কাঁচা লঙ্কা ধনে পাতা দিয়ে কয়েত বেল মাখা খেয়েছেন? কিংবা কুল গাছ থেকে সদ্য পাড়া কুল? কখনও কুমীর ডাঙ্গা খেলেছেন? কিংবা ধরা চোর? হুসাহুস? পিটটু?যাঁরা আধা শহর আধা গ্রাম কিংবা মফঃস্বলের কোনো প্রান্তে আমার মত শৈশব কাটিয়েছেন। তাঁরাই একমাত্র ওগুলোর স্বাদ পেয়েছেন। কাষ্ঠগদ্যের শহুরে জীবনে কবিতার স্বাদ মেলা ভার।বাড়িতে বাড়িতে তখনও মিউনিসিপ্যালিটির কল আসেনি। প্রতিটি পাড়ায় অবশ্যম্ভাবী ... ...
অনেক সময় রাত তিনটের আগমন হয় সরোদের ঝংকারে। মন এগিয়ে চলে দূরে, অন্ধ রাতের মধ্যে কি যেনো খোঁজে; দেহ থাকে অলস, কেদারা আঁকড়ে। অনেক শ্বেতপাথরের ধাপ, অনেক ঝলমলে দিঘী ভর্তি জল, শিউলির স্নিগ্ধতা উন্মুক্ত হয়ে পড়ে; তাদের ঘিরে থাকে গান, সুরের এক বিস্ময়কর সরণী স্থাপিত হতে থাকে, ভোরের লম্বা প্রতীক্ষায়। এ যেনো অন্যরকম এক জীবনের স্বাদ, শিল্পের অনুরণন। কারা এই জগতের অধীশ্বর? কিভাবে দিনের অসার মুহূর্তে, অবসরের ক্লান্তিময় লহমায় তাকে খুঁজে পাবো? প্রত্যেকটা সুর কিভাবে গান হয়ে যাবে? শব্দ শব্দের মোড়ক ত্যাগ করে, স্বপ্নে-জীবনে মিশে একাকার একটা কিছু সৃষ্টি করবে? অনেক রঙ, অনেক মাত্রা যেনো মিশে যাবে একসাথে কারোর খেয়ালের ... ...
ঠিকানার খোঁজে ————— সুপ্রিয়া চৌধুরী ————— কত কিছু দেখি কত কিছু শিখি দেখে দেখে তবু ভরে না এ আঁখি এ জীবন খাটো বড় আটোসাটো ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে হতে চাই পাখি। উড়ে উড়ে ঘুরে দেখিবো
আমাকে তুমি সাজিয়ে দাও, তরঙ্গিত গোপন জলরাশি ছিনিয়ে নেবো ঘুমের পরপারে, জলের পাশাপাশি হাওয়ার গাঢ় ছিটকে ওঠা, বড় চোখের ঘন বাড়ি আবার নিচে নামবে ডানা, ফিরবে ঘরে অসংখ্য দরকারি সহস্র ভুল আতসবাজি, ফিনকি দিয়ে উপছে পড়া আলো আমাকে তুমি সাজিয়ে দাও, কালোর পরে সাদার পরে কালো
আমি আজকাল কিছুই খুঁজে পাই না। কলম খুঁজতে গিয়ে চশমা হারাই। চশমা খুঁজতে গিয়ে ভুলে মেরে বসি, কী খুঁজতে শুরু করেছিলুম। ওদিকে কারা সব সিনেমা বানানোর স্ক্রিপ্ট চাইছে। আমি তাই কলম খুঁজি। কলম না পেয়ে চশমা পাই। তার আবার একটা ডাঁটি নেই। সুতলি দড়ি দিয়ে কানে পাকাতে গিয়ে কাচটা গেল পড়ে।লাগাতে হবে। তাই ডেনড্রাইট খুঁজি।এটা সহজেই পাই।আর তাই দুই আঙ্গুল জুড়ে যায়।ছাড়াতে পারি না। কেরোসিন খুঁজি। পাই না ... ...
মাড়োয়ারি বর চলেছে রাজার পোশাক আর মুকুট পরে রথের আদলে সাজানো ঘোড়ায় টানা গাড়িতে চড়ে। ঘোড়া দুটোকেও সাজিয়ে গুছিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিডন স্ট্রিট দিয়ে জোড়াসাঁকোর দিকে যাচ্ছে। হাফ ডজন হ্যাজাকের ফটফটে আলোয় রাস্তা ভাসছে। সামনে রঙবেরঙের ধড়াচূড়ো পরা হ্যারিসন রোডের ব্যান্ডপার্টির লোকেরা। প্রচলিত রীতি মেনে উদ্বোধনী ঐকতান ধরেছে ---- ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা, তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের ....এটা শেষ হলেই এসে যাবে -- আওয়ারা হুঁ ... , মেরা জুতা হ্যায় জাপানি ... বা বাহারো ফুল বরষাও ... , বেকারার করকে হামে ... , মন দোলে তন দোলে, রাজকি আয়েগি বরাত... রঙ্গিলী হোগি রাত ... ... ...
একই সঙ্গে ব্রিটিশরা দুদল জনগোষ্ঠীর জন্য হোমল্যান্ড বানায়। ভারত ছেড়ে চলে যাবার সময় জিন্নার মত কিছু নেতার দাবিতে ভারতের পূর্ব দিকে আর পশ্চিম দিকে মুসলমানদের জন্য হোম ল্যান্ড বানিয়ে দিল। বেশ কিছু জেলা হিন্দু অধ্যুষিত ছিল হয়ে গেল পাকিস্তান। এছাড়াও সর্বত্র হিন্দুরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। ব্যাপক গণ হত্যা চালিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে তাদের মধ্যে যারা বেঁচে ছিল ভারতে উদ্বাস্তু হিসাবে চালান এল। কিছু লোক মাটি কামড়ে ছিল বছর বছর তারা ভারতে ... ...
এক একটা সংকট মানুষকে চেনায়। গুজরাট গণহত্যা চলছে। পশ্চিমবঙ্গের সব রাজনৈতিক দল প্রায় নীরব।কোথাও মিছিল সমাবেশ নেই। আমরা কয়েকজন ভাষা ও চেতনা সমিতি, হেতুবাদী পত্রিকা মিলে ১৫ মার্চ রবীন্দ্রসদন রবীন্দ্র মূর্তির তলায় একটা প্রতিবাদ সমাবেশ ডেকে ফেললাম। উজ্জ্বল, সাধন বিশ্বাস আমাদের সঙ্গে সক্রিয় ভূমিকা নিলেন। ১৫ মার্চ গান কবিতা কথায় প্রতিবাদ। সঙ্গে ছবি আঁকা। ছবি আঁকলেন সমীর আইচ, বিজন চৌধুরী, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, তপন মিত্ররা। গানে গানে প্রতিবাদ করলেন অজিত পাণ্ডে সহ আরও কিছু শিল্পী। কিন্তু ... ...
আমার তখন ৯-১০ বছর বয়েস, রাজনীতি বুঝি না, কোনো প্রলোভনও নেই, একটু হিরো হিরো ভাব শুধু ছিল, আজকের দিন হলে বলতো ADHD (আটেনশন ডেফিসিট হাইপার একটিভিটি ডিসর্ডার)। একটা ফ্লাট ব্রাশ রঙে চুবিয়ে ক্যালিগ্রাফি করতে শিখে গেছিলাম। এক টানে অনেক বড় লেখা লিখতে পারতাম, দেওয়ালে। আমাদের পাড়ায় তখন কিছু দাদারা পুলিশের ভয়ে লুকিয়ে থাকতো আমাদের বাড়ির পেছনে একটা ভাঙা ঘরে। আমি শুনতাম ওরা প্রেসিডেন্টকেই পাল্টে দিতে চায়। একদিন ... ...
পদ্মা ঘুমিয়ে পড়েছিল। সাগরের ডাক শুনে ঘুম ভেঙে গেল। বাইরে বেরিয়ে এল ঘুম জড়ানো চোখে। এসে দেখল, সাগর আর তার সঙ্গে পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের একটা ছেলে সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাগরের কাছেও একটা সাইকেল। ছেলেটার সাইকেলের কেরিয়ারে একটা বোঁচকা। সাগর জিভ কেটে বলল, ' এঃ হে ... ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম .... এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম ... ...
শাহাজাদা সুজা বা ঔরঙ্গজেবের মতো মাঠে ময়দানে নানান সুবায় ডিউটি দিতে শাহাজাদা দারা শুকোহকে পাঠানো হয় না কিন্তু দরবারের নানা জরুরি কাজে তাঁকে শাজাহানকে সাহায্য করতে হয় নিরন্তর। তারই শৃংখলার ফাঁকেফোকরে তিনি পড়াশোনার জন্য একটু বেশি সময় চুরি করে নেন। এব্যাপারে তাঁর প্রিয় সঙ্গী হলেন বিদূষী শাহাজাদী জাহানারা।তাঁদের দুজনেরই বিপুল ক্ষমতা আর বৈভবের মাঝেও আধ্যাত্মিকতায় মন উড়ান দেওয়ার ... ...
রবিবারের দুপুরে চিকেন প্যাঁদানো মধ্যবিত্ত হিন্দু বাঙালি প্রায়ই গুরুপাক হজমকারী জোয়ান মৌরী চিবুতে চিবুতে বলেন, "আট্টা, মুঠলমান মানেই কি টেরোরিস্ট, বলো দি'নি?" টলিউডের শিবু নন্দিতা আবার বাঙালিদের নানাবিধ সেন্টিমেন্ট নিজেদের রাডারে ধরতে পারেন ভালো, তারপর সেইসব নিয়ে বস্তাপচা গল্পও ফাঁদতে পারেন। যেমন বাড়ির বউ কম্প্রোমাইজ করতে পারেনি বলে তার বর আজ অন্য কাউকে নিয়ে সুখী, যেমন বৃদ্ধ বরের মুতের ঘ্রাণ ফেরোমেনের সমান ... ...
সত্যসাধন চক্রবর্তী স্কটিশ চার্চে ফিলসফি পড়ান। থাকেন নারকেলডাঙায়। সাদা ধুতি পাঞ্জাবী পরে কলেজে আসেন। মাথায় নারকেল তেল মাখা কুচকুচে কালো চুল। কোন সাতে পাঁচে থাকেন না। ক্লাসের ফাঁকে টিচার্স রুমে থাকার সময়ে নিতান্ত প্রয়োজন না হলে বাক্যালাপ করেন না। তিনি যে খুব আত্মনিমগ্ন প্রকৃতির তা না। আসলে, কি বলবেন, কি নিয়ে আলোচনা করবেন ভেবে পান না তিনি। সব লোকে এ পৃথিবীর বিচিত্র ... ...
আবার দেখা হবে —————— সুপ্রিয়া চৌধুরী —————— কত যুগ পরে দেখা হবে কে জানে - কিংবা কয়েক বছর কয়েক মাস ও হতে পারে,-বা কিছু দিন, বা শুধুই দু’ এক প্রহর। শুনে মনে হয় কিছুই তো নয় দেখা ই হবে আবার, হয়তো হবে কথা কিংবা
অঞ্জলির এক মামাতো ভাইয়ের ছেলে কাটোয়া থেকে এসেছে। কলকাতায় কোন সরকারি অফিসে নাকি চাকরির ইন্টারভিউ পেয়েছে। আজ রাতটা এখানে থাকবে। কাল ডালহৌসিতে ইন্টারভিউ দিয়ে বাড়ি ফিরে যাবে। অঞ্জলি বলল, ' দীনু কেন রে .... কালই যাবি কেন ? দু চারদিন থাক ... হাতিবাগানে সিনেমা, থিয়েটার
হাঁটা ত হল অনেক পথপথের পরে আবার সেই ত পথকি হবে আর পথ চলেএবার একটু থিতু হওয়া যাকসবুজ ঘাসের ওপর বসিঅথবা দাঁড়িয়ে থাকি উদ্বাহু হয়েহলুদ ফুলের দল ঝরে পড়ুকঐ চিত্রীয়মান নীল কুয়াশাধীরে ধীরে আবৃত করুক আমায়তার নিবিড় মায়া অবগুণ্ঠনেফুরিয়েছে সাথীর প্রয়োজনপথ চলাই যে শেষভালবাসার অলীক হাতছানিআকর্ষণ হারিয়েছে তারএখন পরম প্রশান্তিএই নির্জন, নিঃসঙ্গ নীরবতায়দমকা হাওয়ায় মর্মর ধ্বনিলুকিয়ে থাকা কুবো পাখির ডাকপথ চলার প্রাগৈতিহাসিক সাথীসুউচ্চ মহীরূহের সারিপ্রাচীন,সযত্নে লালিত অস্তিত্বমিশে যাক এদেরই সাথেহয়ত বা একটি বনবৃক্ষ হয়ে৷ ... ...
গোবিন্দর দোকান থেকে চাল নেওয়া হয়ে গেলে সাগর বিডন রো-এর মুখ পর্যন্ত পদ্মাকে পৌঁছে দিল।------ ' এবার যেতে পারবে তো ? '------ ' হ্যাঁ বাবা .... কি আর বলব ... বড় কষ্টে থাকি ... '------ ' ঠিক আছে ... আমি আবার খোঁজ নেব'খন ... ওই লাল বাড়িটার পাশের বাড়িটা তো ? ঠিক আছে .... 'বিভূতিবাবু ওদের অনুসরণ করে পিছন পিছন আসছিলেন। এবার পঞ্চমীর মা-র পাশে এসে দাঁড়ালেন। তার মনে হল তারও বোধহয় কিছু কর্ত্তব্য আছে, যা হয়ত পাড়ার পুরণো বাসিন্দা হিসেবে আগেই করা উচিত ছিল। এখন বলিষ্ঠ একজনকে হাতের কাছে পেয়ে তিনি তার বার্তাটা তার কাছে পৌঁছে দিতে চাইলেন, যেটা ... ...
মাটির নিচে সুড়ঙ্গ। সিমেন্ট বাঁধানো গলির ভেতর শুখনো ভয়ের গন্ধ। আঁধো অন্ধকারে দেওয়ালে ঝোলানো প্রায় বারোশো মামি। এক কোনে একটা কফিনে শোয়ানো আছে একটা বাচ্ছা মেয়ের মামি। মনে হচ্ছে যেন ঘুমিয়ে আছে একটা মিষ্টি মেয়ে। এই মামি-টা মনে হচ্ছে সবচেয়ে নতুন, মেয়েটির নাম ছিল রোসালিও লাম্বার্ডো, ১৯২০ সালে শিশুটি মারা গেছিলো দু বছর বয়েসে। বাকি গুলো খুব পুরোনো। পুরোনো মামি থেকে চামড়া খসে ... ...