এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • স্বচ্ছন্দে ছন্দ শিখুন: আনন্দ পুরস্কার গ্যারান্টেড

    `'
    অন্যান্য | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭ | ৮২৩৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Somnath | 85.154.255.42 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১২:২৩391558
  • অক্ষরবৃত্তের লাইন ৮+৮ এ শেষ হবে না। ভাঙা মাত্রা বাদ দেওয়া অন্যগুলোর জন্যে। ১২, ১৬, ২০, ২৪ অক্ষরবৃত্তে হয় না।

    খুব রেয়ারলি লোকে ৮+৮+৮+৬ বা আরো বড় লাইন লিখলে দু লাইনে ভেঙে লিখতে পারে। কিন্তু সেটা প্রচলিত ধাঁচ নয়। সমগ্র জীবনানন্দে দু-এক পীস অমন উদা পেতেও পার। সিওর নই।

    কবিতা নিয়ে আলোচনা করছি না। শুধু ছন্দ নিয়ে কথা হচ্ছে।

    রঞ্জনদা পুরো স্পয়েল স্পোর্ট। এয়ার্কি দিয়ে তাপ্পর আবার সরি বলে। :-)
  • Kartuj | 125.20.3.146 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৩:৪৫391559
  • বুঝলাম।
    আর ছন্দ বাদ দিলে? একেবারে ফেলে দেবার মত না কিছু অবশিষ্ট থাকবে?
  • Kartuj | 59.93.198.113 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১০ ২১:১০391560
  • অক্ষরবৃত্তে ৬,১০,১৪,১৮,২২ (আর যাচ্ছি না) এর লাইন হতে হবে,
    ৮,১২,১৬,২০ হয় না তাই তো? নাকি ৮ হয়? তাহলে আর বাকিটা দেখার দরকার নেই।

    'পুনশ্চ' তে ৮-এর লাইন আছে -

    এসেছি সুদূর কাল থেকে।
    তোমাদের কালে
    পৌঁছোলেম যে সময়ে
    তখন আমার সঙ্গী নেই।

    (আগন্তুক)

    ৩য় লাইন ৮-এর লাইন।

    হে জরতী,
    অন্তরে আমার
    দেখেছি তোমার ছবি।

    (জরতী)

    ৩য় লাইন ৮-এর লাইন।

  • Kartuj | 59.93.198.113 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১০ ২১:১৪391561
  • আর আমারটা ছন্দ দূরে রেখে শুধু কবিতা হিসেবে কত নম্বর পাবো, তাও জানতে চাইব। :-)
  • Kartuj | 59.93.198.113 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১০ ২১:৩৭391562
  • আচ্ছা আর একটু বিস্তারিত বলবে কোন কোনটা হয় অ. বৃ. তে?

    আমিই বলছি -

    ৪+২
    ৩+৩
    ৮+২
    ৮+৬
    ৮+৬+৪
    ৮+৪+৬
    ৮+৮+২
    ৮+৮+৬
    ৮+৬+৮

    আর আছে?
  • pi | 128.231.22.87 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১০ ২১:৫৩391563
  • Date:20 Sep 2010 -- 09:16 PM এর ভুল কতে দেওয়া স্মাইলিটা কিন্তু বেশ। বেশ একটা গোল গোল চোখে গোঁপ মুচড়ানো ছবি।

  • pi | 128.231.22.87 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১০ ২১:৫৪391564
  • *করে
  • vikram | 212.129.88.76 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৪:১৪391565
  • এইটা ভাঙ্গো দেকি - হোমটাস্ক

    ঋদ্ধি সিদ্ধি বাণ ধাতা শক নিয়োযিত
    দ্বিজমাধব গায় সারদাচরিত
  • r.h | 203.99.212.53 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৪:১৬391566
  • আমিও তাই ভাবি, ড.পাকড়াশিকে কি শিয়ালে খাইল।
  • Kartuj | 125.20.3.146 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১২:২৩391568
  • সোমনাথ কি খেরে গেল এত সব জিগাইলাম বলে?
  • Kartuj | 59.93.201.18 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ ২১:২৯391569
  • সোমনাথ তো বলছে না কিছু। এদিকে আমার আবার পোস্নো, সত্যি আর বলতেও ভাল্লাগে না।

    'ফিরে এসো চাকা'-র ২য় লাইনে -

    গলাধ:করণ না করে ক্রমশ রস নিয়ে

    এটা তো ১৬-র লাইন তাই না? বাকি সব ১৮ বা ১৪।
  • Somnath | 188.135.2.10 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১০ ২৩:৩৫391570
  • ""গলাধ:করন তাকে / না করে ক্রমশ রস / নিয়ে""

    আমার আশ্চর্য ফুল, যেন চকোলেট, নিমিষেই
    গলাধঃকরণ তাকে না ক’রে ক্রমশ রস নিয়ে
    তৃপ্ত হই, দীর্ঘ তৃষ্ণা ভুলে থাকি আবিষ্কারে, প্রেমে।
    অনেক ভেবেছি আমি, অনেক ছোবল নিয়ে প্রাণে
    জেনেছি বিদীর্ণ হওয়া কাকে বলে, কাকে বলে নীল-

    আকাশের হৃদয়ের; কাকে বলে নির্বিকার পাখি।
    অথবা ফড়িঙ তার স্বচ্ছ ডানা মেলে উড়ে যায়।
    উড়ে যায় শ্বাস ফেলে যুবকের প্রানের উপরে।
    আমি রোগে মুগ্ধ হয়ে দৃশ্য দেখি, দেখি জানালায়
    আকাশের লালা ঝরে বাতাসের আশ্রয়ে আশ্রয়ে।
    আমি মুগ্ধ; উড়ে গেছ; ফিরে এসো, ফিরে এসো , চাকা,
    রথ হয়ে, জয় হয়ে, চিরন্তন কাব্য হয়ে এসো।
    আমরা বিশুদ্ধ দেশে গান হবো, প্রেম হবো, অবয়বহীন
    সুর হয়ে লিপ্ত হবো পৃথীবীর সব আকাশে।

  • b | 130.39.149.129 | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১০ ০৪:১৪391571
  • .
  • Kartuj | 59.93.192.32 | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১১:২৯391572
  • Date:24 Sep 2010 -- 11:35 PM তে ? তেই তো সব আড়াল পড়ে গেল।

    কিন্তু 'তাকে' কোথায়?

    নিচের linkএ কি তাহলে ভুল আছে? আমি আসলে এটা এখানেই পড়েছি।

    http://www.calcuttaweb.com/kabita/kabitadisplay.php?id=61

    আর ৮ এর লাইন তো যদ্দূর জানি হয় না। কিন্তু 'কিনু গোয়ালার গলি'-তে প্রথম লাইনটাই এবং আরো কিছু জায়গায় ৮ এর লাইন আছে। অথচ পুরোটাতেই অ.বৃ. মেন্টেন করা। এ ব্যাপারে একটু আলোকপাত...

    তা ছাড়াও ওপরে Date:21 Sep 2010 -- 09:10 PM আর Date:21 Sep 2010 -- 09:37 PM এর ব্যাপারেও কিছু বোলো প্লীজ।

    এই প্রশ্নগুলো কিন্তু নিজের কোনো ভুল জোর করে justify করার চেষ্টা নয়, এটা কিন্তু স্পষ্ট করে বলছি। দেখলাম, প্রশ্ন খোঁচা মারল। তোমার শরণাপন্ন হলাম। এই আর কি। :-)
  • Somnath | 85.154.255.42 | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৬:১০391573
  • ক্যালকাটাওয়েবে ভুল আছে।
    ???? গুলো এপাতার উপরে Unicode version (Beta) তে ক্লিক করে পড়ো। বিনয় মজুমদার অন্তত: বই কিনে পড়। তোমার নাকি পছন্দের কবি! তা, প্রতিভাস থেকে সমগ্র বেরিয়েছে তো !!

    আর যেমন বলেছি, কোনো লাইন আট এ শেষ করে পরের লাইনে চলে গেছে মানে, সেটাকে দুলাইন মিলিয়ে আদতে একটা লাইন ভাবা যেতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে। কবিতা আঁকতে গিয়ে সরু সরু লাইনের মাঝে বড় লাইন রাখলে বেঢপ দেখাবে বলে ভেঙে লিখেছে। সে লোক কবিতা আঁকত। তুমি কি কবিতা আঁকবে না লিখবে?

    রবীন্দ্রনাথের কবিতার ছন্দ বুঝতে হলে অন্য বই পড়তে হবে। ছন্দের বারান্দা পড়তে বলেছিলুম পড়েছো?

    ৪ এর মাল্টিপল প্লাস ২ এর ভাঙা, বা আট এর মাল্টিপল + ২ বা ৬ এর ভাঙা। এই হল অক্ষরবৃত্ত। এখনকার নিয়ম। সে লোক যখন লিখত তখন এসব নিয়ম কানুন ফর্মালাইজড হয় নাই। তুমি রবীন্দ্রনাথের মত লিখতে চাইলে, রচনাবলী দেখে দেখে প্লীজ আমাকে না জিগেস করেই লিখো।

    আর অক্ষরবৃত্তে লিখতে চাইলে যারা অক্ষরবৃত্তে লিখেছে তাদের লেখা দেখে দেখে আগে সুর টা বোঝো। তারপর সেই সুরে ফেলে লেখো। লিখে গুনে দেখে নাও মিলেছে কিনা।

    মূলত বিনয় আর জীবনানন্দে প্রচুর অক্ষরবৃত্ত পাবে। এদুটো অন্তত বই কিনে পড়া যায় বলে আমার মনে হয়। দ্যাখো।
  • Kartuj | 125.20.3.146 | ০৫ অক্টোবর ২০১০ ০৯:৪৮391574
  • সোমনাথ,
    আর একবার একটু।
    ৮+৪+৬ (৩ + ৩ এর দুটোতেই যুক্তাক্ষর আছে) এটা চলে তো?

    রাত্রির কাঙাল জিভে রিমঝিম বৃষ্টির আস্বাদ
    - এই হল লাইনটা। হয় তো?

  • Somnath | 85.154.255.42 | ০৫ অক্টোবর ২০১০ ১৩:৫৯391575
  • হবে।

    তবে রাত্রির জিভ বৃষ্টি চাটতে কাঙাল কেন এটা তোমাকেই এস্টাবলিশ করতে হবে।
  • Kartuj | 125.20.3.146 | ০৫ অক্টোবর ২০১০ ১৫:০৭391576
  • আগে পরে মিলিয়ে সে 'কেন'-র উত্তর ভালই আছে। ছন্দ ঠিক তাই তো? বাঁচা গেল। ওটাই সবচেয়ে চিন্তা আমার সব সময়। থ্যাংকিউ স্যার। :-)
  • sayantani | 123.236.96.154 | ২০ নভেম্বর ২০১০ ১২:২৮391577
  • ছন্দ, ঘন্ট-চচ্চড়ি
    আমাকে অনেকেই সুযোগ পেলেই বলে থাকেন--'কি যে বাওয়া, তোমরা ছন্দ ছন্দ করো, এটা অমুকবৃত্ত, ওটা তমুকবৃত্ত, কোনটা দলবৃত্ত কোনটা জলবৃত্ত কোনটা আবার ফলবৃত্ত!!! বোঝো কি করে? আমার তো সবটাই মাথার উপর দিয়ে যায়!'
    বিনীত ভাবে জানাই--'আজ্ঞে দলবৃত্ত আছে, তবে জলবৃত্ত, ফলবৃত্ত নেই!'
    --'যাই হোক। বৃত্ত তো বটেই...বেছে বেছে বৃত্ত কেন হে বাপু? সরলরেখা বা ঘনক নয় কেন?'
    আমি তখন পালাতে পারলে বাঁচি। সত্যিই তো! বাংলার বিশারদরা একবার গণিতবিদদের কথা ভাবলেন না? যেখানে থ্রি ডি র জমানা , সেখানে শুধু বৃত্ত দিয়ে চালিয়ে গেলেন তারা! কি অন্যায়!
    এতকিছু থাকতে বৃত্ত কেন সে প্রসঙ্গে আসছি।
    বৃত্ত যেমন আবর্তিত হয়, তেমন ছন্দও আবর্তিত হয়!
    শুনেই চক্ষু চড়কগাছ হচ্ছে? কৈ না পুত্তর! বুঝিয়ে দিচ্ছি কি করে আবর্তিত হয়। একটা উদাহরণ--
    ''বিলাপ করেন রাম/ লক্ষ্মণের আগে'--৮/
    ভুলিতে না পারি সীতা/ সদা মনে জাগে--৮/
    কি করিব কোথা যাবো/অনুজ লক্ষ্মণ--৮/
    কোথা গেলে সীতা পাবো/করো নিরূপণ--৮/

    উপরের উদাহরণটি যদি কেউ ভালো ভাবে খুঁটিয়ে দেখেন তবে দেখবেন ৮+৬=১৪ এই বিন্যাসটি প্রতিটি লাইনে ঘুরে ফিরে একই ভাবে আসছে। অর্থাৎ বারবার বড় অংশ বা মূল পর্বটি হচ্ছে ৮ মাত্রার ও অপেক্ষাকৃত ছোট পর্বটি হচ্ছে ৬ মাত্রার! প্রত্যেকটি লাইনেই ঘুরে ঘুরে এই নিয়মই আসছে। কোনক্ষেত্রে এর অন্যথা হচ্ছে না। যতই নাচানাচি লাফালাফি করুক না কেন, ছন্দবাবাজীকে ঐ নির্দিষ্ট কক্ষপথেই ঘুরতে হবে। যেমন পৃথিবীর সূয্যিমামাকে ছাড়ার উপায় নেই তেমনি ছন্দের ও এই -cycle ছাড়ার উপায় নেই।অএই ঘুরে ফিরে একই জায়গায় আসার rotation বা আবর্তনটি দেখলেই বৃত্তের কথা মনে পড়ে যায়। সেই সাইক্লিক অর্ডারের মতই বারবার ফিরে আসছে বলে ছন্দের নামকরণের ক্ষেত্রে বৃত্ত শব্দটি ব্যবহার হয়। এবং এই বৃত্তীয় (গোলাকৃতি নয় কিন্তু ) চলাফেরার জন্য ছন্দবাবাজীর সংজ্ঞাটিও তেমনই হয়েছে! বড় সংজ্ঞা দেখলে অনেকেরই গায়ে জ্বর আসতে পারে। তাই একটা চুন্নুমুন্নু পুঁচকি সংজ্ঞা দিয়ে দিলুম ছন্দের।

    ছন্দ--ধ্বনির সুনিয়ন্ত্রিত সুশৃঙ্খল আবর্তনময় বিন্যাসকে ছন্দ বলা হয়--(প্রবোধ সেন)।
    যাক এক লাইনেই সারা গেছে! সুশৃঙ্খল আবর্তনময় বিন্যাস কি জিনিস সেতো আগেই দেখালুম। ঐ যে ঘুরে ফিরে ৮/৬,৮/৬ হচ্ছে ঐটিই হল সুশৃঙ্খল আবর্তনময় বিন্যাস! এই বিন্যাসের একটু এদিক ওদিক হলেই 'সমালোচকেরা চশমা আঁটিয়া, লস্য লইয়া বলিবেন--'হুঁ, ছন্দপতন হইয়াছে বটেক!'
  • sayantani | 123.236.96.154 | ২০ নভেম্বর ২০১০ ১২:৩০391579
  • এ তো গেল ছন্দের সংজ্ঞা। এবার ছন্দের সাথে সম্পর্কিত কয়েকটি শব্দ সম্পর্কে বলি। কারণ এরপর ছন্দ নিয়ে বলতে গেলে এই terms গুলো আসবে। তখন অনেকেই ভাববেন এগুলো কি? খায় না মাথায় মাখে!!!! কেউ কেউ চটে গিয়ে বলবেন--'ফের পন্ডিতি ফলাতে লেগেছে? মারিকিরি পকাই দিব!' সেই ভ্রূকুটির ভয়ে আগেভাগেই কয়েকটা জিনিস বুঝিয়ে রাখি। যাতে কেউ পরে সম্মার্জনী হস্তে 'শাড়ি পরা ভীম' হয়ে তাড়া না করেন।
    ছন্দ বুঝতে গেলে প্রথমেই যার শরণাপন্ন হতে হয়-- তিনি হলেন শ্রী শ্রী পরমারাধ্য মন্মহাশয় বাবা কর্ণরাজ!
    না না...কোনও মহাবাবার কথা বলছি না। ইনি আমাদের শ্রীমুন্ডে, শ্রী মুখের দুই পাশে প্রায় নব্বই ডিগ্রী অ্যাঙ্গেলে অবস্থান করেন। সবার কাছেই দু পিস করে আছে--অবিশ্যি যদি না নেহাৎ কেউ কানকাটা হন! সারাবছর আমরা কর্ণবাবাজীকে বিশেষ আমল দিই না। এমনকি বেচারাকে ভালো করে ছান-টান করানোর কথাও কেউ ভাবে না, বরং যাচ্ছেতাই রকমের ফুটো টুটো করে ভুলভাল ইয়ারিং পরে!!!!
    কিন্তু ছন্দ শিখতে হলে কানদুটোকে খাড়া রাখতে হবে। অবশ্যই গরু যেভাবে কানখাড়া করে সেভাবে নয়--কান খাড়া করার অর্থ অনেকটা হিন্দি লব্জ'কান খোলকে সুন লো'এর মতো। কানটা হাতে খুলে নিয়ে নয়, ভালো করে মন দিয়ে এবং কান দিয়ে শুনে মস্তিষ্কে পাঠাতে হবে।
    এ কথাটা বিশেষ করে এই জন্য বলা যে অনেকেই এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে কথা বের করে দেন। কিন্তু ছন্দের ক্ষেত্রে ঐটে চলবে না। নৈব নৈব চ! সর্বদা কানের সাথে চ'!
    কি দশা! এমন দিনও এলো যেদিন কানেরও সেবা করতে হচ্ছে!
    কানের সেবা কি ভাবে করবো? পথে এসো বাবা! কানের সেবা করতে গেলে যে কবিতার ছন্দ জানা দরকার আগে সেটা বারবার পড়তে হবে ও বারবার শুনতে হবে। দরকার পড়লে 'বাবর বলিয়াছিলেন--অ্যাঁ...অ্যাঁ...বাবর বলি-য়া-ছি-লে-ন...'করে পড়তে হবে। আমাদের স্যার বলতেন--'পারলে কয়েক পাউন্ডের হাঁ করে তারস্বরে পড়ো। তাতে কাক চিল ও ধারে কাছে ঘেঁষবে না, ছন্দ শেখাও হবে'।
    যেমন এই কবিতাটি---
    'বাবা বলে নরু তুই একটা গরু
    খাবি রোজ কানমলা
    বাবার কি ভুল, আমি এত ছোট
    উচিৎ বাছুর বলা!'
    এটিকে খুব ভালো করে পড়তে হবে। চিৎকার করে পড়লে ধরা যাবে যে এক লাইনে কোথায় কোথায় ব্রেক পড়ছে। অর্থাৎ লাইনের কতটা একসঙ্গে পড়ার পর একটু থেমে নি:শ্বাস নিয়ে পরের অংশ পড়া হচ্ছে!
  • sayantani | 123.236.96.154 | ২০ নভেম্বর ২০১০ ১২:৩২391580
  • এই কবিতাটিকে তাল মেরে মেরে চিৎকার করে পড়লে দেখা যাবে যে ব্যাপারটা অনেকটা এইরকম হচ্ছে---
    যদি যতি, তথা থামা বা ব্রেক দেওয়ার অংশটিকে / চিহ্ন দিয়ে দেখাই তবে চেহারাখানা এমন হয়--
    'বাবা বলে নরু/ তুই একটা গরু/
    খাবি রোজ কানমলা।/
    বাবার কি ভুল,/ আমি এত ছোট/
    উচিৎ বাছুর বলা!'/
    অর্থাৎ 'বাবা বলে নরু' অবধি বলার পর থামতে হচ্ছে। সেকেন্ডের ভগ্নাংশ যতির পরেই আসছে'তুই একটা গরু'। আবার একটু 'পজ'। তারপরেই 'খাবি রোজ কানমলা'।
    এক সাথে স্ল্যাশ চিহ্নের আগের অংশটুকু একসাথে পড়া যাচ্ছে। তারপরের অংশটি আসছে একটু বিরতির পর। ঐ বিরতিতে পাঠক শ্বাস টানছেন। যদিও সে বিরতি সামান্যই। কিন্তু কান ঠিক ধরে ফেলছে যে পড়ার সময়ে পাঠক কোথায় থামছেন।
    আরেকটা উদাহরণ-- তাল ঠুকে ঠুকে পড়ে দেখতে পারেন ঠিক কোন কোন জায়গায় বিরতি হচ্ছে--
    কানপুরেতে/ একানরের/মস্ত বড়/ মকান!
    হরেক রকম/ কানের সেথা/ মনোহারি/দোকান।
    এই স্ল্যাশ মারার আগের অংশটুকুকে বলে পর্ব! 'কানপুরেতে', 'একানরের','মস্ত বড়', 'মকান' এই চারটিই আলাদা আলাদা এক একটি পর্ব। অর্থাৎ একটা মানুষ কবিতার লাইনের যে অংশটুকু এক নি:শ্বাসে গড়গড় করে পড়ে যেতে পারেন তাকেই বলে পর্ব। এক পর্ব পড়ার পরেই তাকে অল্প থেমে পরের অংশটুকু পড়তে হয়। পরের অংশটি তাই আরেকটি পর্ব বলে বিবেচিত হয়। উপরের দুটি উদাহরণের প্রথমটির প্রথম লাইনে দুটি পর্ব,দ্বিতীয় লাইনে একটি, তৃতীয় লাইনে ফের দুটি ও চতুর্থ লাইনে একটি পর্ব আছে। দ্বিতীয় উদাহরণের দুটি লাইনই একই সংখ্যার পর্বভাগ করছে। দুটি লাইনেই চারটি করে পর্ব আছে।
    এই পর্বকে আলাদা করে দেখানোর পদ্ধতিকেই পর্ববিভাগ বলা হয়। প্রথম উদাহরণের ক্ষেত্রে পর্ববিভাগ--২,১,২,১ দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে ৪,৪।
    এবার আসি 'দল' এ। ' দল' বললেই আজকাল নেতা নেত্রীদের কথা মনে পড়ে। সেই দল নয় কিন্তু! এই 'দল' মানে পাপড়ি! ফুল যেমন পাপড়ি দিয়ে সাজানো থাকে তেমনি শব্দ 'দল' দিয়ে সাজানো থাকে।
    এই অবধি শুনে যদি ফের কেউ ভুরু কুঁচকাতে শুরু করেন আর বলেন--'দল টাই বা কি? দল বললেই মনে পড়ে'তুমি কোন দল? তুমি কোন দল? দলের কি অন্য কোন নাম নেই? যা থেকে জিনিসটা কি সেটা অন্তত বুঝি।' তবে তার ক্ষেত্রে ঘাম টাম মুছে বলতে হবে--'দাদা, দল মানে সিলেব্ল--এবার কি মাথায় ঢুকলো। দল হচ্ছে সেই একক, শব্দের সেই ভগ্নাংশ যা এক উচ্চারণে উচ্চারিত হয়'।
    পরিষ্কার হল?

    কোন দল? কোন দল?' এর কোন্দল ছেড়ে বরং 'সিলেবল' শব্দটারই বাংলা প্রতিশব্দ 'দল' বললে ভালো বোঝা যায়।
    যেমন আমার একখানা খানদানি নাম সায়ন্তনী! এটাকে যদি সিলেবল তথা দল ভাগ করে উচ্চারণ অনুসারে লিখি তবে ব্যাপারটা অনেকটা এই রকম দাঁড়ায়।
    সায়ন্তনী--সা (প্রথম দল)-ইয়ন(দ্বিতীয় দল) ত(তৃতীয় দল) নী(চতুর্থ দল)।
    সা-ইয়ন-ত-নী। উচ্চারণ করে দেখুন, এইভাবেই উচ্চারিত হচ্ছে বটেন! দল হল শব্দের উচ্চারণ অনুযায়ী ক্ষুদ্রতম অংশ।
    দলের কনসেপ্টটা পরিষ্কার হল? এবার আসি মুক্তদল ও রুদ্ধদল সম্পর্কে!
    মুক্তদল কি? এ আবার কি প্রশ্ন! যে দল মুক্ত তাকেই মুক্তদল বলে! হি: হি: হি:---ঠিকৈ বটেন--কিন্তুক কঁহানি মে থোড়া টুইস্ট হ্যায়!
    যে দল শেষ হয় স্বরান্ত ধ্বনি দিয়ে, তাকেই বলে মুক্ত দল। যেমন আমার নামটাই ধরি। গোটাটা যদি উচ্চারণ অনুযায়ী ধরা হয় তবে দলগুলো এমন হবে।
    সা-ইয়ন-তো-নী--পূ-তো-তুন-ড! (সায়ন্তনী পূততুন্ড)
    বাপরে! লিখতেই ঘাম বেরিয়ে গেল! যাক গে! এখানে ভালো করে দেখলে দেখবো যে-সা, তো, নী,পূ,তো, ড উচ্চারণের সময় মুখটা খোলা থাকছে। অর্থাৎ প্রত্যেকটার পেছনেই এক একটা স্বরবর্ণ আছে, না দেখা গেলেও তিনি আছেনই, অন্তত আমাদের হাঁ করা মুখের 'হাঁ কার' থুড়ি...আকার তাই-ই বলে!
    আর রুদ্ধদল?
    ছিম্পিল! মুক্তদলের ঠিক উল্টোটা। যে দলের শেষে হলন্ত ওয়ালা বা হসন্ত ওয়ালা ধ্বনি আসছে, এবং উচ্চারণের সময় মুখ খোলার বদলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তাকেই বলে রুদ্ধদল। আমার নামের মধ্যে 'ইয়ন','তুন' শব্দদুটি উচ্চারণ করার সময় যে মুখ খোলা রাখতে পারবে তাকে সোজা নোবেল দিয়ে দেব!
    আরেকটা উদাহরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিই।

    কহিলা হবু'শুন গো গবু রায়, কালিকে আমি ভেবেছি সারা রাত্র'।

    রুদ্ধদল মুক্তদল বুঝতে গেলে প্রথমে এইভাবে লিখতে হবে। মনে রাখা দরকার এই সব ক্ষেত্রে উচ্চারণ অনুযায়ী লেখাটাই সবচেয়ে সেফ। ছন্দ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও তাই। উচ্চারণ অনুযায়ী লিখলে ভুল হবার সম্ভাবনা কম।
    এই লাইনটির ক্ষেত্রে রুদ্ধদল মুক্তদল খানিকটা এইরকম--
    কো(মুক্ত)-হি(মুক্ত)-লা(মুক্ত) হো-(মুক্ত) বু-(মুক্ত) শু(মুক্ত)-নো-(মুক্ত) গো(মুক্ত) গো-(মুক্ত) -বু(মুক্ত) রায়(র+আয়)(রুদ্ধ)
    কা(মুক্ত)-লি (মুক্ত)-কে(মুক্ত) আ(মুক্ত) -মি(মুক্ত) ভে(মুক্ত)-বে(মুক্ত)-ছি(মুক্ত) সা(মুক্ত)-রা(মুক্ত) -রাত(র+আত)(রুদ্ধ)-রো(মুক্ত)

    পরিষ্কার যদি না হয় তবে আরো একটা উদাহরণ রইলো।
  • sayantani | 123.236.96.154 | ২০ নভেম্বর ২০১০ ১২:৩৭391581
  • কারো লেখা পড়া ট্যান যাবে, কারো গিলে করা পাঞ্জাবি, ...
    এটাকে এইভাবে লেখা যায়--
    কা(মুক্ত) রো(মুক্ত) লে(মুক্ত) খা(মুক্ত) প(মুক্ত) ড়া(মুক্ত) ট্যান(রুদ্ধ) যা(মুক্ত)বে(মুক্ত)
    কা(মুক্ত) রো(মুক্ত) গি(মুক্ত) লে(মুক্ত) ক(মুক্ত) রা(মুক্ত) পান(রুদ্ধ) জা(মুক্ত) বি(মুক্ত)
    রুদ্ধ দল , মুক্ত দলের কনসেপ্টটা ছন্দের ক্ষেত্রে খুব প্রয়োজনীয়। অন্তত ছন্দের পর্বমাত্রাবিভাগ আর মাত্রাগনণার জন্য বটেই। এই রুদ্ধদল ও মুক্তদলের মাত্রা গুণেই বোঝা যায় কোনটা কোন জাতীয় ছন্দ ও কোনটা কত মাত্রার।

    এবার আসি মাত্রা প্রসঙ্গে। মাত্রা কাকে বলে?

    এক কথায় বলতে গেলে সময়ের একককে মাত্রা বলে।
    এত সোজা! হ্যাঁ, ব্যাপারটা এতটাই সোজা। কিন্তু ছান্দসিকরা এই মাত্রাকে নিয়ে যাচ্ছেতাই করেছেন--পন্ডিতদের যা স্বভাব আর কি! কেউ সিলেবল কে মাত্রা ধরেছেন, কেউ শব্দকে-- মাত্রা নিয়ে টেনেটুনে প্রায় মেগা সিরিয়াল বানিয়ে দিয়েছেন আর কি!
    আমাদের অত জেনে কাজ নেই। শুধু এইটুকু জানলেই হবে যে একটি সিলেবল উচ্চারণ করতে যে সময় লাগে তাকেই মাত্রা বলে। এর বেশি আপাতত জানার দরকার নেই! গোটাটা তাতে ঘেঁটে' ঘ' ছাড়া আর কিছুই হবে না। ছন্দকে মাপার একক হিসাবেও মাত্রাকে ধরতে পারি--কারণ ছন্দ বুঝতে গেলে, ইন্টার সেকশন করতে গেলে এই মাত্রার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি!
    সচরাচর মুক্তদল এক মাত্রার ধরা হয়, রুদ্ধদলের মাত্রা নির্ভর করে ছন্দের রকমফের এর উপর। সে প্রসঙ্গে আসছি একটু পরে, তবে এইটুকু বলা যেতে পারে, রুদ্ধদল আবার একমাত্রা ও দুই মাত্রা দুই-ই হতে পারে।

    এবার মোটামুটি প্রস্তুতি পর্ব সারা হলে আসি ছন্দের প্রসঙ্গে। ছন্দ মূলত তিন রকমের
    / সরলকলাবৃত্ত বা কলাবৃত্ত বা ধ্বনিপ্রধান ছন্দ।
    /অক্ষরবৃত্ত বা মিশ্রকলাবৃত্ত বা তানপ্রধানছন্দ
    / দলবৃত্ত বা স্বরবৃত্ত বা শ্বাসাঘাত প্রধান ছন্দ।

    একেকজনের অষ্টোত্তর শত নাম! কি করা যাবে! পন্ডিতেরা আদর করে এতগুলো নাম দিয়েছেন! মহা বিপদ! বিশেষজ্ঞরা 'শ্যাম না কূল' এর কাজিয়ায় না গিয়ে সবকটা নামই মঞ্জুর করে ফেলেছেন। তথা শ্যাম, কূল দুই-ই আছে!
    এছাড়াও আরেকটি ছন্দ আছে যার নাম প্রত্নকলাবৃত্ত বা প্রত্নবৃত্ত ছন্দ। এই ছন্দ এসেছে ব্রজবুলি থেকে। তাই একে 'পদাবলীর ছন্দও বলা হয়।
    প্রথমে আসি প্রত্নবৃত্ত প্রসঙ্গে।
    প্রত্নকলাবৃত্ত হল সবচেয়ে প্রাচীন ছন্দ। পদাবলীতে এই জাতীয় ছন্দের ছড়াছড়ি। বিশেষ করে বিদ্যাপতির পদে সবচেয়ে বেশি আছে! এরপরের যুগে, তথা মঙ্গলকাব্য যখন আসবে তখন আমরা দেখতে পাবো অক্ষরবৃত্ত চলে এলো। তখন প্রত্নবৃত্ত প্রায় ডো ডো পাখি। পরে অবিশ্যি দাদা ভানুসিংহ এই ছন্দটিকেই ফের জীবিত করে পদাবলী লিখবেন। কিন্তু তার মধ্যে প্রত্নবৃত্তের পাট চুকিয়ে কবিতায় কবিতায় দাপাতে শুরু করেছে অক্ষরবৃত্ত।
    প্রত্নবৃত্তের বৈশিষ্ট্য--
    ১। প্রত্নবৃত্ত বেশ সুর করে পড়তে হয়।
    ২। সবচেয়ে প্রাচীন ছন্দ। বিশেষত ব্রজবুলি, সংস্কৃত শ্লোক, জয়দেব, বিদ্যাপতির পদে বেশি পাওয়া যায়।
    ৩।অপ্রত্নবৃত্তে রুদ্ধদল দু মাত্রার হয় আর মুক্তদল একমাত্রার।
    ৪। প্রত্নবৃত্তের সবচেয়ে মজার বৈশিষ্ট হল হঠাৎ করে দেখলে মনে হয় কোথাও কোথাও ছন্দপতন হয়েছে। কিন্তু আসলে তা নয়। সংস্কৃতে দীর্ঘস্বর আর বাংলায় স্বরান্ত শব্দকে একটু টেনে একমাত্রা থেকে দুই মাত্রার করে দিলেই ম্যাজিক! যেমন---

    গগনে অবঘন মেহ দারুণ, সঘনে দামিনী চমকই।
    কুলিশ পাতন, শবদ ঝনঝন, পবন খরতর বলগই।

    হঠাৎ করে শুনলে কেমন যেন কানকাটা কানকাটা মনে হয়। কি যেন নেই...কি যেন নেই ভাব।
    আসলে সবই আছে। শুধু পড়ার দোষে উদ্ভট লাগছে! যদি এইভাবে পড়ি?--

    গগনে অবঘন, মে-এ-হ দা-আ-রু-ণ, সঘনে দা-আ-মিনী চমকই।
    কুলিশ পা-আ-তন, শবদ ঝনঝন, পবন খরতর বলগই।

    তাহলে মনে হয় । হ্যাঁ, কিছু একটা পড়া হল বটে! একমাত্র প্রত্নবৃত্তই এমন একটা ছন্দ যেখানে একটি স্বরান্ত একমাত্রিক শব্দকে টেনে
    দ্বিমাত্রিক করা যায়।
    আরও একটা উদাহরণ--

    দেশ দেশ নন্দিত করি মন্দ্রিত তব ভেরী
    আসিল যত বীরবৃন্দ আসন তব ঘেরি।

    এটিকে পড়তে হবে এইভাবে---

    দে-এ-শ দে-এ-শ নন্দিত করি মন্দ্রিত তব ভেরী
    আ-আ-সিল যত বী-ঈ-রবৃন্দ আ-আ-সন তব ঘেরি।

    অথবা
    শা-আ-ঙন গগনে ঘো-ও-র ঘনঘটা নিশীথ যা-আ-মিনী রে
    কুঞ্জপথে সখী কয়সে যা-আ-ওব অবলা কা-আ-মিনী রে।

    কিংবা

    সজনী সজনী রা-আ-ধিকা লো দে-এ-খ অবহুঁ চা-আ-হিয়া
    মৃদুল গমন শা-আ-ম আ-আ-ওয়ে মৃদুল গা-আ-ন গা-আ-হিয়া!

    সুতরাং প্রত্নবৃত্ত চেনা সবচেয়ে সোজা। ব্রজবুলির পদাবলীর পদ মাত্রেই সেটা প্রত্নবৃত্ত হবেই হবে। এমনকি যদি বাংলাতেও এমন কোন পদ থাকে যাকে টে--এ--নে টে--এ--নে পড়তে হচ্ছে-- একমাত্রার মুক্তদল দুই মাত্রার হয়ে যাচ্ছে, কান বলছে যে এখানে টানতে হবে--চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যাবে যে সেই পদটি প্রত্নবৃত্তে লেখা! তাতে কোন সন্দেহ বা সংশয় থাকার কথাই নয়।
    এবার আসি সরল কলাবৃত্ত বা কলাবৃত্ত প্রসঙ্গে। 'কলা' শব্দটা শুনে যারা আহ্লাদিত হচ্ছেন, অবশ্যই বাঁদর ছাড়া, তাদের জন্য সুখবর,-- কলা ফলের মতই কলাবৃত্ত বা সরল কলা বৃত্ত ছন্দটি বেশ নির্ঝঞ্ঝাটে খাওয়া...ইয়ে...থুড়ি, নির্ণয় করা যায়! কলাবৃত্ত বা সরল কলাবৃত্ত সত্যিই সরল। বিশেষ ঝামেলা নেই। মাত্রার নিয়ম বেশ সহজ। এই ছন্দে মুক্তদল সবসময়ই ১ মাত্রার হয় ও রুদ্ধদল ২ মাত্রার। এর নড়চড় হয় না। একে অনেকে আবার আহ্লাদ করে মাত্রাবৃত্ত ও বলে ডেকে থাকেন।

    মাত্রাবৃত্তের বৈশিষ্ট্য--১। মাত্রাবৃত্ত বা সরল কলাবৃত্ত বা কলাবৃত্ত বা ধ্বনিপ্রধান ছন্দ দ্রুত বা মধ্যম লয়ের হয়।
    ২। মাত্রাবৃত্তের ক্ষেত্রে মুক্তদল সবসময়ই ১ মাত্রার ও রুদ্ধদল সবসময়ই দু মাত্রার।

    একটি উদাহরণ--
    রাত্রিদুপুরে কেঁদেছে কুকুরে বাস্তু চিনেছে পলকা শ্বাস।

    এই লাইনটিকে প্রথমে পর্বে ভাগ করবো-- ওঁ কর্ণরাজ সহায়--
    রাত্রি দুপুরে/কেঁদেছে কুকুরে/ বাস্তু চিনেছে/পলকা শ্বাস

    এইবার দ্বিতীয় ধাপ। লাইনটিকে উচ্চারণ অনুযায়ী দলে ভাগ করে লিখবো।
    রাত রি দু পু রে/ কেঁ দে ছে কু কু রে/ বাস তু চি নে ছে/ পল কা শ্বাস

    এইবার মাত্রাবৃত্তে রুদ্ধদল দু মাত্রার ও মুক্তদল একমাত্রার কথাটা মনে রেখে প্রতিটি দলের মাথায় মাত্রা বসিয়ে দেওয়া হোক। এখানে মাথায় লেখার উপায় নেই বলে পাশে লেখা হল।

    রাত-২ (রুদ্ধ) রি-১ দু-১ পু-১ রে-১/কেঁ-১ দে-১ ছে-১ কু-১ কু-১ রে-১/ বাস(রুদ্ধ)-২ তু-১ চি-১ নে-১ ছে-১/পল (রুদ্ধ)-২ কা-১ শ্বাস-২
    সব মিলিয়ে কত মাত্রা হল?
    ২+১+১+১+১/১+১+১+১+১+১/২+১+১+১+১/২+১+২=///

    এই হল মোটামুটি মাত্রাবৃত্ত-- অনুরূপ---
    ছিপখান তিনদাঁড় তিনজন মাল্লা
    প্রথম পদক্ষেপ--
    ছিপখান/ তিনদাঁড়/ তিনজন/ মাল্লা
    তারপর--
    ছিপ খান/ তিন দাঁড়/ তিন জন/ মাল লা
    এবার মাত্রাবৃত্তের নিয়মানুযায়ী মাত্রা বসান। রুদ্ধদল=২ মাত্রা
    মুক্তদল=১ মাত্রা
    ছিপ=২ খান=/ তিন=২ দাঁড়=/ তিন=২ জন=/ মাল=২ লা=
    ///
    এই তো মাত্রাবৃত্ত। সোজা নয়?
    এবার আসি মিশ্রকলাবৃত্ত বা মিশ্রবৃত্ত বা অক্ষরবৃত্ত বা তানপ্রধান ছন্দের কথায়। ছান্দসিকরা বলেন যে 'অক্ষরবৃত্ত ' শব্দটি ব্যাকডেটেড! প্রবোধ চন্দ্র সেন যখন হামাগুড়ি দিতেন তখন এর নাম দিয়েছিলেন অক্ষরবৃত্ত। কিন্তু পরে তিনিও মিশ্রবৃত্ত শব্দটিই ব্যবহার করেন।
    কেন? পরে আসছি। রাই ধৈর্যং রহুঁ ধৈর্যং......হুঁ হুঁ বাবা! সবুরে মেওয়া ফলিতং!

    মিশ্রবৃত্ত বা অক্ষরবৃত্ত বা পাঁচালীর ছন্দ মূলত শ্লথ গতির ছন্দ। অত্যন্ত ধীরে সুস্থে গজেন্দ্রগমনে চলে। যারা দ্রুতগতির ছন্দ ভালোবাসেন তারা এই ছন্দ শুনলে প্রথমে বিকটাকৃতি হাই তুলে বিশ্বরূপ দেখাবেন এবং পরে শয়নে পদ্মনাভ! তবে ভরসার কথা যে কখনও কখনও ইনি মধ্যম লয়েও চলে থাকেন। ফলস্বরূপ মিশ্রবৃত্তের সাথে দলবৃত্ত বা স্বরবৃত্ত বা ছড়ার ছন্দকে গুলোনোর সম্ভাবনাই নেই। মিশ্রবৃত্তের সাথে মূলত যার সাথে জগাখিচুড়ি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তিনি হলেন মাত্রাবৃত্ত বা সরল কলা বৃত্ত।

    অক্ষরবৃত্তের বৈশিষ্ট--১। প্রত্নবৃত্তকে বাদ দিলে ইনি বাংলা কবিতার আদি ও সনাতন ছন্দ! সবচেয়ে প্রাচীন ছন্দ, মঙ্গল কাব্য, পাঁচালী, ভাগবত সাহিত্যে এর একারই দাপট! প্রথমে পর, মহা পর, একাবলী, দিগক্ষরা বৃত্ত ও পরবর্তী কালে চতুর্দশপদী, অমিত্রাক্ষর, মুক্তক, গৈরিশ এমনকি গদ্যছন্দে এরিও একমেবাদ্বিতীয়ম উপস্থিতি।
    ২। প্রত্নবৃত্তের মতই অক্ষরবৃত্ত সুরেলা। তাই একে তানপ্রধান ছন্দ বলে! এবার যদি কেউ জিজ্ঞাসা করেন সুরটা কি রকম তখন আহত গলায় বলতে হবে---'এ কেমন মিনসে গো! ঘরে কি মা বোন নেই? তারা কি রামায়ণ, মহাভারত, লক্ষ্মীর পাঁচালী, বিপত্তারিণীর পাঁচালী পড়ে না! তখন শোনোনি কি ভাবে সুর করে পড়ে! এর পরেও বলতে হবে কি রকম সুর? ই কি রে বাবা! আপনে তো দেখি কত্তা এক নম্বরের ডম্বল!!!!'
    ৩। অক্ষরবৃত্তের সবচেয়ে মজার বৈশিষ্ট হল যে এর অক্ষরসংখ্যা আর মাত্রাসংখ্যা সমান। মানে অক্ষরবৃত্তটা কত মাত্রার তা বোঝার জন্য মাত্রার গননা করার দরকারও নেই। চোখ বুঁজে ই-কার, ও-কার, উ-কার শুদ্ধ অক্ষরগুলো গুণে যাও। আপনে আপ হি সমঝ যাও গে কে কিতনে আদমি...এই রে!...মানে কিতনে মাত্রা হ্যায়!
    যেমন---
    পাখসাট মারে পক্ষী/ আর দেয় গালি
    রাবণের সঙ্গে যুদ্ধ /করে মহাবলী।৮/৬,৮/
    এ তো মাত্রা গুণে বোঝা গেল যে ১৪ মাত্রার পর। এবার সবকটা অক্ষর পরপর গুণে যাও।
    ''পা খ সা ট মা রে প ক্ষী আ র দে য় গা লি''
    রা ব ণে র স ঙ্গে যু দ্ধ ক রে ম হা ব লী''

    বর্ণ বিশ্লেষণ না করে পড়ে যাও।
    কত হল? সন্দেহই নেই যে ঠিক চোদ্দটাই আছে।
    ৪। অক্ষরবৃত্তের মাত্রা গননার পদ্ধতি কিঞ্চিৎ মিশ্র। মাত্রাবৃত্ত বা সরল কলাবৃত্তের মতই এর মুক্তদলের মাত্রাসংখ্যা এক। কখনও কখনও রুদ্ধদলের মাত্রাসংখ্যা দুই, আবার কখনও কখনও রুদ্ধদলের মাত্রাসংখ্যা ১ ও হয়!
    এই অবধি পড়েই ফের ভুরুতে ভাঁজ পড়েছে! এ আবার কিরকম কথা! এই বলছ এক মাত্রা! আবার বলছ দুই মাত্রা! ফিচলেমি হচ্চে!
    হেই হুজুর মা বাপ! মিথ্যে বলিনি কো! সত্যিই মিশ্রবৃত্তের নিয়মটা কিঞ্চিৎ অদ্ভুত! এর ক্ষেত্রে রুদ্ধদল যদি শব্দের প্রথমে বা মাঝখানে বসে তবে সেই রুদ্ধদলের মাত্রা সংখ্যা হবে এক। আর শেষে বা আলাদা বসলে সবসময়ই দুই!
    যেমন--- আগের উদাহরণটাই দেখি--
    পাখসাট মারে পক্ষী/ আর দেয় গালি
    রাবণের সঙ্গে যুদ্ধ/ করে মহাবলী।

    পা খ সাট মা রে পখ খি/ আর দেয় গা লি
    রা বো ণের সঙ গে যুধ ধো/ করে মহাবলী
    এবার মাত্রা--
    পা-(মুক্ত)১ খ-(মুক্ত)১ সাট(রুদ্ধ এবং শব্দের শেষে আছে তাই...)২ মা (মুক্ত)-১ রে-(মুক্ত)১ পখ(রুদ্ধ, কিন্তু শব্দের প্রথমে আছে তাই...)১ খি(মুক্ত)১/ আর (রুদ্ধ ও আলাদা শব্দ তাই...)২ দেয়(রুদ্ধও আলাদা শব্দ)-২ গা(মুক্ত)-১ লি(মুক্ত)-১
    ১+১+২+১+১+১+১/ ২+২+১+১=/
    পরের লাইন ও অনুরূপ
    রা (১) বো(১) ণের(রুদ্ধ শেষে) ২ সঙ(রুদ্ধ প্রথমে)১ গে(১) যুধ (রুদ্ধ, প্রথমে) ১ ধো(১)/ ক (১) রে(১) ম (১) হা(১) ব(১) লী(১)
    /
    এবার বোঝা গেল? উফফফ বাবা!
    ৫।অমিশ্রবৃত্ত কিছু খেতে পারে! এক নম্বরের পেটুক ছন্দ! চলন এক রেখে যতই এর মধ্যে বর্ণ ঢোকাও না কেন একেবারে রাক্ষুসে খিদে নিয়ে খেয়ে নেবে! এমনকি মাত্রায় কোন তফাৎও পড়বে না! ইনফ্যাক্ট টেকনিক্যালি বোঝাই যাবে না যে বর্ণ বেড়ে গেছে! যতই বর্ণ বাড়াও, চলন গুরুগম্ভীর হবে। কিন্তু অক্ষরবৃত্ত অক্ষরবৃত্তই থাকবে। মাত্রায় প্রভাবই পড়বে না!
    কেমন? আচ্ছা দেখাচ্ছি--
    আবার জীবন পেলে/ দেখাতাম বাঁধ ভাঙা/ ঢেউ।
    বেরঙ দেওয়ালে চাপা/ পড়ে গেছে জীবনের/ সোঁতা!
    আবার কখনও যদি/ হয়ে আসি আমি আরও /কেউ,
    তোমায় দেখাবো ফের/ পরিশেষে বড় হয়ে/ ওঠা!--৮//২ চলন
    এবার বর্ণ সংখ্যা বাড়ানো যাক---
    পুনশ্চ জীবনান্তরে/ দ্রষ্টব্য বন্ধন ভাঙা/ ঢেউ
    বিবর্ণ প্রাকার তলে/ পিষ্টব্‌ৎ জীবনের/ সোঁতা
    'আবার'-- এর জায়গায় 'পুনশ্চ', জীবন পেলে--জীবনান্তরে, দেখাতাম--দ্রষ্টব্য,বাঁধ--বন্ধন, বেরঙ -- বিবর্ণ হয়েছে। এভাবেই জায়গায় জায়গায় বর্ণের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।
    কিন্তু চলন? সেই ৮//২।
    বিশ্বাস না হয় গুণেই দেখৈ না বাপু! সেই ৮//২ ই আসবে যতই বর্ণ চাপাও না কেন! মানে যতই ধরাচূড়ো চাপান না কেন, মা যেমন সেই ষাট কেজি, ৫ ফুট তিন ইঞ্চির আহ্লাদদায়িনী মা-ই থাকেন,এমনকি চলার সময়ে সেই বাতের ব্যথায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েই হাঁটেন, তেমন মিশ্রবৃত্তও মিশ্রবৃত্তই থাকে। তার চলনও পালটায় না।অবর্ণকে পুরো খেয়ে দেয়ে মুখ মুছে ফেলে। এমনকি ঢেঁকুরটুকুও তোলে না!
    কিছু খেতে পারে ছন্দটা। এক্কেবারে বকরাক্ষসের বংশধর!
    এই হল মোটামুটি অক্ষরবৃত্ত। এরপর বাকি থাকে দলবৃত্ত আর ছন্দের ইন্টারসেকশন করার প্রক্রিয়া। এই দুটো বলে দিলেই আমার ছুটি!
  • sayantani | 123.236.96.154 | ২০ নভেম্বর ২০১০ ১২:৪০391582
  • এবার আসি দলবৃত্ত বা স্বরবৃত্ত বা ছড়ার ছন্দ বা শ্বাসাঘাতপ্রধান ছন্দের কথায়।
    দলবৃত্ত বা স্বরবৃত্ত বা শ্বাসাঘাতপ্রধান ছন্দ চেনা খুব সহজ। আমাদের ক্লাসের স্যার বলতেন--'চার্লি চ্যাপলিনের হাঁটা দেখেছ? কিংবা অমিতাভ বচ্চনের ভাঙড়া নৃত্য? যদি দুটৈ দেখে থাকো তবে দলবৃত্ত বা স্বরবৃত্তকে চেনা মোটেও কঠিন নয়। যখন স্বরবৃত্ত বা দলবৃত্ত হাঁটে, তখন তার চলন চার্লি চ্যাপলিনের মতো, আর যখন নাচে তখন নাচনটা অমিতাভ বচ্চনের নাচের মতই বটে!'
    শুনে তো রীতিমত হাঁ! ছন্দ আবার হাঁটে! শুধু হাঁটেই না-- নাচেও! ছন্দ? না কুমড়োপটাশ!!!!
    পরে অবশ্য বুঝেছি স্যার আসলে দলবৃত্তের লয়ের কথা বলেছিলেন। কিছু কিছু দলবৃত্ত বা স্বরবৃত্ত আছে যারা খুব দ্রুত গতিতে এগিয়ে যায়, চার্লি চ্যাপলিনের মতৈ। যেমন--

    চাঁদ উঠেছে ফুল ফুটেছে কদমতলায় কে?
    হাতি নাচছে ঘোড়া নাচছে সোনামণির বে।

    আর কিছু ছন্দ আছে যেগুলো শুনলে মনে হয় যেন সত্যিই নাচতে নাচতে চলেছে--
    ভোর হল রে, ফর্সা হল, দুলল উষার ফুলদোলা।
    আনকো আলোয়, যায় দেখা ঐ, পদ্মকলির হাইতোলা।

    তাল মেরে মেরে পড়ে দেখলে বোঝা যাবে ছন্দটা কেমন লাফিয়ে লাফিয়ে নাচছে! এক্কেবারে যাকে বলে ঝিঙ্কুচিকু!
    মোদ্দা কথা হল চ্যাপলিনের হাঁটা হোক কি অমিতাভ বচ্চনের ভাঙড়া--কোনটাই খুব আস্তে নয়। রীতিমত দ্রুত লয়ের!
    দলবৃত্ত বা ছড়ার ছন্দও অসম্ভব দ্রুত। এর মাত্রা গননার নিয়মও অতি সরল। মুক্তদল ও রুদ্ধদল--দুইই একমাত্রার। দুই মাত্রার কোন ফান্ডাই নেই! আর দলবৃত্তের ঝিঙ্কুচিকু গতি দেখলেই দলবৃত্তকে চিনে নেওয়া খুব কঠিন নয়।
    দলবৃত্ত বা স্বরবৃত্তের বৈশিষ্ট--
    ১। দলবৃত্ত বা স্বরবৃত্ত অত্যন্ত দ্রুত লয়ের ছন্দ। এর গতিই এর পরিচয়।
    ২। দলবৃত্তে পড়ার সময় লক্ষ্য করা যায় যে পাঠক অনেক বেশি জায়গায় শ্বাস ফেলছেন ও টানছেন। শ্বাসাঘাতের প্রাবল্য থাকায় একে শ্বাসাঘাতপ্রধান ছন্দও বলে।
    ৩। ছড়ায় মূলত এই ছন্দই ব্যবহৃত হয়। ছড়া দেখলেই নির্বিঘ্নে বলে দেওয়া যায় যে এটি দলবৃত্ত।
    ৪। দলবৃত্তের মাত্রা গননা সরল। এখানে মুক্তদল ও রুদ্ধ দল উভয়েই একমাত্রিক।

    উদাহরণ--
    লিখতে যখন বল আমায়
    তোমার খাতার প্রথম পাতে
    তখন জানি কাঁচা কলম
    নাচবে আজও আমার হাতে।
    আগের মত করে এরও মাত্রা গোনার আগে পর্বভাগ করে নেবো।
    লিখতে যখন/ বল আমায়
    তোমার খাতার/ প্রথম পাতে
    তখন জানি/ কাঁচা কলম
    নাচবে আজও/ আমার হাতে।

    এবার সিলেবল এ ভাগ---
    লিখ তে য খন/ ব লো আ মায়
    তো মার খা তার/ প্র থম পা তে
    ত খন জা নি/ কাঁ চা ক লোম
    নাচ বে আ জো/ আ মার হা তে

    এবার মুক্তদল রুদ্ধদল নির্বিশেষে একমাত্রা বসিয়ে দাও--
    লিখ (১) তে(১) য(১) খন(১)/ ব(১) লো(১) আ(১) মায়(১)--৪/
    তো(১) মার(১) খা(১) তার(১)/ প্র(১) থম(১) পা(১) তে(১)-৪/
    ত(১) খন(১) জা(১) নি(১)/ কাঁ(১) চা(১) ক(১) লোম(১)-৪/
    নাচ(১) বে(১) আ(১) জো(১)/ আ(১) মার(১) হা(১) তে(১)-৪/

    ব্যাপারটা আদৌ তেমন কঠিনও নয় তাই না? আরেকটা দেখি--

    কুমোর পাড়ার/ গরুর গাড়ি
    বোঝাই করা/ কলসী হাঁড়ি
    গাড়ি চালায়/ বংশী বদন
    সঙ্গে যে যায়/ ভাগনে মদন

    এটা হবে এমন--
    কু মোর পা ড়ার/ গো রুর গাড়ি
    বো ঝাই ক রা/ কল সী হাঁ ড়ি

    দলবৃত্তে যখন রুদ্ধ ও মুক্তদল দুইই একমাত্রার সুতরাং মাত্রা বসালে এমন চলন বা পর্বমাত্রাবিভাগ এইরকম হবে--
    /
    /

    এটা আমি করে দেবো না। নিজেরাই একটু কষ্ট করে দেখে নিন। সমস্ত চলনটাই ৪/৪, ৪/৪ আসবে।

    এ তো গেল মোটামুটি তিনটে ছন্দের কথা। খুবই সামান্য পরিচয়। কিন্তু কবিতা দেখে বুঝবো কি করে যে সেটা কোন ছন্দে চলেছে?
    আর বুঝতে না পারলে ইন্টারসেকশন হবেই বা কোন প্রকারে?
    আমি বলবো, আমরা একটা ফাঁকিবাজির রাস্তায় শিখবো ইন্টারসেকশন। আর ইন্টার সেকশন করার সময়েই ধরা পড়ে যাবে যে কবিতাটা কোন ছন্দে আছে। তাহলেই কেল্লা ফতে।
    উপায়টা কি? হুঁ হুঁ বাবা ... বলছি...বলছি...
  • sayantani | 123.236.96.154 | ২০ নভেম্বর ২০১০ ১২:৪২391583
  • ইন্টারসেকশনের প্রথম পদক্ষেপ----
    ১। কবিতা--
    ধরা যাক একটি কবিতার কয়েক লাইন দেওয়া হল---

    শুনিয়া গবু ভাবিয়া হল খুন, দারুণ ত্রাসে ঘর্ম বহে গাত্রে
    পন্ডিতের হইল মুখ চুন, পাত্রদের নিদ্রা নাহি রাত্রে।

    এইটি আমাদের ইন্টারসেকশন করে পর্ব মাত্রা বিভাগ দেখাতে হবে ও ছন্দ নির্ণয় করতে হবে।

    ২। কানের আন্দাজে পর্ববিভাগ--
    এবার প্রথমে কবিতাটির পর্ববিভাগ করে নেওয়া যাক-- শ্রী শ্রী কান সহায়--

    শুনিয়া গবু/ ভাবিয়া হল/ খুন,
    দারুণ ত্রাসে/ ঘর্ম বহে/ গাত্রে
    পন্ডিতের/ হইল মুখ/ চুন,
    পাত্রদের/ নিদ্রা নাহি/ রাত্রে।

    ৩। কান কে জিজ্ঞাসা করো অপশন---
    এবার কানের কাছে জানতে চাও-- এটা কোন ছন্দ হতে পারে? প্রত্নবৃত্ত তো নয়ই। সেটা ব্রজবুলিতে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া কবিতায় প্রত্নবৃত্তের সুরও নেই। অতএব প্রত্নবৃত্ত বাদ গেল।
    তবে কি দলবৃত্ত? উঁহু! কান মুখ বেঁকাচ্ছে-- অসম্ভব! কবিতাটা পড়ে দেখলে বোঝা যায় যে বেশ ধীর লয়ের কবিতা,গড়িয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে। দলবৃত্ত হলে এতক্ষণে বেশ তালে তালে নাচা যেত। অতএব দলবৃত্তও বাদ গেলো।
    তবে কি মাত্রাবৃত্ত?
    কান বলল--'হতে পারে'।
    অক্ষরবৃত্ত?
    কান বলল--'সেটাও হতে পারে'।
    এ তো মহা মুশকিল! যদি বা দুইখানা ছন্দকে খরচের খাতায় ফেলা গেল, কিন্তু আরও দুই খানা ছন্দের মধ্যে প্রবল কনফিউশান!
    কি করা যায়?
    আর যাই হোক কান তো দুটো অপশন দিয়ে দিয়েছে। অক্ষরবৃত্ত বা মাত্রাবৃত্ত এই দুটোর যে কোন একটা হবে। দেখা যাক।
    আগে?

    ৪। দল ভাগ করে উচ্চারণ অনুযায়ী লেখা--
    শু নি য়া গো বু/ ভা বি য়া হো লো/ খুন,
    দা রুণ ত্রা সে/ ঘর মো ব হে/ গাত রে
    পন ডি তের / হই লো মুখ / চুন,
    পাত রো দের / নিদ রা না হি/ রাত রে।

    ৫। এবার মাত্রা বসানো--

    জয় মা কালী বলে মুক্তদলের মাথায় মাথায় একমাত্রা বসিয়ে দাও। যে ছন্দই হোক না কেন, মুক্তদল তো একমাত্রারই হবে। তার নড়ন চড়ন নেই।
    মুক্ত দল বসিয়ে দিলে অনেকটা এমন হবে--

    শু(১) নি(১) য়া(১) গো(১) বু(১)/ ভা(১) বি(১) য়া(১) হো(১) লো(১)/ খুন,
    দা(১) রুণ ত্রা(১) সে(১)/ ঘর মো(১) ব(১) হে(১)/ গাত রে(১)
    পন ডি(১) তের / হই লো(১) মুখ / চুন,
    পাত রো(১) দের / নিদ রা(১) না(১) হি(১)/ রাত রে(১)।
    ৬। এইবার ফাঁকিবাজী--
    এইবার প্রথমে দেখতে হবে যে কোন লাইনের কোন পর্বে কোন রকমের রুদ্ধদল নেই। সব ছন্দের ক্ষেত্রেই যেহেতু মুক্তদল এক সুতরাং প্রথমে মুক্তদল ওয়ালা একটি পর্ব বেছে নেওয়া জরুরী।
    উক্ত কবিতার প্রথম লাইনে 'শুনিয়া গোবু' ও 'ভাবিয়া হল' এই দুটি পর্বে কোন রুদ্ধদল নেই। মুক্তদলের একমাত্রা বসিয়ে মাত্রাসংখ্যা ঐ দুটি বিশেষ পর্বের ক্ষেত্রে পাওয়া গেল----৫ ও ৫
    এইবার আমরা পরের লাইনের ক্ষেত্রে ঐ দুটি পর্বকেই দেখে নেবো। যেহেতু ছন্দ চলে বৃত্তীয় পদ্ধতিতে বা রোটেশনে, সুতরাং সেই নিয়ম মেনেই নীচের লাইনের ঐ দুটির পর্বের নীচের পর্ব দুটি ও একই মাত্রা হবে।

    ৭। পরের লাইন--
    শু(১) নি(১) য়া(১) গো(১) বু(১)/ ভা(১) বি(১) য়া(১) হো(১) লো(১)/ খুন,
    দা(১) রুণ ত্রা(১) সে(১)/ ঘর মো(১) ব(১) হে(১)/ গাত রে(১)

    'শুনিয়া গোবু' আর 'ভাবিয়া হল' এর নীচে আছে 'দারুন ত্রাসে' ও 'ঘর্ম বহে'-- এই দুটি পর্ব। এই দুটি পর্বে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে 'দারুণ' এর রুণ রুদ্ধদল আর 'ঘর্ম' এর 'ঘর' ছাড়া মুক্তদলগুলিতে মাত্রা বসানো আছে। দারুণ ত্রাসে তে রুদ্ধদলটি বাদ দিলে তিন মাত্রায় দাঁড়াচ্ছে। ও 'ঘর্ম বহে' তে ঘর রুদ্ধদল বাদ দিলে সেই তিন মাত্রাই হচ্ছে।
    কিন্তু যেহেতু উপরের লাইনের দুটিপর্বে পাঁচমাত্রা আছে সুতরাং নীচের পর্বদুটিও পাঁচমাত্রাই হবে। এবং সেক্ষেত্রে দারুণ এর 'রুন' ও 'ঘর্ম' এর 'ঘর' কে দুই মাত্রার হতে হবেই।
    রুদ্ধদল তো দুই মাত্রার হল। কিন্তু মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত দুই ছন্দেই রুদ্ধদল দুই মাত্রার হতে পারে। কনফিউশন কাটলো না।
    ৮। কনক্লুশন--
    মাত্রাবৃত্ত ও মিশ্রবৃত্ত বা অক্ষরবৃত্তে রুদ্ধদল দুই মাত্রার হয় ঠিকই-- কিন্তু অক্ষরবৃত্তে শব্দের প্রথমে বসে থাকা রুদ্ধদল কখনও দুই মাত্রার হয় না! অথচ এখানে ' ঘর্ম' শব্দের প্রথমে 'ঘর' রুদ্ধদলটি দু মাত্রারই হয়েছে! যা অক্ষরবৃত্তে সম্ভব নয়!
    তবে বাকি থাকল মাত্রাবৃত্ত যার ক্ষেত্রে রুদ্ধদল যেখানেই থাকুক না কেন, সবসময় দুই মাত্রারই হয়। অতএব ছন্দটি মাত্রাবৃত্ত!
    ৯। পর্বমাত্রাবিভাগ-এটি মাত্রাবৃত্ত হওয়ার দরুণ রুদ্ধদল দ্বিমাত্রিক--মুক্তদল ১মত্রার। সুতরাং প্রতিটি মুক্তদলের পাশে এক ও রুদ্ধদলের পাশে দুই বসিয়ে পর্বমাত্রাবিভাগ পাই---

    শু(১) নি(১) য়া(১) গো(১) বু(১)/ ভা(১) বি(১) য়া(১) হো(১) লো(১)/ খুন,(২)--৫//
    দা(১) রুণ(২) ত্রা(১) সে(১)/ ঘর(২) মো(১) ব(১) হে(১)/ গাত(২) রে(১)--৫//
    পন(২) ডি(১) তের(২) / হই(২) লো(১) মুখ(২) / চুন,(২)--৫//
    পাত(২) রো(১) দের(২) / নিদ(২) রা(১) না(১) হি(১)/ রাত(২) রে(১)।--৫//

    অতএব পর্বমাত্রাবিভাগ--৫//২, ৫//৩, ৫//২,৫//

    এভাবেই নির্ণয় হয় পর্বমাত্রাবিভাগ। আরও দুটি উদাহরণ দেখিয়ে এই আলোচনায় ইতি টানবো! নয়তো লোকে বলবে--

    ''এ আলোচনায় আলো কই...... এযে শুধুই বকবকুনির চোনা'!!!!!!

    (চলবে)

  • ranjan roy | 122.168.188.165 | ২০ নভেম্বর ২০১০ ২২:৫১391584
  • কেয়াবাৎ! কেয়াবাৎ! কেয়াবাৎ!
  • tatin | 70.177.55.6 | ২০ নভেম্বর ২০১০ ২৩:২১391585
  • ছন্দ নিয়ে এত প্রাঞ্জল লেখা আগে পড়িনি
  • N | 115.240.156.153 | ২১ নভেম্বর ২০১০ ০০:২২391586
  • ট্যান। :)
  • vikram | 83.147.135.239 | ২১ নভেম্বর ২০১০ ১৭:১০391587
  • জিও মামা সায়ন্তনী!!! গুড হয়েছে।
  • aka | 24.42.203.194 | ২২ নভেম্বর ২০১০ ০৮:৫১391588
  • এইটা যাস্ট টু গুড হয়েছে। শুধু এন্টারটা জায়গায় পড়লেই জমে মটন নুর্জাহান।

    এই রকম মাস্টারমশাই পেলে মাইরি এতদিন জাতে উঠে যেতাম।
  • Samik | 122.162.75.113 | ২২ নভেম্বর ২০১০ ০৯:২৪391590
  • একেই বাংলায় বলে, একঘর। পুউরো ইন্ডিপিন্ডি ভিলা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন