এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • যে আঁধার আলোর অধিকঃ পর্ব ৫

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৮৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • 11
    কিন্তু কেউ কিছু বলছে না।
    একজন একটি চিট লিখে হাত বদল করতে লাগল। তাতে কেউ লিখলো--- শুনেছিলাম, এমনি হয়। মানুষ ভেঙে পড়ে। নিজের মুখ ও মুখোশকে আলাদা করে চিনতে পারা বড় কষ্টের। এখন দেখতে পাচ্ছি।
    যথাক্রমে চিট গিয়ে পৌঁছলো ফেসিলিটেটর নিধির কাছে। উনি একনজর দেখে দলামোচা করে নিজের ব্যাগে ভরে দিলেন।

    লেঃ পচা!
    আবার শুরু হল কথা।
     মা গো, কেন যে এত সব কথা!
    না, সবাইকে সেরেনার ব্যাপারে কিছু বলতে হবে। শালার ফিড্‌ব্যাক।
    ও বলে--- উনি লো- সেল্ফ এস্টিমে ভুগছেন। তাই এইসব।

    কেমন এক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন নিধি ম্যাম।
    এবার বিক্রম একটু যেন কড়া সুরে ওকে বল্লেন-- আপনি র‍্যাশনালাইজ না করে আপনার ফিলিং টা বলুন। আমরা ফিলিং এর ফিডব্যাক চাই। আপনার ইন্টেলেকচুয়াল ক্যাপাসিটির নয়।

    দাস বেদম চটেছে। এই শুকনো শকুন ওকে আঁতেল বল্ল কি?
    ওদের সত্তরের জমানায় আঁতলেমি অতি ঘৃণ্য কাজ। বুর্জোয়া অপরাধ। পাপের লিস্টিতে মাতৃগমন ও ব্রহ্মহত্যার পর ইহারই অধিষ্ঠান।

    -- বুঝলাম না, একটু এলুসিডেট করুন।
    -- আপনি আপনার র' ইমোশন কে বর্ণনা করুন। সেরেনার ব্যবহারে আপনি কেমন ফিল করছেন? রাগ, দুঃখ, ঘৃণা, সহানুভূতি, ভালবাসা, যন্ত্রণা-- কোনটা?
    --- তাহা জানিয়া আপনি কী করিবেন?
    -- শুনুন গঙ্গারাম, একটু কো-অপারেট করুন।

    গঙ্গারাম রাগে গরগর করছে।
    হ্যাঁ, হ্যাঁ, কো-অপারেশন। হোয়েন উওম্যান কু-উ-জ, অ্যান্ড ম্যান অপারেটস।

    -- করতে চাইছি আপনি আগে বুঝিয়ে বলুন যে কেন স্টেটমেন্ট না দিয়ে র' ইমোশনকে জানাতে হবে।

    -- কারণ, মানুষ মূলতঃ ইমোশন দ্বারা চালিত হয়েই ব্যবহার করে। ওটাই সবচেয়ে শক্তিশালী ড্রাইভ। যুক্তি নয়। আগে আমরা নিজেদের র' ইমোশন কে চিনতাম। ফলে নিজেকে অনেক বেশি জানতাম। আজকাল আধুনিক সভ্যতায় আমরা নিজেদের 'টুরু' ইমোশনকে লুকিয়ে রাখি, যুক্তির জামা পরিয়ে। ফলে জীবন হয়ে গেছে অনেক জটিল। 
    আমরা নিজেদের ইচ্ছেকে লুকিয়ে পলিটিক্যালি কারেক্ট বিহেভিয়র করতে চেষ্টা করি,-- পাছে লোকে কিছু বলে।
    ফলে পলিটিকিং করি, ষড়যন্ত্র করি। চাকরিতে বসকে খুশি করতে, সহকর্মীকে লেঙ্গি মারতে, কোন একটি মেয়েকে কাছে পেতে।

    -- উদাহরণ দিন।
    ওর কাটা কাটা কথাবার্তা।
    ভদ্রলোক যেন খেয়াল করেও করলেন না।

    --- ধরুন, আপনার পুরনো সহকর্মী আজ প্রমোশন পেয়ে আপনার বস্‌ হয়েছে। আপনি ওর সমস্ত নির্দেশের ভুল বের করার চেষ্টা করছেন।
    এটা প্র্যাকটিক্যাল না, ওটা হওয়ার মত রিসোর্স নেই, সেটা এইটুকু টাইমফ্রেমে হতে পারবে না, ইত্যাদি, ইত্যাদি। আপনি দেখতে চাইছেন না যে কোন ইনস্ট্রাকশনই একশ'ভাগ সঠিক হতে পারে না। মানুষ ভগবান নয়।
    আসলে আপনি সহ্য করতে পারছেন না যে আপনার একসময়ের সহকর্মী বা দোস্ত আজ আপনাকে মনিটর করবে, কম্যান্ড দেবে।

    সত্যি তো, শালা দুবে কাজের কি জানে! সেদিনও তো আমাকে জিগ্যেস করে কাজ করতো। সেবার ওই তো অডিটের সময় ওকে বাঁচিয়েছিল। আর আজ---।

    কাজেই যদি আপনার ব্যবহারের পেছনে লুকিয়ে থাকা 'টুরু-ইমোশনকে আপনি চিনতে পারেন তাহলে গিয়ে ওকে বলবেন--- ভাই, আজ তোর আন্ডারে কাজ করা আমার পক্ষে পেইনফুল। তুই আমাকে অন্য বিভাগে বদলি করিয়ে দে, তাহলে আমাদের বন্ধুত্ব বেঁচে যাবে।
    এরপর আপনিও মেন্টাল পিস ফিরে পাবেন। তাই বলি নিজের ইমোশনকে চিনতে শিখুন।

    শুনুন, এই টি-গ্রুপ মেথড ইমোশনকে প্রাইমারি মনে করে। এই ক্লোজ ডোর হিউম্যান ল্যাবে আমরা যে প্রিন্সিপল অ্যাপ্লাই করি তাহল—হিয়র এন্ড নাউ
    অর্থাৎ এই ক'দিন রোজ আটঘন্টা আইসোলেটেড রুমে আমরা দশজন যেভাবে একে অপরের সঙ্গে যা ব্যবহার করছি তাই আমাদের নির্জ্ঞান মনের ডেটা বেস।

    -- ওসব মেটাফিজিক্যাল বা স্পিরিচুয়াল ধাপ্পাবাজি! নির্জ্ঞান চেতনাকে জানার গ্যারান্টি কি? কেউ কেউ তো মারিজুয়ানা, গ্রাস এই সব খেয়েও মনের অবচেতনের গহনে পৌঁছনোর চেষ্টা করে। সেশনের শেষে সমস্ত ক্যান্ডিডেটকে একটি করে মারিজুয়ানা বা হাশিশের পুরিয়া ধরিয়ে দেবেন না কি? আমার মত পাঁড় নাস্তিকের উপর ওসব স্পিরিচুয়ালিটির ক্যাপসুল কাজ করে না।

    শোলাংকি হো-হো করে হেসে উঠলেন।
    -- দেখুন, কে আস্তিক বা কে নাস্তিক সেটা তার নিজস্ব দর্শন বা ভ্যালু সিস্টেমের ব্যাপার। এই যে এখানে চারটি গ্রুপ এক্সারসাইজ চলছে, তাতে আমরা আটজন ফেসিলিটেটর আছি। তাদের মধ্যে অন্ততঃ দুজন হার্ডকোর নাস্তিক। দুজন, যেমন এই আমার পার্টনার নিধি ম্যাম, হার্ডকোর অধ্যাত্মবাদী।
    কিন্তু শরীর ও মন সবারই অসুস্থ হয়। সাদাকালো ইমোশন, যুক্তি দিয়ে বেসিক ইমোশনকে ঢেকে র‍্যাশনালাইজ করা, আস্তিক-নাস্তিক সবার ক্ষেত্রেই কমন ফ্যাক্টর। কাজেই কোন একটা বিলিফকে ধাপ্পাবাজি বলায় সততা কম, অহংকার বেশি প্রকট হচ্ছে।

    এটা গ্রুপ পারফরম্যান্স। আমি-আপনি ইন্টেলেকচুয়াল আলোচনা কয়েক ঘন্টা চালাতে পারি, কিন্তু বাকিদের ইমোশন কি জিগ্যেস করবেন না? জানতে চাইবেন না?

    --- উই আর নট ইন্টারেস্টেড, খুব বোর হচ্ছি।
    ছুঁইমুই সুন্দরী, হকলা গোঁয়ারগোবিন্দ, দেখি-না-কি-হয় মাঝবয়েসী-- সবাই একসুরে গেয়ে ওঠে।

    -- তাহলে শ্রীমান, এবার আপনার ইমোশন জানতে পারি কি?
    --- রাগ এবং সিমপ্যাথি।
    --- কার ওপর?
    -- সেরেনার ওপর। ও নিজের ভারী ভরকম চেহারা নিয়ে কমপ্লেক্সে ভুগছে। চেষ্টা করলে ওটা কমতে পারে। আর রয়েছে ভালবাসা পাওয়ার আকাংক্ষা। কিন্তু তা নিয়ে ওর মীরাবাঈয়ের মত "প্রেম দিওয়ানী" হয়ে ঘুরে বেড়ানো একধরণের নিজেকে করুণার পাত্র করে তোলা। এতে আমার আপত্তি।
    --- ফের ভুল করছেন । আপনি জাজমেন্টাল হচ্ছেন।
    প্রশ্ন- আপনার দেয়া ডেটা সেরেনার অথেন্টিক মনে হচ্চে নাকি স্যুডো মনে হচ্ছে? ও আপনার দেয়া ফীডব্যাকের ভিত্তিতে নিজের ইমোশনকে রেকগনাইজ করার অবস্থায় আছে কি না, সেটা দেখতে হবে।
    প্রেম দিওয়ানী হয়ে যদি ও কম্ফর্টেবল থাকে তো আপনার-আমার কি আসে যায়! হু আর উই টু ডিসাইড?
    আর দাস! জেন্ডার প্রশ্নে আপনার ইমোশন কি একটু ভেবে দেখবেন। বাইরের ব্যবহারে মনের ভেতরের এক্স-রে যতটুকু ধরা পড়ছে, সেটা দেখার সাহস আছে আপনার?

    -- বুঝতে পারছি, আপনাদের এই ওয়ার্কশপের নাম দেয়া যেতে পারে "চোলি কে পিছে ক্যা হ্যায়?''
    সবাই হেসে ওঠে।
    -- সরি! মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। আমি এরকম ভাবিনি--।

    গর্জে উঠেছেন বিক্রম সোলাংকি।
    --না, কিছুই মুখ ফস্কে বেরোয় না। সবগুলোর পেছনেই একটা ডিজাইন থাকে। তাকে চিনতে হলে প্রথমে সত্যবচন করুন। নিজের ব্যবহারের দায়িত্ব স্বীকার করুন। কারণ ব্যবহারই হল মনের গোপন কক্ষে ঢোকার চাবিকাঠি। আস্তে আস্তে বুঝতে পারবেন।
    এখন বলুন-- আমি এরকম বলেছি যে কারো কারো খারাপ লেগেছে, তাই সরি!
    আর দাস, এই কমেন্ট অনায়াসে আপনার মুখ থেকে বেরিয়েছে। 
    তাই জেন্ডার প্রশ্নে আপনি ও আপনার ইমোশন কোথায় দাঁড়িয়ে সেটা ভাববেন।

    যাঃ শালা! একটা ইয়ার্কি করতে গেলেও সাবধানে মেপেজুকে বলতে হবে? নইলে এরা সব কিছুর পেছনেই "পিছে-ক্যা-হ্যায়'' খুঁজে বেড়াবে। মার্কসবাদীরা যেমন সবেতেই শ্রেণীসম্পর্ক খুঁজে পায়।
    তাহলে "গয়লাদিদি গো, তোর ময়লা বড় প্রাণ!'' গাইলেও এরা জেন্ডার-বিকৃতি পেয়ে যাবে?
    নাঃ, বেঁচে থাকায় কোন সুখ নেই।

    12

    সেরেনার ফোঁপানো বন্ধ হয়েচে। দাস বলে-- আমার কমেন্টের জন্যে মাপ করবেন। ঠিক ওরকম করে বলতে চাইনি, মানে---।

    --আবার? ওরকম করেই বলতে চেয়েছিলেন, এতে সাফাই দেবার কি আছে! আপনি ইমানদারীকে সাথ আপনার কর্তব্য করেচেন। আমাকে আয়না দেখিয়েছেন।
    আপনাকে জানাই আমি আসার আগে অন্ততঃ গত তিনমাসে দশ কেজি ওজন কম করে এসেছি, যদিও এটা যথেষ্ট নয়। আরো পনের কেজি কমানো দরকার।
    আর দিওয়ানী-টিওয়ানী নয়, ওই বাচ্চা মত সুরেশকে হেল্প করতে চাইছি, কিন্তু ও সাড়া দিচ্ছে না, এড়িয়ে যাচ্ছে।
    আবারও বলি-- আপনি আমাকে আয়না দেখিয়েছেন।

    ---- এটাই তো গ্রুপ এক্সার্সাইজের কাজ। ১৯৫০ এ আমেরিকায় আবিষ্কৃত টি-গ্রুপ মেথড।
    আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন? এটা " চোলি কে পিছে ক্যা হ্যায়' জানা নয়। গ্রুপের সদস্যেরা মিলেমিশে সবাই সবাইকে ডেটা দেয়, অর্থাৎ, আয়না দেখায়।
    সেই ডেটাকে মেপেজুকে কতটা স্বীকার করবো সেটা ব্যক্তির ব্যাপার। তার থেকে কেউ নিজের অন্তর্মনের চোলির পেছনে কি আছে তা জনলেও জানতে পারে।

    টি-ব্রেকের পর নিধি প্রশ্ন তোলে মেয়েদের ""মধুমক্ষী কা ছাত্তা'' বলার পেছনে বা ঘুমন্ত কারো ছবিতোলার পেছনে কী আছে তার আলোচনায়।
    গ্রুপ সিদ্ধান্ত নেয় যে এর পেছনে আছে মেয়েটির সঙ্গে পরিচয় করার ইচ্ছে আর হীনমন্যতা- আই অ্যাম নট এগজ্যাক্টলি অফ হার স্ট্যান্ডার্ড।
    নিধি শ্রবণকে বলেন-- মেয়েটিকে ভাল লাগে, ওর বন্ধু হতে ইচ্ছে করে একথা ওকে বলতে লজ্জা পাও কেন?
    ---ন্‌-না, ও বাত নেহি।
    -- ফির ক্যা বাত হ্যায়? এই সুন্দর মেয়েটিকে তোমার ভাল লাগেনা বলছ?

    -- হ্যাঁ, লাগে। লেকিন উয়ো তো শাদীশুদা হ্যায়!
    সবাই হেসে গড়িয়ে যায়।

    --- ও! সমস্যা হল যে অদিতি ‘নো-এন্ট্রি' সাইন লাগিয়ে রেখেছে। ওকে ভাল লাগে বলতে সংকোচ, কিন্তু লুকিয়ে ফটো তোলার সময় মনে হয় নি যে ও বিবাহিত?
    বোকা ছেলে! এইসব না করে ওকে ভাল লাগলে সোজাসুজি বল। বিবাহিত হলেও সামাজিক গন্ডীর মধ্যে যে কয়-পা' দুজনার সম্মতিতে একসঙ্গে হাঁটা যায়, তাতে লাভ ছাড়া ক্ষতি তো নেই?

    অদিতি গোঁজ হয়ে থাকে।
    -- আচ্ছা, অদিতি, এই সাতজন পুরুষের মধ্যে কাকে কাকে তোমার বন্ধু হিসেবে পছন্দ?
    -- তিনজনের সঙ্গে ভালো করে আলাপ হয় নি। বাকি চারজন ওকে।
    --- সবচেয়ে কাকে?
    --- গঙ্গারাম দাসকে!
    সারা কামরা জুড়ে সমবেত হাসির হো-হো প্লুতস্বর। টেকো দাসবাবু লজ্জায় অধোবদন হইলেন।
    -- এতে এত হাসির কি আছে?, অদিতির গলায় ফুটে ওঠেছে রাগের ঝাঁঝ।
    ও যে এই বয়সে নিজেকে সবার সামনে মেলে ধরতে সাহস করছে সেটাই অনেক। আর সবচেয়ে ধৈর্য্য ধরে সবার কথা শোনে। সবাইকে সাহায্য করে, স্পেস দেয়।
    -- দাস, এবার তোমার পালা। তোমার অদিতিকে কেমন লাগছে?
    -- বিশেষ কিছু না।
    -- সে কি! মেয়েটাকে ভালো লাগে না?
    ও আমতা আমতা করে।
    --লাগে না তা তো বলিনি।
    -- কেন লাগে?
    -- মানে, ও না আসলে আমার দিল্লিনিবাসী ভাইঝির মত খানিকটা, মানে চেহারায় একটু মিল আছে।

    হৈ হৈ করে হেসে ওঠেন নিধি।
    -- যাচ্চলে! দিল জল ঢেলে। এর মধ্যে ভাইঝিকে এনে শিখন্ডী দাঁড় করাচ্ছেন কেন? অল্পবয়সী সুন্দরী মেয়েকে দেখে ভাল লাগছে এটা স্বীকার করতে লজ্জা পাচ্ছেন কেন? কেন অপরাধবোধ? আপনার থেকে এত ন্যাকামি আশা করিনি।

    ও কর্নারড্‌ হয়ে পাল্টা খেলে।
    -- সত্যি কথাটা বলি?
    -- তবে কি মিথ্যে কথা বলবেন?
    -- অদিতি, অপরাধ নেবেন না। কথাটা হল ও সুন্দরী কিন্তু আমার পছন্দের টাইপ নয়। একটু রূপুসী -ফুলটুসি টাইপ, আমি অনেক গেঁয়ো।
    --- ও, তাহলে ভাল লাগার কারণ? ওইসব ভাইঝি-টাইঝি ফয়েল বাদ দিয়ে?

    --- আমি হার্ডকোর ফেমিনিস্ট। ওই যে অদিতি কালকে বলেছিল না যে বস্‌ কে ভয় পায় ঠিকই, কিন্তু কিতনা ভি খুঁখার বস্‌ হো, গলত বাত হোনে পর ও প্রটেস্ট করেঙ্গী, ইসমেঁ দো রায় নহীঁ। ওর ওই ফাইটিং স্ট্যান্ড দেখে আমি ফিদা। বাইরে ছুঁইমুই, ভেতরে ফাইটার--- ভাল কম্বিনেশন, বুঝলেন কিনা।

    বিক্রম দেয়ালের দিকে তাকিয়ে বলেন-- এখানেও নিজেকে সুপিরিয়র দেখানোর চেষ্টা? দাস, আপনার অসুখ অনেক গভীরে, ভেবে দেখবেন। স্মার্ট হবার চেষ্টা না করে সিন্সিয়ার হলে তাড়াতাড়ি ফল পাবেন।

    দুপুরের খাবারের সময় যেন তাড়াতাড়ি এসে গেল। প্লেট ধুয়ে গুছিয়ে রাখার ফাঁকে ও দেখে অদিতিকে, অদিতি চশমার ফাঁকে হাসছে।
    --- তোমাকে আমার খুব ভাল লাগছে অদিতি, ক্লাসে যাই বলে থাকি না কেন।

     এটা কি করলি! জীবনে কোন মেয়েকে ডাইরেক্টলি প্রোপোজ করতে পারিস নি। যখনি করেছিস, কোন বন্ধু বা বান্ধবীর মাধ্যমে। আর আজকে একটা আদ্দেক বয়সী মেয়েকে! নাঃ, দোষ তোর নয়, যত দোষ মুসৌরির, দোষ মেঘলা আকাশের, কুয়াশা চিরে বর্শার মত বাঁকা সোনালী রোদ্দূরের। আর আর ওই হিমালয়ের অপার্থিব সৌন্দর্য্যের।
    মেয়েটির চোখ ঝিকিয়ে ওঠে হাসিতে।
    -- কেন বলুন তো? ক্লাসে আপনার সম্বন্ধে ভাল ভাল কথা বল্লুম বলে? কী, ঠিক বলেছি তো?
    পাশ দিয়ে থালাবাটি নিয়ে চলে যায় কিছু প্রতিভাগী, কথা বলতে বলতে যান কয়েকজন সহেজকর্তা।  ওর খেয়াল হয় যে ওর হাতে ওই মেয়েটির হাত অনেকক্ষণ ধরে ধরা রয়েছে। মেয়েটি ছাড়িয়ে নেয় নি।
    -- ভবিষ্যতে দিল্লি আসলে খবর দেবেন, দাসদা। দেখা করবো।
    -- আমি তো অনেক দূরে, সেই গুরগাঁওয়ে মেয়ের কাছে উঠি।
    -- তাতে কি, খবর দিয়েই দেখবেন, ঠিক পৌঁছে যাবো। আপনি খুব সুইট!

    দাস হতভম্ব, ওর কাছে একটু অস্বস্তিকর নতুন অভিজ্ঞতা।
    কফি ব্রেকের সময় বড়মেয়ের ফোন আসে।
    -- বিহেভিরিয়াল সায়েন্সের ট্রেনিং কেমন চলছে বাবা? এই বয়সে তুমি করেক্ট বিহেভিয়ার শিখতে মুসৌরি গেছ এর চেয়ে বড় তামাশা কি হতে পারে? মা বলছিল।
    -- এই, তোরা কিস্যু বুঝিস নি, কে বলেছে বিহেভিয়র শিখতে গেছি! গেছি মনের অন্ধকারকে জানতে।
    --কী দরকার! অন্ধকারকে না জেনে যদি জীবনের প্রথম ষাট বছর কেটে গিয়ে থাকে---।
    -- চুপ কর্‌, এই শোন-- একটি ইয়ং মেয়ে না আজ আমাকে "হাউ সুইট'' বলেছে।
    --- উঃ বাবা, তোমার মত সেল্ফ-অবসেস্‌ড লোক খুব কম দেখা যায়।
    শোন, তোমাদের জেনরেশন আর আমাদের জেনরেশনের ইডিয়ম-মুহাবরা সব আলাদা। কাজেই বেশি লাফালাফি কোর না। আমাদের জেনারেশনের মেয়েরা "সুইট" বুড়োদের বলে।
    তুমি যা ভাবছ সেটা বোঝাতে বলে "হাউ সেক্সি!''
    কি হল বাবা? জমীন পর আ গয়ে? এবার একটি হিন্দি মুহাবরা শোন । তারপর ক্লাসে যেতে যেতে মানেটা ভেবে বের কর।
    -" চৌবেজী চলে থে ছব্বেজী বননে, লৌট আয়ে দুবেজী বনকর।''
    চার আনার সাধ ছিল হবে ছ'আনা, ফিরে এল বেচারা  হয়ে দু'আনা ।

                                                                                                                               (চলবে)

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৮৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • স্বাতী রায় | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:১৮537256
  • রঞ্জন দা, এই পর্ব পড়ে নিজেকে নিয়ে ভাবতে বসেছি। 
  • রঞ্জন | 2001:999:48c:d053:d689:8b37:ea4a:1f35 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:২৩537284
  • স্বাতী
    আমি ধন্য।  একজন তো নিজেকে নিয়ে ভাবছে।
     
    আমরা গোটা দুনিয়া নিয়ে ভাবি, কিন্ত নিজেকে নিয়ে ভাবতে ভুলে যাই।  কোন কাজ করে ভাবি না কেন করলাম।
    এর পেছনে চালিকা শক্তি কী ছিল, কোন  বেসিক ইমোশন?
    তাকে চিনতে পারলেও স্বীকার করতে ভয় বা লজ্জা পাই।  যুক্তির আবরণ দিয়ে ঢেকে রাখি।
     
    আবার বলছি, এটা কোন সর্বরোগহর বটিকা নয়। একটা পদ্ধতি মাত্র। 
    যেমন ঝাঁটা। কিন্ত রোজ ঝাঁট না দিলে ওটা এককোণে পড়ে থাকবে। আর ঘরটা নোংরা থাকবে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক প্রতিক্রিয়া দিন