এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • গল্পের টই

    M
    অন্যান্য | ১৫ ডিসেম্বর ২০০৯ | ৯২৪৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • shrabani | 124.30.233.102 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৭:২৭424685
  • তুষার ঠিক আমাদের পাড়ার ছেলে ছিলনা, অন্য দুরের পাড়ার বাসিন্দা। আমাদের পাড়ার বিমানের সঙ্গে স্কুলে পড়ত, সেই সুত্রেই পাড়ার ঠেকে ওর আনাগোনা। স্কুলের পরে বিমান অন্য কলেজে চলে যায়, ততদিনে সবার সাথে তুষারের বহুত দোস্তি হয়ে গেছে। বিমান আড্ডায় অনিয়মিত হয়ে গেলেও তুষারের হাজিরা প্রায় প্রত্যেকদিনই পড়ে।
    একবার, তখন আমরা কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে, তুষার বেশ কিছুদিন আড্ডায় আসেনা। বিমানের কাছে ঠিকানা নিয়ে আমরা ওদের বাড়ী যাই। দেখি তুষার অসুস্থ, বিছানায়। ওর মা আর দাদার সঙ্গে কথা হয়, তুষারের জ্বর হয়েছে। এর কিছুদিন পরে তুষার আবার আসে তবে কেন জানি আগের মত অত অ্যাকটিভ লাগেনা। সবাই জিজ্ঞেস করলে হাসে, কিন্তু কি হয়েছে বলেনা। ইতিমধ্যে পরীক্ষা এসে যাওয়ায় সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। পড়ার চাপে আড্ডা ভুলি সবাই।
    পরীক্ষা শেষে আবার যখন সবাই এক হল ঠেকে, শুনলাম তুষার পরীক্ষা দেয়নি, সে অসুস্থ। দেবু একদিন তুষারের বাড়ি খোঁজ নিতে গেল, ফিরে এসে জানাল অসুখটা আসলে এক ধরনের ব্লাড ক্যানসার!
    তুষার কাউকে বলতে মানা করেছে, কিন্তু দেবু বাকীদের না জানিয়ে থাকতে পারেনা। আমরা স্তম্ভিত, তুষারের চোখে চশমা ছিল, হাই পাওয়ারের। এছাড়া তার সেরকম কোনো শারীরিক সমস্যা কখনো দেখিনি। কি করব, কি করা উচিৎ, এরকম নানা কথা সবমিলিয়ে একটা বড় প্রশ্নচিহ্ন হয়ে সারারাত আমাদের সবাইকেই বোধহয় তাড়া করেছিল।
    তাই পরদিন সকাল সকাল সবাই হাজির আড্ডায়। সবাই যখন পরিকল্পনা করছি তুষারের বাড়ি যাওয়ার তখনই তুষার এল। আমাদের সহানুভূতির জবাবে সে বলে, আমরা বন্ধুরা যেন তার সাথে স্বাভাবিক থাকি। তার অসুখের কথা চারিদিকে জানাজানি হলে লোকে তাকে করুণা করবে, এটা সে সহ্য করতে পারবেনা । ওর ভাবনাকে সম্মান জানিয়ে আমরা আর এ ব্যাপারে পারতপক্ষে আলোচনা করতাম না, অন্তত তুষারের সামনে তো নয়ই।

  • Nina | 64.56.33.254 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১০ ০১:১৩424686
  • গল্প আর শ্রাবণী --এই সোনায় সোহাগা --দেখেই বসে পড়লুম---কিন্তু এবার কি করি? যদি বৃষ্টি থেমে যায় শ্রাবণীর আকাশে:-((
    আসা যাওয়ার মাঝখানে-আমরা
    আটকে গেলাম ;-))

  • shrabani | 124.30.233.102 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১১:৪৫424687
  • এভাবেই চলছিল। তুষারের হাতে পয়সাকড়ি বেশী থাকতনা। অসুখের খরচ বহন করতে গিয়ে ওর বাড়িতেও বেশ টানাটানি। আমরা যে যেমন পারি সীমিত ক্ষমতার মধ্যে ওকে সাহায্য করতে চেষ্টা করি। আড্ডার চা খাবার, ঘোরাঘুরি এসবে তুষারকে একটুও শেয়ার করতে দিইনা।

    এভাবেই একদিন সবাই কলেজের গন্ডী পেরিয়ে যাই। কেউ চাকরির চেষ্টা করতে থাকে, কেউ বা যায় ইউনিভার্সিটীতে। তুষারও বিএসসি পাশ করে পরের বছর। ভালই রেজাল্ট হয়েছে বলে বন্ধুদের জানায়, হাই সেকেন্ড ক্লাস। তবে ও বলল ও আর পড়বেনা, এই শরীরে হায়ার স্টাডিজ করতে ডাক্তার বারন করছে। ওদের কলেজের প্রফেসররা সব কথা শুনে ওর জন্যে চাকরীর চেষ্টা করছেন। নিয়ম মাফিক পড়াশোনা শরীরের জন্য ভাল করে না করতে পারলেও, ক্লাসে বা ল্যাবে ও ব্রিলিয়ান্ট ছিল, তাই প্রফেসররা ওকে খুব ভালবাসেন। আমরা সব নর্থের ছেলে কাছেপিঠের কলেজেই পড়েছি, তুষার উচ্চমাধ্যমিকে খারাপ রেজাল্টের জন্য এদিকে চান্স না পেয়ে গড়িয়ার দিকের একটা কলেজে পড়ত। এসব কথা তুষারের কাছেই শুনতাম, মাধ্যমিকের পর থেকেই নাকি ওর রোগটা ধরা পড়েছিল।

    একদিন তুষার আড্ডায় এল মিষ্টির বাক্স নিয়ে। ওর প্রফেসরদের চেষ্টা সফল হয়েছে, ও সরকারী কৃষিবিভাগের গবেষণাগারে চাকরী পেয়েছে। ইন্টারভিউ তে ওর উত্তর শুনে সবাই নাকি দারুন ইমপ্রেসড। কলকাতার বাইরে ওর ইনস্টিট্যুট, তবে ডেলিপ্যাসেঞ্জারি করা যায়। সবাই খুব খুশী।
    বিমান কলেজের পর আর পড়েনি, চাকরীর চেষ্টা করছিল। বিমানও ভাল ছাত্র ছিল, কয়েকটা জায়গায় পরীক্ষায় পাশ করে ইন্টারভিউ কলও পেয়ে ছিল তবে কোথাও থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পায়নি শেষপর্যন্ত। ইদানীং ও রেগুলার আড্ডায় আসছিল, তুষারের চাকরির কথা শুনে আমার কাছে একটু সন্দেহ প্রকাশ করে। ও শুনেছে কৃষিবিভাগে এ ভাবে বিনা লিখিত পরীক্ষায় লোক নেয় না। আমার একটু খারাপই লাগে, মনে হয় বিমান তুষারকে হিংসে করছে, ছি:।
    এরপর তুষারকে রোজ সকালে বাসস্টপে হাওড়ার বাস ধরে অফিস যেতে দেখা যেত।
  • shrabani | 124.30.233.102 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১১:৪৮424688
  • এর কিছুদিন পরে তুষার ওর চোখের প্রবলেমের কথা জানায়। চলাফেরার অসুবিধের কথাও। আমরা ঠিক করি, কেউ না কেউ ওকে অফিসে পৌঁছে দিয়ে আসবে যতদিন না চিকিৎসা করে ওর দৃষ্টিশক্তির উন্নতি হচ্ছে। ও আপত্তি জানায়। সবার কাজ আছে, ওর জন্য আমরা অসুবিধেয় পড়ি ও চায়না। শেষে ও জানায় ঠিক হয়েছে ওর পাড়ার ছেলেরা কেউ কেউ পালা করে ওকে বাড়ি থেকে বাসস্টপে নিয়ে গিয়ে বাসে তুলে দিয়ে কন্ডাক্টরকে বলে দেবে হাওড়া স্টেশনে নির্দিষ্ট জায়গায় নামিয়ে দিতে। ওখান থেকে ওর কলীগেরা কেউ না কেউ ওকে নিয়ে যাবে। এই ব্যবস্থা আমাদের সবারই ভাল লাগে, আমরা নিশ্চিন্ত হই।

    দেবুর মেসো একজন নামকরা ডাক্তার। একদিন দেবু খবর নিয়ে এল ওর মেসোর নার্সিংহোম ও আরো কিছু সংস্থা মিলে শহরে একটি সেমিনারের আয়োজন করেছে, তাতে একজন বিখ্যাত আই স্পেশালিস্ট আসছেন। তুষার চাইলে দেবুর মেসো ওনার কাছে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে দেবেন কম ফীজে। যেদিন ওদের যাবার কথা ঠিক সেদিনই দেবুর অন্য একটা কাজ পড়ে গেল, তুষার বলল ও ওর দাদাকে নিয়ে যাবে কারণ ওর পুরো ট্রীটমেন্টের হিসট্রী দাদারই ভাল জানা আছে। আমরা সবাই দেখলাম এটাই ঠিক, ডাক্তারের কাছে ভীড় করে যাবার কোনো মানে হয়না।

    ঐ ডাক্তারই বলেন অপারেশন করতে। অপারেশন কলকাতায় হবেনা, ম্যাড্রাসে যেতে হবে। এদিক ওদিক চেষ্টা করে শেষে একদিন অরিন্দম আমাকে বলে তিয়ার সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করার কথা। সেইমত দুজনে একদিন ক্লাসের পরে তিয়াকে ধরি। যেমন ভেবেছিলাম, মেয়েটা আসলে নরমসরম, সবশুনে চোখের কোণে জল টলটল। পরদিনই তিয়া জানাল যে তুষারকে নিয়ে আর ওর মেডিক্যাল রিপোর্ট গুলো নিয়ে একদিন আসতে, ওর সাথে কথা বলতে চায় সবাই। মোটামুটি মনে হচ্ছে কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আমি জানতাম তিয়া কিছু একটা করবেই। তুষার প্রথমদিকে ছাত্রদের থেকে ফান্ড কালেকশনের ব্যাপারে খুব উৎসাহ দেখিয়েছিল। সেদিন আমরা গিয়ে সব জানাতে সবাই হেভি খুশ। আনন্দে দেবু সবাইকে আস্ত সিগারেট বিলি করল। তুষার সব শুনে বেশ খুশীই হল। বার বার তিয়ার কথা জানতে চাইছিল। কদিন কেটে গেল, আমরা রোজই তাড়া লাগাচ্ছিলাম ওকে একদিন ইউনিভার্সিটী গিয়ে দেখা করতে কিন্তু কেন জানিনা ওর সেরকম চাড় দেখছিলাম না। আমি বুঝতে পারছিলাম না তিয়াকে কি বলব শেষে!

  • shrabani | 124.30.233.102 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১১:৫৬424689
  • পরীক্ষা এসে যাওয়ায় ঠেকে অনেককাল যাওয়া হয়নি। পরীক্ষা মিটে গেলে একদিন গিয়ে জানতে পারলাম তুষারের অফিস থেকে কিছু টাকার বন্দোবস্ত হয়েছে, ওর বাবাও কিছু দিচ্ছেন। এইসব নিয়ে ওরা দুদিন পরেই ম্যাড্রাস যাচ্ছে। ফান্ড কালেকশনের অনেক ঝামেলা, আর সে জন্য অপেক্ষা করলে দেরীও হয়ে যেতে পারে। বন্ধুরা তাদের টিউশনির টাকা ইত্যাদি করে কিছু চাঁদা তুলেছে, যদিও যৎসামান্য, তবু যাতায়াত খাওয়াদাওয়ার খরচ এসব হয়ে যাবে। যাবার দিন তুষারেরই বারনে আমরা স্টেশনে গেলামনা, ওর মা এতলোক দেখলে ঘাবড়ে গিয়ে ওকে ম্যাড্রাস যেতেই দেবেননা হয়ত। এমনিতেই উনি সন্দেহ করছেন তুষারকে চোখের জন্য নয়, অন্য কোনো চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সে নাও ফিরতে পারে!

    তুষার ফিরে এসে দিন দশেক পরে আড্ডায় এল। চোখ অনেক ভাল, আগে চলতে ফিরতে যে অসুবিধে হচ্ছে মনে হত তা আর নেই। স্বাভাবিক চলন দেখে বন্ধুরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। একদিন হঠাৎ ও আমার বাড়ী এল। একথা সেকথার পর তিয়ার কথা তুলল। ওর খুব বাজে লাগছিল এই ভেবে যে তিয়ার প্রচেষ্টার জন্যে ওকে একটা ধন্যবাদও দেওয়া হয়নি বলে। আমারও ঐ ব্যাপারটা নিয়ে একটু অস্বস্তি ছিল। তিয়া বেচারা না জানি কত হইচই করে সবাইকে রাজী করেছিল ফান্ড কালেকশনের ব্যাপারে। অরিন্দমের কথাতে হুট করে তিয়াকে নাচানো আমার উচিত হয়নি। তুষারের পরবর্তী প্রস্তাবটা আমার ভাল লাগল। সামনে নতুন বছর, ও তিয়াকে একটা কার্ড পাঠাবে। সেইমত আমি তিয়াকে গিয়ে তুষারের কার্ড দিই। তিয়ার প্রচুর বন্ধুবান্ধব, নানা দিকে জড়িয়ে থাকে। তারই মধ্যে ও খেয়াল করে তুষারের খোঁজখবর নিত। আমার কাছে ঠিকানা নিয়ে তুষার ওকে চিঠিও লিখত মাঝে মাঝে।

    বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষ করে সবাই এদিক ওদিক ছিটকে যেতে লাগলাম। বিমান ইতিমধ্যে চাকরি পেয়েছে, পুলিশে, লালবাজারে পোস্টিং। এক এক করে অন্যরাও কিছু না কিছুতে জুড়ে যাচ্ছে। আড্ডায় অনেকেই ঠিকমত আসেনা। আমি কলকাতাতেই চাকরি পেলাম, অরিন্দম ভুবনেশ্বরে। যখন আড্ডায় আসি, শুনি তুষার খুব ভাল কাজ করছে গবেষণায়, অবশ্যই তুষারের মুখে। তুষার অনেকদিন আমাদের বলেছে ওর ইনস্টিট্যুটে যেতে কিন্তু কেউই সময় করে গিয়ে উঠতে পারিনি।

    তিয়াও চাকরী পেল বাইরে। ওর যাবার আগে বন্ধুদের নিয়ে একটা গেট ট্যুগেদার করল বালিগঞ্জের ধাবায়। আমি তিয়ার চাকরীর খবর সবাইকে দিয়েছিলাম। তিয়াকে কোনোদিন না দেখলেও আমাদের আড্ডায় আমার আর তুষারের কথাবার্তায় ওর নাম সবার খুব পরিচিত ছিল। সবাই আমাকে রাগাত যে তিয়াকে নিয়ে আমার একটু ব্যাথা আছে। সেই সময় বন্ধুদের অনেকেই বেশ স্টেডি যাচ্ছে। আমার ছাত্রী আমাকে রোজ চিঠি লিখছে, যদিও আমি তখনো মনস্থির করতে পারিনি। কিন্তু তিয়া ঠিক এই ছকে পড়ত না। ওর প্রতি একটা সম্ভ্রমের ভাব ছিল আমাদের সবার। এত সহজে মিশত যে মনে হত একে সব কথা বলা যায়, এর জন্যে সব কিছু করা যায় কিন্তু প্রেম বলে যে সম্পর্ক বাজারে চলে সেটা এর সাথে হয়না। যাইহোক, সবাইকে বলেছিলাম তিয়ার যাবার আগের পার্টির কথা। তুষার অনুরোধ করল ওকে সঙ্গে নিতে, তিয়া তো চলেই যাবে, কোনোদিন দেখা হবে কিনা!

    তুষার হাবেভাবে ওর অসুখের কথা আমাদের ভুলিয়ে দিতে চাইলেও আমরা কেউই একেবারে ভুলে যাইনা যে যেকোনোদিন ও আমাদের ছেড়ে চলে যেতে পারে। ওর অনুরোধ উপেক্ষা করা গেলনা, তিয়ার সম্মতির ব্যাপারে সন্দেহ না থাকলেও ওকে হাল্কা করে একজন এক্সট্রা গেস্টের কথা বলে রাখলাম।

    এর কিছুদিন পরে আমিও চাকরী নিয়ে বাইরে চলে যাই। তুষারের চিঠি পাই নিয়মিত। মাঝে জানতে পারি তুষারের আমেরিকা যাওয়ার কথা। এইসময় ছুটিতে কলকাতায় যাই কিছুদিনের জন্যে। যদিও আমাদের গ্রুপটা এখন আর আড্ডায় নেই, নতুনরা জায়গা দখল করে নিয়েছে, তবু তুষার ছাড়া অন্যদের সঙ্গে দেখা হল, সবাই তুষারের জয়জয়কার করছে। শুধু বিমানের পুলিশী মাথায় খটকা রয়ে যায়।

    একদিন আমাকে একলা পেয়ে ওর সন্দেহটা ব্যক্ত করে। এতবড় একটা ব্যাপার, কলকাতায় খবরের কাগজে খবর নেই কেন! আসলে বিমানটা প্রথম থেকেই একটু অবিশ্বাসী, তর্কবাগীশ! আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছি যে হমেশাই কেউ না কেউ পেপার পড়তে, এটা সেটায় বিদেশ যাচ্ছে। সেসব কি আর খবরের কাগজে ছাপে নাকি!
    ওকে বোঝালাম এটা শুধু আমাদের কাছে বড় খবর কারণ তুষার আমাদের বন্ধু বলে। নাহলে এরকম আকছারই হচ্ছে। দিন কয়েক থেকে আমি আবার ফিরে যাই কাজের জায়গায়। নানান ব্যস্ততায় কলকাতার বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ কমে আসে। তিয়ার সঙ্গেও চিঠির যোগাযোগ ক্ষীণ হয়ে আসে। এইসময়ই একদিন হাতে এল বিমানের চিঠি…………….
  • shrabani | 124.124.86.102 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১২:৫৪424690
  • আমি ও সেই সখারা - তিয়া
    -----------------------------
    তখন ইউনিভার্সিটীতে আমাদের থার্ড ইয়ার চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনিয়নে থাকার সুবাদে আমার অনেকের সঙ্গে পরিচয় ছিল। হয়ত এই কারনেই শুভ আর অরিন্দম একদিন ক্লাসশেষে আমাকে ধরল। সেই প্রথম ওদের কাছে আমি তুষারের কথা শুনলাম। ওদের পাড়ার বন্ধু, ব্লাড ক্যানসারের রোগী। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিল কিন্তু বিএসসিতে সেভাবে রেজাল্ট করতে পারেনি। বটানি নিয়ে পড়েছে। পাশ করে সরকারের কৃষি বিভাগে একটা ছোটখাট চাকরী পেয়েছে, কলকাতার বাইরে কোন ইনস্টিট্যুটে। রোজ যাতায়াত করে, হাওড়া থেকে ট্রেনে যেতে হয়। খুব ভাল কাজ করছে ঐ রুগ্ন শরীর নিয়েও। ওর মেধা দেখে ওকে সিনিয়ররা গবেষণার কাজে অ্যাসিস্ট করতে নিয়েছেন।

    সমস্যা হচ্ছে ওর আইসাইট। রোগের কারনে চোখের দৃষ্টি ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে আসছে। পাড়ার কেউ একজন বাসে তুলে দিয়ে কন্ডাকটারকে বলে দেয়। কন্ডাক্টর ওকে স্টেশনে নির্দিষ্ট জায়গায় নামিয়ে দেয়। সেখানে ওর অফিসের কলীগেরা কেউ না কেউ থাকে, যে ওকে অফিস নিয়ে যায়। ফেরাও একই ভাবে।

    সম্প্রতি বাইরের ভাল একজন আই স্পেশালিস্ট কে দেখানো হয়েছিল, তিনি বলেছেন চোখের অপারেশন খুবই জরুরী, নাহলে অচিরেই ও চিরান্ধ হয়ে যাবে। অপারেশনে টাকা লাগবে প্রচুর। তুষারের বাড়ির অবস্থা খুবই সাধারণ। বন্ধুরাও সব পড়ুয়াই। অফিস থেকে কিছুটা সাহায্য পাওয়া যাবে, কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। ইউনিয়নকে বলে যদি স্টুডেন্টদের থেকে চাঁদা তুলে বা অন্য কোনো ওয়েলফেয়ার ফান্ড থেকে কোনো ব্যবস্থা করা যায়, সেই ভেবেই ওরা আমার কাছে এসেছে।

    সব কথা শুনে খারাপ লাগল। এই তো শুরু জীবনের, এখনই শেষের ঘন্টা? খুব কষ্ট হচ্ছিল ঐ অচেনা যুবকটির জন্য। পরের দিনই গিয়ে সবার সঙ্গে কথা বললাম। অনেকে অনেক পথ সাজেস্ট করল। সবাই কিন্তু কনসার্ন দেখাল, তাইতে আমার ভারী মন একটু হাল্কা। তবে কিছু করার আগে তুষারের সঙ্গে দেখা করাটা জরুরী, ওর কেস ডিটেলও জানতে হবে। আমি শুভদের গিয়ে বললাম ওকে নিয়ে আসতে। ঠিক হল ওরা একদিন তুষারকে ইউনিভার্সিটীতে নিয়ে এসে ইউনিয়নের সবার সঙ্গে দেখা করিয়ে দেবে। আমিও থাকব ওদের সঙ্গে।

    বেশ কিছুদিন কেটে গেল। ওরা আর তুষারকে নিয়ে এলনা। জিজ্ঞেস করে জানলাম সে নাকি ব্যস্ত, একটা কি সিরিয়াস পেপারে তার বসকে সাহায্য করছে। এখন ছুটি পেতে অসুবিধে আছে। এর পর ব্যাপারটা কিরকম চাপা পড়ে গেল। পরীক্ষা সামনে, তাই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম আমরা।

    সব চুকে যাওয়ার পরে তখন বেশ কিছুদিন কেটে গেছে। একদিন সবাই মিলে আড্ডা মারছি, শুভ অরিন্দম ওরাও আছে। মনে পড়ল তুষারের কথা। শুভকে জিজ্ঞেস করতে বলল, ওও ব্যস্ত ছিল, ঠিকমত যোগাযোগ করতে পারেনি তুষারের সঙ্গে। তবে খবর পেয়েছে তুষারের অপারেশন হয়ে গেছে ওর অফিসের টাকাতেই। এখন সে নাকি চশমার সাহায্যেই খুব ভাল দেখতে পাচ্ছে।

  • til | 210.193.178.129 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৪:৩৮424691
  • আরে আরে একী কান্ডা। শেষ পোস্টটা কি আগে হবে? নাকি রুদ্ধশ্বাসে পড়েছি বলে!
  • shrabani | 124.30.233.102 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৫:২৮424692
  • তখন আমরা ফাইন্যাল ইয়ারে। নতুন বছরের প্রথম দিনে এক অবাক কান্ড! শুভ এসে আমাকে একটা কার্ড দিল। কার্ড টা না খুলেই আমি একটু বিস্ময়ে,কিছুটা সন্দেহে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। এটার কি মাথা খারাপ হল নাকি?
    শুভ আমাদের ক্লাসের নামকরা কিপটে, ওর পকেট ছিঁড়ে ফেললেও রোজের বাস ভাড়ার বেশী এক পয়সাও পাওয়া যায়না। সে পয়সা খরচ করে কার্ড দিচ্ছে আমাকে! ঘাবড়ে গিয়ে প্রায় মূর্ছা যাবার যোগাড় আমার! অরিন্দমও ছিল সাথে, মিটিমিটি হাসছিল আমার ভাবভঙ্গী দেখে। শুভ আমার ভাব আঞ্চ করে একটু লজ্জাই পেয়ে ধমকের সুরে বলে উঠল,
    -"খুলে না দেখেই আগে সাতপাঁচ ভাবতে বসেছিস। আমাকে কি ভাবিস তুই?"
    ধমক খেয়ে তাড়াতাড়ি খুলে দেখি কি সুন্দর হাতের লেখায়, দুছত্রে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েছে তুষার আমাকে। আমি তাও অবাক, শুভ কৈফিয়তের সুরে বলেছিল,
    -"তোর কথা ওকে বলেছিলাম আমরা। ওর সব কথা শুনে যেভাবে বিনাদ্বিধায় সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলি তাতে ও খুব মুভড। সেই সঙ্গে লজ্জিত এবং দু:খিত তোকে খামকা ব্যতিব্যস্ত করার জন্য।"
    আমি কি বলব? সেরকম কিছু করে দেখাবার সুযোগ আর পেলাম কোথায়! যাই হোক, পরে শুভর হাতে একটা থ্যাঙ্কস কার্ড পাঠিয়েছিলাম। মনে মনে তারিফ করেছিলাম ওকে। এত প্রতিকূলতার মধ্যে বেঁচে থাকা, অথচ জীবনের সুক্ষ্ম নান্দনিক দিকগুলো কিভাবে বজায় রেখেছে। আমার কাছে শুভ বা অরিন্দম এসে মাঝেই মাঝেই তুষারের কথা বলত। ওর এই পজিটিভ স্পিরিটটার জন্যই তুষার ছিল ওদের বন্ধুদের হীরো!
  • shrabani | 124.124.86.102 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৫:৩০424693
  • "আঁচ"
  • til | 220.253.188.98 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৭:২৭424695
  • উফ, তারপর?
  • ranjan roy | 122.168.46.17 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১০ ২২:২২424696
  • Ninaarsangegalaamiliyebali---- shraabaNeeogalpo, sonaaysohaagaa!
    aashaaniyeparerkistirdiketaakiyeaachhi.dekhabonadeekothaaynebebaa`nk!
  • sn | 202.54.102.201 | ০৩ অক্টোবর ২০১০ ১৫:১৪424697
  • শ্রাবণী-র কি এখন সব কিছুই ভালো লাগছে। আর যে গপ্পো এগোছে না। তুষার আর তিয়ার খবর কি?
  • shrabani | 124.124.86.102 | ০৪ অক্টোবর ২০১০ ১০:৪৫424698
  • sn,
    একেবারে ঠিক। দিল্লীর আকাশ পরিস্কার, বাতাসে পুজোর আভাস, মন বেজায় ভালো। সুস্থির হয়ে বসে লেখবার, নো অবকাশ। কলকাতা থেকে ফিরে মন খারাপ হলে আবার হয়ত লিখে ফেলব!:)
  • koli | 27.251.4.98 | ০৪ অক্টোবর ২০১০ ১৩:৫০424699
  • এমা!!!!! এতদিন লেখা হবেনা? :-(
  • til | 220.253.188.98 | ০৪ অক্টোবর ২০১০ ১৫:১৪424700
  • উনি দাম বাড়াচ্ছেন, গু-চ র উচিত আগাম পাঁচ ইনস্টলমেন্ট জমা দিলেই তবে লেখা টইতে ছাপা হবেক!
  • shrabani | 124.30.233.102 | ০৪ অক্টোবর ২০১০ ১৬:৪৪424701
  • সরি!
    আমার কোনো দাম নেই যে বাড়া কমার প্রশ্ন আসবে। আর গুরুর টইয়ের ফান্ডা হচ্ছে সেখানে লোকে খেয়াল খুশীতে লেখে, আমিও তাই করি। লোকে পড়লে ভালো, পড়ে ভালো লাগলে আরো ভালো তবে না পড়লেও ইস্যু নেই!
    আমার লিখতে না ইচ্ছে হলে আমি লিখিনা!:(
  • til | 210.193.178.129 | ০৫ অক্টোবর ২০১০ ১২:৪৬424702
  • লেখাটা আমার ভাল লাগার কথা আমি এর আগেও লিখেছি, । হোক না টই, পাঠকেরও তো একটু দাবী থাকে।
    'দাম বাড়াচ্ছেন' পরিহাসছলে সেই দাবী জানানো।
    যাকগে, মাফ চেয়ে নিলাম। গু-চ র কাকে বললে ঐ পোঅষ্টটা ডিলিত করা যাবে জানি না, চেষ্টা করে দেখছি।
  • Samik | 121.242.177.19 | ০৫ অক্টোবর ২০১০ ১৩:৩২424703
  • সেন্টি খাইয়েন না কত্তা। বড় দুর্দিন, সেন্টিও আইজকাইল শস্তায় পাওন যায় না ...
  • shrabani | 124.30.233.102 | ০৫ অক্টোবর ২০১০ ১৪:৫১424704
  • তিল,
    শমীকের কথা মেনে নেন, সেন্টি খাইবেন না। যদি আপনি পরিহাস করে থাকেন তাহলে জবাবটাও সেভাবেই নিন না! ডিলিট করার মত ভয়ংকর কিছু তো লেখেননি! হয়ত আপনার পোস্ট দেখে ভবিষ্যতে আমার এটা শেষ করার তাগিদ হবে।:)
  • de | 203.199.33.2 | ০৫ অক্টোবর ২০১০ ১৭:৫১424706
  • খোলা পাতার যেকোন লেখা শুধু লেখকের নয় -- পাঠকেরও! সুতরাং, তিলুবাবু, রাগ কইরেন না!
  • Nina | 64.56.33.254 | ০৬ অক্টোবর ২০১০ ০৩:২৯424707
  • ভাই শাবুনি, আমি এখেন থেকে দুই মুঠা ম্যাঘ পাঠ্যে দিলুম তোমার দিকে--আর বসে রইলুম চাতকের মতন---তুষারের কি হইল তাপ্পর, জানার জন্যি!

  • ranjan roy | 122.168.160.2 | ০৮ অক্টোবর ২০১০ ১৬:০৯424708
  • রহস্য গল্পের একটা টই ছিল না? দেখি নাই ফিরে না কি যেন নাম! কেউ তুলে দেবেন? আমার একটু লেখার জন্যে চুলকুনি হচ্ছে।
    শ্রাবণী-টিম এরা কেউ অনেকদিন ওখানে লিখছে না। ভাবছি ফাঁকা মাঠে একটু চেষ্টা করেই দেখি, সে ফল যাই হোক।
  • Nina | 64.56.33.254 | ০৮ অক্টোবর ২০১০ ২৩:১৩424709
  • তুলে দিলুম।
  • Lama | 203.99.212.54 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ২১:৪১424710
  • গলা খাঁকারি
  • Nina | 64.56.33.254 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ২২:২২424711
  • আরে আরে , লামা যে! তা গলা খাঁকাড়ি দিলে তাইলে কি বালামুরুগনের গপ্পটা আবার বলা শুরু করবে--কি তাই তো??
  • Lama | 203.99.212.54 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ২২:২৬424712
  • ইসে, শ্রাবণীর একটু দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলাম।
  • Nina | 64.56.33.254 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ২২:৩৫424713
  • শ্রাবণীর আকশে যে ম্যাঘ নাই এখুন--তাই মুডও নাই---আমিও বসে আছি তো--যদি তুষারপাতের সময় তুষার-তিয়া জেগে ওঠে :-(

    বালামুরুগনও চলুকনা--বারম কচ্চে কে?
  • Dupur Mitra | 203.202.255.113 | ০১ নভেম্বর ২০১০ ২১:২৬424714
  • ঘুম ঘুম অলস দুপুর কাটাতে লেখা দিন আর পড়ুন



    লেখা পাঠাবার ঠিকানা

    [email protected]
  • shrabani | 124.30.233.85 | ১২ জানুয়ারি ২০১১ ১২:২৪424715
  • একদিন শুভ এসে বলল তুষার আমার ঠিকানা চেয়েছে আর জানতে চেয়েছে ও যদি আমাকে চিঠি দেয় আমি আপত্তি করব কিনা। তুষারের সব কথা শুনে এমনিতেই আমার দরদের শেষ ছিলনা। কিছু করতে পারলে খুশী হতাম অথচ ভেবে পেতাম না কি করা যায়! শুভকে এক কথায় পারমিশন দিয়ে দিলাম।
    এরপর মাঝে মাঝে চিঠি পেতাম তুষারের,পোস্টে। এমন সুন্দর লেখা আর ভাষার এমন বিন্যাস আমি আগে দেখিইনি। খুব ভাল লাগত ওর চিঠি । তবে খুব কম লিখত। আমিও উত্তর কম দিতাম কারন আমার ভাষার দৈন্য আর হাতের লেখার ভয়াবহতা। তবে এ নিয়ে কোনোদিন কোনো অভিযোগ জানায়নি ও।

    আমি চাকরি পেয়ে যখন বাইরে চলে আসব, বন্ধুদের নিয়মমাফিক একদিন ট্রীট দেওয়ার কথা উঠল। সময় করাই যাচ্ছিলনা। শেষ অবধি আসার আগের দিন ঠিক হোল। আগের রাতে শুভ হঠাৎ ফোন করে বলল সে তার এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে আসতে চায়। আমি কি আপত্তি করব? মাথায় অজস্র চিন্তা ছিল নানা বিষয়ে, না বুঝেই হ্যাঁ বলে দিয়েছি, বিষয়টা নিয়ে খুব কিছু ভাবিনি।

    নির্দিষ্ট দিনে আমি একটু দেরীতেই পৌঁছলাম রেস্তরাঁতে,আসলে বাড়িতেও অনেকের আসা যাওয়া চলছিল,সেসব ঝামেলা মিটিয়ে আসতে হল। সবাই অলরেডি এসে এক ধারে তিনটে টেবল জুড়ে বসে হৈ হৈ শুরু করে দিয়েছে। এত হল্লার মাঝে এক কোণে একটি অচেনা ছেলের দিকে চোখ চলে গেল আমার। শ্যামলা, রোগা চেহারা, উস্কোখুস্কো চুল, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। আমি তাকাতেই একটু হাসল, পরিচিত জনের হাসি। শুভ আমাকেই দেখছিল, ছেলেটির দিকে হাত দিয়ে দেখিয়ে একটু রহস্যের হাসি হেসে জিজ্ঞেস করল,
    -"চিনতে পারিস? কে বল তো?"
    আন্দাজ একটা করেছিলাম, বুদ্ধি আমার বেশী না হলেও কম নয়।
    -"তুষার তো? খুব ভাল করেছ এসে। নানান ঝামেলায় খেয়াল হয়নি তানাহলে আমিই বলতাম তোমায় আসতে।"

    আন্দাজটা ভুল হয়নি। সেই তুষারের সঙ্গে প্রথম ও শেষ দেখা।
    তুষার আমাদের বন্ধুদের গ্রুপের আড্ডায় ওকে আসার অনুমতি দেওয়ার জন্য থ্যাঙ্কস দিল অনেকবার। এরপরে অনেকক্ষণ সবাই মিলে আড্ডা হল। তুষার খুব মজার মজার কথা বলে। বুঝলাম কেন ও শুভদের মত বন্ধুদের কাছে এত পপুলার! ওর চেহারাটাই শুধু রুগ্ন গোছের, এ ছাড়া বোঝাই যায়না ও অমন একটা মরণব্যাধিতে ভুগছে। একটু আফশোষ হচ্ছিল, এত মজার ছেলে,কেন আগে আলাপ হলনা। বিদায়ের সময় কথা দিলাম পৌঁছেই ওকে আমার নতুন ঠিকানা জানিয়ে চিঠি দেব।

    সব বন্ধুদেরই জানিয়েছিলাম ঠিকানা, তুষারকেও। ততদিনে তো ওকেও বন্ধু বলেই স্বীকার করে নিয়েছি। ওর কথা ভেবে মনটা বিষাদে ভরে যেত, শুভর কাছে ওর অসুখ সম্বন্ধে খবর নিতাম, তেমন আশাজনক কিছু শুনতাম না। শুভর চিঠি আস্তে আস্তে কমে এলেও, তুষারের চিঠি আসত। একসময় শুভর চিঠি একদমই বন্ধ হয়ে গেল।
    তুষারের চিঠিতে জানলাম শুভর প্রেমে পড়ার কথা আর তা নিয়ে ব্যস্ততার কথা। আমিও নতুন পরিবেশে নতুন বন্ধুদের সঙ্গে মিশে যাচ্ছিলাম, আস্তে আস্তে পুরনো সম্পর্ক আবছা হয়ে আসছিল, যোগাযোগ ক্ষীণ। বছরদেড়েক পরে শুনলাম শুভও কলকাতা ছেড়ে চলে গেছে। তুষারের চিঠি আসত, আমি ঠিক সময়ে উত্তর দিয়ে উঠতে পারতামনা, তবুও আসত।
  • shrabani | 124.30.233.85 | ১২ জানুয়ারি ২০১১ ১২:২৭424717
  • এরকমই এক চিঠিতে জানলাম ধান নিয়ে ওদের কি একটা গবেষণা দারুন সমাদৃত হয়েছে বিদেশে। ওর সিনিয়রকে আমেরিকায় কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনারে ডেকেছে। উনি তুষারকেও নিয়ে যাচ্ছেন। ওদের ইন্টারভিউও নাকি কোন একটা বিদেশী টিভি চ্যানেলে এসেছে। আমার তো দারুন লাগল শুনে। তুষার যদি পুরোপুরি সুস্থ হত না জানি আরও কি করত!
    খুব আফশোষ হচ্ছিল শুভ বা অরিন্দমের সাথে আর যোগাযোগ নেই বলে। ওরাই একমাত্র আমার আনন্দটা শেয়ার করতে পারত। আরো খারাপ লাগছিল যে এমন একটা জায়গায় থাকি, লোকালয় থেকে এত দুরে, কেবলও নেই,টিভি তে দুরদর্শন ছাড়া কিচ্ছু আসেনা!

    বেশ কিছুদিন তুষারের চিঠি নেই। বুঝলাম ও আমেরিকা যাওয়া নিয়ে ব্যস্ত আছে বা চলেই গেছে। আমারও খবর ছিল, সময়ে তুষারকে জানানো হল না। ভাবলাম একেবারে বিয়ের কার্ডই পাঠাব, ততদিনে নিশ্চয়ই ফিরে আসবে ও।
    তুষারের শেষ চিঠি এল আমার বিয়ের একমাস আগে। ও ফিরেছে আমেরিকা থেকে, দারুন নাকি প্রশংসা পেয়েছে ওদের কাজ সব জায়গায়। শেষে লিখেছে, এই ট্যুরে যত টাকা পেয়েছিল ও তাই দিয়ে আমেরিকায় ডাক্তার দেখিয়ে একটি অত্যন্ত মহার্ঘ ওষুধের কোর্স নিচ্ছে। এ ওষুধ শুধু বিদেশেই পাওয়া যায়। ডাক্তারদের মতে এতে শতকরা নিরানব্বই ভাগ রোগমুক্তির সম্ভাবনা।
    এরকম একটা খবর পড়ে পুরোপুরি ভরসা না হলেও আমার চোখে জল এসে গেল। এভাবে কোনো ওষুধ যদি ক্যানসার কিওর করতে পারে, আমাদের দেশে তা আসছেনা কেন? হয়ত ডাক্তারেরা তুষারকে সান্ত্বনা দিতে, ওর মনের জোর বাড়াতে এসব বলেছেন! দেরী না করে চিঠির উত্তর দিলাম, সাথে আমার বিয়ের কার্ড!
    বিয়ের সময় আশা করেছিলাম আর কেউ না এলেও তুষার হয়ত আসবে কারন সে কলকাতাতেই আছে।
    না, আসেনি তুষার,আর কোনোদিন কোনো চিঠিও আসেনি ওর কাছ থেকে। পুরনো ঠিকানা পাল্টে এই শহরে আসা, তাও বেশ কিছুদিন হল। এখানে এসে বন্ধুদের দু চারজনের সঙ্গে যোগাযোগও হয়েছে। তাদের কাছে শুভর বিয়ের, অরিন্দমের সাফল্যের কথা জানতে পেরেছি। মাঝে মাঝে কলকাতায় গেলে রাস্তাঘাটে চলতে চলতে কলেজ ইউনিভার্সিটীর দিনগুলোর কথা মনে হয়েছে। অনেকের সাথে সাথে শুভদের রুগ্ন অসহায় মেধাবী বন্ধুর কথাও মনে পড়েছে। তুষার বেঁচে আছে তো, কে জানে!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন