ্রামীণ ভদ্রলোক এটা করতে পারত না৷

    আসলে এই প্রথম সত্যজিৎ পশ্চিম কী ভাববে বা ভাববে না, তার তোয়াক্কা না করেই লৌকিক বাংলা, তার হৃদয়, মন, তার গান, প্রাণ সবটাকে একটা জবর ফ্যান্টাসির মোড়কে নিয়ে এসেছিলেন৷ গুগাবাবা-র শিকড় বাংলাদেশের মর্মে৷ তার সংলাপে, কৌতুকে, সারল্যে, উচ্ছ্বাসে সেই লোকায়ত বাংলা– যার ঠিকানা নিশ্চিন্দিপুর থেকে অনেক দূরে৷ এই ছবির লিরিক-সংলাপ আসলে বাংলা ভাষার সেলিব্রেশন– দেওয়ালির রঙিন রোশনাই৷ ষাটের দশকের ওই সময়ে বাংলা থেকে পুঁজি, শিল্প, বিনিয়োগ, সম্পদ সব যখন ভাগলবা– বাকি ভারত এ রাজ্যকে বোমার কারখানা, জঙ্গি রাজনীতির আঁতুড়ঘর বলে দুচ্ছাই করছে, তখনই তো দূরদেশের এই রাজার সভায় সত্যজিৎ হাজির করে দিচ্ছেন লোক-বাংলার দুই সাংস্কৃতিক ব্র্যান্ড-দূতকে! যারা রাজাকে চ্যালেঞ্জ ঠুকে বলতে পারবে–

    ‘ভাষা এমন কথা বলে,
    বোঝে রে সকলে–
    রাজা উঁচা-নীচা,
    ছোট-বড় সমান৷
    মোরা সেই ভাষাতেই
    করি গান...’

    গুপী-বাঘার পাওয়া ভূতের রাজার বর তো আসলে এই বাংলা ভাষারই ম্যাজিক, যা খারাপ লোকেদের ‘স্ট্যাচু’ করে দেয়৷ কুচকাওয়াজ শুরুর আগেই যুদ্ধ থামিয়ে দেয়৷ আরও আরও অনেক কিছু করে৷ সত্যজিৎ বলেছিলেন, সেগুলো নাকি তিনি অত কিছু ভেবে করেননি৷ হয়ত ভূতের রাজার বরেই, এমনি এমনিই সে-সব চিত্রনাট্যে ঘটে গেছে! আর লোকায়ত বাংলার সেই চিরায়ত ‘ম্যাজিক রিয়েলিজম’ পশ্চিমি সিনেমা-গর্বীরা বুঝতেই পারেনি!

    মিছে অস্ত্রশস্ত্র ধরে....৷

    সত্যজিৎ যতই বলুন তিনি ‘ভেবে-টেবে’ কিছু করেননি, আসলে ‘গুগাবাবা’ তিনি লৌকিক বাংলাদেশের গরিব কিন্তু আত্মমর্যাদার শিরদাঁড়াওয়ালা চাষীবাসী দুই যুবককে দিয়ে আম-জনতার স্বতঃস্ফূর্ততার রাজনীতি করিয়ে নিয়েছেন৷ এরা রাজনীতির ঘোরালো তত্ত্ব, গেরিলা যুদ্ধের স্ট্র্যাটেজি-ট্যাকটিস অত বোঝে না৷ কিন্তু মানুষের টনটনে মান আর হুঁশ দিয়ে ঠিক সময়ের ঠিক মানবিক কর্তব্যটা মোক্ষম বুঝে নেয়৷ এই মান-হুঁশওয়ালা লোকেরাই ‘গুগাবাবা’র স্ক্রিপ্ট লেখা আর শুটিংয়ের সময়টায় প্যারিস কিংবা প্রাগের রাস্তায় চরম দক্ষিণ একনায়কী অথবা পরম বাম সমাজতান্ত্রিক সরকারের ট্যাঙ্ক-বন্দুক-মেশিনগানের মোকাবিলা করছিল৷ সত্যজিতের ঘরের আরও কাছে ভিয়েতনাম, জাগ্রত মার্কিনি বিবেকের গণতান্ত্রিক কর্তব্যপরায়ণ নাপাম বোমার উদাসীন ‘মুক্ত’ আগুনে ঝলসে যেতে যেতেও প্রতিরোধ গড়ছিল আদিম হাল-চষা গুচ্ছের গেঁয়ো নিরস্ত্র জনতা৷ ‘গুগাবাবা’ বানাতে বসে, ঘরে- বাইরের এত কিছু ঘটে যাওয়া সংবাদপ্রবাহ সত্যজিৎকে একটু নাড়া দেয়নি হয়ত!

    অথচ গুগাবাবা-র একটা-দুটো ছবির পরেই ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র নায়ক সিদ্ধার্থ কিন্তু গোমড়া-সিরিয়াস, হাড়-পেশাদার ঘোর-কর্পোরেট ইন্টারভিউ বোর্ডের মুখের ওপর বলে দিয়ে আসে, চাঁদের মাটিতে মানুষের পা রাখার চেয়েও তাকে ঢের বেশি প্রাণিত করে ভিয়েতনামের নিরস্ত্র চাষীদের লড়াই৷

    সত্যজিৎ ভেবে, স্কিম করে কিছু করেননি! বংশী চন্দ্রগুপ্ত আর তার যৌথ-ভাবনার সেট ডিজাইন, কস্টিউম, রাজনীতির ভাল-খারাপ, কালো-সাদার স্বরূপ কী আশ্চর্য সহজ স্বাভাবিকতায় দর্শকের কাছে হাট হয়ে যায়৷ শুন্ডি রাজ্যের সবকিছুতেই উজ্জ্বল সাদা যেমন মানবিক প্রজাতন্ত্রের গ্রহণযোগ্য চেহারাটা তুলে ধরে, তেমনি হাল্লা রাজ্যে ফ্যাসিবাদী ধূসর আঁধার যেন হাঁ করে গিলতে আসে৷ হাল্লা রাজ্যের দুর্গ, প্রাসাদ, ষড়যন্ত্রী মন্ত্রীমশায়ের ঘর, সিংহাসন, পোশাকের ডিজাইন-এ ছড়িয়ে থাকা মৃত পশুদের মাথা, ছাল যেন নাৎসি বন্দী শিবিরের মৃত্যুময় ঘিনঘিনে গুমোটটাকে আরও পাকিয়ে তোলে৷ মন্ত্রীর সিংহাসনের পেছনে বাইসনের আস্ত মাথা, রাজামশাইয়ের গায়ে চিতাবাঘের ছালের আংরাখা, জাদুকর বরফির ল্যাবরেটরিতে খাঁচায় আটকানো অদ্ভুত সব জন্তু, হাল্লার রাজদরবারে কার্ডবোর্ডের ডামির গায়ে বর্শা গেঁথে রাজা-মন্ত্রী যুদ্ধু-প্র্যাকটিস– সব কিছু থেকেই ছিটকে ওঠা, ঠিকরে পড়া ভায়োলেন্স, দর্শককে ভাবতেই সময় দেয় না৷ শুধু শেষ দৃশ্যটুকু ছাড়া এ ছবি পুরোটাই সাদা-কালো৷

    কারণ ‘ইচ্ছে করে’ না করলেও সত্যজিৎ এখানে রাজনীতির নানা রঙ, শেডস, প্যাটার্ন তৈরি করে ফেলেছেন৷ ক্ষমতার দরবারি রাজনীতিতে নেহাত ‘আউটসাইডার’ গুপী-বাঘা যুদ্ধ থামানোর অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে তার ভেতর ঢুকে পড়েও অবশ্য ভ্যাবাচ্যাকা খায় না৷ বরং সাধারণ মানুষের চিরকেলে তুখোড় টনটনে সজাগ ‘কমন সেন্স’ দিয়ে তারা হাল্লায় ঘটতে-চলা ‘বিচিত্র কাণ্ডকারখানা’ বুঝে ফেলে৷ ওদের রকমসকম জানতেও তাদের আর কিছু বাকি থাকে না৷ তারা ‘যুদ্ধবাজ’ রাজার একলা গোপন চোখের জল দেখে ফেলে৷ দেশের সব খাবার, সব সম্পদ নিজের পেটে চালান করা ভুঁড়িওয়ালা মন্ত্রীমশাইয়ের ‘ভুরুকুটি’-তে তারা ফ্যাসিস্ট নায়কের তম্বি আর প্রতাপ বুঝে ফেলে! এবং দম্ভ আর প্রতাপের সেই জয়ঢাক কীভাবে ফাঁসিয়ে দেওয়া যায়, তার তড়িকা বের করতেও গুগাবাবার সময় বেশি লাগে না৷ কারণ ফ্যাসিবাদকে একমাত্র হারাতে পারে যে মানবতার ম্যাজিক, সে তো তাদের গলার সুরে, গানের ভাষায়৷ নিরন্ন সেনাবাহিনীর সাম্রাজ্য জয়ের অভিযানকে তারা এক পলকে ভুখা মিছিল বানিয়ে দিতে পারে৷ খাবারের সামনে ‘হাজারে হাজারে হাতিয়ার’-উট-কাটাকাটি- জখম-হত্যা-রক্ত-বীরত্ব সব ফিকে করে দিতে পারে৷

    ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ অবোধ শিশুদের জন্য রূপকথার গল্প৷ তবু সেখানে মন্ত্রীমশাইয়ের মুখে এমন সংলাপ থাকে– প্রজারা যা চায়, সেটা যদি না বলে তাহলে সেটা পাওয়ার পথ বন্ধ করা যায় কি? এখানে মন্ত্রীমশাই কিন্তু আর শুধু ফ্যাসিবাদী একনায়ক থাকছেন না৷ প্রজাদের মুখে কুলুপ আঁটার বদলে তিনি শুন্ডির বোবা প্রজাদের বাকস্বাধীনতা দিতে চাইছেন৷ কারণ কথা ফুটলেই দাবি ফুটবে৷ আর দাবি ফুটলেই সে দাবি, দাবিয়ে রাখার পথও বের করা যাবে৷ ফ্যাসিস্টদের পাশেই এখানে গণতন্ত্রের ভেকধরা ক্ষমতার কারবারিদের মুখও কি দেখা যাচ্ছে না! কিন্তু সত্যিই তো সত্যজিৎ কোনো ‘রাজনৈতিক’ সিনেমা বানাচ্ছেন না! তার গানের লিরিক ‘ও মন্ত্রীমশাই, ষড়যন্ত্রীমশাই’ এদেশের সমস্ত দুর্নীতিবাজ রাজ-নেতাদের গালে চিরকালের চুনকালি-লেপা, দুয়ো দেওয়া স্লোগান হয়ে গেল– তবুও না! তার গুপী পৃথিবীর সবকালের, সবচেয়ে সরল, অমোঘ যুদ্ধবিরোধী বাণীটা গাইল– ‘তোরা যুদ্ধ করে করবি কী তা বল?’– তবু ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ যুদ্ধবিরোধী ছবি নয়! না হোক গে৷ তবু আমরা জানব, গুপী-বাঘা আমাদের এই আম-জনতার ভিড়েই কোথাও আছে৷ যে-কোনো যুদ্ধ থামানোর, যে-কোনো বদ ষড়যন্ত্রের দফারফা করার ম্যাজিক নিয়েই আছে৷ হয়ত এই মুহূর্তে তারা কোথাও ভোটের লাইনেই দাঁড়িয়ে আছে৷ তাদের আঙুলে লাগানো ভোটের কালিতেই হয়ত ঘটে যেতে পারে কোনো ম্যাজিক, যা আমরা এখনও ভাবতেই পারছি না৷ কারণ আমরা এটুকু তো জানি, ক্ষমতা যদি কোথাও তেড়িবেড়ি করে, অহঙ্কারী প্রচারের বেলুন ফুলিয়ে, নিজেকে মানুষের শক্তির চেয়েও বড় ভাবতে থাকে, তাহলে সে গুজরাটেই হোক কিংবা দিল্লিতে, ওই বেলুনের হাওয়াটুকু বের করে দিতে গুগাবাবা ঠিক সেখানে পৌঁছে যাবে৷ হ্যাঁ, ৪৫ বছর পরেও যাবে! সুতরাং সাধু-সাজা অসাধুরা সাবধান! গুপী-বাঘা কাছেই আছে৷

    তোরা যুদ্ধ করে করবি কী তা বল
    দেশে দেশে হাল্লারাজার সেনাদের থামাতে গুপী-বাঘা এই মুহূর্তে কোথায় কোথায় যেতে পারে৷

    ১৷ আফগানিস্তান৷ পশ্চিমি সেনাবাহিনী ফিরে যাওয়ার মুখে গোটা দেশ এখন কারজাইয়ের দুর্বল সরকার আর প্রবল তালিবানদের নতুন করে রক্তাক্ত যুদ্ধের সামনাসামনি৷

    ২৷ সিরিয়া৷ বশির অল আসাদের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের গৃহযুদ্ধ চলছেই৷ মৃত্যু হচ্ছে প্রচুর নারী-শিশুর৷ দু’তরফেই একে অন্যের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ আনছে৷

    ৩৷ ইউক্রেন৷ রাশিয়াপম্হী আর রাশিয়া-বিরোধীদের ভয়ানক সঙঘাতে গোটা দেশ নতুন করে গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি৷ যেটা নতুন করে ঘনিয়ে আনতে পারে দুই সুপার পাওয়ারের ঠান্ডাযুদ্ধের পুরনো মেঘ৷

    ৪৷ এবং অবশ্যই গাজা স্ট্রিপ৷ ইজরায়েল আর প্যালেস্টাইনের প্রকাশ্য ও চোরাগোপ্তা যুদ্ধের বয়স যেখানে প্রায় ৭০ ছুঁই ছুঁই৷ আর শাম্তির কোনো প্রচেষ্টাই যেখানে শেষ অবধি হালে পানি পায় না!

    এ ছাড়াও গুপী-বাঘা অবশ্যই অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে যেতে পারে ইরাক, লিবিয়া, জিম্বাবোয়ে, নাইজেরিয়া, চেচনিয়া, এমনকি ভূস্বর্গ– কাশ্মীরে৷ ভারত-পাকিস্তানের ছায়াযুদ্ধের বয়সও তো সেখানে ৬৫ পেরোল৷

    http://www.natunbarta.com/arts/2014/05/14/81656/%E0%A6%B7%E0%A7%9C%E0%A6%AF%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A6%AE%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%87+%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%AE%E0%A7%87+%E0%A6%A5%E0%A6%BE%E0%A6%95!
  • কল্লোল | 233.227.11.92 | ২৬ জুলাই ২০১৭ ১৭:১৯367863
  • Name: sinfaut IP Address : 123.193.137.141 (*) Date:25 Jul 2017 -- 08:33 PM
    গুগাবার ভূতের নেত্যকে ক্লাস এর ধারণা দিয়ে দেখা মানে পুরো ফিল্মটাকে ক্লাস স্ট্রাগল/কোলাবরেশনের প্রেক্ষিতে দেখা, এমন এক্স্ট্রিম ও অসৎ বিচার করেও কী ভালো তর্ক হয়?

    নাঃ আমায় অসৎ বলো নি, আমার বিচারকে অসৎ বলেছে। বুঝলাম না কেন?
    ====================================
    কে যেন লিখেছিলেন ঠাকুমার ঝুলিতে ক্লাস স্ট্রাগল আছে কি না।
    দেখুন ভাই ভালো-খারাপের দ্বন্দ্ব কোথাও থাকলে, তা ক্লাস কনফ্লিক্টেরই নানান রূপ। এ মহাপৃথিবীর কোন আখ্যানই শ্রেণী দ্বন্দ্বের ঊর্ধে নয়।
    অবশ্য এটা একটা মত। অন্য মতও আছে, একটা নয় নানা মত আছে।
  • cm | 127.247.99.83 | ২৬ জুলাই ২০১৭ ১৭:৩৭367864
  • কল্লোলদা এ কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। শ্রেণী দ্বন্দ্বের আওতায় অনেক কিছু আসে বটে তাবলে সব!
  • কল্লোল | 233.227.11.92 | ২৬ জুলাই ২০১৭ ১৮:১৫367865
  • সিএম। কিন্তু আমি তো বললামই এটা একটা মত মাত্র। এ বিষয়ে অন্য মতও আছে, সত্য বলতে কি অন্য নানা মত আছে। আমি আমার বিশ্বাস থেকে বললাম। কিন্তু আমি এও বিশ্বাস করি কোন মতই শাশ্বত বা স্বতঃসিদ্ধ নয়।
  • cm | 127.247.98.151 | ২৬ জুলাই ২০১৭ ১৮:৪৫367866
  • আপনার কানের দোরে বেসুরো গানবাজালে কি তা ভালো না খারাপ? কিন্তু তাকে কি শ্রেণীদ্বন্দ্ব বলা যায়? অবশ্যই এ নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই বেশিরভাগ দ্বন্দ্বই শ্রেণীদ্বন্দ্বের প্রকাশ।

    যে প্রশ্ন আমায় ভাবাচ্ছে তা হল যদি আপনার সাথে একমত হয়ে ধরে নিই যে সিনেমাগুলোতে শ্রেণী সমন্বয়ের কথাই মূল প্রতিপাদ্য তাহলে এদের জনপ্রিয়তা কি বলে দেয়না যে জনতার এক বৃহত্তর অংশ সেদিকেই ঝুঁকে রয়েছে? এটা মানতে মন চায়না।
  • T | 131.6.68.127 | ২৬ জুলাই ২০১৭ ১৯:২১367867
  • ব্যাপার দেখে মনে হচ্ছে যেন স্বয়ং গণিতজ্ঞ ফার্মা আরামকেদারায় বসে বই পড়চেন। ক্লাস কোলাবরেশন চাইলেই প্রমাণ করে দিতে পারি কিন্তু তার জন্য মার্জিনটা বড্ড কম। :)
  • cm | 127.247.98.151 | ২৬ জুলাই ২০১৭ ১৯:২৫367868
  • না না আমরা ক্লাস কোলাবোরেশন ধরে কন্ট্রাডিকশনের পথে এগোচ্ছি। জনপ্রিয়তা প্রমাণিত এখন ক্লাস কোলাবোরেশন ধরলেই কন্ট্রাডিকশন।
  • dc | 24.99.45.230 | ২৬ জুলাই ২০১৭ ২১:৪৫367871
  • রে বাবু

    ওই কুকুরের দৃশ্যটার অমার্ক্সিয় ব্যাখ্যা যেটা হতে পারে সেটা অনেকটা এই যে যেরকম কোনো ভোজবাড়িতে সচরাচর কুকুরদের একটা জটলা দেখা যায় এখানেও সেইরকম , কুকুরটা একটা মহাভোজের গন্ধে এসে হাজির হয়েছে , একটা সহজ বাস্তব চিত্রায়ন ! আর গুপির কুকুরটাকে খাবারের অংশ ভাগ দেয়া থেকে দুটো জিনিস মনে হতে পারে,যে সে বাঘার মতো অত খাইয়ে লোক নয় আর তার মধ্যে খানিকটা স্বাভাবিক ঔদার্য আছে ।

    এর মার্ক্সিয় ব্যাখ্যাটা অবশ্য আমার জানা নেই !

    কিন্তু আপনার কাছে আমার একটা রিকোয়েস্ট আছে , সেটা হচ্ছে যে ছবিতে অনেকরকম ইন্সট্রুমেন্টের যে ব্যবহার আছে তার মধ্যে তিনটি ওয়েস্টার্ন পার্কাশন বিশেষ করে যা আমি identify করতে পারছিনা বা জানা নেই । সেগুলো হলো xylophone , trombone , vivraphone । আপনার ওই পিডিএফ এও এর উল্লেখ আছে । এগুলোর উপর কিছু আলোকপাত কি করা সম্ভব আপনার পক্ষে ? কোনো লিংক দিয়ে বা লিখে হোক ? খুব দুরূহ ব্যাপার হতে পারে যদিও তবুও আপনার ওপর এই ব্যাপারে ভরসা রাখা যেতে পারে । বা এখানে অন্য কেউ ও যদি কিছু জানামতে পারেন তো স্বাগত ।
  • dc | 24.99.45.230 | ২৬ জুলাই ২০১৭ ২১:৪৫367869
  • রে বাবু

    ওই কুকুরের দৃশ্যটার অমার্ক্সিয় ব্যাখ্যা যেটা হতে পারে সেটা অনেকটা এই যে যেরকম কোনো ভোজবাড়িতে সচরাচর কুকুরদের একটা জটলা দেখা যায় এখানেও সেইরকম , কুকুরটা একটা মহাভোজের গন্ধে এসে হাজির হয়েছে , একটা সহজ বাস্তব চিত্রায়ন ! আর গুপির কুকুরটাকে খাবারের অংশ ভাগ দেয়া থেকে দুটো জিনিস মনে হতে পারে,যে সে বাঘার মতো অত খাইয়ে লোক নয় আর তার মধ্যে খানিকটা স্বাভাবিক ঔদার্য আছে ।

    এর মার্ক্সিয় ব্যাখ্যাটা অবশ্য আমার জানা নেই !

    কিন্তু আপনার কাছে আমার একটা রিকোয়েস্ট আছে , সেটা হচ্ছে যে ছবিতে অনেকরকম ইন্সট্রুমেন্টের যে ব্যবহার আছে তার মধ্যে তিনটি ওয়েস্টার্ন পার্কাশন বিশেষ করে যা আমি identify করতে পারছিনা বা জানা নেই । সেগুলো হলো xylophone , trombone , vivraphone । আপনার ওই পিডিএফ এও এর উল্লেখ আছে । এগুলোর উপর কিছু আলোকপাত কি করা সম্ভব আপনার পক্ষে ? কোনো লিংক দিয়ে বা লিখে হোক ? খুব দুরূহ ব্যাপার হতে পারে যদিও তবুও আপনার ওপর এই ব্যাপারে ভরসা রাখা যেতে পারে । বা এখানে অন্য কেউ ও যদি কিছু জানামতে পারেন তো স্বাগত ।
  • কল্লোল | 37.59.108.23 | ২৬ জুলাই ২০১৭ ২১:৫২367872
  • সিএম। দ্যাখো ছবিটা শ্রেণী সমন্বয়ের কথা বলে - এটা আমার মত। অন্য মত আছে, আছেই। কোন মতই স্বতঃসিদ্ধ নয়। তা যদি মেনে নাও তো সমস্যা নেই। যিনি এই মতে বিশ্বাস করেন না তিনিও দেখবেন। একটা মহৎ শিল্পের এটাই গুণ, তাকে নানাভাবে ব্যখ্যা করা যায়। নানা দিক থেকে দেখা যায়।
    এখন কথা হলো শ্রেণী সমন্বয়ের গপ্পো মহৎ শিল্প হতে পারে কি না। একশোবার পারে। অ্যানিমেল ফার্ম, ক্লাব অফ দ্য কুইয়ার ট্রেডস, রক্তকরবী, পলাতক, ম্যাকেনাজ গোল্ড এগুলো মার্কসীয় শিল্পবোধে বিচার করলে নিঃসন্দেহে খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে নয়।তা বলে এগুলোর মহৎ শিল্প হওয়া আটকায় না।
    আর গুগাবাবা? জনপ্রিয়তার পক্ষে ছেঁদো যুক্তি দেওয়া যায় - কাদের কাছে জনপ্রিয়? শিক্ষিত মধ্যবিত্তের কাছে। কিন্তু এটি খুব খুব খুবই ছেঁদো যুক্তি। আমার বিশ্বাস গুগাবাবা যদি ক্ষেতমজুরের বা খনি শ্রমিকের সন্তানদেরও দেখানো হয়, তাদেরও ভালো লাগবে। কেন? সত্যজিত এমন একটা বিষয়ে হাত দিয়ে ফেলেছেন যা তামাম দুনিয়ার দরিদ্রদের একচেটিয়া - ক্ষিদে। হাতেহাতে তালি দিলেই খাবার - আহা এমনটা যদি সত্যি হতো!! এ ভালো না লেগে যায়?
  • sinfaut | 52.106.116.23 | ২৭ জুলাই ২০১৭ ১৪:৫৩367873
  • কল্লোল দা,

    "গুগাবার ভূতের নেত্যকে ক্লাস এর ধারণা দিয়ে দেখা মানে পুরো ফিল্মটাকে ক্লাস স্ট্রাগল/কোলাবরেশনের প্রেক্ষিতে দেখা, এমন এক্স্ট্রিম ও অসৎ বিচার করেও কী ভালো তর্ক হয়? "
    লিখেছিলাম, একটা গানকে কেউ ক্লাস কোলাবরেশন/ স্ট্রাগলের নিরিখে দেখছে মানে সে পুরো ফিল্মটাকে সেই নিরিখেই দেখছে, এই এক্সট্রিম অব্স্থানটা অসৎ। যেটা ডিসির অব্স্থান ছিল। আপনাকে বা আপনার বিচারকে অসৎ বলিনি। আরেকবার বললাম। বোধহয় বাক্যগঠনটা ঠিক হয়নি।
  • dc | 121.93.226.242 | ২৭ জুলাই ২০১৭ ১৫:৩৮367874
  • sinfaut ইটা আপনার জন্য,তারপর কে সৎ কে অসৎ সেটা গৌণ বিষয়

    Name: কল্লোল

    IP Address : 233.186.195.129 (*) Date:17 Jul 2017 -- 06:41 PM

    গুগাবাবা সিরিজ নিয়ে বলা যায় - টিপিক্যাল রবীন্দ্র রাজনৈতিক ভাবনা যার প্রকাশ ঘটেছে রক্তকরবীতে। মার্কসিস্ট তত্ত্ব মতে শ্রেণী সমন্বয়ের রাজনীতি।
  • T | 165.69.109.92 | ২৭ জুলাই ২০১৭ ১৫:৪৪367875
  • গুগাবাবা কেন ক্লাস কোলাবরেশন সে বিষয়ে প্রশ্ন রেখে পাওয়া গ্যাচে মোটে তিনটে লাইন। :)
  • b | 135.20.82.164 | ২৭ জুলাই ২০১৭ ১৬:১৪367876
  • আমার আবার সিঙাড়া খেলেই চোঁয়া ঢেঁকুর ওঠে। সিঙাড়া খুব খারাপ। বর্বর্বুর্জোয়া খাদ্য।
  • dc | 116.203.183.133 | ২৭ জুলাই ২০১৭ ২০:০২367877
  • সেটা নির্ভর করছে কোত্থেকে কিনে খাওয়া হচ্ছে তার ওপর ! বলরাম , গাঙ্গুরাম হলে bourgeoise , নচেৎ নয় !
  • dc | 116.203.183.133 | ২৭ জুলাই ২০১৭ ২০:১০367878
  • T কে, যে তিনটে লাইন পাওয়া গেছে তাতেও বিস্তর গোলমাল আছে ! হাল্লার মন্ত্রীর কোনো পরিবর্তন হয়নি উল্টে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেয়া হয়েছে আর উটের পায়ের আঘাতে আর উটের সোয়ারি সাধারণ সৈন্য ! অর্থাৎ সংগ্রাম বা মুটিনি পুরোপুরি বিদ্যমান ! উল্টো প্রমান দেয়া হলো ।
  • কল্লোল | 233.227.116.102 | ২৭ জুলাই ২০১৭ ২০:৪৭367879
  • Date:26 Jul 2017 -- 09:07 AM এই পোস্টে অমি লিখেছিলাম -

    হল্লার রাজা দুষ্ট - মন্ত্রীর ষড়যন্ত্রে। শুন্ডীর রাজা ভালো, নিজে নিজেই ভালো। হীরকের রাজা খারাপ - নিজে নিজেই খারাপ। পন্ডিত ও রাজ্যবাসী ভালো। ভালো আর খারাপের দ্বন্দ্বে ভালো জয়ী হয় কিন্তু খারাপকে শেষ করে নয়, খারাপকে ভালোয় পরিবর্তিত করে। তাই শুন্ডী-হাল্লা মিলে যান, হীরক রাজা নিজের মূর্তি ধূলায় মিশাতে দড়িতে টান মারেন এবং বলেন দড়ি ধরে মারো টান / রাজা হবে খান খান।
    এটা সত্যজিতের দর্শন সত্যজিত এবিষয়ে রবীন্দ্রানুসারী। রক্তকরবী, চার অধ্যায় সেখানেও একই ব্যাপার। যীশু যেমন বলেছিলেন - পাপকে ঘৃণা করো পাপীকে নয়।
    এটাকেই আমি শ্রেণী সমন্বয়ের দর্শন বলছি।
    এর মধ্যে জাজমেন্টাল হওয়ার কিছু নেই। এটা ওঁর মত। আমি ওঁর সাথে একমত নই।

    লেখাটা সম্ভবতঃ তিন লাইনের অল্প বেশী। এর চেয়ে বেশী কিছু বলার নেই আমার।

    তারও কিছু আগের পোস্টে ল্খেছিলাম - আমি মনে করি ক্ষমতায় যারা আছেন তারা ব্যক্তিগতভাবে সৎ কি অসৎ সেটা কোন বিষয়ই নয়। ক্ষমতায় থাকলে তারা ক্ষমতার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন না। মনমোহন-সোনিয়া-মোদী-বুদ্ধ-মমতা কেউ কখনই দড়ি ধরে টান মারবেন না। এটা আমার মত।

    কেউ যদি মনে করেন যে ক্ষমতা কখনো হৃদয় পরিবর্তন করে ক্ষমতাহীনের্দের সাথে একসারিতে এসে ক্ষমতার দড়ি ধরে টান লাগাবে - সেটা আমার মতে শ্রেণী সমন্বয়ের দর্শন। বিঃদ্রঃ এর কোন ভালো/খারাপ হয় না। প্রত্যকের নিজের নিজের মতে বিশ্বাস রাখার অধিকার আছে, কারুর ক্ষতি না করে।

    আমার যুক্তিগুলো গোটা গোটা করে সাজিয়ে দিলাম। এবার আপনাদের যুক্তিগুলো(মন্তব্য বা গালমন্দ নয়) শুনি।

    সিফোঁ। আমি শুধু ভূতের নেত্য নিয়ে কথা বলিনি। ভূতের নেত্যতে আলাদা করে কোন শ্রেণী সমন্বয় নেই, বরং শ্রেণীর মধ্যকার দ্বন্দ্বগুলোকেই দেখানো আছে। কিন্তু যে সমাধান গুগাবাবা ও হীরকে দেখানো হয়েছে, সেটাকেই আমি শ্রেণীসমন্বয় বলেছি। এটা কেন চরম ও অসত্য বুঝলাম না

    কেউ লিখেছেন - তাহলে কি পাপীকে ঘৃণা করবো পাপকে নয়।
    কাউকেই ঘৃণা করার কিছু নেই। পাপ/পাপী কোনটাই অ্যাবসল্যুট নয়। কেন পাপ? কেন পাপী ? নানান প্রশ্ন উঠতেই পারে। আজ যেটা পাপ, কাল সেটাই পূণ্য হয়ে যায়। এমনটা তো ঘটেই।
    কোন কিছুর সাত্ড়ে একমত না হলে তার প্রতিবাদ করাই যায়। নিজের মতটাও বলাই যায় - অন্যমতকে অসম্মান করে নয়।
  • lcm | 179.229.10.212 | ২৭ জুলাই ২০১৭ ২০:৫০367880
  • এই জন্য আমার বচ্চন ভালো লাগত, লাস সিনে কি ঠিসুম ঝাড়ত গুরু, নো স্কোপ ফর শ্রেণীসমন্বয়।
  • কল্লোল | 233.227.116.102 | ২৭ জুলাই ২০১৭ ২০:৫২367883
  • বাঃ ডিসি বলছেন -
    ট কে, যে তিনটে লাইন পাওয়া গেছে তাতেও বিস্তর গোলমাল আছে ! হাল্লার মন্ত্রীর কোনো পরিবর্তন হয়নি উল্টে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেয়া হয়েছে আর উটের পায়ের আঘাতে আর উটের সোয়ারি সাধারণ সৈন্য ! অর্থাৎ সংগ্রাম বা মুটিনি পুরোপুরি বিদ্যমান ! উল্টো প্রমান দেয়া হলো ।

    মানে গুগাবাবা একদম রাজনৈতিক ছবি, যাতে শ্রেণী সংগ্রামও আছে।
    বেশ বেশ!!
    তবে যে এতোকাল - নেহাৎ ফ্যান্টাসি, বাচ্চাদের ছবি, এতে কোন ক্লাস-টাস নাই বলে গলা ফাটাচ্ছিলেন!! তার বি হব্বে??
  • lcm | 179.229.10.212 | ২৭ জুলাই ২০১৭ ২১:৩৬367884
  • Cineaste ম্যাগাজিনে উদয়ন গুপ্ত-এ ইন্টারভিউ থেকে, সত্যজিৎ নিজে এব্যাপারে বেশ স্বচ্ছতা রেখেছেন -

    Cineaste: You have stayed away from major political statements.

    Ray: I have made political statements more clearly than anyone else, including Mrinal Sen. In 'The Middleman' I included a long conversation in which a Naxalite discusses the tasks ahead. He talks nonsense, he tells lies, but his very presence is significant. ...

    Cineaste: Given the political climate in India, is the filmmaker's role one of passive observer or activist?

    Ray: Have you seen 'Hirak Rajar Deshe' (The Kingdom of Diamonds)? There is a scene of a great clean-up where the poor people are driven away. That is a direct reflection of what happened in Delhi and other cities during Indira Gandhi's emergency. In a fantasy like 'The Kingdom of Diamonds', you can be forthright, but, if you are dealing with contemporary characters, you can be articulate only up to a point because of censorship. You simply cannot attack the party in power. It was tried in 'The Story of a Chair' and the entire film was destroyed. What can you do? You are aware of the problems and you deal with them, but you also know the limit, the constraints beyond which you just cannot go.
  • lcm | 179.229.10.212 | ২৭ জুলাই ২০১৭ ২১:৩৯367885
  • আর এইটা ছিল বেঙ্গল পলিটিক্যাল ক্রিটিক মহলের প্রধান অভিযোগ,

    Cineaste: Some people see that as an abdication of the filmmaker's social role. A number of critics, especially those in Bengal, feel that you aren't political enough, that you can go further, but that you just haven't tested your limits.

    Ray: No, I don't think I can go any further. It is very easy to attack certain targets like the establishment. You are attacking people who don't care. The establishment will remain totally untouched by what you are saying. So, what is the point? Film cannot change society. They never have. Show me a film that changed society or brought about any change.

    বেশ পরিষ্কার করেই বলে দিয়েছেন।

    https://www.jstor.org/stable/41686766
  • dc | 24.99.6.190 | ২৭ জুলাই ২০১৭ ২২:৩১367886
  • কল্লোলবাবু,
    হীরক রাজা যেহেতু বিষয় নয় তাই সেটা আলোচনার বাইরে রাখছি । শ্রেণী সংগ্রাম হোক বা সমন্বয় তার জন্য দুটো জিনিস লাগে বলে জানি । একটা শাসক আর একটা শোষিত । কনফ্লিক্ট বা সমন্বয় এদের কেন্দ্র করেই হতে পারে । 'গুগাবাবায়' শাসক এবং শোষিত বলতে যেটা স্পষ্ট উল্লেখ আছে সেটা হাল্লার রাজ্যে । সেখানে 'মন্ত্রী' মূল 'ষড়যন্ত্রী' । রাজা আসলে 'পাপেট' । এবার গল্পটায় আসুন । সেখানে হাল্লার মন্ত্রীর লক্ষ্য শুন্ডি রাজ্য জয় । সুতরাং শাসক শোষিত বিষয় টা এখানে গৌণ , যা হীরক রাজার গল্পে নয় । এবার গল্পের পরিণতি আবার আপনাকে স্মরণ করিয়ে দি । সেখানে মূল ষড়যন্ত্রীর কোনো মনের পরিবর্তন দেখানো হয়নি । যুদ্ধে যে পরাজয় সেটা হাল্লার রাজার পরাজয় নয় , হাল্লার মন্ত্রীর পরাজয় এবং হাল্লাবাসীর শোষক মন্ত্রীর হাত থেকে মুক্তি ! শুন্ডীর রাজার অকারণ যুদ্ধ থেকে মুক্তিলাভ এবং নিজের ভাই কে ফিরে পাওয়া । অর্থাৎ বক্তব্য এখানে পরিষ্কার , শিল্প সংস্কৃতির মাধ্যমে যুদ্ধবাজ রাজনীতি কে পরাস্ত করা , রাজ্যে অনাচার কে দূর করা। এখানে শ্রেণী সংগ্রাম, সমন্বয় এগুলো তাৎপর্যহীন বলেই মনে হয় ! এর খুব বাস্তব উদাহরণ দেয়া যেতে পারে সেসময় 'ভিয়েতনাম থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার । তার পেছনেও কিন্তু শক্তিধর গায়ক কবিদের একটা বড়ো ভূমিকা ছিল ( ডিলান, পিট্ সিগার , জোয়ান বায়েজ ইত্যাদি) । এবং এটা আশ্চর্য নয় যে তার পরোক্ষ প্রভাব যদি সত্যজিতের ওপর পড়ে থাকে ।
  • T | 190.255.241.43 | ২৭ জুলাই ২০১৭ ২৩:০৩367887
  • আরে ধীরে কল্লোলদা, ধীরে। শ্রেণী সংগ্রামের গল্পও বলিনি রাজনৈতিক ছবি কিনা তাও বলিনি। ভূতের নেত্যয় শ্রেণী সংগ্রামের হদিস পাই নি সেটুকুই বলেছি। এরম ছড়িয়ে ফেললে কি করে হবে। একটু ভেবে চিনতে লিখুন না ক্যানো ক্লাস কোলাবরেশন মনে করেন।
  • T | 131.6.68.127 | ২৭ জুলাই ২০১৭ ২৩:০৯367888
  • * শ্রেণী সংগ্রামের বা শ্রেণী সমন্বয়ের কোনোটারই
  • রে | 127.194.196.45 | ২৮ জুলাই ২০১৭ ০১:৪০367889
  • ভূতের নাচের ক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন। রায়বাবু সিনেমা বেড়োনোর এক বছর পর ইন্টারভিউতে বলেছেন ভুতের নাচের ভূতরা "অ্যাকচুয়ালি কতকগুলি ক্লাস অফ পিপল যারা অবভিয়াসলি বাংলাদেশে ছিল ... সাহেবরাতো ... বহু মরেছে অল্পবয়েসে আর কি ... " অর্থাৎ সাহেব ভূতের ক্লাস টা ফর্ম করছে বাংলাদেশে থাকাকালীন মরে গেছে এমন সাহেবদের নিয়ে। কিন্তু খেরোর খাতায় যখন সিনেমা বানাবার আগে ছবি এঁকে প্ল্যান করছেন, তখন দেখছি সাহেব ভূতেদের গ্রুপটা ফর্ম করছে - হেস্টিংস, ক্লাইভ, চালিয়াৎ ভূত, কর্ণওয়ালিস, সৈনিক ভূত ও নীলকর সাহেব। এবার হেস্টিংস আর ক্লাইভ কিন্তু ভারতে মারা যান নি।

    এখান থেকে দুটো সম্ভাবনার কথা মাথায় আসে। এক হেস্টিংস আর ক্লাইভ ভারতে মারা যায় নি সেটা ওঁর জানা ছিল না, বা খেয়াল ছিল না, খুবই রিমোট সম্ভাবনা। দুই, ইন্টারভিউ তে উনি ঠিক কথা বলেননি। হতে পারে প্রাথমিক ক্লাস ফর্মেশনের কারণটা ইন্টারভিউর সময় মনে ছিল না, বা বলতে চান নি। বলতে বা চাওয়ার কারণ হতে পারে নাচের ক্লাসটা যে অতটা ভেবে করা হয়েছে, সেটা পাবলিক করতে চান নি। তাহলে যতটা সহজ আনন্দে লোকে সিনেমাটা দেখছে তাতে একটা ব্যারিয়ার চলে আসবে। সিনেমাটা কমার্শিয়াল এর বদলে আর্ট ফিল্ম হিসেবে ট্রীটমেন্ট পেতে পারে। মুখে মুখে ছড়াতে পারে, দেখতে যতই সহজ লাগুক ভেতরে অনেক কঠিন জিনিস পোরা আছে। একেবারে এই জায়গা থেকেই, যেমন আমার মনে হয়, আসল কাজটার ৯০% মেরে দিয়ে (ঝাপসা করে গলিয়ে কাঁপিয়ে নেগেটিভ করে) বোধগম্য ১০% মাত্র সিনেমায় রেখেছেন। ইন্টারভিউর সময় তো আর জানতেন না ওঁর খেরোর খাতার স্কেচ এর ছবি মৃত্যুর পরে, ছেলের সৌজন্যে, ইন্টারভিউয়ের রিপ্রিন্টের পাশে ছেপে দেওয়া হবে!

    খেয়াল করে দেখলে কিন্তু সাহেব ক্লাসটার ফর্মেশনে ভারতে/বাংলায় দুশো বছরের ব্রিটিশ ইতিহাসের সাহেবদের কনসাইজ করা আছে। মায় তাদের হাতের বন্দুক, ছড়ি, তরোয়াল, মদের বোতল আর পোশাকের বিভিন্নতা মিলিয়ে টোটাল সাহেবি চালচ্চিত্রটাই।

    আরেকটা জিনিস হতে পারে, উনি যেরকম ডিটেলের প্রতি খুঁতখুঁতে ছিলেন সে জায়গা থেকে নাচের ডিটেলটা ওঁর নিজের চোখেই কম্প্রোমাইজ মতো ঠেকেছিল। হয়তো, কথার কথা বলছি, হেস্টিংস, ক্লাইভ, কর্ণওয়ালিস এর উপযুক্ত পোশাক পান নি, বা সেকেলে সাহেবি বন্দুক যোগাড় করা যায়নি, বা একই ভাবে কনিষ্ক যুগের রাজাদের পরিধান নিয়ে যথেষ্ট রিসার্চ করে উঠতে পারেননি - ইত্যাদি। এসব করার মতো সময় দেওয়া সম্ভবও ছিল না। যদিও এই জায়গাটা ঠিকঠাক করে তুলতে হলে প্রায় একটা পিরিয়ড পীস বানাবার প্রস্তুতি লাগে। ২৪ টা বিভিন্ন পিরিয়ডের চরিত্রকে বিশ্বাসযোগ্য ভাবে তুলে ধরা, তাদের সমস্ত প্রপস সমেত। তো সেই খামতিটা ঝাপসা করে ঢেকে দেওয়া হল। মোরওভার এত কান্ড করে লাভটা কি হত? একটা বাচ্চাদের সিনেমা অতিমাত্রায় ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ত।

    এর বাইরে গোটা সিনেমা জুড়ে, একজন সচেতন নির্দেশকের দিক থেকে স্বাভাবিকভাবেই নানা হিন্টস বা সাটল কমেন্ট থাকবে। হাল্লার প্রহরী/সান্ত্রীরা হবে সবাই রোগা দুবলা ভিসুয়ালি বুভুক্ষু। হীরকের রাজকোষ পাহারা দিচ্ছে যে সান্ত্রী তার তুলনায় দেখলে তো বোঝাই যায় এই চেহারা নির্বাচনের একটা মোটিফ রয়েছে। শুন্ডীর বাসিন্দাদের নির্বাক শৈল্পিক সৌন্দর্যের বিপ্রতীপে হাল্লার প্রহরীর দুর্বোধ্য কটুশ্রাব্য ক্যাঁওম্যাও। দূতের ভাষায় শুন্ডীতে সৈন্য নেই। তবে কী আছে? ফুল আছে, পাখি আছে, নদী আছে -- সেই ডায়লগ। এক যুদ্ধবাজ দেশে রাজা প্রজার সম্পর্কটা কতখানি শোষক শোষিতের যেখানে বুভুক্ষতম সেনাবাহিনীর সেনাপতি সর্বক্ষণ খাচ্ছে, শুন্ডীর বোবা জনতাকে সারাবার ওষুধ আবার হাল্লার ভিলেন মন্ত্রীর কাঙ্খিত - তার কারণ বর্ণনায় রাজনীতির এক আপাত ফ্যালাসির মোটিফ উন্মোচন।

    একটু চোখ খুলে খুঁজলে পিওর ফ্যান্টাসীর ভাজে খাঁজে এমন নানা কমেন্ট পাবেন রায়বাবুর যা আপাদমস্তক রাজনৈতিক। ক্ষুধার রাজনীতি, যুদ্ধের রাজনীতি, ক্ষমতার রাজনীতি, বিজ্ঞান বা বিশেষ জ্ঞান ব্যবহারের (পড়ুন টেকনোলজির) রাজনীতি।

    আর dc আমায় ঠিক কি করতে বললেন xylophone , trombone , vivraphone এগুলোর উপর কিছু আলোকপাত করতে বলে বুঝলাম না। আমি তো অনেকগুলো পিডিএফ নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পরে ঠিক অবিকল হাল্লার মন্ত্রীর মতো শুরু করেছিলাম বলে শুনলাম। তার কোনটার কথা বললেন? এখন সত্যজিৎ এর সংখ্যাটা? এগুলো সিনেমায় কোন কোন সিকোয়েন্সে ব্যবহার করা হয়েছে সেই ক্যুইজ করলেন আমায়? নাকি এগুলোর উইকি পেজের লিং চাইলেন?
  • রে | 127.194.196.45 | ২৮ জুলাই ২০১৭ ০১:৫১367890


  • ডিটেলিং টা লক্ষ্য করুন !!
  • রে | 127.194.196.45 | ২৮ জুলাই ২০১৭ ০২:০৩367891
  • রে | 127.194.196.45 | ২৮ জুলাই ২০১৭ ০৩:২৪367892
  • একটা মত বলে রাখি। ভূতের নাচ এ চারটে ক্লাস দেখানো হয়েছে এ নিয়ে কোনো ডাউট নেই। ক্লাসগুলোর নাম রায়বাবুর খাতা অনুযায়ী
    ১। রাজা বাদশা ইত্যাদি (পৌরাণিক আমল, বৌদ্ধযুগ, কনিষ্কের যুগ, মদ্রদেশীয়, মোগল সাধারণ)
    ২। চাষাভূষো ইত্যাদি (সাঁওতাল, চাষী, বাউল, মুসলমান, বেহারী দারোয়ান, লাঠিয়াল)
    ৩। সাহেব (হেস্টিংস, ক্লাইভ, চালিয়াৎ, কর্ণওয়ালিস, সৈনিক, নীলকর)
    ৪। নাড়ুগোপাল ইত্যাদি (বাবু-ইয়ার, বাবু-শহুরে, বানিয়া, পুরুত, হেড মাস্টার, পাদ্রী)

    দেখানো হয়েছে প্রতিটা ক্লাসের নিজেদের মধ্যে যথেষ্ট মারামারি হয়েছে। (যুগে যুগে। এটা বলছি কারণ ক্লাসগুলো বহু যুগের টাইম স্প্যান নিয়ে ফর্ম করা হয়েছে।) প্রতি গ্রুপের আইডেন্টিটিবাচক আলাদা ইন্সট্রুমেন্ট নেওয়া হয়েছে। এই অবধি সবার জানা।

    এবার যেটা এসেন্স, এই চারটে যন্ত্র কিন্তু মিলে একটা বিউটিফুল হারমোনি তৈরি করছে। অর্থাৎ এই চারটে শ্রেণী নিজেদের মধ্যে প্রভূত ক্যাচাল শুদ্ধু বহু যুগ ব্যাপী র‍্যাদার ইতিহাস ব্যাপী কো-এগজিস্টিং ইন হারমোনি। এর যদি ঐতিহাসিক সত্যতা থাকে, তবে তা শিক্ষনীয় - একে কল্লোলদার ভাষায় ক্লাস কোলাবরেশন বলা যায়, অর্থাৎ শ্রেণীগত এই বিভাজন ছিল, থাকবে, থাকাটা বাংলার সামাজিক ও হিস্টোরিকাল বিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইন্টার ক্লাস স্ট্রাগল নেই অথচ / কারণ ইন্ট্রা ক্লাস দ্বন্দ্ব রয়েছে। দ্বন্দ্ব সত্ত্বেও বৈচিত্রের মধ্যে একটা ঐক্য আছে, চারটে ক্লাসের মধ্যে ডিসটিংকট সেপারেশন থাকলেও দিনের শেষে তারা সহাবস্থান করছে - এটা মানুষের সমাজে হচ্ছে না, কিন্তু মিউজিকের মাধ্যমে ভূতেদের ক্ষেত্রে সহজেই হচ্ছে বলে রায়বাবু ইন্টারভিউতে বলেছে। এটা ভূতেদের থেকে শিক্ষণীয় হতে পারে বা এটাই ভবিতব্য বলে দেখানো হচ্ছে হতে পারে কিন্তু ক্লাস স্ট্রাগল ভাই এই অন্তর্দ্বন্দ্বের মধ্যে হওয়া সম্ভব নয়, সেটা ইউটোপিয়া অন্তত বাংলার প্রেক্ষাপটে। এভাবেও কেউ ভাবতেই পারে।
  • রে | 127.194.196.45 | ২৮ জুলাই ২০১৭ ০৪:০৩367894
  • BETH WATKINS
    http://www.bethlovesbollywood.com/2012/08/goopy-gyne-bagha-byne.html

    http://theculturalgutter.com/guest_star/using-fantasy-to-be-better-than-we-are-in-real-life.html

    Filmigeek
    As charming as Goopy and Bagha are, though, I have to wonder how Ray, who can be so extraordinarily sensitive to the way women are bound and restricted in his society, could tell a story in which there are no women whatsoever, except until the final scene in which the kings' daughters are gifted to our young heroes as prizes for their noble efforts. The omission is notable, and discomfiting. It's just one film, just one story, but it is also a beloved film aimed in the direction of children, with its uncomplicated fable of a story and playfully silly visual design. And the message little girls get with the pervasiveness and repetition of stories like these is that there is no place for them in the world at large, no need for them to travel to distant lands, no opportunity to influence world affairs, no role to play except to stand silent and bashful as their fathers hand them off to suitably big-hearted young men. Stories like these reinforce and perpetuate the very cultures that create the caged and dissatisfied Charulatas, the othered and dehumanized Devis that Ray exposes with such a deft hand in many of his other works.
    http://www.filmigeek.com/2015/09/goopy-gyne-bagha-byne-1969.html
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন