সৎ দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে আমাদের গুরুদায়িত্ব সরকারেরব কথাকে বেদবাক্য বলে মেনে নেওয়া। এই পরিস্থিতিতে, নিজের স্বাস্থ্য নিজের সুরক্ষার দায় এক এবং একমাত্র নিজের, এমত সরকারি ঘোষণায় উদবুদ্ধ হয়ে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি বড় অংশ যদি বাড়িতে বসে থাকতে চান, তাহলে নিশ্চয়ই তাঁদের দোষ দেওয়া যায় না। তাই না?? তাহলে কী করবেন? কী আবার!!! আপনি হাত ধুচ্ছেন তো? আপনার সরকারও হাত ধুয়ে নিলেন। অতএব, আপনারা থালা বাজান। বাতি জ্বালুন। কোনো এক শুভদিনে সন্ধ্যা আট ঘটিকায় পরবর্তী ঘোষণার অপেক্ষায় থাকুন। ... ...
এই পরিপ্রেক্ষিতে ১৮২৩-২৪ সালে দেশে কলের সুতো এল। হাতে বোনা সুতোর থেকে তার দাম কম। ধীরে ধীরে বাজার ছেয়ে গেল কলের সুতোয়। টিঁকে রইল শুধু খুব মিহি সুতো আর খুব মোটা সুতো, যা পরে দেশের গরীরগুর্বোরা। সেই সময়ে ১৮২৮ সালের সমাচার দর্পনে এক সুতাকাটুনির দুঃখভরা চিঠি বেরোল, তিনি দৈনিক দুই তোলা সুতো কেটে দিনে এক টাকা আয় করতেন। এই কাজ করে তিনি সাত গন্ডা টাকা দিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, এগার গন্ডা টাকা দিয়ে শ্বশুরের শ্রাদ্ধ করেছেন, ভাত কাপড়ের কোন চিন্তা ছিল না। কিন্তু কলের সুতো এসে তার আয়ের উপায় কেড়ে নিয়েছে। তাঁর দৈনিক কাটা সুতোর পরিমাণ আর আয়ের হিসেব দেখে অবশ্য একটু অবাকই লাগে। কারণ ১৮২২-২৩ সালেও নাকি ক্ষীরপাই, রাধানগরে কোম্পানির কাটুনিদের মাসিক আয় ছিল ৩ টাকা আর মালদহে ২টাকা ৮ আনা। অসামান্য দক্ষতা ছাড়া এই আয় সম্ভব না। তাই আমরা ব্যক্তির দুঃখে দুঃখিত হই, কিন্তু সামগ্রিক ভাবে বিজ্ঞানের অগ্রগতির জয়গান গাইব নাকি মেয়েদের আয়-হরণের দুঃখে কাতর হব তা ঠিক বুঝে উঠি না। ... ...
আধুনিক বৃহৎ প্রযুক্তি-নির্ভর চিকিৎসা বিজ্ঞান জনসাধারনের জীবনের বিনিময়ে এর পরিধিকে ক্রম-বিস্তৃত, ক্রম-প্রসারিত করতে চাইছে। পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ থেকে শুরু করে মৃত্যু অবধি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র medicalized হয়ে উঠছে অর্থাৎ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত, রোগা হওয়া থেকে মোটা হওয়া, বিবাহ থেকে সন্তান ধারণ করা সবকিছুই চলে আসবে মেডিসিনের নজরদারিতে – সবকিছুর শেষ কথা হবে মেডিক্যাল ওপিনিওন, পরিচালজের স্থানে থাকবে মেডিসিন। কিভাবে ঘটে এই medicalization? সে এক মর্মন্তুদ, অতি আগ্রাসী যুদ্ধ – বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলোর তরফে। অতি বিস্তৃত এর জাল – পৃথিবীর প্রতিটি দেশে, ব্যতিক্রমহীনভাবে। ... ...
এখন মাঝে মাঝেই মাকে স্বপ্ন দেখি। স্বপ্নেও আমি ভুলতে পারি না যে আম্মা আমাদের সাথে নাই। যতবার দেখি ততবার আমি আম্মাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে থাকি, কাঁদতে কাঁদতে ঘুম ভাঙে আমার। জরিয়ে ধরার সুখটুকুই শুধু থাকে তখন। ... ...
১৯৬০ এর পর থেকেই লাতিন আমেরিকা জুড়ে চালু হয়েছে, জনপ্রিয় হয়েছে একটা শব্দ –গেভারাইজম। গত পঞ্চাশ বছর জুড়ে,এমনকী এই একুশ শতকেও লাতিন আমেরিকায় এমন কোন বিপ্লবী বা প্রগতিশীল আন্দোলন হয় নি যা এই আর্জেন্টিনিয়-কিউবান চিকিৎসক-বিপ্লবীর দ্বারা অনুপ্রাণিত নয়। মার্কসবাদ বা লেনিনবাদ বা মাও চিন্তাধারার মত গেভারা বাদ/চিন্তাধারা-র মত শব্দ আমাদের এখানে খুব বেশি শোনা না গেলেও লাতিন আমেরিকার নিজস্ব বাস্তবতার কারণেই তা ওখানে বহু উচ্চারিত। জাপাতিস্তা আন্দোলন ‘গেভারিয়ান’ হিসেবে নিজেদের চিহ্নিত করেছিল। কলম্বিয়ায় ‘ই এল এম’ গেভারীয় আদর্শে এখনো গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য শুধু গেরিলা যুদ্ধের দিক থেকেই নয়, ভূমিহীন কৃষক সহ সমাজের সব নিপীড়িত শাসিত শোষিতদের লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা হিসেবে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনেও চে প্রাসঙ্গিক ও অনুপ্রেরণা হয়ে আছেন। ... ...
"উঠোন পেরিয়ে বিষন্ন বদন যে ভবনটির সামনে এসে সাধনার আপিস বাড়ি। ভয়ে ভয়ে দরজা পেরিয়ে ঘরে ঢুকলাম। চোখে সবকিছু ধাঁধা ঠেকল। অন্ধকার যেন ঝাঁপিয়ে পড়ল। আর সেই আধার সাঁতরে যখন চোখটা একটু সয়ে আসল, দেখি, চৌকোনো এক মস্ত ঘর, চারধারে টেবিলের সারি। তাতে কর্মচারীরা নিবিষ্ট মনে কাজ করছেন। ওই মস্ত ঘরে সাকুল্যে দুটি ৪০ পাওয়ারের বাতি। বাইরের আলো থেকে ঘরে ঢুকলে হঠাৎ কিছু চোখে পড়বে না। তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। নিমে তথা ফতুয়াধারী লোকগুলোকে কেন যেন জ্যান্ত লাশ মনে হচ্ছিল - নড়াচড়া নেই, কথা নেই, ঘাড় খুঁজে কী সব আঁকিবুকি কষছে! আর একেবারে সামনে নড়বড়ে টেবিলে নিমে গায়ে যিনি বসে, বিজ্ঞাপনে তার চেহারা এত সহস্র বার দেখেছি যে তাকে চিনতে কষ্ট হলো না মোটে।" ... ...
ভয়ংকরী কালী সঙ্গে সারা শরীরে শাদা রঙ মাখা জটাধারী শিব সঙ্গে কিছু অনুচর। ড্যা ড্যাং ড্যাং ঢাকের বাদ্যি। একটু রাত করে শিব কালীর তুমুল নাচন। একটু ভয় করে, মজা ও হয়। সিধা দেওয়া হয়, চাল, ডাল, তেল, নুন, আলু আর পয়সা। ঠাম্মা কটা বাতাসা দেন। খুশিতে শিবঠাকুর কালীঠাকুর দুজনেই আটখানা। আরো নাচতে চায়। কেউ প্রশ্রয় দেয়না বেশি। ঢাকি নাচ বেশি ক্ষণ ধরে হলে নাকি বাড়িতে চুরি হয়, শিবের ভূতরা অন্ধিসন্ধি দেখে যায় পরে শিবঠাকুরের সঙ্গীরা সিঁদ কাটে। চোর কি আর সাধারণ চোর? রাত জেগে পড়ছে কোনো পরীক্ষার্থী, লাগাবে ধমক। ওদের কাজের অসুবিধা হচ্ছে যে। ... ...
স্কুলের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলেই আজকাল মেয়েদের এগিয়ে থাকার খবর উঠে আসে সংবাদপত্রের প্রথম পাতায়, girls outperform boys. পাশের হার থেকে প্রথম স্থান, সবেতেই মেয়েদের জয়জয়কার। পরিসংখ্যান একটু খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করলে ছবিটা কেমন অন্যরকম হয়ে যায়, আগুপিছুর হিসেব বদলাতে থাকে। সেই ধূসর পর্দায় ফুটে ওঠে কিছু missing women-এর মুখ। ... ...
জঙ্গল না কাটলে, প্রকৃতিকে ধ্বংস না করলে "সভ্য" মানুষ বাঁচবে না। প্রান্তিকদের প্রান্তিকতর করে না তুললে উন্নয়ন থমকে যাবে। মানুষকে অত্যাচারে, বঞ্চনায় স্যাডিস্ট এবং নৃশংশ করে তুলতে পারলেও সভ্যতার অনেক লাভ। এইসব নৃশংশ হত্যার দায় সভ্যতাকে নিতে হয় না - নিজ গৃহকোণে চোখের জল ফেলে "অসভ্য নিষ্ঠুর" মানুষের প্রতি ঘৃণাবর্ষণ করে একটু স্বান্ত্বনা পাওয়া যায়। ... ...
তোমার সুরের ধারা ঝরে যেথায়...আসলে যে কোনও শিল্প উপভোগ করতে পারার একটা বিজ্ঞান আছে। কারণ যাবতীয় পারফর্মিং আর্টের প্রাসাদ পদার্থবিদ্যার সশক্ত স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে থাকে। পদার্থবিদ্যার শর্তগুলি পূরণ হলেই তবে মনন ও অনুভূতির পর্যায় শুরু হয়। যেমন কণ্ঠ বা যন্ত্র যদি সঠিক কম্পাংকে না বাজে বা রঙের দুনিয়ায় পরস্পর পরিপূর্ত বর্ণিকাবিভঙ্গ বিষয়ে যদি আঁকিয়ের ধারণা না থাকে, তবে তো প্রথম বেড়াটিই পেরোনো যাবেনা। যে সব শিল্পীদের সিদ্ধিলাভ হয়ে গেছে, তাঁদের শিল্প পরিবেশন, পদার্থবিদ্যা কেন, মননেরও প্রাথমিক ... ...
"....মাথায় এক ছটাক ঘিলু থাকলেই এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর নামে কী ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় নজরদারি নেমে আসতে পারে। সরকার এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কাছে থাকা প্রত্যেক ভারতবাসীর তথ্য নিয়ে আধার যোগ করে ন্যাশনাল সোশ্যাল রেজিস্ট্রি বানানোর কাজ প্রায় সম্পূর্ণ হওয়ার মুখে; যা ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় নজরদারির প্রচেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। এই অ্যাপ থেকে সংগৃহীত তথ্য ন্যাশনাল সোশ্যাল রেজিস্ট্রি তৈরিতে ব্যবহৃত হবে না তো?...." ... ...
ধরা যাক, অতি খাজা একখানা প্রবন্ধ পড়তে পড়তে মুখ থেকে অজান্তেই একটি শব্দ বেরিয়ে এল, -‘জঘন্য’। বেজায় সমস্যা এই তৎসম শব্দটিকে নিয়ে। এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কিনা ‘জঘনভব’ বা ‘জঘনতুল্য’ [জঘন + য (যৎ)]। কিন্তু, সেই শব্দের অর্থ শেষ অবধি ‘নিকৃষ্ট’, ‘নিন্দনীয়’ বা ‘কুৎসিত’-এ দাঁড়াল কেন, - সে এক রহস্য! ‘জঘন’ শব্দটি বেদে ব্যবহৃত। ... ...
বয়স পঁচাত্তর। রাষ্ট্রপতি পুরষ্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক। উত্তরপ্রদেশে অনেক মানুষ এক ডাকে চেনে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিও আছে। সেই তিনিই থানা থেকে বেরিয়ে এলেন কাঁপতে কাঁপতে, মুখ দু হাতে ঢেকে, যেন তাকে নিতে আসা আত্মীয়স্বজন দেখতে না পায় কান্না রক্ত অপমান মাখামাখি সর্বস্ব হারানো মানুষটির লাঞ্ছিত মুখমণ্ডল। তাদের কাছেই তো ফোন গিয়েছিল ছাড়াতে আসবার সময় যেন মৌলানার জামাকাপড় বাড়ি থেকে নিয়ে আসা হয়। তাহলে যে পোশাকে শিক্ষককে পুলিশ নিয়ে গিয়েছিল সেগুলো কোথায় ! বন্ধুরা, যারা আমাকে নতুন বছরের শুভ ... ...
আমাদের বিষন্নতা, সংস্কৃতি এবং রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে কিছু বিচ্ছিন্ন ভাবনা চিন্তা। ভাবছেন ফার্মা'র শেষ উপপাদ্যের সাথে এসবের সম্পর্ক কি? তাহলে পড়েই দেখুন না! ... ...
আমি মালা। নবমের বার্ষিক পরীক্ষা দিলাম না। গরমের ছুটিতেই প্রেম। তারপর পালিয়ে বিয়ে। এখন আমরা তিনজন। বুবুনকে স্কুলে আমিই রাখতে যাই। ওর বাবা সকালে ঘুমিয়ে থাকে। মায়েদের ক্লান্তি বলে কিছু হয় না। শুধু এক লহমায় সব উথাল পাথাল হয়। যেমন আমার হয়েছিল। এক ম্যাসেজে। ছয় হাজার টাকা তোলার ম্যাসেজ। তুলেছিল বুবুনের বাবা। আমার এটি এম কার্ড চুরী করে। তারপর সব ছবির মত। ... ...
হিন্দি সিনেমার নায়ক নায়িকা চেনা ছিল বিশেষ গুন। সবাই পারত না, ফট ফট করে নাম বলে দেওয়া এ কি সোজা কথা? ডিডি ওয়ান আমাদের কাছে বিটিভির মতই ছিল। তাই আমরাও দুই একটা নাম জানতাম। কিন্তু আমাদের চেয়েও পাকনা কেউ আসলে অবাক হওয়া ছাড়া ভিন্ন কোন রাস্তা থাকত না। একটু ঘাইঘুই করে মেনে নিতাম। ঢাকা থেকে কোন আত্মীয় আসছে, তাদের সাথে আমরা পারি? হয়ত বাসায় তাদের ভিসিআর আছে, ততদিনে ক্যাবল লাইনও চলে গেছে ওদের ঘরে। নিত্য নতুন সিনেমার গল্প, নায়ক নায়িকার কিচ্ছা আমরা কই পাব? রবিবার করে রঙ্গোলী আর চিত্রাহার দিয়া খুব বেশি ফাইট দেওয়া যেত না। তাই মেনে নিতাম। ... ...
স্বাদের কথা যখন বললাম তখন আরেকটু বলি। বড় ঈদ মূলত খাওয়ার ঈদ। কোন পরিসংখ্যান আছে কিনা জানা নাই আমার। আমার ধারনা এই ঈদের পরে মানুষ বেশি অসুস্থ হয়। কারণ সবার ঘরে ঘরে গোরুর মাংস। সকাল বিকাল সন্ধ্যা রাত চলছে গোরু খাওয়া। এখন অনেক ধরনের রান্না হয় মাংস। আগে তা হত না। আম্মাকে দেখতাম বড় এক পাতিলে অনেক মাংস একবারে রান্না করত। ওই এক জিনিসই। চলত জ্বাল দেওয়া আর খাওয়া। একদিন পর থেকে স্বাদ পরিবর্তন হয়ে যেত। যতই দিন যেত ততই নতুন স্বাদ পাওয়া যেত। দুইদিন তিনদিনের মাংসের যে স্বাদ তা রীতিমত স্বর্গীয় লাগত আমাদের। জ্বালে জ্বালে মাংস আর মাংস থাকত না, সব মিশে অন্য কিছু একটা হয়ে যেত, যার কোন তুলনা নাই। ঈদের পর দিন আমাদের বাড়িতে খাওয়া হত গোরুর মাংস আর পরোটা। কেউ কেউ চালের গুড়ার রুটি খেত, আমাদের এখানেও হত। লা জবাব স্বাদ! এখন নানান ধরনের রান্না হয় মাংস। কাবাব হয়, কোরমা হয়, টিকিয়া হয়, সাদা মাংস রান্না হয়, এবং আরও নানান ধরনের রান্নায় এখন ঈদ জমে যায়। ... ...
পল ডিরাক - তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার জগতে এক প্রকান্ড জ্যোতির্ময় বটবৃক্ষ! কিন্তু,কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় মৌলিক যুগান্তকারী গবেষণা করা সত্ত্বেও প্রায় হাতছাড়া হচ্ছিলো তাঁর নোবেলভাগ্য! নোবেলবাবু নিজের নামে প্রাইজ দেওয়ার জন্য যেসব শর্তাদি চাপিয়ে গেছিলেন তা ফিজিক্সের ক্ষেত্রে বেশ গোলমেলে আকার নিয়েছিলো। মানবসভ্যতার উপকার বলতে ফিজিক্সের ফিল্ডে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারই বুঝে নিয়েছিলো নোবেল কমিটি। ... ...