এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হেদুয়ার ধারে - ১৬২

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৮ জুলাই ২০২৪ | ১৭২ বার পঠিত
  • | | | | | ৬  | ৭  | ৮  | ৯  | ১০  | ১১  | ১২  | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬  | ১৭  | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২  | ২৩  | ২৪  | ২৫  | ২৬ | ২৭ | ২৮  | ২৯  | ৩০ | ৩১  | ৩২  | ৩৩  | ৩৪ | ৩৫ | ৩৬  | ৩৭  | ৩৮  | ৩৯  | ৪০  | ৪২  | ৪৩  | ৪৪  | ৪৫  | ৪৬ | ৪৭  | ৪৮  | ৪৯  | ৫০  | ৫১  | ৫২ | ৫৩ | ৫৪ | ৫৫ | ৫৬ | ৫৭ | ৫৮ | ৫৯ | ৬০ | ৬১ | ৬২ | ৬৩ | ৬৪ | ৬৫ | ৬৬ | ৬৭ | ৬৮ | ৬৯ | ৭০ | ৭১ | ৭২ | ৭৩ | ৭৪ | ৭৫ | ৭৬ | ৭৭ | ৭৮ | ৭৯ | ৮০ | ৮১ | ৮২ | ৮৩ | ৮৪ | ৮৫ | ৮৬ | ৮৭ | ৮৮ | ৮৯ | ৯০ | ৯১ | ৯২ | ৯৩ | ৯৪ | ৯৫ | ৯৬ | ৯৭ | ৯৮ | ৯৯ | ১০০ | ১০১ | ১০২ | ১০৩ | ১০৫ | ১০৬ | ১০৭ | ১০৮ | ১০৯ | ১১০ | ১১২ | ১১৩ | ১১৪ | ১১৫ | ১১৬ | ১১৭ | ১১৮ | ১১৯ | ১২০ | ১২১ | ১২২ | ১২৩ | ১২৪ | ১২৫ | ১২৬ | ১২৭ | ১২৮ | ১২৯ | ১৩০ | ১৩১ | ১৩২ | ১৩৩ | ১৩৪ | ১৩৫ | ১৩৬ | ১৩৭ | ১৩৮ | ১৩৯ | ১৪০ | ১৪১ | ১৪২ | ১৪৩ | ১৪৪ | ১৪৫ | ১৪৬ | ১৪৭ | ১৪৮ | ১৫০ | ১৫১ | ১৫২ | ১৫৩ | ১৫৪ | ১৫৫ | ১৫৬ | ১৫৭ | ১৫৮ | ১৫৯ | ১৬০ | ১৬২ | ১৬৩ | ১৬৪ | ১৬৫ | ১৬৬ | ১৬৭
    সাগরের বুঝতে অসুবিধে হল না স্বরূপ খাঁড়ার নির্দেশে শক্তিপদ বিশ্বাস আর মুচিপাড়া থানার ওসি পরিতোষ কর্মকার মিলে কানুর দাদা প্রীতিময়কে টাকার টোপ দিয়ে কানুকে কোথাও ডেকে নিয়ে যায় কাউকে বাঁচানোর নাম করে। তারপর কোথায় কখন কিভাবে কানুকে মারা হল সেটা বার করা গোয়েন্দাদের কাজ। সাগরের গোয়েন্দাগিরি করার কোন উৎসাহ নেই। তার মাথায় ঘুরছে বদলার আগুন। কানুর কথা ভাবলেই তার মাথায় আগুন জ্বলে উঠছে। সে ভেবে দেখল যদি একটা টার্গেট হয় তাহলে নিশ্চিতভাবেই স্বরূপ খাঁড়া। দুটো হলে শক্তিপদ, আর তিনটে হলে পরিতোষ কর্মকার । নাকি যাদের হাত দিয়ে মারা হল সেগুলোকে ধরা উচিত ? তার অভিজ্ঞতা থেকে সাগরের মনে হল, বেশি দেরি করলে এই দম থাকবে না। হাওয়া গরম থাকতে থাকতে কাজে নাম। জুড়িয়ে গেলে ধনুকের ছিলে আলগা হয়ে যাবে। কাজেও ঢিলে পড়ে যাবে।

    আবার সবসময়ে তা হয় না অবশ্য। মনের তলায় ধিকিধিকি জ্বলতে থাকে বদলার আগুন। যে কোন সময়ে তা থেকে অগ্নুৎপাত ঘটতে পারে।

    পৌনে ছ'টা বাজে। ম্যাটিনি শো ভেঙে গেছে। হলে ইভনিং শোয়ের লোক ঢুকেছে। রূপবাণীর মোড়ে রাত্রি দাঁড়িয়ে ছিল। সাগরের আসার কথা ছ'টার সময়। সাধারনত তার সময়ের নড়চড় হয় না। কিন্তু আজ বেশ দেরি হতে লাগল। সাড়ে ছ'টা বেজে গেল। রূপবাণীর সামনে জটলা ফাঁকা হয়ে গেছে। কিন্তু সাগরের দেখা নেই। আরও মিনিট পাঁচেক পরে রাত্রি দেখল হন্তদন্ত হয়ে সন্তোষ দাস আসছে। তাড়াতাড়ি হেঁটে রাত্রির সামনে এসে পৌঁছল।
    ----- ' কি ব্যাপার... তুমি ! সাগর কোথায় ? '
    ----- ' দিদিভাই... দাদা একটা কাজে গেছে। কি কাজে আমি ঠিক জানি না। এখন আসতে পারবে না। আমাকে পাঠাল আপনাকে জানাতে ... '
    ----- ' ও ... তাই ? '
    ----- ' হ্যাঁ .... দিদিভাই ... '
    ----- ' হ্যাঁ ... মানে, না না ... আমায় তো কিছু বলল না ... আমি কি করে জানব ? '
    ---- ' ও আচ্ছা ... ঠিক আছে। কি আর বলব ... ঠিক আছে ... '
    ---- ' হ্যাঁ ঠিক আছে ... পৌঁছে দেব কি ? '
    ---- ' না না ... এই ভর সন্ধেবেলায় কোন বডিগার্ডের দরকার নেই ... '

    তবে বডি গার্ডের দরকার কারো কারো হয়।
    যেমন স্বরূপ খাঁড়ার। তার মতো নগন্য একজন নেতার তো সরকারি বডিগার্ড থাকবে না। কিন্তু তার স্বনিযুক্ত দুজন আছে। তারা সশস্ত্রও বটে। একটু এদিক ওদিক গেলে তাদের সঙ্গে নেন নিজের গাড়িতে। গত সোমবার থেকে দুজনেই একসঙ্গে ছুটি নিয়েছে। স্বরূপবাবু ছুটি দিয়ে দিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তার জীবন নিরাপদ এবং মসৃন থাকায় তার ভয়ডরের অনুভূতিটা উবে গেছে অনেকটাই। এসব দেহরক্ষী টক্ষি যেন বাড়াবাড়ি মনে হয় আজকাল। বেকার পয়সা খরচা করে এদের পোষা। দূর দূর ... মিছিমিছি অপচয়। তার এরকমই মনে হয় আজকাল। ধূসর শঙ্কার জড়তা ঝরে গেছে তার শরীর ও মন থেকে বেশ কিছুদিন আগেই। কানু ঘোষকে ঝরিয়ে দিতে পারায় তিনি বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন। আরও আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন। সাগর মন্ডলের ডানহাত কাটা গেছে এর চেয়ে সুবিধাজনক ব্যাপার আর কি হতে পারে। এক সপ্তাহের ছুটি দিয়ে দিলেন দুজন রক্ষীকেই।
    মনোরঞ্জন মজুমদার এখনও যাতায়াত করছে খাঁড়ার দপ্তরে, অবশ্যই সাগরের প্ররোচনায় এবং অনুপ্রেরণায়। সে ঠিক করেছিল খাঁড়ার থেকে একদম বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। মনোরঞ্জন খুব ভাল অভিনেতাও বটে। স্বরূপ খাঁড়া মনোরঞ্জন আর সাগরের আঁতাত দু একদিনের মধ্যে জেনে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তারও খবর আনার লোকজন আছে। তবে এখন পর্যন্ত ব্যাপারটা চাপাই আছে, খাঁড়া কিছু জানতে পারেনি এটা মোনা মজুমদার জানে।

    শনিবার দুপুর বেলায় স্বরূপ খাঁড়া বললেন, ' বুঝলে মোনা ... ঠিক করেছি কাল বিষ্টুপুরের ওদিকে ওই জমিটা একবার দেখতে যাব। প্রায় দশ কাঠা জমি, পুকুরও আছে। আম,জাম, কাঁঠাল গাছ আছে নাকি প্রচুর। জমিটা পেলে লাভ আছে। মালিক অবিনাশ প্রামাণিক না কে একজন আছে। জমিটা ছাড়তে চাইছে না। আমি লোক লাগিয়েছি ওকে বোঝানোর জন্য। বুঝলে ভাল, নইলে তো আর কিছু করার নেই ... আমরা যা করি ... সবই তো জান ... '
    তা, মনোরঞ্জন সবই জানেন। কম দিন তো হল না।
    যাকে ধরে, তাকে নানাভাবে হুল ফোটাতে থাকে। সে লোকটা শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দেয়। কোন জায়গায় নালিশ জানাবার রাস্তাও বন্ধ করে দেয় খাঁড়া। মোনা মজুমদার সবই জানে। সব জেনে বুঝেও কোনদিন কিছু করতে পারেননি।

    স্বরূপবাবু বললেন, ' .... শোন, ব্যাপারটা বুঝলে তো .... '
    ----- ' হ্যাঁ বুঝেছি .... '
    ----- ' হ্যাঁ ... তুমি আমার সঙ্গে যাবে ... পরিতোষ কর্মকারকেও যেতে বলেছি ... '
    ----- ' ও ...পরিতোষ, মানে মুচিপাড়া থানার ওসি ?'
    ----- ' হ্যাঁ হ্যাঁ ... তাছাড়া আবার কে ? '
    ------ ' ও ... কাল সকাল দশটা, সাড়ে দশটা নাগাদ ... '
    ----- ' ঠিক আছে, এর মধ্যেই ব্যবস্থা হয়ে যাবে ... '
    ----- ' কিসের ব্যবস্থা ? '
    ----- ' না ... আপনি যাবেন, একটা আপ্যায়নের ব্যবস্থা তো করে রাখতে হবে ... অসুবিধে হবে না ... ওই জমির কাছাকাছিই।
    স্বরূপ খাঁড়া উৎফুল্ল মুখে বললেন, ' ও ... তাই বল ... হাঃ হাঃ '

    স্বরূপ খাঁড়ার গাড়িতে মোনাবাবু আর খাঁড়াবাবু বিষ্টুপুরে গিয়ে পৌঁছল সাড়ে এগারোটা নাগাদ। থানায় ডিউটি পড়ে যাওয়ায় পরিতোষ কর্মকার শেষ পর্যন্ত যেতে পারলেন না।
    জমিটার প্রায় একশ মিটার আগে একটা ছোট চা জলখাবারের দোকান আছে। কচুড়ি ভাজা হচ্ছে। তোলা উনুনে চায়ের বড় কেটলি বসানো। দুটো গামলায় পান্তুয়া এবং রসগোল্লা দেখা যাচ্ছে ময়লা ফাটা কাঁচের শো কেসের আড়ালে। একটা মাঝারি দুটো বারকোশে একটায় ঘন্টা দুয়েক আগে ভাজা জিলিপি আর একটায় বোঁদে রয়েছে।
    ত্রিসীমানায় কোন দোকানপাট নেই। ঘরবাড়ি দেখা যাচ্ছে অনেক দূরে দূরে। সেগুলোও প্রায় সবই কাঁচা বাড়ি। রাস্তার দুপাশে গাছপালা পুকুর ডোবা ভরা গ্রাম্য পরিবেশ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে ক্ষেতি জমি দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু। দোকানে সাত আট জন লোক বসে খাচ্ছে। এখানে কাছাকাছি কোন কল কারখানায় বা চাষের জমিতে কাজ করে হয়ত। দু একজন ট্রাক ড্রাইভারও থাকতে পারে। একটু পিছনদিকে দুটো ষোল চাকার ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে নয়ানজুলির ধারে।

    খাঁড়াবাবুর গাড়ি দোকানটার সামনে এসে পৌঁছতে মনোরঞ্জন বলো উঠলেন, ' এই যে ... এখানে ... এখানে ... থামাও ... '
    গাড়ি দাঁড়িয়ে গেল। মনোরঞ্জন দরজা খুলে নেমে ড্রাইভারকে বললেন, ' গাড়িটা একটু এগিয়ে রাখ। ও..ই গাছটার কাছে ... স্বরূপদা আসুন ... এখানে একটু বসি, তারপর জমির ওখানে যাব'খন ... '
    খাঁড়াবাবু প্রসন্নমনে গাড়ি থেকে নেমে বললেন, ' আচ্ছা ... বেশ, তাই হোক ... চল বসি ... '
    ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেল।
    স্বরূপ খাঁড়া চারদিকে তাকিয়ে বললেন, ' বাঃ ... বেশ ভালো। জায়গাটা খুব পছন্দ আমার ... '
    ----- ' হ্যাঁ, সে তো বটেই ....তবে কপালে থাকা চাই দাদা... আসুন আসুন ... '
    ----- ' কেন, আমার কপাল কি ফুটো বলে মনে হয় তোমার ? '
    ----- ' না ... তা হয় না, তবে কপাল ফুটো করবার লোকের তো অভাব নেই ... কখন কি হয়ে যায় ... সবই ওপরওয়ালার হাত ... এই আর কি ... নিন বসুন এখানে ... '
    ----- ' এ..ই দেখ ... আবার উল্টোপাল্টা বকতে লেগেছ ... তোমার মাথার স্ক্রু কেন যে মাঝে মাঝে
    ঢিলে হয়ে যায় বুঝতে পারি না ... ডাক্তার দেখাও ডাক্তার দেখাও ... '
    ----- ' আমিও তাই ভাবছি। একজন ডাক্তার এখানে আসার কথা আছে ... জানি না কখন আসবে ... চারটে করে কচুড়ি দাও আগে ... '
    দোকানদার কচুড়ি সাজাতে গেল।
    খাঁড়াবাবু অবাক হয়ে বললেন, ' কি বললে ... এখানে ডাক্তার আসবে ? '
    ----- ' হ্যাঁ, সেরকমই তো শুনেছিলাম। আপনি হয়ত তাকে চিনতেও পারেন ... '
    ----- ' নাম কি ? '
    ---- ' ওটাই মুশ্কিল। আঃ ... নামটাই ঠিকমতো মনে নেই। আচ্ছা, মনে পড়লে আপনাকে বলব ...তাকে দেখলে নিশ্চয়ই মনে পড়ে যাবে ... নিন খান, গরম গরম খান। গরম থাকতে থাকতে খাওয়াই ভাল। জুড়োতে দেওয়াটা কোন কাজের কথা না ... '
    স্বরূপ খাঁড়া মোনা মজুমদারের দিকে তাকিয়ে থাকলেন খানিকক্ষণ। তারপর বললেন, ' ডাক্তার দেখাও ডাক্তার দেখাও ... লক্ষণ ভাল ঠেকছে না ... আবোল তাবোল বকছ ... '
    মোনাবাবু নির্বিকারভাবে বললেন, ' আবোল তাবোল, না ? সেটাই তো বলছি ... আসতে দিন তাকে ... '
    ----- ' ক'টা পান্তুয়া বল তো ... '
    ----- ' হ্যাঁ হ্যাঁ ... এই যে শুনছ ভাই ... আটটা পান্তুয়া ... '

    এইসময়ে তিনজন এসে দোকানে ঢুকল আচমকা। দুজন বেশ ধীরে সুস্থে এসে বসল স্বরূপ খাঁড়ার উল্টোদিকের চেয়ারে। আর একজন বসল পাশের দিকের চেয়ারে। দোকানের ছেলেটা একটা প্লেটে আটটা পান্তুয়া রেখে গেল। মনোরঞ্জনবাবু, ' এই যে ডাক্তারবাবু এসে গেছে ... আগে আপনি কথা বলুন ... আমি বাইরে আছি ... ' বলে দোকান থেকে বেরিয়ে গেলেন।
    সাগর, মাণিক আর নন্দকে এই জায়গায় একসঙ্গে দেখে খাঁড়াবাবুর কেমন যেন গুলিয়ে গেল সবকিছু। একটা বিপদের গন্ধ পেলেন।
    সাগরের দিকে তাকিয়ে যতদূর সম্ভব স্বাভাবিকতা বজায় রেখে বললেন, ' আ..রে ... তোমরা এখানে ... কি ব্যাপার ? '
    ----- ' এই ... খবর পেলাম এখানে আপনি কার জমিতে খাবলা মারতে এসেছেন ... তাই দেখতে এলাম ... '
    নন্দ আর মাণিক বলা নেই কওয়া নেই, একটা করে পান্তুয়া তুলে মুখে পুরে চিবোতে লাগল।
    অপরাধীরা বিপদের আঁচ পায় এক লহমায়।
    স্বরূপ খাঁড়া হঠাৎ হুড়মুড় করে চেয়ার টেবিলে উদভ্রান্তভাবে ঠেলা মেরে, জলের গ্লাস,পান্তুয়ার
    প্লেট উল্টেপাল্টে দিয়ে যূথভ্রষ্ট কোন ভয়ার্ত প্রাণীর মতো ধড়ফড় করতে করতে দোকানের বাইরে চলে এলেন। তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে অনভ্যস্ত ভঙ্গীতে খলবল খলবল করতে করতে যে দিকে তার গাড়িটা দাঁড় করানো ছিল সেদিকে ছুটতে লাগলেন দিশাহারা হয়ে। কিন্তু গাড়িটা আবার কোথায় গেল ? ওই গাছটার নীচে তো রাখতে বলল মোনা মজুমদার ...কিন্তু এখন তো নেই ...
    দোকানের মালিক এবং খদ্দেররা হাঁ করে তাকিয়ে আছে। সাগর ওদের দিকে তাকিয়ে দু হাত উল্টে চোখ কপালে তুলে বলল, ' লে হালুয়া, এ আবার কি ... পাগল নাকি ! '
    মালিক একটা গামছা দিয়ে মাথার টাক মুছে বলল, ' তাই হবে মনে নয় ... দুটো কাঁচের গ্লাস ভাঙল ... এখন দাম কে দেবে ? সঙ্গে তো আর একজন ছিল ... সে ব্যাটা গেল কোথায় ? '
    নন্দ বলল, ' তাই তো ... সে কোথায় হাওয়া হয়ে গেল ? আজব ব্যাপার তো ! '
    সাগর বলল, ' চল তো দেখি বাইরে ... '
    ওদের সঙ্গে খরিদ্দাররাও দু একজন বাইরে এল। দু একজন বসেই থাকল। কচুড়ি আর চা ছেড়ে উঠতে চাইল না। আর বাকি দু তিনজন মানে মানে কেটে পড়ল। এসব ঝঞ্ঝাটে থাকতে চাইল না।
    এই সময়ে পরপর দুটো পটকা ফাটার আওয়াজ হল। একজন ট্রাক ড্রাইভার বলল, ' উও দেখিয়ে ... '
    ওখানে উপস্থিত সকলেই দেখল এলোমেলো করে ছুটতে থাকা স্বরূপ খাঁড়া কাটা গাছের মতো পড়ে গিয়ে ছটফট করছে। এপাশ ওপাশ থেকে দুচারজন করে গ্রামের লোক চাক বাঁধতে শুরু করেছে।
    সাগররা সন্তর্পণে জায়গাটা থেকে আলাদা হয়ে পিছন দিকে সরে যেতে লাগল। একটা ভেড়ির পাশ দিয়ে কাঁচা রাস্তাটা যেখানে ডানদিকে ঘুরে গেছে সেখানে দেখা গেল স্বরূপ খাঁড়ার গাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে গাছপালার আড়ালে। ওখানে মোনাবাবু আর গাড়ির ড্রাইভার বিশ্বনাথ দাঁড়িয়ে কি সব কথাবার্তা বলছে।
    সাগররা ওখানে পৌঁছবার পর মোনাবাবু একটা সিগারেট ধরিয়ে লম্বা একটা টান মেরে বললেন,
    ' হয়েছে ? '
    সাগর বলল, ' হ্যাঁ হয়েছে। কিন্তু একটু অপেক্ষা করতে হবে বাবলু আর মজিদ এখানে এসে পৌঁছন পর্যন্ত ... একেবারে তৈরি ছেলে .... পাক্কা টিপ ... '
    মোনা মজুমদার বললেন, ' কাল জোর খবর হবে কিন্তু খবরের কাগজে ... কিন্তু এখানে গাড়ি রেখে খাঁড়াবাবু কোথায় কি করতে গিয়েছিলেন তা তো কারো জানার কথা নয়। গাড়ি তো গাড়ির জায়গাতেই পড়ে আছে। খাঁড়াবাবু একা একা এখানে আসতে গেলেনই বা কেন ? আমরা তো কেউই তার সঙ্গে ছিলাম না। আমিও না, বিশ্বনাথও না ... তাই তো ? '
    সাগর বলল, ' তা আর বলতে ... '
    মোনাবাবু আবার বললেন, ' ও হ্যাঁ ... এ হচ্ছে বিশ্বনাথ, খাঁড়ার গাড়ির ড্রাইভার। শিগ্গীর আপনার দলে যোগ দেবে ... '

    ( চলবে )

    ********************************************
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | ৬  | ৭  | ৮  | ৯  | ১০  | ১১  | ১২  | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬  | ১৭  | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২  | ২৩  | ২৪  | ২৫  | ২৬ | ২৭ | ২৮  | ২৯  | ৩০ | ৩১  | ৩২  | ৩৩  | ৩৪ | ৩৫ | ৩৬  | ৩৭  | ৩৮  | ৩৯  | ৪০  | ৪২  | ৪৩  | ৪৪  | ৪৫  | ৪৬ | ৪৭  | ৪৮  | ৪৯  | ৫০  | ৫১  | ৫২ | ৫৩ | ৫৪ | ৫৫ | ৫৬ | ৫৭ | ৫৮ | ৫৯ | ৬০ | ৬১ | ৬২ | ৬৩ | ৬৪ | ৬৫ | ৬৬ | ৬৭ | ৬৮ | ৬৯ | ৭০ | ৭১ | ৭২ | ৭৩ | ৭৪ | ৭৫ | ৭৬ | ৭৭ | ৭৮ | ৭৯ | ৮০ | ৮১ | ৮২ | ৮৩ | ৮৪ | ৮৫ | ৮৬ | ৮৭ | ৮৮ | ৮৯ | ৯০ | ৯১ | ৯২ | ৯৩ | ৯৪ | ৯৫ | ৯৬ | ৯৭ | ৯৮ | ৯৯ | ১০০ | ১০১ | ১০২ | ১০৩ | ১০৫ | ১০৬ | ১০৭ | ১০৮ | ১০৯ | ১১০ | ১১২ | ১১৩ | ১১৪ | ১১৫ | ১১৬ | ১১৭ | ১১৮ | ১১৯ | ১২০ | ১২১ | ১২২ | ১২৩ | ১২৪ | ১২৫ | ১২৬ | ১২৭ | ১২৮ | ১২৯ | ১৩০ | ১৩১ | ১৩২ | ১৩৩ | ১৩৪ | ১৩৫ | ১৩৬ | ১৩৭ | ১৩৮ | ১৩৯ | ১৪০ | ১৪১ | ১৪২ | ১৪৩ | ১৪৪ | ১৪৫ | ১৪৬ | ১৪৭ | ১৪৮ | ১৫০ | ১৫১ | ১৫২ | ১৫৩ | ১৫৪ | ১৫৫ | ১৫৬ | ১৫৭ | ১৫৮ | ১৫৯ | ১৬০ | ১৬২ | ১৬৩ | ১৬৪ | ১৬৫ | ১৬৬ | ১৬৭
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Mira Bijuli | ২৮ জুলাই ২০২৪ ২৩:৩০535484
  • এই action টা অসাধারণ ছিল।
  • Anjan Banerjee | ২৯ জুলাই ২০২৪ ০০:২৪535485
  • ধন্যবাদ 
  • Amit | 106.51.161.232 | ২৯ জুলাই ২০২৪ ০০:৫২535488
  • প্রথম প্যারায় 'তপন দাশগুপ্ত' কে? 
  • Anjan Banerjee | ২৯ জুলাই ২০২৪ ১২:২১535505
  • সংশোধন করে দিয়েছি ।  পরিতোষ কর্মকার হবে । 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন