আমাদের বাড়িটা কলকাতা লাগোয়া হয়েও এখনও গ্রাম। ছোটবেলায় ধান চাষ দেখেছি। কলাই চাষ হত আমাদের বাড়ির পেছনের মাঠে। বিকেলের নরম রোদে মায়ের সাথে বসে কলাই তুলে ঝুড়িতে ভরে রাখতাম। তারপর সেটা থেকে ডাল হত। মুগ ডাল। কিভাবে কলাই থেকে ডাল হত সেটা এখন আর মনে পরেনা। সে অনেকদিন আগের কথা। তখন আমরা দুই ভাই ছোট। আমার বয়স দশ-এগারো হবে, আর ভাই আমার থেকে চার বছরের ছোট। আমাদের বাড়ির পাশেই মণ্ডলদের পুকুর। তার পাশে অনেক খেঁজুর গাছ। একসময় সেই গাছের নিচে লাল পাকা খেঁজুর বিছিয়ে থাকত। মাছি ভনভন করে উড়ে বেরাত। তার পাশে একটা ডেঁফল গাছ ছিল। ... ...
বাসের মধ্যে সিনিওর সিটিজেন সীটে বসা নিয়ে দুজনের মধ্যে তর্ক লেগেছে। একজন বলছে- আমি বেশী বয়স্ক, আমি বসবোআর একজন বলছে- ধুর মশাই আপনার চুল এখনো কালো, কি বলছেন!- আরে! চুল সাদা মানেই বেশী বয়স?- ঠিক আছে,আপনার আধার কার্ড বের করুন, দেখি আপনার বয়স- এ রে! আমার আধার কার্ডে ডেট অফ বার্থ ভুল এসছে!- চলবে না, আধার কার্ডে যা থাকবে, সেটাই মানা হবে। কনডাকটর্ দাদাও এটাই বললো- আপনারা নিজেদের মধ্যে মেটাতে পারেন না যখন, তখন আধার কার্ডের জন্মসাল দেখেই মিটমাট হোক!এটা শুনে অন্য এক মধ্যবয়স্ক প্যাসেঞ্জার বলে উঠলো- বাহ! আমার আধার কার্ডে জন্মসাল এত ভুল এসছে যে সেই হিসেবে আমার বয়স এখন ... ...
বছরে বেশ কয়েকবার দূরপাল্লার মেল বা এক্সপ্রেসের যাত্রী হওয়ার সুযোগ আমার হয়েই থাকে। ট্রেনে সবসময়ই আমার বড় পছন্দের জালনার ধার। নির্দিষ্ট সীটটি বেশ কিছু ঘন্টার জন্য আমার নিজস্ব পৃথিবীর মতো হয়ে যায়। একই পথে বহুবার আসা যাওয়া করলেও জালনার বাইরের পরিবেশ ও প্রকৃতি প্রতিবারই আমাকে নতুনভাবে আকর্ষণ করে থাকে। বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন ঋতুতে সেই বিশেষ যাত্রাপথটি বিভিন্ন রূপ, রসে আমার চোখে ধরা দেয়। যত বয়স বাড়ছে, ঐ পরিচিত রূপ রসের দুনিয়ার বহু গোপন রহস্য অন্তরে উন্মোচিত হচ্ছে। বুঝতে পারি এই পাঠশালার পাঠ্যক্রমের কিছুই বিশেষ পড়া হল না আজও। তাই বারেবারে ইচ্ছে হয় অমনভাবে জালনার পাশে বসে সৃষ্টিকর্তার অতি যত্নে রচিত প্রকৃতিকে দু চোখ ভরে দেখতে, ... ...
বাবুমশায়দের পেন্নাম । মা জননীদের গড় করি।আজ্ঞে আমার নাম গণেশ হাঁসদা। মাঠের ওপারে ওই কুঁড়েটায় আমি থাকি । ছিটবেড়ায় মাটি লেপা । পচা খড়ের ছাউনি। তেমন বরষা হলে জল বাঁধে না। ঘর ভেসে যায়। আর ঘরে আমার কি বা আছে। একটা ছেঁড়া চাটাই – খেজুর পাতার, আমি নিজেই বুনেছিলাম। একটা মাটির হাঁড়ি। খুব সাবধানে নাড়াচাড়া করি। ভেঙে গেলে মুশকিল। ওটাতেই ভাত রাঁধি কিনা। যেদিন চাল জোটে আর কি। রোজ তো আর জোটে না। আর একটা টিনে র শানকি আছে। ভাত জুটলে ওটায় ঢেলে খাই। ... ...
আমার হাইট পাঁচ পাঁচ। আমার নামের হাইট ছয় চার। শুধু নামটাকে যদি ধরা হয়, সত্যজিৎ রায়ের মতো প্রেজেন্স। তারপর তো আমি এলাম, যাক গে, সে অন্য ব্যাপার। ছোটবেলায় কথা বলতে শেখার পর প্রবল উৎসাহে কেউ জানতে চাইলেই নিজের নাম বলতাম। কিন্তু ছোটরা খুব উৎসাহ নিয়ে কিছু করলে বড়দের উদ্ভট আচরণ করার স্বভাব প্রথাগত। তাই, আমি নাম বললেই দেখতাম স্বাভাবিক কথা বলতে পারা মানুষেরা হঠাৎ আউ-আউ করে আধো-আধো বোলে "বাব্বা কত্তো বয়ো নাম" বলে তালি দিচ্ছেন। আমার ভালো লাগতো না। বরাবরই, মানুষ যাতে কম কথা বলে, আমি সেই চেষ্টা করি। তাই তারপর থেকে কেউ নাম জানতে চাইলে বহুদিন অব্দি বলতাম "শুভংকর ঘোষ ... ...
পপলার গাছ এখানে আসবার আগে কখনও চোখে দেখেনি আন্নু।... সরু সরু ডালপালা আকাশের দিকে খাড়া হয়ে আছে যেন আঙুল তুলে গাছগুলো কাউকে অভিশাপ দিচ্ছে। ওদের পায়ের কাছে উজ্জ্বল সর্ষেখেত না থাকলে একদলা জমাট কান্নার মতো লাগত পপলার গাছগুলোকে।" (জল) গল্প শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই লেখকের এমন অসাধারণ চিত্রকল্প রচনায় পাঠককে মুগ্ধ হতেই হয়। গল্প একটু এগোতেই আন্নু, গাছেদের অভিশাপ আর একদলা জমাট কান্না একাকার হয়ে যায় কোথায় যেন। এমন উপমা-চিত্রকল্প খুব সহজ স্বচ্ছন্দভাবে এসেছে বারবার মাত্র ১০৫ পৃষ্ঠার সীমারেখা জুড়ে।প্রকৃতিকে বারবার প্রতিভা ব্যবহার করেছেন অসামান্য তুলির টানে। "সূর্য ডুবছে, সবুজ, কমলা, লালচে আলো ছড়িয়ে পড়ছে লঞ্চের নীচে পেষাই হওয়া ঢেউগুলোর গায়ে..."। ... ...
আয়লা, আম্ফান থেকে আমরা শিক্ষা নিই নি, শুধু ভিক্ষা নিয়েছি - সমীরণ মন্ডল সুন্দরবনের মানুষের মনের কথা বলেন তার পোষ্টে, সেখান থেকেই এ লেখাটির কথা মনে হল। বিনামূল্যে আপনি চাল পাবেন, ডাল পাবেন, সব পাবেন কিন্তু শিক্ষা পাবেন না, কারণ, শিক্ষিত মানুষরা প্রশ্ন করতে পারেন। গিয়েছিলাম ওখানে তিন বছর পর। দেখেছিলাম তখন ধান চাষ করতে পারছিলো মানুষরা। সেই স্মৃতি এখনও ফিরে আসছে বারে বারে। ত্রাণ এবার জুটবে বা জুটবে না - সেই প্রশ্নর উত্তর আছে নেতাদের কাছে। টাকা নাকি কম এসেছে। ঐ অঞ্চল দিয়ে ঝড়টা ঠিক যাচ্ছিল না বলে। রাজনৈতিক নেতারা রাজনীতি করবে। লড়াইটা একাই লড়বে সুন্দরবনের মানুষ। ওরা এখনও লড়ছে। ... ...
ভোররাত। নীলার খুব শীত করছিল। সূর্যের আলো চোখে পড়তে ঘুম ভাঙল। চোখ খুলে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মাথায় পরীটার মধ্যে নিজেকে দেখতে পেল। পিঠের ডানা হাতের বাজনা সমেত পাথরের শরীর। শীতল। আশ্চর্যের বিষয় হল যে গোটা ব্যাপারটা তে তার যতটা চমকে যাওয়ার কথা ছিল তার ভগ্নাংশ ও সে চমকাল না। যেন এমনটাই হওয়ার কথা ছিল। ... ...
কালীঘাট থেকে গড়িয়াহাট, বাসভাড়া ১০ টাকা।ধর্ম্মতলা থেকে কালীঘাট,বাসভাড়া ১০ টাকা।হাওড়া থেকে টি-বোর্ড, বাসভাড়া ১০ টাকা।বাগমারী থেকে মাণিকতলা,বাসভাড়া ১০ টাকা। লাগামছাড়া বাসভাড়া ( অটোর কথা বাদই দিলাম,কোনও দিনই নিয়ন্ত্রনে আনা হয়নি )কবে কমবে?
পান্নালাল দাশগুপ্তর "গান্ধী গবেষণা" বইতে গান্ধীজিকে অন্যভাবে দেখতে ও দেখাতে চেয়েছিলেন৷ সেই বইটাই পড়া গেল৷
বইয়ের ভূমিকাতেই লেখক জানিয়েছেন, আনকোরা ও অশ্রুতপূর্ব বই কিনে পড়ার আগে তাঁর বাবা তাকে ভূমিকাটা পড়ে নিতে বলতেন। 'অপচ্ছায়া' বইটার ভূমিকা পড়ার সুযোগ আমার হয়নি। সব্যসাচী সেনগুপ্তের লেখা অন্যান্য জনপ্রিয় বইগুলোও আগে পড়িনি। কিন্তু ভূতের বই বলেই কিনা কে জানে, আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় মোটেও ভুল করেনি।গত কয়েক বছরের মধ্যে ভৌতিক ঘরানার যত বই পড়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে, নিঃসন্দেহে বলতে পারি, 'অপচ্ছায়া' তাদের মধ্যে সেরা। কিন্তু একটা ডিসক্লেইমার আগে থেকেই দিয়ে রাখলাম, দাঁত কপাটি লাগা ভূতের গল্প পড়ার ইচ্ছে হলে এড়িয়ে যেতে পারেন। এই বইয়ের লেখায় ভয় দেখানো ভূতের দেখা প্রায় মিলবে না বললেই চলে। ... ...
ক্লান্ত লাগে। ভিডিওটা খুলেছিলাম অনবধানে। আর পাঁচটা যেমন খুলি। খুলে দেখলাম পুলিশ কাদের যেন গুলি করতে করতে তেড়ে যাচ্ছে। একটা লোক হাত তুলে দৌড়ে এল। মারধোর করতে নয়, আত্মসমর্পণের ভঙ্গীতে। পুলিশ তার দিকেও তেড়ে গেল। পুলিশের যা স্বভাব। তারপর লাঠি দিয়ে ধড়াদ্ধম পিটুনি। সঙ্গে কয়েকটা গুলির শব্দ। গুলিটা কোথায় লাগল ঠিক বুঝতে পারিনি। পয়েন্ট ব্ল্যাংকে ওইভাবে কাউকে গুলি করে নাকি? লোকটা পড়ে আছে দেখা গেল। ভাবলাম, এমন করে মারল, যে অজ্ঞান হয়ে গেল? তারপর দেখলাম, ক্যামেরা হাতে একজন, পুলিশের ফটোগ্রাফারই হবে, দৌড়ে গেল পড়ে থাকা শরীরের দিকে। তারপর শরীরের উপরে উঠে জান্তব উল্লাসে নাচ। দেখে আঁতকে উঠে ভাবলাম, মরে যাবে ... ...
বলছি সেই সিমলে পাড়ার গপ্পো। সিমলা স্ট্রিট কলিকাতার একটি প্রাচীন রাস্তা। মার্ক উডের (১৭৮৪) ও আপজনের (১৭৯৩) কলিকাতা মানচিত্রে রাস্তাটির কোনও উল্লেখ না থাকলেও সম্ভবত উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে রাস্তাটি নির্মিত হয়ে থাকবে। লেফটেন্যান্ট এইচ অ্যাবারক্রম্বি (Lt. H. Abercrombie) এবং ক্যাপ্টেন এইচ. এন. ফরবেস (Capt. H. N. Forbes) মিলিতভাবে ১৮৩৬ খ্রিঃ কলকাতার যে মানচিত্র প্রস্তুত করেন, তাতে এই পথটি দেখানো আছে। শক সাহেব ১৮৬৬ খ্রিঃ কলিকাতার জনগণনার যে প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন তাতে কলিকাতা শহরের ৪৩৮টি রাস্তার একটি তালিকা দেওয়া আছে। ওই তালিকার মধ্যে ১১৯ নম্বরে সিমলা স্ট্রিটকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সিমলা নামটি কলিকাতার ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সম্রাট ফারুকশিয়ারের ... ...
এই থ্রেডে 'গুরু'দের মধ্যে আড্ডা জমুক 'ইউরো ২০২০' নিয়ে? যাঁরা আজ রাত থেকে বসছেন ম্যাচ দেখতে, স্বাগতম আমার এই থ্রেডে আপনাদের সকলকে। মতামত, ফেভারিট, প্রেডিকশন, বিশ্লেষণ চলতে পারে আমাদের মধ্যে।আমার মত নিচে জানাচ্ছি।এবারের টুর্নামেন্টে তেমন কোনও ফেভারিট নেই আমার। আগে থেকে guess ও করতে চাইছি না কে জিততে পারে। নির্ভেজাল আনন্দ নেব ম্যাচগুলো দেখে। প্রতিটা গ্ৰুপ থেকে যে যে দেশগুলোর উপর আমার নজর থাকবে --A: ইতালি, তুরস্কB: বেলজিয়ামC: অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডD: ক্রোয়েশিয়া, ইংল্যান্ডE: স্পেনF: পর্তুগাল, ফ্রান্স আজ প্রথম ম্যাচ: ইতালি বনাম তুরস্কআমার প্রেডিকশন: Draw (1-1) ... ...
যে মানুষ সারাজীবন নিজের কাজ নিজে করে গেছেন, হাট-বাজার করা, নালা,নর্দমা, বাথরুম পরিস্কার থেকে নিজের জামাকাপড় নিজে কেচে ইস্ত্রি করা
জনপ্রিয় এই গান টি শোনেননি এমন বাঙালি পাবেন না। "এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বোলো তো" সুন্দর এই পৃথিবীতে, মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে, যারা লম্বা হাঁটতে ভালোবাসেন বা যারা ট্রেকিংই যান, তাদের উত্তর যে "ভালোই হতো" হবে এটা বলাই বাহুল্য। সুগস্পিৎজে ট্রেকিং এর শুরুতে আমাদের ও ঠিক তাই মনে হয়েছিল কিন্তু পরের দিকে আমাদের দলের মধ্যে কারো কারো হয়তো মনে হচ্ছিলো "কতদূর আর কতদূর বলো মা"। আসুন দলের সাথে পরিচয় টা আগে করে দি, চার জনের টীম, চারমূর্তি। আমি, আমার স্ত্রী, আমাদের পুত্র ও কন্যা। এমনিতে বছরে দু থেকে তিনবার আমরা এদিক ওদিক বেরিয়ে পড়ি, যার মধ্যে ... ...
শীতের শুরুতেই বেশ ভালো ট্যাংড়া মাছ পেলাম ভাইয়ের কাছে। ভাই। নামটা তার পোষাকি, না নিকনেম - জানি না। জানার চেষ্টাও করি নি কখনো। মাছওয়ালা। ভাটপাড়ার ধুনি মুখুজ্জের রোয়াকে বসে মাছ বেচে। ট্যাংড়া মাছ দেখলেই আমি বড্ড স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। শীতের বড়ো তেলালো ট্যাংড়া বড্ড ভালোবাসতেন জ্যোতিবাবু। নৈহাটি বাজারের সুকুমারদার কাছে একটা সময় ছিল, যখন শীতে বড় ট্যাংড়া আসলেই তা থেকে খানকতক যেত ইন্দিরা ভবনে। ... ...