টাঙ্গাইলের শাড়ির জিআই ( Geographical Indications ) পাওয়া নিয়ে দুইটা ভিন্ন যুক্তি শোনা যাচ্ছে। দুইটাই সঠিক কিন্তু প্রসঙ্গ ভিন্ন। একটা ভারত থেকে জোর গলায় প্রচার হচ্ছে, তা হচ্ছে টাঙ্গাইল থেকে বসাক গোষ্ঠী, যারা মূলত শাড়ি বানাত তারা ভারত চলে গিয়ে সেখান থেকেই শাড়ি বানাচ্ছে, প্রচুর বিক্রি হচ্ছে, একজন বসাককে ভারত সরকার পদ্মশ্রী পুরস্কারও দিয়েছে। দেশের সংখ্যালঘু অত্যাচার, হিন্দুদের বাড়িঘর ছেড়ে সীমান্ত পাড়ি দেওয়া এগুলা দিয়ে বলা হচ্ছে তোমরা তাড়িয়ে দিয়েছে এখন আর তাঁদের শৈল্পিক কৃতিত্বের ভাগ চাও কেন? আর দ্বিতীয় কথাটা হচ্ছে বাংলাদেশের নারীরা শাড়ি পরা কমিয়ে দিয়েছে! এইটাও সত্য, আমার চোখের সামনে শাড়ি পরা নারীর সংখ্যা কমতে দেখছি। বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া শাড়ি পড়ে না এখন অনেকেই, যারা এক সময় শাড়ি ছাড়া আর কিছুই বুঝত না। ... ...
রোমানিয়া শেঙ্গেনে ঢুকে যাচ্ছে মার্চ মাসে। এখন প্রতিনিয়ত আমাকে শুনতে হয় যে আমি কেন ফিরে যাচ্ছি না! আমি যে সমস্যায় পড়ে ফিরে এসেছি তার কোন সমাধান হয়নি। তাই ফিরে যাওয়ার আশা করা দুরাশা আমার জন্য। আমার খালাত বোন যে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক, সে আমাকে বিসিবির যে প্রধান ডাক্তার ডাক্তার দেবাশিষের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। তিনি এই সব ব্যাপারে সেরা ডাক্তারের মধ্যে একজন। জ্যোতির সাহায্য ছাড়া উনার অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাইতে অন্তত দুই মাস অপেক্ষা করতে হত আমার। তিনি আমাকে অনেকখন সময় নিয়ে দেখছেন। একটা থেরাপি দিয়েছিলেন। তাতে খুব একটা কাজ হয়নি। এবং তিনি আমাকে শেষ কথা বলে দিয়েছেন যে আমার পক্ষে লম্বা সময় দাঁড়িয়ে থাকা হার্ড ওয়ার্ক ইত্যাদি কাজ আর করা সম্ভব না। পায়ের অবস্থা তিনি দেখে চমকে গিয়েছিলেন। উনি স্টেরয়েড দিতে চেয়েছেন কিন্তু আমি এখনও ওইটা দিব কি না সিদ্ধান্ত নেই নি। বাড়িতে থেকে ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে, যার কারণে পায়ের ব্যথাও বেড়েছে! ব্যায়াম দিয়েছি কিছু, ওইটা করলেই একটু আরাম হয়, কুশন দেওয়া জুতা পরতে হচ্ছে। এই ভাবেই চলতে হবে আমাকে। আমি অপারেশনের কথা বলে ছিলাম। তিনি এক বাক্যে না করে দিয়েছেন। এই না আমাকে রোমানিয়ান ডাক্তারও করে দিয়েছিল। আমি দেশে চিকিৎসার জন্য চলে আসব শুনে উনি বলেছিলেন যে আমি জানি না তোমার দেশের চিকিৎসার অবস্থা কেমন, কিন্তু আমি তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি যে কোনমতেই তুমি অপারেশনের দিকে যেয়ও না। আর আমি আসলে দেশে অপারেশনের জন্যই আসছিলাম। মনে করছিলাম বিদেশিরা এগুলা করতে ভয় পায়, আমাদের এখানে ঠিকই করে ফেলবে কিছু একটা। তো, এই হল আমার সর্বশেষ অবস্থা। আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা অনেকেই আমার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, তাদেরকে এই সুযোগে জানিয়ে দিলাম আমার অবস্থা। ... ...
প্রয়াত শিল্পী আসিফ কবির চৌধুরী রনির করা একটা কমিক। আঁকা এবং লেখা রনির। ঢাকা কমিক্স থেকে প্রকাশ হয়েছিল। ওর জামা জুতা, বেল্ট সোয়েটার জ্যাকেটের মত এই কাজের ফাইলটাও আমার কাছে রয়ে গেছে। ১৭ জানুয়ারি ওর জন্মদিন। সেই উপলক্ষে গুরুচণ্ডালীর পাঠকদের জন্য কমিকটা এখানে দিলাম। শুভ জন্মদিন রনি। ... ...
মানুষ কিন্তু নির্বাচন পছন্দ করে। কেন জানি মানুষের ধারণা যে ভোট দিতে পারলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এই যে একদলের নির্বাচন হচ্ছে, মানুষের এইটা নিয়ে কোন আগ্রহই থাকবে না, এমন হওয়ার কথা না? কিন্তু তা হচ্ছে না! আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক প্রজ্ঞাই বলেন আর যাই বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দিয়ে এই নির্বাচন জমিয়ে দিয়েছে। শহরের মানুষ কিছু নাক উঁচু ভাব দেখাচ্ছে, ম্যালা তত্ত্ব কপাচাচ্ছে ( যেমন আমি নিজেই!) কিন্তু গ্রামের মানুষ, যেখানে সবচেয়ে বেশি ভোটার, তারা সবাই ভোট দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছে। যারা ভাবছেন যে ভোটার শূন্য নির্বাচন হতে যাচ্ছে তারা সম্ভবত ধোঁকা খেতে যাচ্ছেন। কালকে বিপুল পরিমাণ মানুষ ভোট দিবে এইটা আমি এখনই বলে দিতে পারছি। কারণ আমি সাধারণ মানুষের এই নির্বাচন নিয়ে যে উচ্ছ্বাস তা দেখেছি। মিথ্যা বলব না, এইটা আমাকে বিরক্ত করেছে। সব ফেলে এই নির্বাচনের জন্য এত আগ্রহ? ... ...
আমাদের রক্তের দাম এখন সস্তা মনে হয় অনেকের কাছে। অবলীলায় স্বাধীনতা, শহীদের সম্পর্কে হাস্যকর নানা কথা বলি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এখন কিছু বললেই কারো গায়ে ফোস্কা পরে যায়। চেতনা ব্যবসায়ী বলে তেড়ে আসে একদল। রক্ত কত সস্তা এই দেশে যে এমন কাণ্ড ঘটে এই দেশে? লন্ডন টাইমস লিখেছিল - “If blood is the price of independence then Bangladesh has paid the highest price in history" দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ফরাসী লেখক - দার্শনিক আন্দ্রে মালরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বলেছিলেন, "আমি সম্ভবত এমন এক প্রতিষ্ঠানে দাঁড়িয়ে কথা বলছি যেখানে মৃতের সংখ্যা জীবিতদের থেকে বেশি!!" এমন আর কোথাও নাই, এমন আর কোথাও হয়নি! আহা! এর মূল্য যদি বুঝত সবাই! এত এত শহীদ, এত এত স্বজন হারার হাহাকার, সব কিচ্ছু না? আমরা কেমনে পারি? ... ...
কলকাতার কলেজ ষ্ট্রীটে বাংলাদেশ বই মেলা চলছে। আগামীকাল শেষ হবে দশদিন ব্যাপী এই বই মেলা। বাংলাদেশের বই কলকাতায় মেলা করে বিক্রি হচ্ছে এইটা দারুণ একটা ব্যাপার। উদ্বোধনের দিন প্রধান অতিথি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, "বইয়ের চাহিদা চিরন্তন। সেই চাহিদা চিরদিন জেগে থাকবে আমাদের হৃদয়ে। আর এই বইতো আমাদের দুদেশের মধ্যে এক নতুন সেতু গড়ে তুলেছে।" কোন সন্দেহ নাই, সেতু তৈরি করে দিচ্ছে। মুশকিল হচ্ছে সব হচ্ছে এক তরফা! বাংলাদেশের বই কলকাতায় মেলা করে, আয়োজন করে বিক্রি করছেন অথচ ভারতীয় বই এখানে আসতে দিচ্ছেন না। একুশে বই মেলায় ভারতীয় বই প্রবেশ নিষেধ। বেশ, ভাল, একুশে বই মেলাকে যদি শুধু মাত্র বাংলাদেশি প্রকাশকদের জন্য নির্ধারিত বই মেলা করে রাখতে চাই আমরা তাতে কোন সমস্যা নাই। তাহলে অন্য সময় ভারতীয় বইয়ের জন্য আলাদা করে বই মেলার আয়োজন করা হোক। এখন যেমন কলকাতায় বাংলাদেশ বই মেলা হচ্ছে তেমন করে, এতে সমস্যাটা কই? ... ...
সময় গেলে সব সহজ হয়ে যাওয়ার কথা। মন্ত্রীরা অভিজ্ঞ হবে, কাজকর্ম আরও সুচারু হবে, সুন্দর হবে। অথচ বর্তমান সরকারের কাজকাম দেখলে মনে হয় যে নবিস দিয়ে মন্ত্রণালয় চালাচ্ছে সব। দুই একজন বাদে সবাই কী করতেছে কেন করতেছে তা নিজেরাও জানে কি না সন্দেহ। অর্থনীতির বারোটা বেজে তেরোটার ঘণ্টা বাজতে চলছে অথচ আমাদের অর্থ মন্ত্রী কই ঘুমায় আছে কেউ জানে না! কে চালাচ্ছে মন্ত্রণালয় কে জানে। ঘটা করে নতুন এক শিক্ষা নীতি নিয়া আসল। এবং নতুন শিক্ষানীতির জন্য সরকার শিক্ষা খাতের বরাদ্দ কমিয়ে দিল! চলতি অর্থবছরে শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দ হচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। থাকার কথা জিডিপির ৬ শতাংশ! কোন পরামর্শ না, শিক্ষকদের প্রস্তুত করা নাই, দুম করে বলা হল এইটাই সেরা কলা, বিসমিল্লাহ বলে খেয়ে ফেল! সবাই কলা খেতে থাকল, যে প্রশ্ন করল তাঁকে প্রশ্ন করা হল দেশপ্রেম নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে, উন্নত বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে! ফলাফল এখন পর্যন্ত এর সমাধান হল না, পক্ষ বিপক্ষ তুমুল বিতর্ক করে যাচ্ছে। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে, শিক্ষকদের ভাল বেতন দিলে, ভাল যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে আমাদের সময়ের বা তার আগের শিক্ষা পদ্ধতি দিয়েও ভাল কিছু করা সম্ভব। কিন্তু আমাদের মন্ত্রীরা শুধু চমক দেখাতে চায়! তাকালেই যেন ঝকমক করে সব! তা এর মান যেমনই হোক! ... ...
জানি অস্ট্রেলিয়ার সমর্থক গুটি কয়েক। কিন্তু আমি সরলীকরণের কারণে এইটা বললাম। আমাদের এখানে ভারত বিরোধিতা কই থেকে আসে এইটা পাগল আর শিশু ছাড়া বাকি সবাই জানে। এত পুরনো ইতিহাস যে বাংলাদেশি না এমন কাওকে বুঝানো মুশকিল যে এখানে আসলে কী চলে! প্রতিনিয়ত বেশ বড় একটা দল বা একটা গোষ্ঠী ইচ্ছামত ভারত বিরোধী কার্ড খেলে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ, সহজ সরল মানুষ যারা অত প্যাঁচ বুঝে না তারা নিয়ম করে এই ফাঁদে পরে! বুঝে না বুঝে ভারত সব শেষ করে দিল বলে বসে থাকে। পরাষ্ট্রনীতির প- ও জানি না, কিন্তু মন্তব্য করতেছি বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে। এই দেশের রাজনীতিতে ভারতের সমর্থন আর ভারত বিরোধিতা দুইটা বড় একটা অস্ত্র। ভারতের যারা ভারত বিরোধিতা দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছে তারা বিষয়টা গভীর করে ভাবছে না। এই দেশে সামনে নির্বাচন, এই সময় যে ভারত বিরোধিতা বাড়বে বা বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে এইটা খুব সহজ হিসাব। কিন্তু ওই যে বললাম যারা বাংলাদেশি না তাঁদের পক্ষে এইটা বুঝা মুশকিল। তবে তাঁদেরও আসলে কষ্ট পাওয়ার কিছু নাই, কারণ আমাদের ভারত বিরোধিতাও ওই মুখে মুখেই। পেট মোচড় দিলেও চিকিৎসার জন্য ভারত যায় এই দেশের বহু লোক। ... ...
অন্য দিকে মুসলিমদের অবস্থা চিন্তা করে দেখেন। মুসলিম ব্রাদারহুড মুসলিম উম্মাহ এগুলা আমার কাছে ভুয়া কথা মনে হয়। কোন কার্যকর ব্যবস্থা এদের দ্বারা আজ পর্যন্ত নেওয়া হয় নাই। মুসলিমরা বর্তমান সময়ে ভাগ্য বিতাড়িত জাতি বলে মনে হয়। কেন? ইয়েমেনে মানুষ মেরে ফিনিশ করে দিচ্ছে অথচ কোথাও কোন টু শব্দ হয়নি। না মুসলিম বিশ্বে না মানবতার, মানবধিকারের আঁতুড়ঘর ইউরোপের কোথাও কেউ কোন প্রতিবাদ করছে, কেউ বলতে পারবে না এই মানুষ মারার জন্য কোন একটা উন্নত দেশে রোড মার্চ হইছে, মানুষ জমায়েত হয়েছে, বিক্ষোভ হয়েছে। এর থেকে সামান্য ঘটনায় সিডনি থেকে বার্লিন নিউ ইয়র্ক থেকে প্যারিসে মিছিল শুরু হয় যেতে দেখছি আমরা। শুধু ইয়েমেন না, সিরিয়ায় যা হয়েছে তার প্রতিবাদই কয় জায়গায় কে করেছে? কেউ না। মুসলিমরাও যখন দেখে ঘাতক এখানে মুসলিম তখন তারাও চুপ! পশ্চিমা বিশ্ব তো বটেই, ডাবল স্টান্ডার্ড দেখাইতে মুসলিমরাও পিছিয়ে নেই। মুসলিমরা যখন এক সাথে একমাত্র ইহুদিদের আকামের সময় চিৎকার করে তখন কেউ কেউ এর ভিতরে অন্য কিছু খুঁজে পায়। কেউ কেউ বলে মুসলিমদের রক্তের ভিতরে জিনের ভিতরে ইহুদি বিদ্বেষ ঢুকে আছে, তখন আসলে কিছু বলার থাকে না। এই বলার অধিকার সম্ভবত মুসলিমরাই দিচ্ছে। ... ...
সত্যেন সেন এই বিদ্রোহ নিয়ে লিখেছেন অসাধারণ এক উপন্যাস বিদ্রোহী কৈবর্ত। আমার জ্ঞান চক্ষু উন্মোচিত হয়েছে এই উপন্যাস পড়েই। ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস তো অনেকেই পড়ছি, আমি এইটাও তেমন কিছুই আশা করে বই নিয়ে যখন বসলাম তখন একটা ঝাটকা খেলাম। সত্যেন সেনের লেখার সাথে পরিচিত ছিলাম। লেখার ভঙ্গি আমার পরিচিত। কিন্তু এখানে যেন সব অন্য রকম। এক টানে আমাকে নিয়ে চলে গেলেন তৎকালীন গৌড় জনপথে! কৈবর্ত প্রধান দিব্বোক যে সেই সময় এবং অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় অসাধারণ চরিত্রের নেতা ছিলেন তা যেন দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে গেল আমার কাছে। ক্ষমতা নিয়েই কৈবর্ত রাজা দিব্বোক ঘোষণা দেন এতদিন রাজা কর নিত ফসলের ছয় ভাগের এক ভাগ, এবার থেকে নিবে আট ভাগের এক ভাগ! এইটা ওই সময়ের হিসেবে বিপ্লবী চিন্তা ভাবনা, কৈবর্তরা তাদের দেবতা ওলান ঠাকুরের উদ্দেশ্যে নরবলি দিত, সবার অমতে দিব্বোক প্রথম বছরেই নরবলি বন্ধ ঘোষণা করেন। ধর্ম বড় নেশা, এই নেশায় মাতালরা এইটা মেনে নিতে রাজি ছিল না। দিব্বোক প্রথম বছরে পারে নাই কিন্তু পরবর্তীতে দিব্বোক এত জনপ্রিয় হয় যে জনগণ দিব্বোককে খুশি করতে নিজেরাই নরবলি বন্ধ করে দেয়। ... ...