জীবন তরঙ্গ -পর্ব ২৩ পরের দিন নন্দ নটার সময় স্কুলে বেরিয়ে গেল। জলখাবার খেয়ে চায়ের কাপ নিয়ে নয়ন বারান্দায় চেয়ারে বসেছিল। এটা নয়নের খুব পছন্দের জায়গা। ছোটবেলায় এখানে বসে একমনে বাইরের জগতটাকে দেখত। তখনো দেখছিল। পরিবেশ, পরিস্থিতি, ঘর-বাড়ি, সব ধীরে ধীরে কেমন পাল্টে যাচ্ছে। যদিও দক্ষিণ কোলকাতার তুলনায় উত্তরে এই পাল্টে যাওয়ার গতি অনেক কম। দু চারটে ফেরিওয়ালা ... ...
জীবন তরঙ্গ - পর্ব ২২ গালুর চলে যাওয়ার কষ্টের তীব্রতা একটু কমতে না কমতেই আড্ডায় এল আর একটা ধাক্কা। কচিদা রহড়া ছেড়ে চলে যাচ্ছে। কচিদার পরিবারে কেবলমাত্র ওর মা ছিল। চৌধুরি পাড়ায় মায়ে ব্যাটায় থাকত। চাকরি বাকরি না পেলেও কচিদা কখনো বসে থাকেনি। সকালে কাগজ বিলি থেকে শুরু করে সারাদিন কিছু না কিছু করে রোজগারের চেষ্টা করত। মায়ের পেনশন আর ওর রোজগার, দুয়ে মিলে সংসার চলে যেত। অবস্থা সেরকম ... ...
জীবন তরঙ্গ - পর্ব ২১ নয়ন আর রজতের পার্ট ওয়ান পরীক্ষা শেষ হয়েছে। সামনে কিছুদিন অখণ্ড অবসর। এই সময়ের দিনচর্চায় পড়াশুনার কোন জায়গা নেই। হাঁড়ি পুকুরের আড্ডায় ত্ততদিনে দুজনে স্থায়ী সদস্যের স্বীকৃতি পেয়ে গেছে। দিনের অনেকটা সময় ওখানেই কাটে। পরীক্ষা শেষ হবার পর নয়ন কয়েকদিন পিসির বাড়িতে গিয়ে ছিল। অনেকদিন পরে গেল, তাই নিয়ে পিসিমার অনেক অভিমান, অভিযোগ, নয়নকে সামলাতে ... ...
তোমার গরু-ছাগল মারলে খারাপ লাগে, কিন্তু গাছ কাটলে কেন লাগে না? মানুষের জন্য যদি হিউম্যান রাইটস থাকে, তবে বাকি প্রাণীরা কী করল? মানুষ আত্মহত্যা করলেও দোষী ঠাউরানো হয়, তবে পিঁপড়ে, মশা, আরশোলা খুন করার জন্য যে বিজ্ঞাপণ
গব্বর সিং ছিল এলাকার বস। সে স্বয়ং পুলিশের জেলার তথা ঠাকুর সায়েবের হাত কচাং করে কেটে নিয়েছিল। তারপরও তিনি রবীন্দ্রনাথের মতো আলখাল্লা পরতেন, কিন্তু তার হাতগুলো হাওয়ায় উড়ত। তাতেও ঠাকুর হাল ছাড়েননি। কারণ পেটকাটা মূর্ধণ্য ষও ব্যঞ্জনবর্ণ, আর হাতকাটা পুলিশও পুলিশও। এইরকম সময় একদিন জানা গেল, গব্বর রাতের অন্ধকারে বাসন্তীর বেডরুমে উঁকি দিয়েছে। বাসন্তী চিল্লে পাড়া মাথায় করছে। কিন্তু পড়শীরা কেউ নেই, তারা খুব সংস্কৃতিবান। বাসন্তীকে ফেলে সব মমতাশঙ্করের নৃত্যনাট্য দেখতে ... ...
"গল্প লেখা বা বলার দেবতা বলল - তা হলে তুমি একটা চির -অতীতের গল্প লেখো বা বলো না কেন?" এই বাক্য দিয়ে, পৃথিবীর একটি প্রাচীনতম আখ্যান ভিত্তি করে এই বই শুরু হয়। ওল্ড টেস্টামেন্টের গল্পগুলো তৈরি হয়েছিল ১২০০০ থেকে ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথকের জিভে ও উচ্চারণে, প্রাচীন হিব্রু বা আরমাইক এ। ৭০ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেম ... ...
জীবন তরঙ্গপর্ব ২০ দুজনেরই বেশ কয়েকদিন অফিস কামাই হয়ে গেল। রণজয়ের ছুটি পাওনা আছে, তেমন একটা সমস্যা নেই। রাশির চাকরি তো এক বছরও হয়নি। বসেরা ভাল, পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে ছুটি মঞ্জুর করে দিয়েছে। বাবা বাড়ি চলে এসেছে, আর অযথা কামাই করার কোন অর্থ হয় না। দুজনে একসাথেই অফিসে বেরোয়, ফেরে আলাদা আলাদা সময়ে। অফিস যাওয়ার পথে বাবার খবর নিতে রাশিকে নিয়ে রণজয় ... ...
জীবন তরঙ্গ পর্ব ১৯ রাতে শোয়াটা এখনো একঘরেই আছে। পরিবর্তিত পরিবেশ, পরিস্থিতির প্রভাব দৈনন্দিন যাপনের অনেক ক্ষেত্রে পড়লেও বিছানা এখোনো একটাই আছে। বেডরুমের লাগোয়া একটা অ্যান্টি চেম্বারের মত আছে। রাতে খাওয়া দাওয়ার পর রোজ প্রায় ঘন্টা খানেক দিগ্বিজয় ওই ঘরে বসে ওকালতির কাজকর্ম করেন। কণিকা খাওয়ার পর টুকটাক কাজকর্ম সেরে, একটু টিভি দেখে তারপর ঘরে ... ...
জীবন তরঙ্গ পর্ব ১৮ পছন্দসই একটা আস্তনার সন্ধান পাওয়া গেল। রণজয়ের এক ছাত্রের বাবা ব্যবস্থা করে দিলেন। তাঁর এক বন্ধুর বাড়ি। বন্ধুটি থাকেন কোলকাতায়, ছুটিছাটাতে এখানে এসে দু এক দিন কাটিয়ে যান। একজন মালি বাড়িটার দেখাশুনা করে। বাগানওয়ালা সুন্দর দোতলা বাড়ি। এক তলায় দুটো ঘর, রান্নাঘর, স্নানঘর আর একটা বড় বারান্দা ভাড়াটিয়ার জন্য বরাদ্দ হল। বাড়ির চারপাশে অনেকটা ... ...
জীবন তরঙ্গ - ১৭ এমএসসিতেও রণজয় ফার্স্ট ক্লাস পেল। পাশ করার অল্প সময়ের মধ্যেই একটা আধা সরকারি সংস্থায় ভদ্রস্থ একটা চাকরি লেগে গেল। রাশি তখন থার্ড ইয়ারে পড়ে। নির্মাল্য খুব খুশি এবং অনেকটা নিশ্চিন্ত হলেন। ছেলে ভাল জায়গায় চাকরি পাওয়াতে দিগ্বিজয়ও খুশি হয়েছিলেন। তবে যথারীতি তার বহিঃপ্রকাশ ছিল খুব সীমিত। রণজয় চাকরি পাওয়ার খবরটা প্রথমে মাকে জানিয়েছিল। কণিকা খুশি হয়ে অনেক আদর আর আশীর্বাদের পর ... ...
জীবন তরঙ্গ পর্ব – ১৬ রজতের মামা রণজয় লেখাপড়াতে খারাপ ছিল না। বিএসসিতে ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে পাশ করার পর এমএসসি পড়ার জন্য ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হল। কলেজে পড়ার সময় থেকেই রণজয় অনেক টিউশনি করত। বড় হওয়ার পর থেকে বাবার উপদেশ আর পরামর্শ যেমন সে সচরাচর নিত না তেমনি বাবার কাছ থেকে কোন অনুদানও সে নিত না। টিউশনিতে যা আয় হত তা ওর নিজের খরচ চলার পক্ষে ... ...
আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন। তিনি নমস্য, শ্রদ্ধা এবং সম্মানের দাবিদার। আর তাকে তা না দেওয়ার কোনো কারণ নেই। কেন না তিনি বাঙালী তথা ভারতীয়দের যা দিয়েছেন তার জন্য চিরকৃতজ্ঞ থাকা উচিত। সবচেয়ে বড় যা দিয়েছেন তা হলো আত্মনিরীক্ষণ ও আত্মসমালোচনা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমরা তাকে এত বেশি শ্রেয় দিয়ে ফেলি, যে অন্যরা ব্রাত্য হয়ে যান। তিনিই একমাত্র চিরন্তন ... ...
ঢেউ---------------পীযূষ কান্তি সরকারজীবনের আশা থমকে দাঁড়ালে সরিষা-দানায়/বিপুলায়তন ঢেউ এসে যদি ভাঙে হতাশা-প্রাচীর/হিসাবনিকাশের খাতা খোলা -- তখন কী আর মানায় !
অভয় পালের মেয়ে চৈতালির মামলার ব্যাপারে অলোকেন্দু মিত্রের চিঠির জবাব এখনও আসে নি ও তরফ থেকে। এর মধ্যে সাগর একদিন দেখা করেছিল অলোকেন্দুবাবুর সঙ্গে। বলল, 'বটতলা থানায় এফ আই আর জমা করে দিয়েছি ... ' ---- ' রিসিভড কপি নিয়েছেন তো ? ' ---- ' হ্যাঁ নিয়েছি ... ' ----- ' আচ্ছা ঠিক আছে। আপনাদের আর কিছু করার দরকার নেই ... ...
তীব্র গরম এবং শারীরিক অসুস্থতার জন্য ক্ষেত্রসমীক্ষাতে যেতে পারছিলাম না। এই সপ্তাহে আবার বেরোলাম। আসলে ডুয়ার্সের প্রকৃতি নিত্যনতুন সাজে পর্যটকদের জন্য প্রতীক্ষারত। পর্যটক, প্রকৃতিপ্রেমিক, বন্যপ্রাণী এবং পক্ষী বিশারদেরা ডুয়ার্সের বনে জঙ্গলে, সবুজ তেপান্তরে, নদী নির্ঝরে, চা বাগিচার সবুজ গালিচায় বেড়াতে আসেন। শুধুমাত্র অরণ্য বা পাহাড়ের হাতছানিতে নয়, পুরনো মন্দির, মসজিদ এবং মাজারের টানেও ... ...
জীবন তরঙ্গ - পর্ব ১৫ কল্পনা শোভাবাজারের বাড়িতে আর ফেরেনি। এত সব কিছু জানার পর ওখানে আর ফেরা সম্ভব নয়। নিজেদের বাগবাজারের বাড়িতে যেতেও মন চাইছিল না। বাবার কার্যকলাপ সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না। বাবা কেবল তার ভালবাসাকে চূর্ণ করেনি, চূর্ণ করে দিয়েছে তার জীবনটাকেও। মন সায় না দিলেও কিছুটা নিরুপায় হয়েই ফিরে এসেছিল মা বাবার আশ্রয়ে। কড়া নাড়তে হয়নি, বাইরের দরজা ভেজান ... ...
জীবন তরঙ্গ পর্ব - ১৪ শ্বশুর বাড়ি থেকে কল্পনাদের বাড়ি মিনিট পনেরর হাঁটা পথ। কাছে হওয়ায় কল্পনা মাঝে মাঝেই বাগবাজারে বাপের বাড়ি যেত। কখনো দিনের দিনেই ফিরে আসত কখনো বা এক আধ দিন থেকে আসত। একাই যেত, সাথে জয়ন্ত কমই গেছে। শ্বশুরবাড়ির লোকজন কখনো এ নিয়ে আপত্তি করেনি। বিয়ের মাস খানেক পর একবার কল্পনা বাপের বাড়িতে এসে দিন দুয়েক ছিল। তৃতীয় দিন সকাল সকাল শ্বশুরবাড়ি ফিরে এল। শ্বশুর আর দেওর তখন দোকানে ... ...
জীবন তরঙ্গ পর্ব - ১৩ আহেলির মায়ের মৃত্যুর আগে পরে কল্পনা ওদের বাড়িতে এসে বাড়ির মেয়ের মত অনেক সার্ভিস দিয়েছে। সেই সুবাদে আড়ষ্টতা অনেকটাই খসে গিয়ে নন্দর সাথে কল্পনার সম্পর্ক বেশ ঝরঝরে হয়ে গিয়েছিল। তবু নিজে প্রপোজ করা সাহসে কুলোয়নি। বোনকে মনের কথা জানিয়েছিল। আহেলি তার বান্ধবীকে জানিয়েছিল দাদার মনের কথা। কল্পনার কাছ থেকে ইতিবাচক উত্তর এসেছিল। এলাকার পর্যবেক্ষকদের ... ...
জীবন তরঙ্গ - পর্ব ১২ দাদুর সাথে বেড়াতে যাওয়া আর মামার কাছে গল্প শোনা ছাড়াও বাগবাজারের বাড়িতে নয়নের আর একটা ভাল লাগার ব্যাপার ছিল, সেটি হল ফেরিওয়ালা। ফেরিওয়ালার হাঁক যে রহড়াতে শুনতে পেত না এমনটা নয়, কিন্তু সেখানে এত বৈচিত্র নেই। বেলা একটু বাড়ার সাথে সাথেই এদের রকমারি ডাক শুনতে পাওয়া যেত। শিলনোড়া এখন খুব কম বাড়িতেই ব্যবহার করা হয়। মিক্সার গ্রাইন্ডারকে কুর্নিশ করে এরা ... ...
জীবন তরঙ্গ - পর্ব ১১ বাড়ির রেডিওটার ওপর নন্দার ভীষণ আকর্ষণ ছিল। ওতে হাত দেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কাছেপিঠে কেউ না থাকলেই ডিঙি মেরে ওর নবগুলো বাঁয়ে ডাইনে ঘুরিয়ে দিত। দু একবার ধরা পড়ে মার কাছে বকুনিও খেয়েছে, তবু নন্দা সুযোগ পেলেই ওর চেষ্টা চালিয়ে গেছে। সেদিন নন্দা স্কুলে যায়নি। অবনি অফিসে বেরিয়ে গেছেন। বৃহস্পতিবার পুজোয় অন্যদিনের থেকে একটু বেশি সময় লাগে তাই শান্তি তখনো ঠাকুরঘরে ... ...