এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • গল্পের টই

    M
    অন্যান্য | ১৫ ডিসেম্বর ২০০৯ | ৯২৩৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • shrabani | 124.124.86.85 | ১২ জানুয়ারি ২০১১ ১৫:১১424718
  • ****************বিশ্বাসে মিলায় বন্ধু, অবিশ্বাসে - বিমান**************

    তুষার আমার ছোটোবেলার স্কুলের বন্ধু। পড়াশোনায় তেমন ভাল না হলেও দারুন হাতের লেখা, ছবিও আঁকতে পারত ভাল। আর এমন সুন্দর গল্প বলত যে আমরা সবাই ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব করার জন্য পাগল ছিলাম। বড় ক্লাসে উঠে যখন আমাদের সেকশন আলাদা হয়ে গেল খুব কষ্ট হয়েছিল। আমাদের পাড়ায় একটা গ্রুপ ছিল, শুভ অরিন দেবু এদের নিয়ে। মাধ্যমিকের পর তুষারের সাথে দেখাসাক্ষাত একেবারে কম হয়ে গিয়েছিল। একদিন রাস্তায় দেখা হতে ওকে পাড়ায় নিয়ে এলাম বন্ধুদের সাথে আলাপ করাতে।
    ততদিনে আমরা লায়েক হয়েছি, বিশুদার চায়ের দোকানের সামনে ফুটপাথে অশত্থ গাছের তলায় আমাদের ঠেক। তুষার এসেই ঠেক জয় করে নিল, আমার বন্ধুরা এক্কেরে যাকে বলে ফিদা। খুব গর্ব হচ্ছিল, তুষার আমার বন্ধু। তখনও কাঁচা বয়সের সবুজ মনটায় দাগ ধরেনি, চোখে বিশ্বাসের মায়া কাজল পুরোপুরি ফিকে হয়নি। প্রতি পদক্ষেপে দুনিয়াকে প্রশ্ন করতে তখনও শিখিনি।

    কিন্তু তুষার আর আমার শুধু আমার বন্ধু রইল না। সবার হয়ে গেল। প্রথম প্রথম এভাবে সকলের সাথে ওকে ভাগ করে নিতে খুব খারাপ লাগত। ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে গেল। ও আমাদের ঠেকের একজন নিয়মিত সদস্য হয়ে গেল। আমার থেকে দুরে গেলনা, সবার কাছে এসে গেল। ওর পুরনো গুণগুলো এখনও বিদ্যমান। গল্পে মজিয়ে রাখত আমাদের আড্ডার আসর।

    ওর অসুখের খবরটা দেবুর মুখে শুনে হতবাক হয়ে গেছিলাম। খুব অভিমান হচ্ছিল ওর ওপর, কষ্টটা ছাপিয়ে। আমি বিমান, ওর সবচেয়ে পুরনো বন্ধু, তাকে বিশ্বাস করে জানালনা এতবড় সর্বনাশের কথা। মনে হচ্ছিল এক ছুটে চলে যাই, ওর ঐ রুগ্ন মায়াবী কপালটায় একটু হাত বুলিয়ে দিয়ে আসি। হাতদুটো ধরে বলে আসি, আছি রে তোর সঙ্গে!
    কয়েকদিন খুব মনখারাপ ছিল। আস্তে আস্তে ঠিক হলাম সেও তুষারের জন্যেই। শিয়রে মৃত্যু কে নিয়ে এভাবে শান্ত সমাহিত কেউ থাকতে পারে ওকে না দেখলে বোঝা যায়না। আবার গর্বে বুক ভরে উঠেছিল, আমার বন্ধু।

  • kumudini | 59.178.147.140 | ১২ জানুয়ারি ২০১১ ১৭:১১424719
  • শ্রাবণী,খুব খুব আন্তরিক,দরদ দিয়ে লেখা।
    কাজের ফাঁকে অনেকবার এই লেখাটা পড়ে যাই।
    আরও অনেক লিখো।
  • shrabani | 124.30.233.85 | ১২ জানুয়ারি ২০১১ ১৮:০৩424720
  • জয়ন্তী, এরকম মন্তব্য শুনলে ঘাবড়ে যাই।:( যাইহোক, পড়ছ জেনে ভালো লাগল।দেখি কি দাঁড়ায়!
  • Nina | 64.56.33.254 | ১২ জানুয়ারি ২০১১ ২০:৫২424721
  • সক্কাল থেকে মনটা ছিল বেজায় বিগড়ে--স্লিপ & স্লাইড কত্তে কত্তে কোনও রকমে আপিশে পৌঁছেছি--ভেবেছিলাম বন্ধ থাকবে--হায়!
    কিন্তু টই খুলেই দেখি শ্রাবণী --গল্পের টই--পুরো টেনিদা স্টাইলে
    ডিলা গ্র্যান্ডি মেফিস্টোফিলিস, ইয়াক ইয়াক এক পক্কর নেচে নিলুম (মনে মনে) পরে ভাল ও ও ও ও করে পড়ব--কি মজা--দিনটা শুরু হল মনের মতন--অ্যাট লঙ্গ লাস্ট!

  • Nina | 64.56.33.254 | ১২ জানুয়ারি ২০১১ ২৩:২৯424722
  • এক নি:শ্বাসে পড়ে ফেলে, আস্তে আস্তে আবার পড়লাম--সব ভাল--শ্‌ধু শেষ হয়ে গেল--:-((
    শ্রাবণী তাপ্পর?
  • shrabani | 124.124.86.85 | ১৩ জানুয়ারি ২০১১ ১৭:১৭424723
  • ও যখন পরীক্ষা দিতে পারলনা তখন খারাপ লেগেছিল। তবে তুষার স্কুলেও এমন কিছু ভাল ছাত্র ছিলনা। হয়ত দুর্বল শরীরের জন্যই লেখাপড়ায় মনোযোগ ছিলনা। শুধু একটাই ব্যাপার একটু চোখে লাগত। তুষার আড্ডায় শোনাত ওর ওপর কলেজের প্রফেসররা কি দারুন ইমপ্রেসড। এমন সব প্রশ্ন করে, উত্তর দেয় ক্লাসে, একেবারে নাকি ব্রিলিয়ান্ট। পুরোপুরি সুস্থ হলে না জানি কি হত! শুভরা সবাই মোহিত হয়ে ওর কথা শুনত। দেখেশুনে আমার মধ্যের একজন যুক্তিবাদী চাড়া দিত মাঝেমাঝে। এই চমক ওর স্কুলের পড়াশোনায় কখনও কেউ দেখেনি কেন?

    বি এস সির পর বাড়ীর প্রয়োজনে আমি চাকরির চেষ্টা করতে থাকলাম। ছাত্র আমি খারাপ ছিলাম না। চাকরীর পরীক্ষা দিচ্ছিলাম, পরীক্ষা ভালই হচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভাগ্যে শিকেটা ঠিক ছিঁড়ছিলনা। অথচ তুষার একটা সরকারী চাকরি জুটিয়ে ফেলল। চাকরী খোঁজার চক্করে আমাকে নানা খবর রাখতে হত। যাকেই জিজ্ঞেস করতাম সেই বলত এটা অসম্ভব। সরকারী চাকরিতে প্রতিবন্ধী ইত্যাদি কোটা থাকলেও এমনি এমনি কাউকে কোনো সুপারিশে টেবিলে বসিয়ে দেবেনা। বিজ্ঞাপন, ইন্টারভিউ ইত্যাদি নিয়ম মেনেই হবে। আমি খুব ভাল জানতাম যে কৃষি বিভাগের কোনো বিজ্ঞাপন বেরোয়নি ঐ ইনস্টিট্যুটে নিয়োগের জন্য।
    সন্দেহটা প্রকাশ করাতে ঠেকের বন্ধুরা একটু ভুলই বুঝল। হয়ত বা সত্যিই আমি একটা দুরারোগ্য ব্যাধিগ্রস্ত ছেলের এই সামান্য সৌভাগ্যে অন্যায় ভাবে ঈর্ষাকাতর হয়ে পড়ছিলাম! ঠেকে আসাযাওয়া নানা কারণে কমে আসছিল। তবু তুষারের খবর রাখতাম। ওর চোখের অপারেশনের জন্য যখন টাকার দরকার পড়ল, তখন আমিও অন্যান্যদের মত কিছু না করতে পারার ক্ষোভে হতাশায় হাত কামড়াতাম।

    শুভ আর অরিনের ফান্ড কালেকশনের আইডিয়াটা ভাল লেগেছিল। সেই প্রথম ওদের মুখে তিয়ার নাম শুনি। এরপর তো তিয়া আমাদের ঠেকের নিয়মিত সদস্যই হয়ে যায় তার অশরীরি উপস্থিতিতে। তুষারের সঙ্গে ওর একটা চিঠিপত্রের যোগাযোগের কথাও আবছা শুনতে পাই।
    যাইহোক শেষে শুনলাম ফান্ড ছাড়াই তুষারের অপারেশনের টাকা যোগাড় হয়ে গেছে। তখনও মাঝে মাঝে এক চিলতে অবকাশে মনে পড়ে তুষার আমারই বন্ধু ছিল একদিন অথচ আমি কিছুই করতে পারিনা ওর জন্য। দেবু ওকে ডাক্তার দেখায়, শুভরা পয়সা যোগাড় করতে যায়। ভেবেছিলাম ম্যাড্রাসে আমিই যাব ওর সঙ্গে, যত কাজই থাকুক না কেন। সেও হলনা, ওর দাদাই নিল সে দায়িত্ব। তুষারের দাদাকে আমি দেখেছি বার কয়েক। পড়াশোনায় মোটামুটি ভালই ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডী পেরিয়ে একটা কাজও পেয়েছিল পার্টটাইম। তুষারের মত এত আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব নয়, বরং কথা খুবই কম বলে। চেহারাটাও সাধারণ। ওদের বাড়িতে এও দেখেছি ওর দাদা বেশীরভাগ সময়েই মায়ের কাজে সাহায্য করতে ব্যস্ত।

    এর পরে সবাই একে একে চাকরী পেতে শুরু করে। অরিন বাইরে চলে যায়। আমি শেষমেশ পুলিশে ঢুকলাম, অফিস লালবাজারে। একদিন শুনলাম শুভদের বান্ধবী তিয়াও বাইরে চলে গেছে ভাল চাকরী পেয়ে। তুষার তিয়ার সঙ্গে যাবার আগে দেখা করে শুভর সঙ্গে গিয়ে। ফিরে ঠেকে এসে কিছুদিন শুধু তিয়ার কথাই হত, দারুন মেয়ে!
    কিছুদিন পরে শুভও বাইরে চাকরি নিয়ে চলে যায়। একদিন শুনলাম তুষার আমেরিকা যাচ্ছে ওর স্যারের সাথে ওদের আবিস্কার নিয়ে। সবাই ওকে নিয়ে মেতে থাকল। আমার কেমন মাথায় ঢুকছিল না কিছু। এসব এত সহজে হয় নাকি? গবেষণা, আবিস্কার, বিদেশ যাওয়া! কে জানে? আমি তো বেশী পড়াশুনা করলাম না, এসব বুঝিনা হয়ত!
  • shrabani | 124.124.86.85 | ১৩ জানুয়ারি ২০১১ ১৭:১৯424724
  • দেবু হায়ার স্টাডিজ এর জন্য দেশের বাইরে যাবার চেষ্টায় লেগে ছিল। একদিন আমি, তুষার ও আরো দু চার জন বসে আড্ডা মারছি সন্ধ্যেবেলায়। এমন সময় দেবু এল। ওর বাইরে পড়তে যাবার সব ঠিক, কি সব পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে গন্ডগোল হচ্ছে। ও আমাকে একটু দেখতে অনুরোধ করল। আমি ওকে পরের দিন লালবাজারে আসতে বললাম, ঠিক লোকের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেব, তিনি ওকে সাহায্য করবেন। পরের দিন শনিবার, বাকীদেরও ছুটি। ঠিক হল ওরা সবাই যাবে আমার অফিসে দেবুর সঙ্গে। সকলের লালবাজার দেখার উৎসাহ খুব বেশী , তুষার অল্প আপত্তি করেও শেষে সবার জোরাজুরিতে রাজী হয়ে গেল।

    সেইমত পরদিন ওরা চারজনে মিলে লালবাজারে এল। খুব ভাল লাগছিল বন্ধুদের নিজের অফিস দেখাতে। ওদের আমার সীটের সামনে বসিয়ে চা টা আনালাম, আশেপাশে কলীগদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলাম। দেবুর কাজ মিটে গেল অল্প সময়েই।
    কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে ওরা সবাই চলে গেল।

    সীটে বসে কাজ করছি, বোসদা এলেন। উনি আমাদের বিভাগেরই একজন সিনিয়র,একই ঘরে বসেন। অনেকক্ষণ থেকে আমাদের দলটাকে লক্ষ্য করছিলেন সেটা খেয়াল করেছিলাম। তবে ওদের সামনে কিছু জিজ্ঞেস করিনি। উনি এসেই সরাসরি তুষারের কথা জিজ্ঞেস করলেন আমাকে। একটু অবাক লাগল ওনার এই অকারণ কৌতুহলে। যাইহোক, একরকম উপরওয়ালাই বলতে গেলে, ওনাকে কথায় কথায় সব কিছু বললাম, তুষারের অসুখ, ওর চাকরি, গবেষণা ইত্যাদি নিয়ে। সব শুনে উনি প্রথমে চুপ রইলেন কিছুক্ষণ, তারপর যা বললেন তাতে আমি ভাষা হারিয়ে ফেললাম!
  • Nina | 64.56.33.254 | ১৩ জানুয়ারি ২০১১ ২০:৩৯424725
  • একেই বলে থামতে জানার আর্ট! :-))
    আমরা নি:শ্বাস বন্ধ করে বসে রইলুম কিন্তু
  • shrabani | 124.124.86.85 | ২৫ জানুয়ারি ২০১১ ১২:১০424726
  • তুষারের কথিত ইনস্টিট্যুটে বোসদার যাতায়াত আছে। সেখানে তুষার চাকরি করেনা, তুষারের এক দুর সম্পর্কের আত্মীয় করে!!

    তুষার ওখানে সেই আত্মীয়ের কাছে যাতায়াত করতে করতে ওখানকার লোকজনের সঙ্গে ভাল আলাপ জমিয়ে নিয়েছিল। গল্পে আসর জমানোর ক্ষমতা ওর সহজাত, তাই দুদিনেই সবার খুব প্রিয় হয়ে দাঁড়ায়।
    কিছুদিন পরে শুরু হয় ওর খেলা। নানাজনকে ওর দুরারোগ্য অসুখের কথা জানায়,সেই একই ভাবে। মাঝে অনেকদিন যায় না। পরে এসে জানায় অসুস্থ ছিল, আস্তে আস্তে একে তাকে গোপনে জানায় সমস্যার কথা, টাকাপয়সার অভাবে কিভাবে চিকিৎসা হচ্ছেনা।
    সবাই বেশ কিছু টাকা যোগাড় করে দেয় ওকে। স্বাভাবিকভাবেই আত্মীয়টিকে কেউ কিছু জানায় না,উনি নেহাতই ভালমানুষ, যদি আপত্তি করেন! তুষারও অনেক আপত্তি টাপত্তি করে শেষমেশ টাকাটা নেয়।
    সবই ঠিক চলছিল, কিন্তু ওর আত্মীয় কিভাবে কার কাছে পুরো ব্যাপারটা একদিন জেনে ফেলেন।
    সব শুনে ওনার মাথায় হাত! তখন আসল ব্যাপার বাইরে আসে। উনি সবাইকে জানান তুষারের কস্মিনকালেও ব্লাড ক্যানসার হয়নি, সব মিথ্যে কথা! সবাইকে বারণ করেন ওকে আর টাকা যেন না দেয় কেউ। তুষারকেও ডেকে সবার টাকা ফেরত দিতে বলেন। জানাজানি হয়ে গেছে দেখে তুষার সেখান থেকে হাওয়া হয়ে যায়, আত্মীয়টির সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনা আর। ওর বাড়ীতে সব জানালেও এত টাকা ফেরত দেওয়ার মত অবস্থা ওদের নয়, তবু ওর বাবা দাদা চেষ্টা করবে বলে জানায়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কিছুই ফেরত দিতে পারেনি।

    বোসদার বন্ধু ওখানকার এক কর্মী, তার কিছু টাকাও তুষারের খপ্পরে গেছে। বোসদা সব শুনে তুষারকে ধরে থানায় এনে কড়কে দেবেন ঠিক করেছিলেন, তাই তুষারের ফোটো, নাম ঠিকানা যোগাড় করেছিলেন। তবে শেষে ওঁর বন্ধু বারন করেন, তুষারের নিরীহ আত্মীয়ের কথা ভেবে। জানাজানি হলে বাড়ির লোকেদের বদনাম হবে!
    ----------------------------
    কি করি আমি? বন্ধুদের সঙ্গে আমিই তো তুষারের আলাপ করিয়ে দিয়েছিলাম। তুষারকে যে উচ্চতায় ঠেকের সবাই বসিয়েছে তার প্রথম সিঁড়িটা তো আমারই গাঁথা! কেমন যেন মনে হচ্ছিল বোসদার কথাগুলো মিথ্যে হোক। বোসদা এক্ষুনি হো হো করে হেসে বলে উঠুক, "কি খুব বন্ধুদের নিয়ে মেতে ছিলে। আমাকে চাও অফার করলে না! তাই কেমন দিলুম বল, ঘাবড়ে গেছ তো? আরে এমনিই বললাম গল্পটা, তোমার বন্ধুকে আমি কস্মিনকালেও দেখিনি।"
    কিন্তু কিছুই হলনা। বোসদা আবার নিজের সীটে ফিরে গেছে আমার পৃথিবীকে নির্মম হাতে টুকরো টুকরো করে দিয়ে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সবাই কাজে বা আড্ডায় ব্যস্ত। কেউ আমাকে তেমন খেয়াল করছেনা। বাইরে এসে আস্তে আস্তে একটা সিগারেট ধরালাম। কাকে বলি বোসদার কথাগুলো! এ অবস্থায় শুভর কথা মনে হচ্ছে। ও কলকাতায় থাকলে একটুও ভাবতাম না, আমি ওর সাথে সবচেয়ে বেশী স্বচ্ছন্দ। অন্যরা যদি আমাকে ভুল বোঝে, বিশ্বাস না করে? আমারই কি সব বিশ্বাস করা উচিৎ? বোসদার তো কিছু ভুলও হতে পারে। আমি ছোটবেলার বন্ধুর থেকে বেশী বিশ্বাস করব, দুদিনের পরিচিত সহকর্মী আর বন্ধুর কোন এক দুরের আত্মীয়কে?

  • shrabani | 124.124.86.85 | ২৫ জানুয়ারি ২০১১ ১২:১৭424728
  • অনেক ভাবনা চিন্তা করার পর প্রাথমিক দোলাচলটা একটু স্তিমিত হলে একদিন গড়িয়ায় তুষারের কলেজে গেলাম নিজের পুলিশী পরিচয়ে। সমস্ত খাতা পত্র ঘেঁটে ফেলে,ভর্তির সব রেকর্ড চেক করে কোথাও তুষারের নাম পাওয়া গেলনা।
    এর পরে গেলাম ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটীতে। সেখানে খোঁজ করে বিএসসি পাসের লিস্টে গত ক বছরে তুষারের নাম কোথাও নেই!

    কিভাবে যে দিনগুলো কাটছিল! ঠেকে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। দেবুর যাওয়ার কতদুর কি এগোল তাও জানিনা। মাথার মধ্যে শুধু তুষার আর তুষার!
    শেষমেষ আর থাকতে না পেরে তুষারের দাদার সঙ্গে দেখা করলাম। এর শেষ আমাকে দেখতেই হবে। তুষারের দাদা একটি কলেজে টেম্পোরারী লেকচারারের কাজ করছিল। আমাকে ছোটো থেকে চেনে, সেরকম ঘনিষ্ঠভাবে না হলেও ভাইয়ের বন্ধু বলে জানে। তুষারের অসুখ সম্বন্ধে সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম।

    বোসদার কথাই ঠিক! ছোট থেকে রোগাভোগা হলেও চোখের পাওয়ার ছাড়া অন্য কোন বড় অসুখ ওর হয়নি কোনোদিন। আই স্পেশালিস্টের কাছে উনি গেছিলেন তুষারকে নিয়ে তবে তিনি যে অপারেশন করতে বলেন ম্যাড্রাসে গিয়ে তা প্রায় বিনা খরচাতেই হয়, ওখানে যাতায়াত আর খাওয়া খরচ বাদ দিয়ে। সেসব ওর বাবাই দেন, কোনো অসুবিধে হয়নি। এমনিতে তুষার কিছু করেনা বলে মাঝে মাঝে ও ওদের গ্রামের বাড়ীতে গিয়ে থাকে। গ্রামের জমিটমির ব্যাপারে আদায়পত্তরের জন্য ওদের বাবা ওকেই পাঠান। আমেরিকা যাচ্ছে বলেছিল যে সময় সে সময় আসলে ও গ্রামে গেছিল। আর সন্দেহের কোনো অবকাশ রইলনা।
    এসবের ফাঁকে ফাঁকে ওদের পাড়াতেও খোঁজ করছিলাম। ওরা কেউ কিছু জানেনা। পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে কোনোদিনই তুষারের বন্ধুত্ব ছিলনা। আসলে বোধহয় বেপাড়ায় বন্ধুত্ব করলে মিথ্যে বলে ধরা পড়ার চান্স কম হয়, তাই তুষার আমাদের পাড়ার ঠেকে আড্ডা গেড়েছিল। কিন্তু কেন কেন, আমরাই কেন, কেন আমি?

    অনেকদিন পরে ঠেকে গেলাম। নতুনরা আস্তে আস্তে ঠেক দখল করছে, পুরনোরা কেউ ছিলনা, দেবু তুষার কেউ না। ভালই হল, সবাইকে সব জানাবার অপ্রিয় কাজটা তক্ষুনি করতে হলনা। সবাই আমাকে অনেকদিন বাদে দেখে খুব খুশী, জমিয়ে আড্ডা দিলাম জুনিয়র ছেলেগুলোর সাথে। মনটা অনেকটা হাল্কা হল। কিন্তু বলতে তো হতই সবাইকে সবকথা। অরিন্দম এল কদিন বাদে। ওকে আর দেবুকে ডেকে নিয়ে একদিন সবকথা বললাম। তবে তুষারের মুখোমুখি আমাকে হতে হয়নি আর। যে কোনো কারণেই হোক সে আর কোনোদিন ঠেকে আসেনি বা আমাদের কারো সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি। হয়ত ওর দাদার কাছে খোঁজ নিয়েছি এখবর তুষার পেয়ে গেছিল। শুভকে একদিন সব কথা জানিয়ে চিঠি লিখলাম...............
  • shrabani | 124.124.86.85 | ২৫ জানুয়ারি ২০১১ ১২:২৫424729
  • *************ফিরে ফিরে দেখা - তিয়া**************

    শুভর কাছে তুষার বেঁচে আছে শুনে আশ্বস্ত হলেও মনের মধ্যে একটা কাঁটা খচখচ করতেই থাকে। শুভ তুষারের কথাটা ও ভাবে বলল কেন? কেমন ভাবে বেঁচে আছে তুষার?
    ট্যুর থেকে ফিরলাম তিনদিন বাদে। বাড়িতে বলেছি শুভর সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা। যারা কাছেপিঠে আছে সেসব বন্ধুদেরও ফোন করে জানিয়েছি। সবাই মিলে ঠিক হয়েছে এবার শুভ এলে একটা গেট টুগেদার করা যাবে, কাজে কর্মে সবাই ব্যস্ত থাকি অনেকদিন বসা হয়না একসাথে। কিন্তু একমাস গেল দুমাস গেল শুভর আর কোনো পাত্তা নেই। ওর মোবাইল নাম্বারে ফোন করলেই হয় বিজি আসছে নয় সুইচড অফ!

    শনিবার ছুটি ছিল। দল বেঁধে কজনে মিলে বেরিয়েছি দুপুরে কাছের একটা শপিং মলে, কেনাকাটি করে খাওয়াদাওয়া সেরে সিনেমা দেখে সন্ধ্যায় সব বাড়ি ফিরব, গরম কমলে। এক জায়গায় একটু দলছুট হয়ে যেতে যখন পার্স হাতড়াচ্ছি মোবাইলের জন্য, অন্যদের ট্র্যাক করব বলে, তখন খেয়াল হল মোবাইল বাড়িতে ফেলে এসেছি। চার্জিং এ রেখে ছিলাম, খুলে আনতে মনে নেই। যাইহোক, কিছু করার নেই। কাছে বাড়ী হলেও এই দুপুর রোদে বাইরে গিয়ে বাড়ী থেকে মোবাইল নিয়ে আসাটা পাগলামি হবে।
    অস্বস্তি ছিলই, অনেক সময় দরকারী অফিসিয়াল কল থাকে, তাই বাড়ী পৌঁছেই সবার আগে মোবাইলের দিকে এগিয়ে যাই। যাক, কোনো অফিসের কল নেই, ইন ফ্যাক্ট কোনো কলই নেই শুধু একই লোক্যাল নাম্বার থেকে চারটে মিসড কল পড়ে আছে। এরকম অচেনা নাম্বারের কল সাধারনত ব্যাঙ্কের বা অন্য কিছু অদরকারী হয়। ও নিয়ে আর মাথা ঘামালাম না। রাত্রে শুতে যাবার সময় আবার ফোন বেজে উঠল। দেখি ঐ নাম্বারই। এত রাতে ব্যাঙ্কের ফোন তো হবেনা, তাড়াতাড়ি তুলে নিই ফোন। ওদিক থেকে হ্যালো শুনেই বিস্ময়, শুভর গলা চিনতে ভুল হয়না!
    -"কিরে, কত ফোন করছি এসে থেকে, তুলছিলিই না?"
    আমিও সরোষে বলি,
    -"কেন রে কিপটে, নিজের মোবাইল থেকে করতে পারিসনি পয়সা খরচের ভয়ে? নাম্বার দেখে বোঝা যায় ওটা তোর ফোন? আজকাল দিনরাত যা আজেবাজে ফোন আসে। যাক , আজকেই এসেছিস, থাকবি তো? কবে দেখা হচ্ছে তোর সাথে?"
    -"আরে সেই জন্যেই তো। আগে কথা ছিল কালকে সাইটে গিয়ে মিটিং করব, পরশু ফেরত। কিন্তু আসার পর ক্লায়েন্ট জানাল মিটিং সোমবার রাখছে, ওদের বসের রবিবারে কিছু পার্সোন্যাল কাজ পড়ে গেছে। কাল পুরো ফ্রি, তুই বল কোথায় দেখা হবে?"
    তাড়াতাড়ি ভেবে নিলাম। কতগুলো কাজ ছিল, তবে তা পিছিয়ে পরের সপ্তাহে করা যায়। কিন্তু কোথায় মিট করা যায় শুভকে?
    বাড়িতে?
  • shrabani | 124.124.86.85 | ২৫ জানুয়ারি ২০১১ ১৪:৪৩424730
  • *************শেষ হয়না এ পথ - শুভ ও তিয়া************

    তিয়ার বাড়ির এই ব্যালকনিটা খুব সুন্দর। আগাগোড়া কাঁচ দিয়ে ঘেরা, বাইরে গাছপালা ঘেরা সবুজ পার্ক দেখা যাচ্ছে,কেমন মনে হয় যেন অন্য কোনো জগতে চলে এসেছে। কাঠের মেঝে, দুটো সুন্দর আরামচেয়ার রাখা, তারই একটাতে এখন শুভ বসে খাওয়াদাওয়ার পরে। আরামে দু চোখ জড়িয়ে আসছে ঘুমে।
    তিয়া এল, হাতে দুটো বড় কফি মাগ, একটা শুভর হাতে ধরিয়ে দিয়ে খালি চেয়ারটায় বসল। কফিতে একটা চুমুক দিয়ে বলল,
    -"কিরে, ঘুমিয়ে পড়েছিলি?"
    শুভ আধশোয়া অবস্থা থেকে একটু নড়ল,
    -"না, ঘুমোই নি। তবে তোর এই বারান্দাটা দিব্যি আরামের। বাড়িঘরদোর ভালই গুছোনো। চল, তোকে একশতে নব্বই দিলুম।"
    তিয়া হাসি চেপে ভ্রু কুঁচকে তাকালো,
    -"দশ নম্বর কাটলি কেন রে? রান্না খারাপ ছিল?"
    শুভ একটা মুখভঙ্গী করল,
    -"ভবিষ্যতের কথা ভেবে। পুরো নম্বর দিয়ে দিলে তুই বিগড়ে গিয়ে পারফর্মান্সের লেভেল যদি পড়ে যায় তাই!

    তিয়া রাগতে গিয়েও হেসে ফেলল। তারপরে বলল,
    -"নে শুরু কর। সবাইকে কাটালাম তোর কাছে সব কথা শুনব বলে। ফালতু সময় নষ্ট করিস না।"
    শুভ একটু করুণ মুখ করে,
    -"সে আমি জানি, তুই আমার সাথে একান্তে সময় কাটাবার জন্য সবাইকে কাটাসনি। সে ভাগ্য আমার কোনোকালে হয়নি। হলে আজ গপ্পটা অন্যরকম হত।"
    তিয়া মুখ ভেঙচে বলল,
    -"চুপ কর, নিজের মুখটা কখনো আয়নায় দেখেছিলি? তোর বউটাকে খুব ভালো বলতে হবে যে তোকে পছন্দ করেছে। আমার তার জন্য দু:খ হয়।"
    -"আর তোর বর? ও বেচারার দুর্ভাগ্যের কথা ভেবে তো আমার রাতে ঘুম হয় না।"
    তিয়া এবার সত্যিকারের রেগে চেয়ারের কুশন তুলে ছুঁড়ল শুভর দিকে। শুভ ওটা ক্যাচ করে কোলের ওপর নিয়ে জম্পেস করে উঠে বসল।
    -"ছাড়, তোকে তুষারের ব্যাপারটা বলি। আমি অবশ্য শেষের দিকে পিকচারে বেশী ছিলাম না। এর ওর কাছে শোনা কথা।"

    তিয়ার একটু ধন্দ লাগে, শেষের কথা! যাইহোক চুপ করে শুনতে থাকে শুভর কথা। শুনতে শুনতে কেমন সব ভুল হয়ে যায়, কফিতে চুমুক দিতেই ভুলে যায়। শুভ মাঝে সিগারেট ধরায় তাও তাকে কিছু বলতে পারেনা।
    সব কথা শোনার পর তিয়া অনেকক্ষণ চুপ করে থাকে। কিছু বলার মত যেন ভাষা খুঁজে পাচ্ছিল না দুজনের কেউই। শুভ ঠিক বুঝতে পারছিল না তিয়ার এই হতবাক অবস্থার সঠিক কারণ। ভালো করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে উত্তর খুঁজতে থাকে সে। শকড তো বটেই, কিন্তু কতটা, কেন? বিমানের সন্দেহটার সত্যিই কি কোনো ভিত্তি ছিল?

  • shrabani | 124.124.86.85 | ২৫ জানুয়ারি ২০১১ ১৬:২২424731
  • কিছুক্ষণ পরে একটু সামলে তিয়া কেমন যেন দূরের স্বরে বলে ওঠে,
    -"কী জানি রে, আমার সব কেমন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। ছলনা, প্রতারণা এসব সংসারে আছে জানি কিন্তু নিজের জীবনে কোনোদিন এভাবে এসবের সম্মুখীন হব ভাবিনি!"
    শুভ চিন্তা করে, তারপর কী ভেবে সরাসরি তাকায় তিয়ার চোখের দিকে,
    -"একটা জরুরী কথা তো এই পুরো কাহিনীটায় তোকে বলাই হয়নি।"
    তিয়া অবাক, আরো কিছু বাকী আছে!
    -"আর কী জরুরী কথা রে?"
    -"তুষারের দাদা বিমানকে আরো কিছু কথা বলেছিল। তুষারের বাড়ির লোকে ওর এই কিছু না করে বসে থাকাটা ভালভাবে নিতনা। ওর বাবা ভালই চাকরি করতেন, খুব সাধারণ কিছু না। তবু পড়াশোনা না করে বেকার হিসেবে বাড়ীতে বসে থাকায় গঞ্জনা দিতেন মাঝে মাঝে।
    যেমন করে ও আমাদের গবেষণা চাকরি এইসব গল্প শোনাত, বাড়ীতেও তেমনিই বলত বড় ব্যবসা করবে, ফাইন্যান্স পাচ্ছে এইসব।

    ঐ ঘটনার কিছু আগে থেকে ও বলতে শুরু করেছিল যে শীগগির বিয়ে করতে যাচ্ছে। মেয়েটি নাকি খুব শিক্ষিত, ভাল চাকরী করে, বাইরে থাকে। বাড়ীর অবস্থাও ভাল, সবাই উচ্চপদস্থ। মেয়েটীর বাড়ি থেকে ওকে ব্যবসা শুরু করতে সাহায্য করবে। তুষারের দাদা বিমানকে জিজ্ঞেস করে ও এসম্বন্ধে কিছু জানে কিনা। জানলে ওরা মেয়েটির বাড়ির লোকের সাথে কথা বলত। "
    -"তা এরকম কোনো মেয়ে সত্যি ছিল না এও তুষারের বানানো গল্প?"

    শুভ তিয়ার প্রশ্নে কৌতূহলে তাকায় ওর দিকে। তিয়া কি কিছুই জানেনা, বুঝতে পারছেনা?
    শুভ একটু সময় নেয়, সামনে দেখে। কাচের দেওয়াল ভেদ করে ওর দৃষ্টি পার্কের নরম ঘাসের মাঠের দিকে। পড়ন্ত বিকেলে, ছোট বাচ্চারা নানারঙের জামাকাপড় পরে দৌড়ে বেড়াচ্ছে ঠিক প্রজাপতির মত। কোনো ছলচাতুরি নেই ওদের মধ্যে, নির্মল পবিত্র।
    এরকম দৃশ্য দেখলে পৃথিবীকে সুন্দর লাগে, বাঁচার ইচ্ছে বেড়ে যায়। তিয়া কি দেখতে পাচ্ছে এসব? যদি পায় তাহলে হয়ত আজ ও মাফ করে দিতে পারবে, ওকে, অরিন্দমকে, বিমানকে এমনকি হয়ত তুষারকেও!
    চেষ্টা করে দেখতে দোষ কি? বিমান দুরের পার্ক থেকে নজর সরিয়ে তার পাশে বসা মানবীটির দিকে তাকায়। তিয়ার নাকের ডগায় ঐ তিলটা কি আগেও ছিল! কে জানে? কোনোদিন চোখে পড়েনি তো। সবসময় তো গোটা মানুষটাকেই দেখেছে, আলাদা করে নয়। শুভর কথা শোনার পরও মানুষটা আস্ত থাকবে তো?
  • shrabani | 124.124.86.86 | ২৫ জানুয়ারি ২০১১ ১৬:৪২424732
  • তিয়া শান্ত, অপেক্ষায় তাকিয়ে ওরই দিকে।
    নীরবতাটা অসহ্য লাগছিল শুভর। আর দেরী না করে একদম সহজ গলায় একটু মজার মুখ করে বলে ফেলল,
    -"বিমানের ধারণা হয়েছিল মেয়েটা তুই!"
    বলেই আঙুল না দিয়েই কানদুটো বন্ধ করল, বিস্ফোরণের শব্দ এড়াতে।

    কিন্তু না, সেরকম কিছুই হয়না। প্রথম এক সেকেন্ড স্বাভাবিক রাগে বিস্ময়ে তিয়ার মুখে কথা না সরলেও, সে সামলে নিয়ে ঝাঁঝিয়ে ওঠে।
    -"কি যা তা বলছিস। আমার সাথে কিছু চিঠির লেনদেন ছাড়া কতটুকু সম্পর্ক ছিল তুষারের? তোদের বন্ধু হিসেবেই জেনে এসেছি ওকে। তোর মুখে ওর অসুস্থতার কথা শুনে সহানুভূতি অনুভব করেছি, এইটুকুই। ভাল আছে শুনে ভাল লেগেছে।
    এটা একদমই মানবিক কারণ, এর মধ্যে অন্য কিছু খুঁজতে আরম্ভ করেছিলি তোরা, আশ্চর্য তো! আমাকে জড়িয়ে এরকম ভাবনা বিমান, তোর বন্ধুরা ভাবল কি করে?"
    শুভ ওর রাগ দেখে বন্ধ দমটা ছাড়ল। শান্তি শান্তি শান্তি!
    সব ঠিক হয়ে যাচ্ছে, সাঅব। এই তো সে শুভ, কমিক শুভ। এই তো তিয়া, লড়াকু, ঝগড়াটি, ভালো, নরম মনের তিয়া!
    হই হই করে সে চেঁচিয়ে ওঠে,
    -"তোর স্বভাব আর শোধরালোনা তিয়া, সেই অল্পেতেই রেগে উঠিস এখনো? আরে আমি তো সত্যিটা জানতামই। তার দিনকয়েক আগেই আমি তোর বিয়ের কার্ড পেয়েছি। বিমানকে পরিস্কার বলে দিয়েছিলাম যে ও মেয়ে যদি কেউ সত্যিই থাকে তো সে অন্য কেউ, তুই কখনোই নয়। এ নিয়ে ওকে আর কথা বাড়াতেও বারন করে দিয়েছিলাম।
    যাক শেষটা শোন, এরপর কেউই আর তুষারের সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখেনি। যতদুর মনে হয় ও কলকাতায় আর থাকেনি, থাকলে কারোর না কারো চোখে পড়তই। হয়ত গ্রামেই চলে গিয়েছে পাকাপাকি।"
    তিয়া শান্ত হল অন্তত বাইরে থেকে।

    শুভ চলে গেলে রাত্রে খাওয়াদাওয়ার পরে আবার এসে বসল কাঁচের বারান্দায় আলো নিভিয়ে। হাতে কফির কাপ, সামনে এখন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ড্রইংরুমের আলোর কিছুটা এসে পড়ে কাঁচের দেওয়ালে তার নিজের মুখ দেখা যাচ্ছে, আবছা অস্পষ্ট।
    চোখ দুটো স্থির, সামনে ফাঁকা দৃষ্টি,মাথায় শুধু শুভর বলা কথাগুলোই ঘুরছিল। অনেককালের পাজলের কতগুলো হারানো টুকরো যেন হঠাৎ হাতে এসে গেছে। একটু খুঁজে খুঁজে ঠিক জায়গায় বসাতে পারলেই সমাধান!
    তিয়াকে নিয়মিত চিঠি লেখা, গবেষণা, আমেরিকা, হঠাৎ ক্যানসার ভাল হওয়ার ওষুধ। কেন তিয়ার বিয়ের খবরের পরে আর একটাও চিঠি আসেনি! এসব টুকরো হাতে নিয়ে উত্তর খুঁজেছে যে ও নিজেও অনেকবার।
    সত্যি অনেক অসঙ্গতি ছিল সেইসময় তুষারের বলা কথাগুলোয়। তখন ওদের বয়স কম ছিল, মন অন্যরকম ছিল, তাই সহজেই সব কিছু বিশ্বাস করত, শুভ, বিমান, অরিন্দম, তিয়া, ওরা সবাই। আজ আর এরকম ভাবে কেউ হয়ত এত সহজে ওদের বোকা বানাতে পারবেনা!
    কিন্তু যেভাবে কোনো প্রশ্নের মীমাংসা করে আনন্দ হয়, পাজল সলভ করে যে উত্তেজনা হয় তার কিছুই মনে হচ্ছেনা কেন?
    ক্লান্তিতে তিয়া চোখ দুটো বুজিয়ে ফেলল। আবার কি একটা অন্য প্রশ্নের উত্তর খোঁজা শুরু হল জীবনে, কে জানে!

    (শেষ)
  • d | 14.96.5.193 | ২৫ জানুয়ারি ২০১১ ১৭:১৬424733
  • কিছু লোক আছে এরকম অদ্ভুত। সম্পূর্ণ অকারণে অকাতরে মিথ্যে বলে যায়। এই তুষার নাহয় কিছু করত না, কিন্তু আমি এরকম লোকজন দেখেছি যারা খামোখাই উপযাচক হয়ে 'জানত আমি অমুক কোম্পানিতে তমুক করি' বা 'অমুক স্কুলে যখন পড়তাম ....' অথচ সেই কোম্পানি বা সেই স্কুলে সে হয়ত আদৌ ছিলই না কোনোদিন।

    আত্মবিশ্বাসের অভাব কত গভীর হলে লোকে এরকম করে কে জানে!!
  • um | 115.113.42.99 | ২৫ জানুয়ারি ২০১১ ১৮:১৭424734
  • just অসাধারন ! বাস্তব জীবনে আমি একজন কে চিনতাম যে 4-5 yrs ধরে তার প্রেমে পরা , প্রেম করা , বিরহ ও শেষে মেয়েটির মারা যাবার গল্প তার বন্ধুদের কে ক্রমানয় বলেছিল । যার পুরোটাই ভুলভাল।
  • pipi | 92.225.144.154 | ২৫ জানুয়ারি ২০১১ ১৮:৪২424735
  • কি কাণ্ড! um, আপনার সেই পরিচিত আর আমার পরিচিত এক ব্যক্তি নন তো? আমারও এক পরিচিত বহু বছর ধরে এক দু;খী মেয়ের গল্প, তার প্রেমে পড়া, মেয়েটির ক্যানসার আক্রান্ত হওয়া এবং আমার পরিচিতর তাকে প্রাণপণ সেবা করা, শেষে তার মৃত্যু ইত্যাদির গল্প শুনিয়ে গেছে। এমনকি একটি নেটওয়ার্কিং সাইটে সেই মেয়েটির নামে প্রোফাইল খুলে বহু বছর ধরে এ নাটক সে চালিয়ে গেছে। সেই মেয়েটির কিছু বন্ধু বান্ধব (ভার্চুয়াল) এখনো জানে যে মেয়েটি মারা গেছে আর তার প্রোফাইলে গিয়ে কনডোলেন্স মেসেজ লিখে আসে।
    কি বিচিত্র যে মানুষ!
  • Nina | 68.84.239.41 | ২৬ জানুয়ারি ২০১১ ০৬:৫৫424736
  • শ্রাবণী, মনটা থমকে গেল। ভাবি তাই মানুষ কখন যে কি করে ফেলে, কেনই বা করে , কে জানে!দূর থেকে বা বলতে পার বাইরে থেকে আমরা হয়ত বিচার করে ফেলতে পারি সহজে---কিন্তু ঠিক সেই মানুষটা কি কারণে এমন করল আর তার মনের কি অবস্থা সেটা শুধু সেই বলতে পারে বোধহয়! আমার খালি মনে হয় কে জানে আমি কি করতাম in her/his shoes হলপ করে বলতে পারিনা।
    তোমার লেখা খুব সুন্দর। একটা নেশা হয়ে যায় পড়ার। আরও লিখ, প্লিজ।

    Pi Pi জান তো আমারও এরকম একটি গল্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে এই ভার্চুয়াল জগতে। কি অদ্ভুত তাই ভাবি!
  • M | 59.93.216.183 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ২৩:৪৫424737
  • কদিন আগে ঘর গোছনোর সময় লাল ভেলভেট মলাটের ডায়েরিটা পেলাম। এটা বিবিদির ডায়েরি,ওকে আমি ছোট থেকেই চিনি, আমার সবথেকে প্রিয় বন্ধুর পিসির মেয়ে ও।ছোটবেলায় ওদের বাড়ীতে প্রায় ই আসতো।ও আমার পেশেন্ট ছিলো, আসলে ওর অসুস্থতাটা যতটা না শারীরিক তারথেকে অনেক বেশী মানসিক অসুস্থতা ছিলো।আমি ওকে ভাবনা তে পাঠাই।আমার বন্ধু মৌলির তৈরী ভাবনা।এটা সম্পূর্ন মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত একটা সংস্থা।ওখানেই ওকে পাঠাই কাউন্সেলিং এর জন্য।কিন্তু বিবিদি কিছুতেই ওদের সাথে কো-অপারেট করছিলো না।আর দিন দিন ও ভায়োলেন্ট হয়ে উঠছিলো। শেষে ওকে হোমে পাঠাতে হয়, কারন বাড়ীতে ওকে একা রাখা যাচ্ছিলো না।দাদাভাই কাজ নিয়ে মাসের বেশীরভাগ সময় বাইরে কাটান,আর ওদের একমাত্র ছেলে এখন অস্ট্রেলিয়াতে রয়েছে পড়াশুনার জন্য।

    ওকে যেদিন হোমে নিয়ে যাওয়া হল,আমি সেদিন ওকে এই ডায়েরিটা দিয়েছিলাম,বলেছিলাম তুমি একেই বন্ধু করে নাও। কারন একদিন বিবিদি বলেছিলো জানিস, কত কথা বলতে চাই অথচ কাউকে বলতে ভালো লাগেনা।

    তারপর দিন চলে গেছে, মাঝে মাঝে খবর নিতে যাই, আমার ও কাজ বেড়ে গেছে।একদিন ওদিকে কাজে গেছিলাম,বিবিদির সাথে দেখা করলাম।আমাকে ও ঐ ডায়েরিটা দিলো,বলল,রেখে দে তোর কাছে এটা, আর তারপরেই খবর পাই বিবিদি আর নেই,সেরিব্রাল হ্যামারেজ হয়েছিলো ওর।
  • M | 59.93.216.183 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ০০:১৮424739
  • তারপর দিন কেটে গেছে, কাজের তালে ডায়েরিটার কথা ভুলেই গেছিলাম।কিছুদিন আগে আমি আমার স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট টাকে রঙ করলাম,আসবাব কিছু করালাম, মানে মনের মতন করে সাজালাম।আসলে এটা কিনতে আমার জমানো পয়সা প্রায় সব বেরিয়ে গেছিলো।এবার হাতে কিছু পয়সা এসেছে, আর লোন ও শোধ হয়ে গেছে।সুন্দর করে সব গোছাচ্ছিলাম, তখন ই ডায়েরিটা চোখে পড়ে।

    স্টাডি টেবিলে রেখে দিয়েছিলাম। এখন বাইরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হচ্ছে।আজ মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে, কাল কিসের একটা বন্ধ আছে, কাল আর সকালে না উঠলেও চলবে, বেশ একটা হঠাৎ পাওয়া ছুটি।আজ ভাবছি সিদ্ধভাত খাব, উঠে গিয়ে রাইস কুকারে আলু ,ডিম আর চাল ধুয়ে বসিয়ে দিলাম।যদিও ফ্রিজে খাবার রয়েছে, কিন্তু আজ আর কিছু বার করতে ইচ্ছে করছে না। সাধারনত: রবিবার সকালবেলায় সারা সপ্তাহের রান্না করে কৌটতে করে ভাগে ভাগে রেখে দি।

    এবার স্নান করতে যাবার আগে সেলার থেকে রেড ওয়াইনের বোতলটা নিয়ে ডিপ ফ্রিজে ঢুকিয়ে দিলাম। তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হবে।এই ব্যাপারে আমি খুব কিপ্টেমো করি। ইচ্ছে হলেও, খুব সহজে ওয়াইনের বোতলে হাত দিই না।কিন্তু আজ দিনটা অন্যরকম।

    আজ গবলেটের বদলে কাট গ্লাসে ঢাললাম, তারপর বটলটাকে এমনি ফ্রিজে সেঁধিয়ে দিলাম।আজ রাতে ডায়েরিটা পড়বো ঠিক করলাম।
  • til | 210.193.178.129 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ১১:০৯424740
  • ওহ, বিগেম
    এখনও ডীপ ফ্রিজে, বের করেননি? সেরেছে!
  • M | 59.93.172.5 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ১২:৩৩424741
  • এইযো তিলুদা, আমি ভীষন সিরিয়াস মুখ করে সিরিয়াস লেখার চেষ্টায় রত।:P
  • koli | 115.187.40.11 | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ১০:৪০424742
  • অনেকদিন পর টইপত্তরে এসে পড়তে থাকা গল্পের শেষটা পড়তে এসেছিলাম।।।হুঁ---গল্পটা শেষ---কী অদ্ভুত!
    খুব ভালো লেখা শ্রাবণী দি---আমি খুব কম বুঝি---তবুও খুব ই ভালো লেখেন আপনি।।।
    নিনা দি কী সুন্দর একটা কথা বললে তুমি :-)।।।

    এম দিদি---তোমার গল্পটা পড়ছি এবারে :-)
  • Shibanshu | 59.97.232.223 | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ১১:৪০424743
  • কী হলো....? এতো ক্ষণ ধরে এক পাত্র রেড ওয়াইন !!! না আবার M ফর মাইগ্রেন ? :-(
  • M | 59.93.192.8 | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ১৪:২৭424744
  • :)
  • M | 59.93.192.8 | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ১৫:১১424745
  • আজ বোধহয় সারারাত ই বৃষ্টি চলবে,মার ফোন এলো, এটা নিয়ম করে আসে,আসলে মায়ের কাছে আমি এখন ও ছোট্ট খুকিটি হয়ে আছি,আমার একা থাকা নিয়ে মার খুব আপত্তি,কিন্তু আমি একা ভালোই আছি,নিজের সাথে সময় কাটাতে আমি খুব ভালোবাসি।বৃষ্টি হওয়াতে গুমোটটাও কেটে গেছে। ডায়েরিটা নিয়ে শুয়ে পড়লাম, আমার এই অভ্যেসের জন্য খুব বকা খেতে হত। মা বলতো শুয়ে কখনো পড়বে না, চোখের ক্ষতি হয়।

    ডায়েরিটা ভারী অদ্ভুত, কোনো লেখাতেই ডেটের বালাই নেই,মানে শুরু - শেষ ,ইচ্ছে মতন।প্রথমে নানা রকম আঁকিবুকি রয়েছে,তারমধ্যে নানা রকম আকৃতি,আকারের চোখ আঁকা।

    প্রথম যে পৃষ্ঠায় লেখা আছে সেটা এরকম:

    শোনো, তোমাকে বলছি,আমার হোম একদম ভালো লাগছে না, মায়া নামে যে আয়াটা আমাকে দেখে, ও আমাকে ঠিক এভাবে ট্রিট করছে যে আমার কোনো বোধ বুদ্ধি নেই, আর মজার কথা হলো আমার কোনো কথাতে কেউ ই গুরুত্ব দিচ্ছে না, ভাবছে আমি ঠিক বলছি না, আমি কি সত্যি পাগল নাকি? আমি দেখলাম আমার সাবান, ক্রিম,টিপের পাতা এগুলো সব ও নিয়ে নিলো,আমি কিছু বলিনি তখন ও, কিন্তু সেদিন আমার চুল বেঁধে দিতে এসে এমন ভাবে তা করছিলো যে আমার খুব ব্যাথা লাগছিলো,আমি নিজে করে নিতে চাইছিলাম,আমি তো অসুস্থ নই, আমায় চেঞ্জ করাতে এসেও খুব অসভ্যের মত ব্যবহার করে।আমি সেদিন আর পারিনি,আমার জলের গ্লাসটা ছুঁড়ে মেরেছি,তাতে আমি যে পাগল সেটা আরো প্রমান হয়ে গেলো,তবে তাতে একটা উপকার হয়েছে, আমাকে কেউ আর ঘাঁটায় না।

    এরপর বেশ কয়েক পৃষ্ঠা কোনো লেখা নেই।তারপর আবার শুরু হয়েছে।

    আজ তিন্নি নামের মেয়েটি ঘর থেকে বেরিয়ে প্যাসেজ দিয়ে হেঁটে কোথাও যাচ্ছিলো, ও বুঝতে পারেনি, সারা জায়গাটা নোংরা করে ফেলেছে,রক্তে ওর পোষাক ও নোংরা হয়ে গেছে। ওকে চুলের মুঠি ধরে পরিস্কার করতে নিয়ে যাওয়া হলো,মেয়েটার বোধ কম,ওর দোষ কোথায়? খুব কাঁধছিলো। এখানে সবাই এত নির্দয় কেন কে জানে!

    আমার খুব মাকে মনে পড়ে গেলো।জানো আমি আমার মায়ের একমাত্র সন্তান,খুব যত্নে মা আমাকে বড় করেছে, অথচ যখন একটু বড় হলাম তখন থেকে মাকে একটা অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখে এসেছি। আসলে বাবা মাকে সেরকম ভাবেই দেখতো আর আমি ছিলাম বাবার নয়নের মনি, সব সময় এমন একটা ব্যাবহার করতো বাবা আমার সঙ্গে যে আমি খুব স্পেশাল, তার ফলে আমার মনে খুব অহঙ্কার ছিলো।মা দিনরাত সংসারের জন্য খেটে যেত, আমাদের প্রতিটি ব্যাপারে তার দৃষ্টি ছিলো।যেন আমাদের জন্য রান্না করা, জামাকাপড় রেডি করে হাতের কাছে দিয়ে দেওয়া, পরিপাটি বিছানা করা এসবের জন্যই মা রয়েছে, এগুলো আমাদের কাছে এত স্বাভাবিক ছিলো যে কখনো মনে করিনি সে মানুষটার ও বিশ্রামের প্রয়োজন আছে, তার ও কিছু সখ থাকতে পারে। অথচ জানো মাকে কোনদিন এ নিয়ে অনুযোগ করতে দেখিনি, অথচ আমি আর বাবা তা খুঁত ধরতে রেডি থাকতাম, সেটা আমাদের কাছে একটা আমোদের ব্যাপার ছিলো, তারপর আমরা তাকে যেন কিছুটা কনসিডার করছি এ ভাবে বলতাম ঠিক আছে, এটা হতেই পারে।আজ এই বয়েসে এসে মনে হয়, মার তুলনায় আমরা কতটা ক্ষুদ্র মাপের ছিলাম, সে কখনো আমাদের কাছে কেন এই ব্যবহার করছি সেই প্রশ্ন করেনি,কেবল নীরব উপেক্ষা দিয়ে আমাদের হারিয়ে দিয়ে গেছে।এমনকি আমাদের তার জন্য কিছু করার ও সুযোগ দেয় নি, নীরবেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।
  • M | 59.93.192.8 | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ১৫:১৪424746
  • কাঁদছিলো
  • M | 59.93.222.177 | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ১৬:৩২424747
  • কতদিন হয়ে গেলো আমি এখানে এসেছি? তুমি জানো? আচ্ছা তুমি তো কিছুই বলবে না, কেবল শুনবে, বেশ! আমার তোমার এই ধরনটা খুব ভালো লাগে, আর তুমি কাউকে বলেও দেবে না, তাই না? আমার মনে হচ্ছে, যেন কত যুগ কেটে গেলো,আজ কত তারিখ ?কি বার? যাকগে, তাতে আর আমার কি দরকার।

    কাল যেন অনিমেষ এসেছিলো,ও নিয়ম করে প্রতিমাসে একবার করে আসে, আধঘন্টা মতো আমার কাছে বসে, অত্যন্ত বিরক্তিকর সময় সেটা,তারপর চলে যায়। অসীম ব্যস্ততা ওর।সবাই ব্যস্ত। কেবল আমার ই যেন সময়ের শেষ নেই।কি ক্লান্তিকর।নীল ফোন করে প্রতি সপ্তাহে।এত সেন্সিটিভ হয়েছে আমার ছেলেটা,অথচ ওকে কখন ও আমি কাছে টেনে নেই নি।আমাকে প্রতিবার ই বলবে, মাম্মা,তুমি একটু আমাকে সময় দাও, আর কটা দিন পরেই আমার পড়াশুনা শেষ হবে, আমি জব পেলেই তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো।খুব মজা করবো তুমি আর আমি,এখানে একটা ছোট্ট নদী আছে জানো, সেখানে প্রতি ছুটির দিন আমরা পিকনিক করতে যাবো, আচ্ছা, না না আরো অনেক জায়গায় যাবো।মাম্মা প্লিজ, খুব লক্ষ্মী হয়ে থেকো, কটা দিন আমায় সময় দাও।

    আসলে আমি খুব চেয়েছিলাম আমার একটা মেয়ে হোক, তাইজন্যই কিনা কে জানে আমি ওকে কখনো খুব কাছে আসতে দিতে পারিনি,বা আমার স্বভাবটাই ওরকম।তবে ওর সব প্রয়োজন এর দিকে আমার নজর ছিলো।বড্ড চুপচাপ আমার ছেলেটা।
  • M | 59.93.222.177 | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ১৭:১৪424748
  • সেদিন টুবলাই এসেছিলো,ও আমার মামার ছেলে, আমরা সমবয়সী।সারাক্ষন বকবক করে গেলো, আসলে ও চাইছিলো আমি একটু আনন্দ পাই।শেষে বললো, বিবি চল ছোটবেলাটাতে চলে যাবি?

    আসলে,ছোটবেলাতে মামাবাড়ী খুব যাওয়া হত।উত্তর কলকাতাতে আমার মামাবাড়ী, বিরাট জয়েন্ট ফ্যামিলি।একটা মস্ত বড় তিনতলা বাড়ীতে আমার দাদুদের সব ভাইরা আর তাদের সব ছেলেরা একসঙ্গে ছিলো।প্রচুর মানুষ, আর আমাদের ও একটা বড় দল ছিলো।যেহেতু আমি কেবল বাবা আর মায়ের সাথে থাকতাম তাই আমার কাছে মামাবাড়ীটা ভারী প্রিয় জায়গা ছিলো।

    একদিন আমরা খেলছিলাম, বেশ ছোট তখন,টুবলাই এসে আমায় টানতে টানতে ছাদের ঘরে নিয়ে গেলো, বললো চল একটা মজার খেলা খেলবো, তুই আর আমি বর বউ খেলবো,তারপরে বললো, জামা প্যান্ট খুলে ফেল।আমি তখন এতটাই হতভম্ব যে ওকে না বলতেও পারছি না, আর কারোর সামনে , এমনকি মার সামনেও আমি প্যান্ট খুলে ফেলতে পারিনা, কাজেই সেটাও পারছি না, শেষে ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেললাম।টুবলাই এতটাই অবাক হয়ে গেলো যে আমাকে রেখেই পালিয়ে গেলো।তারপর আমার খুব জ্বর হয়েছিলো।আমি জ্বরের ঘোরে দেখছিলাম যে প্রায় সারাটা দিন বেচারা আমার মাথার কাছে বসে থাকতো।

    তারপর আমরা বড় হয়ে যেতে লাগলাম।খুব তাড়াতাড়ি দিন যাচ্ছিলো।আমার পড়াশুনা,গানের ক্লাস ইত্যাদি নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে মামাবাড়ী যাওয়াটাও ক্রমশ: কমে আসছিলো।

    একদিন তখন শেষ বিকেল,আমি খাটের উপর বসে পড়াশুনা করছিলাম।আয়নার দিকে চোখ পড়লো,দেখি জানলা দিয়ে আসা নরম আলো আমার মুখে চুলে পড়ছে, আমি অবাক হয়ে আমাকে দেখছিলাম, আমার ঘন ব্রাউন রঙের চোখের মনি আর চুল আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম।নিজেকে দেখতে যে এত ভালো লাগে সেদিন অবাক হয়ে খেয়াল করলাম। মা আমার চুল কালো করার জন্য কত কিছু চেষ্টা করে, কিন্তু আমার সেদিন মনে হলো কালো চুলের থেকে আমার এই চুল অনেক সুন্দর।তাড়াতাড়ি ঘরের দরজা বন্ধ করে এলাম। সম্পুর্ন আমিটাকে দেখতে চাই, আমার শরীরের প্রতিটি অংশ আমাকে নিজেকে ভালোবাসতে বাধ্য করছিলো।কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে কি এক পাপবোধ ও আমাকে আচ্ছন্ন করছিলো।তারপর থেকে এ যেন একটা খেলা হয়ে গেলো।কিন্তু যখন ই আমি এভাবে নিজেকে দেখতাম তারপরেই খুব অন্যায় করেছি মনে হত।

    একবার মনে নেই কি কারনে মামাবাড়ী গেলাম কোনো অনুষ্ঠানে।রাত্রে ঢালা বিছানা হয়েছিলো।টুবলাই যথারীতি আমার পাশে এসে শুয়ে পড়লো।তারপর বললো, বিবি কানে কানে একটা কথা শোন, বলেই কানে জোড়ে কু দিলো।ব্যস তারপরেই আমাদের মারপিট শুরু হয়ে গেলো।পাশ থেকে কে যেন খুব বিরক্ত হয়ে বললো মারপিট করতে হলে অন্য কোথাও যাতো। আমরা হাসতে হাসতে আবার শুয়ে পড়লাম, খুব হাঁপাচ্ছিলাম।টুবলাই এর গরম শ্বাস আমার কানে গলায় পড়ছিলো,দেখি ও খুব চুপ করে গেছে আর আমাকে দেখছে, টুবলাই কত চেঞ্জ হয়ে গেছে, আর ওর মধ্যে সেই নরম ব্যাপারটা নেই, ওর কোঁকড়ানো কালো চুল গুলো এলোমেলো হয়ে রয়েছে, লাল ঠোঁট সব মিলিয়ে যেন আরো সুন্দর হয়ে গেছে,আমায় বললো, বিবি তুই কি নরম !আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম।ও বুঝতে পারলো।অথচ আমার খুব ভালো ও লাগছিলো।
  • M | 59.93.222.177 | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ১৭:৫৫424750
  • আচ্ছা বলতো, তোমার কি মনে হয় না বিয়ে নামক সম্পর্কটার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া উচিত? আমার মনে হয়, আর আমার এই ধরনের ভাবনাগুলোর জন্যই আমার মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন আসে।আর আমি যখন কিছুতেই আমার প্রশ্ন গুলোর উত্তর খুঁজে পাই না, আর দেখি আমাকে কিছু না বুঝিয়ে কেবল আমার কথাটা চাপা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তখন আমার যে কি হয়,আমি তখন সব ছুঁড়তে শুরু করি জানো, আর আমার নিজেকে ব্যাথা দিতেও খুব ভালো লাগে তখন।ভালো লাগা? না না খুব উল্লস হয় আমার, সব কিছু ভেঙ্গে চুরে নষ্ট করে দিতে ইচ্ছে করে, অথচ জানো অমি কিন্তু এরকম ছিলাম না।

    আমার বিয়ের পরের দিন গুলো এত সুন্দর ছিলো।অনিমেষ আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু ছিলো তখন।আমি মন খুলে সব বলে দিতাম ওকে।কোনোদিন এমনকি মা বা বাবাকেও এত কিছু বলিনি।এত কেয়ারিং ছিলো ও।

    নীল আসাতে ও যে কি খুশী হয়েছিলো।অফিসের সময় বাদ দিয়ে নীলকে নিয়েই ও সময় কাটাতো।আমি খুব মিস করতাম তখন ওকে, আর আমার মনে হত এ ছেলেটা হলো কেন? কেন যেন আমার মধ্যে সে মা ব্যাপারটা কিছুতেই আসতো না। একদিন ভাবছিলাম মেরে ফেলি ওকে, বালিশ নিয়ে ওর মুখটা চেপে ধরতে ও গেছিলাম, তখন ই নীল এমন করে আমার দিকে তাকালো যে আমার ভারী মায়া হলো। ছেড়ে দিলাম।অনিকে আমি বলেছিলাম ঘটনাটা। এই প্রথম দেখলাম ও আমায় বুঝতে পারলো না।খুব আতঙ্কিত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।পরের দিন ও অফিসে গেলো না। আর সেদিন ই একজন সারাদিনের কাজের লোক এলো নীল কে দেখার জন্য। জানো, আমি তাতে রাগ করিনি বরং হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন