এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • প্রেম দেহ মন - পর্ব ১

    Sukdeb Chatterjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ২৬ আগস্ট ২০২৪ | ১৭৩ বার পঠিত
  • প্রেম দেহ মন
    শুকদেব চট্টোপাধ্যায়

    প্রথম অধ্যায়

    বিদিশা
    দেখতে দেখতে এই বাড়িতে  কেটে গেল অনেকগুলো বছর। প্রথম যেদিন একরাশ অনিশ্চয়তা নিয়ে এখানে পা রাখি  তখন ভাবতেও পারিনি একদিন এটাই হয়ে উঠবে আমার নিজের বাড়ি। যত সময় গড়াল,   আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেলাম স্নেহের বাঁধনে।    
    প্রতিদিন ভোরে  উঠে  আগে পিসির জন্য   চা  করে  নিয়ে গিয়ে  পাশে বসে একটু গল্পগুজব করি।  এটা আমার  সকালে  দেবী দর্শনের মত ব্যাপার।  দুজনের মধ্যে খানিক কাজের কথা খানিক মনের প্রাণের কথা হয়, তার পর দিনের  অন্যান্য কাজে হাত দিই। বয়স হলেও পিসি এখনও বেশ কর্মক্ষম। সেই কোন ভোরে উঠে স্নান করে পুজো করতে যান। পুজো করে ফেরার সময় একবার  দাদুভাইকে আদর করা চাই। দাদুভাই মানে আমার ছেলে অয়ন। অধিকাংশ দিনই ঐ সময় ও ঘুমিয়ে থাকে। কিন্তু দিদা এলে ঠিক টের পায়, কাছে টেনে খাটে বসিয়ে  জড়িয়ে ধরে আদর খায়।  সেই যখন ছোট্টটি ছিল তখন থেকে এই ব্যাপারটা চলে আসছে, এখন বড় হয়েও তাতে কোন ছেদ পড়েনি। যদি কখনও বলি “দামড়া ছেলে, কোলে শুয়ে আদর খেতে লজ্জা করে না! দিদার কষ্ট হচ্ছে উঠে পড়”,  সঙ্গে সঙ্গে দিদা নাতির হয়ে বলবে, “দাদুভাই, গার্লফ্রেন্ডের একটু আদর খাচ্ছিস,  তোর মার সহ্য হচ্ছে না”। দেখতে বড় ভাল লাগে। জন্মের পর থেকে পিসি সব সময়  আমার ছেলেটাকে আগলে রেখে ওর বড় হওয়াটা  আমার কাছে অনেক সহজ করে দিয়েছেন।  ছেলেটা এত বড় হয়ে গেছে তাও ওর  ছেলেমানুষি ভাবটা এখনো যায়নি।
    জীবন পথের প্রতিটি বাঁক উন্মোচিত করে এক একটা অচেনা নতুন দিগন্ত। উত্থান-পতন, হর্ষ-বিষাদ, ভাল-মন্দের  আস্বাদ নিতে নিতে কিছুটা যাওয়ার পর  পথটার সাথে যখন একটু সড়গড় হয়ে যাই  তখনই দেখি আর  একটা বাঁকের মুখে  দাঁড়িয়ে আছি।  ঘুরেই মুখোমুখি হতে হবে আবার  একটা অনিশ্চয়তায় ভরা সমস্যা সঙ্কুল নতুন পথের। একটু ভুল পদক্ষেপ হলেই বিপদ।  আমার জীবনে এটা অতিমাত্রায় বাস্তব।  এই  চলার পথে হারিয়ে গেছে আমার অনেক  অমুল্য সম্পদ। তবু  পিসির মত কিছু মানুষের  সান্নিধ্যে আর ভালবাসায় এই বন্ধুর পথের অনেকটাই মসৃণভাবে পার করে আসতে পেরেছি। অপ্রত্যাশিত ভাবে  মানুষগুলোর কাছে  পেয়েছি   নির্ভরতার আচ্ছাদন আর স্নেহের মধুর স্পর্শ।  পিসির  কাছে পেয়েছি অকৃত্রিম মাতৃস্নেহ। ওনার কথা যতই বলি না কেন কম বলা হবে।  আর একজন  হল পিসির নিজের ভাইঝি আর আমার অভিন্নহৃদয়  বান্ধবী অর্চনা, যার কাছে আমি  প্রতিটা পদক্ষেপে ঋণী। এছাড়াও অমিত, জয়িতাদির  মত আরো কিছু মানুষ আছেন যারা আত্মীয়  না হয়েও আমার আত্মার সাথে সম্পৃক্ত।
    আমার জীবনের সেরা সম্পদ হল অয়ন। ও আমার  আলোর দিশারী, আমার জিয়ন কাঠি।
    আজ একটু টেনশনে আছি, অয়নের মেডিক্যালের এন্ট্রান্সের রেজাল্ট বেরোবে। অবশ্য ছেলের এব্যাপারে  বিন্দুমাত্র টেনশন দেখতে পাচ্ছি না, অন্য দিনের মত দিব্যি ফুর্তিতে আছে। বেলা পর্যন্ত বিছানায় শুয়ে দিদার সাথে খুনসুটি হচ্ছে।  আমি ওকে বলেছি যে, যদি ডাক্তারিতে চান্স পায় তাহলে ও যা চাইবে তাই দেব। এমনিতে ওর কোন চাহিদা নেই, যা পায় তাতেই খুশি। কিন্তু এবার আমার কথা শুনে বলেছিল, “যা চাইব তাই দেবে? ভেবে বলছ ত?  পরে কিন্তু পিছিয়ে যেও না।” 
    --পিছিয়ে যাবার কথা বলছিস কেন, বললাম তো দেব। তা তোর কি চাই বল না।
    --আগে চান্স পাই তারপর বলব, এখন সাসপেন্স থাক।
    জানি না ছোঁড়া  কি চাইবে। অবশ্য ওকে আমার অদেয় কিছু নেই।    

    সুরভী 
    অমিতাভ হঠাৎ চলে যাওয়ার পর বড় একা হয়ে গেলাম। ‘পঞ্চান্ন’ যাওয়ার বয়স নয় তবু চলে গেল।  পরবর্তী  প্রজন্মের কাউকে তো আনতে পারিনি তাই কিছুটা অসহায়ও লাগতো। অবশ্য টাকাকড়ির কোন সমস্যা ছিল না, বরং তা প্রয়োজনের থেকে বেশিই ছিল। অমিতাভ ছিল মা বাবার একমাত্র সন্তান আর ওর নিকট আত্মীয় বলতে তেমন কেউ ছিল না।  আমার দিকে আমরা এক ভাই এক বোন। ভাই আমার থেকে অনেকটাই ছোট। আমি এমনই অভাগা যে তাকেও ধরে রাখতে পারিনি। অমিতাভ মারা যাওয়ার কয়েক বছর আগে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে মাত্র চুয়াল্লিশ বছর বয়সে স্বপ্না আর দুটো ছোট ছোট ছেলে মেয়ে অরূপ আর অর্চনাকে  রেখে সেও চলে গেছে। আমার বাপের বাড়ির অবস্থা ভালই তাই টাকা পয়সা নিয়ে ভাবতে  হয়নি। কিন্তু অকস্মাৎ  ওই অল্প বয়সে স্বামীকে হারিয়ে  দুটো সন্তানকে নিয়ে স্বপ্না দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। অরূপ তখন সবে কলেজে ঢুকেছে আর অর্চনা ক্লাস এইটে পড়ে। অমিতাভ যতদিন জীবিত ছিল অভিভাবকের মত  ওদের আগলেছে। প্রথমদিকে তো বেশ কিছুদিন ওদের সবাইকে  আমাদের বাড়িতে   এনে রেখেছিল। তার পর  একসময় ওরা নিজেদের বাড়িতে ফিরে গেছে। তখনও অমিতাভ  কখনও একলা কখনও আমাকে সাথে নিয়ে নিয়ম করে ওদের বাড়িতে খোঁজ খবর নিতে গেছে। স্বপ্না বড় ভাল মেয়ে। অমিতাভকে নিজের দাদার মতই ভালবাসত। অমিতাভ মারা যেতে তাই  স্বপ্নাও খুব ভেঙে পড়েছিল।   ওই দুর্দিনে  স্বপ্না আর আমার ভাইপো ভাইঝি সব সময় আমার  পাশে ছিল। ওরা ঘুরে ফিরে কেঊ না কেঊ আমার বাড়িতে  থাকত। অর্চনাই বেশি থাকত। আদরে, শাসনে, আহ্লাদে, আমাকে  ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করত।   আর আছে আমাদের দুঃসময়,  সুসময়, সবসময়ের সঙ্গী    বহুদিনের কাজের লোক গোকুল আর তার পরিবার। গোকুলের তিনকুলে কেউ নেই। বাবা ছোটবেলাতেই মারা গিয়েছিল। অমিতাভর  অফিসে ওর গ্রামের এক  প্রতিবেশী কাজ করত। মা মারা যেতে অনাথ কিশোরকে  ওই প্রতিবেশীই অমিতাভর কাছে নিয়ে এসেছিল কিছু একটা ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য।  আর সেই থেকেই এ বাড়িই ওর সব। অমিতাভই দেখে শুনে ওর বিয়ে দিয়েছে। শুধু বিয়েই নয় আমাদের বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে ওদের থাকার জন্য  ঘরও বানিয়ে দিয়েছিল। ওর বউ সন্ধ্যা মেয়েটাও খুব ভাল। ওরা পেয়েছে আশ্রয় আর আমরা পেয়েছি ভরসা করার মত সর্বক্ষণের সহচর।
    আনন্দে ভরা ছিল আমার সাতাশ বছরের নাতিদীর্ঘ দাম্পত্য জীবন। অমিতাভ ছিল প্রাণোচ্ছল দিলখোলা মানুষ। ওর মুখ ভার কখনও দেখিনি। অসুস্থ হলে বিছানায় শুয়ে শুয়েও মজা করত। আমার জীবনে একটা না পাওয়ার বেদনাকে  অনেক পাওয়া দিয়ে সব সময় আড়াল করে রাখার চেষ্টা করত। মাঝে একবার সন্তান দত্তক নেওয়ার কথা ভেবেছিলাম, কিন্তু মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে পারিনি বলে পিছিয়ে আসি। চলে যাওয়ার কয়েক বছর আগে একদিন অমিতাভ  ওর  মনোগত একটা বাসনার  কথা বলল--আমার ইচ্ছে আমাদের ফাঁকা  জমিটায় কয়েকটা ঘর করে   কিছু অনাথ ছেলেমেয়েকে এনে আশ্রয় দেব। খুব বড় আকারের কিছু করার সামর্থ্য নেই আর তার নিয়ম কানুনও অনেক, তাই গুটি কয়েক  বাচ্চাকে আনব। তুমি রাজি কিনা বল।
    দত্তক নেওয়ার ব্যাপারে মনকে বোঝাতে না পারলেও এক্ষেত্রে আপত্তি করিনি। এমন একটা ভাল কাজে আপত্তি করার প্রশ্নই ওঠে না, শুনে খুশিই হয়েছিলাম। বছর খানেকের মধ্যেই প্রশাসনিক আর আইনগত সম্মতি  নিয়ে শুরু হল ছোট্ট অনাথ নিবাস “আমার বাড়ি”। নামটা আমারই দেওয়া। “আমার বাড়ি”তে তিনটে ঘর। অতিথিরা মোট চারজন। চারটেই ছেলে।  সকলেই কিশোর, পরিকাঠামো না থাকায় একেবারে শিশু আনা যায়নি। ওদের দেখভাল করে আমার সারাদিন ভাল কাটত। গোকুল আর সন্ধ্যা বেশ আগ্রহের সঙ্গে সবসময় আমার পাশে থেকে সাহায্য করত। ছেলেগুলো জন্মের পর থেকেই অস্বাস্থ্যকর শারীরিক ও মানসিক পরিবেশে বড় হয়েছে, তাই প্রথমদিকে  আচার ব্যবহারে একটু বেয়াড়া ধরণের ছিল। কিন্তু নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে ভালবাসার ছোঁয়ায় কিছুদিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ বদলে গেল। চার জনকে  স্কুলে পাঠাবার ব্যবস্থাও করা হল। অমিতাভ অফিস থেকে ফিরে ওদের সাথে গল্প করে, লেখাপড়ায় সাহায্য করে, অনেকটা সময় কাটাত। কোথাও থেকে খবর পেয়ে একদিন একটা এন জি ও থেকে কয়েকজন লোক এল “আমার বাড়ি”র ব্যাপারে জানতে। সবকিছ দেখে শুনে তারা জানাল যে  কাজটা আর একটু বড় আকারে করতে পারলে  তবেই তাদের পক্ষে  সর্বতোভাবে এই কাজের সাথে যুক্ত হওয়া সম্ভব। আমরা ওদের ডাকিনি, ওরা নিজেরাই  এসেছিল। অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে আমাদের অপারগতা তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমাদের দুজনের কেউই নিজেদের সঙ্গতির বাইরে গিয়ে  কোন অনিশ্চয়তার মধ্যে যেতে চাইনি, তাই যেমন ছিলাম  তেমনই রইলাম। নিজেরাই সব দেখশোনা করতাম।
    অমিতাভ চলে যাওয়ার পর আমার বিপর্যস্ত, অস্থির মনকে কিছুটা শান্তির রসদ যোগাত “আমার বাড়ি”।

    বিদিশা
    আড়িয়াদহে একটা ভাড়া বাড়িতে আমরা  থাকতাম। আমরা  বলতে বাবা, মা, বোন আর আমি। বোন মায়া আমার থেকে সাত বছরের ছোট। আমি  জ্ঞান হওয়া থেকে ওই বাড়িতেই  থেকেছি।   বাবা বেসরকারি অফিসে কাজ করত। প্রাচুর্য না থাকলেও অভাব ছিল না, অন্তত বাবা কোনোদিন তা আমাদের বুঝতে দেয়নি। বাবা খুব ঠান্ডা মানুষ ছিল  আর  মা ছিল একেবারে বিপরীত,  খুব ডমিনেটিং চরিত্রের। আমাদের ওপর কড়া শাসন তো ছিলই বাবার ক্ষেত্রেও মাঝে মাঝে তা  প্রকাশ পেয়ে যেত। তবে বাড়িতে  যে মা বাবার মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি লেগে থাকত  তা কিন্তু নয়। কারণ ঝগড়ার জন্য দুটো পক্ষ লাগে। বাবা খুব কমই তরজায় যোগ দিত, ফলে মা খানিকক্ষণ গজগজ করে প্রত্যুত্তরের অভাবে চুপ করে যেত। আমরা দুই বোনই বাবা ঘেঁষা ছিলাম। লেখাপড়াতে দুজনেই  মোটামুটি ভাল ছিলাম। বোনের অনেক বন্ধু বান্ধব ছিল, বাড়িতেও আসত। আমি তেমনভাবে মিশতে পারতাম না তাই বন্ধুও ছিল হাতে গোনা কয়েকজন।  তার মধ্যে অর্চনা ছিল একেবারে প্রাণের বন্ধু। পাশের পাড়াতে ওদের পৈত্রিক বড় বাড়ি। যত মনের প্রাণের কথা আমরা নিজেদের মধ্যে শেয়ার করতাম। আমরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও আমাদের চরিত্র ছিল একেবারে বিপরীত ধরণের। ও হৈ হট্টগোল মৌজ মস্তিতে থাকতে ভালবাসত। স্বাভাবিক ভাবেই বন্ধু বান্ধবও ওর  অনেক ছিল। ভেবে চিন্তে কোন কাজ করা স্বভাবে ছিল না। এর জন্য স্কুলে আর বাড়িতে অনেকবার বকা খেয়েছে। স্কুলের  শেষদিকে নিজের জীবনের ক্ষেত্রেও  একবার একটা ভুল পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেছিল। কপাল ভাল অল্প দিনের মধ্যেই  বখাটে ছেলেটার সংস্পর্শ থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল।  অর্চনা  আমাদের বাড়িতে মাঝে মাঝে আসত, তবে আমিই ওদের বাড়িতে বেশি যেতাম। কাকু আর কাকিমা দুজনেই আমাকে খুব ভালবাসতেন।  আমরা যখন ক্লাস এইটে পড়ি তখন কাকু মারা যান। সুস্থ সবল মানুষ একেবারে হঠাৎ চলে গেলেন। কাকু মারা যাওয়ায় খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। কাকু গত হওয়ার পর মা আর  দাদাকে নিয়ে অর্চনাদের তিনজনের সংসার। দাদা ওর থেকে কয়েক  বছরের বড়। বিএ পাশ করে খুব অল্প বয়সেই চাকরি পেয়ে বাইরে চলে  গিয়েছে। পুনের আশেপাশে কোথাও থাকে। দাদা বাইরে যাওয়ার পর  বাড়িতে কেবল মা আর মেয়ে। কলেজ জীবনের মাঝামাঝি সময়  একদিন অর্চনাদের বাড়িতে  গল্প করতে করতে কাকিমা আমাকে নিজের পুত্রবধু করার ইচ্ছে প্রকাশ করে আমার মত জানতে চাইলেন। আমি কিছু বলার আগেই অর্চনা  আদেশের স্বরে বলল, “ও কি বলবে, আমি বলছি মা তুমি দাদার সাথে কথা বল”। আমি হ্যাঁ বা না কিছুই বলিনি বা বলা ভাল অর্চনা   বলার সুযোগ দেয়নি। পরে বাড়ির ছেলের সাথে মা আর মেয়ে দুজনেই এই ব্যাপারে আলাদা আলাদা ভাবে  কথা বলেছিল। প্রথমে একথা সেকথা বলে পাশ কাটালেও পরে  জানা গিয়েছিল  যে ওর একটা পছন্দের মেয়ে আছে। ফলে ব্যাপারটা ওখানেই ইতি হয়ে যায়।
    ওর মা ছিল আমার মায়ের একেবারে  বিপরীত, খুব  ঠান্ডা আর ভালমানুষ। কাকিমার  দারুণ   রান্নার হাত ছিল। তখন কলেজে থার্ড ইয়ারে পড়ি। অর্চনা  এক  রোববার  দুপুরে ওদের  বাড়িতে  আমাকে খেতে বলে গেল।   অবশ্য
    এটা নতুন কিছু নয়, ভাল কিছু রান্না হলেই আমার ডাক পড়ত। যথা সময়ে পৌঁছে দেখি ওবাড়িতে একজন অতিথি  এসেছে। ছেলেটিকে আগে কোনদিন দেখিনি।  অর্চনা ওর মামাত দাদার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। অর্চনার  নিজের কোন মামা নেই, তন্ময় ওর মার পিসতুতো দাদার ছেলে। দাদা হলেও তন্ময়কে  ও নাম ধরেই ডাকত। একটু আড়ালে গিয়ে  অর্চনাই সংক্ষেপে সব তথ্য দিল। তন্ময় ওর  থেকে বছর খানেকের বড়। যাদবপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। ফাইনাল ইয়ার। লেখাপড়ায় দারুণ ভাল আর ব্যবহারে খুব লাজুক আর মুখচোরা। বড়লোকের ছেলে, মা বাবার একমাত্র সন্তান। বাবা সরকারি অফিসে বড় অফিসার। তথ্য সরবরাহ করার  পর এও জানাল যে আমার আগ্রহ থাকলে ও কেসটা  দেখতে পারে। ছেলেটা যে মুখচোরা তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই, কারণ আমার সাথে তো প্রশ্নই নেই ওর বাড়ির লোকের সাথে কটা কথা বলল তা হাতে গোনা যায়। তবু  সেদিন বাড়ি ফিরে আসার পরেও ওই লাজুক  মেধাবী সুদর্শন ছেলেটা সারাক্ষণ মনের মধ্যে ছেয়ে রইল।
    চলবে
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ২৬ আগস্ট ২০২৪ | ১৭৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন