১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়ন কমিটি তৎকালীন সাংসদ ও জুম্ম জাতির মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার (এমএন লারমা) পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসত্ত্বাগুলোকে সংবিধানে অন্তর্ভূক্তির দাবি এবং সংবিধানে পাহাড়িদেরও বাঙালি হিসেবে পরিচিতি দানের প্রতিবাদ বিবেচনায় নেয়নি। ফলশ্রুতিতে গড়ে উঠেছিল আন্দোলন। সে আন্দোলন এক পর্যায়ে সশস্ত্র আন্দোলনে রূপ নেয়। দীর্ঘ তিন দশকের রক্তক্ষয় আর অর্থ সম্পদ ধ্বংসের পর সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে স্বাক্ষরিত হয় পার্বত্যচুক্তি। সমস্যার কি সমাধান হয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তরে আদিবাসীরা বলবেন, "না' "না' "না'। আর আওয়ামীলীগ সরকার বলবে "হ্যঁ¡' । ... ...
নীরদ সি. "আত্মঘাতী বাঙালী' বইটিতে তাঁর অননুকরণীয় ভঙ্গীতে বলেছিলেন "বাঙালীর জাতীয় যৌবনের প্রভাতের কথা দূরে থাকুক, সন্ধ্যার কথাও কেহ বলে না। শুধু উহাই আত্মঘাতী হইবার একটা লক্ষণ'। সেই হিসাবে "গান্ডু' সম্পর্কে কিছু কিলোবাইট খরচা না করলে শুধু যে কৃপণ হিসাবে বদনাম রটার সম্ভাবনা থাকবে তাই নয়, নীরদীয় উবাচ অনুযায়ী ব্রহ্মপাপী হয়ে থাকতে হবে। এখন প্রশ্ন একটাই - "গান্ডু' কি বাংলা সিনেমার ভোরের সূর্য নাকি মধ্যরাত্রির অন্ধকার? সে উত্তর দেওয়ার আগে কিছু প্রাককথন নিতান্তই দরকার। ... ...
"আমাদের জলখাবার সম্বন্ধেও তাহার অত্যন্ত সংকোচ ছিল। আমরা খাইতে বসিতাম। লুচি আমাদের সামনে একটা মোটা কাঠের বারকোশে রাশকরা থাকিত। প্রথমে দুই-একখানি মাত্র লুচি যথেষ্ট উঁচু হইতে শুচিতা বাঁচাইয়া সে আমদের পাতে বর্ষণ করিত। দেবলোকের অনিচ্ছাসত্ত্বেও নিতান্ত তপস্যার জোরে যে-বর মানুষ আদায় করিয়া লয় সেই বরের মতো, লুচি কয় খানা আমাদের পাতে আসিয়া পড়িত তাহাতে পরিবেশনকর্তার কুণ্ঠিত দক্ষিণহস্তের দাক্ষিণ্য প্রকাশ পাইত না। তাহার পর ঈশ্বর প্রশ্ন করিত,আরো দিতে হইবে কিনা। আমি জানিতাম, কোন্ উত্তরটি সর্বাপেক্ষা সদুত্তর বলিয়া তাহার কাছে গণ্য হইবে। তাহাকে বঞ্চিত করিয়া দ্বিতীয়বার লুচি চাহিতে আমার ইচ্ছা করিত না। বাজার হইতে আমাদের জন্য বরাদ্দমত জলখাবার কিনিবার পয়সা ঈশ্বর পাইত। আমরা কী খাইতে চাই প্রতিদিন সে তাহা জিজ্ঞাসা করিয়া লইত। জানিতাম, সস্তা জিনিস ফরমাশ করিলে সে খুশি হইবে। কখনো মুড়ি প্রভৃতি লঘুপথ্য, কখনো-বা ছোলাসিদ্ধ চিনাবাদাম-ভাজা প্রভৃতি অপথ্য আদেশ করিতাম। দেখিতাম, শাস্ত্রবিধি আচারতত্ত্ব প্রভৃতি সম্বন্ধে ঠিক সূক্ষ্মবিচারে তাহার উৎসাহ যেমন প্রবল ছিল, আমাদের পথ্যাপথ্য সম্বন্ধে ঠিক তেমনটি ছিল না।' ... ...
বষয়টিকে একটু বিশদ করার প্রয়োজন মনে করি। যে কোনও বাঙালিরই মানসভুবন কলকাতা আর দেশভাগে বাস্তুচ্যুত বাঙালির শিকড়ভুবন পূর্ববঙ্গ। বাস্তুচ্যুত যে কোনও বাঙালি কবিরই নান্দনিক জগৎ কলকাতায়, সেখান থেকে ইশারা আসে, খবর আসে। সেখানকার আলো হাওয়ায় কেলাসিত হয়ে বহির্বিশ্বও তার কাছে এসে ধরা দেয়। আবার তার প্রাণের শিকড় তো, অন্তত গত শতাব্দী পর্যন্ত, চারিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের কোনও চোখে না দেখা-নাম শোনা কিংবা চোখের দেখা-প্রাণের-কথায়-ভরা গ্রামে। সেখান থেকে কি আসত? আসত স্মৃতি আর রূপকথা। কিন্তু তার বাস্তবের পৃথিবী? দেশভাগের পর বাস্তুচ্যুত বাঙালির বাসভুমি তো ছড়িয়ে আছে আবিশ্ব - নিউ ইয়র্কের পানশালা থেকে আসাম কিংবা মিজোরামের অনাবাদী জমির পাশের ঘাসবৃক্ষ পর্যন্ত। এখন, এই বাস্তবের পৃথিবীর শিশিরবিন্দুগুলিকে ভালো না বেসে, তার থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে কবি যদি শুধু ঘুরে বেড়ান এক অতৃপ্ত মানসলোকে কিংবা স্মৃতিপৃথিবীতে - তাঁর এই পর্যটন তো, পুরাণের ভাষায় বললে, গণেশের সেই মাতৃপ্রদক্ষিণ, যা আসলে কার্তিকের প্রকৃত ভ্রমণটিকে দাবিয়ে রাখার জন্য বানানো এক নিপুণ কথার ফাঁদ। তো একজন কবির তো আসল সত্যটা জানা চাই। কথার ফাঁদ কতদিন আটকে রাখবে তাঁর কবিত্বকে? আর এই কথার ফাঁদ থেকে মুক্তি পেয়েছে আসামের বাংলা কবিতা তার আশ্চর্য ভূগোল-সচেতনতায়। মূলত দুই দুটি বিশ্বযুদ্ধের কারনে বিগত শতাব্দীটি ছিল কাঁটাতারের আর উদ্বাস্তু প্রব্রজনের। তার ভূগোল-চেতনার মাধ্যমে আসামের বাংলা কবিতা সব মানস-কাঁটাতারকে অগ্রাহ্য করার শক্তি পেয়েছে। ... ...
না, এই সব নয়। এর বাইরেও আছে আরেকটি জটিল কারণ। সেই কারণ ওই নারী। আর বিদুর নিজেও জড়িয়ে আছেন সেই কারণের সঙ্গে। ওই নারীর শরীরে রয়েছে তাঁর বীজ। সদ্য জানা গেছে সেকথা। মহারাজ পাণ্ডু জানেন কি না তা জানা হয়নি বিদুরের! মহারাজ বলেই বিদুর তাঁকে সম্বোধন করেন। একই পিতার সন্তান হলেও পাণ্ডু বা ধৃতরাষ্ট্র কেউই নিজেরাও কখনো ভোলেননি বা তাঁকেও ভুলতে দেন নি যে তিনি দাসীপুত্র। পাণ্ডু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে রাজকুমার থেকে যুবরাজ এবং পরে মহারাজই হয়ে থেকে গেছেন তাঁর কাছে। কিন্তু পৃথার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বা তাঁর বীজ পৃথার শরীরে, এ নিয়ে মহারাজের কী বা কতটা জানা তা প্রকট নয়। মহারাজের ব্যবহারের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি। ... ...
জীবনে অনেক সময়ই এসেছে যখন আমার স্বদেশবাসী আমার গান নিয়ে নিন্দের ঝড় তুলেছেন,তীক্ষ্ণ সমালোচনায় আমাকে ছিঁড়েখুঁড়ে দিয়েছেন,সে সময়গুলোয় নিজেই নিজেকে অভিশাপ দিয়েছি। নির্বোধ আর ছোটমনের কতজনকেই তো আমাকে নীচু করার চেষ্টায় উঠেপড়ে লাগতে দেখলাম! কিন্তু এই জীবনেই আবার এইরকমও কিছু দুর্লভ মুহূর্ত আছে যখন মনটা কৃতজ্ঞতায় ভরে ওঠে -- জীবন আমাকে এই রকম অসাধারণ কিছু ব্যক্তিত্বের কাছাকাছি আসার সুযোগ দিয়েছে বলে, আমার হাত দিয়ে ওঁদের নিয়ে এরকম গান লিখিয়ে নিয়েছে বলে। ... ...
দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতা করা, ভাবনাচিন্তা করা, প্রথা বহির্ভূত শিক্ষার সঙ্গে জড়িত থাকা, ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে এই উপলব্ধি হয়েছে যে বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থা বলে যা প্রচলিত, তার সঙ্গে "শিক্ষা' র সম্পর্ক খুবই কম। স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটির এই সিস্টেমটাকে বরং বিদ্যালয়-ব্যবস্থা বলা যেতে পারে। এই ব্যবস্থাটিতে শিক্ষা বস্তুটি অনুপস্থিত থাকে। কিন্তু এই ব্যবস্থা থেকে কিছুই শেখা হয় না তা বলে দেওয়া যায় না। যদিও কেউ কেউ তাই বলেন। এমনিতে ক্লাসরুমে বসে শিক্ষকের সঙ্গে ছাত্রদের যেটুকু ভাবের বিনিময় ঘটে, তাতে ছাত্র ও শিক্ষক উভয়েই যে জ্ঞানার্জন করেন, তা হয় ঘটনাচক্রে। তাই বলা যেতে পারে এই ব্যবস্থার মধ্যে থেকেও ছাত্ররা একেবারে কিছু শেখে না তা নয়। তবে সে শিক্ষার পেছনে এই প্রচলিত ব্যবস্থার অবদান কম। "শিক্ষা' যেটুকু হয় সেটা হয় ছাত্র শিক্ষক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে কিছুটা বাইরে থেকে। ... ...
আয়লার পর সুন্দরবন গিয়ে আমার মনে হয়েছিল ,যদি আয়লার ধ্বংসলীলা না ঘটতো তাহলে সুন্দরবনের সমস্যা দেশের তো বটেই ,এমনকি রাজ্যের সচেতন মানুষদের কাছেও অজানা রয়ে যেতো । সুন্দরবনবাসীদের মুখে বার বার শোনা যাচ্ছিল ,যদি আয়লার মত বা তার চেয়ে বড় কোনও সমুদ্র তুফান আবার হয়, তাহলে কি হবে । তারপর তিনবছর কেটেছে । আয়লার ভয়ঙ্কর ক্ষয়ক্ষতির অন্যতম কারণগুলি বিভিন্নজন, যারা বিষয়টি বোঝেন ও কাছ থেকে দেখেছেন,তাঁরা চিহ্নিত করেছিলেন । সমাধানের উপায়ও বাতলে দিয়েছিলেন ,তার মধ্যে ছিল বাদাবন বাড়ান ,এমব্যঙ্কমেন্ট সারানোর নিয়মিত ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বীরভূমের পান্নালাল দাশগুপ্তের পথে ফ্লাড সেন্টার তৈরী পর্যন্ত নানারকম সমাধান সূত্র ,এই পরামর্শগুলির পিছনে ভাবনা ছিল ,সমবেদনা ছিল ,ছিল বাস্তব অভিজ্ঞতার জোর ।কিন্তু কিছুই হয়ে ওঠেনি সুন্দরবনে । পানীয় জলের সংস্থান টুকুও নয়। ... ...
ভেবেছিলাম লিখবো না, কারণ লিখে খুব কিছু হয় যে সবসময় এমন দাবি করা যাচ্ছে না, এবং শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ফাহমিদা বা গণযোগাযোগ বিভাগের মেধাবী ছাত্রী সুতপার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে লেখালেখি থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে এসব লেখালেখি করে নিজে খানিকটা সান্ত্বনা পাওয়া যায় যে ছিলাম আমিও প্রতিবাদে, এর বাইরে খুব যে কাজ হয় তেমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবুও আজ লিখছি বা বলা ভালো যে না লিখে পারছি না এই অন্তর্গত তাড়না থেকে যে সত্যিই যখন আজ রুমানা দেশে ফিরেছেন তাঁর ডান চোখের আলো ফিরে পাবার শেষ আশ্বাসটুকু ছাড়াই তখন ওই যে আমিও ছিলাম প্রতিবাদে কেবল সেই গোঁয়ার সান্ত্বনাটুকুর জন্যই হয়তো এই লেখা। ভেতরে কোথায় যেন একটা শুভবোধ কাজ করছিলো যে অন্তত এক চোখের আলো তার ফিরে আসবে। সেই শুভবোধের, আশার ক্ষীণ আলোটিও যখন শেষ হয়ে গেলো, তখন আমি সত্যিই কিছু কালোসিধে কথা বলতে চাই। ... ...
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষিকা রোমানা মঞ্জুরের সাথে গত ৫ জুন কি বীভৎস এবং ঘৃণ্য কাজ সংঘটিত হয়েছে সে সম্পর্কে কম বেশি আমরা সকলেই অবগত । কাজেই সে সম্পর্কে আমি নিজে আর বিস্তারিত কিছু বলতে চাইনা, কেবল সম্পূর্ণ বিষয়টিতে আমার নিজের কাছে কিছু অসঙ্গতি চোখে পড়েছে, সেটাই আমি এখানে ব্যক্ত করতে আগ্রহী। প্রথমত, তার সাথে যা হয়েছে সেটা নিয়ে লেখালেখি করতে গিয়ে কিংবা বলতে গিয়ে অনেক জায়গাতেই আমি দেখছি যে বলা হচ্ছে 'তার মত মেধাবী, উচ্চশিক্ষিত একজন নারীর সাথে এরকম ঘৃণ্য কাজ হওয়াটাকে কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায়না' বা এরকম কিছু কথা। এসব কথার অর্থ কী? তিনি যদি 'মেধাবী' কিংবা 'উচ্চশিক্ষিত' না হয়ে থাকতেন তাহলে কি তার বিরুদ্ধে এই আচরণ গ্রহণযোগ্য হতো ? তিনি যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকা না হতেন তাহলে কি এই ভয়াবহ আচরণকে অনুমোদন করা যেত ? যখন কারো প্রতি সহানুভূতি জানাতে গিয়ে এরকম স্পর্শকাতর বিষয়ে 'মেধাবী', 'উচ্চশিক্ষিত' এইসকল শব্দ ব্যবহৃত হয় তখন খেয়াল রাখাটা জরুরি, যে যারা 'মেধাবী' কিংবা 'উচ্চশিক্ষিত' হিসাবে সমাজে সেভাবে পরিচিত নন তাদের সাথে এরকম কিছু হলে তখন সেই বিষয়টা প্রান্তিক হয়ে যায়। আমাদের মনে রাখবার দরকার যে কেউ 'মেধাবী', 'উচ্চশিক্ষিত' হোক না হোক কারো সাথেই এমন আচরণ গ্রহণযোগ্য নয় । এখানে ব্যক্তির শ্রেণীগত অবস্থান, সামাজিক অবস্থানের চাইতেও ব্যক্তি স্ব্য়ং বেশী গুরুত্বপূর্ণ , রোমানা মঞ্জুরের সাথে যা হয়েছে সেটা নিয়ে আমরা সকলে যেরকম সোচ্চার সেরকম কিছু আমার বা আপনাদের কারো বোনের সাথে হলেও সকলের সোচ্চার হওয়াটাই কাম্য । এক্ষেত্রে মানুষ নিজে যদি তার সামাজিক অবস্থান , শ্রেণীগত অবস্থানের চাইতে কম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায় তাহলে প্রতিনিয়তই এরকম ঘটনা ঘটে যাবার সম্ভাবনা আরো বেশি । দ্বিতীয়ত, রোমানা মঞ্জুরের নিজের যেই শ্রেণীগত অবস্থান, তাতে তার ১০ বছর ধরে স্বামীর অত্যাচার সহ্য করাটাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে তার নিজের গাফিলতি এবং বস্তাপচা কিছু সংস্কার মেনে চলবার অসমর্থনযোগ্য প্রয়াস হিসাবেই দেখতে পছন্দ করব। ... ...
চলতি কনস্পিরেসি থিয়োরীগুলোর মধ্যে আমার সবচাইতে পছন্দেরটা হল পাকিস্তানকে বহির্বিশ্বের চোখে হেয় করার জন্য আমেরিকান সেনা ওসামা'কে অন্য কোথাও থেকে অপহরণ করে আবোত্তাবাদে এনে গুলি করে মারে! এটা করতে গিয়ে আমেরিকা নিশ্চই নিজেদের চারটে চপার আর নৌবহরের "এলিট' কম্যান্ডোদের নিরাপত্তার কথা ভেবে দেখেনি। দু:খের কথা হল, এইধরণের বস্তাপচা থিয়োরী পাকিস্তানের মূলধারার ভাবচিন্তারও একটা অংশ। আসলে, পাকিস্তানকে অপদস্থ করবার জন্য কোনও দেশকেই কিছু করতে হবে না। আত্মবীক্ষণের অণুমাত্র যদি আমাদের মধ্যে অবশিষ্ট থাকে তাহলে একটা দেশ হিসেবে আমাদের লজ্জা বোধ করা উচিত। ... ...
"গো গোয়া'। গোয়া পর্যটনের বিজ্ঞাপন। প্রায় প্রতিটি রাজ্য, বিশেষ করে যারা পর্যটনকে ভালোরকম অর্থকরী শিল্প হিসেবে দেখছে, এই ক্যাচ ফ্রেসগুলি নিয়ে আসে। "ঈশ্বরের দেশ', "ভারতবর্ষের হৃদয়'...। আমাদের "গো গোয়া' স্থির হল অক্টোবরের শেষে। এই সময় কেরালায় দ্বিতীয় বর্ষাকাল। অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর। বিকেল থেকে মেঘ করে আসে, সারা রাত্তির বৃষ্টি। সকাল বেলায় নীলকান্তমণি আলোয় চারিদিক ঝকমক করে। পাঞ্জিম-এও দেখলাম মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের থাকার আস্তানা,শহরের ল্যাটিন পুরোনো হেরিটেজ অঞ্চল ফন্টেইনাস -এ। "পাঞ্জিম ইন'। বেশী পুরোনো নয়, উনিশ শতকে বানানো। রাস্তার দিকে রট আয়রনের "বালকাও'। ঝুল বারান্দা। ভেতরের ঘর,সিঁড়ি , দালানের পাষে মস্ত খাবার জায়গা কলোনিয়াল আসবাব, ছবি,আয়নায় সাজানো। সেরামিকের নীল-সবুজ টালি বসানো ফোর-পোস্টার বেড। ফন্টেইনাসে এই রকমই সব বাড়ী। সদর দরজার দেওয়ালে লাগানো নীল-সাদা হাতে আঁকা আজুলেজো (Azulejo) টালি তে গৃহকর্তার নাম, বাড়ীর নম্বর। রাস্তায় একটু এগিয়ে আঠেরো শতকের সেন্ট সেবাস্টিয়ান চার্চ। ... ...
আমি জানি না রেল কিম্বা সড়ক যে পথেই হোক শিলচর যাবার মতো সুন্দর পথ অসমে আর দ্বিতীয়টি আছে কিনা। আমি জানি না, অসমের আর কোথাও দয়াং কিম্বা জাটিঙ্গার মতো সবুজ, স্বচ্ছ নদী রয়েছে কিনা। আমি জানি না ভুবন পাহাড়ের মতো বিশাল রোমাঞ্চকর গুহা অসমে আর রয়েছে কিনা। বাকি সব পাহাড়, অরণ্য, ইতিহাসে ধন্য রাজনীতি, সংস্কৃতি কিম্বা ধর্মের কেন্দ্রগুলোর কথা না হয় উল্লেখ করলামই না। সে গুলো নিয়ে অন্য কখনো, অন্য কোথাও লিখব না হয়। আপাতত দাঁড়ানো যাক। ... ...
পৃথা, আরেক কন্যকার নাম। রাজা কুন্তীভোজের পালিতা দত্তক কন্যা। জনসমাজে অনেককাল ধরেই পুত্রের মতই কন্যার উপযোগিতা হিসেব করে নেওয়া হয়েছে। সাধারণ সংসারে তার কাজ পুত্রসন্তান জন্ম দেওয়া বিশেষ করে। কন্যা সন্তান খুব একটা কাঙ্খিত নয়। তার বিবাহের জন্য বড্ড সমস্যা। তাছাড়া সমাজ ভরে আছে দুরাচারে। কোনো রাজশক্তিই একে পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম নয়। কন্যা জন্মালে যে কোনো সময়ে যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। জারজ সন্তানে সমাজ ভরে যাচ্ছে। কিন্তু সেই কন্যাই আবার উচ্চাকাঙ্খি পরিবারে সম্পদ হয়ে উঠতে পারে। রাজা থেকে রাজপুরুষেরা কেউই তাকে সে কাজে ব্যবহার করতে পিছপা নয়। আবার সাধারণের মধ্যেও সেই হিসেবে একাংশ বেশ দড়। রাজা কুন্তিভোজও পৃথাকে তাঁর নিজের পুত্রসন্তান জন্মানোয় বংশধারা সুনিশ্চিত হবার পরে থেকে সেই কাজেই ব্যবহার করেছিলেন। মুনি-ঋষি থেকে অন্য রাজন্য বন্ধুরা পৃথার সেবায় সন্তুষ্ট হতেন। সেই সেবার পরে তাঁদের সঙ্গে কুন্তিভোজের সম্পর্ক উন্নতই হত। যদুবংশের যা দশা ছিল তাতে এই সামাজিক এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক ছাড়া কিছুতেই সম্ভব ছিলনা নিজেকে টিকিয়ে রাখা। কংসের দাপটে ক্রমে ক্রমে অন্ধক, বৃষ?ণি সকলেই ঢাকা পরে যাচ্ছিল। কংসের পিছনে ছিল জরাসন্ধের সবল হাতের আশীর্বাদ। জরাসন্ধের জামাতা সে। কুন্তিভোজ যদি নিজেকে নিরাপদ রাখতে অক্ষম হতেন এই সম্পর্কের সুতোগুলো দিয়ে তাহলে তাঁর দশাও যে কালে মহারাজ উগ্রসেনের মত হত না কে বলতে পারে? কাজেই অন্দরমহলে কুন্তির গুরুত্ব প্রভূত ছিল। ... ...
ভাওয়াল কলেজে পৌঁছে দেখি এলাহী কাণ্ড। স্কুলের ক্লাসরুমের বেঞ্চগুলোকে বিছানার মত ব্যবহার করছেন অনেকে। অনেকে আবার বেঞ্চ সরিয়ে ঘর ফাঁকা করে মেঝেতে কার্পেট বিছিয়ে ঘুমানোর ব্যবস্থা করেছেন। রান্না করা হয়েছে ভাত, ডাল আর ডিমের তরকারি। প্লেট হাতে সারি ধরে দাঁড়িয়েছেন মার্চাররা। আনু স্যার এর মধ্যে আমাকে বললেন, "এই সবে শুরু। সামনে আরো অনেকবার ডিম খেতে হবে।' আমিও একমত হলাম। এতো মানুষের জন্য খাবারের আয়োজন করতে ডিমের মত শস্তা ও সহজ তরকারি আর হয় না। লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার পেতে বেশীক্ষণ লাগে না। কোন রকম হৈ চৈ ছাড়াই খাবার বিতরণ তদারকি করছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। আর মার্চাররাও খাবার নিয়ে কেউ বেঞ্চে বসেছেন, কেউ কেউ গোল হয়ে বসেছেন নিজ দলের সাথে স্কুলের মাঠে চাঁদের আলোয়। খেতে খেতে কেউ বা ছোট খাটো সাংগঠনিক মিটিংও সেরে নিচ্ছিলেন। ... ...
বিআইডিএস-এর সাম্প্রতিক (২০০৯) এক গবেষণাতথ্য জানাচ্ছে যে, ২০০২ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত সময়েই বাংলাদেশে ৩৪৫ জন নারী ফতোয়ার শিকার হয়েছেন। ২০০১-এর ২ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী ও বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সমন্বয়ে গঠিত অবকাশকালীন বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চের দেওয়া ফতোয়াবিরোধী এক রায়-এর বলে এ সময়ে বাংলাদেশে ফতোয়া নিষিদ্ধ ছিল। ফতোয়া আইনগতভাবে নিষিদ্ধ থাকা অবস্থায়ই যদি দেশে এতগুলো ফতোয়ার ঘটনা ঘটে থাকে ... ...
আগের খসড়াটি পেয়ে অনেকেই নানা মতামত দিয়েছেন। তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ। কিছু মতামতের ভিত্তিতে দ্বিতীয় খসড়াটিও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে যথাস্থানে। সেটিই হুবহু আকারে এবার প্রকাশ করা হল বুলবুলভাজায়। সময়ের চাপে এবারও খসড়াটি ঠিক দানা বাঁধেনি। খসড়াটি আজ প্রকাশিত হলেও যেহেতু এটি পাঠানো হয়েছে যথেষ্ট আগেই, তাই সমস্ত মতামতগুলি নিয়ে এখানে আলোচনাও করা যায়নি। পরবর্তী খসড়ায় অতি অবশ্যই বাকি মতামতগুলিকে স্থান দেওয়া হবে। সে কারণেই এইটি নিয়েও আলোচনা আহ্বান করা হচ্ছে। ... ...
বাবা সত্যি এসে পড়েছেন। ভাইকে ডাকেননি, আমাকে ডেকেছেন। মাও তাড়াতাড়ি হাতটাত মুছে এগিয়ে এসেছেন। বোন ছুটে এসেছে। বাবার সঙ্গে চেন বাঁধা কি সুন্দর কুকুরছানা - কী হবে ওর নাম! তিব্বতীরা এসেছিল। বাবা ভূটান সীমান্ত থেকে একটা উলের কোট আর কুকুরছানা কিনে ট্রেনে বুক করে নিয়ে এসেছেন, আমাদের পুজোর উপহার। মা চা নিয়ে এসে বললেন স্যুটকেসটা কই, ট্রেনের জামাকাপড় ছাড়ো তো আগে, নাও কাপড়টা ধরো। বাবার খেয়াল হলো, তাইতো, কুকুর তো নিরাপদেই এসেছে কিন্তু ওকে গার্ড সাহেবের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনতে গিয়ে আর মালপত্র আনা হয়নি। তবে হ্যঁ¡, বোনাসের তিনশো টাকা থেকে দুচারটে জামা কাপড় কিনে নিলেই হবে। বাবা সর্বদাই নিরুদ্বিগ্ন। ওমা, পকেটও ফাঁকা। একটুক্ষণ স্তম্ভিত থেকে মা-ই বললো, পকেটমার হয়ে গেল? ... ...
সত্যি বলতে কি দেশভাগের পর বাংলাদেশ (তখন বলতো পূর্ব পাকিস্তান) আর পাকিস্তান আলাদা হয়ে গেলে যে দাঙ্গা বেধেছিলো তখন থেকেই সংস্কৃতির আর ভাষা এই দুটো জিনিষ যে একেকটা রাজ্যের কাছে কত জরুরী তা কেউ ভেবেই দেখেনি। যে টুকরো টুকরো রাজ্যগুলো একসাথে মিলিয়ে দেশ তৈরী হলো তাদের সবার মুখের ভাষা যে তাদের পরিচয়ের একটা অঙ্গ এমনটা কারুর মনেই হয়নি। কোন দেশের সরকারের মনে যদি সবসময় ভয় থাকে যে "এই বুঝি রাজ্য গুলো সব আলাদা আলাদা হয়ে পড়লো', তাহলে সেদেশের মূল কাঠামোটাই যে কত নড়বড়ে তা বুঝতে কষ্ট হয়না। তখন মনে এই প্রশ্নটাও জাগে যে "দেশের কাঠামোটা সত্যিই কতটা ফাঁপা? কতদিন আর এমনি "একতা'র ভান করে চালানো যাবে?' ... ...
'আ স্ট্রীট কার নেমড ডিসায়ার', নাটকের এমন নাম শুনলেই মনে হয় এটা এমন একটা মানুষের লেখা যিনি খুব খুঁটিয়ে রাস্তা দেখতে ভালবাসেন। যিনি বস্তুত এতটাই নির্জন মানসিক পৃথিবীর বাসিন্দা যে এতটা খুঁটিয়ে রাস্তা দেখার অবকাশ পান।রাস্তার গাড়িটার নাম যে ইচ্ছা হতে পারে তা তিনি জানতে পারেন এবং গভীর মমতায় সংরক্ষণ করেন সেই জানাকে। জীবনের যে রাস্তায় এই ইচ্ছেগাড়িটি চলে সেই রাস্তার সম্পর্কে টেনেসির পর্যবেক্ষন নিয়েই এই নাটক। ... ...