কাজেই এখন, রাত পোহালে যখন খেলা শুরু হয়ে যাবে তখন বিশ্বকাপ বাতিল করার মত কথা বলার যুক্তি নাই। আমার চাওয়া কী? খুব ছোট্ট চাওয়া। আমি চাই উম্মাদনায় ভেসে যাওয়ার সময় মনে রাখুন ওই ক্রংক্রিটের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য যা আমরা দেখছি তার প্রতি পরতে পরতে রক্ত লেগে আছে আমার দেশের ভাইদের। মানুষের রক্ত লেগে আছে, ঘাম মিশে আছে, যার ন্যায্য মূল্য দেয়নি অসভ্য কাতার সরকার। আমরা মনে রাখি শ্রমিকদের কথা, কাতার একটা রক্তচোষা দেশ, এইটা যেন আমরা মনে রাখি। ব্রাজিল আর্জেন্টিনা, জার্মান ফ্রান্স, বেলজিয়াম প্রেমে ভুলে যেন না যাই যে আমরা এই আয়োজনে হেরে যাওয়া দল। আমাদের ভাইদের হারিয়ে দিয়েছে জোর করে। রক্ত দিয়েও জিততে পারেনি তাঁরা। ... ...
দম বন্ধ করে, দাঁত চেপে দেখে শেষ করলাম নতুন করে বানানো ক্লাসিক 'অল কোয়ায়েট অন দা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট'। এরিক মারিয়া রেমার্কের অসাধারণ এই উপন্যাস অবলম্বনে এর আগে আরও দুইবার সিনেমা বানানো হয়েছে। ১৯৩০ সালের সিনেমাটা দুর্দান্ত ছিল। এবারের সিনেমা নেটফ্লিক্স তৈরি করেছে এবং অসাধারণ ভাবেই তৈরি করেছে। এই সিনেমা নেটফ্লিক্স কেন হলে মুক্তি দিল না তা আমার ঠিক বুঝে আসল না। এই বছরের অন্যতম সেরা সিনেমা এইটা। অস্কারের জন্য যোগ্য দাবিদার হতে পারত কোন সন্দেহ ছাড়াই। একাডেমী অ্যাওয়ার্ডের নিয়ম অনুযায়ী মনোনয়ন পেতে হলে সিনেমাকে অবশ্যই হলে মুক্তি দিতে হবে এবং কয়েক সপ্তাহ অন্তত চলতে হবে। সেই সূত্রে অল কোয়ায়েট অন দা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট অস্কারের জন্য মনোনীত হবে না হয়ত। ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ক্যাটাগরির নিয়ম জানা নাই, আইএমডিবির তথ্য অনুযায়ী এইটা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ক্যাটাগরিতে এবারের জার্মান মনোনয়ন অস্কারের জন্য। অস্কারের ছোট্ট তালিকায় জায়গা পেলে আমি অবাক হব না, বরং খুশিই হব। ... ...
মামা শুধু গল্প বলত এমন না। মামা গল্প বলার সময় তা পরিবেশন করত। চোখ, মুখ, হাত পা, কণ্ঠস্বর সব মিলিয়ে গল্প বলত মামা। ক্লাইম্যাক্সে যাওয়ার আগে থামত চোদ্দবার, আরও কয়েক দিক থেকে গল্পটা বুঝাত, পরিস্থিতিটা বর্ণনা করতেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি পরিষ্কার না হচ্ছেন যে আমরা পুরোপুরি বুঝছি কী পরিস্থিতি ছিল সেই সময়, অন্ধকার কত গাঢ় ছিল, বাতাস কেমন ছিল, উনার ঠিক কত সামনে ঘন কালো পাহাড়ের মত কী জানি একটা দাঁড়িয়ে আছে, ওইটা দেখে উনি তাৎক্ষনিক কী চিন্তা করলেন, তারপর কী করলেন ইত্যাদি ইত্যাদি তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বর্ণনা করে, হাত নেড়ে, গলার স্বর উঠিয়ে নামিয়ে আমাদেরকে পরিষ্কার বুঝিয়ে দেওয়ার পরে তিনি যেতেন পরের ধাপে। এরপরে কী হইল শোনো...! ... ...
দুই প্রার্থীর ভিতরে কে ভাল কে মন্দ সেই বিচার আমি করতে বসব না। করার যোগ্যতাও আমার নাই। আমি শুধু দেখলাম দুই প্রার্থীর ভিতরে একজন হচ্ছে হিন্দু আরেকজন মুসলিম। মুসলিম প্রার্থী ভূমিধ্বস জয় পেয়েছে। এই জয়ের পিছনে তিনি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন ধর্মকে! আমার কথা বলার জায়গা এখানেই। শুধু এই বার না, গতবারও এই দুইজনই প্রার্থী ছিলেন। গতবার আমি নিজে মাইকে শুনেছি বক্তা সরাসরি বলছে উনি হিন্দু মানুষ, তারে ভোট দিবেন? আমি হাঁটছিলাম, মাইকে এমন শুনে থমকে দাঁড়িয়ে গেছিলাম। এমন কথা কেউ বলতে পারে? ... ...
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে এতদিন একতরফা ভারতের আধিপত্য ছিল। এবার গ্রুপ পর্যায়ে তিন শূন্য গোলে হারায় ভারতকে বাংলাদেশ। পাকিস্তানকে হারায় আট শূন্য গোলে। সেমিতে ভুটান হারে আট শূন্য গোলে। ফাইনালে নেপাল হারে তিন এক গোলে। বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়। এমন একতরফা খেলে টুর্নামেন্ট জিতল কোন দলটা? যাদেরকে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হয় পেটের ভাতের জন্য। রূপকথা না? এই দলটার আট জন এসেছে একটা গ্রাম থেকে, নেত্রকোনার কলসিন্দুর গ্রাম, যেখানে অদ্ভুত ভাবে মেয়েরা দারুণ ফুটবল খেলে। যাদের নিয়ে কয়েক বছর আগে তৈরি করা হয় একটা প্রতিবেদন, যেখানে তাঁদের চাওয়া কি জানতে চাইলে মেয়েরা বলে ভাল করে খাওয়া! এক বেলা ভাল করে খাওয়ায় দিয়েন!! কারা আমাদের সাফল্যের মুকুট এনে দিয়েছে বুঝা যাচ্ছে? পাঁচজনের বাড়ি পার্বত্য চট্টগ্রামে। তাঁদের তো আরও সমস্যা। কোন কিছুরই স্বীকৃতি নাই। পাহাড়িদের তো মানুষই মনে করে না আমাদের সভ্য সুন্দরেরা। তাঁদের নাই ঘর বাড়ি, তাঁরা গেছে ফুটবল খেলতে! এই সব সমস্যার পরে আমাদের ঐতিহাসিক আদর্শ নারী বিরোধীরা তো আছেই, যারা প্রতিনিয়ত অশ্লীল, পাপ, রসাতলে গেল সমাজ বলে চিৎকার করছে। এদেরকে লাথি মেরে এগিয়ে যাওয়া, শুধু যাওয়া না, চ্যাম্পিয়ন হওয়া এইটার সাথে কিসের তুলনা দেওয়া যায়? আমার জানা নাই, সত্যিই জানা নাই। ... ...
পাকিস্তান আমলে বামপন্থি একটা সাংস্কৃতিক সংগঠন ছিল, নাম ক্রান্তি। ক্রান্তি দল একবার টাঙ্গাইলে গান গাইতে যায়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে সবাই মিলে হায়দার আকবর খান রনোকে বলে যে তারা মাওলানা ভাসানির সাথে দেখা করতে চায়। রনো সাহেব তাদের নিয়ে চলে যান সন্তোষে মাওলানা ভাসানির সাথে দেখা করতে। মাওলানাকে ঘিরে সবাই বসে আবার গান গাওয়া শুরু করে। মাওলানা মনোযোগ দিয়ে শুনে সব গুলা গান। পরে তিনি সবাইকে চা নাস্তা দিয়ে আপ্যায়ন করেন। গান নিয়েই আলোচনা চলতেছিল। আলোচনার এক পর্যায়ে ভাসানি তাদের বলেন, গান তো ভালই, মুশকিল হচ্ছে এই গান বুঝতে হলে তো কৃষকের বিএ পাস করতে হবে আর না হয় রনোকে যেতে সব জায়গায় এই গানের অর্থ বুঝিয়ে দিতে! এই উদাহরণটা দিলাম কারণ আমাদের প্রায় সব ক্ষেত্রেই এখনও একই অবস্থা। বিপ্লব করব কী। আমরা তো ভাষাই জানি না কৃষকের! প্রচুর প্রগতিশীল মানুষ, সৎ মানুষ, আক্ষরিক অর্থেই ভাল মানুষ, মানুষের ভাল চায় এমন মানুষ জানেই না সাধারণ মানুষের ভাষা! ঢাকা কেন্দ্রিক সব, এখন আরও বিপদ হচ্ছে অনলাইন বা ফেসবুক কেন্দ্রিক কাজকাম! মানুষ ভুলেই গেছে ফেসবুক বাংলাদেশ না। ফেসবুকের বাহিরে পুরো বাংলাদেশই পরে আছে, যাদের নিয়ে কারও কোন মাথা ব্যথা নাই। যারা এর বাহিরে কাজ করতে চায় তারা সাধারণ মানুষের ভাষাই বুঝে না, কাজ কী করবে? এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে কুসংস্কারে খাচ্ছে, ধর্মান্ধতা খাচ্ছে, অশিক্ষায় খাচ্ছে, অপসংস্কৃতি খাচ্ছে। আমাদের ঢাকা কেন্দ্রিক নেতৃত্ব শাহবাগে মানব বন্ধন করে কর্তব্য পালন করছে। আমরা এদিকে হারিয়ে যাচ্ছি অতলে। ... ...
বাংলাদেশে আমার হিসাবে দুইটা শ্রমিক ইউনিয়ন খুব শক্তিশালী। এক মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন আরেক হচ্ছে গার্মেন্টস শ্রমিক ইউনিয়ন। এঁরা শক্ত করে দাবী আদায় করে বলে এঁদের নাম আমরা জানি। বাকিরা শ্রমিক না ধইঞ্চা তাও আমরা জানি না। আমার জীবনের খুব অল্প কিছুদিন স্পিনিং মিলে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমি দেখছি এঁদের কোন সারা শব্দ পুরো দেশে কোথাও নেই। আওয়ামীলীগ সরকার যখন প্রথম দফায় গার্মেন্টসদের বেতন বৃদ্ধি করল সেই সময় আমি নারায়ণগঞ্জে একটা স্পিনিং মিলে চাকরি করি। আমি দেখলাম সেই বেতন বৃদ্ধি এঁদের জীবনে কোন প্রভাব ফেলল না। তখন সম্ভবত সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ করা হয়েছিল ছয় হাজার টাকা। আমি আমার ফ্লোরে অদক্ষ শ্রমিককে বেতন নিতে দেখছি দুই হাজার টাকা, দেড় হাজার টাকা করে! এবং গার্মেন্টস যখন শিশু শ্রম থেকে মুক্ত হয়ে গেছে প্রায় তখন আমি দেখছি স্পিনিং মিলে দশ বারো বছরের শিশুদের দিয়ে কাজ করাচ্ছে, বেতন মাসে এক হাজার টাকা! শিশুদের রাতের শিফটে কাজ করানো আমার পক্ষে সম্ভব না, শুধু মাত্র এই কারণে আমি চাকরি ছেড়ে চলে আসছিলাম। আমি জানি না এখন স্পিনিং মিলের পরিবেশ ক্যামন। খুব একটা পরিবর্তন হয়ে গেছে বলে মনে হয় না আমার। আমি যেটা বলতে চাচ্ছি কোনদিন কোথাও শুনি নাই স্পিনিং মিলের শ্রমিকেরা বেতন বৃদ্ধির জন্য আন্দোলনে নেমেছে। আর নামে নাই বলেই হয়ত আজও অন্ধ কুঠিরে সারাদিন কাজ করে বেতন পাচ্ছে তিন চার হাজার টাকা! কোনদিন এঁরা যদি রাস্তায় নামে আমি আশ্চর্য হব না। তবে আমি যেমন চা শ্রমিকদের কথা জেনে শিউরে উঠেছি, তেমনই তখনও অনেকেই আশ্চর্য হয়ে যাবে এঁদের জীবন কাহিনী শুনে। ... ...
সরকারেরও বুঝা উচিত সীমা যেন অতিক্রম না হয়। একটা পর্যায় গিয়ে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে যাবে মানুষ। ভাবার, চিন্তা করার ক্ষমতা এমনেই কম আমাদের। সেই সময় আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে যাবে। ইউক্রেন যুদ্ধ, আমেরিকার রাজনীতি, চীনের কূটনীতি, মধ্যপ্রাচ্যের ধর্ম কোনকিছুই মানুষ বুঝবে না। মানুষকে নিঃশ্বাস নিতে দিতে হবে, বাঁচার রাস্তা দিতে হবে। অন্যথায় মানুষের স্বভাবের কারণেই মানুষ ঘুরে দাঁড়াবে এবং প্রলয় ঘটিয়ে থামবে। তখন আর রক্ষা পাওয়া যাবে না। ... ...
আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করে বঙ্গন্ধুকে পয়গাম্বার বানানোর যে চেষ্টা করা হয় তার কোন দরকার নাই। তিনি মানুষ ছিলেন, কোন প্রেরিত পুরুষ ছিলেন না। তিনি এই বাংলার একদম মাটি থেক উঠে আসা মানুষ ছিলেন, কৃষক পরিবার থেকে উঠে, কোন প্রকার রাজনৈতিক ঐতিহ্য না থাকা সত্ত্বেও এই ভূখণ্ডের সকল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। কিন্তু তিনি মানুষ ছিলেন এইটা আমরা যেন না ভুলে যাই। এত বছর পরে উনার ভুল ত্রুটি নিয়েও আলোচনা হোক, আমরা উনার অবিশ্বাস্য সব কৃতীর কথা জানি, এক রোখা ভঙ্গিতে সমস্ত চাপকে পিছনে ফেলে দেশকে ধরে রেখেছিলেন ধর্মনিরেপক্ষ হিসেবে। পেট্রো ডলারের প্রলোভন ছিল, উল্টা দিক থেকে ইজরাইলের মত দেশের তরফ থেকেও প্রলোভন ছিল। রাশিয়া হাত ধরলেও আমরা চলে যেতে পারতাম সম্পূর্ণ ভিন্ন এক দিকে। কোন সঠিক ছিল কোনটা ভুল ছিল এই সব নিয়ে আলোচনা না হলে ভবিষ্যতে বিপদেই পড়ব আমরা। ... ...
কুরবানি ঈদ আসলেই এগুলা মনে পরে এখন। মনে পরে আমাদের যখন কুরবানি দেওয়ার উপায় ছিল না তখনের কথা। আব্বা আম্মা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যেতেন আমাদের, আমার যেন এর জন্য মন খারাপ না হয়। আমার যে খুব মন খারাপ হত তাও না, আবার মাঝেমধ্যে যে খারাপ একেবারেই লাগত না তাও না। রোজার ঈদের কষ্ট হচ্ছে নতুন কোন জামা কাপড়ই হয়ত জুটে নাই আমার আর কুরবানির ঈদের কষ্ট ছিল আমাদের কুরবানি দেওয়া হচ্ছে না এবার! সবই এখন মধুর স্মৃতি। দুঃখ গুলাও এখন মনে করে ক্যামন জানি সুখ পাওয়া যায়। কারণ হয়ত ওই সব স্মৃতির সাথে আব্বা আম্মা মিশে আছে, আমাদের বৃহৎ পরিবারের সকলেই মিশে আছে। ... ...