এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • প্রেম দেহ মন - পর্ব ৪ 

    Sukdeb Chatterjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ৩০ আগস্ট ২০২৪ | ১২৮ বার পঠিত
  • প্রেম দেহ মন পর্ব ৪ 

    অমিত

    ছেলেবেলা থেকে গ্রামের পরিবেশে বড় হয়েছি। আমদের বাড়ি মশাগ্রামে। নামের সাথে পরিবেশের এত মিল খুব কম যায়গায় পাওয়া যায়। বুনিয়াদি স্তরে এলাকাতেই পড়াশোনা করেছি। একটু বড় হওয়ার পর বাবা বর্ধমান শহরে যে স্কুলের  শিক্ষক সেখানে আমাকে ভর্তি করে দিল। প্রথম দিকে  বাবার সাথেই যাতায়াত করতাম। বাবার স্কুলে ছেলের পড়ার কিছু সমস্যা আছে। সে সমস্যা উভয়েরই তবে তার প্রকৃতি ভিন্ন। সব মাস্টার মশাইদেরই ছাত্রদের দেওয়া একটা নাম থাকে। কোন এক সময় হয়ত কোন বিচ্ছু ছেলে বিচিত্র কোন কারণে কোন স্যারের বিচিত্র কোন নাম দিয়েছে, আর সেই নাম তার উত্তরসূরিরা অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে রিলে পদ্ধতিতে বয়ে নিয়ে চলেছে। ওখানে ভর্তি হওয়ার পর দেখেছি বাবা ছাত্রদের কাছে খুব পপুলার ছিলেন। ফলে ছাত্রদের কাছ থেকে ওনাকে কখনও  তেমন কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। এত পপুলার হওয়া সত্ত্বেও বাবারও একটা  নাম ছিল। “মশা স্যার”। বাবার সামনে তো হতই না আমার সামনেও বাবার ওই  নাম কাউকে ব্যবহার করতে শুনিনি। তবে নামটা ছিল, আড়ালে আবডালে ব্যবহার হত। ‘মশা’ নামের কারণটাও ঘাঁটাঘাঁটি করে বার করেছিলাম। কাউকে ডাকতে হলে বাবা অনেক সময় এক হাতের তালুতে অন্য হাতের আঙুলগুলো ঠুকে শব্দ  করে ডাকতেন। ঠিক তালি নয়, হাফ তালি গোছের। বাড়িতেও আমাদের মাঝে মাঝে ঐ ভাবে ডাকতেন। কোন ফচকে ছোঁড়ার হয়ত মনে হয়েছে ওটা মশা মারার ভঙ্গিমা, তার ওপর স্যারের বাড়ি মশাগ্রামে, দুয়ে মিলে হয়ে গেল ‘মশা’  স্যার। বাবা নিজের এই নাম আর নামের উৎস দুটোই জানত।  এমনকি ওই নাম বাবাকে  ব্যবহার করতেও দেখেছি। একবার উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর কিছু ছাত্র বাবাকে নমস্কার করতে এলে বাবা অনেক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছিল, “যখনই কোন দরকার হবে নিঃসঙ্কোচে তোদের  ‘মশা’  স্যারের কাছে চলে আসবি.” ছেলেগুলোর চোখ জলে ভরে গিয়েছিল। আমাদের ভাইবোনদের লেখাপড়া  বাবাই দেখাশোনা করত। কোচিং এ যে যেতাম না তা নয় তবে তার পরেও যে ফাঁক ফোকর গুলো থাকত, বিশেষ করে বিজ্ঞানের  বিষয়গুলোতে, তা বাবা ভরাট করে দিত। আমার মা আদর্শ গৃহিণী। সংসারটা মা  নিপুণভাবে সামলাত। বাড়িতে বেশ খোলামেলা পরিবেশে বড় হয়েছি। শাসনের  কড়াকড়ি তেমন একটা ছিল না বললেই চলে। অবশ্য মার বকুনি খাওয়ার মত বেয়াদপিও আমরা ভাই বোনেরা খুব কমই করেছি। বিকেলবেলা ফুটবল খেলে সন্ধে পার করে বাড়িতে ঢুকলে  মার কাছে এক আধবার আমি বা  ভাই কানমলা খেয়েছি এই যা। আমাদের বাড়িতে ভালবাসার সুন্দর একটা বাঁধন আছে। মা বাবাই এর কারিগর। ঝগড়াঝাঁটি দূরে থাক মা বাবাকে একে অপরের সাথে কখনো উঁচু স্বরে কথা বলতে শুনিনি।  
    কলকাতার সাথে তেমন একটা যোগাযোগ ছিল  না। ছুটিছাটা পড়লে  কালিঘাটে আমার মাসির বাড়িতে কখনো সখনো গিয়ে থাকতাম। ওদের সাথে চিঁড়িয়াখানা, যাদুঘর, গড়ের মাঠ, এইরকম  কাছেপিঠে বেড়াতে যেতাম। কলকাতা দর্শন ওইটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিল। মেডিকেলে র‍্যাঙ্কটা ওপরদিকে থাকায় ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়ে  আনন্দ যেমন হয়েছিল তেমন একটু নার্ভাসও ছিলাম। আমি বোকা হাঁদা টাইপের ছেলে নই বরং  লোকে আমাকে চালাক চতুরই বলে। তবু গ্রামের ছেলে তো, মস্ত শহর কলকাতায় পড়তে আসার সময় ভেতরে ভেতরে একটু ধুকফুক করছিল। হস্টেলে কয়েকদিন কাটাবার পর সেই ধুকফুকুনিটা একেবারে চলে গেল। বাবার সাথে যখন প্রথমবার মেডিকেল কলেজে আসছি বাড়ির বাকিরা তখন কেঁদে ভাসাচ্ছে। আমারও খুব কষ্ট হচ্ছিল তবে বড় হয়ে গেছি তো তাই অনেক কসরত করে চোখের জল চোখের বাইরে আসতে দিইনি।   হস্টেলে আমার মত বাইরে  থেকে আসা আরো অনেক ছেলে ছিল। ধীরে ধীরে বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে নতুন জীবনটা  উপভোগ করতে শুরু করলাম।  তবে বাড়ির জন্যে মাঝে মাঝে খুব মন কেমন করত। মন কেমনের মাত্রাটা বাড়লে সপ্তাহান্তে একবার বাড়ি ঘুরে আসতাম।  হস্টেলে আড্ডা মস্তি যতই হোক না কেন  পড়াশোনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে তা কখনও করি নি। সেইজন্যই ডাক্তারির পরীক্ষাগুলোয়  কোন সাপ্লি না খেয়ে একবারে উৎরে গিয়েছি।

    স্কুল জীবনে ভাব ভালবাসার খপ্পরে পড়িনি। কেন তা বলতে পারব না। মঞ্জু বলে গ্রামের একটা মেয়ে কিছুদিন আমার পিছনে পড়েছিল। দেখতে খারাপ ছিল না তবে গেছো ডানপিটে মেয়ে। প্রথম দিকে কিছুদিন ইশারা ইঙ্গিতে, তার পর একা পেলে রীতিমত ধমক দিয়ে প্রেম নিবেদন করত। এ জিনিসের সাথে গাঁটছড়া বাঁধলে আমার সারা জীবন ছড়ে যাবে। পাত্তা দিতাম না, একদিন ধমকও দিলাম, কাজ হল না। নিজের রেটিংটা বোঝাবার  জন্য বায়োডাটা দিয়ে জানাল গ্রামের কত ছেলে ওকে পাওয়ার জন্য পাগল। সোজা পথে এর থেকে নিষ্কৃতি নেই তাই একটু বুদ্ধি খাটাতে হল।   একদিন দেখা হতে বললাম—তুই রোজ এমনভাবে বলিস খুব খারাপ লাগে। থাকতে না পেরে  কাল বাড়িতে মা বাবাকে তোর  কথা বললাম। শুনে বাবা বলেছে যে তোকে নিয়ে একদিন তোদের বাড়িতে তোর মা বাবার সাথে দেখা করতে যাবে। ওখানে তুই আমাকে যা যা বলিস ওদের সামনেও সেগুলো বলবি। ওরা সবাই তোর কথা শুনে রাজি হয়ে গেলে আর কোন বাধা থাকবেনা। ঠিক করিনি বল?
    টোটকায় কাজ হয়েছিল। সবটা শোনার পর ছেলেরাও  বলতে লজ্জা পাবে এমন কিছু অশ্রাব্য খিস্তি দিয়ে মঞ্জু পাকাপাকিভাবে আমার থেকে মুখ ফিরিয়েছিল। গালাগাল খেয়েও আমার সেদিন রাগ হয়নি বরং পরিকল্পনা সফল হওয়ায় বেশ মজা পেয়েছিলাম।
    ছোটবেলা থেকেই আমার ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে ছিল। নিজের আকাঙ্খিত বিষয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই খুব খুশি হয়েছিলাম। প্রথম দিকে অ্যাকসিডেন্টে আহত  রক্তাক্ত অবস্থায়  কাউকে ইমারজেন্সিতে দেখলে অস্বস্তি হত, একটু ঘাবড়ে যেতাম। মড়া কাটতে গিয়েও দু এক দিন শরীরটা কেমন করে উঠেছিল। ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। স্টেথো, ওষুধ, ইঞ্জেকশন, কাটা,  ছেঁড়া, জোড়া, জীবন,  মৃত্যু, এই সবের মাঝে নিরন্তর পাক খেতে খেতে একদিন নামের আগে ডাক্তার লেখার অধিকার পেয়ে গেলাম। কলেজ জীবনে মেয়ে বন্ধু অনেক ছিল, তবে তারা অধিকাংশই ছিল খুব ভাল বন্ধু অন্য কিছু নয়। দু একটা ক্ষেত্রে একটু অন্য রকম সম্পর্কের প্রস্তাব এসেছিল, তবে যে কোন কারণেই হোক সেগুলিতে আমার আগ্রহের অভাব থাকায় তা আর দানা বাঁধেনি। পাশ করার পর হঠাৎই  একটা অজানা অচেনা মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লাম। না কলেজে  নয়, কলেজের বাইরে।  বেশ কিছুদিন আগে একটা বাস স্টপেজে প্রথম  দেখা হয়।  খুব  তেষ্টা পেয়েছিল, মেয়েটার কাছে জল চেয়ে খেয়েছিলাম। অল্পস্বল্প  কথা হয়েছিল। গল্প ওইখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত কিন্তু ভবিতব্য অন্য কিছু ছিল। তখন ইন্টার্নশিপ শেষ করে আমি মেডিক্যাল কলেজে হাউসস্টাফ। ডিউটি  শেষে ইমারজেন্সি থেকে বাইরে আসার সময় রুগীর আত্মীয় পরিজনের ভিড়ে চোখ গেল একটা মেয়ের দিকে। একধারে চুপচাপ দাঁড়িয়ে চারপাশটা দেখছে। মুখটা চেনা চেনা লাগলেও ঠিক চিনতে  পারছিলাম না। কি মনে করে আমিও দাঁড়িয়ে পড়লাম।  চোখাচুখি হতে মেয়েটা আমার দিকে এগিয়ে এল। ততক্ষণে আমারও মেমারি রিকল্ড হয়ে গেছে। চিনতে পেরেছি সেদিনের  জল দাত্রীকে। জিজ্ঞেস করলাম কেউ ভর্তি আছে  কিনা। কারণ ছাড়া তো কেউ হাসপাতালে আসে না তাই চেনাজানা কেউ ভর্তি নেই শুনে আশ্চর্য হয়েছিলাম। অবশ্য চিকিৎসা ছাড়া অন্য কোন কারণে যদি এসে থাকে তাহলে আলাদা কথা। উল্টো ফুটে গিয়ে চা সিঙ্গাড়া খাওয়ার অফার দিলাম। তৃষ্ণার্তকে জল খাইয়েছিল তার তো একটা ঋণ আছে। অর্চনা না করেনি। সেদিন কিছুক্ষণ গল্প গুজব করে দুজনেরই মনে হল মাঝে মাঝে এমন দেখা সাক্ষাৎ হলে মন্দ হয়না। অল্প কয়েকদিনেই সম্পর্কটা মাখোমাখো হয়ে গেল, জীবনে প্রথম প্রেমে পড়লাম। আমি সোজা সাপটা মানুষ, লুকোচুরি ব্যাপারটা পছন্দ নয়। কিছুদিন মিশে বুঝলাম অর্চনাও অনেকটা আমারই মত। কোন রাখঢাক নেই। স্কুল জীবনে ক্ষণিকের  প্রেমে পড়ার ঘটনা অকপটে আমাকে জানিয়েছে। আর আমার কাছে মঞ্জু পাগলীর গল্প শুনে ওর হাসি থামতেই চায় না। অর্চনার বাড়িতেও আমার এন্ট্রি হয়ে গেছে। ওর মার পাগল করা রান্নার হাত। ভাল কিছু খেতে ইচ্ছে করলেই ডাক্তারির ছুতোয় ওদের বাড়ি চলে যাই। কাকিমা মানুষটাও খুব ভাল, একেবারে আমার পরিবারের লোকেদের মত। একদিন ফাজলামো করে অর্চনাকে বলেছিলাম—বউ কেমন হবে এখনই বলা মুশকিল  কিন্তু আমার শশুড়ি মা যে অতি উত্তম এ নিয়ে কোন সংশয় নেই।
    অর্চনা ফুঁসে উঠেছিল—বউ কেমন হবে বলা মুশকিল বলতে তুমি বলতে চাইছ যে আমি সুবিধের মেয়ে নয়! কি খারাপটা দেখলে আমার মধ্যে শুনি? আর মা ভাল হবে না কেন, মাঝে মাঝেই ভালমন্দ খাওয়াচ্ছে, মা তো ভাল হবেই।
    --আহা চটছ কেন? চটে যাওয়ার মত কোন কুকথা তো বলিনি। তোমার যে রূপটা এখন দেখছি সেটা তো প্রেমিকার, বৌ হওয়ার পর সব কিছু যে একইরকম থাকবে তা নিশ্চিত হয়ে বলি  কি করে!  আর মায়ের প্রশংসায় মেয়ে চটে যায় এমন তো সচরাচর দেখা যায় না।
    আমাদের এমন খুচরো খুনসুটি প্রায়ই হত, কাকিমার সামনেও হত। কাকিমা মজা পেতেন, আমার পক্ষ নিতেন, তাতে অর্চনা আরো চটে যেত। অর্চনার দাদা বাইরে চাকরি করে, আমার সাথে কমই দেখা হয়। একটু ডাকাবুকো টাইপের,  তবে কথাবার্তা ভাল।  অর্চনার সাথে ভাব হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই পরিচয় হয়েছিল আর একটি মেয়ের সাথে। খুব ঠান্ডা, ভালমানুষ, একটু লাজুকও। অর্চনাই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল ওর প্রাণের বন্ধু বিদিশার সাথে। প্রাইমারী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত একসাথে পড়েছে। গিনেজের লোকেরা জানতে পারলে বাড়ি চলে আসত। দুই বন্ধুর চরিত্রে মিলের থেকে অমিলই বেশি তবু তারা হরিহরআত্মা। আমার হবু বউ খুব গুণী মেয়ে।  নিজে তো প্রেম করছেই, বান্ধবীর জন্যও নিজের এক তুতো দাদাকে ফিট করে দিয়েছে। একদিন অর্চনা সঙ্গে করে ওর পিসির বাড়িতে নিয়ে গেল। মন ভরে গিয়েছিল মানুষটাকে আর তাঁর কর্মকাণ্ড দেখে। কয়েকটা অনাথ ছেলেমেয়েকে মাতৃ স্নেহে লালন পালন করছেন। তার পর থেকে আমি একাই মাঝে মাঝে ওখানে চলে যাই, বাচ্চাগুলোকে একটু দেখি, দরকার হলে ওষুধ দিই। গেলে পিসি খুব খুশি হন, সন্তান স্নেহে আদর যত্ন করেন। মাঝে মাঝে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়। একই  জীবনে অনেক মায়ের পরশ পেয়েছি।

    তন্ময় 
    ছোটবেলায় আমি খুব একা একা বড় হয়েছি। আর পাঁচটা সাধারণ বাচ্চা যেমন একসাথে খেলে, হৈচৈ করে,  তেমনটা  আমি করিনি। করিনিটা বলা ভুল হল আসলে বাবার অহং, স্ট্যাটাস সচেতনতা, পারিবারিক আভিজাত্য, আমার শৈশবটাকে   সাধারণের থেকে বিচ্ছিন্ন করে আমাকে গড়ে তুলেছিল এক নিঃসঙ্গ  রাজকুমারের মত। সঙ্গী বলতে মা আর বহুদিনের কাজের লোক বলাই কাকু। আমাদের বাড়ির অদূরেই ছিল একটা মাঠ। বাড়ির ছাদে উঠলে দেখা যেত। বিকেল বেলা কত বাচ্চা ওখানে খেলত, ছাদে দাঁড়িয়ে দুচোখ ভরে দেখতাম। মার কাছে বায়না করতাম, “মা, আমি মাঠে গিয়ে খেলব”। মা অনেক আদর করে বলত, “না তনু ওখানে গেলে তোমার বাবা রাগ করবে। বাড়িতে তো কত জায়গা রয়েছে, ছাদে বাগানে যেখানে খুশি খেল না।” ওখানে খেললে কেন বাবা রাগ করবে তার উত্তর মা কখনও দেয়নি বা  হয়ত দিতে পারেনি। মাকে যদি বলতাম, “বাড়িতে কার সাথে খেলব? একা একা কি খেলা  যায়?”, মা বলত “কেন বলাই কাকু তো রয়েছে।”  তখন বুঝতাম না, এখন বুঝি মা কত অসহায় ছিল। বলাই কাকু মাঝে মাঝে বিকেলবেলা আমার হাত ধরে আশে পাশে একটু বেড়াতে নিয়ে যেত। একদিন কাকুর সাথে বেড়াতে বেরিয়ে  মাঠের  পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বাচ্চাদের খেলতে দেখে একটু দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার বয়সী গুটি কয়েক বাচ্চা আমাকে বলল “আমাদের সাথে খেলবি?’ আমি বললাম “হ্যাঁ।” কাকুর হাত ছাড়িয়ে এক ছুটে মাঠে চলে  গিয়েছিলাম। এত আনন্দ আগে কখনও পাইনি। কপাল মন্দ, বাবা সেদিন রোজের সময় থেকে আগে বাড়ি ফিরছিল। গাড়িতে বসেই বলাই কাকাকে হুকুম করল ঐ মুহূর্তে আমাকে বাড়িতে ফিরিয়ে  নিয়ে আসার। ফিরে আসতে  খুব কষ্ট হয়েছিল। বাড়িতে ঢুকতেই অমন এক জঘন্য অপরাধের  জন্য বলাই কাকা বাবার কাছে তুমুল ঝাড় খেল। বাবা আমাকে শুধু বলল—আর যেন কখনও ওই ছোটোলোকগুলোর সাথে তোমাকে খেলতে না দেখি।“
    আমিও ছোট আর যাদের সাথে খেলছিলাম তারাও তো সব ছোট, তাহলে বাবা আমাকে না বলে শুধু ওদের কেন ছোটলোক বলল তা বুঝে উঠতে পারিনি। মাকে বলেছিলাম, “মা, আমি নিজে ছোটলোক, আমার খেলার সাথী তো ছোটোলোকেরাই হবে, যখন বড় হব তখন বড়লোকেদের  সাথে খেলব।” মা শুধু বলেছিল, “আর একটু বড় হও, এই ছোট বড়র উত্তরটা নিজেই জেনে যাবে।”  বড় হতে বুঝেছিলাম ছোট বড়র মাপকাঠিটা বয়স নয় বিত্ত,আভিজাত্য।   বাবার টানা ওই লক্ষ্মণ রেখার মধ্যে কৃত্রিমভাবে  বড় হতে হতে একটা শিশুর স্বাভাবিক মানসিক বিকাশ যে ভাবে হয় আমার তা হয়নি। স্কুলে ছেলেদের সাথে সেভাবে মিশতে পারতাম না। স্বভাবিক ভাবেই বন্ধু বান্ধবের সংখ্যা খুব কম ছিল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এক আধবার বাড়িতেও এসেছ। মা খুব যত্নআত্তি করলেও একবার যে বাবার সামনে পড়ে গেছে সে আর দ্বিতীয় বার আসেনি। কেবল মেলামেশাই নয়, অন্যের ইচ্ছেয় জীবনটা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত হওয়ার ফলে  নিজের ইচ্ছে  অনিচ্ছেটাও জোরের সঙ্গে দৃঢ় ভাবে জানাতে পারতাম না। শাসন সব বাড়িতেই কমবেশি  থাকে। কোন বাচ্চাকেই তার মা বাবা যা খুশি তাই করতে দেয় না। দেওয়া উচিতও নয় কারণ ভাল মন্দ বোঝার ক্ষমতা  তার থাকে না।  কিন্তু একটা শিশুর ভাললাগার সবকটা পথে নো এন্ট্রি লাগান আমার মত বাড়ি খুব কমই হয়। রাগ হত, দুঃখ হত, কিন্তু তা যথাস্থানে প্রকাশ করার সাহস বা ক্ষমতা ছিল না। আমার শৈশবের অনুশাসনের মরুভূমিতে একমাত্র মরূদ্যান ছিল বিহারের জামালপুরে আমার মামার বাড়ি। ওটা ছিল আমার সব পেয়েছির দেশ। মামার বাড়িতে আমার আলাদা কদর ছিল। দাদু দিদা মামা মামির  কাছে যা আবদার করতাম তা প্রায় সবই পেয়ে যেতাম। মামাত বোন রুনু ছিল আমার খেলার সাথী।  সারাদিন মনের আনন্দে খেলে বেড়াতাম। ছোটবেলায় মামার বাড়িতে যাওয়ার জন্য চাতক পাখীর  মত অপেক্ষা করে থাকতাম। মামা আর আমার বাবা প্রায় একই বয়সী, সম্পর্কটাও ছিল বন্ধুর মত। ওই  একজনের সাথেই বাবাকে প্রাণ খুলে গল্প করতে দেখেছি। মামা চলে গেলেই বাবা আবার তার পুরোনো রূপে ফিরে যেত।
    সব খারাপের কিছু ভাল থাকে।  ছেলেবেলা থেকেই পড়াশোনাটা খারাপ লাগত না। সঙ্গী সাথীদের সাথে হুড়োহুড়ি নেই, কাটা ছড়া লাগা নেই, তাই ক্লান্তিও নেই,  ফলে অনেকটা  সময় পড়াশোনা করে কাটাতাম। নিম্ন মেধার ছিলাম না, ফলে স্কুলের পরীক্ষার ফলও ভাল  হত। প্রথম দু এক জনের মধ্যেই থাকতাম। উচ্চ মাধ্যমিকে বেশ ভাল ফল করলাম, পঞ্চম হয়েছিলাম। মার্ক শিটটা দেখে বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করল। আমাকে কেন্দ্র করে বাবার এত উচ্ছ্বাস আগে কখনও দেখিনি। আসলে আমার রেজাল্ট ওনার আভিজাত্যের মুকুটে আর একটা পালক যোগ করেছিল, তাই এত আনন্দ। মেকানিক্যাল নিয়ে যাদবপুরে ভর্তি হলাম। একসাথে অনেকগুলো হুল্লোড়ে ছেলেপুলের পাল্লায় পড়ে মনের  মধ্যে আজন্ম লালিত সংকোচ কিছুটা কাটল। এই প্রথম একটু হলেও নিজের মত করে  স্বাধীনভাবে  দিনযাপনের আস্বাদ পেলাম। আমাদের আত্মীয়স্বজন তেমন একটা ছিল না। যে কটা ছিল তারাও বাবার উন্নাসিক আচরণের জন্য আমাদের সাথে কোন যোগাযোগ রাখত না। মামার বাড়ি ছাড়া বাবার এক তুতো বোন “অণু পিসি”র সাথে আমাদের সম্পর্কটা ভাল।  মামার মত অতটা না হলেও  এই  পিসিকেও বাবা পছন্দ করে। পিসি কমই আসে, আমরা বিশেষ করে আমি বড় হওয়ার পর মাঝে মাঝেই যাই।   পিসতুতো দাদাটা বাইরে চাকরি করে। বোন বুলি  আমার  প্রায় সমবয়সী বন্ধুর মত, দারুন মজা মস্করা করে, খুব ফক্কর। আমি গেলেই  পিসি এটা ওটা রাঁধে, কি সে রান্নার স্বাদ আহা। তখন  অনেকটা সময় বাড়ির বাইরে থাকি, থাকি মানে থাকতে হয়। ক্লাস আছে, লাইব্রেরী যাই, আর কিছুটা বিনোদনেও সময় কাটে। বাবার সাথে  ইন্টারঅ্যাকশন  হয়না বললেই চলে, যতটুকু হয় তার অধিকাংশটাই মায়ের মাধ্যমে নয়ত ভাববাচ্যে।  অণু পিসির   বাড়িতে গিয়েই একদিন প্রেমে পড়লাম। আমি যে কখনও প্রেমে পড়তে পারি এ কথা অন্যে দূরে থাক নিজেই কখনও ভাবতে পারিনি। তবু পড়ে গেলাম। বিদিশাকে বুলিদের বাড়িতে দেখে খুব ভাল লেগে গিয়েছিল। ভাল লাগলেই তো হবে না, সেটা মেয়েটার কাছে হাবে  ভাবে  প্রকাশ করতে হবে। মেয়েটার তাতে সম্মতি থাকলে তবে খুলবে ভালবাসার খাতা । যতই ইচ্ছে থাকুক না কেন কাজটা আমার পক্ষে বেশ কঠিন। আমার বোন বুলি তার নিজস্ব  স্টাইলে যাবতীয়  দ্বিধা দ্বন্দ দূর করে আমাকে আর বিদিশাকে কাছাকাছি এনে দিল।  বিদিশা আমার জীবনে শ্রেষ্ঠ পাওয়া। খুব শান্ত ভাল মিষ্টি মেয়ে। ওকে পাশে পেয়ে আমার জীবনটাই বদলে গেল।  অনেক কিছুই ভাল লাগতে লাগল  যা আগে হয়ত লাগত না। বাড়িতে আমার বাবাকেও আর অতটা খারাপ লাগে না। আমাদের সম্পর্কের কথা আমার মা প্রথম দিন থেকেই জানে। আমার কোন কাজে মা কখনও আপত্তি করেনি যদি না তাতে বাবার কাছ থেকে কোন অশান্তির আশঙ্কা থাকে। আমার স্বনির্বাচন বাবা যে খুব ভালভাবে নেবে এমনটা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি জেনেও  মা আপত্তি তো করেইনি বরং খবরটা জেনে বেশ খুশি হয়েছিল। কয়েক মাস গড়াবার পর মা বলল—মেয়েটাকে একদিন বাড়িতে নিয়ে আয় না রে, একটু দেখি। সকাল সকাল আসতে বলবি, দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে একেবারে বিকেল বেলা যাবে।
    জিজ্ঞেস করলাম —বাবা জানে?
    মা বলল- বাবাকে আমি ম্যানেজ করে দেব, তোকে ও নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
    আমার সাথেই বিদিশা একটা ছুটির দিনে আমাদের বাড়িতে এল। ও বাড়িতে ঢুকতেই মা ওকে জড়িয়ে  ধরে অনেক আদর করল। বাবার সাথে বিদিশার পরিচয়টা মা করিয়ে দিল এবং মোটামুটি নির্বিঘ্নে। বিয়ের ব্যাপারে একটা বড় বাধা মা পার করে দিল। দিনটা  বড় আনন্দে কেটেছিল। আমার বাবার মত বিদিশার বাড়িতেও একটা বড় হার্ডল পার করার ছিল,  তা হল বিদিশার মা। শুনেছিলাম অতি শাসনে মহিলা বাড়িটাকে একটা কয়েদখানা বানিয়ে ফেলেছেন।  বিদিশা  তো কোন ছার ওর বাবার পর্যন্ত ওনার হাত থেকে নিস্তার ছিল না। বিদিশার বাড়িতে আমাদের ব্যাপারটা ওর  বোন মায়া ছাড়া আর কেউ জানত না। ওর মার সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা বলতেই ও আঁতকে উঠে বলল,  “কিন্তু মা তো কিছুই জানে না”। আমি বললাম, “বিয়ে করতে গেলে মাকে তো জানাতে হবেই, ফলে দেরী করে লাভ নেই এখনই জানিয়ে দাও”।  ভয়ার্ত মুখে বলল “দেখছি।” নিজের সাহসে কুলোয়নি, বন্ধু অর্চনাকে  দিয়ে মাকে বলিয়েছিল। একদিন ওদের বাড়িতে গেলাম। যতটা ভয়ানক শুনেছিলাম কাছ থেকে মহিলাকে অতটা ভয়ানক মনে হল না। তবে হ্যাঁ, আমার পরিবার, শিক্ষা, আমার ভবিষ্যতে চাকরির  সম্ভাবনা ইত্যাদি নানা বিষয়ে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। প্রশ্নবান থেকে রক্ষা পেতে  ইচ্ছে করে কথাবার্তাকে  ওনার জ্ঞানের পরিধির বাইরে যেমন আমার পড়াশোনার বিষয় ইত্যাদিতে টেনে এনেছিলাম। উদ্যোগ সফল হয়েছিল। সেদিন পরীক্ষায় সহজে উত্তীর্ণ হওয়ার পিছনে আমার হবু শালি মায়ারও খানিকটা অবদান ছিল। মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম বি টেক কমপ্লিট হবার পর একটা ভাল কোন কোম্পানিতে জয়েন করেই বিদিশার সাথে বিয়েটা সেরে নেব। কিন্তু বিদিশার জেদাজেদিতে এম টেক এ ভর্তি হতে হল। বিয়েটা আরো কয়েক বছর পিছিয়ে গেল। 

    (চলবে) 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ৩০ আগস্ট ২০২৪ | ১২৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন