এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • চিয়ারলিডার বা সুড়সুড়ি বা খেলা বা রাজনীতি

    Ishan
    অন্যান্য | ২৯ এপ্রিল ২০০৮ | ১৯৬২৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ishan | 12.163.39.254 | ২৯ এপ্রিল ২০০৮ ২০:২২395860
  • ল্যাদখোর জনতার জন্য সমাজসেবা করলাম। নতুন সুতো খুলে দিলাম। :)
  • Blank | 59.93.207.13 | ২৯ এপ্রিল ২০০৮ ২০:৪৭395971
  • আর এত্তু সমাজ সেবা করো মামু, লিখতে শুরু করে দাও :)
  • Ishan | 12.163.39.254 | ২৯ এপ্রিল ২০০৮ ২০:৫২396082
  • বেশ। আমিই খাতা খুলি। :)

    প্রথম পয়েন্ট। খেলা রাজনীতি এবং পণ্যায়ন।

    খেলা বলতে আজকে যা বুঝি, সেটা বেসিকালি রোমান অ্যাম্ফিথিয়েটারের আধুনিক রূপ। রোমান অ্যাম্ফিথিয়েটারই এই খেলা কনসেপ্টটার জনক। গ্রীকরাও খেলাধুলো করত। কিন্তু সে খুব সিরিয়াস জিনিস ছিল। মেয়েদের উপর বিধিনিষেধ ছিল। পাতার মুকুট ছিল। কিন্তু বিনোদনের সঙ্গে তার বিশেষ সম্পক্কো ছিলনা।

    বিনোদনের সঙ্গে খেলাকে যোগ করে রোম। সম্ভবত: অ্যাম্ফিথিয়েটারই পৃথিবীর প্রথম স্টেডিয়াম। সেখানে লোকজন, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে, ফুর্তি করতে আসত, আর বিশুদ্ধ বিনোদন নিয়ে বাড়ি ফিরত। কি জাতীয় খেলা হত সক্কলেই জানেন, বিশদে যাচ্ছিনা।

    তো, নৃশংসতা নয়, এখানে পয়েন্টটা হল ফুর্তি। বিনোদন। অ্যাম্ফিথিয়েটার বীর তৈরি করত। হিরো বানাতো। বীরপুজো তৈরি হত। গোটা স্টেডিয়াম এক বাক্যে বীরকে সমর্থন করত। প্রতিপক্ষের গলায় শেষ ছুরিটা মারার আগে গোটা স্টেডিয়াম একসঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়ে করতালি দিত, যেটা শচীনের নিরানব্বই রানে ইডেন এখন দিয়ে থাকে।

    ফলে অ্যাম্ফিথিয়েটার বীর তৈরি করত। উন্মাদনা তৈরি করত। আজকের খেলাও তাইই করে। আজকের স্টেডিয়ামগুলি অ্যাম্ফিথিয়েটারের আধুনিক রূপ। শুধু আজকের বীররা সত্যিকারের ফাইট করেন না। তরোয়ালের বদলে ফুটবল অথবা ব্যাটবল নিয়ে লড়েন। এইটুকুই তফাত।

    এই তফাতের একটা বড়ো কারণ হচ্ছে, রোমে ছিল লোকাল হিরো আর এখানে গ্লোবাল হিরো। তরোয়াল নিয়ে লড়লে হিরো যেকোনোদিন পটল তুলতে পারে। তখন আবার গ্লোবালি নতুন হিরো বানাতে হবে। সেটা পড়তায় পোষাবেনা। তার চেয়ে বাপু ব্যাটবলই ভালো। এফিশিয়েন্ট। যুদ্ধও হল, হিরো ও মরলনা।
  • Ishan | 12.163.39.254 | ২৯ এপ্রিল ২০০৮ ২১:০৭396193
  • এবার কথাটা হল হিরো বানিয়ে লাভ টা কি? হিরো বানানো আসলে ক্ষমতার একটা পুরোনো ট্যাকটিক্স। ডিসিপ্লিনারি ট্যাকটিক্সই বলি। হিরো হল রোল মডেল। এমনিতে লোককে নতুন কোনো শৃঙ্খলার পদ্ধতি, নিয়ম-কানুন শেখাতে হলে মেরে-ধরে শেখাতে হয়। তাতেও বিশেষ ফল হয়না। "রাস্তায় থুতু ফেলিবেন না' বা "জয় ভারতমাতার জয়' এই ভালো ভালো জিনিসগুলি লোককে ঠেঙিয়ে বা বুঝিয়ে শেখানো কঠিন। যদি আদৌ সম্ভব হয়, তাহলে প্রচুর খরচাপাতি লাগবে। ইন এফিশিয়েন্ট। তার চেয়ে রোল মডেল যদি কিছু করে দেখায়, লোকে দলে দলে মনের আনন্দে তাকে অনুসরণ করবে। সুনীল শেঠি যখন জয় ভারতমাতাকি বলে সিনেমার পর্দায় প্রাণ দেবে, তখন হলভর্তি লোকের চোখে দেশাত্মবোধের আগুন। স্বত:স্ফূর্তভাবে। কাউকে মারতেও হলনা ধরতেও হলনা, পড়াতেও হলনা, এমনিই শেখানো হয়ে গেল।

    হিরোরা দ্বিতীয় যে জিনিসটা করে, সেটা হল, একটা যথার্থ পোলারাইজেশন তৈরি করে। রোমে করত নাগরিক বনাম দাসের পোলারাজেশন। এখন ভারত-পাকিস্তান। বা ১৯১১র কথা স্মরণ করুন, ইংরেজ-ভারতবাসীর পোলারাইজেশন তৈরি করেছিল আইএফএ শিল্ড। খেলা, আসলে, ডিসপ্লেসমেন্ট, ফ্রয়েডিয়ান অর্থে। মানে যুদ্ধকে খেলা দিয়ে ডিসপ্লেস করা হচ্ছে। হয়। যুদ্ধ পোলারাইজেশন তৈরি করে। ভারত-পাকিস্তান। বা ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া। খেলাও তাই। কিন্তু যুদ্ধ ইন এফিশিয়েন্ট। খেলা অফিশিয়েন্ট। কারণ যুদ্ধে খচ্চা প্রচুর। প্রচুর লোকে পটলও তোলে। ট্রেনিং নিতে গিয়ে যদি অর্ধেক ট্রেনি মারাই গেল, তো, সেটা ইন এফিশিয়েন্ট পদ্ধতি। রিসোর্সের জলাঞ্জলি।

    অন্যদিকে খেলাও এই একই জিনিস করে। অনেক কম খচ্চায়। এবং কেউ মারা যায়না। এফিশিয়েন্ট।
  • Ishan | 12.163.39.254 | ২৯ এপ্রিল ২০০৮ ২১:২২396225
  • ফলে রাজনীতিহীন খেলা হয়না। ক্ষমতার সুতো ছাড়া তৈরি হয়না স্টেডিয়াম। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শচীনের ছক্কা দেখে যখন আপনি আনন্দে লাফাচ্ছেন, তখন আপনার মনে আসলে ক্ষমতার বাণী খোদাই করা হয়ে যাচ্ছে। "পাকিস্তানকে কেটে ফেলো'। "ভারতমাতার মুকুট উর্ধ্বে তুলে ধরো'। ইত্যাদি। একই ভাবে সৌরভ সেঞ্চুরি করলে আমার মাথায় প্রোথিত হচ্ছে বাঙালির শ্রেষ্ঠত্বের বাণী। অবচেতনে। কিন্তু মার্কেটিং এর বেশিরভাগ অংশটাই তো অবচেতনকে টার্গেট করে তৈরি। দৃশ্যমান যা, তা তো হিমশৈলের উপরিতলটুকু।

    এবং এই টেকনিক, আহামরি নতুন কিছু না। সেই রোম আমলেই এগুলো আবিষ্কৃত হয়েছিল। প্রত্যক্ষ ভাবে সেনেট বনাম সম্রাট দ্বন্দ্বে অ্যাম্ফিথিয়েটার ব্যবহৃত হয়েছিল বেশ কিছুবার। এবং রোম মানে আসলে যে সভ্যতা, গর্ব শ্রেষ্ঠত্ব, তার নির্মানে অ্যাম্ফিথিয়েটার বিরাট ভূমিকা নিয়েছিল।

    অনেক বছর কেটেছে। কিন্তু টেকনিক বদলায়নি। খুন-জখম আর নেই। সেগুলো ডিসপ্লেস করা হয়েছে "কিলার ইনস্টিংক্ট' দিয়ে। "শত্রুর শেষ রাখতে নেই। মেরে মাঠ ছাড়ো' ইত্যাদি টার্মগুলো হরবখত আমরা শুনতে পাই, খেলার প্রতিবেদনে। যুদ্ধ নেই, তা আজ খেলা দ্বারা ডিসপ্লেসড।

    ডেফিনিটলি, টেকনিকটি এখন অনেক বেশি জটিল। কমপ্লিকেটেড। শুধু খেলা নয়, এসে জুটেছে আরও অনেক হিরো, রাজনীতির ধরণ বদলেছে। কিন্তু প্রথম প্রিন্সিপলটি পাল্টায়নি।
  • r | 198.96.180.245 | ২৯ এপ্রিল ২০০৮ ২১:২৩396236
  • কোত্থেকে শুরু করেছে মাইরি! কলকাতার ইতিহাসের শুরু সমুদ্রগুপ্ত থেকে! প্রচুর হাঁটতে হবে। ;-)
  • Nandita | 131.95.121.107 | ২৯ এপ্রিল ২০০৮ ২১:৩৪396247
  • বিম্বিসার থেকে ই বা নয় কেন?
  • ip | 69.251.184.3 | ২৯ এপ্রিল ২০০৮ ২১:৫৯396258
  • রাজনীতি হলো, খেলা হলো, এদের মধ্যে ঐতিহসিক সিল্ক রুট আবিষ্কৃত হলো, কিন্তু চিয়ারলিডার রা কই এখেনে ? পথের ধারে ধারে ?
  • d | 61.11.19.239 | ২৯ এপ্রিল ২০০৮ ২২:০৪396269
  • না না পথের শেষে আছে বোধহয়। অধৈর্য্য হলে চলবে? এক্ষুণি ঈশান এসে বলে দেবে "সঙ্গে থাকুন'
    :-D
  • Ishan | 12.163.39.254 | ২৯ এপ্রিল ২০০৮ ২২:০৯395872
  • এট্টু কাজ করছিলাম। লিখছি। :)
  • d | 61.11.19.239 | ২৯ এপ্রিল ২০০৮ ২২:০৯395861
  • খাইসে!!
  • Ishan | 12.163.39.254 | ২৯ এপ্রিল ২০০৮ ২২:১৫395883
  • তো, পয়েন্টটা এটাই, যে, খেলা শুধু খেলা নয়, সেই রোমান আমল থেকেই মূঢ় মূক জনতাকে ডিসিপ্লিনড, শিক্ষিত করার একটি পদ্ধতি। এটাকে "শিক্ষিত' করা "এমপাওয়ার' করা ভাবা যেতে পারে। বা, "টুপি দেওয়া', "অপ্রেস' করাও ভাবা যেতে পারে। যার যা খুশি। কিন্তু বাংলা কথা হল, এটি মূলত: পুতুল নাচের ইতিকথা। হিরো তৈরি হচ্ছে, সমাজে "গৌরব' এর ধারণা তৈরি হচ্ছে, আর সেই ফাৎনায় গেঁথে যাচ্ছে আপামর জনতা। কেবলই দৃশ্যের জন্ম হচ্ছে, আর মহীনের ঘোড়াগুলি লাফালাফি করছে সল্ট লেক স্টেডিয়ামে।
  • r | 198.96.180.245 | ২৯ এপ্রিল ২০০৮ ২২:২১395894
  • সল্ট লেক স্টেডিয়ামে রেস কোর্স নাই।
  • Ishan | 12.163.39.254 | ২৯ এপ্রিল ২০০৮ ২২:৫৪395905
  • পয়েন্ট নম্বর দুই। যৌনতা।

    এবার এই পুরো স্কিম অফ থিংসে যৌনতা কোথায় অবস্থান করে আমরা দেখব। যৌনতা এবং ক্ষমতা নিয়ে গুচ্ছ কাজ হয়েছে। এখানে শুধু একটা টুকরো নিয়ে আলোচনা করব।

    এটা অষ্টাদশ শতকের ইউরোপের গপ্পো। অষ্টাদশ শতকে ইউরোপে হঠাৎই একটা মহামারি দেখা গেছিল। হঠাৎই দিগন্তে একটা আতঙ্কের চিত্র দেখা গিয়েছিল, পশ্চিমী দুনিয়ায় হঠাৎই যেন দেখা গেল এক ভয়াবহ অসুস্থতা জন্ম নিয়েছে। কি সেটা? না, কিশোররা হস্তমৈথুন করে। ত্‌ৎক্ষণাৎ এই যৌনতাকে নিয়ন্ত্রণ করার একটা ব্যবস্থা করা হল। কিশোরের যৌনতাকে চিহ্নিত করা, এবং কর্পোরাল পানিশমেন্টের মাধ্যমে তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার একটা পদ্ধতি তৈরি হল। এই কাজে পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানটিকেও ব্যবহার করা হল। তৈরি হল, কঠোর শৃঙ্খলা, কঠোর নিষেধাজ্ঞা এবং কঠোর শাস্তির একটি পদ্ধতি। পারিবারিক উদ্যোগে না হলেও, তাদেরই মধ্যস্থতায় শিশুশরীরের উপরে যৌনতাকে নিয়ন্ত্রণ করার, যৌনতাকে চিহ্নিত করে কর্পোরাল পারসেকুইশনের সঙ্গে যুক্ত করার একটি পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়া হল।

    এই ব্যাপারটা এন্‌কদিন চলেছিল। কিন্তু শেষমেষ দেখা গেল এই ধরণের নজরদারী অত্যন্ত অদক্ষ। প্রথমত: সর্বক্ষণ কিশোরদের চোখে চোখে রাখার জন্য লোক নিয়োগ করা প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত: যৌনতাকে সুতীব্র নজরদারীর, কঠোর নিয়ন্ত্রণের আওতায় নিয়ে আসার পদ্ধতি, নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি ব্যক্তির আকাঙ্খাকে তীব্রভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা এই ব্যবস্থার পক্ষে একটি বড়ো বিপদ। ফলে শরীর ক্রমশ: হয়ে ওঠে সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু। কিশোর ও তার বাবা-মার মধ্যে সংঘাত। কিশোর ও তার উপরে নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতির মধ্যে সংঘাত। নিয়ন্ত্রণ এবং খর্ব করার বিরুদ্ধে যৌন শরীরের বিদ্রোহ ক্রমশ: হয়ে ওঠে অনিবার্য একটি পরিণতি।
  • Ishan | 12.163.39.254 | ২৯ এপ্রিল ২০০৮ ২৩:১৩395916
  • এই অনিবার্য বিদ্রোহের বিপরীতে ক্ষমতা কি ব্যবস্থা নেয়? ক্ষমতা মানে রাষ্ট্র থেকে ইশকুল কলেজের মাস্টার পর্যন্ত সকল অথরিটি। তারা কি বিদ্রোহের জবাব দেয় ঠেঙিয়ে? অধিকতর নিয়ন্ত্রণ দিয়ে?

    না। ক্ষমতা এর জবাব দেয় এক বিচিত্র কায়দায়। র‌্যাডিকাল এবং আন প্রেডিক্টেবল। যৌন নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহার করা হয় যৌনতার উপাখ্যানকেই। চামড়া ট্যান করার প্রোডাক্ট থেকে শুরু করে পর্নোগ্রাফি পর্যন্ত একটি বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে যায় এই ব্যবহারের সীমান্ত। এইসব মালপত্তরের পিছনে বিপুল বিনিয়োগ করা হতে থাকে। ঠেঙানো, অবদমনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের বিপরীতে তৈরি হয় নতুন একটি ধারণা, স্টিমুলেশানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ।

    কি সেটা? না, ক্ষমতার নতুন স্লোগান হয়, নগ্ন হও ক্ষতি নেই, কিন্তু তার আগে শরীরকে সুগঠিত করো, স্লিম করো, স্বাস্থোঙ্কÄল বানাও। এই স্লোগানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে আসে স্বাস্থ্যের "বৈজ্ঞানিক' সত্যগুলি (যেমন অতিরিক্ত মেদ/ওজন শরীরের পক্ষে খারাপ)। আসে প্লেজারের ধারণা। ফলে কিশোর নিজেই যেতে শুরু করে জিমে। নিজেই নজর রাখতে শুরু করে নিজের শরীরের উপর। এই ভাবে তৈরি হয় একটি সুদক্ষ নজরদারির ব্যবস্থা।

    এই নজরদারির ব্যবস্থাটি এফিশিয়েন্ট। ঠেঙিয়ে সিধে করতে গেলে এটা করা যেতনা। কভি নেহি।

  • r | 198.96.180.245 | ৩০ এপ্রিল ২০০৮ ০০:৩৭395927
  • সবে হস্তমৈথুন। সেক্স ক্রমে আসিতেছে। :-)
  • Ishan | 12.163.39.254 | ৩০ এপ্রিল ২০০৮ ০০:৩৯395938
  • এখানে বাংলা পয়েন্টটা হচ্ছে, খোলামেলা যৌনতা মানে আসলে স্বাধীনতার গল্প না। এটা শৃঙ্খলার একটা টেকনিক। এবং অধিকতর এফিশিয়েন্ট টেকনিক।

    ব্ল্যাংকি অনেকদিন আগে ওদের মাস্টারমশাইয়ের একটা গপ্পো লিখেছিল। টোকাটুকি তে বিরক্ত হয়ে তিনি বলেছিলেন এবার তোরা কতো টুকতে পারিস দেখি। প্রত্যেক সপ্তাহে পরীক্ষায় তিনি টুকতে দিতেন। ছেলেপুলে তেড়ে টুকতো। এইভাবে বছরের শেষে দেখা গেল সবার সব পড়া মুখস্থ হয়ে গেছে। দেখে দেখে লিখে লিখে।

    এটা হচ্ছে ঐ ধরণের ডিসিপ্লিনারি টেকনিক। খুলবি তো খোল না। কিন্তু দেখিস বাবা, দেখতে যেন ভালো লাগে। অতএব ব্যায়াম। স্বাস্থ্যচর্চা। শরীরকে ঠিকঠাক ভাবে ক®¾ট্রাল করা। আরও বেশি বেশি ক®¾ট্রাল। ক্ষমতার সুতোর বেশি বেশি নিয়ন্ত্রণ। সব মিলিয়ে এও এক পুতুল নাচের ইতিকথা। ক্ষমতার সুতোয় বাঁধা পুতুলের নৃত্য।

  • Ishan | 12.163.39.254 | ৩০ এপ্রিল ২০০৮ ০০:৫২395949
  • তিন নম্বর। হিরোর নির্মান এবং যৌন মুক্তি।

    এই দুটো প্রক্রিয়ার মধ্যে মিল কোথায়?

    এক। দুটোই নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি। অশিক্ষিত শরীরকে ডিসিপ্লিন করার পদ্ধতি। শিক্ষিত করার পদ্ধতি। সভ্য করার পদ্ধতি। শৃঙ্খলাবদ্ধ করার পদ্ধতি।

    দুই। এফিশিয়েন্সি। দুটোই এফিশিয়েন্সির উপর জোর দেয়। ঠেঙিয়ে সিধে করা, পিটিয়ে শায়েস্তা করা ইন এফিশিয়েন্ট। তার জায়গায় এরা এফিশিয়েন্ট পদ্ধতিকে নিয়ে আসে। যেখানে মারধোর অতীত। গায়ের জোর অতীত। জনতা নিজেই উদ্যোগী হয়ে দেশপ্রেম কিংবা শরীরচর্চায় মন দেয়।

    এই দুই নং পয়েন্টটা লক্ষ্য রাখুন। এটাতে আমরা ফিরে আসব একটু পরে।

    তিন। নিয়ন্ত্রণকে এফিশিয়েন্ট করা হয় কিকরে? না বিভিন্নরকম কনসেপ্ট তৈরি করে। "ওয়ার্ল্ড কাপ জেতা মানে বিশ্বসেরা হওয়া' এটা এরকম একটা কনসেপ্ট। আবার "বিকিনি মানে নারীমুক্তি' এটা আরেকটা।

    চার। এই দুটোই শরীরের উপর গুরুত্ব দেয়। শরীর গঠন। স্বাস্থ্যই সম্পদ। শরীরকে উপভোগ করুন। সিগারেট খাবেন না। ইত্যাদি। মুক্ত যৌনতা এবং খেলার মধ্যে যদি একটা সবচেয়ে বড়ো কমন ফ্যাক্টর থেকে থাকে, তো সেটা শরীর। এরা দুজনেই শরীরকে এফিশিয়েন্ট করে তুলতে চায়। খেলার জন্য চাই পোক্ত শরীর, আর দেখানোর জন্য চাই সুগঠিত শরীর। ক্ষমতা শরীরকে নির্মান করতে চায়। সুগঠিত করতে চায়। সেই প্রজেক্টে সাক্সেসের জন্য যে তিনখানা স্তম্ভ তার হাতে আছে, তারা হল চিকিৎসা বিজ্ঞান, স্পোর্টস, এবং যৌনতা। পুতুলনাচের খেলায় এরা একই সূত্রে গাঁথা।
  • Ishan | 12.163.39.254 | ৩০ এপ্রিল ২০০৮ ০১:০৫395960
  • তো, পুরোটাই পুতুল নাচের খেলা। কিন্তু সেটা নিয়ে কথা হচ্ছিলনা আমাদের। আমরা চিয়ার লিডার নিয়ে কথা বলছিলাম। সেটা ভালো না খারাপ। ইত্যাদি। যেটা একটা মরালিটির প্রশ্ন।

    ক্ষমতার ডিসকোর্সে মরালিটির কোনো জায়গা নেই। মানে, মরালিটি নির্বাসিত নয়, কিন্তু অবান্তর। মানে, এই যে লম্বা প্রক্রিয়াটা বললাম, এখানে কোথাও ভালো-খারাপ এইসব গল্প আছে কি? নেই। একটা প্রক্রিয়া, ঘটে চলেছে, পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে, তার কিইবা ভালো-কিইবা মন্দ।

    কিন্তু আমাদের লাফালাফি/লম্ফঝম্প সবই মানুষের ভালো-মন্দ ইত্যাদি নিয়ে। অতএব এখানে মরালিতি না ঢোকালে আমাদের গল্প অসম্পূর্ণ থাকবে। অতএব আমরা আগের পোস্টের দুই নম্বর পয়েন্টটা লক্ষ্য করব। সেটা কি? না সুতোয় নাচালেও ক্ষমতা একটি বিশেষ ধরণের নিয়ন্ত্রণের উপর জোর দেয়। যেটা এফিশিয়েন্ট। ক্ষমতা এখন ডিসিপ্লিনের জন্য ঠেঙায়না। গায়ের জোর ফলায়না। এটা ক্ষমতার একটা স্বীকৃত ট্যাকটিকস। যে, আমি কাউকে পিটবনা। অন্যভাবে সিধে করব। হাতে মারবনা। কিন্তু ভাতে মারতেও পারি। তোমাকে আমি মুক্তি দেবনা কিন্তু এফিশিয়েন্সি দেব। ইত্যাদি।

    এই জিনিসটাকে মরালিটির ভাষায় আমরা মানবাধিকার বলি। যেখানে মানুষের বেছে নেবার অধিকার স্বীকৃত। তার উপরে কেউ গায়ের জোর দেখাবেনা। এবং ক্ষমতার প্রকরণকে কায়দা করে ব্যবহার করার অধিকার আমি তাকে দেব। ইচ্ছে করলে চালু ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে, সে, নিজের খেলাটি খেলে যেন নিতে পারে। কিছুটা এইটা তার অধিকার।

    এই জিনিসটাকে বাংলা ভাষায় আমরা বলি বাক-স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার। লড়াই করে ছিনিয়ে নেওয়া অধিকার ইত্যাদি। অন্যভাবে বললে, এটা ক্ষমতার দেওয়া শ্বাস নেবার ছাঢ় যেটা আমরা এনজয় করি। এবং যেখানেই এগুলো লঙ্ঘিত হয়, আমরা প্রতিবাদে গর্জে উঠি।
  • Ishan | 12.163.39.254 | ৩০ এপ্রিল ২০০৮ ০১:২০395972
  • ফলে এখানে আমরা ক্ষমতার দু ধরণের প্রকরণ দেখি।

    এক, যা ঠেঙায়না, কিন্তু সর্বব্যাপী। "মেরা ভারত মহান' থেকে "বিকিনি আনে মুক্তি' পর্যন্ত। এই ক্ষমতা স্বাধীনতা দেয়না। কিন্তু এফিশিয়েন্সি দেয়। একে আমরা ডিসিপ্লিনারি পাওয়ার বলি। মানবাধিকার ধারণাটি এই ক্ষমতার তৈরি করা আরও হাজারটা কনসেপ্টের মধ্যে একটা।

    দুই। যা ঠেঙায়। চোখ রাঙায়। "স্টোনচিপসের অর্ডার আমাকে না দিলে লাশ ফেলে দেব' বলে ভয় দেখায়। নেতার বিরিদ্ধে কথা বললে পুলিশ থানায় নিয়ে গিয়ে থ্রেট করে। ইত্যাদি ইত্যাদি। এটা মানবাধিকারের ধারণার সঙ্গে কমপ্লায়েন্ট না। এই ক্ষমতা এফিশিয়েন্সিও প্রদান করেনা।

    মরালিটির প্রশ্নে, অবস্থান নেবার প্রশ্নে, আমি দ্বিতীয় ক্ষমতাটির বিরুদ্ধে। আমি মনে করি, গায়ের জোর থাকা এবং না থাকা, ক্ষমতার চরিত্রে একটি গুণগত পার্থক্য। এতে অনেকটা তফাত হয়ে যায়। বাড়ি বানানোর সময় আমাকে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে মোহিত করে মার্বেল টাইলস কেনানো হয়, যা হয়তো আমার কাজে লাগেনা। কিন্তু সেটাতে আমাকে কেউ জোর করেনা। এটা প্রথম ধরণের ক্ষমতা। আর "আমাদের কাছ থেকে সাপ্লাই না নিলে বাড়ি বানাতে দেব না' বলে যে দাদা, সে গায়ের জোরের প্রয়োগ করছে। এটা দ্বিতীয় ধরণের ক্ষমতা। এই দুইয়ের মধ্যে তফাত আছে।

    একই ভাবে "বিকিনি পরুন, আপনি হয়ে উঠবেন আরও আকর্ষণীয়া, পুরুষ আপনার পায়ে এসে পড়বে' এটা হল প্রথম ধরণর ক্ষমতা। যা আমাকে নাচাবে, কিন্তু ইচ্ছে হলে আমি যাকে রিফিউজ করতে পারি, এইটুকু ফাঁক সে আমাকে দিয়ে রেখেছে।

    অন্যদিকে, "বিকিনি পরা বন্ধ হোক, কারণ এটা ভারতীয় সংস্কৃতির বিরোধী' এই স্লোগানটা হল দ্বিতীয় ধরণের ক্ষমতা। যেখানে, আমার বাছা-না-বাছার কোনো অপশন নেই। ভারতীয় সংস্কৃতি মানেই বিকিনি পরা যাবেনা। আপনি মেনে নিতে বাধ্য। নইলে পুলিশে ধরবে। ইত্যাদি।

    এই দ্বিতীয় ক্ষমতাটির বিরিদ্ধতা করা আমার কর্তব্য বলে মনে করি।
  • nyara | 67.88.241.3 | ৩০ এপ্রিল ২০০৮ ০১:২৫395983
  • ক্ষমতার ডিসকোর্সে মরালিটি অবান্তর - এই কথাটা আমার একেবারেই ভুল লাগল। মরালিটির সম্মার্জনী যুগে যুগে ক্ষমতার হাতিয়ার।
  • Ishan | 12.163.39.254 | ৩০ এপ্রিল ২০০৮ ০১:৩৩395994
  • এই লাইনেই আইপিএল এবং চিয়ারলিডারদের প্রশ্নটার উত্তর খুঁজি।

    খেলা বেচা হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে দৃশ্য। মহীনের ঘোড়াগুলি দল বেঁধে স্টেডিয়ামে এসেছে। দাদা আর শাহরুকের জন্য চিল্লাবে। কলকাতার জন্য চিল্লাবে। তৈরি হচ্ছে হিরো। সৌরভ গাঙ্গুলি ক্রমশ: লার্জার দ্যান লাইফ হয়ে উঠছেন। এই হিরো পরবর্তীকালে আমাদের সাবান আর শেভিং ক্রিম বেচবেন। আর কনসেপ্ট বেচবেন। যে, সবাইকে হিরো হয়ে উঠতে হবে। সবাই দলে দলে অনুসরণ করবে রোল মডেলকে। চেহারা হবে যুবরাজের মতো, দৃঢ়তা মহারাজের মতো। ইত্যাদি।

    আর এই হিরো তৈরির কলে শরীর-সম্ভার নিয়ে আসছে চিয়ার-বালিকারা। পুরুষের চেহারা যুবরাজের মতো আর নারী চিয়ার-বালিকাদের মতো। স্মার্ট অ্যান্ড সেক্সি। পুরুষের বুকে ঝড় তুলবে। ইত্যাদি।

    পুরোটাই একটি কলেরই অংশ। শরীর তৈরির কল। কনসেপ্ট তৈরির কল। খেলা মানে খুব উন্নত মানের আকাশ থেকে পড়া কোনো জিনিস না আর স্রেফ চিয়ার-বালিকারা ঘৃণ্য পতিতা না। পুরোটাই একটি মুদ্রার দুটি পিঠ। মুদ্রাটি হল, সেই প্রথম ধরণের ক্ষমতা, যা আপনাকে গ্রাস করবে ঠিকই, কিন্তু আপনার সম্মতি নিয়ে।

    আর এর উল্টো দিকে আছেন যাঁরা, তাঁরা "নারীর পণ্যায়ন' এর বিরুদ্ধতা করছেন। এবং চিয়ার-বালিকা বন্ধ করার দাবী তুলছেন। দাবীটা শিবসেনার মতো "ভারতীয় সংস্কৃতি'র ধুয়ো তুলে হতে পারে, বা "নারীস্বাধীনতা'র দাবী তুলেও হতে পারে। কিন্তু হরেদরে জিনিসটা এই, যে, কোনো একটি দাবী তুলে নারীর শরীর প্রদর্শনীকে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এটি দ্বিতীয় ধরণের ক্ষমতা। যা, আমাকে জোর করে। ঠেঙায়। কোনো অপশন দেয়না। আমি এই দাবীর বিরুদ্ধে, কারণ, আমি এই ধরণর ক্ষমতার বিরুদ্ধে।

    শেষ।
  • rimi | 168.26.191.117 | ৩০ এপ্রিল ২০০৮ ০১:৩৪396005
  • নগ্নতা আর মুক্ত যৌনতা কি ইকুইভ্যালেন্ট? খেলার সঙ্গে শরীর বা এফিশিয়েন্সির যেমন one-to-one সম্পর্ক, মুক্ত যৌনতার সঙ্গেও কি তাই?

    আর খেলা, মুক্ত যৌনতা, ক্ষমতা - এর সঙ্গে বাজারের গপ্পোটা কি রকম সেটা স্পষ্ট হল না? "বিকিনি পরে ছবি তুলে বিক্কিরি করুন, পয়সা পাবেন" - এটা ক্ষমতার কোন ক্যাটেগরিতে পড়ে?
  • rimi | 168.26.191.117 | ৩০ এপ্রিল ২০০৮ ০১:৪৪396016
  • মর‌্যালিটি ক্ষমতার হাতিয়ার, কিন্তু controller নয়। ক্ষমতা মর‌্যালিটিকে কাজে লাগায় ক®¾ট্রাল করার জন্যে, উল্টোটা নয়। ইশান কি এটাই বলতে চেয়েছে?
  • Ishan | 12.163.39.254 | ৩০ এপ্রিল ২০০৮ ০২:০৪396027
  • ন্যাড়াদা যেটা বলেছে একশবার ঠিক। আমার সেটা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। আমি বলছিলম, এই যে ক্ষমতার ধারাবিবরণী লিখছি আমি, এতে কোথাও মরালিটিকে ফিট করাতে পারছিনা। সেটা অবান্তর এখানে। আমি একটা প্রসেসের বর্ণনা দিচ্ছি। রোদ উঠলে গরম পড়ে। বা একশ ডিগ্রি টেম্পারেচারে জল বাষ্প হয়। এইরকম। এই বর্ণনায় মরালিটির কোনো জায়গা নেই।

    রিমির কথা প্রসঙ্গে:
    খেলার সঙ্গে শরীরের যা সম্পর্ক, যৌনতার সঙ্গে তেমন নয়। অন্যরকম। চিকিৎসাবিজ্ঞানের সঙ্গেও অন্যরকম। কিন্তু এই তিনটিকে মিলিয়ে মানুষের শরীরটাকে গড়ে তোলার একটা প্রোজেক্ট আছে ক্ষমতার। কি সেটা? না, ছেলেপুলে জিমে যাবে কেন? হয় সৌরভ গাঙ্গুলি হতে, নয় ছাতি আর গুলি ফুলিয়ে মেয়েদের ইমপ্রেস করতে। মেয়েরা যাবে কেন? না মেদহীন শরীর বানিয়ে মোহময়ী হয়ে উঠতে। বা নায়িকা হতে। এই নায়ক/নায়িকা হওয়াটা প্রোমোট করে খেলা/সিনেমা। আর ইমপ্রেস করাটা যৌনতা দিয়ে নির্ধারণ করা হয়। এখানে ইমপ্রেস করা/যৌনতা/শরীর প্রদর্শন একসঙ্গে জড়িয়ে আছে। চিকিৎসাবিজ্ঞান এই স্পেসে আসে পুরো প্রসেসটায় টেকনিকাল সাপোর্ট দিতে। "মোটা= খারাপ' এরকম একটা "বৈজ্ঞানিক' ধারণা জন্ম দিতে। এরা সবাই আলাদা-আলাদা রোল প্লে করে, কিন্তু গোল একটাই।

    হ্যাঁ এখানে বাজার বাদ গেছে। ঠিক কথা। বাজার না থাকলে ডিসিপ্লিনারি পাওয়ার অসম্ভব হয়ে যেত। বাজার একটা ইকুয়ালিটির জায়গা তৈরি করে, যে কারণে গায়ের জোর অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। "বিকিনি পরে ছবি তুলে বিক্রি করুন' ডেফিনিটলি এটা পার্ট অফ ডিসিপ্লিনারি পাওয়ার। মেয়েটির শরীরকে এখানে বিকিনি পরার মতো করে তুলতে হচ্ছে গড়ে পিটে। তারপর ছবি তুলে বেচতে হচ্ছে। পুরোটাতেই কোনো গায়ের জোর নেই। কিন্তু মডেল হওয়া মানে গ্ল্যামার, এই ধারণাটা কাজে লাগানো হচ্ছে, মেয়েটিকে একরকম করে সুতোয় গেঁথে ফেলার জন্য। পয়সার চেয়েও বড়ো হয়ে উঠছে গ্ল্যামার। নায়িকা হবার আকাঙ্খা। "সৌরভ হয়ে উঠলে হিরো হবে' এর মধ্যেও একই গল্প।
  • r | 198.96.180.245 | ৩০ এপ্রিল ২০০৮ ০২:৩৩396038
  • ঈশেনের গপ্পে মোদ্দা কথা যা দাঁড়িয়েছে: পৃথিবীতে দুইধরনের অধীনতা- স্ব-অধীনতা, প্যানপ্টিকন বা সূক্ষ্মভাবে জারি করা সেল্ফ-ডিসিপ্লিন, এবং মেরেধরে অধীনতা, যা প্রকট ও স্থূল। ঈশেন মনে করে দ্বিতীয়টা প্রথমটার থেকে খারাপ। অতএব চীয়ারলিডিং গায়ের জোরে বন্ধ করা খারাপ। আইনপ্রণেতারা কোনো সূক্ষ্ম উপায় ভেবে বের করতে পারেন, যেটা খুব "স্বাভাবিক" মনে হবে। বেসিকালি ক্ষমতাবানেরা খুব বুউউউকা। :-)

    কিন্তু এই গপ্পোটা খুব গোদা ও চেনা। ঈশেনের এই "পুনর্লিখিত গপ্পে" যেটা একেবারেই বাদ গেছে: পুরুষশরীর ও নারীশরীরের আলাদা আলাদা আখ্যান- ঐতিহাসিক ও সামাজিকভাবে। তাই প্রশ্নটা আদৌ চিয়ারলিডিং বন্ধ করে দেওয়ার প্রশ্ন নয়, নারীশরীরের দৃষ্টিকোণ থেকে চিয়ারলিডিংকে ভেবে দেখার প্রশ্ন। এবং এই দৃষ্টিকোণ এক নয়, বহু। কিন্তু তর্কের গোড়াটাকেই ঈশেন গপ্পো থেকে পুরো বাদ দিয়ে দিয়েছে।
  • r | 198.96.180.245 | ৩০ এপ্রিল ২০০৮ ০২:৪৬396049
  • বিশেষত: নারীশরীর ব্যবহারিক রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে এই গপ্পোটা খুব বিপজ্জনকও বটে। কারণ, ঐ ডিসিপ্লিনারি ক্ষমতা যেটা- অজর অমর অক্ষয়, ভালোমন্দের ঊর্ধ্বে, নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রাণি, নৈনং দহতি পাবক:- এই সর্বশক্তিমানের সামনে যাহা কুসুম তাহাই শশী। হ্যাঁ, যদি কেউ মেরেধরে বকেঝকে কাজ করায় তাহলে প্রতিবাদ কর। অতএব, ক্ষমতার অসাম্যের মাপকাঠি হল কার উপর বেশি মারধোর বকাঝকা হচ্ছে। তারপর পুরোটাই মায়া। এত শতাব্দীর ক্ষমতার অসাম্যের খতিয়ান ইজ গন ফট ইন ওয়ান ফাইন মর্নিং, যেদিন মাস্টারমশাই আর ক্লাসে বেত নিয়ে ঢুকবেন না।
  • pinaki | 131.151.54.206 | ৩০ এপ্রিল ২০০৮ ০৪:৫৪396060
  • দুটো কথা।

    ১) শারীরিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যে ক্ষমতা এবং conceptually নিয়ন্ত্রণ করে যে ক্ষমতা - তাদের সবসময় degree র দিক দিয়ে উচ্চ-নীচ বর্গীকরণ করা যায় না। কারণ দ্বিতীয় প্রকার ক্ষমতা সাধারণত: option দেয় খুব সামান্য এবং সেই option এর বাইরে অন্য option চাইতে গেলে সে প্রথম প্রকার ক্ষমতা হয়ে ওঠে।

    ২) লেখাটায় সমস্যা যেখানটায় লাগলো, এভাবে ভাবলে বাজারের উপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের যেকোন দাবী-ই গা-জোয়ারি নিয়ন্ত্রণ - অতএব পরিত্যজ্য - এরকম একটা conclusion এ পৌঁছোতে হয়। সেটা কতটা ঠিক?
  • shyamal | 72.24.208.96 | ৩০ এপ্রিল ২০০৮ ০৬:৪৮396071
  • ঈশানববুর কতকগুলো পয়েন্ট নিয়ে দ্বিমত আছে :
    ১) আপনি কি বলছেন যে বিজ্ঞাপন দেখে কিশোর হস্তমৈথুন না করে জিমে যায় ? অর্থাৎ আপনি কি ইমপ্লাই করছেন যে হস্তমৈথুন কোনভাবে ক্ষতিকারক? আমাদের সেক্স বিষয়ে অজ্ঞানতার ফলে ছেলেবেলায় এরকম একটা ধারণা ছিল বটে।
    ২) ভারত অস্ট্রেলিয়ার খেলা দেখার সময়ে ভারতকে সমর্থন করি কিন্তু অস্ট্রেলিয়াকে 'কেটে ফেলার' ইচ্ছা জাগেনা। খেলার সঙ্গে বিপণনের সম্পর্ক আছে ঠিকই কিন্তু খেলার মূল উদ্দেশ্য ক্ষমতার লড়াই আর জিনিষ/আইডিয়া বিক্রি এটা মানতে পারলাম না। এক সময়ে ইস্টবেঙ্গল - মোহনবাগান নিয়ে কম মাতামাতি হয় নি। তাতে কার ক্ষমতা কমেছে বা বেড়েছে?
    আর সেরকম বললে সমাজবাদী-পুঁজিবাদি সব দেশে সবাই বিক্রি করছে আর খদ্দের ধরার চেষ্টা করছে। অধ্যাপক জ্ঞান বিক্রি করছেন, সুমন-শ্রীকান্ত-নচিকেতা গান বিক্রি করছে।
    ৩) আপনি বলেছেন "ক্ষমতা স্বাধীনতা দেয়না'। আসলে স্বাধীনতার ধারণা ভিন্ন ভিন্ন। অনেক দেশে মানুষের ধারণা সরকার তার জন্য কাজ জোগাড় না করে দিলে তার স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে। আমেরিকার সংবিধানে আছে, প্রত্যেক মানুষের স্বাধীনভাবে সুখী হওয়ার চেষ্টা করার অধিকার আছে (pursuit of happiness) কিন্তু সরকারের দায়িত্ব নয় সুখী করা। আমার মনে হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাজার সবচেয়ে গণতান্ত্রিক ভাবে স্বাধীনতা দেয়।
  • Ishan | 12.240.14.60 | ৩০ এপ্রিল ২০০৮ ০৯:০২396083
  • শ্যামলবাবু,

    ১। আমি খারাপ-ভালো কিছু ইমপ্লাই করিনি। চিকিৎসাবিজ্ঞানের খারাপ-ভালো মাঝে মাঝেই পাল্টে যায়। :) আমি শুধু বলেছি ছেলেপুলেকে ক®¾ট্রাল করার পদ্ধতিটা দুই শতাব্দীতে আমূল বদলে গেছে। আগে হস্তমৈথুনকে ঠেঙিয়ে সিধে করা হত। এখন তার জায়গায় খোলামেলা যৌনতার সুড়সুড়িকে কাজে লাগানো হচ্ছে ছেলেমেয়েদের শারীরিক ভাবে ডিসিপ্লিনড করতে।

    ২। খেলা দেখার সময়ে অস্ট্রেলিয়াকে "কেটে ফেলা' র ইচ্ছে জাগেনা। একশবার। কিন্তু জেতার ইচ্ছে জাগে। যুদ্ধের ইচ্ছেটা ডিসপ্লেসড হয়েছে "জেতা'র ইচ্ছে দিয়ে। এতে কারো ক্ষমতা কমেনা বা বড়েনা। শুধু ভারতবাসীরা এক সুরে গান গাইতে শেখে। "আমরা ভারতবাসী' বলে ডিসিপ্লিনড হয়।

    ৩। ক্ষমতা স্বাধীনতা দেয় বা দেয় না, এটা স্বাধীনতাকে কিভাবে ডিফাইন করছেন তার উপর নির্ভর করছে। ক্ষমতা আপনাকে অপশন দেয় রাম বা শ্যামকে, কংগ্রেস বা বিজেপি কে বেছে নেবার। কিন্তু খুচরো টেকনিক্যালিটি, যেগুলো প্রাত্যহিক জীবনে প্রভাব ফেলে, সেগুলোতে আপনার মতামত নেয়না। যেমন ধরুন, কথার কথা বলছি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বেঁধে দেওয়া ইন্টারেস্ট রেট কি হবে, এতে আপনার কোনো সে নেই। বা আপনি স্টেটের অথরিটির বিরুদ্ধেই বলবেন, তাহলে ক্ষমতা আপনাকে জেলে পুরবে। এটাকে স্বাধীনতা বললে স্বাধীনতা। নইলে নয়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন