( ৬ ) ---- ' আমরা স্যার শোভাবাজার থেকে আসছি। একটা সমস্যায় পড়েছি। যদি একটু সাহায্য করেন .... ' প্রাণময় বলল। ---- ' আচ্ছা আচ্ছা .... কোন অসুবিধে হয়েছে বলেই তো এখানে এসেছেন .... কোন হেজিটেট করবেন না ... বলুন .... ' ---- ' ওই ডেথ সার্টিফিকেটের ব্যাপারে ... তিনমাসের ওপর হয়ে গেল ... বৌদির পেনশনটা ... ' প্রাণময় অসংলগ্নভাবে বলল। তার কেমন যেন সব তালগোল পাকিয়ে যেতে থাকে। কলতান এদের স্নায়ুর চাপটা অনুভব করতে ... ...
( ৫ ) ভোরের বেলায় আকাশ থেকে নরম আলো ছড়িয়ে পড়ছে। পুজো এসে গেল। শোভাবাজারে কৃষ্ণময় ঠাকু্রের বাড়ি দুশো বছরের দুর্গাপুজো। তিন চার পুরুষের মধ্যে দিয়ে বয়ে এসে প্রাণময়ের কাঁধে এসে পড়েছে। এখন তাদের পড়তি অবস্থা। আগের সে দিন আর নেই। তবু বছরে একবার বংশের ধারা রক্ষা করে চলতে হচ্ছে। দাদা মনোময় থাকলে কোন চিন্তা ছিল না। এত ঝক্কি তার ওপর পড়ত না। তাকে বৌদির এবং ভাইপো ভাইজির ... ...
( ৪ ) সন্ধে সাতটা নাগাদ কলতানের বাইক এসে থামল মনোময়বাবুর বাড়ির সামনে। আশ্চর্যের ব্যাপার কলতানের বাইকের আওয়াজ পেয়ে লেজের দোলা দিতে দিতে নীচের দরজায় আবির্ভূত হল জিমি। রাস্তায় নামার অভ্যাস নেই তার। সে দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে কলতানের দিকে তাকিয়ে চঞ্চল ঘোরাঘুরি শুরু করল, কলতান কে অভ্যর্থনা করার ভঙ্গীতে। ওপর থেকে স্বর্ণালীর গলা পাওয়া গেল ---- ' জি ..মি ... '। জিমি বাধ্য ছেলের ... ...
( ৩ ) বেলা দশটা নাগাদ মাথায় একটা টুপি পরে, তার ওপর হেলমেট চড়িয়ে আর মুখে মাস্ক লাগিয়ে কলতান বাইকটা নিয়ে একটা চক্কর দিতে বেরোল। চোখে লাগানো রয়েছে রোদ চশমা। টুপি আর মাস্ক পরা থাকলে খুব চেনা লোককেও চিনতে পারা যায় না, স্বল্প পরিচিত হলে তো দূরের কথা। লেবুবাগানে একশ তেইশ বি বাড়িটার সামনে ফুটপাথের ধারে এসে দাঁড়াল। সে গাড়িতে বসে বাড়ির ছাদের দিকে তাকাল। আলসেতে নানা ফুলের চারা লাগানো টবের ... ...
( ২ ) দ্বৈপায়নের বোনের বিয়ের কাজ মিটে গেছে। বোন শ্বশুরবাড়ি চলে গেছে। সে অফিস থেকে তিনদিন ছুটি নিয়েছিল। আজ অফিস যেতে হবে। তৈরি হচ্ছিল সকাল নটা থেকে। এই বাথরুমে ঢুকবে এবার। এই সময়ে দ্বৈপায়নের মোবাইল বেজে উঠল। ---- ' হ্যা... কলতান বল। কি সৌভাগ্য ... সকাল বেলাতেই আমাকে স্মরণ করলি ... তোর তো এখন বিরাট ব্যাপার ... যাক, সেদিন সব ঠিকমতো হয়েছিল তো .... আমি একা লোক ... তেমন দেখাশোনা করতে পারিনি .... আসলে ব্যাপার ... ...
( ১ ) দ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যের বোনের বিয়ে। সাড়ে নটা নাগাদ বুফে টেবলগুলোর ধারে ভালরকম ভিড় লেগে গেছে। নিমন্ত্রিত অতিথিদের খাদ্যগ্রহণের এটা হল ব্যস্ততম সময়। এই ঢেউটা চলবে আরও প্রায় একঘন্টা। দেখে মনে হচ্ছে অন্তত শ ছয়েক লোককে নেমন্তন্ন করেছে এরা। খাওয়ার হলটা তেমন প্রশস্ত নয়। ফলে বুফে কাউন্টারে গিয়ে বারংবার খাবার নেওয়া এবং ভোজন প্রক্রিয়া খুব মসৃনভাবে হচ্ছে না। সামান্য অনিচ্ছাকৃত ঘাড়ের কাছে ... ...
কাল থেকেই আজ আকাশ মেঘমেদুর। টিপটিপ করে বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে। বিবর্ণ নিষ্প্রভ দিন। রাস্তায় লোকজন কম। অঞ্জলি বলল, ' আজ কিন্তু খিচুড়ি খাবার দিন ... ' ----- ' তা কর না ... সঙ্গে মামলেট ... আজ আর অফিস যেতে ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে পড়ে পড়ে ঘুমোই। দীনবন্ধুর খবর নেই অনেকদিন। কোথাও গেছে নাকি ? ' নিতাইবাবু বললেন। ----- ' না না কোথায় আবার যাবে। ওর বউয়ের ... ...
কালীকিঙ্করবাবুর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি সেই যে রিটায়ার করার মাসখানেক আগে নিখিল ব্যানার্জীর বাড়িতে এসেছিলেন কিছুক্ষণের জন্য তার পর থেকে তার আর খোঁজ নেই। সাগর আর রাত্রি এর মধ্যে দুবার বটতলায় থানায় গিয়ে খোঁজ করে এসেছে। ওরাও ঠিকমতো কিছু বলতে পারল না। তাছাড়া আগের কর্মীরা প্রায় কেউই এখন এ থানায় নেই। নতুন ওসি বললেন, ' সাত আট মাস আগে একবার এসেছিলেন ... ...
সময় তো আর থেমে থাকবার নয়। বার্ষিক গতিচক্রের নিয়ম মেনে পৃথিবী আরও দুবছরের বুড়ো হয়ে গেল। এল ১৯৬৬ সাল। ১৯৫৯ -এর মতো ১৯৬৬ সালেও শুরু হল ব্যাপক খাদ্য আন্দোলন। চাল ডাল থেকে শুরু করে আলু বেগুনে পর্যন্ত আগুনের ছ্যাঁকা লাগল। চারদিকে সে কি অশান্তি। মধ্যবিত্ত গেরস্থরা একবেলা গমের খিচুড়ি খেতে লাগল। আলুর বদলে কাঁচকলা সেদ্ধ খাওয়া অভ্যেস করে ফেলতে লাগল সরকারের পরামর্শ মেনে। বছর দুই আগে কমিউনিস্টরা দুভাগে ভাগ হয়ে গেছে চিন ভারতের যুদ্ধ নিয়ে মন কষাকষি করে দলের লোকেদের ... ...
সন্ধে সাড়ে ছটার সময় বিভূতিবাবু পাড়ার প্রবীণ চিকিৎসক হরিপদ মিত্রকে নিয়ে এলেন। জন্মেজয়বাবু তখন অঘোরে ঘুমোচ্ছেন। ধুতি পাঞ্জাবী পরা পক্ককেশ স্থূলকায় প্রচুর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হরিপদ মিত্র মশাই কোন তাড়াহুড়ো করলেন না। জন্মেজয়বাবুকে জাগালেনও না। বিছানার সামনে একটা চেয়ারে বসে তাকে একমনে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন কোলের ওপর হাত রেখে। দেখলেন রোগীর পা বেশ ফোলা। শ্বাসের ধরণ ... ...