বারো মাসে তেরো পার্বণ - এর বাঙালির সর্ববৃহৎ পার্বণের নাম শারদোৎসব। অর্থের প্রাচুর্যে, রাজনৈতিক বদান্যতায়, বৃহৎ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর কল্যাণে আমরা এখন পাঁচদিনের পার্বণকে টেনে এগারো থেকে বারো দিনে নিয়ে গিয়েছি। মহালয়া থেকে শুরু করে কার্নিভাল অব্দি। মফস্বল শহরগুলোতে কার্নিভাল একদিন বা দুদিন আগে হয় বলে সময়টা এক দুদিন কম এখনও। অন্যসব পার্বণ বা উৎসবকে পেছনে ফেলে শারদোৎসব ... ...
--- তুমি এলে আমার কাছে দশ বছর পর। আচ্ছা, এতগুলো বছর কেমন করে কাটালে আমায় ছাড়া?আমার কথা মনে পড়তো?--- এসব জিজ্ঞাসা করতে হয়? তোমায় ছাড়া থাকতে পারি একা একা? কিন্তু কী করব বলো, আমার যে কিছুই করার ছিল না। শুধু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতাম, তিনি যেন আমাকে তোমার কাছে পাঠিয়ে দেন।--- এবার থেকে আমরা একসাথে থাকব। আর কখনও আলাদা হবো না।--- সত্যি, তোমায় ... ...
পঞ্চমীর মা-র মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়ে গেল। তা একষট্টি বাষট্টি বছর হবে। তার স্বামী ভূপেন দাস রান্নাঘর এবং শৌচাগার সমেত একটা ঘর করে রেখে গিয়েছিল বেথুন কলেজের পিছন দিকটায়। করে গিয়েছিল তাই রক্ষা। নইলে তো পঞ্চমীর মা-র, মানে পদ্মার কোন মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকত না। ভূপেন মারা গেছে ভারত স্বাধীন হবার আগে, মোটামুটি বিশ বছর আগে। কপাল যাকে মারে তাকে কি সব দিক দিয়ে ... ...
এ বছর ২০২৩ ফেব্রুয়ারী তে গেছিলাম ইস্রায়েল আর ওয়েস্টব্যাঙ্ক ঘুরতে। ওয়েস্টব্যাঙ্কের প্ল্যান শুরুতে ছিল না। ওয়েস্টব্যাঙ্ক প্যালেস্টাইনে। আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল লন্ডন থেকে টেল আভিভ। আমাদের ধারণায় ইস্রায়েল আর প্যালেস্টাইন অবিরাম যুদ্ধ ক্লান্ত দুটো দেশ। আজ আমি চেষ্টা করবো কিছু ভুল ভাঙাতে। ইতিহাস আর আধুনিক সাংবাদিকতা নিয়ে আমার ধারণা দুটোই আংশিক ভাবে পক্ষপাতদুষ্ট ... ...
আমার কন্যার জন্মের পর আমার প্রয়াত ছোটমেসো একবার আলাপচারিতার সময় বলেছিলেন যে আমি আমার মেয়ের সাথে যত সময় কাটাবো তত আমিও সমৃদ্ধ হব, মেয়েও সমৃদ্ধ হবে। মেয়ের কোনো উপকার হয় কিনা জানা নেই। তবে আমি যে ওর সান্নিধ্যে সমৃদ্ধ হই, এটা নিয়ে সন্দেহ নেই। ওর কল্পনা ও নিষ্পাপ সারল্য মনে আনে আনন্দ ও পবিত্র কোমলতা যা এই কর্কশ, নিষ্ঠুর পৃথিবীতে বড় বিরল। এখানে আমার কন্যার ... ...
মোঘল সালতানাতের সবার আচরণবিধি থাকে, শাহাজাদাদেরও ছিল। শাহী মহলের সঙ্গে, শাহাজাদাদেরও আলাদা আলাদা মহল ছিল এই সমস্ত মহলের কার্যকলাপের রীতিমতো আখবারাত -নিউজ বুলেটিন পাওয়া যাচ্ছে। এর থেকে জানা যায় শাহাজাদা মহলের ঘুম ভেঙে যায় সূর্য ওঠার ঘন্টা দুই আগে। নোকররা - যার মধ্যে অপর লিঙ্গের মানুষ আর অন্যরা পড়ত, বাতি আর ধূপ জ্বালাবে, জল গরম করার পোর্টেবল উনুনে ... ...
এখানে আকাশ নাম ধরে ডাকে। মোবাইলের সঙ্গে ব্লুটুথ স্পিকারটায় আলতো করে গানটা যখন বাজছিল তখন পড়ন্ত বিকেল। এগারোতলা ফ্ল্যাটের বারান্দায় চোখবুজে বিদিশা যে গান শুনছে সেটা দেখে কেউ যদি ভাবে যে বিদিশা খুব সঙ্গীতের ভক্ত তাহলে ভুল হয়ে যাবে। এটা আসলে ওর চিকিৎসার অঙ্গ। ওর সাইকিয়াট্রিস্ট খুব জোর দিয়ে বলেছিলেন , এসব সাবকনশাস ভায়োলেন্সকে কন্ট্রোল করা কোনো ওষুধের কম্মো নয়। বরং মিউজিক থেরাপি টেরাপি ট্রাই ... ...
তালান্ডু স্টেশন পেরিয়ে ট্রেন ছুটে চলেছে দুর্বার গতিতে। আকাশে ঝিমঝিমে মেঘ। ট্রেনের পিঠে চেপে পাড়ি দিচ্ছে মেঘেদের ছানারা.. মা মেঘেরা পাল্লা দিয়ে ছুটেছে আকাশের বুকে।রসুলপুরে শ্লথ হয়ে আসে ট্রেনের গতি। জানলার বাইরে থেকে হাত বাড়ায় মাঝারি এক আম গাছ। খুশি খুশি মুখে বলে, রোজ খুব ভোরে নাকি একটা ছোট্ট নীল পাখি আসে ওর কাছে। আমাকে জিজ্ঞেস করে আম গাছ, ' জানো ওর কি নাম!' আমি বলি 'তুমিই তো ... ...
মানুষের চরিত্রগত গুণাবলী সম্পর্কে মূলতঃ দুটি বিশেষণ ব্যবহার করা হয়, এক মনুষ্যত্ব আর দুই পশুত্ব। মনুষ্যত্ব বলতে মানুষের উৎকৃষ্ট গুণাবলীকে বোঝায়। আর পশুত্ব বলতে মানুষ ছাড়া এই পৃথিবীর অন্যান্য জীবদের গুণাবলীকে বোঝানো হয়। অর্থাৎ ধরেই নেওয়া হচ্ছে যে মানুষ ব্যতীত অন্যান্য জীবদের কোনো উৎকৃষ্ট গুন নেই। তাদের মধ্যে যা যা গুন বিদ্যমান সবগুলোই নিকৃষ্ট শ্রেণীর। আমাদের দৈনন্দিন উদাহরণ মূলক কথাবার্তায় হাজার হাজার ... ...
প্রীতি ও শুভকামনা (এক্রোস্টিক) ————— সুপ্রিয়া চৌধুরী ————— প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইলো আজ বিজয়ার শুভ দিনে, তিমির আঁধার ধুয়ে মুছে যাক্ মায়ের বিসর্জনে। ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আমরা একে
কাবেরী পাড়াতুতো বন্ধু অনামিকার সঙ্গে ধর্মতলা স্ট্রীটে কমলালয় স্টোর্সে গেছে সোয়েটার কেনার জন্য। অনামিকা একটা কার্ডিগান এবং আরও কিছু কিনবে। অনেক দেখাদেখির পর দুই বন্ধুর কোন কিছুই পছন্দ হল না। কাবেরী বলল, ' দূর ... এসব ডিজাইন তো হাতিবাগানেই পাওয়া যায় ... ' অনামিকা বলল, ' চল বরং নিউ মার্কেটে যাই
আজ দুর্গা নবমী তিথি । বুকের ভেতর দুখ ভাবনার উতরোল হবার দিন। কেন এমন হয়? সে কি মৃন্ময়ী দেবীর কৈলাসে প্রত্যাবর্তনের সময়কাল সমাগত বলে? নাকি উৎসবের কাল পরিসমাপ্ত হতে চলেছে, আবার সেই গতানুগতিক যাপনে ফিরে যেতে হবে ভেবে অন্তর্দাহে জর্জরিত হয় আমাদের হৃদয়? হয়তো এই দুই কারণেই মনের ভেতর কিছু হারিয়ে ফেলার অস্থিরতা তৈরি হয়। এরপরও কিন্তু আমাদের দীর্ঘ সময় উৎসবের আবহে অবগাহনের পর্ব ... ...
ক্লান্ত ধ্বস্ত জেব্রাকে মুঠোর মধ্যে নিয়ে সিংহ হঠাৎ নিজের দৌড় দিল থামিয়ে; একি তামাশা-নাকি কুয়াশা; সিংহ এমনই হয়; লাভ নেই দুঃখ পেয়ে!!
মিনমিনে এই হাওয়া ঘরে ঢুকে এলোমেলো করে দিচ্ছে সব। পর্দা উড়ছে তো উড়ছেই, বালিশ থিতু হয়ে পড়ে আছে, ধনসম্পদ থিতু হয়ে এ ঘরেই আছে বটে। কাপড় নিয়ে নিয়ে শর্মি চলে গেছে। ওর শরীর দেখা যাচ্ছে না কোথাও তবে বালিশ পড়ে আছে। শর্মি বালিশ নিয়ে যায় নি। সে রেখে গেছে কিছু দায়িত্ব বটে। গোটা মানুষটার দায়িত্ব নিয়ে পিন্টু বাড়ি ও বালিশ পাহারা দিচ্ছে। মানুষটা শর্মির ছেলে যার জন্ম হয়েছিল শর্মির ... ...
১৯৭৮ সালে গ্রহণের সময় দুরদর্শনে পথের পাঁচালী দেখাচ্ছিল ফিলার হিসেব। আর আমাদের পাশের বাড়ির সদ্য সন্তান সম্ভবা কাকিমা, শোয়ার ঘরে আষ্টেপৃষ্টে জানালা বন্ধ করে বসে ছিলেন, শ্বশুর মশাইয়ের ডিক্টাম পালন করতে। "কুসংস্কারে কান দেবেন না" এসব স্লোগান জানালা ভেদ করে বাড়িতে ঢুকতে পারেনি। তারপর ১৯৯৫ সালের অক্টোবরে সকাল নটায় গ্রহণ ছিল। পুরোনো এক্সরে প্লেট কেটে পকেটে নিয়ে অপিস যাচ্ছিলাম। যদি অপিসে ঢোকার আগে চট করে দেখে নেওয়া যায়। সকালের দিকে গ্রহণের সময় ছিল। সেদিন অফিস টাইমে বাস ট্রাম একদম খালি ছিল। সবাই গ্রহণে চামড়া টামড়া পুড়ে যাওয়ার ভয়ে বাড়িতে বসে জানালা বন্ধ করে মাংসভাত খাচ্ছিলো। সে যাই হোক। এইসব পুরোনো গ্রহণ ... ...
অসমের গৌহাটি শহর থেকে প্রায় কুড়ি বাইশ কিলোমিটার দূরে পৌঁছে গেছি। আমাদের গাড়িটা যেখানে দাঁড়াল। সেটাই ভদ্র সভ্য পথের শেষ প্রান্ত। সেখান থেকে চরণবাবুর আশ্রয়ে নিজেকে সঁপে চলা শুরু করেছিলাম। গন্তব্য আরো প্রায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এক মহান ব্যক্তির বাড়ি। ঝোপঝাড় দুদিকে রেখে মাঝখান দিয়ে সরু পথ। কদিন ধরেই গোটা অসম জুড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনও মুষল ধারায়। কখনও টিপ টিপ ... ...
সকালে হালকা মেঘ থাকলেও এখন আকাশ ঝকঝকে। শরতের এমনটাই দস্তুর। চারিদিকে যত বেনিয়মের বিশৃঙ্খলা, আকাশ তার থেকে আলাদা হয় কি করে ! আজ সকালেই এক সংবেদনশীল চিকিৎসক বন্ধু বার্তা পাঠিয়েছেন, তাঁর অধীনে থাকা সমস্ত অসুস্থ মানুষকে পুজোর এই আনন্দঘন মুহূর্তে সুস্থ করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে চান তিনি। এমন আন্তরিক অভীপ্সার কথা পড়ে মনটা খুব ভালো লাগছে। উৎসব মানে তো কেবল জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন নয়, আসলে এ হলো আমাদের আত্মশুদ্ধির শ্রেষ্ঠ সময়। নিজেকে একটু ইতিবাচক ভাবনায় বদলে ফেললেই গোটা সমাজ বদলে যাবে। এ কিন্তু আমার আন্তরিক বিশ্বাসের কথা।আজ এই সকালে চারিদিক থেকে ভেসে আসছে নানা রকমের শব্দ। ভেসে আসছে পল্লীর আবাসিক সহনাগরিকদের ... ...
সুমনার মনটা ভাল নেই । মুখেও তার একটা ছায়া পড়েছে । সে আগে থেকেই শিরিষ গাছের নীচে এসে বসে আছে । মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই প্রতিবিম্ব হন্তদন্ত হয়ে এসে হাজির হল ।-----' সরি ম্যাডাম... দেরি হয়ে গেল ... ল্যাব ছিল...'----- ' হমম্ ... '------ ' মুখটা কেমন মেঘলা মনে হচ্ছে
১মন খারাপ হলেই পুকুরটার কাছে চলে যাই আমি।এই পুকুরটা আমাদের ভাড়া বাড়ির পেছন দিকের রাস্তায় একটু গেলেই। আদ্ধেক পুকুর বোজানো অবস্থায় আছে। কিন্তু একটা ঘাট এখনো আছে যেখান দিয়ে নেমে জলের কাছে যাওয়া যায়। আমাদের পাড়ার দাদারা, যারা ক্লাস টেন ইলেভেনে উঠেছে তারা লুকিয়ে সিগারেট খেতে অনেক সময় পুকুর পাড়ে আসে। আমাকে দেখলে ওরা কিছু বলে না। মা যদিও বলে আমি নাকি বড় হচ্ছি। আমাকে হাফ প্যান্ট পড়তে দেয় না, ফ্রক পড়ায় বড় ঝুলের। আমি অবশ্য সেভেনে উঠে গেছি। আমি কিন্তু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ি। বাবা খুঁজে খুঁজে এই স্কুলটা বের করেছে শহরের একটু বাইরে। এত সস্তা সি বিএস ই স্কুল ... ...
পুজোয় দেশের বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ আমাদের কোনোদিনই হয়নি , কারণ দেশভাগের ফলে আমাদের মতো অনেককেই বাপ পিতামহের ভিটেমাটি ছেড়ে , হঠাৎ করে সীমারেখা টেনে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করে দেওয়া জমিতে নতুন করে বসত গড়ে তুলতে হয়েছে অনেক অনেক শ্রম আর অধ্যবসায়ের দ্বারা। আমি অবশ্য জন্মসূত্রে একশো ভাগ এপারের। তাই মা বাবা ঠাকুমার মুখে তাঁদের ফেলে আসা দেশের বাড়ির নানান গল্প শুনলেও ... ...