উলের বলের মত ক্ষয়মান প্রতিটি বিকেল অতএব হে পাঠক অকালপ্রবীণ কাঁটা ও চুলের মাঝে এইবেলা মাছ খুঁজে নিন সায়াহ্নে আপন পুচ্ছ ধাওয়া করা বিড়ালের শোভনীয় নয় | ... ...
১৭-ই মে রাজ্যের নন-বোড়োগ্রুপের একটা জোটের পক্ষ থেকে বন্ধ ডাকা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও দিনটা রজনী ফুকানের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য বিশেষ উল্লেখযোগ্য। রজনী “সুমা এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড”-এ চাকুরি করতেন। এই সুমা এন্টারপ্রাইজ এবং আরও তিনটি কোম্পানি- এল.এন্ড.টি., অ্যালস্টম আর টেক্সম্যাকো কে এন.এইচ.পি.সি দুই হাজার মেগা ওয়াটের নিম্ন সুবনসিড়ি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মানের বরাত দিয়েছে। ঠিক আগেরদিন ফুকান ও তাঁর ৪৬২ জন সহকর্মী একসাথে চাকুরিতে ইস্তফা দিয়েছিলেন। খুব সম্ভবতঃ সেদিনই তাঁদের প্রাপ্য টাকা পয়সা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ মিটে যাওয়ার কথা। অর্থাৎ এর পরে গেলে আর প্রোজেক্ট সাইটে সম্ভাব্য প্রবেশের উপায় থাকত না। ফুকান শুরু থেকেই বাঁধ বিরোধী আন্দোলনের সমর্থক আবার অক্লেশে একথাও স্বীকার করেন চাকরীটা তাঁর প্রয়োজন ছিল। হয়তো বাঁধটারও। নিজের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে। ... ...
শাসককুল? আচ্ছা, এ নিয়ে তাঁর কেন মাথাব্যথা হবে? তিনি কে? তিনি তো সামান্য রাজভৃত্য মাত্র! মাতা সত্যবতী যখন যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন তখন কি তাঁকে বলেছেন যাওয়া উচিত হবে কিনা? তাঁকে ডেকে শুধু যাবার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে মাত্র। ব্যাস! তাহলে? তিনি এবং প্রাসাদের কঞ্চুকী প্রধানের মধ্যে পার্থক্য কি? ক্লান্ত, শ্রান্ত একজন মানুষ তিনি। লোকে বলে এই প্রাসাদের প্রতি তাঁর অপরিসীম আনুগত্য। না। এটা লোকের ভুল ধারণা। তাঁর আনুগত্য তাঁর শপথের কাছে। এই বংশকে তিনি অনেককাল আগেই ছেড়ে চলে যেতে পারতেন। কিন্তু তাঁর বোধ তাঁকে বাধা দিয়েছে। একের পর এক বিপর্যয় সঙ্গী হয়েছে কুরুবংশের। কোনো সময়েই শাসনকে স্থায়ী এবং বিপর্যয়মুক্ত দেখেননি তিনি। চলে যেতেই পারতেন! কিন্তু মন বলেছে এভাবে চলে গেলে লোকে বলবে দেবব্রত রাজ্য শাসন করার সুযোগ পায়নি বলে চলে গেল। পিতার জন্য স্বার্থত্যাগ করা থেকে যে ফাঁদ শুরু হয়েছে সেই ফাঁদেই তিনি বন্দী হয়ে পড়েছেন। কোনোদিন ভাবতেই পারেননি কি এই লোকসমাজ? কী ভূমিকা আছে এর? তাঁর জীবন কেমন করে চলবে তা এ নির্ধারণ করার সাহস পায় কোথা থেকে? এসব কিছুই তিনি কখনো ভেবে উঠতেই পারেননি। অথচ তিনি যেমন শান্তনুর সন্তান তেমনই তিনি তো গঙ্গারও সন্তান। তাহলে মায়ের চরিত্রের স্বাধীনতা বোধ কেন তাঁর এল না? এ প্রশ্ন আজ এতবছর পরে এসেছে তাঁর মনে! আবারও যখন ব্যাস তাঁর সাহয্য চাইছেন কুরুবংশকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তখন তিনি ভাবতে বসেছেন। ... ...
বেশ ক’বছর আগের কথা। তা বছর পনের তো হবেই। পুরী বেড়াতে গেছি। সঙ্গে স্ত্রী আর ছেলে। মেয়ে পরীক্ষা ছিল বলে যায়নি। ওখানে গিয়েই মনে হল, ওড়িষার যে সব ভাল ভাল জায়গাগুলো আমি আগে দেখেছি, সেগুলো এদের ঘুরিয়ে দেখাই। ছেলের মা অবশ্য আগেও অনেকবার পুরীতে এসেছে, তবে পুরীর বাইরে খুবজোর কনারক অবধি গেছে। ছেলেতো এই প্রথম এল। নাকের বদলে নরুণের মত মেয়ের বদলে আর একটা মেয়ে পেয়ে গেলাম। আমাদের পাশের ঘরে তাদের পরিবার উঠেছে, আলাপও হল। বললাম, আমি তো একটা গাড়ি নেবই, তুই যাবি আমাদের সঙ্গে? সেও রাজি। চারজনে বেরিয়ে পড়লাম। ... ...
কারা থাকেন এখানে? প্রশ্নটা হল, কারা থাকেন, বা থাকতেন, এই জনামানবশূন্য পোড়ো এলাকায়, যেখানে, নেহাৎই ঘটনাচক্র ছাড়া "সভ্য" মানুষের পা পড়েনা? প্রত্যক্ষজ্ঞানে আমার জানা নেই। তবে জাহাজের ভুলে যাওয়া খোলে যে বাসা বেঁধে থাকে তাড়া খাওয়া ইঁদুরেরা, সিঁড়ির নিচের ভুলে যাওয়া কোন যে ক্রমশ হারিয়ে যাওয়া পতঙ্গদের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে সে আর অজানা কথা কি। এদিক-সেদিক থেকে যা জানা যায়, নোনাডাঙাও কিছু ব্যতিক্রম নয়। কলকাতার এই তলানিতে মোটামুটি তলিয়ে যাওয়া লোকজনেরই বাস। এখানে যারা আছেন, তারা কেউ এসেছেন, শহরের অন্যান্য বস্তি থেকে উচ্ছিন্ন হয়ে। কালিকাপুর, খালপাড় থেকে। কেউ এসেছেন সুন্দরবন থেকে, আয়লার পরে। এমনকি সিঙ্গুরের উচ্ছিন্ন কয়েকজন মানুষও নাকি আছেন। এখানকার মানুষদের ইতিহাস মূলত ক্রমাগত উচ্ছেদের ইতিহাস। ... ...
ঐ মহামিছিলকে চিরস্মরণীয় রাখা বাংলার দায়। কেননা, ঐ মিছিলই প্রমাণ করেছিল বাংলার মানুষ একই মানবিকতার সূত্রে গাঁথা। আজও অন্যান্য রাজ্যে- মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, হরিয়ানায় বলপূর্বক জমিদখল চলছে, হত্যা-গুলি-ধর্ষণ–কিছুই বাদ যাচ্ছে না, কিন্তু কোনও রাজ্যের রাজধানীতেই তথাকথিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি, যাদেরকে ধরে নেওয়া হয় উদারবাদী বাজার-অর্থব্যবস্থা, শিল্পায়ন-উন্নয়নের সমর্থক, কেননা উন্নয়নের ক্ষীর-ননী তো এই শ্রেণিই পায়, রাস্তায় নামছে না। কলিঙ্গনগর বা পস্কো নিয়ে কটক-ভুবনেশ্বরে দলহীন মিছিল, ভাট্টা-পারসোল নিয়ে লক্ষ্ণৌ বা দিল্লিতে ঝাণ্ডাহীন মিছিল, জইতাপুর নিয়ে মুম্বাইতে স্লোগানহীন বিশাল জনসমুদ্র – দেখা তো যাচ্ছেই না, এমনকি স্বপ্নও দেখছেনা কেউ। ... ...
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলে গগৈএর ছেলে রূপঙ্কর আর তার বন্ধু ভরত সাহুকে ধরার পর পুলিশ এদের দুজনকে ১১ তারিখ রাত্রে মারধোর করে ও রাস্তায় টেনে আনে। পুলিশ ছোট ছেলেদের মারতে শুরু করতেই গগৈ ওদের দিকে তেড়ে যায় আর তখনই পুলিশ গগৈ আর তার স্ত্রীকে আক্রমণ করে ও গ্রেপ্তার করে। গগৈএর হাত ভাঙ্গে, ভরত গ্রেপ্তার হয় আর রূপঙ্কর নিজের প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যায়। চুলধোয়া পঞ্চায়েতের (এই পঞ্চায়েতের বিস্তৃতি অনেকটা এলাকা জুড়ে) গ্রামগুলোতে অনেক ঘুরেও কেউ রূপঙ্করের সন্ধান দিতে পারে না। গগৈএর বাবার বাড়ি (রূপঙ্করের দাদু) বাসন্তীপুরে পৌঁছে একটা ঠাণ্ডা ঔদাসিন্য অনুভব করলাম। অনেক জোরজার এবং বোঝানোর পর যে আমরা পুলিশের লোক নই বা আসাম সরকার আমাদের পাঠায়নি, ওনারা রাজি হলেন রূপঙ্করকে ‘খুঁজতে’। কয়েক মিনিট পরে স্থানীয় এক আন্দোলনকারীর সঙ্গে সে এল। সেদিনের ঘটনার পর থেকে কুড়ি বছরের রূপঙ্কর খুবই মানসিক আঘাত ও ভয় পেয়েছে। সঙ্গের ভিডিওতে সে মে ১১ তারিখ রাত্রের সমস্ত ঘটনা ব্যাখ্যা করে। ও বলে কিভাবে পুলিশ এবং সিআরপিএফ ওকে ও ভরত সাহুকে আক্রমণ করে; কিভাবে অস্ত্রধারী কিছু লোক ধাবার আশেপাশে ওরা যে শুয়োরগুলো পুষছিল সেগুলোকে এমনভাবে মারে যে তাদের পিছনের চামড়া উঠিয়ে নেয়। ... ...
মধ্যযামে যখন সূর্য তখনই তার প্রখর তেজ সবচেয়ে কাজে লাগার কথা।কিন্তু লাগেনা। সে তেজ-এ সব শুকিয়ে যায়। মানুষের জীবনও এমন। মধ্যযামেই সে সবচেয়ে বেশী তীক্ষ্ণ আর তীব্র। কিন্তু তার সেই তীব্রতা তাকে ক্রমশ সংঘাতসংকূল করে তোলে। প্রথম জীবনের স্বপ্নগুলো ধীরে ধীরে মরীচিকার মত মিলিয়ে গিয়েছে তখন। যা কিছু একদিন সম্ভব মনে হচ্ছিল তা আজকে বোঝা যাচ্ছে অসম্ভব প্রায়। ভবিষ্যৎ একটি অসার প্রস্তাবনা। তখন ক্রমশ জেগে ওঠে ক্রোধ, আক্ষেপ, ক্ষোভ। আরো কিছু সময় গেলে একদিন সেই সব ক্ষোভ মিলিয়ে যাবে। আপন নশ্বর জীবন এ সকল ক্ষোভ-ক্রোধ-আক্ষেপকে বর্ণহীন করে দেবে। তখন মনে হবে অনর্থক বিবাদ সব। যে যা করছে সে তা করবেই। কাউকেই কিছুই বোঝানো যাবেনা। তাহলে কী ফল? ব্যাস শুনছিলেন সায়নাচার্য্যের কথা। এমন কথা তিনি আগেও শুনেছেন,কিন্তু বক্তা কেউ-ই সায়নাচার্য্যের মত আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গীর অধিকারী ছিল না। গম্ভীর ভরাট গলায় সায়নের কথা খুবই বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়। ব্যাসের বাম দিকে বসেছিলেন অশ্বল। সায়নের কথা শেষ হতেই তীব্র হাস্যে ভরিয়ে দিলেন কক্ষ। সকলে তাঁর দিকে উৎসুক হয়ে তাকালো। অশ্বল কোনোক্রমে হাসি সামলালেন। ... ...
থানার বাইরে এসে সবে দু’পা ফেলেছি। এক ভদ্রলোক বললেন, আচ্ছা, একটা কথা বলব? অনেকক্ষণ ধরে দেখছি আপনি এ অঞ্চলে ঘোরাফেরা করছেন। কিছুক্ষণ আগে দেখলাম থানাতেও ঢুকলেন। কী ব্যাপার বলুন তো? বললাম, সাধে কি আর ঘুরছি মশাই, এই দেখুন, অমুক ভবনটা খুঁজতে খুঁজতে হন্যে হয়ে গেলাম, এদিকে সাড়ে এগারটায় অ্যাপিয়ারেন্স – ভদ্রলোক বললেন, অমুক ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাশে? আসুন আমার সঙ্গে। আমি হকচকিয়ে গিয়ে বললাম, আপনি – উনি বললেন, আমি ওই অফিসেই কাজ করি। যে বাড়িটায় উনি আমাকে নিয়ে গেলেন, সেটা থানার ঠিক পেছনে। যাকে বলে পিঠোপিঠি। ... ...
আমি ব্যক্তিগত ভাবে কোন লেসবিয়ানদের সাথে মিশিনি, আমি নিজে লেসবিয়ান, কিন্তু কেউ যদি আমাকে লেসবিয়ানদের চরিত্র নিয়ে সংজ্ঞা লিখতে বলে, আমি পারব না। আমি কি, তা আমি জানি। আমি মোটেও মানিনা, সবার চরিত্র, চাহিদা সমান হয়। তাই দুম করে কাউকে ট্যাগ করে দেওয়া থেকে যতটা পারি বিরত থাকি। হোমোফোবিকদের কাছ থেকে বহু আক্রমণ আসে। শুনতে শুনতে সয়ে গেছে। তাদের কাছ থেকে আসা আক্রমণ আর খারাপ লাগে না। তারা আক্রমণ করবেই, টিটকিরি মারবেই জানা কথা... ... ...
যেখানে সমকামী নিজেই মনে করছেন, তিনি সমকামিতা নিয়ে সুখী নন আর সেই থেকে আসছে অবসাদ, তার আসলি কালপ্রিট নাকি আমাদের সমাজ, যা সকলকেই ভাবতে শেখায় সমকামিতা অসুখ। কারণ, সুস্থ, স্বাভাবিক, সুন্দর, এই তিন স এর সাথে আমাদের সমাজে সমকামিতা যায় না। কারণ, এই সমাজে সমকামিতার গ্রহণযোগ্যতা নেই, স্বীকার করলে পদে পদে হাস্যাস্পদ হতে হয়, লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। একজন সমকামী তাঁর সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন নিয়ে অস্বস্তিতে ভুগবেন, এই সমাজে সম্মানের সাথে বাঁচার জন্য পরিবর্তন চাইবেন, মনে করবেন এটা একটি অস্বাভাবিক ব্যাপার, অর্থাৎ তিনি মনে করবেন, তিনি অসুস্থ, এবং নিজের ‘অসুখ’ নিয়ে তিনি অসুখী থাকবেন, তাতে আর আশ্চর্যের কী ! তাই এই ইগো ডিস্টনিক সমকামিতা মানেই অসুখ, তা আদৌ না। চিকিৎসকের নাকি সবার আগে এটি জানিয়ে, বুঝিয়ে কনভিন্স করিয়ে দেওয়া দরকার,সমকামিতার মধ্যে ভুল কিছু নেই। এবং সেই সাথে সবার।যারা অসুখ মনে করছেন, উলটে নাকি তাঁদেরই কাউন্সেলিং দরকার ! ... ...
কুড়ি বছরের রাজীব সইকিয়া – নিবাস রূপহি – শিক্ষাগত যোগ্যতা – মাধ্যমিক, বর্তমানে বন্ধু রীতা সইকিয়ার সঙ্গে পলাতকের জীবনযাপন করছেন। এরা দুজনে আগে বিভিন্ন জিনিষ সাপ্লাইয়ের ব্যবসা করত। এখন দুজনে বাইকে করে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছেন খাদ্য ও রাত্রের জন্য মাথা গোঁজার ঠাঁই ভিক্ষে করতে করতে। বাবুল বলে, “এখানের এক স্থানীয় ব্যবসায়ীর সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক ভালো। তার ফলে সে আমাদের কাছে খবর পৌঁছে দিতে পারে। সেই আমাদের জানায় যে বগীনদী পুলিশ ৫৩ জনের খোঁজ করছে যার মধ্যে আছে দেবো ভুঁইয়া, দীপক নেয়গ, প্রনব সইকিয়া আর রাজীব ও রীতুর সঙ্গে আমি। সেই একই লোক আমাদের জানায় যে হোমগার্ডের চাকরি দেবার কথা দিয়ে পুলিশ গ্রামগুলো থেকে ছেলে তুলছে।” এভাবে ছেলে তোলার সঙ্গে মিল আছে ছত্তিশগড়ের দান্তেওয়াড়া আর ওড়িশার কলিঙ্গনগরে যেভাবে স্পেশাল পুলিশ অফিসারস (এসপিও) নিয়োগ করা হয় তার। ... ...
দুর্যোধনকেও এই খেলা দেখাতে বসেন ধৃতরাষ্ট্র। তাঁর বক্তব্য এটা ক্ষত্রিয়দের দেখাই দরকার। যুদ্ধ, মৃত্যু, রক্তপাত এসব তার জীবনের অঙ্গ। কাজেই এ তার শিক্ষার অংশ। ধৃতরাষ্ট্র শোনেন আর্তচিৎকার আর দুর্যোধন দেখে। গান্ধারী বলতে পারেন না কথাটা ভুল। তাঁরা ক্ষত্রিয় বলেই তো শাসন করছেন! কিন্তু শাসন যখন অসহায়কে হত্যা করে, তা সে বিচার বা যুদ্ধ যে নামেই হোক, তা তিনি সহ্য করতে পারেন না। সারাজীবন এত অধর্মাচরণ দেখে এসেছেন যে আর ভাল লাগেনা তাঁর। এ খেলা কোথায় নিয়ে যেতে পারে মানুষকে তা তিনি হাড়ে-মজ্জায় বুঝেছেন। নিজের দেশের কথা মনে পরে তাঁর। এই উপমহাদেশের প্রত্যন্ত অংশে থাকা অঞ্চল।কিছুকাল অন্তরই বাইরে থেকে যাযাবর, দস্যু বা অন্য গোষ্ঠী আক্রমণ করে এসেছে। বারেবারে রাজ্য শাসন পাল্টে গেছে। কত যে মিশ্রণ হয়েছে তার শেষ নেই। আর সেই রাজ্য সুরক্ষিত রাখতে প্রতিদিনই শাসনতন্ত্র বহু বহু অধর্ম আচরণ করে চলেছে। এই দোয়াব এবং উত্তরাপথের অন্যত্র প্রচলিত ধর্মের-আচরণের সঙ্গে কোনো মিল নেই তার। এ নিয়ে কম কথাও শোনেননি তিনি, এই হস্তিনাপুরে বধূ হিসেবে আসার পর থেকে। মাঝে মাঝে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। তাঁকে করুণা করে আনা হয়েছে এখানে, একথাটা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে অহরহ। ধৃতরাষ্ট্রই বেশী করেছেন। সত্যবতী তুলনায় এত নির্মম না। তাঁর ভয় নেই যে গান্ধারী হাতের বাইরে চলে যেতে পারে। কিন্তু ধৃতরাষ্ট্রের আছে বিলক্ষণ। ... ...
হ্যাঁ গল্পের মধ্যে আবার দুটো আরও ছোট গল্প। সেই যে এসিয়ান গেমসে চূণীদার ক্যাপ্টেন্সিতে সোনা জেতার কথা বললাম, সেই দলে ছিলেন মেওয়ালাল। বিশ্ব ফুটবলের ‘যাদুকর’ বলা হত স্ট্যানলি ম্যাথিউজকে, আর ভারতের যাদুকর মেওয়ালাল। মেওয়ালালের গোলেই সম্ভবতঃ সোনাটা এসেছিল। সেই মেওয়ালাল গুরুতর অসুস্থ। তিনি প্রাক্তন রেলকর্মী হিসেবে রেলের হাসপাতালে ভর্তি হতে গেছেন। ডাক্তার বলল যায়গা নেই। মেওয়াদার ছেলে বলল, একটু দেখুন না, এসিয়াডে সোনাজয়ী খেলোয়াড়ের যদি এই অবস্থা, সাধারণ কর্মীদের কী হবে? ডাক্তার বলল, তাই নাকি? সোনাজয়ী নাকি? কাল মেডেলটা সঙ্গে আনবেনতো, দেখব কি করা যায়। মেওয়াদা মারা গেলেন পরের দিন। ... ...
গত একশো বছরের মধ্যে ভারতবর্ষে প্রায় পাঁচকোটি নারী 'হারিয়ে' গেছেন।এই নিয়ে ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে 'দি ফিফটি মিলিয়ন মিসিং' নামে আমরা এক প্রচার অভিযান শুরু করি। কিন্তু শুরু করার আগেই আন্দাজ করেছিলাম যে এই নিয়ে তুমূল বিতর্কের ঝড় বয়ে যাবে। মাত্র একশোটা বছরের মধ্যে এতজন মহিলা স্রেফ নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেন কি করে এই নিয়ে দেশের আর বিদেশের জনতা প্রচুর প্রশ্ন তুলবেন। কথাটা আদৌ সত্যি কিনা সেই নিয়েও অনেকেরই সন্দেহ হবে। সত্যি বলতে কি অস্ট্রিয়া, সুইডেন, বেলজিয়াম, সুইৎজারল্যান্ড আর পর্তুগাল এই পাঁচ পাঁচটা দেশের মোট জনসংখ্যার থেকেও এই হারিয়ে যাওয়া মেয়েদের সংখা বেশি... ... ...
সেই যে জারজ পিঁপড়ে, জারে জন্ম যার জারে মৃত্যু জারে বিয়ে জারেতে সংসার... ... ...
শতপথ ব্রাহ্মণের | আমি একা এক পথে হেঁটে হৈমবতী রাজকন্যা পরবাসে কুলটা হলাম... ... ...
একদম প্রথম থেকেই অংক কষি। একদা ৭ জানুয়ারী ২০১১ ভোরে কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্ত পার হয়ে দেশে ফেরার সময় কাঁটাতারের বেড়ায় কাপড় আটকে গেলে ফেলানী নামক কিশোরী চিৎকার শুরু করে। সে সময় বিএসএফ সদস্যরা তাকে গুলি করে হত্যা করে , পরে তার লাশ কাঁটাতারে ঝুলতে দেখা যায়। ঝুলতে থাকে তার চুল গুলো। সাথে সাথেই আমাদের আবেগও লটকে থাকা ফেলানীর চুলের সাথে পাল্লা দিয়ে দুলতে থাকে। মনের একদম গভীর থেকে এক অদৃশ্য ঘৃণা উপচে পড়ে। ঘৃণাগুলো দল বেধে ছুটতে থাকে সীমান্তের ওপাড়ে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, “ অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বা স্বাভাবিকতার বীভৎস রূপ যখন আমাদের ইচ্ছার বিপরীতে প্রকাশিত হয় তখন ঘৃণা নামক আবেগের সৃষ্টি হয়” ... ...
সংসারে উচ্চতম আদর্শ কি ব্রহ্মচর্য্য?পরাশরকে এ প্রশ্ন করেছিলেন সত্যবতী।তাঁর কৌতুহল ছিল খুব স্বাভাবিক।সাধারণভাবে এই ব্রহ্মচর্য্য নিয়ে এত কথা বলা হয়।তাহলে যাঁরা সংসারত্যাগী তাঁদের মধ্যে একাংশ কেন স্ত্রী-পুত্রাদির অভিলাষ রাখেন?অন্য অংশটা,যাঁরা দুরূহ পাহাড় বা জঙ্গলে চলে যান সাধনা করতে সেই অংশটা অতি ক্ষুদ্র।পরাশরের কাছে নানান কাহিনী শুনতে শুনতে তাঁর কৌতুহল জেগেছিল যে এত এত মহা ঋষি বা মুনি কেন সংসার করলেন? তারই সঙ্গে ধীমতি আরেকটি প্রশ্নও করেছিলেন!এই যে যাঁরা সংসার ত্যাগ সত্যি করেন,নারী সংসর্গকেও অনাচার বলে গণ্য করে এক দীর্ঘ্য সময় সাধনা করতে থাকেন বারেবারে দেখা যায় দেবরাজ তাঁদের ভয়ে ভীত,অথবা দেবকূল চূড়ামণি ব্রহ্মা বা বিষ্ণু বা মহাদেব স্বয়ং তাঁকেই বর দিয়ে সন্তুষ্ট করছেন।এই আখ্যানের মধ্যখানে থাকে দেবরাজ ইন্দ্র বা অন্যান্য দেব অপ্সরা পাঠিয়ে নারীর প্রলোভনে ভাঙতে চাইছেন তপস্যা।কেন?নারী কি শুধুই পাপ?... ... ...
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই বদলে যায়, শুধু মানুষের পরিচিতি ছাড়া। আমি একজন হ্যান্ডসাম তরতাজা তাগড়া যুবককে চিনতাম, তার নাম ছিল তিমির। এখনও তিমিরকে মাঝে মাঝে গড়িয়াহাটে দেখি, লোলচর্ম, পলিতকেশ, কুব্জদেহ। হাতে একটা লাঠি আর মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে অনেক কষ্টে ভিড়ের মধ্যে শরীরটাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তিমির আমারই বয়সী কিন্তু বার্ধক্যের মজাই হল, সে সবদেহ কে শবদেহ একসঙ্গে বানায়না। সন্দেহ হওয়াতে একদিন তার সামনে রাস্তা আটকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা, তুই কি – মানে, আপনি কি ‘তিমির’? একরাশ বিরক্তি ভরা মুখে সামান্য বাঁকা হাসি মাখিয়ে সে বলল, আমি যে তিমিরে, সে তিমিরেই... ... ...