এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  গপ্পো

  • তোমার বাস কোথা যে...- ১০

    Nirmalya Nag লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | গপ্পো | ১১ জুলাই ২০২৪ | ৪৩৪ বার পঠিত
  • [ এই কাহিনীর সব চরিত্র কাল্পনিক। জীবিত বা মৃত কোনো ব্যক্তির সাথে কোনও মিল যদি কেউ খুঁজে পান তা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত এবং কাকতালীয়। ] 

    বাইরের ঘর থেকে বেরিয়ে ডাইনিং রুমে এসে দাঁড়িয়ে গেল বিনীতা। মরমে মরে যাচ্ছে সে। কথাটা তার মুখ দিয়ে বেরোল কী করে? তাও একজন বাইরের লোকের সামনে? কী ভাবল ইন্দ্রনীল? স্বামী আর স্ত্রীর মধ্যে একটা দূরত্ব রয়েছে? কথাটা যদিও একদম ঠিক। এক ছাদের মধ্যে নিচে থেকেও যাদের মধ্যে দিনে একটা কি দুটো কথা হয়, এমন কি ছুটির দিনেও, তাদের মধ্যে সম্পর্ক কি স্বাভাবিক? যাদের গল্প করা নেই, বেরাতে যাওয়া নেই, সিনেমায় যাওয়া নেই, রেস্টুরেন্টে খাওয়া নেই, বাড়িতে খাবার সময়েও কথাবার্তা নেই, তাদের মধ্যে সম্পর্ক কি স্বাভাবিক? না, নয়। সেটা বিনীতা আর অরুণাভ দুজনেই জানে। তবুও সেটা ডাক্তারবাবুর মত বাইরের একজন লোকের সামনে এইভাবে বেরিয়ে যাওয়াটা অত্যন্ত অন্যায় হয়েছে। 

    আরও অন্যায় হয়েছে এই জন্য যে তার স্বামীর ক্যানসার, কবে কী হয়ে যায় তার ঠিক নেই। ডাক্তার বলেছে এক বছর, তবে আর আগেও কিছু একটা হয়ে যেতেই পারে। তখন কী করবে সে মেয়েকে নিয়ে, একা মানুষ করতে পারবে? এই সব ভাবনা তাকে কুড়ে কুড়ে খায় আজকাল। রাতে ভাল ঘুম হচ্ছে না। রান্না করতে এক দিন দুবার ডালে নুন দিয়েছে, আর এক দিন ভাজতে গিয়ে মাছ পুড়িয়ে ফেলছিল, বিসপাতিয়া খেয়াল করায় সেটা সামলানো গেছিল। এগুলো আগে হত না তার। হ্যাঁ, অরুণাভ শুধু কাজ আর বই নিয়ে থাকতে ভালবাসে; সংসারের দিকে, স্ত্রীর বা মেয়ের দিকে তার কোনও নজর নেই। তবু স্ত্রীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছে সে। সবার ভালবাসার ক্ষমতা তো আর এক রকম হয় না, আর ভালবাসা পাওয়ার মত কপাল করেও সবাই আসে না। তবুও সেই স্বামীকে জড়িয়ে এমন একটা ইঙ্গিত করল সে! 

    রদ্যাঁর স্কাল্পচারে মেল আর ফিমেল হাতের ব্যবধান নিয়ে বিনীতার মন্তব্য যে কাছে থেকেও দু’জন মানুষ আসলে দূরেই রয়েছে, তাতে অরুণাভ হয়তো কিছু মনেই করবে না। এটা মনে করার মত কিছু সেটা মাথাতেই আসবে না কারণ এটা তার অফিসের কাজ বা গল্পের বই-এর সাথে কোনও ভাবে যুক্ত নয়। না কি মনে করতেও পারে? ইদানীং নানা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে তার স্বামীর মধ্যে। মেয়ের সাথে গল্প করছে, প্রায় অচেনা ডাক্তারকে নেমন্তন্ন করছে, চেয়ে ওষুধ খাচ্ছে, যদিও স্ত্রীর সাথে তার সম্পর্কটা বিশেষ পালটায়নি। নাহ, জীবনটা বড্ড জটিল হয়ে যাচ্ছে বিনীতার। ভবিষ্যতে যে আরও কী আছে কে জানে। নিঃশ্বাস ফেলে রান্নাঘরে ঢুকল সে। বিসপাতিয়া ভাতের ফ্যান গালছে দেখে ফের ডাইনিং রুমে গেল সে। কাবার্ড থেকে ভাল প্লেট আর বাটিগুলো বার করা হয়েছে, তবে জলের গ্লাস বাদ গেছে। 

    রঙিনকে এক পায়ে লাফাতে লাফাতে ড্রইং রুম থেকে বেরিয়ে আসতে দেখল বিনীতা। ঠিক করল ওকে আজ ইন্দ্রনীল আর অরুণাভর সাথেই খেতে দিয়ে দেবে। 

    **** 

    খাবার সময়ে প্রথম দিকটা একটু অস্বস্তি হচ্ছিল বিনীতার। তারপরে অরুণাভ বা ইন্দ্রনীলের ব্যবহারে কোনও বদল না দেখায় ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হল সে। ডাইনিং টেবিলে সবাই বসার পরে ইন্দ্রনীল গল্প করছিল রঙিনের সাথে। বলছিল কাপ, গ্লাস, বাটি ইত্যাদি সাজিয়ে সরাসরি সেখান থেকে আঁকার চেষ্টা করতে। কী করে প্রোপোরশন ঠিক রাখতে হয় সে নিয়েও দু-একটা কথা বলল।
    “প্রোপোরশন কাকে বলে জান?” জিজ্ঞেস করল ইন্দ্রনীল।
    মাথা নাড়ল ক্ষুদে শ্রোতা।
    “প্রোপোরশন হল একটা জিনিস থেকে আর একটা জিনিস কতটা ছোট বা বড়, কতটা উঁচু বা নিচু, কতটা দূরে বা কাছে আছে সেটা বুঝে নিয়ে ছবি আঁকার সময়ে ঠিক মত ব্যবহার করা। ধর, এই বাটিটা প্লেটের চেয়ে উঁচু, কিন্তু গ্লাসের চেয়ে নিচু। প্লেটটা কিন্তু আবার গ্লাস বা এই বাটির চেয়ে সাইজে বড়। এটাকে পার্সপেকটিভও বলে। না হলে দেখা যাবে আঁকার সময়ে বাড়ির চেয়ে মাউনষ লম্বা হয়ে যাচ্ছে,বলল ইন্দ্রনীল।
    ফিক করে হেসে ফেলল রঙিন।
    হাসল ইন্দ্রনীল। “বড় হও, এগুলো নিজেই জানবে,” বলল সে।
    প্রোপোরশন, পার্সপেকটিভ এগুলো কি জীবনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য নয়, ভাবছিল বিনীতা। ইন্দ্রনীলের কথা কানে এল। “আপনিও বসে যান না।” 
    “আপনারা শুরু করুন। আমি আপনাদের দিয়ে বসে যাব,” বলল বিনীতা।
    খাওয়া শুরু করল ডাক্তার, অরুণাভ আর রঙিন।
    “ডালটা বেশ ভাল হয়েছে। রসুন ফোড়ন দেওয়া হয়েছে দেখছি। আপনি করেছেন?” বলল ডাক্তার।
    “রসুন ফোড়ন! আপনি তো দেখছি রান্নাও জানেন। আমি শুধু বুঝি খেতে ভাল হয়েছে কি না,” বলল অরুণাভ।
    “স্কাল্পচারের সখ তো গেছে। আপাততঃ রান্নাই আমার হবি। ছুটির দিনের রান্নাটা নিজেই করি বেশির ভাগ দিন। অন্য দিন রান্নার লোক করে দেয়।… বললেন না তো ডাল কে বানিয়েছে?”
    বিনীতা বলল, “আমি আর আমাদের বাড়িতে যিনি কাজ করেন দু’জনে মিলেই করেছি।”
    “ডালটাও দু’জনে মিলে করেছেন?” হেসে জিজ্ঞেস করল ইন্দ্রনীল।
    “ডাল মা করেছে, আমি জানি,” বলে উঠল রঙিন।
    “আমি সব মিলিয়ে বললাম। আর একটু ডাল দিই,” জিজ্ঞেস করল বিনীতা।
    “না, সেদিন বললাম না আমি অল্প খাই।”
    “আরে লজ্জা করে খাবেন না,” বলল অরুণাভ।
    “লজ্জা, ঘৃণা আর ভয় - এই তিনটে জিনিস না কি থাকা উচিত নয়। আমার ডিকশনারিতে এগুলো নেই। তাতে অবশ্য মাঝে মাঝে সমস্যা হয়, কখনও আমার নিজের, কখনও অন্যের।… ফুলকপির তরকারিটাও ভাল হয়েছে,” বলল ইন্দ্রনীল।
    ইলিশ মাছের প্লেট আর মাংসের বাটি এগিয়ে দিল বিনীতা।
    “দু পিস মাছ দিয়েছেন? আমি একটা খাব। আর মাংসটা কমিয়ে দেবেন,” ইন্দ্রনীল বলল।
    “আগে একটা মাছ খান। তার পর দেখা যাবে,” বলল বিনীতা। 
    আগে এক পিস ইলিশ নিল ইন্দ্রনীল, তারপর দ্বিতীয়টাও খেল। চিকেনের একটা লেগ পিস প্লেটে তুলে নিল সে। সামান্য ঝোল দিয়ে অল্প ভাত মেখে মুখে দিল।
    “গোলমরিচের ফ্লেভার, অথচ রিচ নয়। চমৎকার স্বাদ।”
    “গোলমরিচ দেওয়া মাংস আমিই বিসপাতিয়াকে শিখিয়েছিলাম। এখন ও আমার চেয়ে অনেক ভাল বানায়। রিচ আর লাইট দু রকম বানাতে পারে। সর্ষে ইলিশ আছে বলে লাইট বানাতে বলেছিলাম,” বলল বিনীতা। সে এর মধ্যে এক সময়ে বসে গেছে খাবার নিয়ে।

    রঙিন শুধু মাংস খেল, সে খেতে বসার সময়েই জানিয়ে দিয়েছিল ইলিশ মাছ পরের দিন খাবে। বিনীতা কারণটা জানে। ইলিশের কাঁটা ওকে বেছে দিতে হয়, আর ডাক্তারবাবুর সামনে সেটা করলে ওর প্রেস্টিজে লাগবে।

    অনেক অনুরোধেও মিষ্টি খেল না ইন্দ্রনীল। লাঞ্চ বা ডিনারের সাথে দুধজাত জিনিস একেবারেই খায় না সে। কেবল টক দই হলে আলাদা কথা। 

    ড্রইং রুমে ফিরে বই-এর আলমারিদুটো দেখছিল ইন্দ্রনীল। বই পড়ার অভ্যাস তারও আছে, তবে অরুণাভর মত সংগ্রহ তার নেই। এই আলমারির বেশিরভাগই বই-ই ইংরেজি, আর সেগুলো ফিকশন। বাংলা বই-এর মধ্যে চোখে পড়ল মুজতবা আলী, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, সমরেশ বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আর সুবোধ ঘোষের কিছু বই। হাল আমলের কেউ নেই। অবশ্য এখনকার লেখকদের কাজের সাথে পরিচয়ও নেই ইন্দ্রনীলের। ইংরেজি বই-এর মধ্যে দেখল বর্তমানের অনেকেই রয়েছে, আর তাদের মধ্যে আমেরিকান লেখকদের সংখ্যা বেশি। পুরনো লেখকদের মধ্যে হার্মান মেলভিল, টনি  মরিসন, আয়ান র‍্যান্ড যেমন আছেন তেমনই রয়েছেন ফ্রেডরিক টুটেন আর কেভিন ক্যান্টি। ভারতীয় লেখক যাঁরা ইংরেজিতে লেখেন তাঁদের মধ্যে অমিতাভ ঘোষ আর কিরণ দেশাই-এর বইও রয়েছে।

    অন্য আলমারিটার সামনে গিয়ে ইন্দ্রনীল দেখল সেটা নন-ফিকশনে ভর্তি। এত রকম বিষয়ে আগ্রহ অরুণাভর! অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, থেকে শুরু করে বই রয়েছে অস্ত্রশস্ত্র, গহনা আর মদ নিয়েও। এখানে সবই ইংরেজি বই।

    একটা আওয়াজ শুনে দেখল অরুণাভ ঘরে ঢুকেছে।
    “আপনার বইগুলো দেখছিলাম। দারুণ কালেকশন,” বলল ডাক্তার।
    অরুণাভ হাসল। “ভেতরে আরও কিছু আছে। তবে এখন রাখার জায়গার অভাব দেখা যাচ্ছে।”
    “এত বই, কোনও ক্যাটালগ মেনটেন করেন? কোথায় কী আছে মনে রাখা কঠিন তো। আমার যেমন অল্প কিছু বই আছে, আমি মনে রাখতে পারি কোথায় কী আছে।”
    “আমিও মনে রাখি। অসুবিধে হয় না। কেবল খেয়াল রাখতে হয় যে আলমারির যে তাকের যেখান থেকে নিয়েছি, বই যেন ঠিক সেখানেই ফেরত যায়,” বলল বই-এর পোকা অরুণাভ।
    একটা ছোট প্লেটে জোয়ান মৌরী ইত্যাদি নিয়ে ঘরে আসে বিনীতা। প্লেটটা বাড়িয়ে ধরে এগিয়ে দেয় ইন্দ্রনীলের দিকে। ডাক্তার একটু জোয়ান নেওয়ার পর অরুণাভ মৌরী তুলে নেয়।
    ডাক্তার বলে, “খাওয়া দাওয়া শেষ, রাতও অনেক হল। এবার আমায় যেতে হবে।”
    অরুণাভ আরও কিছুক্ষণ থাকতে থাকতে বলল। তবে অনুরোধ রাখল না ইন্দ্রনীল। “খুব সুন্দর কাটল সন্ধেটা। আর ম্যাডাম, থ্যাংক ইউ ফর দ্য গ্রেট ডিনার। রঙিন কি শুয়ে পড়েছে?”
    “হ্যাঁ, কাল সকালে আবার স্কুল আছে,” বলল বিনীতা।
    “রাইট… আচ্ছা, আসি… আপনি শরীরের দিকে খেয়াল রাখবেন। গুড নাইট।”

    ইন্দ্রনীলকে বাইরের গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিল কর্তাগিন্নী মিলে। সামনের আর পিছনের কাঁচে ডক্টর স্টিকার লাগানো হ্যাচব্যাক গাড়িটা এগিয়ে গেলে ঘরে ফিরে এল। পোশাক বদল করে হাউসকোট পরে নিল বিনীতা, অরুণাভকে ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়তে বলল। আজ তার একটু অনিয়ম হয়েছে, ধকলও গেছে। অন্য দিন আরও আগে শুয়ে পড়ে সে। তার স্বামীর অনুরোধ ডাক্তার না রাখায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে বিনীতা। কাল সকালেই তো ফের অফিস ছুটবে। 

    অরুণাভ শোয়ার ঘরের দিকে এগোলে বিনীতা রান্নাঘরে গেল বিসপাতিয়াকে একটু সাহায্য করার জন্য। বেঁচে যাওয়া খাবার ফ্রিজে গুছিয়ে তুলতে হবে, একগাদা বাসনও নেমেছে, তার মধ্যে দামী গুলো এখনই ধুয়ে ফেলা দরকার। তারপর সেগুলো ডাইনিং টেবিলে রেখে দিলেই হবে। কাল না হয় কাবার্ডে তুলে রাখা যাবে।

    মিনিট পনের বাদে বিনীতার কাজ মিটল। রঙিনের ঘরে উঁকি দিয়ে দেখল মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। শোয়ার ঘরে গিয়ে দেখে বেডসাইডের টেবিলের আলো জ্বেলে বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েছে রঙিনের বাবাও। খোলা বইটা বালিশের পাশে রাখা।

    যথাসম্ভব শব্দ না করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে চিরুনি তুলে নিয়ে সে গেল বারান্দার খোলা দরজার দিকে। এই বারান্দার সামনে একটা মুসান্ডা আর একটা হলুদ জবা গাছ আছে। দরজাটা বাইরের রাস্তা থেকে খুব চোখে পড়ে না। তাই এইখানে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়ায় বিনীতা, চিরুনিতে চুল উঠে এলে সেগুলো আঙুলে পাকিয়ে ঘরের কোণে রাখা ঢাকনা দেওয়া ছোট ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। আজও তাই করতে যাচ্ছিল, এমন সময়ে বাড়ির সামনে একটা গাড়ি এসে থামল। অবাক হয়ে বিনীতা দেখল ডাক্তার ফিরে এসেছে। কী হল? কিছু ফেলে গেছে? হর্ন যেন না দেয়, অরুণাভর ঘুম ভেঙে যেতে পারে। ওর ঘুম বেশ পাতলা। গাড়ির দরজা খোলার শব্দ পেয়ে তাড়াতাড়ি ডাস্টবিনে চুল ফেলে দেয়। পায়ের চাপে খুলে যাওয়া ডাস্টবিনের ঢাকনা একটু শব্দ করে বন্ধ হয়। বিসপাতিয়াও নিশ্চয় শুয়ে পড়েছে, ওর আজ অনেক পরিশ্রম গেছে। কিছু করার নেই, এই হাউসকোট পরেই যেতে হবে। বিনীতা বাইরের ঘরে এসে দরজা খুলে দেখে সামনের রাস্তায় বিব্রত মুখে দাঁড়িয়ে আছে ইন্দ্রনীল।

    বিনীতা বলল, “কী হলো? কিছু ফেলে গেছেন?”
    “ভেরি সরি, মোবাইলটা বোধ হয় ফেলে গেছি। মোস্ট প্রোক্যাবলি ড্রইং রুমের সেন্টার টেবিলে আছে।… আমি কলিং বেল বাজাবো কি না বুঝতে পারছিলাম না। এক্সট্রিমলি সরি, আপনারা নিশ্চয় শুয়ে পড়েছিলেন,” বলল ইন্দ্রনীল।
    “আমি শুতে যাচ্ছিলাম। ও ঘুমিয়ে পড়েছে। একটু দাঁড়ান, আমি দেখে আসছি।”
    বিনীতা ঘরে এসে দেখে মোবাইলটা সেন্টার টেবিলেই আছে। খবরের কাগজের তলায় একটু চাপা পড়ে গেছে। রঙিনের খাতায় ছবি আঁকার সময়েই মনে হয় এটা হয়েছে। মোবাইল-টা নিয়ে ফের বাইরে আসে সে।
    “এই নিন,” মোবাইলটা ফেরত দেয় বিনীতা।
    “থ্যাংকস অ্যান্ড সরি এগেন,” বলল ইন্দ্রনীল।
    “আপনি যে বলেছিলেন আপনার নাকি সব কিছু মনে থাকে,” হেসে বলল বিনীতা।
    অদ্ভুত একটা মুখের ভঙ্গি করল ডাক্তার। “মনে হচ্ছে একটু ভুল বলেছিলাম। আসলে... না থাক....”
    “থাকবে কেন? আসলে কী?”
    “আমার মনে থাকে শুধু সেগুলোই যার সঙ্গে আপনি জড়িত। চলি।”
    পাথরের মত দাঁড়িয়ে থাকে বিনীতা। ইন্দ্রনীল গাড়ি চালিয়ে চলে যায়।

    ঘরে ফিরতে সময় লাগে বিনীতার। বারান্দার দরজা বন্ধ করে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অন্যমনস্ক ভাবে মুখে ক্রিম লাগায়। অরুণাভ ঘুমিয়ে রয়েছে, খোলা বইটা তেমনই রয়েছে বালিশের পাশে। ইন্দ্রনীলের শেষ কথাগুলো কানে বাজতে থাকে। ক্রিম মাখা শেষ হলে স্বামীর পাশে শুয়ে পড়ে সে। তার পরেই উঠে আসে, অরুণাভর দিকের বেডসাইড টেবিলের ওপর রাখা আলোটা নেভাতে ভুলে গেছে। ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজের মুখটা এক ঝলক চোখে পড়ে। খাটের পাশে এসে আলোটা নেভায়, বইটা যেমন ছিল পড়েই থাকে। নিজের জায়গায় শুতে গিয়েও ফের ওঠে সে, অন্ধকারের মধ্যেই হাত বাড়িয়ে তার দিকের বেডসাইডের টেবিলে রাখা বোতল থেকে ঢকঢক করে বেশ খানিকটা জল খায়। প্রথমে যথানিয়মে চিৎ হয়ে শোয়, একটু পরেই পাশ ফেরে, স্বামীর উলটো দিকে।

    ঘুম কি আজ আসবে? (ক্রমশঃ)

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ১১ জুলাই ২০২৪ | ৪৩৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন