ঐ যে স্কুলপড়ুয়া আমার যে বড় ভাই ছিলেন, চাচাতো ভাই---তাদের মনে হয় পাঠ্য ছিলো একটা বই---সে বইটা গল্পগুচ্ছ। কিন্তু আমার স্মৃতিতে এতটা স্পষ্ট নেই যে পুরো গল্পগুচ্ছের সব গল্পই---প্রথম খণ্ডে অন্তত---সব গল্প থাকার তো প্রশ্নই ওঠে না---তিন খণ্ডে তো পরবর্তীকালে গল্পগুচ্ছ বেরিয়েছে। প্রথম খণ্ডেরও সব কটি গল্প ছিলো কিনা তাতেও আমার সন্দেহ। আমার মনে হয়, প্রথম খণ্ড থেকে কিছু গল্প---সাত-আটটা গল্প হতে পারে আরকি--- আলাদা করে নিয়ে র্যাপিড -রিডার ধরণের কিছু একটা করা হয়েছিলো। রবীন্দ্রনাথেরই গল্পগুচ্ছ---তার মধ্যে যে গল্পগুলো ছিলো স্পষ্ট মনে আছে আমার। এবং যতদূর মনে হয় প্রথম খণ্ডের দুটো তিনটে গল্প সেখানে ছিলো না। সে জন্যই বলছি, গল্পগুচ্ছেরও ভেতর থেকে বাছাই করা কিছু গল্প। দ্রুতপঠনের জন্যে এ বইটা তৈরি করা হয়েছিলো। এই বইটা, যত্রতত্র যেখানে সেখানে পড়ে থাকতো। আমার ঐ ভাইয়ের পড়াশোনায় তো তেমন মন ছিলো না। বইপত্র কোথায় কী থাকত সেটার খবর রাখতেন না। এই গল্পগুচ্ছের প্রথম মলাটটা নেই। মলাটটা উঠে চলে গেছে, শুধু গল্পগুচ্ছ লেখা আছে---এটুকু মনে আছে। আর যত্রতত্র পড়ে থাকতো এটাও মনে আছে। কখনো হয়তো ঢেঁকির কাছে আছে, ঢেঁকিটা আছে উঠোনে। আঙিনার একপাশে ঢেঁকি, সেই ঢেঁকিটার ওপরে। কখনোবা ঢেঁকিটার পাশে। কখনো মাটির খুব চওড়া বিস্তৃত যে তাওয়া, সেই তাওয়ার কোনো একটা জায়গায়। ... ...
ভারত সরকারের অনুসৃত "নিও লিবারেল' অর্থনীতির ফলে ভারতীয় সমাজে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। ভৌগোলিক-জনগোষ্ঠীগত ও শ্রেণিগত অসাম্য, দরিদ্রতা ও রোজগারহীনতা তীব্র গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিও লিবারেল গ্রোথ মডেলের "ট্রিকল ডাউন এফেক্টের' অসারতা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে । সমাজের মুষ্টিমেয় ধনকুবেরদের ধনভাণ্ডার ক্রমাগত স্ফীত হচ্ছে, অন্যদিকে সমাজের গরিষ্ঠাংশ দরিদ্র জনসাধারণের মধ্যে গ্রোথরেট বৃদ্ধির সুফল স্বাভাবিকভাবে বাজারের নিয়মে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পৌঁছে যাওয়ার দাবির অন্ত:সারশূন্যতা প্রমাণ করে দিয়ে এক ক্ষুদ্র সচ্ছল অংশের মধ্যেই আবদ্ধ থেকে যাচ্ছে। বাজারচালিত উন্নয়নের পথ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর পরম্পরাগত রুজি-রোজগারের মাধ্যমকে কেড়ে নিচ্ছে, সেজের মত ব্যবস্থাগুলির ফলে কৃষকদেরকে হারাতে হচ্ছে তাদের চাষের জমি, বিকৃত উন্নয়নের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি গ্রাম-সমাজকে করছে বাস্তুভিটেহারা, গ্রাম-গ্রামান্তর থেকে রুজি-রোজগারের সন্ধানে শহরমুখী প্রব্রজনের ফলে শহরে বিস্তৃত "ঘেটোগুলি' গড়ে উঠছে, উন্নয়নের নামে প্রাকৃতিক সম্পদের অবাধ লুণ্ঠন প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট করে পরিবেশ দূষণের চরম বিপদ ডেকে আনছে। এই পরিস্থিতিতে মানুষ অহিংস থেকে সহিংস বা তার উল্টো কিংবা এই দুটোর মিশ্রণের বিভিন্ন রূপ, মাত্রা ও ব্যাপ্তির বিদ্রোহ যে গড়ে তুলবে তাই স্বাভাবিক। সচেতন কিংবা স্বত:স্ফূর্ত এই বিদ্রোহগুলিই আমাদের নীতি-নির্ধারকদের তাদের অনুসৃত জনবিরোধী পথে এগিয়ে যেতে বাধা দেয়, বাধ্য করে থমকে দাঁড়াতে কিংবা সাময়িকভাবে পিছু হঠতে। ... ...
বাঙালির বগলে পাউডার। পন্ডস পাউডারের গোলাপি কৌটোটি অনেকদিনের । সেই কবে মা বা কাকির ড্রেসিং টেবিল থেকে টিনের সেই কৌটোটি ঝেড়ে দিয়ে, আমি ও বুটু মেঝেতে পাউডার ছড়িয়ে ব্যালে নাচ ব্যালে নাচ খেলেছিলাম পেছল শানে পা ঘষে। ফলত মাথা ফাটা আছাড় খেয়ে। সেই পন্ডসের জায়গায় আরো কিছু কিছু অ-ব্র্যান্ডেড নামের আনাগোনা ছিল, তার উবে গেছে গ্রীষ্মের সন্ধেতে ক্রমক্ষীয়মান পাউডারের গন্ধের মত । তাদের মধ্যে একটির নাম হালকা ভাবে মনে পড়ে, কিউটিকিউরা। কী অদ্ভুত নাম। আর বোধ হয় ছিল মাইসোর স্যান্ডালেএর কৌটোগুলোও। পরে ওগুলোতে কানের দুল, ক্লিপটিপ রাখা যেত, দিব্যি শক্তপোক্ত কৌটো। ... ...
মুম্বইয়ের "মোকা ক্লাব' শর্টফিল্মের ব্যপারে অনেক চেষ্টা-চরিত্র করেছেন। নিজেদের ক্লাবে দেখানো ছড়াও ওঁরা একটা সংস্থা খুলতে চেয়েছিলেন যারা এসব ছবির ডিস্ট্রিবিউশনের কাজ করবে। কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হলোনা। ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে একজন হলেন কুনাল জাভেরী। কুনাল বলছিলেন ""আমরা ভেবেছিলাম শর্টফিল্মের জন্য একটা "বাজার' তৈরী করা দরকার। কিন্তু পেরে উঠলাম না। টিভি চ্যানেল গুলো তো কোন উৎসাহই দেখালোনা। সব শর্টফিল্মগুলোর একটা ক্যাটালগ বানিয়ে উঠতে পারলে হয়তো কিছুটা লাভ হতো। কিন্তু সেও প্রায় অসম্ভব। প্রত্যেকটা ছবির পরিচালকদের সাথে দেখা করে, ওঁদের দিয়ে বিশ-চল্লিশ পাতার চুক্তি সই করিয়ে আনতে যা সাময় লাগবে তার মধ্যে সে ছবি দেখার জন্য আর কেউ বসে থাকবে না''। মোকা ক্লাবের উদ্যোক্তারা "রাজশ্রী ফিল্মস'এর অনলাইন ধারার সাথেও কথা বলেছিলেন। জাভেরী বললেন -- ""ওঁরা অবশ্য আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন। বেশ কয়েকটা ছবি ওঁরা ন্যায্য দাম দিয়ে আমাদের থেকে কিনে নিজেদের ওয়েবসাইটে বিনামুল্যে দেখাবার ব্যবস্থা রেখেছেন। rajashri.com সাইটে এখনও ছবিগুলো রয়েছে। কেউ ইচ্ছে করলে দেখতে পারেন।'' জাভেরী মনে করেন যে আগে ছবি দেখানোর ভালোমত ব্যবস্থা না করতে পারলে ডিস্ট্রিবিউশনের কাজ আরো কঠিন হবে। ""এই ধরণের ছবি সম্পর্কে আগে লোকের মধ্যে আগ্রহ জাগানো দরকার। নাহলে বাজার তৈরী হবে কী করে?'' ... ...
নেপথ্যে মুখস্থবিদ্যার একটা মহিমা আছে সন্দেহ নেই। কিন্তু যখন একপাক্ষিক গায়ন নয়, সতত জারি করাই আছে যুদ্ধ, তখন তো আর কেবল মুখস্থ জ্ঞান ঝাড়লে হয় না। প্রতি মুহূর্তে নতুন করে পদ বাঁধতে হচ্ছে, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করবার জন্য পদবন্ধাকারেই আরেকটা প্রশ্ন ছুড়তে হচ্ছে। এই সহজাত কবিত্বে তাঁদের প্রতি যারপরনাই শ্রদ্ধাবিনত হতে হলো। মনে হলো, এ ক্ষমতা অপরিসীম। বাক্যে-বাক্যে, কখনো তা সম্ভব না হলে অবশ্যই পরের বাক্যের সাথে একটা বলপ্রয়োগহীন অন্ত:মিল থাকছেই। সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য হলো এর স্ফূর্তিটা। পরে জেনেছি এসব কবিতার সবই তাঁরা তৎক্ষণাৎ বানান না, এর কিছু কিছু আগেই তৈরি করা, সময়মতো যা উপস্থাপন করেন মাত্র। তবে উপস্থাপিত সব পদই যে তা নয়, সেটা বোঝা যায় তাৎক্ষণিকভাবে উত্থাপিত প্রশ্নের সাথে সংগতি স্থাপনের উপযোগিতা দেখে। এসবে যথেষ্টই পারঙ্গম মনে হলো তাঁদের, যে স্ফূর্তি নবীন কবিতাকর্মী আমার তখনো নেই (এখনো কি আর আছে!)। ... ...
ঠাকুরদা কালীকিশোর ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণ করার অপরাধে নিজের গ্রাম ইট্না থেকে বিতাড়িত হন। কিশোর জর্জকেও স্কুল জীবনে সহপাঠিদের থেকে তাড়না সহ্য করতে হয়েছিল "ম্লেচ্ছ' অপবাদে। ১৯২৭ সালে কলকাতায় কলেজে পড়তে এসে ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গে সংযোগের সূত্রে ঠাকুরবাড়িতে প্রবেশাধিকার পান জর্জ। তখনকার রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে যুক্ত প্রধান ব্যক্তিদের গান শোনানোর সুযোগও এসে যায় এইভাবে। তবে এই "ম্লেচ্ছ' কিশোরটি সৃষ্টিচেতনার প্রথম থেকেই ইতরযানী চেতনার পতাকা বহন করেছেন আজীবন। অস্বস্তিকর আভিজাত্যের দাসত্ব করেননি কখনও, না ব্যক্তিজীবনে, না শিল্পীজীবনে। পারিবারিকসূত্রে যদিও তাঁর রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে আবাল্য পরিচয়, কিন্তু এই সঙ্গীতধারাটির নিয়মমাফিক শিক্ষা তাঁর ইন্দিরা দেবীর কাছে। কলকাতা ও শান্তিনিকেতনে যেসব দিগগজ রবীন্দ্রসঙ্গীত গুরুরা সেই সময় শিক্ষণ প্রক্রিয়ার নেতৃত্বে ছিলেন, তাঁদের কারুর কাছেই জর্জ পরম্পরাগত শিক্ষা লাভ করেননি। সত্যি কথা বলতে কি তাঁর দিগ্দর্শক ছিলো স্বরবিতান, নিজের কান ও নিয়মভাঙা অফুরন্ত সৃজনশীলতা। একে যদি তাঁর সীমাবদ্ধতা বলি, তবে তাই। আর যদি বলি এখান থেকেই তিনি সূত্রপাত করেছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীতে সম্পূর্ণ নতুন এক ঘরানা, জনপ্রিয়তায় যা ছিলো শীর্ষস্থানে, কিন্তু কোনও দ্বিতীয় ঘরানাদার তৈরি হতে পারেনি। অর্থাৎ জর্জদা রবীন্দ্রসঙ্গীতে একাই একটা বাতিঘর হয়ে রয়ে গেলেন। ... ...
এই গুরুগম্ভীর কার্যক্রমের মধ্যেই নিছক আড্ডাও জায়গা করে নিত কোন কোন সময়ে। এই রকম কোন আড্ডায় একবার প্ল্যানচেটে স্বর্গগত মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের কথা ওঠে। পরপর বেশ কয়েকটি প্ল্যানচেটের আসর বসেছিল সে সময়ে - যে সমস্ত মৃত ব্যক্তিদের আত্মার সঙ্গে প্ল্যানচেটে যোগাযোগ করা গিয়েছিল তাঁদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলেন রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। প্ল্যানচেটে রবীন্দ্রনাথের আত্মার সঙ্গে কথপোকথনের কালে কেউ দেবব্রত বিশ্বাসের গায়ন সম্পর্কে রবীন্দ্রানাথের আত্মার অভিমত জানতে চাইলে জবাব পাওয় গিয়েছিল যে তৎকালীন রবীন্দ্র সংগীত শিল্পীদের মধ্যে দেবব্রত বিশ্বাসই হলেন সর্বোৎকৃষ্ট গায়ক। সংবাদটি বাবা চিঠি লিখে জর্জদাকে জানালে উত্তরে জর্জদা একটি দীর্ঘ চিঠি লেখেন । চিঠিটির প্রতিলিপি তুলে দিলাম পাঠক পাঠিকাদের জন্য। ... ...
মেয়েদের ইজ্জত-সিকিউরিটির অজুহাত দেবেন না। ওরা বলেই দিয়েছে, প্রচুর বাউন্সার রাখবে, কেউ দুষ্টুমি করলেই ঘেঁটি ধরে বাইরে বের করে দেবে। অফিস টাইমের মেট্রোতে লোকে যা হাত চালায়, তার থেকেও বেশি সমস্যা হবে ওখানে গেলে? দেওয়ালিতে গাদা গাদা প্রদীপ জ্বলে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং হয় না তাতে? দুর্গাপুজোর ভাসানে গঙ্গার জল নোংরা হয় না? আপনার পাড়ার পুজোর বাজেট কত? এক্সমাস কে তো আমরা কবেই নিজের করে নিয়েছি, টমেটো খেলাতেই দোষ? আর, ইকনমিক্স না বুঝুন, এটুকু তো বোঝেন, ডিমান্ড বাড়লেই দাম বাড়বে? আজ পনেরো টন, কাল পনেরোশো টন, টমেটো চাষীদের হাল ফিরে যাবে, এটুকু বুঝছেন না? ... ...
আমার বড় মেয়েটি এই ঝড়জলের মধ্যে হাতে রসুনের কোয়া নিয়ে জানালার কাছে বসে আছে। নিউ ইয়র্কের ঝড়জল হারিকেন ওরফে আইরিন দেখতে চেষ্টা করছে। আইরিন নামের এক ভৌতিক ভ্যাম্পায়ারকে তাড়ানোর চেষ্টা করছে। আমাদের দেশের কালবৈশাখির মত শোঁ শোঁ করে আওয়াজ হচ্ছে। গাছের ডাল নড়ছে। পাতা পড়ছে। এরকম ঝড়বাতাস আমাদের দেশে বছরে গণ্ডায় গণ্ডায় আসে যায়। সরকার ঘুমায়। আর জনগণ তাড়া খাওয়া ইঁদুরের মত ছুটে বেড়ায়--পোকামাকড়ের মত মরে।। আবার ঘুমিয়ে পড়তে পড়তে শুনলাম, ছোটে মেয়েটা গলা খুলে গাইছে, ওরে ঝড় নেমে আয়, আয়। ... ...
সমস্যা হল পোস্ট-ইন্ডাস্ট্রিয়াল যুগে তির-ফির আর বিশেষ পাত্তা পাচ্ছে না। সভ্যতার কেরিয়ারে এখন হাই স্কুল পর্ব। গেটস স্যার চোখ রাঙিয়ে রীতিমত শাসাচ্ছেন "সাবধান! এখন থেকে কিন্তু সব বুদ্ধির খেলা'। আমরা বাঙালিরা আবার সেখানে ডবল প্রমোশন পেয়ে বসে আছি, মুশকিল! মগজাস্ত্রে ধোঁয়া দেবার তালে নিজের বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে অসীম দু:সাহসে বিড়ি ফুঁকে চলেছি। তো এই সিগারেট কান্ড, এই আমাদের, মানে এই বীর, বেপরোয়া বাঙালি যুবকদের ইমপ্রেস করার কৌশল হতে পারে কি? হতেই পারে। আমরাই যখন "আজ কা অর্জুন'। উফ:! অতই সোজা! আরে বোকারা, আমাদের আজ পুরো রাত জেগে সন্ধের ঝিলিমিলি লিখে লিখে কাল নোবেল পেতে হবে, তাই একটু মাল সিগ্গী স্টকে চাই। তোরা মীন হোয়াইল মাঠে কিছু দৌড়ঝাঁপ করে সোনা নিয়ে আয় দেখি। তা না, এই সব ফালতু অশৈল করে ভাবছিস কু থেকে সু হয়ে জাবি। আগে রুপা (গাঙ্গুলী) তো হ, একটা ক্লাস বানা, তারপর কাউন্টার পাবি। বেলেল্লাপনার টিকিট, প্রতিভার ট্যঁ¡ক খসিয়ে কাট! ... ...
আমি এমন "গায়ক'এর গানও শুনেছি যিনি আমার নিজের বানানো গানের তাল পালটে সেটিকে আত্মস্থ করে গেয়েছেন। শ্রোতারা খেয়ালও করে নি যে গানটার রিদমটাই পালটে গেছে। এইভাবেই আমার একটা ৫ মাত্রার গান নির্দ্বিধায় ৬ মাত্রা, কখনও কখনও ৮-মাত্রাও হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং একজন শ্রোতার একটা ভুরুও বাঁকে নি, বরং গানশেষে সেই গায়ক অজস্র তারিফ এবং তারিফ পেয়েছেন। এইসব বিখ্যাত আর জনপ্রিয় শিল্পীরা গানের মাত্রা বদল কেবল শস্তা জনপ্রিয়তা পাবার জন্যেই করেন নি, তাঁরা এটা করেছেন কারণ ৫-মাত্রার গান হ্যান্ড্ল করা তাঁদের কাছে কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। তাই একজন সেটাকে ৬ মাত্রায় বদলে নিলেন, আরেকজন, ৮ মাত্রায়। পরিশেষে, শ্রোতাদের তৃপ্ত মুখগুলি আর শিল্পীর খুশি-খুশি মুখ দেখে আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে ভাবলাম, একদিন আমার কিছু শুভানুধ্যায়ী আমাকে এই দেশে ফিরে এসে গানকে জীবিকা হিসেবে নেবার বিরুদ্ধে সাবধান করেছিলেন, তাঁদের কথা সেদিন শুনলে আজ আমাকে এই জিনিস দেখতে হত না। আমি কিছুই করতে পারি নি, নিজের ক্ষোভ, রাগ, হতাশা, কিছুই ব্যক্ত করতে পারি নি সেই দিন। আজ, তেষট্টি বছর বয়েসে, জীবনে অনেক কিছু দেখবার পরে, আজ হয় তো সময় হয়েছে, আমি গলা ছেড়ে বলতে পারি এই বং সোসাইটি (ঞ্ছবাঙালিঞ্জ নয়) আর এই বং জীবনযাত্রার প্রতি আমার অপছন্দ, আমার ঘেন্নার কথা। "বাংলা' বলে আর কিছু বেঁচে নেই। অনেকদিন আগে মরে গেছে। অনেকদিন আগে শোনা এক বাউল-গান মনে পড়ে যাচ্ছে - "বাউল বাউল করো তোমরা / বাউল কে আছে / বড় দু:খ পাইয়া বাংলার বাউল মইরাছে।' ... ...
"ক্যান আই আসক ইউ এ কোয়েশ্চেন?' আচমকা এই সময়ে এই প্রশ্নে আমার চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটে। তাকিয়ে দেখি আমার এক সহযাত্রী আমাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করছেন। ইনি ঢাকা থেকেই আমাদের সাথে এসেছেন প্রায় ২০ জনের একটি দল নিয়ে। প্রথম থেকেই লক্ষ্য করছি বাসের আসন দখল নিয়ে ক্ষণে ক্ষণে অন্যদের সাথে তারা বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন। তাদের প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন আমার কাছে প্রথম দিনই ব্যতিক্রম লেগেছিল কারণ সেগুলো অন্যদের মত পোস্টার পেপারে হাতে লেখা না বরং "ডিজিটাল প্রিণ্ট' করে আনা। আমার প্রশ্নবোধক চোখে তাকিয়ে থাকা দেখে প্রশ্নকর্তা আবার বললেন, "আপনার পোশাক আশাক চাল চলন "ইউরোপিয়ানদের' মত। কাল রাতে দেখলাম আপনি স্মোকিংএও অ্যাডিকটেড। আমি কি আপনাকে প্রশ্ন করতে পারি?' সাধারণত বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে অতি আগ্রহী পুরুষদের যেভাবে আমি উত্তর করি সেভাবে মুখটা শক্ত করে তাকে বললাম, "না আপনি প্রশ্ন করতে পারেন না।' ভয়ে আমার বুকটা ঢিপ ঢিপ করছিল আর মনে মনে ভাবছিলাম, "আল্লাহ তুমি আমাকে এই লোকের হাত থেকে বাঁচাও।' আমার প্রার্থনা শুনেই যেন বাসের অপর মেয়ে সহযাত্রীটি বাসে উঠল তখন। মেয়েটিরও পরনে ছিল "পশ্চিমা' ধাঁচের পোশাক মানে জিন্সের প্যান্ট আর টি-শার্ট। তার সাথে তার ছাত্র সংগঠনের বন্ধুরা। তারা সকালের নাস্তায় খিচুড়ি খেতে না পারা নিয়ে আলাপ করতে করতে যার যার আসনে বসল। বাসটা চলতে শুরু করলে আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৯:১০ বাজে। ... ...
অ্যাফস্পা ১৯৫৮ পুরস্কার পেল, যা আমরা আলোচনা করছিলাম,তাই এটা আমাকে পীড়া দিচ্ছে। আমি জানি আমি যে সব সংস্থার জন্য কাজ করি সেখানে আমি এই সব জিনিস একজন আধিকারিক হিসাবে দেখাতে পারব না, কিন্তু একজন শিল্পী, একজন নাগরিক, একজন ভারতীয় হিসাবে আমি বাঁচতে পারব না যতক্ষণ আমি এই সত্যটাকে কোথাও, কোনো আকারে লিপিবদ্ধ করছি। তাই আমি নিজেই একজন দ্বৈত সত্ত্বায় পরিণত হচ্ছি, একজন আধিকারিক সত্ত্বা, যে তার পরিচয় বহন করে, চেষ্টা করে এমন কিছু করার যা খুব অবাস্তব নয়, একদম ডাহা মিথ্যে কথা নয়। আমার কর্মরত সংস্থার জন্য মণিপুরের ওপর একটা ছবি করার সময় কোনোভাবে মণিপুরের সত্যটাকে প্রকাশ করতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার ভেতরকার যন্ত্রণাদীর্ণ সত্ত্বা ভালোভাবে ঘুমোতে পারে না, আমি যে সব নিজের চোখে ঘটতে দেখেছি। আমি সবার সঙ্গে মদ্যপান করি, যেহেতু মণিপুরে মদ নিষিদ্ধ তাই আপনি খোলাবাজারে মদ পাবেন না, তাই আমাদের মদ্যপান করতে আর্মি পিআরওর কাছে, অসম রাইফেলস পিআরওর কাছে যেতে হয়, সব মিডিয়ার লোকজনেরও আর্মি পিআরওর কাছে কোটা বাঁধা আছে। সেখানে অনেক মালায়ালি অফিসার আছেন, উকিল অফিসার আছেন, তো আপনি তাদের সঙ্গে বসে মদ খান, আর ৪-৫ পেগের পরে, একটা অন্য মণিপুর, যেখানে হিন্দি গান মানা, হিন্দি গান গাওয়া হয় না, আর রাতে মনিপুরিদের কাছ থেকে সবচেয়ে ভালো জিনিস যা পাওয়া যায় তা হল হিন্দি গান। তাই রাতের একটা মনিপুর আছে, রাত ৯টা ১০টার পর, মণিপুর যা অ্যাফস্পাতাড়িত নয়। ... ...
কী ছিল, তুমি বললে ভোট ছিল ... ভোট ছিল কবীর, বল ছিল না। বোমা ছিল। রাজু বলে একটা ছেলের দুটো চোখ উড়ে গেল, আরেকটা ছেলে মরে গেল। পনেরোই অগাস্টে ভোট ছিল না কবীর, বোমা ছিল। রাস্তায় ফেলে রেখেছিল কেউ একটা।কে গো? আমি কী করে জানবো বলো তো কবীর, আমি কী করে জানবো? কেউ একজন, কেউ একজন ... নিশ্চয়ই কোনও পুরুতঠাকুর না। বা কোনো মৌলবীসাহেব না, বা গির্জার কোনও পাদ্রি নন, বা ধরো আন্নাকালী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মালিক নন বা ধরো, কোনো তাঁতি বা নাপিত নন বা ধরো, এই পশুচামড়ার ব্যবসা যাঁরা করেন, তাঁরাও নিশ্চয়ই নন। ... ...
শুনেছি এই নির্মম আক্রমণের পিছনেও ছিল জর্জদারই নিজের করা কিছু অসতর্ক মন্তব্য। বিশ্বস্ত সূত্রে শোনা কথা হল সম্পাদকমশায় নাকি প্রায়শই মদ্যপ অবস্থায় গভীর রাতে বাড়ি ফিরতেন। তাঁর এই অভ্যাসের জ্বালায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে কোন এক অনুষ্ঠানে দেখা হবার পর ভদ্রলোকের স্ত্রী নিজের মর্ম বেদনা জর্জদার কাছে পারিবারিক হিতাকাঙ্খী হিসেবে ব্যক্ত করেন। ঘটনাটি শুনে জর্জদা নাকি ভদ্রমহিলাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন এই মর্মে যে ঘরে যে বাড়িতে যদি "ঝাড়ু' থাকে তবে তিনি যেন সেটি ব্যবহার করেন নির্দ্বিধায়। ফলও পেয়েছিলেন হাতে নাতে! তবে হাজার প্রতিকূলতা সত্ত্বেও জর্জদা আপোষ করেননি কোনদিন। রেকর্ড করা বন্ধ করেছিলেন কয়েকবছর আগেই, কিন্তু ঘনিষ্ঠজনেদের কাছে প্রত্যয়ের সঙ্গেই বলতেন এ ভাবে আমার রবীন্দ্রসংগীত রেকর্ড করা হয়ত বন্ধ করা যাবে কিন্তু আমর কণ্ঠরোধ করা যাবে না। ... ...
ঠিক এখান থেকেই শুরু হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা সংক্রান্ত আলোচনাটা। ধরে নিন, আজকে ১৫ ই অগাস্ট কেউ ইন্টারনেট-এ পোস্ট করলেন বহু পুরোনো একটি কম্যুনিষ্ট শ্লোগান। "ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়'! কি হবে? বা কি কি হতে পারে? ভারতের স্বাধীনতা নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক হয়েছে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। এই শ্লোগানটা তার কিছু চিহ্ন বহন করছে অবশ্যই। কেউ কেউ যেমন ভাবতে পারেন সাদা চামড়ার লোকেরা চলে গিয়েছে তেমনি কেউ কেউ ভাবতে পারেন যে তার জায়গায় এসে বসেছে বাদামী সাহেবরা। এমন ভাবনান্তর থাকাটাই স্বাভাবিক। বিশেষত, আজকের এত বছর পরেও খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা বা স্বাস্থ্যের কিই বা উন্নতি হয়েছে? শহরে হাস্যকর রকমের খরচ বাড়ানো বড়লোকের নার্সিংহোম, বেসরকারী হাসপাতাল বাড়া ছাড়া কি পেয়েছি আমরা স্বাস্থ্যে? আমলাশোলে বা খয়রাশোলে লোক মরলে আসে খবরে। এলে অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যু হয়ে যায় সেটাও। আর যদি ওইভাবে না মরে ধুঁকে ধুঁকে মরে, তাহলে খবরেও আসবে না। আমরা প্রজ্ঞাসম্পন্নরা সেমিনারে বা ভোটবাজারে মুখ গম্ভীর করে আলোচনা করবো অনেক। কেউ কেউ বলতেও পারেন (আমি শুনেছি খাদ্য সম্পর্কে হওয়া একটি সেমিনারে), যে আসলে দারিদ্রের কারণ হল লোকের অলসতা। এই কিছুদিন আগে যেমন বাংলাদেশের বন্ধুরা আলোচনা করছিলেন অনেক খাওয়াই নাকি খাদ্য দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ, এমন বলেছেন বাংলাদেশের কোনো এক মন্ত্রী। আমাদের এখানে প্রফুল্ল বাবু খাদ্য "কাঁচকলা খাক্' বলে কাঁচকলা প্রফুল্ল হয়ে গিয়েছিলেন। খাদ্য আন্দোলন হয়েছিল। শিক্ষা মানে এক বিভীষিকাময় ব্যবস্থা। বাকী সব প্রসঙ্গেই এমন কথা বলাই যায়। আর কথা বাড়াচ্ছিনা এ প্রসঙ্গে। বলার কথায় চলে আসছি। যদি এই সব দেখে কেউ লেখেন "ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়' তাহলে? ... ...
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একাত্তরের পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। সে হত্যা একাত্তরে বাংলাদেশের অর্জনকেই হত্যা করার নামান্তর। তার পর থেকেই বাংলাদেশের পাকিস্তানের ভূতের দিকে যাত্রা চলছে। জিয়া এরশাদের সামরিক শাসন, একনায়কতান্ত্রিক শাসন, খালেদা-হাসিনার দায়িত্বহীন রাজনীতি একাত্তরের অর্জনের কাছে আর রাষ্ট্রকে ফেরাতে দিচ্ছে না। মানুষের আশা ভরসার স্থানটি গেছে। এখন মানুষ আশঙ্কা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছে না। নানাবিধ বিভেদের শিকার হচ্ছে। আবার বাংলাদেশের মানুষ আত্মপরিচয়ের সংকটে পড়ে গেছে। এর পিছনে বঙ্গবন্ধুরও কিছু ভুল রাজনীতি ছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতেই বাংলাদেশ অগ্রজ ইতিহাসবিদ প্রফেসর সালাহ্উদ্দিন আহমদ সম্প্রতি কিছু কথা বলেছেন বাংলাদেশর লেখক সাংবাদিক মশিউল আলমের সঙ্গে। বর্তমান আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের নানারকম প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ডের কারণে নানারকম প্রশ্ন উঠছে বঙ্গবন্ধুর ভুমিকা, কর্মকান্ড ও আদর্শ নিয়েও। এমনও প্রশ্ন আসছে যে বঙ্গবন্ধু আসলেই বাংলাদেশ চেয়েছিলেন কিনা, কিম্বা স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনে তাঁর অবদান আসলেই কতটুকু? এমন নানা প্রশ্নের উত্তর মেলে মশিউল আলমের নেওয়া প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ সালাহ্উদ্দীন আহমদ-এর সাক্ষাতকারটিতে। সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্য। ... ...
আরো একটি ব্যাপার হয়েছে। দূরের ঘটনা হিসেবে প্রাক-স্বরাজ সময়টি আমাদের কাছে কতকটা যেন polemic-হীন সময় হিসেবে প্রতিপন্ন হয়। যেন তারই প্রমাণ হিসেবে আমরা বিনা চিন্তা-ভাবনায় গান্ধী-ক্ষুদিরাম-রবীন্দ্রনাথ-সুভাষ-নেহেরুদের ছবিকে মালা পরিয়ে এক লাইনে বসিয়ে দিতে পারি। অবশ্য তৃতীয় ব্যক্তিটিকে আমরা সচরাচর স্বাধীনতার জন্মদিনে মনে করি না (তাঁর "জনগণমন' বা "ও আমার দেশের মাটি' ছাড়া)। আমরা প্রাক-স্বাধীনতা যুগের কথা ভাবি অনেকটা গোটা মহাদেশের ম্যাপ দেখার মত করে, উঁচু-নীচু বন্ধুরতা সব কেমন সমান মাপের মনে হয়। মনে হয় স্বাধীনতা নামের আগুনের কুন্ডের চারপাশে সবাই একই মাপের চামচ দিয়ে ঘি ঢেলে ঢেলে যজ্ঞ করেছেন। আমাদের এই ঝাপসা উত্তরাধিকার স্বাধীনতার জন্মদিন পালনের ব্যাপারেও এক সমালোচনা-হীন দেশপ্রেমী "নাগরিকবৃন্দ' বানিয়ে দিয়েছে। ... ...
দিল্লীর গদিতে বসে যাঁরা পলিসি বানান তাঁদের হয়তো মনে হয়েছিলো এই ১৯৬৪ সালটা জাতীয় ঐক্যের খাতায় দারুণ কিছু একটা নজির তৈরী করবে, কিন্তু সত্যি বলতে কি ঐ সময় থেকেই কাশ্মীরি সাধারণ মানুষ ভারতকে একেবারে "পর' বলে ভাবতে শুরু করলো।' ... ...
২০০৫এ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পুনর্বিন্যাস (Refreshers Course) পাঠক্রমে গিয়ে শেষ দিনে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখোমুখি হবার সৌভাগ্য হয়েছিল। সবাই জানেন, তিনি আজকাল মাতৃভাষা নিয়ে বেশ আবেগিক। ক্যালকাটার "কলকাতা' হবার পেছনে তাঁকে বেশ ঘাম ব্যয় করতে হয়েছে। বরাকের ১৯কে সে বাংলাতে জনপ্রিয়তার পেছনেও তাঁর এক বড় ভুমিকা আছে। বক্তৃতার এক জায়গাতে, তিনি আক্ষেপ করে বললেন, "গিয়ে দেখুন না এখন দার্জিলিঙে! ওখানে বাঙালি আর আগের মতো পাবনে না।' পরের বছর সত্যি সত্যি আমি সপরিবারে দার্জিলিঙ-গ্যাংটকে ঘুরতে গেছিলাম। গিয়ে দেখি, ওখানকার প্রায় সমস্ত বড় বড় হোটেল, রেঁস্তোরার, ট্র্যাভেল এজেন্সির মালিক এবং কর্মচারি, রেলের কর্মচারি সবাই বাঙালি। আমাদের গাড়িতে করে ঘুরিয়ে আনবার জন্যে যাদের ডাক পরেছিল তাদের মধ্যে কেউ শুধু ছিল ভুটিয়া কিম্বা নেপালি! সুনীলের কথা শুনে আমার মনে হছিল, আমি ব্রহ্মপত্র উপত্যকার কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বসে আছি। সেখানে বক্তব্য রাখছেন কোনো অসমিয়া বুদ্ধিজীবি। বলছেন, "গিয়ে দেখুন না বরাক উপত্যকাতে! ওখানে অসমিয়া আর আগের মতো পাবেন না। ওখানকার বেতারে বাজে কেবল বাংলাদেশের গান!' পাঠকের মনে পড়বে বিখ্যাত অসমিয়া বুদ্ধিজীবি ইসমাইল হোসেন চাকরি সূত্রে শিলচর থেকে গুয়াহাটি গিয়েই "সাদিনে' বেশ ক'টি সংখ্যাতে সেরকমই অনেক কথা লিখে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন। বহু অসমিয়াও তখন তাঁর বিরুদ্ধে তখন কলম ধরেছিলেন। সুনীল ইংরেজির পক্ষেও বেশ কিছু সওয়াল করেছিলেন। আমি শুধু তখন প্রশ্ন করেছিলাম, ইংরেজির এই আধিপত্য অক্ষত রেখে কী বাংলার প্রচার প্রসার সম্ভব বলে তিনি মনে করেন? তিনি কী উত্তর দিতে পারেন, "দেশ' পত্রিকার পাঠকেরা তা ভালই জানেন। ... ...