দূতাবাস আমাদেরকে খুব দারুণ করে সমাদর করল। মেহেদি হাসান নামে একজন সচিব বেশ মনোযোগ দিয়ে আমাদের সমস্ত অভিযোগ শুনলেন। এরপরে অভিযোগ গুলো নিয়ে আমাদের ভিতর থেকে কয়েকজনকে নিয়ে গেলেন রাষ্ট্রদূতের সাথে কথা বলার জন্য। আমরা বাকিরা নিচে বসে রইলাম, ছবি তুললাম। রাষ্ট্রদূত দ্রুত অ্যাকশন নিলেন। ফোন দিয়ে গরম করে ফেললেন মুহূর্তে। যারা কথা বলে আসলেন তাদের পরে আমি কথা বলার জন্য গেলাম। আমি যখন উনার রুমে ঢুকি তখন তিনি মোবাইলে আমাদের কোম্পানির কর্তা কোন ব্যক্তির সাথে লাউড স্পিকারে কথা বলছেন। বাকিটা আমার গর্বের হয়ে রইল। ওই পাশ থেকে একজন খুব কর্কশ স্বরে কথা বলছিলেন। আমাদের রাষ্ট্রদূত ( নামটা দেখেছি কিন্তু ভুলে গেছি, কি জানি হুদা!) উনাকে ফোনে থামিয়ে দিয়ে বললেন, “আপনি জানেন কার সাথে কথা বলছেন? আমি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বলছি, আপনে এমন শব্দ ব্যবহার করতে পারেন না আমার সাথে কথা বলার সময়। এরা আসছে নির্দিষ্ট অভিযোগ নিয়ে। আপনারা কোন আইনে, কোন অধিকারে আমার দেশের লোকজনের পাসপোর্ট নিয়েছেন?” ওই পাশে নীরব হয়ে গেল কিছুক্ষণের জন্য। বলল ওরা আসলেই সবাইকে পাসপোর্ট দিয়ে দেওয়া হবে, আজকে এখনই দিয়ে দেওয়া হবে। ... ...
মসজিদের বাহিরে গিয়ে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। এরা মসজিদকে আমাদের মত পেট মোটা হুজুর পাঁচবার নামাজ পড়াবে আর বাকি সময় মসজিদের সৌন্দর্য বর্ধনে ব্যয় করবে এমন করে রাখে নাই। সুন্দর সবুজ ঘাসের একটা ছোট্ট উদ্যান। শিশুদের জন্য দোলনা, বাস্কেটবল কোর্ট, সবার বসার জন্য সুন্দর করে সাজানো চেয়ার টেবিল! এক পলকেই পুরো ধারনাটা আমার খুব পছন্দ হয়ে গেল! ... ...
বিমানে উঠার পরেই শুরু হল শ্রমিক জীবন! আমি মুহাম্মদ সাদেকুজ্জামান, নিজেকে একটু উন্নত প্রাণী বলে মনে করি, আমি বইপত্র পড়ি, সিনেমা সিরিজ নিয়ম করি দেখি, মতামত দেই, অস্কারের ভাল মন্দ নিয়ে জ্ঞান দেই, দেশের নারী অধিকার নিয়ে আমার কথা না বললে চলেই না, খুব আগ্রহ নিয়ে সংখ্যালঘুদের কথা বলি, নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক আমার বোন, যার ভেরিফাইড পেজটা খুলছি এবং এখনও অন্যতম এডমিন আমি, এমন শতশত বিষয় যা আমাকে একটু আলাদা করে রেখেছিল, বিমানে উঠা মাত্র সব শেষ! আমি শ্রেফ শ্রমিক! আমার জন্য কাটা হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে সস্তা টিকেট। ঢাকা থেকে বুখারেস্ট, মাঝে দুবাইয়ে থাকতে হবে ছয় ঘণ্টা, সব মিলিয়ে ১৮ ঘণ্টার ভ্রমণ। এই লম্বা ভ্রমণে কোন খাবারের ব্যবস্থা নাই! বিমানে খাওয়া নাই! শ্রমিকদের এগুলা থাকতে হয় না, মানে বিদেশ ভ্রমণে ক্ষুধা পিপাসা আবার কী! যেন বিমানের শব্দের মাঝে শুনতে পেলাম কোন গায়েবি আওয়াজ, শ্রমিক জীবনে স্বাগতম শরীফ! ... ...
আমরা ছোটবেলায় পাড়ায় পাড়ায় ঘুরতাম শবে বরাতে। আমাদের দুপুরের মধ্যেই খোঁজ খবর নেওয়া হয়ে যেত কোন মসজিদে কখন মিলাদ হবে, তবারক হিসেবে কী থাকছে ইত্যাদি! সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা সাজাতাম। একই সময় দুই মসজিদে মিলাদ হলে প্রাধান্য পেত তবারকের উপরে। সারারাত বাহিরে থাকার লাইসেন্স পেয়ে আমরা সেদিন উড়ছি। এমন একদিন উড়তে উড়তে রাত পার করে আমি আর আমার বন্ধু রনি বাড়ির পথ ধরেছিলাম। ফজরের আজান হল। আমি বললাম, ফজর নামাজ পড়ে পরে বাড়ি যাব। রনি আমাকে বলল, ধুর, সারারাত নামাজের খবর নাই এখন ফজর পড়বে, বাড়িত যাও মিয়া! আমি শুনলাম না। রনি বাড়ি চলে গেল আর আমি মসজিদে। নামাজ শেষে বের হয়ে দেখি আমার নতুন কেনা জুতাটা নাই! শবে বরাতের রাত শেষ করে কেউ ওই ভোরে আমার জুতা চুরি করল? মানতেই পারছিলাম না। কিন্তু মেনে নিতে হল, খালি পায়ে বাড়ি ফিরে ছিলাম। এবং এরপরে আমার শবে বরাতে প্রতি দুর্বলতাও চলে গেল! ঘরে বসেও ইবাদত করা যায় ফর্মুলায় চলে আসলাম! যাই হোক, উৎসবটা খারাপ ছিল না, বিশেষ করে পারিবারিক ভাবে যে আয়োজন হত তা আজীবন মিস করব। ... ...
এই বসুন্ধরা সিটির সামনেই আমার তিনজন বন্ধু এক সাথে ধরা খাইল। ভোর বেলা বাস থেকে নেমে মেসে ফিরছে। তিনারা হাজির। ওরা আলগোছে সব দিয়ে দিছে। একজনের ছিল সিটিসেল মোবাইল। সিটিসেল মোবাইল তখন অনেকেই ব্যবহার করত। সিটিসেল ছিল সিডিএম সেট, মানে হচ্ছে এই সেটের সিম থাকে না। কেউ সেট অফিসে ফোন করে বন্ধ করে দিলে, ওইটা আর চালানোর উপায় থাকে না। তাই ছিনতাইকারীরা ওই সেট খুব অপছন্দ করত। আমার যে বন্ধুর হাতে সিটিসেল মোবাইল ছিল তাকে এমন অপমান করছিল সেদিন যে ও পারলে ওইদের জন্য ওইদিনই সেট কিনে! সবার সেট নিলেও ওর সেট যে নাই নাই, এইটা বুঝাতে সময় লাগছে বেশ অনেকক্ষণ! ... ...
আপনি খেয়াল করে দেখেন রাস্তাঘাটে এত কুকুর, অথচ কয়টা কুকুর গাড়ির নিচে চাপা পরে মরে? আমাদের বাচ্চাকে আমরা সাবধানে রাখি, রাস্তা পাড় হাওয়া শিখাই। ওদেরকে কে শিখাইছে? ওদের মস্তিষ্ক বিবর্তনের মাধ্যমে পরিবর্তন হয়েছে। আজকে থেকে দুই তিনশ বছর আগের কোন কুকুরকে যদি আজকের রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া যায় চোখের নিমিষে গাড়ির নিচে পরে মরে যাবে। কিন্তু এখনকার কুকুরেরা ঠিক নগর সভ্যতার সাথে অভিযোজিত হয়ে গেছে। এমন অনেক প্রাণী আছে যারা বিবর্তনের মাধ্যমে প্রকৃতিতে টিকে আছে। আর এগুলাই বিবর্তনের পক্ষের যুক্তি। ক্ষুদ্র জীবাণুতে এর উপস্থিতি আরও পরিষ্কার বুঝতে পারা যায়। এই যে অ্যান্টি বায়োটিক খান আর কয়দিন পরেই বলেন যে কাজ করে না, অন্য আরেকটা দেন, পাওয়ার বাড়ায় দেন, কেন বলেন? ওই ব্যাকটেরিয়া সমানে বিবর্তনের মাধ্যমে নিজেকে পরিবর্তন করে চলছে। অ্যান্টি বায়োটিক যেটা ওকে মেরে ফেলছে ওইটার প্রতিরোধ নিয়ে পরেরটা আসছে, বিবর্তনের মাধ্যমেই এই কাজ হচ্ছে। মশার কয়েলে কাজ করে না বলে চিল্লাফাল্লা করেন, কাজ করে না কেন? মশাও বিবর্তিত হচ্ছে, আপডেট কয়েল না ফলে মশা তাড়াতে পারবেন না। ... ...
ইনশেরিন হচ্ছে আয়ারল্যান্ডের ছোট একটা দ্বীপ। গল্পটা এই দ্বীপকে ঘিরেই। খুব সহজ সরল জীবন এখানে। নিরুত্তাপ নিশ্চল জীবন এখানে। এই দ্বীপেই বাস করে পদ্রেইচ সুলেভান ও তার বোন সিওভান সুলেভান। পদ্রেইচের তেমন কোন কাজ নাই, গরুর দুধ বিক্রি করে, বন্ধু কমের সাথে আড্ডা মারে বারে, মদ খায় বাড়ি ফিরে। পদ্রেইচের বুদ্ধি একটু কম, বলা চলে সহজ সরল ছেলে পদ্রেইচ, তার তুলনায় সিওভান বেশ সপ্রতিভ, বুদ্ধিমান, বইপত্র পড়ে, দিন দুনিয়ার খোঁজ খবর রাখে। গল্পটা শুরু হয় একদিন দুধ বিক্রি করে যখন পদ্রেইচ কমকে ডাকতে যায় তখন। কম পদ্রেইচের ডাকে সাড়া দেয় না। ঘরে থেকেও সাড়া না দেওয়ার কারণ খুঁজে পায় না পদ্রেইচ। উল্টো দেখে পিছন দরজা দিয়ে কম চলে যাচ্ছে দ্রুত পায়ে। পদ্রেইচ বারে গিয়ে খুঁজে পায় কমকে। কম কোন কথাই বলতে রাজি না পদ্রেইচের সাথে। কী দোষ করল, কোথায় ভুল হল জানতে চায় পদ্রেইচ। কিন্তু কম কথাই বলবে না। চাপাচাপির পরে কম বলে এক অদ্ভুত কথা, জানায় ওর বয়স হয়ে যাচ্ছে, জীবনের বাকি যে সময় টুকু আছে তা সে সংগীতের পিছনে দিতে চায়, এমন কিছু সুর সৃষ্টি করে যেতে চায় যা আজীবন মানুষ মনে রাখবে। মোজার্ট বেটোফেন মত কিংবদন্তীর সুরকার হতে চায় ও। এ জন্য পদ্রেইচের সাথে সময় নষ্ট করতে কম রাজি না! কম শর্ত দেয় এক অদ্ভুত শর্ত, যদি এরপরে কখনও কমের সাথে কথা বলে তাহলে সে তার নিজের একটা আঙুল কেটে ফেলবে! আবার কথা বললে আরেকটা আঙুল কাটবে। ... ...
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আসলে কে দায়ী? এইটা আসলেই রয়ের মাস্টার প্ল্যান ছিল? পাকিস্তান সদলবলে ঢুকে পড়েছিল রয়ের চালে? রয়ের নীল নকশা হলে মকবুল বাটের সমর্থনের যুক্তি কী? তিনি খুবই সুপরিচিত নেতা ছিলেন। ১৯৭৬ সালে কাশ্মীরে ঢোকার সময় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। আট বছর ধরে বিচার চলে, তিহার জেলে ফাঁসি হয় মকবুল বাটের। কাশ্মীরিদের কাছে মকবুল বাট এখনও শ্রদ্ধেয়, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচিত নাম। কাজেই এই দিক দিয়েও আসলে প্রমাণ করার উপায় নাই যে এইটা রয়ের পরিকল্পনা। পরবর্তীতে কেউ কেউ বলেন যে হাসিম কুরেশি মূলত ডাবল এজেন্ট, তিনি মকবুলের সাথে বিমান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে ভারতে প্রবেশ করে এবং ধরা খান। তিনি তখন দল বদল করে ভরতের পক্ষে কাজ করে। এবং রয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী গঙ্গার মত পুরান একটা বিমান নিয়ে লাহোর নামে। এখানে প্রশ্ন থাকে যে তখন হাসিম কুরেশির বয়স কত? ১৬/১৭ বছরের একটা বাচ্চা ছেলের উপরে রয়ের মত গোয়েন্দা সংস্থা নির্ভর করবে? বিশ্বাসযোগ্য না। আবার রয়ের বেশ কিছু সাবেক কর্মকর্তা পরবর্তীতে দাবী করেছেন পুরোটাই তাদের পরিকল্পনায় হয়েছে, পাকিস্তানকে ঘোল খাইয়েছে বলে দাবী করে! পাকিস্তান তাদেরকে রয়ের সদস্য বলে বিচার করলেও একজনকে শাস্তি দিয়ে বাকিদের ছেড়ে দেয় কেন জানা যায় না, একজনকেও কয়দিন পরে কেন ছেড়ে দিল কেন তারও কোন উত্তর নাই। দেশদ্রোহীদের এত সহজে কেউ মুক্তি দেয়? তাহলে সত্য কী? কোন দাবীই আসলে নিরঙ্কুশ ভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায় না। ... ...
কালকের জয় শুধু মেসির শ্রেষ্ঠত্বের জন্য না, আর্জেন্টিনার সমর্থকদের জন্যও জরুরি ছিল। ৩৬ বছর কাপ পায় নাই একটা দল। এমন না যে দলটা উরুগুয়ের মত হারিয়ে যাওয়া দল। ভাল দল কিন্তু কই জানি গড়বড় করে ফেলে কাপ নেওয়া হয়। বিপক্ষের তীব্র বিদ্রূপের জবাবে গলার জোর ছিল প্রধান অস্ত্র। জন্মের পরে কাপ নিতে দেখছস? এই কথার উত্তর কী? আমার নিজের ৯৪ সালের খেলার কথা তেমন মনে নাই, ফাইনালে ব্যাজিও পোস্টের অনেক উঁচু দিয় মেরে ইতালিকে হারিয়ে দিছিল, এইটা ঠিক মনে আছে না পরবর্তীতে সিনেমা ডকুমেন্টারি, ভিডিও দেখে জানি তাও ঠিক মনে নাই। ৯৮ বিশ্বকাপের কথা হালকা পাতালা মনে আছে। পরিষ্কার মনে আছে ২০০২ সালের কথা। পরিবার থেকে বিদ্রোহ করে আমি তখন ইংল্যান্ডের সমর্থক, আমাদের বাড়ির চৌদ্দ গোষ্ঠী ব্রাজিলের সমর্থক! আমি তখনই সবাই যা করে তার থেকে বের হতে চাচ্ছিলাম। আর ছিল ব্যাকহাম নামের এক খেলোয়াড়, যে কারণেই হোক আমি তার মুগ্ধ ভক্ত হয়ে গেলাম। ব্রাজিল সমর্থকেরা সেবারও কাপ জিতার স্বাদ পেয়ে গেল! স্বভাবতই অন্তত আমাদের বয়সই আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা জন্মের পরে কাপ দেখছস প্রশ্নের সম্মুখীন হতে থাকল নিয়ম করে! এখন অবশ্য জন্মের পরে কাপ দেখছস কথা ব্রাজিল সমর্থকদেরও শুনতে হচ্ছে! তবুও আর্জেন্টিনার কষ্টের কাছে কিছুই না। আরও যন্ত্রণা ৩৬ বছর আগের যে কাপ তাও ম্যারাডোনার হাত দিয়ে দেওয়া গোলের কলঙ্ক লেগে আছে। সমর্থকদের জন্য, এমন অন্ধ ভাবে সমর্থন দিয়ে যাওয়ার জন্য একটা কাপ জেতা খুব জরুরি ছিল। কালকে সমর্থকদের শ্রেষ্ঠ উপহার দিয়ে দিয়েছে মেসি ইতিহাসের সেরা ফাইনাল জিতে। ... ...
শেরপুরে পাকিস্তান বাহিনী প্রবেশ করে ২৬ এপ্রিল। তুমুল গোলাগুলি করতে করতে তারা প্রবেশ করে। প্রবেশের পরেই ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করে তারা। সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় বিশেষ গুরুত্ব ছিল এই এলাকার। ঝিনাইগাতী উপজেলার আহমদনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ঘাঁটি করে পাকিস্তান বাহিনী। রাজাকারদের সহযোগিতায় চলে হত্যা লুট ধর্ষণ। নালিতাবাড়িতে তৈরি হয় বিধবা পল্লী। পুরো শেরপুরে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ টি খণ্ড যুদ্ধ হয়েছিল যুদ্ধকালীন সময়ে। যুদ্ধ হয়েছে এমন জায়গা গুলোর মধ্যে কাটাখালি, রাঙামাটি গ্রাম, সূর্যদী, নালিতাবাড়ী ফরেস্ট ক্যাম্প, বারোমারী, নন্নী, ঝিনাইগাতী, নাচনমহুরী, নকশী, শ্রীবরদী, কর্ণঝোরা, কামালপুর, টিকারকান্দা, নারায়নখোলা, বড়ইতার, নকলার যুদ্ধ গুলোকে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য করা যায়। ... ...