এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • প্রেম দেহ মন - পর্ব ২  

    Sukdeb Chatterjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ২৭ আগস্ট ২০২৪ | ১৬৫ বার পঠিত
  • পর্ব-২  

    অর্চনা

    একেবারে শিশুকাল থেকে আমি আর বিদিশা একসাথে পড়াশুনা করেছি। মজার ব্যাপার বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এই ব্যাপারটা থেকে গিয়েছিল। আসলে আমরা পরস্পরের খুব ভাল বন্ধু তাই পড়াশোনার বিষয় নির্বাচনের থেকেও আমার  কাছে অগ্রাধিকার পেয়েছে একসাথে থাকার ব্যাপারটা। বিদিশা  ওর পছন্দের বিষয় বাংলাতে অনার্স নিল, আমিও আর দেরী না করে বাংলাতেই অনার্স নিলাম।  বিদিশা খুব ঠান্ডা আর ভাল মেয়ে, কিছুটা অন্তর্মুখীও বটে। আর পড়াশোনাতেও বেশ ভাল। আমি  কোনটাই নয়। আমার মত বহির্মুখী আর আমার মার ভাষায় ‘বাচাল’ মেয়ের সাথে ওর যে কি করে বন্ধুত্ব হল সেটাই ভাবি। শুধু বন্ধুত্ব  হওয়াই নয় এতদিন ধরে তা মসৃণভাবে  বজায় আছে। আমার বন্ধু বান্ধবের সংখ্যা অনেক। আমার মত মেয়ের সেটাই স্বাভাবিক। তবে বিদিশার জায়গা সকলের থেকে আলাদা। ও আমার  প্রাণের বন্ধু, ‘জিগরি দোস্ত’। দুজনেই দুজনের সব কিছু জানি। আমি তো একটু পাকা মেয়ে তাই ক্লাস টেনে   পড়ার সময়েই  একটা ছেলের প্রেমে পড়েছিলাম।  হঠাৎই পরিচয়, আগে কখনও দেখিনি। একদিন স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফেরার পথে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল। বিনা নোটিশে বৃষ্টি,  সঙ্গে ছাতা ছিল না  তাই  ভিজতে ভিজতেই হাঁটছি। হঠাৎ কানে এল “এহে নিজে তো ভিজছই বইখাতাও  সব ভিজে যাচ্ছে যে। এই নাও আমার ছাতাটা নিয়ে বাড়ি যাও”। তাকিয়ে দেখি সাইকেলে বসা বছর কুড়ি বাইশের একটা ছেলে নিজের ছাতাটা আমার দিকে এগিয়ে ধরে আছে। আমাকে হ্যাঁ করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ছেলেটা বলল “কিন্তু কিন্তু  না করে ছাতাটা ধর। সাথে বইপত্র না থাকলে ছাতার দরকার ছিল না, বাড়িতে গিয়ে  ভিজে জামা কাপড় পাল্টে নিলেই মিটে যেত। কিন্তু বইটই সব ভিজে গেলে ওগুলো তো আর ব্যবহারই করতে পারবে না”।  কথাটায় যুক্তি আছে। তবে ছেলেটাকে চিনি না জানি না তাই ছাতাটা নিতে একটু সঙ্কোচ হচ্ছিল।  জিজ্ঞেস করলাম, “ছাতাটা ফেরত দেব কি করে?”।
    বলল-  পোস্ট অফিসের মোড়ের  কাছে দাঁড়িয়ে থাকব, কালকে ছুটির পর দিয়ে দিও।
    ধন্যবাদ জানিয়ে ছাতাটা মাথায় দিলাম আর ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে সাইকেল চালিয়ে দুলতে দুলতে দূরে চলে গেল।  দুলিয়ে দিয়ে গেল আমার কিশোর হৃদয়।
    পরদিন বৃষ্টির ছিটেফোঁটা নেই অথচ আমার হাতে একটা ছেলেদের ছাতা দেখে স্কুলে অনেকেই ঘুরে ঘুরে দেখল। আমার পক্ষে সবই সম্ভব এটা অনেকেরই জানা থাকায় খুব একটা প্রশ্ন কেউ করেনি। স্কুল ছুটি হতে এদিক ওদিক করে সময় কাটিয়ে একটু দেরী করে বেরলাম, যাতে ছাতা লেনদেনের কোন সাক্ষী না থাকে।  ছেলেটা পোস্ট অফিসের পাশে একটা গাছতলায় দাঁড়িয়েছিল। ছাতাটা দেওয়ার সময় অল্প কথা হল। তাতেই জানলাম, নাম সমীর,  বাড়ি কিছুটা দূরে বরানগরে, মাঝে  মাঝে পড়াশুনোর কারণে এ দিকে কোন অধ্যাপকের কাছে আসে। ওর  কথাবার্তায় প্রভাবিত হলাম। পরের মোলাকাতের স্থান ও কাল জানাতে খুশি হয়েই সম্মতি দিয়েছিলাম।  
    আমার চোখে না পড়লেও বিদিশা আমাদের দেখেছিল। পরদিন স্কুলে আমাকে সতর্ক করে বলেছিল “একটু সাবধানে মেলামেশা করিস”। ছেলেটাকে দেখে কি বুঝে ও অমন বলেছিল জানি  না। ওই বয়সে আবেগের চশমায় সব কিছুই রঙিন লাগে, ভাল মন্দ বিচার করার ক্ষমতা বা ইচ্ছে কোনটাই থাকে না। বিদিশার  কথায় তখন খুব একটা গুরুত্ব  দিইনি। ছেলেটা বনেদি ঘরের, দেখতে মন্দ নয়, কলেজে পড়ে, প্রেম করার জন্য এর থেকে ভাল আর কি চাই।  যদিও চেহারা ছাড়া বাকি সব  কটা তথ্যই ছেলেটার দেওয়া তবু  তা অবিশ্বাস করতে টিন এজের মন সায় দেয়নি। সৌভাগ্যের কথা ওই প্রেমপর্বে অল্পদিনেই ইতি পড়ে। একদিন অঙ্ক স্যারের কোচিং থেকে  বাড়ি ফিরতে একটু দেরী হয়ে গেল। দিনের আলো প্রায় নিবু নিবু। আম বাগানটা পার হওয়ার সময় কানে এল “ডার্লিং, এই সন্ধ্যেবেলা কোথায় গিয়েছিলে ডার্লিং?”।  এদিকটায় বসতি কম, লোক যাতায়াতও  তেমন একটা নেই। চেনা গলা, তাকালাম। সঙ্গে আর একটা ছেলে। সমীর ইশারায় আমাকে দেখিয়ে পাশের ছেলেটাকে কিছু একটা বলল। ছেলেটার মন্তব্য কানে এল, “আরে গুরু কি মাল তুলেছিস! একেবারে কুঁড়ি, এখনি এই ফুটলে কি হবে রে মাইরি?”। বুঝলাম দুজনেই  নেশা করেছে। কথাবার্তাও ছোটোলোকদের মত। এমন একটা ছেলের সাথে মিশছি ভেবে নিজের ওপরেই ঘেন্না হল। সম্পর্কে ওই মুহূর্তেই ইতি টেনে দিলাম। পরে কাকুতি মিনতি করে, দুঃখপ্রকাশ করে, নানাভাবে চেষ্টা করেছিল আমার মন গলাবার কিন্তু লাভ হয়নি। তার পরেও বেশ কিছুদিন পিছনে পিছনে ঘুরত।  আমার দাদা ছিল পাড়ার খুব জনপ্রিয় ছেলে, কিছুটা মাতব্বরও। আমার দাদাকে জানিয়ে দেব বলে ভয় দেখাতে আর আসেনি। পরে খবর নিয়ে  জেনেছিলাম যে ওর  নিজের সম্বন্ধে দেওয়া কোন তথ্যই সঠিক নয়। নিজেকে সংযত করার জন্য একটা ধাক্কা আমার দরকার ছিল। না হলে যে কোন সময় একটা বড় কোন বিপদে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ওই ঘটনার পর বহুদিন শত প্রলোভানেও আর কোন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়িনি। দুই বন্ধুতে কলেজে ভর্তি হলাম।  নতুন পরিবেশে মৌজ মস্তির অফুরন্ত সম্ভার। আমার মত মেয়ের একেবারে আদর্শ জায়গা।  নানা দিকে নানান আমোদের হাতছানি। তবে একটা বাঁচোয়া কলেজটা শুধু মেয়েদের, কো-এড নয়। তাই প্রমোদ তরীর বিপদ সীমা লঙ্ঘন করার সম্ভাবনা ছিল না। ।
    মনে  আমার অনেক দিনের  একটা গোপন বাসনা  ছিল।  কখনো তা কারো সাথে শেয়ার করিনি,  বিদিশার সাথেও না। মাকে একদিন বললাম। শুনে মা আনন্দে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল “আমারও খুব ইচ্ছে রে বিদিশাকে খোকার বউ করে এ বাড়িতে আনার। অমন ভাল মিষ্টি মেয়ে সাতপাড়া খুঁজলেও পাব না। এবার বিদিশা এলে কথাটা পাড়ব”। কিন্তু ইচ্ছেটা বাস্তবায়িত হল না। দুজনের সাথেই এব্যাপারে কথা বলা হল। বিদিশার মতামত নিয়ে তেমন একটা চিন্তা ছিল না, কারণ ওটা অনেকটাই  আমার কন্ট্রোলে। বাধ সাধল দাদা। অনেক ধানাই পানাই এর পর জানা গেল বাবু প্রেম করেন। এতদিনের ইচ্ছে মাঠে মারা গেল।
    কলেজের গণ্ডী পার হতে আর বেশি দেরী নেই। মাস ছয়েক বাদে ফাইনাল পরীক্ষা। পড়াশোনার একটু চাপ রয়েছে। বিশেষ করে আমার মত পড়ুয়ার, সারা বছর যাদের বইয়ের সাথে দেখা সাক্ষাৎ কম হয়। এরই মাঝে আমাদের দুই বন্ধুর জীবনে কিছু সময়ের ব্যবধানে ঘটল দুটো উল্লেখযোগ্য ঘটনা। বিদিশারটা অবশ্য নিজে থেকে ঘটে নি। আমি অনুঘটক হয়ে ঘটিয়েছি। প্রাণের বন্ধুকে পারিবারিক বাঁধনে বাঁধতে চেয়েছিলাম কিন্তু দাদা তাতে জল ঢেলে দিয়েছিল।  তার পরেও মনের গভীরে ইচ্ছেটা বোধ হয় গোপনে বাসা বেঁধে ছিল। বিদিশা আর  সম্পর্কে আমার মামাতো ভাই তন্ময়কে একইদিনে আমাদের বাড়িতে পেয়ে ইচ্ছেটা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। দুজনকেই আলাদা আলাদা ভাবে বাজিয়ে দেখে বুঝলাম আগ্রহ আছে। আগ্রহটা নানাভাবে উস্কে দিলাম। কিন্তু সমস্যা হল দুটোই মুখচোরা। বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করার পর দেখলাম মনে  মনে ইচ্ছে থাকলেও দুই ক্যাবলকান্ত স্টারটিং পয়েন্টেই দাঁড়িয়ে আছে, এক পাও এগোতে পারেনি। অগত্যা আমিই উদ্যোগ নিয়ে প্রেমের ভিতটা গেঁথে দিলাম। কিছুদিনের মধ্যে জানতে পারলাম যে দুই মুখচোরা মুখোমুখি হয়ে মন দেওয়া নেওয়ার খেলায় মসগুল হয়ে আছে। ইচ্ছে পূরণ হওয়াতে মনটা খুশিতে ভরে গেল।
    একদিন দুপুরবেলা খেয়েদেয়ে কলেজ থেকে পার্ট টু পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড আনার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছি। বাইরে যেমন গরম তেমনি আদ্রতা, রাস্তায় লোকজন খুব একটা নেই। খুব ঠেকায় না পড়লে এই গরমে কেউ বেরোয় না। বিটি রোডে এসে জলের বোতলটা বার  করে এক ঢোঁক গলায় ঢাললাম। “কাইন্ডলি আমাকে একটু জল দেবেন”, তাকিয়ে দেখি এক যুবক কাতরভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। জলে কখনো না করতে নেই, বোতলটা  বাড়িয়ে দিলাম। সামান্য খেয়ে আমায় আবার ফেরত দিল। ওর অবস্থা দেখে আমার মায়া হল। বুঝলাম ওইটুকু জল খেয়ে ওর তেষ্টা মেটেনি।  আমি আবার বোতলটা ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম,  “বাকি জলটাও খেয়ে নিন, দেখে মনে হচ্ছে আপনার খুব তেষ্টা পেয়েছে”। খুব লজ্জায় পড়ে গিয়ে ছেলেটা  বলল, “না না তা কি করে হয়? আমি সব জল খেয়ে নিলে  আপনার অসুবিধে হবে”। আমি অল্প সময় পরেই বাড়ি ফিরে আসব এটা  জানিয়ে জোর করেই বোতলটা ওর হাতে  দিলাম। অনেক ধন্যবাদ দিয়ে জল খেয়ে  খালি বোতলটা ফেরত দিল। একটা এসপ্ল্যানেডগামী বাসে আমার পিছন পিছন ছেলেটাও উঠল। স্বল্প আলাপচারিতায় জানাল—-আমার  নাম অমিত, অমিত  চক্রবর্তী। এম্বিবিএস পাশ করে এখন মেডিক্যাল কলেজে ইন্টার্নি। প্রয়োজন পড়লে আসবেন,   ইমারজেন্সিতে গিয়ে আমার নাম বললে কোন ডিপার্টমেন্টে আছি বলে দেবে।  ঘটনাটা ভুলেই গিয়েছিলাম।  এর মাঝে কলেজের গণ্ডী পার হয়ে ইউনিভার্সিটিতে ঢুকেছি  বিদিশাও সাথে আছে। আমাদের ডিপার্টমেন্ট কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে। একদিন ক্লাস শেষে মেডিক্যাল কলেজের সামনে দিয়ে আসছি, দেখি ওই ছেলেটা, কি যেন নাম কি যেন নাম.. হ্যাঁ অমিত, গেট দিয়ে  ভেতরে ঢুকছে। ছেলেটা সত্যিই ডাক্তার কিনা জানার জন্য কৌতুহল হল। অকারণ কৌতুহল, তবু ওকে ফলো করে ভেতরে ঢুকলাম। মিথ্যে বলেনি, ইমারজেন্সির ভেতরে ঢুকে গেল। চারিদিকে রুগীর লোকজনে থিকথিক করছে। একপাশে এক মাঝ বয়সী মহিলা আর একটা  ছেলে খুব কান্নকাটি করছে, কিছু লোক তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছে। হয়ত কোন আপনজনকে হারিয়েছে। রাস্তার ওপাশে একটা অল্প বয়সী বৌ কোলে সদ্যজাত সন্তানকে নিয়ে একটা ট্যাক্সিতে উঠছে। তাকে ঘিরে রয়েছে কতগুলো আনন্দে ভরা মুখ। একই জায়গায় যাওয়া আর আসা একই ছন্দে  চলছে। অন্যমনস্ক হয়ে  একটু দাঁড়িয়ে ছিলাম হঠাৎ “আরে ম্যাডাম আপনি এখানে কি করছেন?” শুনে চমকে তাকালাম। দেখি হাসি হাসি মুখে অমিত দাঁড়িয়ে রয়েছে।  জিজ্ঞেস করল—আপনার কেউ কি এখানে ভর্তি আছে? 
    আসল কারণ তো ওকে বলা যাবে না তাই বললাম—না না এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম, এমনি একটু ভেতরে ঢুকে দেখছিলাম।
    হেসে বলল—হাসপাতালে লোকে ঠেকায় পড়ে আসে, বেড়াতে আসতে আগে কাউকে দেখিনি। যাক চলুন কফি খাওয়া যাক।
    --আপনার ডিউটির কি হবে?
    -- এই তো শেষ করে বাইরে এলাম। বাইরে এসেই শ্রীমুখ দর্শন হল। ওপারের ওই কোনার দোকানটায় দারুণ শিঙাড়া আর তেলেভাজা  ভাজে। একবার খেলে যে বয়সে আছেন সেখানেই থেকে যাবেন। দোকানের নামটা সেকেলে হলেও জিনিস একেবারে জম্পেশ।
    হাসতে হাসতে ওকে অনুসরণ করলাম। কফি আর শিঙাড়া খেতে খেতে অনেক গল্প হল। জানলাম তখন ও  হাউসস্টাফ।   
    আমি পাশেই ইউনিভার্সিটিতে পড়ি  শুনে বলল “তাহলে তো মাঝে মাঝে দেখা হতেই পারে”।
    প্রথম প্রেমের ঘটনাটা আমাকে অনেক সতর্ক আর সংযত করেছিল। কলেজ আর ইউনিভার্সিটিতে অনেক প্রলোভনের হাতছানি  হেলায় পাশ কাটিয়েছি। অমিতের কথা বলার ধরণ, সারল্য আর রসবোধ আমার খুব ভাল লাগল।  তার নিজের সম্বন্ধে প্রথমদিন যা বলে ছিল তাতে কোন ভ্যাজাল ছিল না।  চেহারা, আচার-আচরণ, শিক্ষা, সব কিছু মিলে মানুষটা আমাকে প্রভাবিত করল।  বিকশিত বয়সের অভিজ্ঞ  মনের থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে অমিতকে জানিয়েছিলাম, “দেখা মাঝে মাঝে হতেই পারে”। 

    বিদিশা
    তন্ময়কে নিয়ে ক’দিন তন্ময় হয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু সবটাই মনে মনে। সাহস করে মাঠে নামতে পারিনি। আর অপর পক্ষকে সেদিন যা দেখলাম, আমার থেকেও করুণ অবস্থা। যোগাযোগের অভাবে  কিছু সময় পরে  তন্ময়ের প্রতি  মনের গভীরে তৈরি হওয়া আকর্ষণ  ধীরে ধীরে  ফিকে হতে থাকল।  বিএ ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে বসে আছি রেজাল্টের অপেক্ষায়। অখণ্ড অবসর। তন্ময়ের ব্যাপারটা তখন আর অতটা মাথায় নেই।  একদিন ম্যাটিনি শো এর তিনটে টিকিট নিয়ে অর্চনা হাজির। যাওয়ার সময় বলে গেল—দুটোই তো হাঁদারাম, তাই বাধ্য হয়ে আমায় মাঠে  নামতে হল। প্রথম দিন বলে  একটু সড়গড় করে দেওয়ার জন্য যাচ্ছি, রোজ কিন্তু পাবি না।  মনে রাখিস, এ খেলায় কোন  রেফারি থাকে না।
    তখন সিনেমাহলগুলো এখনকার মত কোলকাতার বুক থেকে মুছে যায়নি। এদিক ওদিক দু একটা করে  হল বন্ধ হচ্ছিল বটে তবে তখনো পুরো মড়ক লাগেনি। অনেক ভাল হল তখনো টিকে ছিল। ‘এলিট’  হলে একটা ইংরাজি বইয়ের টিকিট কেটেছে। বাড়িতে মিথ্যে কথা বলে দুরু দুরু বুকে যথা সময়ে যথাস্থানে পৌঁছলাম। ওরা আগেই পৌঁছে গেছে। তন্ময়ের দুপাশে আমি আর অর্চনা বসলাম। বুঝে শুনেই টিকিটটা কাটা হয়েছে। বেশ কড়া পাকের অ্যাডাল্ট বই। অন্ধকারে একটা সময় তন্ময় আলতো করে ওর হাতটা আমার হাতের ওপর রাখলো। শরীরে কেমন একটা শিহরণ খেলে গেল। সংকোচ হলেও ভাল লাগছিল। সেদিনে প্রাপ্তি ওটুকুই। ওই ম্যাটিনি শোই ছিল  আমাদের যাবতীয় আড়ষ্টতা কাটিয়ে পরবর্তী সময়ে পরস্পরের কাছাকাছি আসার প্রথম পদক্ষেপ। যাওয়ার সময় অর্চনা বলে গিয়েছিল— কোন হেল্প এর দরকার হলে আমায় সব সময় পাবে, তবে গাড়ি স্টার্ট নিয়ে নিয়েছে তো  আর মনে হয় ঠেলতে হবে না।
    তন্ময়ের মত এমন শিক্ষিত, বিনয়ী, মার্জিত ছেলেকে  যে কোন মেয়েই তার জীবনে কামনা করে।   আমাদের দেখাসাক্ষাৎ খুব ঘন ঘন না হলেও মাঝে মাঝে হত। সাধারণত এমন জায়গায় যেতাম যেখানে চেনা লোকের সাথে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা কম।  একবার   সিনেমা হলেও গিয়েছিলাম, কিন্তু সুবিধে হয়নি। সিনেমা দেখতে তো যাই নি,  গিয়েছিলাম  দু দন্ড পাশাপাশি বসে একটু গল্প করতে। ওখানে লোকে বকতে নয় দেখতে যায়, তা অল্প সময়েই  বুঝতে পেরেছিলাম আশপাশ থেকে উড়ে আসা কান জ্বালানো তির্যক মন্তব্যে।  বাধ্য হয়ে সিনেমা শেষ হওয়ার অনেক আগেই হল থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। কয়েকবার দূরের কোন বাসে উঠে গল্প করতে করতে  ঘন্টা খানেক গিয়ে তারপর নেমে পড়ে  ফেরার বাস ধরেছি। কোন বিশেষ জায়গা নয়, এক ঘন্টা বা সওয়া ঘন্টায় বাস যেখানে পৌঁছতে পারে আন্দাজ করে সেইরকম কোন জায়গার টিকিট কাটতাম। অচেনা রুট হলে কনডাক্টর সাহায্য করত। দেখতে দেখতে  দু বছর কেটে গেল। অর্চনাকে  সাথে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডীটাও পার হয়ে গেলাম। তন্ময় এবার এম টেক দেবে। বি টেক পাশ করার পর অনেক ভাল  ভাল চাকরির অফার পেয়েছিল কিন্তু খানিকটা বাড়ির আর বেশিটা আমার ইচ্ছেতে ও এম টেকে ভর্তি হয়েছিল। এত ভাল রেজাল্ট, আমি চেয়েছিলাম ও মাস্টার্সটা করুক।  ভর্তি হয়ে এসে বলেছিল, “কি খুশি  তো?” আনন্দে আমার চোখে জল এসে গিয়েছিল।
    একদিন বলল—সামনের রোববার তোমাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাব। মা তোমায় দেখতে চেয়েছে।
    --তার মানে আমাদের ব্যাপারটা বাড়িতে জানিয়ে দিয়েছো।
    --হ্যাঁ! অসুবিধে কোথায়? আমার পছন্দের একটা মেয়েকে ভালবাসি, এতে তো কোন  অন্যায়  নেই। পাশ করে চাকরি পেয়ে প্রথম কাজ হবে আমাদের বিয়ে। অনেক আড়াল আবডালে ঘুরেছি আর না। তাই আগেভাগেই বাড়িতে জানিয়ে রাখলাম। মাকে বলেছি, মার থেকে বাবার কানে এতদিনে নিশ্চই চলে গেছে। মা শুনেই বলল, “একদিন নিয়ে এসে আমার সাথে আলাপ করিয়ে  দে। ছেলের পছন্দটা একটু দেখি”। 
    --বলে ভালই করেছ। আমি তো সাহস করে এখনও বলতেই পারিনি। তোমার বাবা আমার ব্যাপারে  কিছু জিজ্ঞেস করেননি?  
    -- না আমাকে সরাসরি কিছু জিজ্ঞেস করেনি, মাকে হয়ত করেছে। ওদিন বাবাও বাড়িতে থাকবে,  তবে তোমাকে নিয়ে মার আগ্রহটাই বেশি।
    পরের রোববার তন্ময়ের সাথে ওদের বালিগঞ্জের বাড়িতে গেলাম। আগেকার দিনের বড় বাড়ি। মূল ফটক থেকে ঢুকে সুন্দর একটা বাগান পেরিয়ে বাড়ির দরজা। পাশে গ্যারেজে দুটো গাড়ি রয়েছে, দেখে তো বেশ দামীই মনে হল। বেল বাজাতে একজন মাঝ বয়সী লোক দরজা খুলে  দিল। আচরণে মনে হল বাড়ির কাজের লোক।  ঢুকেই  বড়সড় বৈঠকখানা। পরিপাটি করে সাজান ঘরের পরতে পরতে  বনেদিয়ানার ছাপ। ওখানে আমাকে বসিয়ে তন্ময় ভেতরে গেল। একটু পরেই এক প্রৌঢাকে প্রায় বগলদাবা করে  নিয়ে  এল। বুঝলাম ওর মা। এও বুঝলাম যে মার সাথে ছেলের সম্পর্ক খুব মধুর, অবশ্য সেটাই তো স্বাভাবিক। খুব রূপবতী মহিলা। ধবধবে ফর্সা গায়ের রং। ছেলে যতই ভাল দেখতে হোক, মায়ের কাছে কিছুই না। পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম , জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করলেন। সঙ্গে করে ভেতরে নিয়ে গিয়ে বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখালেন। আমাদের মত নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ের কাছে সে এক স্বপ্নপুরি। স্টাডিতে গিয়ে তন্ময়ের  বাবার সাথে দেখা হল। দেখেই মনে  হল রাশভারী মানুষ। কাকিমা পরিচয় করিয়ে দিতে ঢিপ করে একটা পেন্নাম করলাম। আশীর্বাদের বাহুল্য বর্জন করে গম্ভীর গলায় ভাববাচ্যে প্রশ্ন করলেন—কি করা হয়?
    বললাম—এম এ পাশ করেছি।
    --সে তো হয়ে গেছে, এখন কি করা হয়?
    কাকিমাই আমার হয়ে উত্তর দিলেন—কি আবার করবে? এই তো কিছুদিন আগে রেজাল্ট বেরিয়েছে। ক’দিন একটু আনন্দ করুক তারপর ভাববে কি করা যায়। 
    দু এক কথার পর কাকিমার সাথে চলে এলাম বা বলা ভাল পালিয়ে এলাম । অনেকটা ছোটবেলায় দেখা বাংলা সিনেমার কমল মিত্র। কাকিমাকে দেখে যতটা ভরসা পেলাম ওনাকে  দেখে ততটাই ভয়।
    সেদিন কাকিমা যত্ন করে অনেক কিছু খাওয়ালেন। ফিরে আসার আগে ভাবি পুত্রবধূকে অনেক আদর করে বললেন—এবার তো চিনে গেলি, মাঝে মাঝে চলে আসবি। কারো সঙ্গে আসার দরকার নেই, একাই চলে আসবি।
    স্নেহময়ী মা, অনেকটা অর্চনার মায়ের মত।  বুক ভরা তৃপ্তি নিয়ে সেদিন বাড়ি ফিরেছিলাম। কমল মিত্রের ব্যাপারটা মাথায় থাকলেও নিশ্চিত ছিলাম যে কাকিমাই তাঁর স্নেহের বেষ্টনী দিয়ে যাবতীয় শাসন থেকে আমাকে আগলে রাখবে।
    তন্ময় আমাকে এগিয়ে দিতে এসে জিজ্ঞেস করল, “কেমন লাগল?”।
    জিজ্ঞেস করলাম-কোনটা?
    বলল—সবকিছু।
    আমি বললাম— এত সুন্দর বাড়ি ভাল ত লাগবেই  তবে বাড়ির থেকেও বেশি ভাল লেগেছে কাকিমাকে।  এই সামান্য সময়ে উনি আমাকে কত আপন করে নিলেন। এত আদর যত্ন ভোলার নয়।
    --আর আমার বাবা?
    --বেশি কথা তো হয়নি, কি মতামত দেব! তবে খুব গম্ভীর, বোধহয় রাগীও। কথা বলার সময় একটু ভয় ভয় করছিল। অবশ্য কাকিমা পাশে থেকে সব সামলে দিয়েছেন।
    --বাবা রাশভারী মানুষ। আপাদমস্তক সাহেব। অফিসেও সাহেব, বাড়িতেও সাহেব। হাতে গোনা কয়েকজন বন্ধু আছে যাদের সাথে মাঝে সাঝে  বাবাকে গল্প করতে দেখেছি। বাড়িতেও বইপত্র নিয়ে নিজের মত থাকে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথাবার্তা বিশেষ বলে না। কেবল আমার একমাত্র মামা অর্থাৎ  নিজের  শালাবাবু এলেই বাবা মানুষটা পুরো পাল্টে যায়। সারাদিন মামার সাথে আড্ডা আর গল্পে মেতে থাকে। বাবার এই সুন্দর স্বাভাবিক রূপটা মামা চলে গেলেই আবার হারিয়ে যায়। মামাকে বলি “কোন মন্ত্রবলে ওই গম্ভীর মানুষটাকে সারাদিন হাসি আড্ডায় মজিয়ে রাখ আমাদের একটু বলে দাও না, আমরাও চেষ্টা করে দেখি”। মামা হাসতে হাসতে বলে, “কোন মন্ত্র নয় রে, আসলে তোর বাবার সাথে আমার ব্রেন এর ওয়েভ লেন্থটা প্রথম থেকেই ম্যাচ করে গেছে”। যাক বাবা যেমনই হোক ভয় পাওয়ার মত কোন ব্যাপার নেই, এখন থেকে যেন নার্ভাস হয়ে যেও না।  আমার বাড়ি  তো হল এবার একদিন তোমার বাড়ির সকলের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দাও।
    --দাঁড়াও আগে বাড়িতে  ব্যাপারটা বলি তারপর তো পরিচয়। আমার বাড়ির অবস্থা তোমার বাড়ির ঠিক উল্টো। বাবাকে নিয়ে কোন সমস্যা নয়, যত বিপদ মাকে নিয়ে। তবে হ্যাঁ, আর দেরী করলে চলবে না, এবার একদিন তাল বুঝে বাড়িতে বলতে হবে।
    বলব বলব করে কিছুতেই আর সাহস করে বলে উঠতে পারছিলাম না। অগত্যা সেই অর্চনা ভরসা। ওকে ধরে বললাম, “তোকে একটু সাহায্য করতে হবে”।
    --কি ব্যাপারে বলবি তো।
    --আমাদের ব্যাপারটা মানে আমার আর তন্ময়ের ব্যাপারটা আমার মাকে একটু কায়দা করে বলতে হবে।
    --প্রেম করবি তুই আর তোর বাড়িতে জানাতে হবে আমাকে!
    --মাকে জানাবার কথা ভাবলেই কেমন হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে।  
    --তুই সেই এক রয়ে গেলি। আর কবে বড় হবি রে? যাক বলছিস যখন একবার চেষ্টা করে দেখব তবে রেজাল্ট কি হবে জানি না।
    অর্চনার ক্ষমতা আছে। আমার মার মত সেকেলে আর একরোখা মহিলা  তার মেয়ের প্রেম করার মত এক চরম  গর্হিত অপরাধের কথা শুনেও ভয়ানক রকমের কিছু প্রতিক্রিয়া দেখাননি। আমার মনে হয় এর দুটো কারণ। প্রথমটা অবশ্যই অর্চনার বলার কায়দা আর দ্বিতীয়টা তন্ময়ের বংশপরিচয় আর লেখাপড়া। একদিন গম্ভীর হয়ে মা বলল—শুনলাম মা বাবার ওপর আস্থা না রেখে  নিজেই নিজের বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেলেছ। করেই যখন ফেলেছ কিছু তো আর বলার নেই। একদিন ছেলেটাকে বাড়িতে নিয়ে এস, কথা বলে দেখি। তারপর ওর মা বাবার সাথে বিয়ের ব্যাপারে কথাবার্তা  বলতে হবে। আর একটা কথা, যতদিন না বিয়ের পাকা কথা হচ্ছে ততদিন তোমাদের মেলামেশাটা বন্ধ রেখো। সোমত্ত মেয়ে, পাঁচজনে পাঁচকথা বললে মা হয়ে আমার সেটা শুনতে ভাল লাগবে না।“ 
    মা এমনিতে তুই বললেও রেগে গেলে বা সিরিয়াস কিছু বলবার সময়  তুমি বলত। বোনের সাথে আমার বয়সের পার্থক্য অনেকটা হওয়ায় অনেকদিন পর্যন্ত আমরা আমাদের মনের গোপন কথা একে অপরের কাছে শেয়ার করতাম না। মায়া আমাকে একটু সমীহ করেই চলত। এখন বড় হয়ে মাকে বলা যাবে না এমন কিছু কিছু কথা আমাকে বলে, পরামর্শ চায়। আমিও চেষ্টা করি বন্ধুর মত মিশতে। খবরটা কানে যেতে মায়া আমাকে এসে ধরল—আমাকে একদিন তন্ময়দার  সাথে পরিচয় করাতে নিয়ে চল।
    তন্ময়ের সাথে কথা বলে বোনের আবদার মেটাবার ব্যবস্থা করলাম। তখন কলকাতা বইমেলা চলছে। মেলামেশার অত সুন্দর জায়গা আর দ্বিতীয় হয় না। কোন মিথ্যের আশ্রয় নয়, দুই বোন বইমেলা যাচ্ছি বলেই বাড়ি থেকে বেরলাম। অনেকটা সুন্দর সময় আমরা গল্প করে, বই কিনে, খাওয়া দাওয়া করে কাটালাম। মায়া যে এত ভাল, সুন্দর সুন্দর  কথা বলতে পারে তা আমার অজানা ছিল। আসলে মায়ের অনুশাসনে বাড়িতে আমাদের স্বভাবিক হওয়ার সুযোগটা খুব কম  ছিল। তন্ময়ও মায়ার কথাবার্তায় খুব ইম্প্রেসড।  আর মায়া তো তন্ময়কে দেখে উচ্ছসিত। আসার আগে তন্ময়কে জানালাম যে মা ওকে একবার দেখতে চেয়েছে, সময় করে যেন একদিন আমাদের বাড়িতে আসে। শুনে বলল, “শেষ পর্যন্ত তাহলে মাকে বলতে পেরেছ!”
    বললাম—আমি না, এই দুরূহ কাজটা করেছে আমার বিপদভঞ্জন মধুসূদন বন্ধু তোমার বোন অর্চনা।
    --অর্চনা ছাড়া তো তোমার কোন গতি নেই দেখছি! সে না হয় হল কিন্তু তোমাদের বাড়িতে ওই বাঘের সামনে, সরি বাঘিনীর সামনে আমাকে দাঁড়াতে হবে এটা ভাবলেই  টেনশন হচ্ছে।
    বোন  চোখ পাকিয়ে বলে “কি আমার মাকে বাঘিনী বলা, দেখাচ্ছি মজা। বাঘিনীর কানে কথাটা পৌঁছলে কি হবে জানোন!” পরে হেসে বলে “শালির ওপর ভরসা রাখুন, পার করে দেব”। 
    বাড়ি ফেরার সময় কানে কানে বলল—দিদি, একেবারে এক নম্বর জিনিস তুলেছিস।  
    আমি কপট রাগ দেখিয়ে চোখ পাকিয়ে বললাম, “বড্ড পেকেছিস!।”

    (চলবে)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ২৭ আগস্ট ২০২৪ | ১৬৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে প্রতিক্রিয়া দিন