দুটো নাও ধীরে ধীরে ঢুকছে নদী থেকে সোতা খাল দিয়ে। একটার খোল জুড়ে আমড়া। আরেকটার বুকজুড়ে নারিকেল। ঘাটকুলের কাছ দিয়ে যেতে যেতে জলে ঢেউ ওঠে না। মেয়েটি হাঁটু জলে দাঁড়িয়ে ভাটা মাছ তোলে। কাকিলা মাছ ঘোরে ফেরে। বড়শি ফেলে মেয়েটি গাইতে থাকে- দিয়া মোরে ফাঁকি রে আমার সোনার ময়না পাখি। বাতাস প্রবল হলে সুরটা বহুদূরে উড়ে যায়। সেহাঙ্গলের ঠোঁটায় এসে সুড় সুড় করে। কড়াইগাছে একটি তক্ষক অবাক হয়ে চেয়ে থাকে। আর বাতাস মন্দ স্পষ্ট শোনা যায়- সোনার ময়না পাখিটি উড়ে যায়। ডানার শব্দ। আর কান্নার পুরণো কম্পন। বুঝতে হলে কান থাকা দরকার। ... ...
উজ্জ্বলকুমার দে চোর। সে যদি আজকে নবীনা সিনেমার ফুটে থাকতো, তাহলে মাজারের পাশের গলি দিয়ে দৌড়ে দশ গলির এক গলির মধ্যে লুকিয়ে পড়তে পারতো। নিদেনপক্ষে যদি যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ল কলেজের সামনে থেকে বক্তিয়ারশা রোডে ঢুকে পড়তো, তাহলেও ধরা না পড়ার একটা আশা ছিলো। কিন্তু বোঝাই যাচ্ছে, যে সে এর কোনওটাই করে উঠতে পারে নি। আর সময়টাও এমন, যে অসময়ে টিউশানি পড়তে আসা ছেলেপিলের বড্ড উপদ্রব। ... ...
খাজুরাহো মন্দিরের দেয়াল থেকে মাটিতে লাফাবার সময়, ঘুরঘুরে পোকার মুখে পাঠানো আদেশ তামিল করার জন্যে, বাতাসের মাঝপথে, নিজেকে পাষাণ মূর্তি থেকে রক্তমাংসের মানুষে পালটে নিয়েছিল কুশাশ্ব দেবনাথ নামে স্বাস্থ্যবান যুবকটি, যে কিনা হাজার বছরেরও বেশি চাণ্ডেলাবাড়ির একজন গতরি, ভারি-পাছা, ঢাউসবুক উলঙ্গ দাসীর ঠোঁটে ঠোঁট, যোনিতে লিঙ্গ, আর স্তনে মুঠো দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়েছিল । ... ...
প্রতিদিন খুব ভোরে, কাক ডাকারও আগে নীলিমার ঘুম ভাঙে। দিনের এই সময়টা আকাশ ঘন অন্ধকারে ঢাকা থাকে, ঘড়ি দেখে বুঝতে হয় ভোর হয়েছে। শীত আসছে, এখন রাত শেষ হতে দেরি হয় খুব। আজকাল ঘুম থেকে উঠে একটা হালকা চাদর গায়ে না দিয়ে বেরোনো যায়না, মফস্বলের এই দোতলা বাড়িটা, তার বাসিন্দাদের মতই সর্বাঙ্গে কুয়াশার চাদর জড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকে। ... ...
আজকে ডকইয়ার্ড ভোঁভা - ছুটি। না, ঠিক ছুটি নয়, আজ স্ট্রাইক, অর্থাৎ ছুটিই। প্রায় সাড়ে-ছ বছর কাজ করছি, এই প্রথম এমন স্ট্রাইক হলো। কারণ? ... মারপিট। দুই দলের মধ্যে তুমুল মারপিট হলো গতকাল দুপুরে, আমি দেখলাম। অনেকেই দেখলো, দূর থেকে। মারপিট কেন হয়েছে, সেটা ঠিক জানিনা। বক্সীর দলের কোন ছেলে নাকি তোলাবাজীর তিন হাজার সাতশো টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছে (পরে জানা গেছে), সেটা প্রথমে বক্সী ধরতে পারেনি। ভেবেছে বাবলুর দলের সাথে ছেলেটার আঁতাত আছে। ... ...
ওটা আমার রোগ। টাইফয়েডের মতো ভুগি আমি... অফিসে, আড্ডায়, প্রেমে! প্রোজেক্ট ম্যানেজারকে ঠারেঠোরে শুনিয়ে দিই... এই যে তোমার কেলানো দাঁতের ছুরির ফলা এর ধার আমি জানি! পেছন ফিরলেই ড্রাকুলা হয়ে কামড়াবে আমার পিঠ। এই যে এতো নলেনগুড়ের গন্ধ, কথায় কথায় সব আমি জানি। আমার ঘাড়ে বন্দুকের নল ক্ষমতার উৎস আর তোমাদের শোবার ঘরে ট্রিংকাস-এর উল্লাস! ... ...
অ্যামেরিকার দক্ষিণ প্রান্তে একটি ক্যাম্পাস টাউন। প্রায় গ্রাম। দুর্গাপুজোর একমাস আগের এক সন্ধ্যা। একটি অ্যাপার্টমেন্টের লিভিং রুমে বেশ কয়েকটি ছেলে-মেয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে-দাঁড়িয়ে আছে। সবাই মিলে কথা বলার ফলে কারুর কথাই বোঝা যাচ্ছে না। ... ...
সারা গায়ে ট্যাটু আঁকা, তুমি তো রেবেল, রাগী যুবতী / সারা গায়ে রিং গাঁথা, তুমি তো সুরের দেবী হতে চেয়ে / খরখরে অ্যাসিড হলে, পাথরে পাথর ঘষলে, আগুন চমকালে ... ...
যখন আমি পথের ধারে / ডানা কাটা এক বৃক্ষ ছিলাম / তখন রোদ আমার আয়ুর / শ্যাওলা পড়া ইটগুলো বেছে দিতো / আমার ডালে আত্মহত্যা করতে আসা / রঙিন ঘুড়ি উড়িয়ে দিতো / তার নাম প্রেম / তার নাম প্রেম ... ...
জল এক্কে জল, দুগুণ জলে নদী / তিন জলকে ভরদুপুরে ডুব দিতে যাস যদি / চার জলে তোর চোখের কোলে হঠাৎ ছলাৎ ঢেউ / পাঁচ আঁজলায় উথাল-পাথাল ডাক দিয়ে যায় কেউ / জল ছয় জল, জল সই চল, চাতক-তলার হাটে ... ...
অপমান রেখা ঢেকেছো কভারস্টিকে / স্বপ্ন খেয়েছে গাঢ় আইলাইনার / কবিতা কোথায় হারিয়েছে তা জানো না / কোথায় হারালে অতল-ডুবুরী-চোখ!!! ... ...
আমার গরাদমাঝে উঁকি দিলো পর্দা সরিয়ে / অক্ষয় অক্ষরজাত দীর্ঘতম অণুদৃশ্যপটে, / চ্যাট-শ্রান্ত কিশোর ম্যাকবেথ - / আমাকে চেনাবে বলে / শীতের অব্যর্থ ডুয়ার্স। ... ...
আজ তলোয়ারটা তোমার হোক / তীর-ধনুক ফণার জটিল সম্মোহন / রঙীন পুচ্ছের পাখিটি / কুকুর বিড়াল আর মানুষও ... ...
আজ কাক জোছনাতেও পুড়ে যাবো বুঝি / আজ মনের মন ভাল নেই। এমনিই হয় / কোন কোন দিন, ফুলের সৌন্দর্যও উদাস / লাগে। ভুল গানে ভুল সুর লাগে, ভুল কথার / ভুল মানে হয়। আজ সেই দিন টের পাই। ... ...
আমি আর স্বাতী একই সাথে ঘুমাই, খাইদাই / একই জলে নাকচোখমুখঠোঁট ধুই / স্বাতীর টিপ আমার বুকপকেটে লেগে থাকে / ওর শাড়ি আর আমার পাঞ্জাবী একই দড়িতে শুকায় / স্বাতী আর আমি একসাথে জীবনের পথ চলছি। ... ...
অবিক্রীত কবিতাদের ধার দিলে, / আবেগরা নির্ধারিত সুদ / আর বিক্রয়যোগ্য কবিতাদের জন্য / ধার্য হয় শুল্ক। ... ...
সাপের খোলসে ভরে তারা নিয়ে গেছে ফসিলের ঘ্রাণ, / শোঁকাবে নিরন্ন শিশুদের। / গামছার খুঁটে বেঁধেছে দু:খিত উঠোনের প্রতিবন্ধী ঘাস / যেন তারা ঘাস নয়, অনুর্বর জমিতে ফসলের সম্ভাবনা। ... ...
গল্পের গরুগুলো গাছে উঠে ধান খায় / লেখকেরা নয়তো প্রায়শই খোঁচা দেয় / এরি মাঝে কেয়াবাৎ / প্রকাশক চিৎপাত / ধানগাছও উড়ে গিয়ে চাঁদে চালভাজা দেয়। ... ...
হয়তো আমাকে তুমি ততটা মনে রাখোনি কখনো। তোমার ছিল একান্ত গণ্ডীতে বাঁধা এক নিজস্ব জীবন। কিন্তু আমি তোমাকে ভুলতে পারব না কোনদিনও। কারণ আমার সুখের ঘরের চাবিকাঠি ছিল তোমার হাতে, আমার শান্তির পারাবত উড়তো তোমারই হাতের ইশারায় ..! তবু তোমার মত এক নিকটজনকে হারাতে যে কী বেদনায় ছটফট করেছি, তা কেউ বুঝবে না। বড় কঠিন ছিল সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া।... পারব কি...? হবে কি...? এমন নানান যুদ্ধ চলেছে মনের মধ্যে, কুরে কুরে খেয়েছে আমায় প্রতি পল। কিন্তু শেষ অবধি সই করেছি তোমার মৃত্যুর পরোয়ানায় ! রাজি হয়েছি অনেক দ্বিধার পর, কারণ দিনে দিনে তুমি হয়ে উঠছিলে দুর্মদ...অসহনীয়...কালান্তক...! ... ...
এমনই এক ঘরোয়া আড্ডার ফাঁকে আর একটি গান তাঁর গলায় শুনে চমকে উঠেছিলাম - এ যে মোর আবরণ ঘুচাতে কতক্ষণ। গানটি পরবর্তীকালে জামশেদপুরে কোন আসরেও গেয়েছিলেন। পূজাপর্যায়ের গানটি গীতবিতানে ঠাঁই পেলেও এর সুর সম্ভবত রবীন্দ্রনাথের আরো বেশ কিছু গানের মত হারিয়ে গিয়েছে কালের গর্ভে। তাই হঠাৎ জর্জদার কন্ঠে গনটি শুনে কৌতূহল জেগেছিল সুরের উৎসকে ঘিরে। হঠাৎ করে মনে হতেই পারে এ সুর রবীন্দ্রনাথের গানের চেনা চলনের সঙ্গে একেবারেই মেলে না। কিন্তু,পরমুহূর্তেই মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনাথের এমন কিছু গানও তো আছে যা শুনলে মনে হয় নিজের গড়ে তোলা সুরের ধ্রুপদী জাল ছিঁড়ে যেন বেরিয়ে আসতে চাইছেন নতুন এক রবীন্দ্রনাথ। এই মুহূর্তে যে গানটির কথা মনে আসছে সেটি হল "ধূসর জীবনের গোধুলিতে ক্লান্ত মলিন যেই স্মৃতি।' অনেকেই যাঁরা গানটি শুনেছেন তাঁরা স্বীকার করবেন এ এক নতুন জাতের সুর। তেমনি এক অসাধারণ গতিময়, ঝকঝকে নাটকীয় উপস্থাপনা শুনেছিলাম জর্জদার কণ্ঠে। একেবারে প্রথম স্বরোচ্চারণের সঙ্গে গানটি শ্রোতাদের মাতিয়ে দিতে পারে ... ...