সুমন দে বলেছেন ২০২২ স্বাস্থ্যরত্ন তাঁরা দিয়েছেন আরজিকর প্রতিষ্ঠানকে, ব্যক্তি সন্দীপ ঘোষকে না। ঠিক কথা। ব্যক্তি আর প্রতিষ্ঠানের তফাত আমরা জানি। প্রতিবার এক্সিট পোলে এবিপি যে গোল্লা পায়, সেটা প্রতিষ্ঠানটা অপদার্থ বলে। ব্যক্তি সুমন দে নিশ্চয়ই হাতে বাক্স ধরে এক্সিট পোল করতে বেরোননা। তা, মানতে কোনো অসুবিধে নেই, প্রতিষ্ঠান হিসেবেই আরজিকর ২০২২ সালে ছিল একটি রত্ন, এশিয়ায় কত নম্বর একটা যেন। ... ...
এতদিনে সব্বাই নিশ্চয়ই সুবিধাজনকভাবে ভুলে গেছেন, যে, পশ্চিমবঙ্গে নিয়োগদুর্নীতি নামক একটি বস্তু নিয়ে একদা সিবিআই তদন্ত করছিল। তার একমাত্র ফলাফল ছিল, না, দুর্নীতির পান্ডাদের শাস্তিদান নয়, কিছু শিক্ষকের চাকরি যাওয়া। সেটা এখনও সুপ্রিম কোর্টে ঝুলেই আছে। তাতে কোনো ক্ষতি হয়নি, অনেক গরম-গরম কথা চালাচালি হয়ে গেছে। "গোপন সূত্র" থেকে অনেক কিছু বেরিয়েছে মিডিয়ায়। তাতেই শান্তি। দুর্নীতিগ্রস্তরা, পশ্চিমবঙ্গ সরকার, যাদের আগাপাস্তালা শাস্তির প্রয়োজন ছিল, সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পেয়েছে, কিন্তু তাতে কী। ... ...
একখানা কথা বললে আবার অনেকেই রেগে যাবেন, কিন্তু বলতেই হবে, যে, বাংলাদেশ নিয়ে খোয়াব দেখবেননা। পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপারটাই আলাদা। ওখানে প্রচুর রক্ত ঝরেছে, অন্তত ৬০০ মানুষ মারা গেছেন ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে, পরে কত কেউ জানেনা। ওটার পুনরাবৃত্তি হওয়া কাম্যও না। এছাড়া, এপারের অ্যাকটিভিস্টরা আন্দোলন বলতে কার্নিভাল বোঝেন, লাঠিতেই কাতর হয়ে পড়েন, দোষের কিছু নেই আমিও পড়তাম। কিন্তু রাষ্ট্রবিপ্লব করতে হলে গুলি-টুলি চলার কথা। তার চেয়েও বড় কথা হল, দখল করবেন টা কী। পশ্চিমবঙ্গ কোনো রাষ্ট্র না। দখল করতে হলে দিল্লি দখল করতে হবে। কলকাতা দখল করলে খুব বেশি হলে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হবে। আনন্দবাবুর শাসন হবে। ওই অবধিই। ... ...
সরকারের সতেরো দফা দেখে আমি হুব্বা। পুরোটা না, দুখানা পয়েন্ট দেখে। ১। কোনোভাবেই মহিলাদের ১২ ঘন্টার বেশি শিফটে কাজ করানো যাবেনা। ২। যথাসম্ভব কম নাইট শিফট দেওয়া হবে। তার মানে পুংদের ১২ ঘন্টার বেশি এবং নাইট শিফট দেওয়া হবে, মহিলারা দুবলা বা আক্রমনের টার্গেট বলে দেওয়া হবেনা। আমার যদ্দূর ধারনা কোত্থাও মহিলারা এরকম তুতুপুতু দুধেভাতে ট্রিটমেন্ট চাননি। ei জন্য রাত দখল করতে চাননি। কর্মক্ষেত্রে সমানাধিকার এবং নিরাপত্তা চেয়েছিলেন। আপনি কাজ করতে গেছেন একটা জায়গায়, হঠাৎ জানলেন পাশের কনফারেন্স রুমে একজনকে চুপচাপ বা সশব্দে খুন-ধর্ষণ করা হয়েছে, এর থেকে যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়, শিরদাঁড়া দিয়ে যে ভয়ের স্রোত নেমে আসে, তার থেকে মুক্তি চেয়েছেন। একটা জনাকীর্ণ সরকারি হাসপাতালে যদি এ জিনিস ঘটতে পারে, তো আরও সর্বত্রই ঘটতে পারে, এই তো ভয়ের কারণ। এটা নির্জন পোড়ো ডক-ইয়ার্ড নয়, যে, চুপচাপ কেউ ছুরি চালিয়ে দিয়ে চলে গেল। এটা একটা সরকারি হাসপাতাল। কর্মক্ষেত্র। এবং তারপর যেটা ঘটেছে, সেটা তো আরও অকল্পনীয়। কোনো অফিসে কোনো দুর্ঘটনাতেই কোনো কর্মী মারা গেলে, কী হয় আমরা জানি। সবাই শঙ্কিত হয়ে থাকেন, বড়কর্তারা দৌড়ে আসেন। বাড়ির লোককে খবর দেওয়া হয়। সহানুভূতির সঙ্গে দেখা হয়। এখানে তার কিছুই হয়নি। মরেছে তো মরেছে, রেপ হয়েছে তো হয়েছে, এবার জিনিসটা মিটলে বাঁচি, এরকম একটা ব্যাপার। তারপর সেই ব্যক্তিকে জামাই-আদর করা হয়েছে। এটা একটা সংগঠিত দুষ্টচক্রের ইঙ্গিত দেয়, যা ভয়ের অনুভূতিকে বাড়িয়েছে। অপরাধীর ফাঁসি হল না দ্বীপান্তর, সেটা অবান্তর। কিন্তু এই সর্বগ্রাসী আতঙ্কটাকে অ্যাড্রেস করা দরকার ছিল সরকারের। সেটা না করে, যেটা হল, সেটা নিরাপত্তার গ্যারান্টি না, "রাত্তিরে আসবেননা" এরকম একটা প্রেসক্রিপশন। নিরাপত্তার গ্যারান্টি না থাকলে এ তো দিনের বেলায়ও হতে পারে। তখন কী বলা হবে? বাড়ি থেকে চিকিৎসা করুন? ... ...
কলকাতায় রাত গভীর হচ্ছিল, আর আমি ফাঁকে ফাঁকে আপডেট দেখে যাচ্ছিলাম। প্রচুর সাধারণ মেয়ে রাস্তায়। দেখে, কোনো খবরাখবর না নিয়েই, ফুর্তি পেয়ে একটা পোস্ট করি, যে, শাঁখ-টাখ নিয়ে অনেক চুলোচুলি হয়েছে, কিন্তু তর্কটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। শাঁখ কেউ বাজাচ্ছেনই না। রাস্তায় নেমে পড়ছেন। আর প্রতিবাদ ছাড়াও রাত্তিরের জমায়েতের আরেকটা ভালো ব্যাপার হল, দলে দলে হিন্দু রমনী মধ্যরাতে হ্যাটাং হ্যাটাং করে রাস্তায় ঘুরবে, বীরদের পক্ষে এটা হজম করা কঠিন। ... ...
আরজিকর হত্যা নিয়ে সত্যি বলতে কি, আমি কিচ্ছু জানিনা, এবং খুবই দিশাহারা। বাকিদের মতই নানা জিনিস পড়ছি, দেখছি। 'ভিতরের খবর' কিছু জানা নেই। প্রথম দিন খবরটা পেয়ে বাকিদের মতোই শিহরিত হয়েছিলাম। পড়েছিলাম, অধ্যক্ষ প্রথমে মেয়েটির বাড়িতে খবর দিয়েছিলেন, আত্মহত্যা। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে গুচ্ছের অভিযোগ। পড়লাম প্রথমে ঠিকঠাক ময়নাতদন্ত হচ্ছিলনা। ওদিকে অধ্যক্ষকে কিছুতেই সরানো হচ্ছিলনা। তারপর পুলিশ ঝপাঝপ একজনকে গ্রেপ্তার করে ফেলল। গরীব লোক, সিভিক ভলান্টিয়ার। শুনে সন্দেহ করেছিলাম, ধনঞ্জয়-২ হতে চলেছে। কাউকে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে। নানা জায়গায় নানারকম চক্র থাকে, শাসকদলের সঙ্গে যোগসাযোগও থাকে, তাদের পক্ষে নানারকম ষড়যন্ত্র অসম্ভব কিছু না। বিশেষ করে অধ্যক্ষটিকে না সরিয়ে যেভাবে অন্যত্র পাঠান হল, সে তো খুবই সন্দেহজনক। এখন যদিও ফাঁসানো অত সোজা না, সিসিটিভি আছে, ফরেনসিক উন্নত। তবুও। ... ...
নির্বাচিত সরকার হয় ৫ বছরের। নেট খুলে দেখি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারই নাকি ৬ বছরের। প্রথমে ভাবলাম, গুল। তারপর মনে হল, হতেও পারে। কতকিছুই তো নতুন হচ্ছে। সেনাবাহিনী সমর্থিত, এনজিও পরিচালিত, বিপ্লবী সরকার - এরকম ভুতুড়ে জিনিস তো আগে দেখিনি। পড়িওনি। সিলেবাসের বাইরে। সবই সম্ভব। তারপর ইউনুসের একটা বক্তৃতা দেখলাম, কে জানে কবেকার। সেখানে তিনি আবেগ দিয়ে বলছেন চাকরি হল গোলামি, গোলামি থেকে মুক্ত হন। শুনে ভেবেছিলাম অ্যামওয়ের বিজ্ঞাপন। সেখানেও সবাই মুক্তি-মুক্তি করে চিল্লায়। তারপর ভেবে দেখলাম, সরকারেও সম্ভব। চাকরিই না করলে আর কীসের কোটা। সবই মায়া। পড়লাম, স্বাধীনতার চূড়ান্ত হয়েছে, ওদেশে কর্ণধাররা টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দিচ্ছেন ঝপাঝপ, 'স্বেচ্ছায়', ছাত্ররা রাজনীতির অধিকার ছেড়ে দিচ্ছেন, 'স্বেচ্ছায়', সংবাদমাধ্যমে 'দুর্বৃত্ত' না বলে 'জনতা' বলা হচ্ছে, 'স্বেচ্ছায়', সংখ্যালঘুরা শাহবাগে প্রতিবাদ করছেন, সেটা না দেখিয়ে বাতাবীলেবুর ফলন নিয়ে বিপ্লবী প্রতিবেদন আসছে টিভিতে। সবাই স্বাধীন, সবই অনিত্য। ... ...
- ভাই, আমার বাসায় হামলা হতে চলেছে। - সে তো হবেই। পুরোনো রেজিমের ফাশিস্তরা তো এখনও সব মুছে যায়নি। চিহ্ন থেকে গেছে। - পুরোনো রেজিম না ভাই। এরা তো আগেরদিনই স্লোগান দিচ্ছিল। - কী যে বলেন, তারা আপনার বাসায় হামলা করবে কেন। ইন্টারনেটে দেখেননি সবাই হাতে হাত দিয়ে মন্দির রক্ষা করছে, মূর্তি আগলাচ্ছে? আপনার ওখানেও কিছু রক্ষা করতে গেছে মনে হয়। - না ভাই, রক্ষা না, আমারই রক্ষা নাই মনে হচ্ছে। পাশের বাসায় লুটপাট করছে। - আরে হতাশ হবেননা। একটু ধৈর্য ধরেন। আপনার বোঝার ভুল হতে পারে। তাছাড়া বিপ্লবের পর এসব একটু তো হবেই। ফরাসী বিপ্লবের পরও হয়েছিল। হয়নি? অরাজকতা কেটে গেলেই দেখবেন সকালে লাল সূর্য উঠছে। ... ...
এই মুহূর্তে, ঠিক বাংলাদেশের মতো আন্দোলন চলছে আরেকটা দেশে। প্রায় অবিকল। কেনিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ। আইএমএফএর ঋণে প্রায় আটকে পড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল নানা ভাবে। চিন তাদের উচ্চাকাঙ্খী বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পে বড় বিনোয়োগ করেছিল কেনিয়ায়। এবং চিনের সবসময়ই আইএমফএর বিকল্প একটা ফাইনান্সিং এর ব্যবস্থা থাকে। আর ছিল আইএমএফএর প্রেসক্রিপশন, যে, সরকারি খাতে খরচা কমাও, ভরতুকি বন্ধ কর। এই প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী একটা আর্থিক বিল আনা হয় কেনিয়ায়, যেটাতে জনতার বহু সুযোগসুবিধা কাটছাঁট করা হয়। গরীব দেশ, সরকারি দুর্নীতিও প্রচুর। এর পরেই আন্দোলন শুরু হয়, কয়েক মাস আগে। সরকার প্রথমে দমনের চেষ্টা করে। তাতে আন্দোলন বেড়ে যায়। গোটা কেনিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। সরকার কিছুদিন পরে পিছু হটে। মাসখানেক আগে প্রেসিডেন্ট রুটো বিলটা বাতিল করে দেন। ... ...
ঠিক কথা, বিপ্লব বা প্রতিবিপ্লব যাই হোক, তাতে সব সময় সবকিছু নিয়ন্ত্রণে থাকেনা। রাশিয়ায় বিপ্লবে উইন্টার প্যালেস লুঠ হয়েছিল। শ্রীলঙ্কায় রাষ্ট্রপতি ভবন। রোমানিয়ায় চাওসেস্কুর ভবন লুঠ হয়েছিল, তারপর তো ফায়ারিং স্কোয়াড। কিন্তু এগুলো সবই চিহ্নিত শত্রুপক্ষ। তাদের উপর আক্রমনে নিয়ন্ত্রণ থাকেনা। কিন্তু রুমানিয়ার হিংসায় একজন ইহুদির উপর আক্রমণের কথা শুনেছেন? শ্রীলঙ্কায় একটি তামিলও আক্রান্ত হয়েছে বিদ্রোহের সময়? কোনো গায়কের বাড়ি লুঠ হয়েছে রাশিয়ায়? হয়নি, কারণ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও বিপ্লবীরা একটা প্রাধান্যমূলক অবস্থানে অন্তত থাকেন। তাঁদের অ্যাজেন্ডাতেই কাজ হয়। ভাবুন দেখি, লেনিন বিপ্লব করলেন রাশিয়ায় আর কার্নিলভ নিজের মতো লোক মেরে যাচ্ছেন, এটা হলে কীসের ছাতার বিপ্লব হত? ... ...