তোমার আপাত সারল্যে আমার সমস্ত পূর্বপরিকল্পনাই এমত ধ্বস্ত হয়ে যায়। সমস্ত সম্ভাবনাময় প্রস্তাবনার অংকুরেই তুমি রেখে যাও অনিবার্য ভেটো। সকালের আলোয় আমি বিস্তৃত করি সেতু - তুমি প্রবল প্লাবনে কাঁপিয়ে দাও দুর্বল ভিত। সারাদিন ধরে আমি ন্যুব্জ পিঠে একটা একটা করে পাথর বয়ে এনে এনে বানাই পাহাড় - তুমি অকাল বসন্তের শিমূল পলাশের প্রাচুর্যে প্রকট করে তোলো সেই অপচয়। আমি সন্ধ্যের নিভৃতিতে ঘরে ফেরার পথের শেষ সীমানায় কোনো সবুজ দরজার তালা খুলবো বলে পকেটে রেখে দিই জং ধরা চাবি - তুমি অঙ্গুলীহেলনে খুলে দাও দায়িত্বজ্ঞানহীন দিগন্ত......রাত্রি বাড়ে - অসাফল্য সানন্দে ঘনীভূত হয়... ... ...
হারানো-প্রাপ্তি // মৌসুমী ঘোষ দাস গায়ের রঙ শ্যামলা, পরনে একটা রংচটা কুর্তি আর সালোয়ার। কুর্তির বুকের কাছে চুমকি জরির মত কাজ। কুর্তির পেছনের দুটো বোতাম খোলা, বোধহয় বোতাম ছিঁড়ে গেছে। মাথার চুল উস্কোখুস্কো। বোঝা যাচ্ছে তেল-জল পড়েনি অনেকদিন। হাতে একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ, তাতে একটা অপরিষ্কার সোয়েটার। উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি। বয়স পনেরো/ষোলো মত হবে, সঙ্গে কেউ নেই। খুব সম্ভবত ভবঘুরে অথবা পাগলী। -মেয়েটাকে কিছুতেই ভুলতে পারছে না অনন্যা। মামাতো দিদি গোপাকে নিয়ে গিয়েছিল নার্সিং হোমে। জাতীয় সড়কের দুই ধারে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা নার্সিং হোম, যেগুলো বেশিরভাগই কিছুদিন আগে পর্যন্ত হোটেল ছিল, তারই একটাতে ভর্তি রয়েছে মামাতো দিদির জা। ... ...
সংযুক্তা শাড়িটা আপনার কাছে দিয়ে যেতে বলেছে। শাড়ির ব্যাবসা করে সংসার চালাতে পারবি? শাড়ি আজকাল প্রতিদিনের জন্য অনেকেই পরেনা। কি করবো কাকু? লকডাউনে আমাদের দুজনের চাকরিই চলে গেল। আমার বর তো ডিপ ডিপ্রেশনে ডুবে গেছে। অগত্যা আমাকেই শেষ সম্বলটুকু নিয়ে শাড়ির ব্যবসায় নামতে হল। তোর নাচের স্কুল – অনুষ্ঠানে আয় হয় না? কোভিডের ভয়ে সবই বন্ধ......সবাই তো আজকাল অনলাইনে শেখাচ্ছে... হাতে কলমে যা শেখার তা অনলাইনে শেখানো যায় বলে আমি মনে করি না। আমার বাবা যে ভাবে হাতে ধরে আমায় শিখিয়েছেন সেই ভাবে ছাড়া আমি শেখাতে পারবো না। শাড়ির ব্যবসাটা আমি ভালোবাসি না। নাচ আমি ভালোবাসি। আমি ভালোবাসা বিলোতে পারবো বিক্রি করতে পারবো না। ... ...
প্রধানমন্ত্রী, দয়া করে কিছু করুন আপনি বলেছিলেন সব কালো টাকা সাদা হবে তাই রাতারাতি নোটবন্দি করেছিলেন, আমরা বিশ্বাস করেছি, আপনি বলেছিলেন করোনা ভাইরাস এক মহামারী তাই রাতারাতি লকডাউন করেছিলেন, আমরা বিশ্বাস করেছি, আপনি বলেছিলেন বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাঁসর ঘন্টা বাজাতে এতে নাকি করোনা ভাইরাস চলে যাবে, আমরা তাও বিশ্বাস করেছি। আমরা বিশ্বাস করেছিলাম আপনার হাতে আমাদের জীবন একটু হলেও নিরাপদ। ... ...
জানলার কাঠের পাল্লাটা একটু ঠেলে খুলে দিল পদ্ম। ওপারের আমগাছটার ডাল পাতার ফাঁক দিয়ে হেমন্তের এক মুঠো নরম রোদ এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ল স্যাঁতস্যাঁতে বিছানাটার ওপর। বিছানার একদিকে পাশ ফিরে শুয়ে আছেন অষ্টাশি বছরের প্রাণতোষ বাবু। বার্ধক্যজনিত কারণ ছাড়াও শারীরিক ও মানসিক দুই দিক দিয়েই একেবারে অকেজো হয়ে পড়েছেন তিনি। অথচ একসময়ে পরিবারে তাঁর প্রবল প্রতাপ ছিল। আজ থেকে আঠারো বছর আগে এক শীতের সন্ধ্যায় আচমকাই গিন্নী চলে গেছেন। আর তারপর থেকেই ধীরে ধীরে ঝিমিয়ে পড়েছেন। সারাদিন শুয়ে বসে থাকতে থাকতে এখন আর পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াবার জন্য জোর পান না। ... ...
ভয় আর যন্ত্রণার ঠিকঠাক হিসেবের অভাবে থেমে / গেছে / এক প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পের উৎপাদন- আত্মহত্যা।
আমাদের এই সাধারণ গড়পড়তা জীবনে অর্থ এক ব্যাপক শব্দ। যার সীমানা এবং গুরুত্ব সত্যিই ব্যাপক। এর ব্যাপ্তি কতটা তা বোঝার জন্য অবশ্যই আমাদের বিল গেটস এর একটি সর্বজন গ্রাহ্য মন্তব্য মনে রাখতে হবে - "যখন তোমার পকেট ভর্তি টাকা থাকবে তখন শুধুমাত্র তুমি ভুলে যাবে যে 'তুমি কে', কিন্তু যখন তোমার পকেট ফাঁকা থাকবে তখন সমগ্র দুনিয়া ভুলে যাবে 'তুমি কে'" - বিল গেটস ... ...
বয়স তখন সবে ৩০ ছুঁয়েছে। এই বয়সে লোকে ভালো একটা চাকরিতে থিতু হতে চায়, সম্পর্কের জটিলতাগুলো থেকে নিজেকে মুক্ত করতে চায়, জীবনটাকে আরেকটু গুছিয়ে নিয়ে পরবর্তী দিনগুলোর জন্য পায়ের নিচে ভিত্তি ও মাথার ওপর ছাদ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে। অথচ জেফ বেজোস কিনা ওয়াল স্ট্রিট ফার্মের চাকরিতে ইস্তফা দিলেন। এত ভালো বেতনের চাকরিটা ছেড়ে বই বিক্রি করার আশায় পাড়ি জমালেন সিয়াটলে। ওয়াশিংটন স্টেট থেকে ১৯৯৫ সালে অনলাইন বুকশপ হিসেবে Cadabra, Inc. যাত্রা শুরু করল। কয়েক মাস পর অবশ্য জেফ নামটা পাল্টে ফেলেন। সেই থেকে বিশ্ববাসীর কাছে Amazon, Inc. নামেই কোম্পানিটি পরিচিত হয়। দীর্ঘ ২৭ বছরের পথচলায় সেই অনলাইন বুকশপ আজ বিশ্বের ... ...
গাড়ি থেকে নামতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্যবাহিনীর প্রতিনিধিরা আপ্যায়নে ভরিয়ে দিলেন। বুথে ঢুকে কলারটা একটু ঝেড়ে নিলাম। ম্যাজিস্ট্রেট পাওয়ার। ম্যাজেস্টিক বিষয়। পাওয়ার এক্সারসাইজ করার জন্য ঝাড়ু আর স্যানিটাইজার নিয়ে একটু কসরত্ করে নিলাম। বসব কোথায়? ঘরের ম্যাজিস্ট্রেট কি দাঁড়িয়ে থাকবে সারারাত? স্কুলে লো বেঞ্চ আছে। হাই বেঞ্চ নেই। কিন্তু একটা চেয়ার না থাকলে তো মুশকিল। ছাত্র বেঞ্চে বসলে কি শিক্ষক মাটিতে বসেন? ... ...
এখনও ভোর হয়নি বোধহয়। কিন্তু আমার বড্ড শীত করছে। পা দিয়ে লেপ বা কম্বল টানতে গিয়ে দেখছি পা অবশ, নড়ছে না। ঝিঁঝিঁ ধরেছে। সেটা হতেই পারে। ছোটবেলা থেকেই আমার এই রোগটা রয়েছে—অবশ্য যদি এটাকে কোন রোগ বলা যায়।
“নব বৎসরে করিলাম পণ”। আজ পয়লা বৈশাখ ১৪২৮। বাঙালির সাধের হালখাতা। এসো হে বৈশাখ, এসো এসো। চৈত্র শেষে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করার পর বৈশাখ এসে সামনে দাঁড়াতেই মন গেয়ে উঠলো – “আজি প্রাতে সূর্য ওঠা, সফল হলো কার”! শুভ বাংলা নববর্ষ।
অনেক অনেক দিনের টালবাহনার পর তিথির মা একদিন আমায় সত্যিই ডেকে পাঠালেন। সে একটা সময় ছিল, যখন আমি প্রায় রোজই ভাবতাম — আজ না হলে কাল বা বড়জোর পরশু কাকিমা আমায় ডাকবেনই ডাকবেন। তারপর ঘটনার গতিপ্রকৃতি এমন দিকে মোড় নিতে থাকল যে একসময় একরকম বাধ্য হয়েই সে আশা ত্যাগ করলাম। তারপর একসময় প্রায় ভুলেই যেতে বসেছিলাম। না, তিথিকে নয়। তিথির মা’কে। মানে তিথির মায়ের ডাকের কথা। ... ...
চৈত্র সেলের ক্রেতা বিক্রেতার মুখ গুলো দেখলে মনে হয় পৃথিবীতে এখনও এতো বেঁচে থাকা আছে, এতো দরদাম, পাখির বাসাকে সাজাতে, খড়কুটো জড়ো করার কত আয়োজন।
এসো নববর্ষ অর্ণবমেঘে, এই পৃথিবীতে আবার / যারা চলে গেছে, অকালে অঝোরে ঋতুচিহ্ন নিয়ে
রুক্ষ পৃথিবী কিছুক্ষণ হলো ক্ষীণ বরিষধারায় সিক্ত হয়েছে। আধভেজা মাটি থেকে অতৃপ্ত স্নানের উল্লাস।
পয়লা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষের সঙ্গে আমাদের পরিচয় শৈশব কাল থেকেই। বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে বছরের ১ম দিনটিকে বলা হয় পয়লা বৈশাখ। এখন সম্ভাব্য প্রশ্ন এটাই বাংলা নববর্ষ এর সূত্রপাত কিভাবে হয়েছিল .....মধ্যযুগের ভারতবর্ষে ইসলাম ধর্ম প্রবেশের সূচনা থেকেই হজরত মহম্মদ প্রবর্তিত হিজরি পঞ্জিকার প্রচলন শুরু হয়। পরবর্তীকালে দিল্লির দরবারে সুলতানী শাসকের সময়কালে হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে অর্থনৈতিক বছরকাল গণ্য করা হত, সেই সময় এক হিজরি বছরকাল এর মধ্যেই সমস্ত প্রজাদের রাজকর প্রদান বাধ্যতামূলক ছিল। ... ...
আজ আহ্লাদ ভরা নাম যে তার
খ্যাদরসিক বাঙালির এক দুর্বলতা হল বিরিয়ানি, মাংস আলু সহযোগে সে এক স্বর্গীয় অনুভূতি। কিন্তু খাদ্য ইতিহাসবিদরা এই মহান পদের কিন্তু কোন প্রকৃত উৎস আজও খুঁজে পান নি। যদিও ভারতে বাবর এর আগমনের পূর্বে বিরিয়ানি ছিল বলে অনেকে ধারণা করেন। তবে সেই বিরিয়ানি আর মাংসের খিচুড়িতে কোন তফাৎ ছিল না। আর একদল বলেন যুদ্ধপ্রবন তুর্কিরা দ্রুত প্রাতরাশ সেরে নেওয়ার জন্য চাল ও কাঁচা মাংস মিশিয়ে এক পদ প্রস্তুত করতেন যা কিনা বিরিয়ানির আদি রূপ। ... ...
‘‘দেখো, দুটি ডাল-ভাতের সংস্থান না রেখে বাংলাদেশে কেউ যেন সাহিত্য করতে না যায়।’’ এই কথাটা মন দিয়ে পড়লেন? হ্যা অবশ্যই পড়েছেন। যুগল উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে আছে মানে আরও ভালো করে পড়েছেন। কিন্তু বুঝেছেন কতখানি? না, আমি এসব কথা বলেছি ভাববেন না। কথাটি "পদ্মা নদীর মাঝি" বলেছেন। কথাটি "পুতুলনাচের ইতিকথা"-র সৃষ্টিকর্তা বলেছেন। হ্যাঁ, চেনেন নিশ্চয়? কথাটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন। ... ...